মিশর
মিশর ( আরবি: مصر: মিস্ব্র্; কথ্য মিশরীয় আরবি : مصر মাস্ব্র্) হল আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর-পূর্ব কোণ ও এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ–পশ্চিম কোণে অবস্থিত একটি আন্তঃমহাদেশীয় ভূমধ্যসাগরীয় রাষ্ট্র। এর পূর্ণ সরকারী নাম হল মিশর আরব প্রজাতন্ত্র। প্রাচীনযুগে মিশর সমগ্র বিশ্বের সবচে' প্রাচীন ও সবচে' গুরুত্বপূর্ণ একটি সভ্যতা ছিল। ১৯৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত আধুনিক মিশরের রাজধানীর নাম কায়রো। মিশরের আয়তন ১০,০১,৪৫০ বর্গকিলোমিটার; সেইসঙ্গে প্রায় ১০ কোটি জনসংখ্যার দেশ মিশর উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং আরব বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল রাষ্ট্র; সমগ্র আফ্রিকা মহাদেশের তৃতীয় সর্বাধিক জনবহুল রাষ্ট্র (নাইজেরিয়া ও ইথিওপিয়ার পর)। সারা বিশ্বে এটি ১৩তম সর্বাধিক জনবহুল রাষ্ট্র। দেশের জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটার ১০০ জন, যা বিশ্বের ৮৩তম সর্বোচ্চ।
মিশর আরব প্রজাতন্ত্র جمهورية مصر العربية গুম্হুরিয়াত্ মিস্ব্র্ আল্ ʿআরাবিয়াহ্ গুম্হুরিয়েত্ মাস্ব্র্ এল্ ʿআরাবিয়াহ্ | |
---|---|
রাজধানী ও বৃহত্তম নগরী বা বসতি | কায়রো |
সরকারি ভাষা | আরবি |
সরকার | অর্ধ-রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্র |
• রাষ্ট্রপতি | আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি |
মোস্তফা মাদবৌলী | |
প্রতিষ্ঠিত | |
প্রায় ৩১৫০ BCE | |
• স্বাধীনতা প্রদান করেছে | ফেব্রুয়ারি ২৮ ১৯২২ |
• প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেছে | জুন ১৮ ১৯৫৩ |
• জাতীয় দিবস | ২৩শে জুলাই (২৩শে জুলাই ১৯৫২ উদযাপিত হয়েছে) |
আয়তন | |
• মোট | ১০,০২,৪৫০ কিমি২ (৩,৮৭,০৫০ মা২) (৩০তম) |
• পানি (%) | ০.৬৩২ |
জনসংখ্যা | |
• ২০০৯ আনুমানিক | ৭৭,৪২০,০০০[১] |
• ১৯৯৬ আদমশুমারি | ৫৯,৩১২,৯১৪ |
জিডিপি (পিপিপি) | ২০১৫ আনুমানিক |
• মোট | $১.০৪৭ ট্রিলিয়ন[২] (২৪তম) |
• মাথাপিছু | $১১,৮৪৯[২] (১০০তম) |
জিডিপি (মনোনীত) | ২০১৫ আনুমানিক |
• মোট | $৩৩০.৭৬৫ বিলিয়ন[২] (৩৪তম) |
• মাথাপিছু | $৩৭৪০[২] (১১৫তম) |
জিনি (2008) | 30.8[৩] মাধ্যম |
মানব উন্নয়ন সূচক (2014) | 0.690[৪] মধ্যম · 108th |
মুদ্রা | মিশরীয় পাউন্ড (ইজিপি) |
সময় অঞ্চল | ইউটিসি+২ |
কলিং কোড | ২০ |
ইন্টারনেট টিএলডি | .eg |
|
বৃহত্তম নগরী কায়রোর বাইরে আলেকজান্দ্রিয়া, আল-জিজাহ, শুবরা আল–খায়মাহ, পোর্ট সাইদ ও সুয়েজ হল কিছু প্রধান প্রধান নগরী। মিশর একটি আংশিক-রাষ্ট্রপতিশাসিত প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং মিশরে একটি এককাক্ষিক আইনসভা আছে। রাষ্ট্রপতি হলেন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী হন সরকার প্রধান।
মিশর আফ্রিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত। এর সাথে পশ্চিমে লিবিয়া, দক্ষিণে সুদান, উত্তর-পূর্বে ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি-অধ্যুষিত গাজা উপত্যকার সীমান্ত রয়েছে। এর উত্তরে ভূমধ্যসাগর ও পূর্বে আকাবা উপসাগর ও লোহিত সাগর। আকাবা উপসাগরের অপর তীরে জর্দান এবং লোহিত সাগরের অপর তীরে সৌদি আরব অবস্থিত।। ভূমধ্যসাগরের অপর তীরে গ্রিস, সাইপ্রাস ও তুরস্ক অবস্থিত। মিশরের ভেতরে দিয়ে বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ নদী নীল নদ দক্ষিণ থেকে উত্তরে প্রবাহিত হয়েই ভূমধ্যসাগরে গিয়ে পতিত হয়েছে। নীল নদের দুপাশের উপত্যকা একটি সমতল নিম্নভূমি, যার প্রশস্ততা ৮ থেকে ১৬ কিলোমিটার এবং আয়তন প্রায় চল্লিশ হাজার বর্গকিলোমিটার। কায়রো নগরীর উত্তরে গিয়ে মোহনার কাছে নদীটি পাখার মত শাখা প্রশাখা নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে ঘনবসতিপূর্ণ নীল নদ ব-দ্বীপ এলাকাটি গঠন করেছে।
ঊর্ধ্ব মিশরের নীল নদ উপত্যকা ও নিম্ন মিশরের নীল নদ ব-দ্বীপ এবং কিছু বিক্ষিপ্ত মরূদ্যান মিশরের প্রায় সমস্ত কৃষিখাতের ভিত্তি এবং এখানেই দেশটির প্রায় সমস্ত জনগণ (প্রায় ৯৫%) বাস করে। এজন্য মিশরকে "নীল নদের দান" বলা হয়। নীল নদ এবং তার উর্বর উপত্যকা মিশরকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে; পূর্বের মরুভূমি এবং পশ্চিমের মরুভূমি। পশ্চিমের ঊষর মরুভূমিটি একটি বালুকাবৃত পাথুরে সমতল মালভূমি, যা দেশের দুই-তৃতীয়াংশ আয়তন গঠন করে; এখানে কিছু জন-অধ্যুষিত মরূদ্যানের দেখা মেলে এবং এর বিপরীতে পূর্বের অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র ( দেশের এক-চতুর্থাংশ আয়তনবিশিষ্ট) অর্ধ-ঊষর মরুভূমিটি প্রায় সম্পূর্ণ বসবাসের অযোগ্য, এবং এর দক্ষিণ-পূর্বভাগে ঢেউখেলানো পাহাড়-পর্বত রয়েছে। পূর্বের মরুভূমিটির উত্তর-পূর্ব দিকে রয়েছে সিনাই উপদ্বীপ, যা এশিয়া ও ইউরোপকে সংযোগকারী একমাত্র স্থলযোজক। এসব ছাড়াও সিনাই উপদ্বীপটির দক্ষিণভাগে কিছু পর্বত আছে। উপদ্বীপটি সুয়েজ খালের মাধ্যমে মিশরের বাকী অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন।
মিশরে মূলত দুইটি ঋতু বিদ্যমান - অপেক্ষাকৃত শীতল বা নাতিশীতোষ্ণ শীতকাল ও অত্যন্ত উত্তপ্ত গ্রীষ্মকাল। এছাড়া মিশরের জলবায়ু খুবই শুষ্ক ও রৌদ্রোজ্জ্বল। উপকূলীয় অঞ্চল ব্যতীত অন্যত্র বৃষ্টিপাত বিরল। পশ্চিমের মরুভূমিতে উদ্ভিদের উপস্থিতি বিরল। পূর্বের মরুভূমি ও সিনাই উপদ্বীপে কাঁটাগুল্ম, খর্বাকার মরু উদ্ভিদ ও ছোট লতাপাতা দেখা যায়। হাতেগোনা কিছু স্থানীয় বৃক্ষের প্রজাতির মধ্যে আকাসিয়া বৃক্ষ উল্লেখযোগ্য। নীল নদের উপকূলবর্তী অঞ্চলে খেজুর গাছ ও বহু জলজ উদ্ভিদ (যেমন ঘাস ও নলখাগড়া) জন্মায়। মিশরের বন্যপ্রাণীগুলির মধ্যে পাহাড়ি ভেড়া ও ছাগল, গাজেল হরিণ, বামনাকার মরু শেয়াল, বুনো খরগোশ, খেঁকশিয়াল ও বেজি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া তীক্ষ্ণদন্তী, কীটপতঙ্গ, গিরগিটি ও সাপও সুলভ। মিশরে সারা বছর ধরেই বহু পাখি বাস করে কিংবা আভিবাসনের পথে অতিথি পাখি হিসেবে কিছুদিন থেকে যায়।
মিশরের ৯৯% অধিবাসী প্রাচীন মিশরের হামীয় জাতি এবং মধ্যযুগ থেকে অভিবাসনের মাধ্যমে আগত আরব জাতির লোকদের মধ্যে বহু প্রজন্মের আন্তঃবিবাহের ফলশ্রুতিতে উদ্ভূত এক ধরনের মিশ্র বংশধর জাতি। অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে নুবীয়, ভারতীয় বেদে বা জিপসি, আর্মেনীয় ও গ্রিক জাতির নাম প্রণিধানযোগ্য। আরবি মিশরের সরকারী ভাষা; এছাড়া ফরাসি, ইংরেজি ও বার্বার ভাষাগুলিও প্রচলিত। ইসলাম এখানকার সরকারী ধর্ম; জনগণের ৯০%ই সুন্নি মতাবলম্বী মুসলমান। তবে প্রায় ১০% মিশরীয় নাগরিক খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী; এদের সিংহভাগই রোমান আমল থেকে কপ্টীয় মূলধারার মন্ডলীর অনুসারী। বাণিজ্য ও প্রশাসনে কপ্টীয় খ্রিস্টানদের গুরত্বপূর্ণ প্রভাব আছে। এছাড়া মিশরে একটি ক্ষুদ্র ইহুদী সম্প্রদায়ও বাস করে। মিশরের সিংহভাগ জনগণ নীল নদের উপত্যকা ও ব-দ্বীপে বাস করে। অর্ধেকেরও বেশি লোক গ্রামাঞ্চলে বাস করে।
মিশরের মুদ্রার নাম মিশরীয় পাউন্ড, যাকে আবার ১০০ পিয়াস্ত্রেতে ভাগ করা যায়। উন্নয়নশীল রাষ্ট্র মিশরে মূলত একটি সমাজতান্ত্রিক তবে আংশিকভাবে উন্মুক্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বিদ্যমান। কৃষি, খনন ও শিল্পোৎপাদন মিশরের অর্থনীতির তিন প্রধান খাত, যেখানে দেশের শ্রমশক্তির এক-তৃতীয়াংশ নিয়োজিত। দেশটি খনিজ তেল (পেট্রোলিয়াম), প্রাকৃতিক গ্যাস ও সোনা উত্তোলন করে। দেশটি মূল্যবান অপরিশোধিত তেল, তুলাজাত পণ্য, বস্ত্র, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, রাসায়নিক দ্রব্য, লোহা ও ইস্পাত উৎপাদন করে। মিশরের শ্রমশক্তির এক-চতুর্থাংশ কৃষিকাজে নিয়োজিত। মিশর তুলা ও ধান অর্থকরী শস্য হিসেবে উৎপাদন করে এবং এগুলি বিদেশে রপ্তানি করে অর্থোপার্জন করে। এছাড়া এখানে আখ, ভুট্টা, টমেটো, গম, আলু, কমলা, খেজুর ও আঙুরের চাষ হয়। সুয়েজ খাল দিয়ে গমনকারী বাৎসরিক ১৪ হাজারেরও বেশি জাহাজগুলি থেকে মাশুল আদায় করেও মিশর বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করে। এর বাইরে পর্যটন খাতটিও মিশরের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি বছর প্রায় দেড় কোটি পর্যটক গিজা শহরের কাছে অবস্থিত স্ফিংক্স, মহা পিরামিডগুলি ও অন্যান্য প্রাচীন স্মৃতিস্তম্ভগুলি পরিদর্শন করতে মিশরে আগমন করে। সাম্প্রতিককালে সন্ত্রাসবাদী হামলা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পর্যটন ও বৈদেশিক বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া মিশরের স্থূল অভ্যন্তরীন উৎপাদনের ১০%-এরও বেশি অংশ[৫] ২০ লক্ষেরও বেশি প্রবাসী মিশরীয় শ্রমিকদের পাঠানো অর্থ থেকে আসে, ২০১৯ সালে যার পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৪০০ কোটি মার্কিন ডলার।[৬] বর্তমানে ক্রয়ক্ষমতার সমতা গণনা করে মিশরের স্থুল অভ্যন্তরীন উৎপাদন (জিডিপি) আফ্রিকার মহাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ এবং সারা বিশ্বের ১৯তম সর্বোচ্চ; কিন্তু মাথাপিছু আয় বিশ্বের ৯৪তম। দেশটিতে প্রতি ১ হাজার জনে ০.৭৯ জন চিকিৎসক, যা বিশ্বের মধ্যে ১২৬তম; জাতিসংঘ শিক্ষা সূচকে অবস্থান ১২৬তম, প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ৭১.৮ বছর, যা বিশ্বের ১১১তম।
মিশরে বিশ্বের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী ধারাবাহিক সভ্যতাটি অবস্থিত। আনুমানিক ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ঊর্ধ্ব ও নিম্ন মিশর অঞ্চলটি একীভূত হয়ে মিশরে জন্ম হয়। মিশরের ইতিহাসের প্রথম ২৫০০ বছরের প্রায় পুরোটা জুড়েই (২৯২৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৩৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত) স্থানীয় রাজা ও রাণীরা দেশটি শাসন করেন। মিশরের প্রাচীন ইতিহাসকে পুরাতন, মধ্য ও নতুন রাজ্য এই তিন পর্বে ভাগ করা হয়েছে এবং এগুলিকে ধারাবাহিকভাবে ৩১টি রাজবংশ শাসন করে। মিশরের পিরামিডগুলি পুরাতন রাজ্যের সাক্ষী, ওসিরিসের ধর্মীয় গোত্র ও উৎকৃষ্ট ভাস্কর্যশিল্প মধ্য রাজ্যের সাক্ষ্য বহনকারী এবং মিশরীয় সাম্রাজ্য ও ইহুদীদের দেশত্যাগের ঘটনাগুলি নতুন রাজ্যের সময়ে ঘটেছিল। ৩৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিক ম্যাসিডোনিয়া রাজ্যের রাজা মহামতি আলেকজান্ডার মিশর আক্রমণ করেন। ম্যাসিডোনীয় জাতির লোকেরা এরপর প্রায় ৩০০ বছর ধরে ৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত দেশটি শাসন করে, যাকে টলেমীয় পর্ব বলা হয়। এরপরে রোমানরা দেশটি দখলে নেয় এবং ৩৯৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এটিকে শাসন করে। পরবর্তীতে এটি বাইজেন্টীয় সাম্রাজ্যের অংশে পরিণত হয়। ৩১৩ সালে রোমান সম্রাট কোনস্তানতিন খ্রিস্টানদেরকে ধর্মপালনের অনুমতি দিলে মিশরে কপ্টীয় খ্রিস্টাব মন্ডলীর উদ্ভব ঘটে। এর পরে ৬৪২ খ্রিস্টাব্দে এসে আরব মুসলমানেরা মিশর বিজয় করে। এর কয়েক শতাব্দীর মধ্যেই মিশর একটি আরব রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হয়। মিশরের অধিবাসীরা ধীরে ধীরে খ্রিস্টধর্ম থেকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়। এসময় মিশর উমায়িদ ও আব্বাসিদ রাজবংশের অধীনে ছিল। ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দে তুর্কি উসমানীয় সাম্রাজ্য মিশরের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেয়। এসময় মিশরের সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অবনমন ঘটে। ১৭৯৮ সালে ফ্রান্সের সেনাপতি নেপোলিয়ন মিশর আক্রমণ করেন, কিন্তু উসমানীয় সাম্রাজ্য দ্রুত ক্ষমতা ফিরে পেতে সক্ষম হয়। উসমানীয় সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা মুহাম্মাদ আলিকে ১৮০৫ খ্রিস্টাব্দে মিশরের প্রশাসক বানানো হয়। তিনি দেশটির আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে বেশ কিছু সংস্কার সাধন করেন। আলির মৃত্যুর পরে তার পরিবারের সদস্যরা প্রায় ১০০ বছর ধরে মিশরের শাসনভার নিজেদের হাতে রেখে দেন। ১৮৫৯ থেকে ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দ সময়কালে একটি ফরাসি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে সুয়েজ খাল তৈরি করার অনুমতি দেওয়া হয়। ১৮৮২ সালে ব্রিটিশ সেনারা মিশর দখলে নিয়ে নেয় এবং ১৯১৪ সালে দেশটিকে যুক্তরাজ্যের উপর নির্ভরশীল একটি অঞ্চলের মর্যাদা দেয়। ১৯২২ সালে মিশর নামমাত্র স্বাধীনতা লাভ করে এবং এটিকে একটি সংবিধানিক রাজতন্ত্রে পরিণত করা হয়। কিন্তু এতে ব্রিটিশ সেনা উপস্থিতি অব্যাহত থাকে। ১৯৪০-এর দশকে দেশটি আরব লিগ নামের একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করে, যাতে একাধিক আরব রাষ্ট্র সহযোগিতার উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়। আরব লিগ মিশরের প্রতিবেশী অঞ্চল ফিলিস্তিনের স্থানীয় আরব জনগণ ও সম্প্রতি ইউরোপ থেকে বহিরাগত ইহুদীদের মধ্যবর্তী ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্বের মধ্যে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৪৮ সালে ইহুদীরা ফিলিস্তিনের একটি অংশকে ইসরায়েল রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করলে মিশর ও তার আরব মিত্ররাষ্ট্রগুলি ইসরায়েলকে আক্রমণ করে কিন্তু পরাজিত হয়। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে একটি সামরিক দল মিশরের রাজা ফারুককে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে নির্বাসনে পাঠায়, ব্রিটিশ সেনাদের দেশ থেকে উৎখাত করে এবং তাদের নেতা জামাল আবদেল নাসের প্রায় ২০০০ বছর পরে প্রথম স্থানীয় মিশরীয় হিসেবে দেশটির শাসনক্ষমতার অধিকারী হন। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে মিশর একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়। নাসের মিশরকে আরব বিশ্বের নেতৃস্থানীয় রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬১ সালে মিশর ও সিরিয়া একত্রে মিলে একীভূত আরব প্রজাতন্ত্র নামের একটি রাষ্ট্র গঠন করেছিল, কিন্তু সেটি টেকেনি। নাসের আরব সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা ছিলেন। তিনি ব্রিটিশদের কাছ থেকে অনেক শিল্প কারখানা ও সুয়েজ খালের রাষ্ট্রায়ত্তকরণ সম্পন্ন করেন। তাঁর শাসনামলে মিশর ও ইসরায়েলের মধ্যে আরও দুইবার (১৯৫৬ ও ১৯৬৭ সালে) যুদ্ধ হয়। ১৯৭০ সালে আনওয়ার এল-সাদাত মিশরের রাষ্ট্রপতি হন। ১৯৭৩ সালে মিশর ইসরায়েলের সাথে আরেকটি স্বল্পমেয়াদী যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। ১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি সাদাত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় তৎকালীন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী মেনাকেম বেগিনের সাথে বৈঠক করেন। এই বৈঠকের সূত্র ধরে ১৯৭৯ সালে মিশর ও ইসরায়েলের মধ্যে এক ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি (ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি) সম্পাদিত হয়। মিশর গাজা উপত্যকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয় ও ইসরায়েলকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। বেশির ভাগ আরব রাষ্ট্রই এই চুক্তির ব্যাপারে নারাজ ছিল। ১৯৮১ সালে মুসলমান চরমপন্থীরা সাদাতকে হত্যা করে। নতুন রাষ্ট্রপতি হোসনি মুবারকের নেতৃত্বে মিশরের সাথে অন্যান্য আরব রাষ্ট্রের সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। তবে মিশর ১৯৯১ সালে ইরাকের বিরুদ্ধে সম্মিলিত জোটের অংশ হিসেবে ১ম পারস্য উপসাগরীয় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। "আরব বসন্ত" পর্বে এসে একটি গণঅভ্যুত্থানের বদৌলতে মুবারকের সেনা-সমর্থিত শাসনের অবসান ঘটে এবং নির্বাচনে মুসলমান ভ্রাতৃত্ব নামক ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের জয় হয়, কিন্তু তাদেরকেও কিছুদিন পরে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। বর্তমানে মিশরে ইসলামী উগ্রবাদের উত্থান ঘটেছে এবং এতে স্থানীয় মুসলমান ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে বহু শতাব্দী যাবৎ বিদ্যমান সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্কে চিড় ধরেছে। এছাড়া শিক্ষা ও অর্থনৈতিক মর্যাদার ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ হ্রাস পেয়েছে। দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যার মধ্যে বেকারত্ব ও দারিদ্র্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষত দক্ষিণ মিশর অঞ্চলে। আধুনিক মিশর রাষ্ট্রটি মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। দেশটির বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি। মিশরকে উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও ইসলামী বিশ্বের একটি আঞ্চলিক শক্তি, এবং বিশ্বমঞ্চে একটি মধ্যম শক্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। দেশটি জাতিসংঘ, আরব লিগ, জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলন, আফ্রিকান ঐক্য এবং ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
- the_ramesis_||_was_the_Pharoah_King_who_was_killed_by_the_Prophet_of_Allah_His_name_was_HZ. Musa_a.
- the_Story:of_Hz. Yousuf_(a.)_and_his_father_Hz. Yaqub_A._reminds_us_the_right_way_between_his_(Yousuf A.)_brothers.
- Islam_الإسلام هو الدين الوحيد الذي اختاره الله تعالى.
- اشهد ان لا اله الا الله وحده لا شريك له واشهد ان محمد ا عبده ورسوله
لا اله الا الله محمد رسول الله﷼
নামের উৎস
সম্পাদনাপ্রাচীন মিশরের ভাষায় দেশটির একটি নাম ছিল "কমেট" (
|
km.t) বা কালো মাটির দেশ। নীল নদের বন্যার সাথে বয়ে আনা উর্বর কালো মাটি যা মরুভূমির মাটি "deshret" (⟨dšṛt⟩) অথবা "লাল জমি" থেকে আলাদা।[৭]
ইতিহাস
সম্পাদনালিখিত ইতিহাস অনুসারে প্রায় ৩২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকেই একটি সংহত রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে মিশর বিদ্যমান। সেচভিত্তিক কৃষি, সাক্ষরতা, নগরজীবন, এবং বড় মাপের রাজনৈতিক সংগঠনবিশিষ্ট ইতিহাসের প্রথম সভ্যতাগুলির একটি নীল নদের উপত্যকাতে গড়ে উঠেছিল। সাংবাৎসরিক বন্যা মিশরকে একটি স্থিতিশীল কৃষিভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে সাহায্য করে। আফ্রিকার সংযোগস্থলে সামরিক কৌশলগত স্থানে অবস্থিত ছিল বলে এবং ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা এবং ভারত ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্যপথের উপর অবস্থিত ছিল বলে এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতক থেকে বিভিন্ন বিদেশি শক্তি দেশটি দখল করে এবং এখানে নতুন নতুন ধর্ম ও ভাষার প্রবর্তন করে। কিন্তু মিশরের সমৃদ্ধ কৃষি সম্পদ, গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অবস্থান এবং দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক ঐক্যের ফলস্বরূপ এখনও পুরনো ঐতিহ্য ও রীতিনীতিগুলি হারিয়ে যায়নি। বর্তমান মিশর আরবিভাষী মুসলিম রাষ্ট্র হলেও এটি অতীতের খ্রিস্টান, গ্রীক-রোমান ও প্রাচীন আদিবাসী ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি এখনও ধরে রেখেছে।
৬৪১ সালে আরব মুসলিমরা মিশরে আসলে মিশরের মানুষ দলে দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। তখন থেকেই মিশর মুসলিম ও আরব বিশ্বের একটি অংশ। আধুনিক মিশরের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী। দেশটি যখন উসমানীয় সাম্রাজ্যের একটি অংশ ছিল, তখন ১৮০৫ থেকে ১৮৪৯ সাল পর্যন্ত তিনি দেশটির বড়লাট ছিলেন। ১৮৮২ সালে ব্রিটিশ সেনারা মিশর দখল করে। এরপর প্রায় ৪০ বছর মিশর ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল। ১৯২২ সালে দেশটি একটি রাজতন্ত্র হিসেবে স্বাধীনতা অর্জন করলেও ব্রিটিশ সেনারা মিশরে থেকে যায়। ১৯৫২ সালে জামাল আব্দেল নাসের-এর নেতৃত্বে একদল সামরিক অফিসার রাজতন্ত্র উৎখাত করে এবং একটি প্রজাতন্ত্র হিসেবে মিশর প্রতিষ্ঠা করে। নাসের ১৯৫৬ সালের মধ্যে মিশর থেকে সমস্ত ব্রিটিশ সেনাকে সরিয়ে দেন। ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রপতি আনোয়ার আল-সাদাতের নেতৃত্বে মিশর প্রথম জাতি হিসেবে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের সাথে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে। বর্তমানে মিশর সমগ্র আরব বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। ২০০৫ সালে দেশটির প্রথম বহুদলীয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
রাজনীতি
সম্পাদনাভূগোল
সম্পাদনামিশর আফ্রিকার উত্তর পূর্ব কোণে অবস্থিত। মিশরের ভূমি খুবই উর্বর যার ফলে প্রচুর শষ্য উৎপাদিত হয় এখানে। যার ফলে একে কৃষির তৃণভূমি বলা হয়।
ভাষা
সম্পাদনাআরবি ভাষা মিশরের সরকারি ভাষা। মিশরের জনগণেরর অধিকাংশই আরবি ভাষাতে কথা বলে। মিশরে আরবি ভাষার বেশ কিছু স্থানীয় কথ্য উপভাষা প্রচলিত। মিশরের জিপসি সম্প্রদায়ের প্রায় অর্ধেক লোক জিপসি দোমারি ভাষাতে কথা বলেন। এছাড়াও এখানে আর্মেনীয় ভাষা, গ্রিক ভাষা এবং নীল নুবীয় ভাষা প্রচলিত। কিছু ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে সীমিত পরিমাণে কপ্টীয় ভাষা ব্যবহার করা হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্পে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হয়।
খেলাধুলো
সম্পাদনাদেশটির জনপ্রিয় খেলা ফুটবল। ৭ বার আফ্রিকা কাপ অব নেশন্স জয়ী এই দেশকে ফুটবলে সেরা আফ্রিকান দেশ বলা যায়।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Central Agency for Population Mobilisation and Statistics - Population Clock (July 2008)"। ৮ সেপ্টেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ২০০৯।
- ↑ ক খ গ ঘ "Egypt"। International Monetary Fund। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১০-০১।
- ↑ "GINI index"। World Bank। সংগ্রহের তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩।
- ↑ "2015 Human Development Report" (পিডিএফ)। United Nations Development Programme। ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫।
- ↑ https://www.theglobaleconomy.com/Egypt/remittances_percent_GDP/
- ↑ https://www.egypttoday.com/Article/3/83164/Egyptian-expats%E2%80%99-remittances-hit-34B-exceeding-Egypt%E2%80%99s-Central-Bank-figures
- ↑ Rosalie, David (১৯৯৭)। Pyramid Builders of Ancient Egypt: A Modern Investigation of Pharaoh's Workforce। Routledge। পৃষ্ঠা 18।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- সরকারী
- মিশরের সরকারি ওয়েবসাইট ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০ মার্চ ২০০৬ তারিখে (আরবি, ইংরেজি)
- Egypt Information Portal (আরবি, ইংরেজি)
- Egypt Information and Decision Support Center (আরবি, ইংরেজি)
- Egypt State Information Services (আরবি, ইংরেজি, ফরাসী)
- রাষ্ট্র প্রধান এবং মন্ত্রিপরিষদ সদসবৃন্দ
- সাধারণ তথ্য
- Country Profile from the BBC News
- সিআইএ প্রণীত দ্য ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক-এ মিশর-এর ভুক্তি
- Egypt at UCB Libraries GovPubs
- কার্লিতে মিশর (ইংরেজি)
- উইকিমিডিয়া অ্যাটলাসে মিশর
- Egypt Maps - Perry-Castañeda Map Collection
- ওপেনস্ট্রিটম্যাপে মিশর সম্পর্কিত ভৌগোলিক উপাত্ত
- অন্যান্য
- Leonard William King, History of Egypt, Chaldæa, Syria, Babylonia, and Assyria in the Light of Recent Discovery, Project Gutenberg.
- Egyptian History (উরধু) ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৩ মে ২০১৮ তারিখে
- By Nile and Tigris ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২১ নভেম্বর ২০০৮ তারিখে, a narrative of journeys in Egypt and Mesopotamia on behalf of the British museum between the years 1886 and 1913, by Sir E. A. Wallis Budge, 1920 (a searchable facsimile at the University of Georgia Libraries; DjVu &layered PDF ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২১ নভেম্বর ২০০৮ তারিখে format)
- Napoleon on the Nile: Soldiers, Artists, and the Rediscovery of Egypt.
বাংলাদেশ · মিশর · ইন্দোনেশিয়া · ইরান · মালয়েশিয়া · নাইজেরিয়া · পাকিস্তান · তুরস্ক
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |