আল জামিয়াতুল আরবিয়াতুল ইসলামিয়া জিরি
আল জামিয়াতুল আরবিয়াতুল ইসলামিয়া জিরি সংক্ষেপে জিরি মাদ্রাসা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার জিরি ইউনিয়নে অবস্থিত একটি কওমি মাদ্রাসা। এটি বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম কওমি মাদ্রাসা।[১][২] দারুল উলুম দেওবন্দের শাখা হিসেবে হাটহাজারী মাদ্রাসার পর দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে ১৯১০ সালে শাহ আহমদ হাসান এই মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। হাটহাজারী মাদ্রাসার পর এখানেই সর্বপ্রথম হাদিস শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।[৩] এটি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের অধিভুক্ত।
আরবি: الجامعة العربية الإسلامية زيري | |
অন্যান্য নাম | জিরি মাদ্রাসা |
---|---|
প্রাক্তন নাম | মাদ্রাসা হামিয়্যাতুল ইসলাম, জিরি আল মাদ্রাসাতুল আরাবিয়্যা জিরি |
ধরন | কওমি মাদ্রাসা |
স্থাপিত | ১৯১০ |
প্রতিষ্ঠাতা | শাহ আহমদ হাসান |
মূল প্রতিষ্ঠান | দারুল উলুম দেওবন্দ |
অধিভুক্তি | বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ |
ধর্মীয় অধিভুক্তি | ইসলাম |
বাজেট | ২,৫০,০০,০০০ (১৯-২০) |
মহাপরিচালক | মুহাম্মদ খোবাইব |
অবস্থান | ২২°১৭′১৪″ উত্তর ৯১°৫৩′২৫″ পূর্ব / ২২.২৮৭২° উত্তর ৯১.৮৯০২° পূর্ব |
শিক্ষাঙ্গন | পল্লী |
ওয়েবসাইট | jamiaislamiaziri |
শাহ আহমদ হাসান দীর্ঘসময় মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। মাদ্রাসার তৃতীয় মহাপরিচালক শাহ মুহাম্মদ তৈয়বের সময়ে মাদ্রাসার অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়। মাদ্রাসার বর্তমান মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মুহাম্মদ খোবাইব। ২০২১ সালে মাদ্রাসার ১১৫ তম বার্ষিক আন্তর্জাতিক ইসলামি মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।[৪]
ইতিহাস
সম্পাদনাপ্রতিষ্ঠা
সম্পাদনাইসলামি শিক্ষার প্রচার প্রসারে ১৯০১ সালে দারুল উলুম দেওবন্দের আদলে হাটহাজারীতে প্রতিষ্ঠিত হয় দারুল উলুম হাটহাজারী। হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রথমদিকের ছাত্রদের মধ্যে অন্যতম শাহ আহমদ হাসান। হাটহাজারী মাদ্রাসার সফলতা দেখে শাহ আহমদ হাসান এই মাদ্রাসার ন্যায় চট্টগ্রাম শহরে অথবা পটিয়াতে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার আগ্রহ দেখান।[৫] হাটহাজারী মাদ্রাসায় জামাতে উলা শ্রেণিতে পড়াকালীন তিনি বাড়িতে এসে কৈয়গ্রাম নিবাসী আশরাফ আলীর সাথে পরামর্শ করে কৈয়গ্রাম সেতুর পূর্বপ্বার্শে একটি দোকান ঘরে মাদ্রাসার সূত্রপাত করেন।[৬] হাটহাজারী মাদ্রাসায় লেখাপড়া সমাপ্ত করে তিনি আশরাফ আলীর সাথে পরামর্শ করে ১৩২৮ হিজরি মোতাবেক ১৯১০ সালে কৈয়গ্রামের চাঁদপুর রোডের পূর্বপাশে জমি ক্রয় করে একটি মাটির গুদাম ঘর তৈরি করে সেখানে মাদ্রাসার ভিত্তি রাখেন।[৭] মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মতবিরোধ হলে শাহ আহমদ হাসান সেখান থেকে চলে আসেন এবং তার সাথে আগত ছাত্রদের তিনি একটি বাদাম গাছ তলায় পড়াতে আরম্ভ করেন।[৮] পরবর্তীতে সেই বাদাম গাছতলায় মাদ্রাসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গড়ে উঠে, যেখানে বর্তমান জিরি মাদ্রাসা অবস্থিত। বাদাম গাছের নিচে প্রতিষ্ঠিত এই মাদ্রাসার নাম ছিল মাদ্রাসা হামিয়্যাতুল ইসলাম, জিরি, আরও পরে আল-মাদ্রাসাতুল আরাবিয়্যা জিরি এবং আরও পরে বর্তমান নামটি ধারণ করা হয়।[৯]
ক্রমবিকাশ
সম্পাদনাজামেয়ার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অদ্যাবধি ১১৩ বছরে চারজন পরিচালকের পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৪০৭ হিজরিতে তৃতীয় পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন শাহ মুহাম্মদ তৈয়ব। তার সময়কালে চার তলা বিশিষ্ট শিক্ষাভবন, পূর্ব সারির দু'তলা ও তিন তলা ভবন, দ্বীতল মেহমানখানা, নাজেরাখানা, এতিমখানা ভবন, দারুত তাফসির সারির পুরা দ্বীতল ও উত্তরের ভূতল আধুনিক ভবন, জামেয়ার বহুতল মসজিদ ও দারুল হাদিস নির্মিত হয়।[১০] ২০২০ সালের ২৪ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি প্রায় ৩৬ বছর মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন।[১১][১২] তার মৃত্যুর পর মুহাম্মদ খোবাইব মহাপরিচালক মনোনীত হন।[১৩] প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে আব্দুল ওয়াদুদ স্বন্দীপি শায়খুল হাদিসের দায়িত্ব পালন করেছেন। এ পর্যন্ত মাদ্রাসাটিতে ৭ জন শায়খুল হাদিসের দায়িত্ব পালন করেছেন। মাদ্রাসাটিতে যেসব মনীষী ভ্রমণ করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন: আছগর হোসাইন দেওবন্দি প্রকাশ মিয়া ছাহেব, হুসাইন আহমদ মাদানি, ক্বারি মুহাম্মদ তৈয়ব, আবুল হাসান আলী হাসানী নদভী, তাকি ওসমানি, আব্দুল মাজিদ নাদিম, আছআদ মাদানি প্রমুখ।[১৪]
ব্যবস্থাপনা
সম্পাদনাশিক্ষাক্রম
সম্পাদনা- ইসলামি কিন্ডারগার্টেন ( নাজেরা খানা ) : এ বিভাগে শিশুকিশোরদেরকে আরবি উচ্চারণ অনুশীলন, দেখে দেখে তাজভিদ সহকারে কুরআন পাঠ, তাওহীদ - রেসালতসহ ইসলাম শিক্ষা- অযু গোসল, নামায রোজ, কাফন দাফন ও অন্যান্য ইবাদতের বাস্তব প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজি ও গণিত ইত্যাদির পাঠদান করা হয়।[১৫]
- তাহফিজুল কুরআন বিভাগ : এ বিভাগে তাদভিন ও হাদর ( বিশুদ্ধভাবে দ্রুত পঠন ) সহকারে ছাত্রদেরকে মেধা ভিত্তিতে কুরআনে কারিম হেফজ করানো হয়।
- কিতাব বিভাগ : এ বিভাগে প্রাথমিক স্তর থেকে নিম্ন মাধ্যমিক , মাধ্যমিক , উচ্চ মাধ্যমিক তথা দাওরায়ে হাদিস অর্থাৎ টাইটেল পর্যন্ত দরসে নেজামি এবং আরবি , বাংলা , উর্দু , ফার্সি ও ইংরেজি সাহিত্য , নাহু - চরফ ও বালাগাত , তাছহিহে কুরআন , ইসলামি আইন শাস্ত্র , যুক্তি শাস্ত্র , দর্শন , ইসলামি অর্থনীতি , তাফসির ও হাদিছসহ যাবতীয় বিষয়ে সৃজনশীন ও বিশ্লেষণধর্মী পদ্ধতিতে সহজ ও সরল ভাষায় শিক্ষাদান করা হয়।
- শর্টকোর্স বিভাগ : এ বিভাগটি মূলত হিফজ সম্পন্নকারী ছাত্র ও স্কুল - কলেজ হতে আগত ছাত্রদের জন্য। এক বছরে প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত শেষ করার জন্য শর্টকোর্স আকারে পড়ার ব্যবস্থা করা হয়।
- তাফসির বিভাগ : তাফসির বিভাগের মূল উদ্দেশ্য হলো আল - কুরআনের রিসার্চ, সঠিক ব্যাখ্যার উদ্ঘাটন , কুরআন ও হাদিছের সমন্বয় সাধনে কালের চাহিদা অনুযায়ী জাতিকে পথ প্রদর্শন করত ইহকালীন ও পরকালীন সফলতার প্রতি দিক নির্দেশনা প্রদান করা।
- ফতওয়া বিভাগ : কুরআন হাদীসের আলোকে মুসলমানের ব্যক্তিগত , পারিবারিক , সামাজিক , রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ইত্যাদি বিষয়ে সকল সমস্যার সমাধান দেয়ার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয় এই বিভাগ।[১৬]
- তাজভিদ ও ক্বেরাত বিভাগ : আগ্রহী আলেমকে তাছহিহে কুরআন ও তেলাওয়াতে বিভিন্ন কিরাআতে পারদর্শী করার লক্ষ্যে এক বছরের বিশেষ কোর্স হিসেবে বিভাগটি চালু করা হয়। এ বিভাগে তিন জন কারি রয়েছেন।
- কারিগরী শিক্ষার কোর্সসমূহ : ( ক ) সেলাই প্রশিক্ষণ কোর্স । ( খ ) ইলেক্ট্রিক প্রশিক্ষণ কোর্স । ( গ ) পুস্তক বাঁধাই প্রশিক্ষণ কোর্স । ( ঘ ) হস্তলিপি প্রশিক্ষণ কোর্স । ( ঙ ) কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কোর্স ও ( চ ) মৎস চাষ প্রশিক্ষণ কোর্স ইত্যাদি।
অন্যান্য
সম্পাদনা- দাওয়াত ও এরশাদ : ইসলামি তাহযিব তামাদ্দুন , আচার - আচরণ ও বিলুপ্তপ্রায় নবিজী ( স . ) এর সুন্নাত প্রতিষ্ঠা এবং আল্লাহ ভোলা মানুষকে আল্লা'র সাথে সম্পর্ক করে দেয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন পন্থায় দাওয়াত ও তাবলিগের নিসবতে কাজ করার ব্যবস্থা হিসেবে জিরি হযরত দাওয়াত ও এরশাদ বিভাগটিকে গুরুত্ব সহকারে চালিয়ে যাচ্ছেন।
- সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা বিভাগ : এ বিভাগে রয়েছে ( ক ) ইসলামি সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা । ( খ ) বিতর্ক প্রতিযোগিতা । ( গ ) তাজভিদ ও ক্বেরাত প্রতিযোগিতা । ( ঘ ) আরবি , ফার্সি , উর্দু ও বাংলা কাব্যচর্চা । ( ঙ ) বক্তৃতা ও রচনা প্রতিযোগিতা ও ( চ ) সাহিত্য চর্চা ইত্যাদি ।
- গ্রন্থাগার : দেশ - বিদেশের খ্যাতিসম্পন্ন মনীষীদের বিভিন্ন বিষয়ের উপর লিখিত হাজার হাজার ধর্মীয় গ্রন্থ এবং অন্যান্য সংকলন ও পাণ্ডুলিপির সুবিশাল সংরক্ষণাগার । জামেয়ার এ গন্থাগার থেকে পাঠ প্রস্তুতি ও গবেষণা করার জন্য শিক্ষক - ছাত্রকে ফ্রিতে পাঠ্য কিতাবাদি ও এর ব্যাখ্যা সংক্রান্ত সহায়কগ্রন্থ প্রদান করা হয় ।
প্রকাশনা
সম্পাদনাবর্তমানে জামেয়া জিরি থেকে সেকল প্রকাশনা প্রকাশিত হচ্ছে:[১৭]
- মাসিক আল হাছান (ইসলামি সাহিত্য বিষয়ক বাংলা পত্রিকা)
- আন - নূর (আরবি দেয়ালিকা)
- আল - আবরার (বাংলা দেয়ালিকা)
- আর - রশাদ (ধর্ম ও সাহিত্য বিষয়ক আরবি পত্রিকা)
দাতব্য
সম্পাদনাচিকিৎসালয়ের প্রয়োজনীয়তাকে সামনে রেখে জামেয়া জিরি একটি দ্বীতল শারজাহ্ চ্যারিটি হাসপাতাল নির্মাণ করে। এতে দু'জন এম.বি.বি.এস ডাক্তারের মাধ্যমে ফ্রি ঔষধপত্রসহ চিকিৎসা প্রদান করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণের জন্য একটি আধুনিক প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করার পরিকল্পনা বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন।
মাদ্রাসার সমাজসেবা বিভাগের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলা - উপজেলায় মসজিদ , মাদরাসা প্রতিষ্ঠাসহ নলকূপ , পুকুর , অযুখানা এবং গরীব অসহায় জনগণকে পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে রিক্সা , ভ্যান , সেলাই মেশিন ও গবাদি পশু ইত্যাদি দ্বারা সহায়তা প্রদান করা হয়। জিরি ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন মাদ্রাসার একটি সমাজসেবামূলক সংগঠন।[১৭]
অবকাঠামো
সম্পাদনাপ্রবেশপথ
সম্পাদনাজামিয়ায় তিনটি প্রবেশপথ আছে। শাহী গেইট জামিয়ার উত্তর দিকে অবস্থিত। এর সামনের রাস্তা জিরি মাদ্রাসা রোড নামে পরিচিত। যা চট্টগ্রামের প্রধান সড়ক আরাকান রোডের সাথে সংযুক্ত। আরাকান রোডের মিলনস্থলে একটি তোরণ আছে। যার নাম বাবুল হাসান। জামিয়ার পূর্ব দিকের গেইটের নাম বাবে নূর। অন্যটি জামিয়ার পশ্চিম দিকে অবস্থিত, এর নাম বাবে তৈয়ব।[১৮]
মসজিদ
সম্পাদনাজামিয়ার মাঝখানে একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ রয়েছে। পুরাতন মসজিদের পরিবর্তে ২০১৮ সালের দিকে এই নতুন মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। এর নাম মসজিদে তওবা। ৩ তালার এই মসজিদে প্রায় ৫০০০ জন একত্রে নামাজ আদায় করতে পারে। মসজিদে ১টি বড় গম্বুজসহ কয়েকটি ছোট গম্বুজ রয়েছে। রমজানে এই মসজিদে প্রায় ১৫০ জন ইতেকাফ থাকে। মসজিদের একটু দূরে উত্তর পাশে মাকবারায়ে আহমদ হাসান।[১৯]
গ্রন্থাগার
সম্পাদনা২০১৮ সালের দিকে নতুন মসজিদটি নির্মাণ হলে পুরাতন মসজিদের ২য় তলাকে গ্রন্থাগারে পরিণত করা হয়। নিচতলা প্রাইমারি ছাত্রদের নামাজঘর হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই গ্রন্থাগারে অনেক দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থের সংগ্রহ আছে। গ্রন্থাগারের পরিচালক মিজানুর রহমান কাসেমী।
শিক্ষাভবন
সম্পাদনাজামিয়ার সর্ব দক্ষিণে আছে শিক্ষাভবন। জামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা শাহ আহমদ হাসানের নামানুসারে এই ভবনের নাম রাখা হয়েছে 'ক্বসরুল হাসান'। এটিই জামিয়ার বৃহৎ ভবন। বেশিরভাগ শ্রেণীকক্ষ এই ভবনে অবস্থিত। এর ৩য় তলায় আছে তাজবিদ ও ক্বিরাত বিভাগ।
ছাত্রাবাস
সম্পাদনাজামিয়ায় ৩ তলা বিশিষ্ট ২টি ও ২ তলা বিশিষ্ট ২টি ছাত্রাবাস আছে। উত্তর ভবনের ৩য় তলায় হেফজখানা ও এতিমখানা। পশ্চিমভবনের ২য় তলায় ফতোয়া বিভাগের শ্রেণীকক্ষ। মসজিদের উত্তর পাশে নবনির্মিত ভবনের ৩য় তলা ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর নিচতলা দারুল হাদিসের দরসগাহ।
মাঠ ও পুকুর
সম্পাদনাজামিয়ার ভিতরে ২টি মাঠ আছে। মসজিদ সংলগ্ন মাঠে দুইদিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক ইসলামি মহাসম্মেলনসহ যাবতীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অন্য মাঠটি শিক্ষাভবনের সামনে। জামিয়ার মালিকানাধীন ২টি পুকুর আছে। একটি শিক্ষাভবনের সামনে, অন্যটি শাহী গেইটের সামনে। আরেকটি পুকুর আছে আংশিক মালিকানাধীন, যা মৎস চাষে ব্যবহৃত হয়।
কার্যক্রম
সম্পাদনাজামিয়াই অধ্যয়নের ক্ষেত্রে এমন একটি পাঠ্যক্রম চালু করার লক্ষ্য রয়েছে যা ইসলামী ধর্মতত্ত্বের নিখুঁততার পাশাপাশি আধুনিক বৈজ্ঞানিক প্রয়োজন অনুসারে জ্ঞান অর্জনের সুযোগ দিতে পারে যাতে ফলপ্রাপ্তরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিজেকে সামঞ্জস্য করতে পারে এবং তারা যেখানেই বাস করুক না কেন, নিজেকে ইসলামের যোগ্য অনুসারী এবং দেশের আদর্শ নাগরিক হিসাবে প্রমাণ করতে পারে। তদনুসারে, আরবী এবং মাতৃভাষাকে ইসলামী শরিয়াহর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার সাথে অধ্যয়নের পাঠ্যক্রমগুলিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও রয়েছে যা শিক্ষার্থীদের একটি স্বনির্ভর মানুষ হিসাবে তাদের ক্যারিয়ার গড়তে সহায়তা করে। বর্তমানে এর ৬৫ জন শিক্ষক এবং ২৫০০ শিক্ষার্থী রয়েছেন যার মধ্যে ১০০০ অনাথ। [২০] জামিয়াহ এই অঞ্চলের কয়েকটি ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধান করে যাতে তারা তাদের পাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমের উন্নতি করতে পারে।
শিক্ষার ধরন ও বিষয়সমূহ
সম্পাদনাশতবর্ষী জিরি মাদ্রাসার একাডেমিক গ্রেড প্রাথমিক স্তর, মাধ্যমিক স্তর, উচ্চ মাধ্যমিক স্তর, স্নাতক স্তর, মাস্টার্স স্তর এবং তাহফিজুল কুরআন স্তর নিয়ে গঠিত। জামিয়াহ প্রযুক্তিগত জ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি সরবরাহ করে। শিক্ষাগত বিষয়গুলি হ'ল আল-কুরআন, আল- হাদীস, তাফসির, বালাগাত, আল-ফিকহ, উসুল-আল-ফিকহ, ফলসাফাহ, হিকমাহ, আরবি সাহিত্য, বাংলা সাহিত্য, মানতেক(যুুুক্তিবিদ্যা), তাজবিদ, ইসলামী দর্শন, তাহফিজ-আল -কুরআন, গণিত, সামাজিক বিজ্ঞান ইত্যাদি। এইগুলির পাশেই জামিয়াহ কিছু প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ কোর্স যেমন বুক বাইন্ডিং, টাইপিং, ওয়াচ রিপেয়ারিং, দর্জি কাজের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশের অধীনে। বাকি কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগুলো বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়।
উচ্চতর বিভাগ
সম্পাদনাদারুল ইফতা
সম্পাদনাফতোয়া ও ইসলামী গবেষণা বিভাগ। জামিয়ার পূর্বভবনের ২য় তলায় এই বিভাগটি অবস্থিত। দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) পাশের পর এই বিভাগে ভর্তির আবেদন করা যায়। কোর্সের মেয়াদ ১ বছর। মোট ৩ জন ইসলামী আইনজ্ঞের অধীনে বিভাগটি পরিচালিত হয়।
ক্বিরাত বিভাগ
সম্পাদনাক্বেরাত ও তাজবিদ বিভাগ শিক্ষাভবনের ৩য় তলায় অবস্থিত। ২ জন ক্বারীর অধীনে এই বিভাগ পরিচালিত হয়। দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) পাশের পর এই বিভাগে আবেদন করা যায়। কোর্সের মেয়াদ ১ বছর।
আরবি সাহিত্য বিভাগ
সম্পাদনাআরবি সাহিত্য ও গবেষণা বিভাগ বা আদব বিভাগ। জামিয়ার উত্তর ভবনের ২য় তলায় এই বিভাগটি অবস্থিত। দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) পাশের পর এই বিভাগে আবেদন করা যায়। কোর্সের মেয়াদ ১ বছর। মোট ৩ জন আরবি ভাষাবিদের অধীনে বিভাগটি পরিচালিত হয়।
মুহতামিম
সম্পাদনাক্রম | নাম | সময়কাল |
---|---|---|
১ | শাহ আহমদ হাসান | ১৯১০-১৯৬৭ |
২ | মুফতি নুরুল হক | ১৯৬৭-১৯৮৪ |
৩ | শাহ মুহাম্মদ তৈয়ব | ১৯৮৪-২০২০ |
৪ | হাফেজ মুহাম্মদ খোবাইব | ২০২০-বর্তমান |
বিভাগীয় প্রধান
সম্পাদনাক্রম | নাম | পদবী |
---|---|---|
১ | মুহাম্মদ মুছা সন্দ্বীপি | শায়খুল হাদীস |
২ | মুফতি ইদ্রিস | প্রধান মুফতি |
৩ | ইসমাঈল নজীর | আরবি সাহিত্যিক |
৪ | ক্বারী মনিরুল ইসলাম | প্রধান ক্বারী |
জামিয়া কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত
সম্পাদনাজামিয়ার পৃষ্ঠপোষকতা ও অর্থায়নে এক শতাধিক মসজিদ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
- আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া বায়তুল করিম ইছানগর - চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে অবস্থিত একটি দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) মাদ্রাসা। ২০০২ সালে জামিয়া কর্তৃক এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।[২১]
- জিরি মহিলা মাদ্রাসা - জিরি মাদ্রাসা সংলগ্ন কাজীর হাটে এই মাদ্রাসাটি অবস্থিত। কওমি শিক্ষায় মিশকাত শ্রেণী, সাধারণ শিক্ষায় দশম শ্রেণি পর্যন্ত,স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের জন্য সর্টকোর্স বিভাগ, এতিম ছাত্রীদের জন্য এতিমখানা ও সেলাই প্রশিক্ষণের মত কারিগরি শিক্ষা দেওয়া হয় এই মাদ্রাসায়।
- শারজাহ চ্যারিটি হাসপাতাল - আরব আমিরাতের চ্যারিটি ইন্টারন্যাশনালের অর্থায়নে জামিয়ার মালিকানাধীন এই হাসপাতালটি ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকে।[২২]
- শান্তিরহাট জিন্নুরাইন মসজিদ - পটিয়ার শান্তিরহাটে ব্যস্ততম জায়গায় কোন মসজিদ না থাকায় জামিয়ার পৃষ্ঠপোষকতায় মীর সুপার মার্কেটের নিচতলায় মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।[২৩]
- জামিয়াতুল কামালাত তালিমুল ইসলাম - চট্টগ্রামের পার্বত্য জেলা বান্দরবানে ইসলামি শিক্ষার প্রসারে জামিয়ার পৃষ্ঠপোষকতায় ২০১৮ সালে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।[২৪]
পরিচালিত সংস্থাসমূহ
সম্পাদনাপ্রাক্তন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক
সম্পাদনা- মুফতি আজিজুল হক - প্রতিষ্ঠাতা, আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া।[২৬]
- আহমদুল্লাহ –– আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ার প্রধান মুফতি ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমীর। (জ. ১৯৪১)
- আলী আহমদ বোয়ালভী - সুফি সাধক, পটিয়া।[২৭]
- আব্দুল ওয়াদুদ সন্দ্বীপি - জিরি মাদ্রাসার দীর্ঘ ৬০ বছরের মুহাদ্দিস।
- শাহ মোহাম্মদ তৈয়ব - ইসলামি পণ্ডিত, আধ্যাত্মিক চিকিৎসক।[২৮]
- আব্দুস সালাম চাটগামী - মুফতিয়ে আজম, বাংলাদেশ। সাবেক প্রধান মুফতি, জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া বিন্নুরি টাউন, করাচি,পাকিস্তান।[২৯]
- শামসুদ্দীন কাসেমী; খতমে নবুয়ত আন্দোলন পরিষদ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক মহাসচিব
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ The Muslim World League Journal (ইংরেজি ভাষায়)। প্রেস এবং প্রকাশনা বিভাগ। ১৯৯৬।
- ↑ ছরোয়ার, মুহাঃ গোলাম (২০১৪)। বাংলা ভাষায় ফিকহ চর্চা (১৯৪৭-২০০৬): স্বরূপ ও বৈশিষ্ঠ্য বিচার (পিএইচডি)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ২৮৪। ২৭ মে ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০২১।
- ↑ আজমী, নূর মুহাম্মদ (২০০৮)। হাদিসের তত্ত্ব ও ইতিহাস। বাংলাবাজার, ঢাকা: এমদাদিয়া পুস্তকালয়। পৃষ্ঠা ২৯৩।
- ↑ "পটিয়ার জিরি মাদ্রাসার ১১৫তম আন্তর্জাতিক ইসলামি মহাসম্মেলন"। দৈনিক নয়া দিগন্ত। ৮ ডিসেম্বর ২০২১।
- ↑ আহমদুল্লাহ, হাফেজ; হাসান, শাহ আহমদ (২০১৬)। মাশায়েখে চাটগাম। ১ম (৩য় সংস্করণ)। ১১/১, ইসলামী টাওয়ার, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০: আহমদ প্রকাশন। পৃষ্ঠা ১৯৮। আইএসবিএন 978-984-92106-4-1। ২ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ আগস্ট ২০২১।
- ↑ আহমদুল্লাহ ও হাসান ২০১৬, পৃ. ১৯৭।
- ↑ আহমদুল্লাহ ও হাসান ২০১৬, পৃ. ১৯৯।
- ↑ আহমদুল্লাহ ও হাসান ২০১৬, পৃ. ২০২।
- ↑ জিরি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা, ৪র্থ অনুচ্ছেদ (৮ মার্চ ২০২০)। "শাহ আহমদ হাসান (রহ.) : জিরি মাদরাসা যার কবুলিয়তের প্রমাণ"। পাবলিক ভয়েস টুয়েন্টিফোর। ১৪ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুন ২০২০।
- ↑ আল হাসান ২০২০, পৃ. ২১।
- ↑ "Al-Jamia Islamia Ziri"। Islamic Rehabilitation Institution। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৮-২২।
- ↑ "আল্লামা শাহ মুহাম্মদ তৈয়ব আর নেই"। দৈনিক নয়া দিগন্ত।
- ↑ "আল্লামা শাহ মুহাম্মদ তৈয়ব আর নেই"। দৈনিক নয়া দিগন্ত। ২৫ মে ২০২০।
- ↑ । ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) সমাপনী ছাত্রবৃন্দের উদ্যোগে প্রকাশিত। "স্মরণিকা ২০২০" (পিডিএফ)। আল হাসান। আল জামিয়াতুল আরবিয়াতুল ইসলামিয়া জিরি: ১৭। ২০২০।
- ↑ আল হাসান ২০২০, পৃ. ১৮।
- ↑ আল হাসান ২০২০, পৃ. ১৯।
- ↑ ক খ আল হাসান ২০২০, পৃ. ২০।
- ↑ "জিরি ইউনিয়ন"। সরকারি ওয়েবসাইট। ২৭ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "জিরি মাদ্রাসা মসজিদ"। সরকারি ওয়েবসাইট। ২৭ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "Ziri at a glance"। Ziri official।
- ↑ "আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া বায়তুল করিম মাদ্রাসার ভর্তির এলান"। ইখবার। ১১ জুন ২০১৯। ২৬ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "শারজাহ চ্যারিটি হাসপাতাল"।
- ↑ "পটিয়ায় মসজিদের তালিকা"। সরকারি ওয়েবসাইট। ২৭ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "বান্দরবানে জামিয়াতুল কামালাত তা'লীমুল ইসলাম ভবন উদ্বোধন করলেন বীর বাহাদুর"। পার্বত্য নিউজ। ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
- ↑ "জিরি ওয়েলফেয়ার সোসাইটি"।
- ↑ "পটিয়ার মুফতি আযীযুল হক রহ: ইলম ও আধ্যাত্মিকতার উজ্জ্বল নক্ষত্র"। ইসলাম টাইমস। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯। ২৬ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ হাফেজ আহমদুল্লাহ। মাশায়েখে চাটগামী, ২য় খন্ড। আহমদ প্রকাশন।
- ↑ "সেজদারত অবস্থায় দেশের শীর্ষ আলেম আল্লামা শাহ তৈয়বের ইন্তেকাল"। যুগান্তর। ২৫ মে ২০২০।
- ↑ "মুফতি আবদুস সালাম চাটগামী গুরুতর অসুস্থ, দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা"। ইসলাম টাইমস। ৬ জানুয়ারি ২০১৯।
আরও পড়ুন
সম্পাদনা- সাইয়েদ, আহসান (২০০৬)। বাংলাদেশে হাদীছ চর্চা উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ। সেগুনবাগিচা, ঢাকা: অ্যাডর্ন পাবলিকেশন্স। পৃষ্ঠা ৯৮। আইএসবিএন 9842000184।