দারসে নিজামি
দারসে নিজামি (উর্দু: درسِ نظامی) হলো মোল্লা নেজামুদ্দিন সাহালাভী কর্তৃক প্রণীত বিখ্যাত ইসলামি শিক্ষা পাঠ্যক্রম। মোল্লা নেজামুদ্দিন ১৬৭৭–৭৮ সালে তৎকালীন হিন্দুস্তান তথা বর্তমান ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহালী শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাই তাকে মোল্লা নেজামুদ্দিন সাহালাভী বলা হয়। আর তার নামানুসারে তার প্রণীত শিক্ষা পাঠ্যক্রম বা শিক্ষা ব্যাবস্থাকে 'দরসে নিজামি' নামকরণ করা হয়েছে। [১] কিছু পরিবর্তন সহ এই পদ্ধতি বা সিলেবাসই বর্তমানে ভারতীয় উপমহাদেশ (পূর্বের হিন্দুস্তান) তথা ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কওমি বা আরবি মাদ্রাসাসমূহে বিদ্যমান। এগারোটি স্বতন্ত্র বিষয়ের সমন্বয়ে গঠিত হয় দরসে নেজামি। [২]
ভুল ধারণা: দরসে নিজামি বনাম নিজামিয়া মাদ্রাসা
সম্পাদনানিজামিইয়া মাদ্রাসা' হল সেলজুক সাম্রাজ্যের উজির নিজামুল মুলক কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একটি বিখ্যাত কিন্তু বিলুপ্ত ইসলামি শিক্ষাকেন্দ্র বা মাদ্রাসা। ১০৬৫ সালে বাগদাদের নিজামিয়া মাদ্রাসায় প্রতিষ্ঠা হয়। [৩] নিজামুল মুলক আল-গাজ্জালিকে নিজামিয়া মাদ্রাসার অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন।
আর 'দরসে নিজামি' শিক্ষা পাঠ্যক্রম চালু হয় ১৬৭৭ সালে ভারতে। বস্তুত নামের মিল থাকায় অনেকেই বিভ্রান্ত হন। দরসে নিজামির অন্তত ২৩টি কিতাবই রচিত হয়েছে বাগদাদের নিজামুল মুলকের মৃত্যুর পরে। প্রকৃতপক্ষে দরসে নিজামির সাথে নিজামুল মুলকের কোনো সম্পর্ক নেই। [২]
বিষয়
সম্পাদনাদরসে নিজামি সিলেবাসভুুক্ত বিষয়গুলো হচ্ছে তাফসির (কুরআনের অনুচ্ছেদ), হিফজ (কুরআন মুখস্থ), সরফ এবং নাহু (আরবি বাক্য গঠন এবং ব্যাকরণ ), ফারসি, উর্দু, তারিখ (ইসলামিক ইতিহাস), ফিকহ (ইসলামিক আইনশাসন) এবং শরিয়াহ (ইসলামিক আইন) ইত্যাদি।
'পাঠ্যপুস্তক ও লেখকগণের তালিকা: [৪] [৫]
১. ইলমুস সরফ (শব্দ ও তার রূপান্তর শাস্ত্র)
সম্পাদনা- মিযানুস সরফ, সিরাজুদ্দীন আওধী
- মুনশাআব, হামীদুদ্দীন কাকুরী
- পাঞ্জেগাঞ্জ
- ইলমুস সিগাহ, মুফতি ইনায়াত আহমাদ কাকূরী
- ফুসুলে আকবারি, সায়্যিদ আলী আকবার আনসারী
- শাফিয়া, ইবনে হাজিব
২. ইলমুন নাহু (ব্যাকরণ)
সম্পাদনা- নাহভেমির, শরীফ আল-জুরজানী
- শরহে মিয়াতে আমেল ব্যাখ্যাসহ, আবদুল কাহির আল-জুরজানী
- হিদায়াতুন নাহু, আবু হায়্যান আল-আন্দালূসী
- কাফিয়া, ইবনুল হাজিব
- আল-ফাওয়াইদুদ দিয়াইয়্যা (শরহু কাফিয়া), জামী
৩. মানতিক (তর্কশাস্ত্র বা যুক্তিবিদ্যা)
সম্পাদনা- সুগরা কুবরা, শরীফ আল-জুরজানী
- আল-আবহারী মুখতাসার ঈসাগুজী
- তাহযীবুল মানতিক ওয়াল কালাম, আত তাফতাযানী
- শরহু তাহযীব, আবদুল্লাহ য়াযদী
- কুতবী (শরহুর রিসালাতিশ শামসিয়্যাহ), কুতুবুদ্দীন রাযী
- মীর কুতবী, শরীফ আল-জুরজানী
- সুল্লামুল উলূম, মুহিব্বুল্লাহ বিহারী
৪. হিকমাত ও ফালসাফা (দর্শন ও তত্ত্বজ্ঞান)
সম্পাদনা- মায়বুযী (আল-আবহারী রচিত হিদায়াতুল হিকমাত এর শরাহ), কাদী মীর হাসান মায়বুষী
- শরহু হিদায়াতুল হিকমাত, মোল্লা সদরা
- শামসে বায়িগা, মাহমুদ জুয়ানপুরী
৫. গণিত (رياضي) (অংক ও জ্যামিতি)
সম্পাদনা- খুলাসাতুল হিসাব ওয়াল হানদাসা, আল-আমিলী
- উসূলুল হানদাসাতিল ইকলীদাস (মাকালায়ে আদাবী), আত-তুসী
- তাশরীহুল আফলাক, আত-তুসী
- রিসালাতু কুশজিয়া
- শরহু চুগমীনী, মূসা রূসী
৬. ইলমু বালাগাত (অলংকার শাস্ত্র)
সম্পাদনা- দুরূসুল বালাগাহ
- মুখতাসারুল মাআনী, আত-তাফতাযানী
- মুতাওয়াল (নির্দিষ্ট অংশ), আত-তাফতাযানী * তবে এই কিতাবটি এখন পড়ানো হয়না।
৭. ফিকহ (ইসলামি আইনশাস্ত্র)
সম্পাদনা- বেহেশতি যেওর, আশরাফ আলী থানবী রহ.
- তালিমুল ইসলাম, মুফতি কিফায়াতুল্লাহ দেহলবী রহ.
- নূরুল ঈযাহ, শুরুন্বুলালী
- মুখতাসার আল কুদূরী, ইমাম কুদূরী রহ.
- মতন কানয আদ-দাকায়েক, ইমাম নাসাফী রহ.
- শরহু বিকায়া (১,২) উবায়দুল্লাহ ইবনে মাসউদ
- হিদায়া (১-৪ খন্ড/কামেল/পুর্ণাঙ্গ), আল মারগীনানী
৮ . ইলমু উসূলিল ফিকহ (ফিকহ শাস্ত্রের মূলনীতি)
সম্পাদনা- উসুল আশ-শাশি
- নুরুল আনওয়ার, মোল্লা জিয়ুন
- আত-তাওদীহ ফী হাললি গাওয়ামিদিত-তানকীহ, উবায়দুল্লাহ ইবন মাসউদ*
- আত তালবীহ, আত-তাফতাজানী**
- মুসাল্লামুছ ছুবুত মাবাদী কালামিয়া, মুহিব্বুল্লাহ বিহারী***
*,***,*** এই তিনটি কিতাব একসময় দরসে নিজামিতে পড়ানো হতো। তবে বর্তমানের বাংলাদেশের দরসে নিজামিতে এই তিনটি কিতাব পড়ানো হয়না।কিন্তু পাকিস্তানে 'হুসামি' নামক একটি উসুলে ফিকহের কিতাব পড়ানো হয়।
৯. ইলমে কালাম (ধর্মতত্ত্ব শাস্ত্র)
সম্পাদনা- আল-আকাইদুন নাসাফিয়া (মা’আ শরহি তাফ্ফাযানী), আন-নাসাফী
- শরহুল আকাইদিল-আদদিয়া, আদ-দাওয়ানী
- শরহুল আক্বীদাতিত ত্বহাবিয়া, ইমাম তহাবী রহ.
১০. তাফসিরুল কুরআন
সম্পাদনা- তাফসীরু জালালাইন, আল-মাহাল্লী ওয়াস-সুয়ূতী
- আনওয়ারুত তানযীল ওয়া আসরারুত তা’বীল, আল-বায়দাবী
১১. হাদিস
সম্পাদনা- মিশকাতুল মাসাবিহ, ইমাম বাগাভী ও শায়েখ ওয়ালীউদ্দিন
২. দাওরাতুল হাদিস বা মাস্টার্স সমমান
এই জামাতে (ক্লাসে) কুতুবে সিত্তাহসহ তহাবী শরীফ; ইমাম তহাবী (রহ.) (৩২৩ হি.), মুয়াত্তায়ে মুহাম্মাদ; ইমাম মুহাম্মাদ রহ. (১৮৯ হি.) ও মুয়াত্তায়ে ইমাম মালিক; ইমাম মালিক ইবন আনাস রহ. (১৭৯ হি.) পড়ানো হয়।
বুখারি শরিফ, মুসলিম শরিফ, তিরমিযি শরিফ, সুনানে নাসাই শরিফ, সুনানে আবু দাউদ শরিফ, সুনান ইবনে মাজাহকে কুতুবে সিত্তাহ বা সিহাহ আস সিত্তাহ বলা হয়।
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ দরসে নেজামীর আসল ইতিহাস। সূত্র কওমি মাদ্রাসা ওয়েব।
- ↑ ক খ দরসে নেজামি: একটি পর্যালোচনা (লেখক: নাসিম ইমরান)। সূত্র: ফাতেহ২৪
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৭ এপ্রিল ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০১৪।
- ↑ শিক্ষাদর্শন ও ইসলাম ২০০৪, সম্পাদনা পরিষদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
- ↑ কওমি মাদ্রাসা নেসাব ও নেজাম ২০০৩, ইদারাতুল মা’আরিফ, মাদরাসা দারুর রাশাদ
আরও পড়ুন
সম্পাদনাইসলাম বিষয়ক এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |