আব্দুস সালাম চাটগামী
আব্দুস সালাম চাটগামী দারুল উলুম হাটহাজারীর মাদ্রাসার মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের প্রধান মুফতি ছিলেন।[১][২]
আব্দুস সালাম | |
---|---|
মহাপরিচালক, দারুল উলুম হাটহাজারী | |
অফিসে ২০২১ – ২০২১ | |
পূর্বসূরী | শাহ আহমদ শফী |
উত্তরসূরী | ইয়াহইয়া আলমপুরী |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | ১৯৪৩ নলদিয়া গ্রাম, আনোয়ারা থানা, দক্ষিণ চট্টগ্রাম |
মৃত্যু | ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ |
ধর্ম | ইসলাম |
জাতীয়তা | বাংলাদেশি |
পিতামাতা |
|
জাতিসত্তা | বাঙালি |
যুগ | আধুনিক |
আখ্যা | সুন্নি |
ব্যবহারশাস্ত্র | হানাফি |
আন্দোলন | পাকিস্তান |
প্রধান আগ্রহ | ফিকহ, হাদিস, তাসাউফ, ইসলামি আন্দোলন, ওয়াজ-নসীহত |
উল্লেখযোগ্য কাজ | হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ও ইলমে ফিকাহ |
যেখানের শিক্ষার্থী | জামেয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া আল্লামা বান্নুরি |
ঊর্ধ্বতন পদ | |
যাদের প্রভাবিত করেন |
জন্ম
সম্পাদনাআব্দুস সালাম ১৯৪৩ সালে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানার নলদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[১] শৈশবকাল তিনি গ্ৰামেই কাটিয়েছেন, ছোট বেলা থেকেই তার ইসলামের প্রতি প্রবল আগ্রহ তাকে ধর্মীয় জ্ঞানে উচ্চ শিক্ষা অর্জনে যুগিয়েছিলো তাই তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য বাংলাদেশ ছেড়ে পাকিস্তান গমণ করেন।[৩]
শিক্ষা জীবন
সম্পাদনা১৯৫৮ সালে গ্রামে প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ করে বাবুনগর মাদরাসায় ভর্তি হন। তারপর ১৯৬৭ সালে চট্টগ্রামের জিরি মাদ্রাসায় থেকে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন। শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করতেন। তিনি ছাত্র সংসদ জমিয়তুত তলাবার জিরি মাদ্রাসা শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে বাংলাদেশের প্রথম মুহাদ্দিস আল্লামা আবদুল ওয়াদুদ-এর নির্দেশনাক্রমে তিনি পাকিস্তানের জামেয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া আল্লামা বান্নুরি টাউন করাচিতে ভর্তি হন এবং তৎকালীন মুহাদ্দিস আল্লামা মুহাম্মদ ইউসুফ বানুরি-এর তত্ত্বাবধানে প্রথম বছর তিনি উচ্চতর হাদিস শাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং পরের বছর ইফতা বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে তিনি আল ফিকহুল ইসলামী নিয়ে পড়াশোনা করেন। এ সময় হাদিস ও ফিকাহ বিষয়ক অসংখ্য গ্রন্থ অধ্যয়ন করে গভীর ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন।[১]
কর্মজীবন
সম্পাদনাহাদিস ও ইফতা বিভাগের শিক্ষা সমাপ্তির পর জামেয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া আল্লামা বান্নুরিতে মুফতি হিসেবে নিয়োগ পান। পাকিস্তানের মুফতি ওলি হাসান টুংকি-এর বার্ধক্যজনিত অসুস্থার কারণে মুফতি আব্দুস সালাম এ প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত প্রধান মুফতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওলি হাসান টুংকির মৃত্যুর পর তিনি এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান মুফতির পদ লাভ করেন এবং দীর্ঘ তিন দশক দায়িত্ব পালন করেন। এই প্রতিষ্ঠানের ইফতা বিভাগে প্রতি বছর ৯ হাজারের বেশি ফতোয়া জমা হত৷ সেই হিসেবে এ দীর্ঘ সময় তিনি তিন লাখের বেশি লিখিত ফতোয়া সম্পাদনা করেন, যা ওই প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসে অনন্য নজির স্থাপন করে।
মাদ্রাসার দ্বিতীয় আচার্য আল্লামা আহমাদুর রহমান বলেন, ‘ফাতওয়া প্রদানের ক্ষেত্রে মুফতি আব্দুস সালাম চাটগামী এক অনন্য দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন। প্রধান মুফতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মুফতি আব্দুস সালাম একই প্রতিষ্ঠানে সহিহ মুসলিম ও সুনানে তিরমিজি গ্রন্থের পাঠদান করেন।
