শাহ আহমদ হাসান
শাহ আহমদ হাসান (১৮৮২ – ১৯৬৭) তৎকালীন বঙ্গ অঞ্চলের একজন দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ ও সংস্কারক। তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসার একেবারে প্রথম দিকের ছাত্র ছিলেন। পরবর্তীতে হাটহাজারী মাদ্রাসার পর তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় কওমি মাদ্রাসা আল জামিয়াতুল আরবিয়াতুল ইসলামিয়া জিরি প্রতিষ্ঠা করেন।[১]
মুজাহিদে মিল্লাত শাহ আহমদ হাসান | |
---|---|
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ১৮৮২ জিরি, পটিয়া, চট্টগ্রাম |
মৃত্যু | ১৯৬৭ | (বয়স ৮৪–৮৫)
জাতীয়তা |
|
দাম্পত্য সঙ্গী | ৪ |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | দারুল উলুম হাটহাজারী |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
পিতামাতা |
|
আখ্যা | সুন্নি |
ব্যবহারশাস্ত্র | হানাফি |
আন্দোলন | দেওবন্দি |
প্রধান আগ্রহ | |
উল্লেখযোগ্য কাজ | আল জামিয়াতুল আরবিয়াতুল ইসলামিয়া জিরি |
জীবনী
সম্পাদনাআহমদ হাসান ১৮৮২ সালে চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত পশ্চিম পটিয়াস্থ জিরি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম অছিয়র রহমান। দাদার নাম হামিদ আলী। তিনি গৃহশিক্ষকের কাছে বাড়িতে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। রফিকুল্লাহ নামক গৃহশিক্ষকের কাছে তিনি কুরআন সহ উর্দু ও ফার্সির প্রাথমিক কিতাবাদি অধ্যয়ন করেন। তখনও হাটহাজারী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। অন্যত্রও আরবি শিক্ষার কোনো সুব্যবস্থাও ছিল না। আরবি শিক্ষার জন্য চট্টগ্রাম শহরে সরকার পরিচালিত শুধু একটি মাত্র মাদ্রাসা ছিল। যার নাম চট্টগ্রাম মুহসিনিয়া মাদ্রাসা। তিনি ১৩১৫ হিজরি সনে আনুমানিক ১৫-১৬ বছর বয়সে মুহসিনিয়া মাদ্রাসায় জামাতে দাহুমে ভর্তি হন। তিনি নিয়মতান্ত্রিকভাবে মুহসিনিয়া মাদ্রাসায় অধ্যয়ন করছিলেন। ইতোমধ্যে হাটহাজারী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হলে ১৩১৮ হিজরি সনে তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসায় জামাতে নাহুমে ভর্তি হন। তিনি যখন হাটহাজারী মাদ্রাসায় জামাতে উলা অধ্যয়নরত ছিলেন সে সময় কৈয়াগ্রাম নিবাসী আশরাফ আলী নামক এক ব্যক্তি তাদের বাড়িতে জায়গীর থাকতেন। আহমদ হাসান একবার বাড়িতে এসে তার সাথে পরামর্শ করে একটি কওমি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সিদ্ধান্তানুযায়ী সর্বপ্রথম একটা দোকান ঘরে মাদ্রাসার শিক্ষাকার্যক্রম আরম্ভ করেন। পরবর্তীতে জিরি নামক স্থানে মাদরাসা স্থানান্তরিত করেন। দারুল উলুম হাটহাজারীর পরে তার হাতে প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাটিই এই অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয়।[২][৩]
তিনি আশরাফ আলী থানভীর শিষ্য ছিলেন। তার মৃত্যুর পর তিনি মিরসরাই নিবাসী রশিদ আহমদ গাঙ্গুহির খলিফা কাজী মুয়াজ্জম হুসাইনের নিকট থেকে খেলাফত লাভ করেন। তিনি সর্বমোট ৪টি বিবাহ করেন। প্রথম স্ত্রীর জীবদ্দশায় অন্য কোনো বিবাহ করেননি। তন্মধ্যে এক স্ত্রী তার জীবদ্দশায় মারা যান। অবশিষ্ট দুইজন তার মৃত্যুর সময় জীবিত ছিলেন। তিনি পাঁচ কন্যাসন্তানের জনক ছিলেন। ১৯৬৭ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আব্দুল ওয়াদুদ সন্দ্বীপী তার জানাযায় ইমামতি করেন। জিরি মাদ্রাসার পার্শ্বে তাকে কবরস্থ করা হয়।[৪][৫]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ নিজামপুরী, আশরাফ আলী (২০১৩)। দ্যা হান্ড্রেড (বাংলা মায়ের একশ কৃতিসন্তান) (১ম সংস্করণ)। হাটহাজারী, চট্টগ্রাম: সালমান প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ৭৮–৭৯। আইএসবিএন 112009250-7।
- ↑ এস এম আমিনুল ইসলাম, মাওলানা; ইসলাম, সমর (জানুয়ারি ২০১৪)। বাংলার শত আলেমের জীবনকথা। বাংলাবাজার,ঢাকা-১১০০: বইঘর। পৃষ্ঠা ১০৯–১১৩। আইএসবিএন 9847016800481।
- ↑ হাফেজ আহমদুল্লাহ, মুফতি; হাসান, আহমদ (মে ২০১৬)। মাশায়েখে চাটগাম — ১ম খণ্ড (৩য় সংস্করণ)। ১১/১, ইসলামী টাওয়ার, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০: আহমদ প্রকাশন। পৃষ্ঠা ১৮৪–২৬৪। আইএসবিএন 978-984-92106-4-1।
- ↑ জাহাঙ্গীর, সালাউদ্দিন (২০১৭)। বাংলার বরেণ্য আলেম — ১ম খণ্ড (১ম সংস্করণ)। মধ্য বাড্ডা, আদর্শ নগর, ঢাকা: মাকতাবাতুল আযহার। পৃষ্ঠা ১৬২–১৬৭।
- ↑ বাবুনগরী, জুনায়েদ (২০০৩)। দারুল উলুম হাটহাজারীর কতিপয় উজ্জ্বল নক্ষত্র (১ম সংস্করণ)। হাটহাজারী, চট্টগ্রাম: বুখারী একাডেমি। পৃষ্ঠা ১৯–২০।