হারুন ইসলামাবাদী

বাংলাদেশি দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত

হারুন ইসলামাবাদী (২১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৮ — ২৩ সেপ্টেম্বর ২০০৩) ছিলেন একজন বাংলাদেশি দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত, লেখক, অনুবাদক, সম্পাদক, উপস্থাপক ও সমাজ সংস্কারক। তিনি আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ার ৩য় মহাপরিচালক এবং বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের ২য় সভাপতি ছিলেন। ১৯৯০ সালে তিনি মুসলিমদের আন্তর্জাতিক সংগঠন বিশ্ব মুসলিম লীগের বাংলাদেশ শাখার পরিচালক নিযুক্ত হন। তিনি প্রায় ১৪টি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। এছাড়াও তিনি ছোট-বড় প্রায় ৫০টি মাদ্রাসার পরিচালক, শতাধিক মাদ্রাসার মজলিসে শুরার সদস্য এবং কয়েকটি জাতীয় ও আঞ্চলিক সংস্থার সভাপতি ছিলেন। চট্টগ্রাম জেলার পূর্বনাম “ইসলামাবাদ” অনুসারে তিনি নামের শেষে “ইসলামাবাদী” যুক্ত করেন, পরবর্তীতে এই দ্বৈত নামেই তিনি প্রসিদ্ধি লাভ করেন।


হারুন ইসলামাবাদী
হারুন ইসলামাবাদী
মহাপরিচালক, আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া
অফিসে
১৯৯২ – ২০০৩
পূর্বসূরীহাজী মুহাম্মদ ইউনুস
উত্তরসূরীনুরুল ইসলাম কদীম
সভাপতি, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ
অফিসে
১৯৯২ – ১৯৯৬
পূর্বসূরীহাজী মুহাম্মদ ইউনুস
উত্তরসূরীনূর উদ্দিন গহরপুরী
পরিচালক, বিশ্ব মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ শাখা
অফিসে
১৯৯০ – ২০০৩
উত্তরসূরীসুলতান যওক নদভী
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম২১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৮
মৃত্যু২৭ সেপ্টেম্বর ২০০৩(2003-09-27) (বয়স ৬৫)
সমাধিস্থলমাকবারায়ে আজিজী, জামিয়া পটিয়া
ধর্মইসলাম
জাতীয়তাবাংলাদেশি
সন্তান
  • রাশেদ হারুন
  • উসামা হারুন
  • আহমদ হারুন
  • উমামা হারুন
পিতামাতা
  • মুহাম্মদ ইসমাইল (পিতা)
  • উম্মে হাবিবা (মাতা)
জাতিসত্তাবাঙালি
যুগআধুনিক
আখ্যাসুন্নি
ব্যবহারশাস্ত্রহানাফি
আন্দোলনদেওবন্দি
প্রধান আগ্রহসাহিত্য, অনুবাদ, ইসলামি ইতিহাস, সমাজসেবা, লেখালেখি
উল্লেখযোগ্য কাজ
  • এদারাতুল মাআরিফ
  • আন-নাদী আস-সাকাফী
  • দ্রোহ, আস-সাহওয়া, বালাগুশ শরক
  • আল বাতুল মহিলা মাদ্রাসা
  • আল বালাগ প্রকাশনী
  • ফোরকানিয়া মক্তব শিক্ষা বোর্ড
  • নওমুসলিম ফাউন্ডেশন
  • সর্বোচ্চ উলামা পরিষদ
  • ইসলামি কিন্ডারগার্টেন
  • আশিয়া ইসলামি মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
  • আবুধাবি শেখ খলীফা বাংলাদেশ স্কুল
  • জমিয়তে ফালাহুল মুসলিমীন, আবুধাবি
  • বাংলাদেশ ইসলামি পরিষদ, আবুধাবি
যেখানের শিক্ষার্থী
আত্মীয়ইসহাক আল গাজী (বড় ভাই)
মুসলিম নেতা

জন্ম ও বংশ সম্পাদনা

হারুন ১৯৩৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের পটিয়া থানার অন্তর্গত আশিয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ইসমাইল ও মাতা উম্মে হাবিবা। তার দাদার নাম কাজী গোলাম মোস্তফা। ইসহাক আল গাজী তার অগ্রজ। তার তিন ভাই ও তিন বোন। ১৯৪২ সালে তার মা ও ১৯৫২ সালে তার বাবা মারা যায়।[১][২][৩]

শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

তিনি বড় ভাইদের নিকট কুরআনের প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। কিছুদিন ভাটিখাইন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার পর ১৯৪৬ সালে নাজিরহাট বড় মাদ্রাসায় হেফজ বিভাগে ভর্তি হন। তার বড় ভাই ইসহাক আল গাজী এই মাদ্রাসার হাদিসের অধ্যাপক ছিলেন। কিছুদিন পর ১৯৪৯ সালে তিনি বাড়ির পার্শ্বস্থ আশিয়া এমদাদুল উলুম মাদ্রাসায় চলে আসেন। এরপর ১৯৫১ সালে ভর্তি হন আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ায়। এর এক বছর পর তার পিতা মারা গেলে বড় ভাই ইসহাক আল গাজী তার লেখাপড়ার দেখভাল করতেন। ১৯৬০ সালে তিনি আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া থেকে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) শেষ করেন। জামিয়া পটিয়ায় তার শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছে: আজিজুল হক, হাজী মুহাম্মদ ইউনুস, ইমাম আহমদ, ইসহাক আল গাজী, আলী আহমদ বোয়ালভী, নুরুল ইসলাম কদীম সহ প্রমুখ খ্যাতিমান ব্যক্তি।[২]

এরপর উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে তিনি মিশর যেতে মনস্থ করলে মুরব্বীদের পরামর্শে পূর্বের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে ১৯৬১ সালে দারুল উলুম দেওবন্দ চলে যান। দেওবন্দে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করার পর ভারতের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে সেখানে পড়াশোনা করা সম্ভবপর না হওয়ায় তিনি পাকিস্তানে চলে যান। ১৯৬২ সালে তিনি জামিয়া আশরাফিয়া, লাহোর থেকে পুনরায় দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেন। এরপর লাহোরের জামিয়া মাদানিয়ায় দুজন দার্শনিক শিক্ষকের নিকট উচ্চতর শিক্ষা অর্জন করে ১৯৬৩ সালে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। পাকিস্তানে তার শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছে: মুহাম্মদ ইদ্রিস কান্ধলভি, রসূল খান, জামিল আহমদ থানভী, খালিদ মাহমুদ সহ প্রমুখ খ্যাতিমান ব্যক্তি। এরপর তিনি মাসিক মদীনার প্রতিষ্ঠাতা মুহিউদ্দীন খানের নিকট মাতৃভাষা বাংলার উপর বিশেষ ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন।[২]

কর্মজীবন সম্পাদনা

শিক্ষাজীবন সমাপ্তির পর তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের উর্দু ভাষায় প্রকাশিত একমাত্র দৈনিক পাসবানের বার্তা সম্পাদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন৷ পরবর্তীতে তিনি এই পত্রিকার সহকারী সম্পাদক নিযুক্ত হন। এরপর মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্রদের সাহিত্য-সাংবাদিকতার প্রশিক্ষণ দিতে তিনি ঢাকার ফরিদাবাদে “এদারাতুল মাআরিফ” প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ পর্যন্ত আজিজুল উলুম বাবুনগর মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। পাশাপাশি তিনি মুহাম্মদ ইউনুসের নির্দেশে মাসিক আত তাওহীদের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।[২]

এরপর তিনি আবুধাবিতে চলে যান। ১৯৭৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাংলাদেশ দূতাবাসে আরবি, বাংলাইংরেজি ভাষার অনুবাদক হিসেবে সরকারি দায়িত্ব পান। ১৯৭৭ সালের ১ মার্চ আবুধাবি সুপ্রিম কোর্টের অনুবাদক হিসেবে যোগদান করেন।[২] এরই মধ্যে তিনি আবুধাবির ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধিত খতিব হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৮৫ সালে আবুধাবি বেতারের ইসলাম ধর্মীয় অনুষ্ঠানের প্রযোজক ও উপস্থাপক হিসেবে যোগদানের পর অনুবাদ বিভাগের প্রধান হিসেবে পদোন্নতি পান। ১৯৯০ সালে বিশ্ব মুসলিম লীগ তাকে বাংলাদেশ শাখার পরিচালক নিযুক্ত করে। তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাত ইসলামি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা বোর্ডের সদস্য ছিলেন। তিনি পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউল হকের শরীয়াহ বিল প্রণয়ন বোর্ডের প্রধান ছিলেন। ১৯৯১ সালে মুহাম্মদ ইউনুস অসুস্থ হয়ে পড়লে তার অনুরোধে তিনি ছুটি নিয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ইউনুস তাকে আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ার সহকারী পরিচালক নিযুক্ত করেন। ১৯৯২ সালে তিনি এর মহাপরিচালক নিযুক্ত হন।[২]

একই সাথে তিনি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের ২য় সভাপতি হিসেবে ১৯৯৬ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।[৪]

এছাড়াও তিনি তানজিমে আহলে হকের সভাপতি, সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সভাপতি, ইসলামি রিলিফ কমিটির সভাপতি, তাহফীজুল কুরআন সংস্থা বাংলাদেশের নির্বাহী সদস্য, শানে রেসালত সম্মেলনের ব্যবস্থাপক, ৫০টি মাদ্রাসার পরিচালক এবং শতাধিক মাদ্রাসার মজলিসে শুরার সদস্য ছিলেন।[৫]

অবদান সম্পাদনা

তিনি ইংরেজি, বাংলা, উর্দু, আরবি, ফার্সি, পশতু, চীনা, বর্মী, তুর্কি, গুজরাটি, থাই সহ প্রায় ১৪ টি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। তিনি এসব ভাষায় লেখালেখি ও বক্তৃতার মাধ্যমে ইসলামের বাণী প্রচার করতেন। লন্ডনের জাতীয় টেলিভিশনে তার ইংরেজি বক্তব্য গুরুত্বের সাথে প্রচার করা হয়েছিল।[৫]

আন-নাদী আস-সাকাফী

একটি সাহিত্য সংগঠন। আরবিবাংলা ভাষায় সাহিত্য চর্চার উদ্দেশ্যে হারুন ইসলামাবাদী ১৯৯৭ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাকালীন এই সংগঠনের পরিচালক ছিলেন মাহমুদুল হাসান আল আজহারী[৫]

দ্রোহআস-সাহওয়া

আন-নাদীর দুটি পত্রিকা। “দ্রোহবাংলা ভাষায় এবং “আস-সাহওয়া ” আরবি ভাষায় প্রকাশিত হত। পত্রিকা দুটির প্রতিষ্ঠাতা হারুন ইসলামাবাদী।[৬]

বালাগুশ শরক ও আল বালাগ প্রকাশনী

১৯৯২ সালে আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া থেকে প্রকাশিত হয় “বালাগুশ শরক ”। হারুন ইসলামাবাদীর প্রতিষ্ঠিত এই আরবি পত্রিকায় আরব বিশ্বের সমকালীন বুদ্ধিজীবীরা লেখালেখি করতেন। বর্তমানে এই পত্রিকার সম্পাদক ওবায়দুল্লাহ হামযাহ। আল বালাগ প্রকাশনী একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। ধর্মীয় বইপত্র ছাপানোর সুবিধার্থে তিনি এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[৫]

ফোরকানিয়া মক্তব শিক্ষা বোর্ড ও নওমুসলিম ফাউন্ডেশন

সারাদেশের মক্তবগুলোকে একই নিয়মে পরিচালনা, মক্তবের শিক্ষকদের ভাতা দেওয়ার লক্ষ্যে তিনি এই বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। নওমুসলিমদের পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে তার প্রতিষ্ঠিত সংগঠনের নাম “নওমুসলিম ফাউন্ডেশন”। এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ১৯৯৯ সালে।[৬]

সর্বোচ্চ উলামা পরিষদ

জামিয়া পটিয়ার মহাপরিচালকের দায়িত্ব লাভের কিছুদিন পর দেশের শীর্ষস্থানীয় ইসলামি পণ্ডিতদের নিয়ে গঠন করেন “সর্বোচ্চ উলামা পরিষদ”। পরিষদের আয়োজনে ঢাকায় বেশ কয়েকটি ইসলামি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ইসলামি অঙ্গনে একটি সর্বব্যাপী কার্যকর নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব অর্জন করাই ছিল এটি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে।[৭]

শিক্ষা সংস্কার

জামিয়া পটিয়ার মহাপরিচালক নিযুক্ত হওয়ার পর তিনি মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে জামিয়া পটিয়ার দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সম্পন্ন করেন। সাধারণ শিক্ষিতদের জন্য তিনি বাংলাদেশের মাদ্রাসা সমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম জামিয়া পটিয়ায় ১৯৯৭ সালে শর্টকোর্স বিভাগ চালু করেন।[২] এই বিভাগের মেয়াদ ৬ বছর। আব্দুল হালিম বুখারী, মুফতি শামসুদ্দিন জিয়া ও রহমাতুল্লাহ কাউসার নেজামীকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে তিনি ভারতপাকিস্তানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাব্যবস্থাকে সরেজমিন পরিদর্শনে পাঠান। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী তিনি মাদ্রাসার শিক্ষাব্যবস্থায় প্রয়োজন মাফিক পরিবর্তন ও পরিবর্ধন সাধন করেন।[৭]

অবকাঠামো ও বিবিধ

জামিয়া পটিয়ার গভীর নলকূপ, দৃষ্টিনন্দন কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ও কেন্দ্রীয় তোরণ তার আমলে নির্মিত হয়। ১৯৭৬ সাল থেকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে ও বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাসস্থান, নলকূপ, মসজিদ, মাদ্রাসা ইত্যাদি নির্মাণ সহ অসহায়-গরিব পরিবারের খরচ, বিধবা-ভাতা, দরিদ্র ছাত্রদের লেখাপড়ার খরচ ইত্যাদি চালিয়ে যেতেন।[৭] ১৯৮৮ সালে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করেন। ফিকহের জটিল ও নতুন সৃষ্ট সমস্যাবলির সমাধানের নিমিত্তে বিজ্ঞ ইসলামি পণ্ডিতদের নিয়ে ১৯৯২ সালে তিনি ইসলামি গবেষণা পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন।[৭] তার অন্যান্য প্রতিষ্ঠা:[৬]

  1. ইসলামি কিন্ডারগার্টেন
  2. আশিয়া ইসলামি মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
  3. আবুধাবি শেখ খলীফা বাংলাদেশ স্কুল
  4. জমিয়তে ফালাহুল মুসলিমীন, আবুধাবি
  5. বাংলাদেশ ইসলামি পরিষদ, আবুধাবি

পরিবার সম্পাদনা

পারিবারিক জীবনে তিনি চার ছেলে ও এক মেয়ের জনক। তার মেঝো ছেলে শাহেদ হারুন আল আজহারী একজন ইসলামি পণ্ডিত ও ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির অধ্যাপক।[৫]

রাজনীতি সম্পাদনা

তিনি নেজামে ইসলাম পার্টির মজলিসে শুরা ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন। এছাড়া অন্যান্য ইসলামি দলগুলোর সাথেও তার সখ্যতা ছিল।[৬]

তাসাউফ সম্পাদনা

তিনি জামিয়া পটিয়ার মহাপরিচালক মুহাম্মদ ইউনুসের কাছে আধ্যাত্মিক শিক্ষা লাভ করেন। তার মৃত্যুর পর তিনি ভারতের আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব আবরারুল হক হক্কীর সাথে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। হক্কী ছিলেন আশরাফ আলী থানভীর সর্বশেষ খলিফা।[১]

প্রকাশনা সম্পাদনা

তিনি দৈনিক পাসবান পত্রিকার সহকারী সম্পাদক ছিলেন। সে সময়ে তার লেখার পান্ডুলিপি জমা ছিল তারই প্রতিষ্ঠিত ‘এদারাতুল মাআরিফ’, ঢাকায়। পরবর্তীতে দুর্বৃত্তরা এটি জ্বালিয়ে দিলে তা সংরক্ষণ করা যায় নি। তার অন্যান্য রচনার মধ্যে রয়েছে :[৬]

  1. ফাযায়েলে সাদাকাত (অনুবাদ)
  2. আহকামুস সুলতানিয়া
  3. ইসলামি অর্থনীতি
  4. মুয়াত্তা ইমাম মালেক (অনুবাদ)
  5. আমাকে পড়ো (ভ্রমণকাহিনী)

মৃত্যু সম্পাদনা

তিনি ২০০৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বার্ধক্য জনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন।[১] পরদিন বড় ভাই ইসহাক আল গাজীর ইমামতিতে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন হরতাল ছিল। জানাযা শেষে জামিয়া পটিয়ার মাকবারায়ে আজিজীতে তাকে দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর।[৬]

উত্তরাধিকার সম্পাদনা

তার নামানুসারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে “আল্লামা হারুন ইসলামাবাদী রহ. স্মৃতি সংসদ” ও “আল্লামা হারুন ইসলামাবাদী রহ. ফাউন্ডেশন”। তার জীবনীগ্রন্থের মধ্যে নাইমুল ইসলাম আনসারি কর্তৃক রচিত “স্মৃতিকণা ” ও কাজী আবুল কালাম সিদ্দিক কর্তৃক রচিত “হারুন ইসলামাবাদী : জীবন, কর্ম, অবদান ” অন্যতম।[৫][৮]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. ইব্রাহিম আনোয়ারী, মুফতি (১ জানুয়ারি ২০১৭)। "ইসলামী ব্যক্তিত্ব আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ হারুন ইসলামাবাদী রহ."দৈনিক ইনকিলাব 
  2. হাফেজ আহমদুল্লাহ, মুফতি; রিদওয়ানুল কাদির, মুফতি (ফেব্রুয়ারি ২০১৮)। (আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যক্তিত্ব ও চিন্তাবিদ হযরত আল্লামা শাইখ মুহাম্মদ হারুন ইসলামাবাদী রহ . ( ১৯৩৮-১৯৮৮ খ্রি . ))মাশায়েখে চাটগাম — ২য় খণ্ড (১ম সংস্করণ)। ১১/১, ইসলামী টাওয়ার, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০: আহমদ প্রকাশন। পৃষ্ঠা ৩০৭ — ৩১৩ পৃষ্ঠা। 
  3. "আশিয়া ইউনিয়নের প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব"তথ্য বাতায়ন [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. খলিল, ইব্রাহিম আলী। "সভাপতিগন"বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-২০ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. কাদির, মাসউদুল (২০০৯)। (অপরাজিত কিংবদন্তি আল্লামা হারুন ইসলামাবাদী রহ.)পটিয়ার দশ মনীষী (২য় সংস্করণ)। আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম: আল মানার লাইব্রেরি। পৃষ্ঠা ১০০ — ১০৯। 
  6. নিজামপুরী, আশরাফ আলী (২০১৩)। (প্রখ্যাত ভাষাবিদ ও ইসলামি চিন্তাবিদ শায়খ আল্লামা হারুন ইসলামাবাদী রহ.)দ্যা হান্ড্রেড (বাংলা মায়ের একশ কৃতিসন্তান) (১ম সংস্করণ)। হাটহাজারী, চট্টগ্রাম: সালমান প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ৩৮১ — ৩৮৫। আইএসবিএন 112009250-7 
  7. রশীদ, মামুনুর (২০২০-০১-১২)। "আল্লামা হারুন ইসলামাবাদী রহ: একজন কীর্তিমান মনীষী"কওমি মাদ্রাসা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-২০ 
  8. আবুল কালাম সিদ্দিক, কাজী (২০১৮)। আল্লামা হারুন ইসলামাবাদী : জীবন | কর্ম | অবদান। ১১/১, ইসলামী টাওয়ার, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০: আহমদ প্রকাশন। পৃষ্ঠা মোট ২৪০ পৃষ্ঠা। 

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা