জমির উদ্দিন নানুপুরী
শাহ সুফি জমির উদ্দিন নানুপুরী ( আরবি: ضمير الدين نانوبوري, ১৯৩৬ - ২০১১) ছিলেন বাংলাদেশের একজন সুফি সাধক ও হানাফি সুন্নি আলেম। তিনি জামিয়া ইসলামিয়া ওবাইদিয়া নানুপুরের ২য় মুহতামিম ছিলেন। ইসলাম প্রচারক হিসেবেও তার খ্যাতি ছিল।[১][২][৩][৪]
সুফি শাহ জমির উদ্দিন নানুপুরী | |
---|---|
ضمير الدين نانوبوري | |
আচার্য,জামিয়া ইসলামিয়া ওবাইদিয়া নানুপুর | |
অফিসে ১৯৭৫ – ২০১১ | |
পূর্বসূরী | সুলতান আহমদ নানুপুরী |
উত্তরসূরী | সালাহউদ্দীন নানুপুরী |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | জমির উদ্দিন ১৯৩৬ |
মৃত্যু | ২০১১ |
ধর্ম | ইসলাম |
পিতামাতা |
|
ব্যবহারশাস্ত্র | হানাফি |
আন্দোলন | দেওবন্দি |
উল্লেখযোগ্য কাজ | আল মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ |
জন্ম
সম্পাদনাজমির উদ্দিন ১৯৩৬ সালে চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত ফটিকছড়ির প্রসিদ্ধ নানুপুর গ্রামের এক মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আব্দুল গফুর এবং দাদার নাম নেয়ামত আলী ও পরদাদার নাম হিম্মত আলী।
শিক্ষাজীবন
সম্পাদনাতিনি স্থানীয় প্রাইমারী স্কুলে ক্লাস ফোর পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। এরই মধ্যে তিনি স্থানীয় মকতবের শিক্ষক মরহুম আব্দুচ্ছালাম ও মায়ের নিকট কুরআন মাজীদ শিক্ষা করেন।
পিতার লক্ষ্য ছিল তাঁকে স্কুলে পড়াবেন এবং তার ছোট ভাই জিয়াউল হাসানকে মাদ্রাসায় পড়াবেন। পরবর্তীতে পিতার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়ে যায় এবং তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসায় ভর্তি হন।
তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার পর থেকে দাওয়ারে হাদীস তথা শিক্ষা সমাপনী বর্ষ পর্যন্ত এই দীর্ঘ সময়টিতে লাগাতার একটি বাড়িতে গৃহ-শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।
তিনি দরসে নিজামীর নিয়ম অনুসারে পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত কিতাবাদি অধ্যয়ন করেছেন। “পাঞ্জগাঞ্জ” ও “ইলমুচ্ছিগা” পড়েছেন মুফতি আহমদুল হক্বের নিকটে। নাহবেমীর, হেদায়াতুন নাহু, কাফিয়া ইত্যাদি পড়েছেন আব্দুল আজিজে নিকট। মিরকাত কিতাব পড়েছেন হামেদের নিকট। কুদুরী কিতাব পড়েছেন আব্দুল ওয়াহ্হাবের নিকট।
এছাড়াও ফিকাহবিদ মুফতিয়ে আজম মুহাম্মদ ফয়জুল্লাহ, আবুল হাসান, মুহাম্মদ আলী এবং বিখ্যাত মুহাদ্দিসীনে কিরামদের নিকট ছিহাহ সিত্তা তথা মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজী, শামায়েল সহ নাসায়ী, ইবনে মাজা ইত্যাদি হাদীস গ্রন্থাদি অধ্যয়ন করেন। বিশেষ ভাবে আব্দুল কাইয়ুম এবং ইউছুফ বিন্নুরী এই দুই হাদীস বিশারদ থেকে তিনি বোখারী সনদ লাভ করেন। [৫]
কর্মজীবন
সম্পাদনাতিনি হাটহাজারী থেকে ফারেগ হওয়ার পর প্রাথমিক অবস্থায় চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী বাথুয়া মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত হন। সেখানে শরহে জামী, সুল্লামুল উলুম, মাইবুজী, তাফসীরে জালালাইন ইত্যাদি কিতাবাদি পড়াতেন। সেখানে শিক্ষকতা করার পর নানুপুরের শাহ সুলতান আহমদের ইশারায় ১৯৬৫ সালে জামিয়া ইসলামিয়া ওবাইদিয়া নানুপুরে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত হন। সেখানে কাফিয়া, শরহে জামী, সুল্লাম, জালালাইন শরীফ, নাসায়ী শরীফ সহ গুরুত্বপূর্ণ কিতাবাদির শিক্ষা দেন। শিক্ষকতার সাথে তিনি উল্লেখযোগ্য একটি সময় শিক্ষা সচিবের দায়িত্বও পালন করেন।
তার কর্মদক্ষতার প্রতি লক্ষ্য করে শাহ সুলতান আহমদ নানুপুরি রহঃ ওনার জীবদ্দশাতেই তাকে মহাপরিচালক হিসেবে মনোনীত করেন।শাহ সুলতান আহমদ নানুপুরি রহঃ এর জীবদ্দশাতেই তিনি প্রায় দশ বছর যাবত এই জামিয়ার মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।[৬]
আধ্যাত্মিকতা
সম্পাদনাউপমহাদেশে ছুফী ত্বরীকার প্রধানত চারটি সিলসিলা বিদ্যমান: চিশতিয়া, কাদেরিয়া, নকশবন্দিয়া ও মুজাদ্দেদিয়া। তিনি ছাত্রজীবন থেকেই আধ্যাত্মিকতা চর্চা করতেন। জামাতে হাফতুমে পড়াকালীন সময়ে তার উস্তাদ মাওলানা আব্দুর রশীদ তাকে পটিয়ার মুফতি আজিজুল হক্বের নিকট বাইয়াত করান এবং উনাকে তাছাউফের উপর খিলাফত প্রদান করেন। হুসাইন আহমদ মাদানির খলীফা শাহ আহমদ শফী ও কাতারের শায়খ বিখ্যাত আলেম আল্লামা শায়খ ইউছুফ রেফায়ীও তাকে খেলাফত প্রদান করেছেন। নানুপুরের শাহ সুলতান আহমদ নানুপুরি রহঃ তাকে ত্বরীকতের সিলসিলায় বিশেষ এজাজত বা খেলাফত প্রদান করেছেন।[৭]
মৃত্যু
সম্পাদনাতিনি ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১ সালে মৃত্যুবরণ করেন।[৮]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনাউদ্ধৃতি
সম্পাদনা- ↑ "মাওলানা শাহ্ সুফি জমির উদ্দিন নানুপুরী (রহ) | ধর্ম চিন্তা"। ittefaq। ২০২০-০৭-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-২১।
- ↑ জিয়াউল হক, মুহাম্মদ (৫ জানুয়ারি ২০২৩)। "আল্লামা শাহ জমিরুদ্দীন নানুপুরী (রহ.) জীবন ও কর্ম"। দৈনিক ইনকিলাব।
- ↑ জিয়াউল হক, মুহাম্মদ (১২ জানুয়ারি ২০২৩)। "আল্লামা শাহ জমিরুদ্দীন নানুপুরী (রহ.) জীবন ও কর্ম"। দৈনিক ইনকিলাব।
- ↑ "মাওলানা শাহ জমির উদ্দিন নানুপুরী রাহ. - মাসিক আলকাউসার"। www.alkawsar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-২১।
- ↑ "বাংলার শত আলেমের জীবনকথা - সমর ইসলাম,মাওলানা এস এম আমিনুল ইসলাম"। www.rokomari.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-২১।
- ↑ নিজামপুরী, আশরাফ আলী (২০১৩)। (রাহবারে তরীকত মাওলানা সুলতান আহমদ নানুপুরী রহ.) । দ্যা হান্ড্রেড (বাংলা মায়ের একশ কৃতিসন্তান) (১ম সংস্করণ)। হাটহাজারী, চট্টগ্রাম: সালমান প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ৩৭৮–৩৮০। আইএসবিএন 112009250-7।
- ↑ খান, মাওলানা দৌলত আলী। "এক দুনিয়া বিমুখ আধ্যাত্মিক রাহবার"। DailyInqilabOnline (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-২১।
- ↑ "জমীর উদ্দীন নানুপুরী রঃ এর আখেরী বয়ান ও হযরত যেভাবে ইন্তিকাল করলেন - মাওলানা রাশেদুল ইসলাম জমীরি"। BoiBazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-২১।
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- খালিদ হোসেন, আ ফ ম (২০২২)। নিভে যাওয়া দীপশিখা ১। বাংলাদেশ: আকাবিব স্টাডিজ অ্যান্ড পাবলিশিং হাউস। পৃষ্ঠা ১৪৫–১৪৯। আইএসবিএন 9789849591405।