এছাড়াও করাচীর ঐতিহ্যবাহী আহমদ উসমানি জামে মসজিদ এর খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০০ সালে মুফতি আব্দুস সালাম চাটগামী ইসলামী শিক্ষা প্রসারে নিজ দেশে ফিরে আসেন। করাচির বান্নুরী টাউন থেকে চলে এলেও প্রতিষ্ঠানে অন্য কাউকে প্রধান মুফতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বরং দেশে ফিরেও বিশেষ সম্মাননা হিসেবে আব্দুস সালাম চাটগামী করাচীর উক্ত মাদ্রাসায় প্রধান মুফতি পদে ছিলেন। এরপর দারুল উলুম হাটহাজারীর আচার্য আল্লামা শাহ আহমদ শফীর আহ্বানে ২০০১ সালে দারুল উলুম হাটহাজারীয় প্রধান মুফতি হিসেবে যোগদান করেন। তার নিয়োগের পর হাটহাজারি মাদরাসায় ২ বছর মেয়াদি উচ্চতর হাদিস শাস্ত্র বিভাগ চালু হয়। পরে তিনি হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালকের পদ গ্রহণ করেন।[১][৪][৫]
রচনা
সম্পাদনাআবদুস সালাম রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে
- জাওয়াহিরুল ফাতওয়া
- মাকালাতে চাটগামী
- করোনাকালীন সমস্যা ও তার শরয়ী বিধান
- দিল জাগানো সুরভী মালফুজাতে বোয়ালভী রহ
- বিতর নামায ও রাকাত সংখ্যা
- কুরবানী আহকাম ও জরুরী মাসায়েল
- আহকামে তাওহীদ ও রেসালাত [১]
- আপকা সুওয়াল আওর উনকা জওয়াব আহাদীছ কি রৌশনি মেঁ (উর্দু),
- ইসলামী মায়িশাত কে বুনয়াদী উসূল (উর্দু)
- ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে মানব অঙ্গের ক্রয়-বিক্রয় (বাংলায় অনূদিত)
- রহমতে আলম (সা.) এর মকবুল দোয়া (উর্দু-বাংলা)
- মুরাওয়াজা ইসলামী ব্যাংকারী (উর্দু)
- হায়াতে শায়খুল কুল
- তাজকেরায়ে মুখলিছ
- আত্মজীবনী (মৃত্যুর পর প্রকাশিত)
মৃত্যু
সম্পাদনা৮ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১১ টায় দারুল উলুম হাটহাজারীর পরিচালনা কমিটির পরামর্শ সভা চলাকালে আবদুস সালাম জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এরপর অ্যাম্বুলেন্স করে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।[১][৬]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনাউদ্ধৃতি
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ "মুফতি আবদুস সালাম চাটগামীর বর্ণাঢ্য জীবন"। কালের কণ্ঠ। ২০২১-০৯-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৯।
- ↑ ব্যুরো, চট্টগ্রাম; ডটকম, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর। "আবদুস সালামের মৃত্যু, হাটহাজারী মাদ্রাসার নেতৃত্ব নির্বাচন মুলতবি"। bangla.bdnews24.com। ২০২১-০৯-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৯।
- ↑ "মুফতী আযম আল্লামা আব্দুস সালাম চাটগামী দা.বা. এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতিয় 1 পর্ব."। www.hedaet.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৯।
- ↑ ব্যুরো, চট্টগ্রাম; ডটকম, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর। "আবদুস সালামের মৃত্যু, হাটহাজারী মাদ্রাসার নেতৃত্ব নির্বাচন মুলতবি"। bangla.bdnews24.com। ২০২১-০৯-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৯।
- ↑ সংবাদদাতা, চট্টগ্রাম ব্যুরো ও হাটহাজারী। "মহাপরিচালক ঘোষণার পরই মৃত্যু মুফতি আবদুস সালামের"। দৈনিক ইনকিলাব। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৯।
- ↑ "চলে গেলেন মুফতিয়ে আজম আব্দুস সালাম চাটগামী"। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৯।
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- হাসনাবাদী, মুহাম্মদ জাকারিয়া (২০২৩)। মাশায়েখে বাবুনগর। বাংলাদেশ: ইত্তিহাদ পাবলিকেশন। পৃষ্ঠা ১৪০–১৪৩।
- খালিদ হোসেন, আ ফ ম (২০২২)। নিভে যাওয়া দীপশিখা ১। বাংলাদেশ: আকাবিব স্টাডিজ অ্যান্ড পাবলিশিং হাউস। পৃষ্ঠা ২৫৯–২৬৫। আইএসবিএন 9789849591405।
- খালিদ হোসেন, আ ফ ম। "আল্লামা মুফতি আবদুস সালাম চাটগামী (রহ:) নিভে গেল ইলমি অঙ্গনের এক উজ্জ্বল প্রদীপ"। মাসিক আত তাওহীদ। আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া। ১২ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ ডিসেম্বর ২০২১।