আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া
আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া (৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৪ — ২০ মে ২০১৭) ছিলেন একজন বাংলাদেশি ইসলামি পণ্ডিত, ধর্মীয় লেখক ও গবেষক। তিনি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব এবং কিছুকাল জামিয়া শরইয়্যাহ মালিবাগ, ঢাকার পরিচালক ছিলেন। তার লেখা দেওবন্দ আন্দোলনঃ ইতিহাস ঐতিহ্য অবদান, ইসলামী অর্থনীতির আধুনিক রূপায়ণ গ্রন্থদ্বয় কওমি মাদ্রাসার স্নাতক শ্রেণির পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়াও তিনি অন্যান্য পাঠ্যবই সম্পাদনা করেছেন।[১]
আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া | |
---|---|
যুগ্ম মহাসচিব, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ | |
কাজের মেয়াদ ২০০২ – ২০১৭ | |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৪ তারাকান্দা, মোমেনশাহী |
মৃত্যু | ২০ মে ২০১৭ | (বয়স ৬৩)
জাতীয়তা | বাংলাদেশি |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
পিতামাতা |
|
আখ্যা | সুন্নি |
ব্যবহারশাস্ত্র | হানাফি |
আন্দোলন | দেওবন্দি |
প্রধান আগ্রহ |
|
ঊর্ধ্বতন পদ | |
সাহিত্যকর্ম |
জীবনী
সম্পাদনাআবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া ১৯৫৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা থানাধীন মালিডাঙ্গা গ্রামের ফরায়েযী বংশের এক আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মিয়া হুসাইন দারুল উলুম দেওবন্দ পড়ুয়া আলেম ছিলেন। জন্মের পর তার নাম রাখা হয়েছিল ‘ইয়াহইয়া’। ছাত্রজীবনে তার এক শিক্ষক তাকে ‘আবুল ফাতাহ’ নামে অভিহিত করেন। পরে তিনি ‘আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া’ এই যুক্ত নামেই পরিচিত হন। তিনি মায়ের কাছে এবং গ্রামের মক্তবে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। এরপর পূর্ব চাঁদশ্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬৫ সালে ময়মনসিংহ জামিয়া ইসলামিয়ায় ভর্তি হয়ে উর্দু ও ফার্সিখানার পাঠ সমাপ্ত করেন। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে মাদ্রাসা শিক্ষা ধীরগতি হয়ে পড়ায় তিনি বাড়িতে চলে যান। তখন পারিবারিক আর্থিক অনটনের কারণে কিছুদিন ব্যবসা করেন। এরপর আবার নানার বাড়ির কাছে কুতিকুরা করুয়াপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন এবং দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর পুনরায় মাদ্রাসায় ভর্তি হন। মিযান থেকে শরহে জামী পর্যন্ত ময়মনসিংহ জামিয়া ইসলামিয়ায় অধ্যয়ন করেন। শরহে জামী পড়েন জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়াতে। সেখানে তার শিক্ষকদের মধ্যে আবু তাহের মেসবাহ অন্যতম। এরপর ১৯৭৯ সালে জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদে শরহে বেকায়া জামাতে ভর্তি হন। বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের অধীনে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তী বছরের মাঝেই তিনি চলে যান ময়মনসিংহ আশরাফুল উলুম বালিয়া মাদ্রাসায়। সেখানে জালালাইন পড়েন। মেশকাত পড়েন চট্রগ্রামের আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ায়। ১৯৮২-৮৩ সালে জামিয়া শরইয়্যাহ মালিবাগ, ঢাকা থেকে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেন।
১৯৮৪ সালে তিনি সিলেট জেলার গাছবাড়ীতে অবস্থিত আকনী মাযাহিরুল উলুম মাদ্রাসায় সহীহ মুসলিমের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবনের সূচনা করেন। পরবর্তী বছর জামিয়া শরইয়্যাহ মালিবাগ, ঢাকাতে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। চার বছর শিক্ষকতার পর জামিয়া শামসুল উলুম (পীরজঙ্গী) মাদ্রাসায় যোগদান করেন। তিন বছর সেখানে শিক্ষকতার পর পুনরায় তিনি জামিয়া শরইয়্যাহ মালিবাগ, ঢাকাতে চলে আসেন। ১৯৯৯ সালের শুরুর দিকে অত্র প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত হন এবং দীর্ঘ নয় বছর দায়িত্ব পালন করেন। বেফাকসহ জাতীয় পর্যায়ের কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ বেড়ে যাওয়ায় স্বেচ্ছায় এ পদ হতে ইস্তফা দেন। এর পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অত্র জামিয়ায় সিনিয়র মুহাদ্দিস হিসাবে কর্মরত থেকে সহীহ মুসলিমের দরস প্রদান করেছেন। ২০১৫ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত জামিয়া আরাবিয়া নতুনবাগে সহীহ বুখারীর দরস প্রদান করেছেন। এরপর অসুস্থতার কারণে কর্মপরিধি সীমিত করে শুধু মালিবাগ জামিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট থেকেছেন। তিনি পনের বছর বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের যুুুগ্ম মহাসচিব পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ২০১৭ সালের ২০ মে মৃত্যুবরণ করেন, ইশার নামাযের পর জামিয়া শরইয়্যাহ মালিবাগে তার জানাযার নামায অনুষ্ঠিত হয়। নামাযের ইমামতি করেন তার শিক্ষক নূর হুসাইন কাসেমী। পরের দিন গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।[২][৩][৪][৫][৬]
সাহিত্যকর্ম
সম্পাদনাতার রচিত বইসমূহের মধ্যে রয়েছে:[৭]
- ইসলামী অর্থনীতির আধুনিক রূপায়ণ
- আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইসলাম
- ইসলামি আইন ও বিচার-ব্যবস্থা
- হাদীস অধ্যয়নের মূলনীতি
- দেওবন্দ আন্দোলন : ইতিহাস ঐতিহ্য ও অবদান
- স্রষ্টা ও তাঁর স্বরূপ সন্ধানে
- ইসলামের দৃষ্টিতে পীর-মুরিদী
- মুজাহাদা ফী সাবিলিল্লাহ
- জেগে উঠো হে ঘুমন্ত শতাব্দী (কাব্যগ্রন্থ)
- ইসলাম ও সমাজ ব্যবস্থা ইত্যাদি
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ উল্লাহ, মুহাম্মদ আহসান (২০২১)। বাংলা ভাষায় হাদিস চর্চা (১৯৫২-২০১৫) (পিএইচডি)। বাংলাদেশ: ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ৪২০–৪২১।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "বেফাকের যুগ্ম মহাসচিব আবুল ফাতাহ আর নেই"। বাংলা ট্রিবিউন। ২০১৯-০৫-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-১৭।
- ↑ "আল্লামা আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া'র ইন্তেকাল"। জাগোনিউজ২৪.কম। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-১৭।
- ↑ "মাওলানা আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আর নেই"। বাংলানিউজ২৪.কম। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-১৭।
- ↑ ইসলাম, ফখরুল (১১ নভেম্বর ২০১৯)। "মাওলানা আবুল ফাতাহ মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া রহ. এর জীবন ও কর্ম"। কওমিপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০২০।
- ↑ ইসলাম, ফখরুল (আগস্ট ২০১৭)। "মাওলানা আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া রাহ. : প্রোজ্জ্বল এক প্রতিভা"। আল কাউসার। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০২০।
- ↑ "মাওলানা আবুল ফাতাহ মুহা. ইয়াহইয়া এর বই সমূহ"। রকমারি.কম। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০২০।