আ ফ ম খালিদ হোসেন
আবুল ফয়েজ মুহাম্মদ খালিদ হোসেন (যিনি ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন নামে সর্বাধিক পরিচিত) (জন্ম: ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৯) একজন বাংলাদেশি দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত। তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক নায়েবে আমীর, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শিক্ষা উপদেষ্টা, মাসিক আত তাওহীদের সম্পাদক ও বালাগুশ শরকের সহকারী সম্পাদক। তিনি ওমরগণি এমইএস কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান এবং নেজামে ইসলাম পার্টির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন। বিশ্ব মুসলীম লীগের মুখপাত্র দ্যা ওয়ার্ল্ড মুসলিম লীগ জার্নাল সহ বিভিন্ন সাময়িকীতে তার দুই শতাধিক গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত ইসলামী বিশ্বকোষ দ্বিতীয় সংস্করণের ৩ থেকে ৯ খণ্ড ও সীরাত বিশ্বকোষ সম্পাদনা করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২০ টি। এছাড়াও তিনি ৪টি জাতীয় পত্রিকার নিয়মিত লেখক।
আল্লামা, ডক্টর আ ফ ম খালিদ হোসেন | |
---|---|
অধ্যাপক, ওমরগণি এমইএস কলেজ | |
অফিসে ২২ জুলাই ১৯৯২ – ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ | |
নায়েবে আমীর, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ | |
অফিসে ১৫ নভেম্বর ২০২০ – ২৫ এপ্রিল ২০২১ | |
শিক্ষা উপদেষ্টা, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ | |
দায়িত্বাধীন | |
অধিকৃত কার্যালয় ২ জানুয়ারি ২০২১ | |
ব্যক্তিগত | |
জন্ম | |
ধর্ম | ইসলাম |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
পিতামাতা |
|
জাতিসত্তা | বাঙালি |
যুগ | আধুনিক |
আখ্যা | সুন্নি |
ব্যবহারশাস্ত্র | হানাফি |
আন্দোলন | দেওবন্দি |
প্রধান আগ্রহ | হাদিস, ফিকহ, লেখালেখি, তাসাউফ, ইসলামের ইতিহাস |
উল্লেখযোগ্য কাজ |
|
যেখানের শিক্ষার্থী | |
আত্মীয় |
|
উচ্চশিক্ষায়তনিক পটভূমি | |
অভিসন্দর্ভ | হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর খুতবা : একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক গবেষণা (The Sermons of the Prophet Muhammad saw. : A socio-cultural Study) (২০০৬) |
ডক্টরাল উপদেষ্টা | ড. শাহ মুহাম্মদ শফিকুল্লাহ |
মুসলিম নেতা | |
ওয়েবসাইট | www.afmkhalid.com |
জন্ম ও বংশসম্পাদনা
খালিদ হোসেন ১৯৫৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত সাতকানিয়া উপজেলার মাদার্শা ইউনিয়নের মক্কার বাড়ির এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ একজন ইসলামি পণ্ডিত ছিলেন।[১][২][৩]
শিক্ষাজীবনসম্পাদনা
বাবুনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির মাধ্যমে তার শিক্ষাজীবনের সূচনা হয়। এখানে তিনি তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত তিনি আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ায় লেখাপড়া করেন। ১৯৭১ সালে সাতকানিয়া আলিয়া মাহমুদুল উলুম মাদ্রাসা থেকে প্রথম বিভাগে আলিম ও ১৯৭৩ সালে ফাযিল পাশ করেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত চট্টগ্রাম চন্দনপুরা দারুল উলুমে হাদিস অধ্যয়ন করেন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে কামিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি আশরাফ আলী থানভীর শিষ্য মুহাম্মদ আমিনের কাছে সহীহ বুখারী, চট্টগ্রামের মীরসরাই থানার নিজামপুর এলাকার বাসিন্দা মতিউর রহমান নিযামীর কাছে সহীহ মুসলিম, ইসমাইল আরাকানী কাসেমীর কাছে সুনান আত-তিরমিজী, নাওয়াব হাসান কাসেমীর কাছে সুনানে আবু দাউদ পড়েছেন।[১]
১৯৮২ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে বিএ (অনার্স) ও ১৯৮৩ সালে একই বিষয়ে এমএ পাশ করেন। ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপ নিয়ে ‘হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর খুতবা : একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক গবেষণা ’[ক] বিষয়ের উপর পিএইচডি সম্পন্ন করেন। চট্টগ্রামের আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ার মহাপরিচালক আব্দুল হালিম বুখারী তার শিক্ষকদের মধ্যে অন্যতম।[১]
কর্মজীবনসম্পাদনা
১৯৮৭ সালে সাতকানিয়া আলিয়া মাহমুদুল উলুম ফাযিল মাদ্রাসায় আরবি ভাষা ও সাহিত্যের প্রভাষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার কর্মজীবনের সূচনা হয়। ১৯৯২ সাল থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম ওমরগণি এমইএস কলেজে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।[৪][৫] ২০০৭ সাল থেকে আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ার ধর্মীয় ও সাহিত্য বিষয়ক মুখপত্র মাসিক আত তাওহীদের সম্পাদক ও হালিশহর এ-ব্লক হজরত উসমান (রা.) জামে মসজিদের খতিব, আল জামিয়াতুল আরবিয়াতুল ইসলামিয়া জিরির মুহাদ্দিস হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।[৬][৭][৮]
এছাড়াও তিনি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে দেড় বছর খণ্ডকালীন অধ্যাপক, হারুন ইসলামাবাদীর আমলে আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ার বাংলা ভাষা ও সাহিত্য গবেষণা বিভাগে ৪ বছর, সুলতান যওক নদভীর আহ্বানে জামেয়া দারুল মাআরিফ আল ইসলামিয়ায় ‘ওসিলাতুল ইলাম’ বিষয়ে এক বছর শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ছাত্রজীবনে (১৯৭৩ — ১৯৮৪) দৈনিক সংবাদ, দৈনিক বাংলার বাণী ও The Bangladesh Times এর পটিয়া মহকুমা সংবাদদাতা এবং The New Nation এর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।[১]
২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমীর এবং ২০২১ সালের ২ জানুয়ারি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শিক্ষা উপদেষ্টা নির্বাচিত হন।[৯][১০][১১]
তাসাউফসম্পাদনা
তিনি নানুপুর মাদ্রাসার প্রাক্তন মহাপরিচালক জমির উদ্দিন নানুপুরী ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রয়াত আমীর শাহ আহমদ শফীর হাতে বায়আত হন। নানুপুরী তাকে ইজাজত প্রদান করেছিলেন। জুলফিকার আহমদ নকশবন্দীর সাথেও তার আধ্যাত্মিক সম্পর্ক রয়েছে।[১২]
প্রকাশনাসম্পাদনা
১৯৭০ সালে আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ার মুখপাত্র মাসিক আত-তাওহীদে ‘হযরত উমর ফারুক (রা.)-এর জীবন ও কর্ম’ শীর্ষক তার প্রথম লেখা ছাপানো হয়। বর্তমানে তিনি ৪টি জাতীয় পত্রিকার নিয়মিত লেখক, মাসিক আত তাওহীদের সম্পাদক ও আরবি পত্রিকা বালাগুশ শরকের সহকারী সম্পাদক।[১৩][১৪][১৫] বিশ্ব মুসলীগ লীগের মুখপাত্র দ্যা ওয়ার্ল্ড মুসলিম লীগ জার্নাল সহ বিভিন্ন সাময়িকীতে তার দুই শতাধিক গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত ইসলামী বিশ্বকোষ দ্বিতীয় সংস্করণের ৩ থেকে ৯ খণ্ড ও সীরাত বিশ্বকোষ সম্পাদনা করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২০ টি।[১] তার মধ্যে রয়েছে :[১২]
- নিভে যাওয়া দীপশিখা
- মাসলাকে উলামায়ে দেওবন্দ (অনুবাদ)
- মূল: কারী মুহাম্মদ তৈয়ব
- ভারতবর্ষে মুসলমানদের অবদান (অনুবাদ)
- মূল: আবুল হাসান আলী নদভী
- কারওয়ানে যিন্দেগী-৩য় খন্ড (আত্মজীবনী মূলক রচনা)
- মূল: আবুল হাসান আলী নদভী
- খতীবে আযম মাওলানা ছিদ্দিক আহমদ: একটি যুগ বিপ্লব উৎস (১৯৮৯) [১৬]
- নির্বাচিত প্রবন্ধ-১ [১৭]
- সম্পাদিত গ্রন্থ
- সীরাতে আয়েশা
- মূল: সুলাইমান নদভী
- বিশ্বময় ইসলামের জাগরণ
- এসো নারী পর্দা করি
- পুরুষ মহিলাদের নামায শিক্ষা
এছাড়াও তিনি জুলফিকার আহমদ নকশবন্দীর বাংলায় অনূদিত গ্রন্থসমূহের সত্যতা ও শুদ্ধতা যাচাই বিষয়ক কমিটির সদস্য।
আরও দেখুনসম্পাদনা
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
পাদটীকাসম্পাদনা
- ↑ মূল The Sermons of the Prophet Muhammad saw. : A socio-cultural Study.
উদ্ধৃতিসম্পাদনা
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "বিশেষজ্ঞ আলেমের প্রয়োজন খুব বেশি: ড. আফম খালিদ হোসেন"। বাংলানিউজ২৪.কম। ২০২১-০৩-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-২৪।
- ↑ সাইফুল্লাহ, খালিদ (২৩ ডিসেম্বর ২০২০)। "কে হচ্ছেন হেফাজতের পরবর্তী মহাসচিব?"। নয়া দিগন্ত। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-২২।
- ↑ রিপোর্টার, নিজস্ব (৮ নভেম্বর ২০০৯)। "ইসলাম পন্থীদের কিছু আপত্তি উত্থাপন"। ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-২৪।
- ↑ "ধর্মীয় নেতাদের এইচআইভি / এইডস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান"। দ্যা ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০০৮-১০-১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-২৪।
- ↑ রহমান, আরিফুর (২০১৯-০২-১৫)। "ড. আ ফ ম খালিদ হোসাইনের সংবর্ধনা"। দৈনিক পূর্বদেশ। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-২৪।
- ↑ হারুন, যাকারিয়া (১৯ নভেম্বর ২০১৭)। "সৌদির কাছে এখন ক্ষমতাই মূল : ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন"। দৈনিক আমাদের সময়। ২০২০-০৬-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-২৪।
- ↑ আফম খালিদ হোসেন। "'রাহবার পাঠকদের ঈমানী চেতনাকে শাণিত করবে'"। দৈনিক ইনকিলাব। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-২৪।
- ↑ "দেশে ইসলামের জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে -ডক্টর আ ফ ম খালিদ হোসেন"। দৈনিক ইনকিলাব। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-২৪।
- ↑ "চট্টগ্রামে হেফাজতে ইসলাম—জাগো হিন্দু পরিষদের 'রুদ্ধদ্বার বৈঠক'"। চট্টগ্রাম প্রতিদিন। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-২৪।
- ↑ "হেফাজতের নতুন কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেলেন যারা"। আর টিভি। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-২৪।
- ↑ "ইসলামী আন্দোলনের নতুন কমিটি, ফের আমীর চরমোনাই পীর"। যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০১-০২।
- ↑ ক খ ইকরামুল হক, এফএসডি (২০২০-১২-২৭)। "ড. মাওলানা আ.ফ.ম. খালিদ হোসেন এর সংক্ষিপ্ত জীবন ও কর্ম"। কওমিপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-২৭।
- ↑ "বাংলা চর্চায় এগিয়ে যাচ্ছেন কওমি আলেমরা"। বাংলানিউজ২৪.কম। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-২৪।
- ↑ আফম খালিদ হোসেন (২০১৯-০৮-০৬)। "আল্লাহর ক্রোধের নিদর্শন হয়ে টিকে আছে 'বাহরুল মায়্যিত'"। কালের কণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-২৪।
- ↑ আ ফ ম খালিদ হোসেন। "নেদারল্যান্ডসে ইসলামের ক্রমবিস্তার | কালের কণ্ঠ"। কালের কন্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-২৪।
- ↑ "খতীবে আযম মাওলানা ছিদ্দিক আহমদ: একটি যুগ বিপ্লব উৎস"। গুগল বুকস।
- ↑ মাহফুজ পারভেজ, ডক্টর। "ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বিরচিত নির্বাচিত প্রবন্ধ-১"। জামিয়া পটিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-২৪।
গ্রন্থপঞ্জিসম্পাদনা
- বাবর, জহির উদ্দিন (২০২২)। দশ লেখক দশ জীবন। বাংলাদেশ: রাহনুমা প্রকাশনী।
- "বিশেষজ্ঞ আলেমের প্রয়োজন খুব বেশি: ড. আফম খালিদ হোসেন"। বাংলানিউজ২৪.কম। ২০২১-০৩-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-২৪।
- ইকরামুল হক, এফএসডি (২০২০-১২-২৭)। "ড. মাওলানা আ.ফ.ম. খালিদ হোসেন এর সংক্ষিপ্ত জীবন ও কর্ম"। কওমিপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-২৭।