তরিকা

সূফীবাদের একটি ধারনা

তরিকা (বা তরিকাহ; আরবি: طريقة ṭarīqah) বলতে সুফিবাদের একটি ধারা বা মতাদর্শকে বুঝায়, অথবা হাকীকত লাভের উদ্দেশ্যে এই জাতীয় ধারার নিগূঢ় শিক্ষা ও আধ্যাত্মিক অনুশীলনের একটি ধারণাকে বুঝায়।

তরিকাতে একজন মুর্শিদ ইমাম থাকেন যিনি আধ্যাত্মিক নেতার ভূমিকা পালন করেন। তরিকার অনুসারীদেরকে মুরিদ বলা হয়।

বেশ কিছু সুফি তরিকা প্রচলিত রয়েছে। যেমন কাদেরীয়া, চিশতিয়া , মাইজভাণ্ডারীয়া,নকশবন্দিয়া, মোজাদ্দেদিয়া,সোহরাওয়ার্দিয়া ইত্যাদি।

প্রধান সূফি তরিকাসমূহ সম্পাদনা

তরিকা শব্দটি সুফিবাদের একটি গোষ্ঠী বা বর্গের জন্য, বিশেষ করে আধ্যাত্মিক শিক্ষা এবং হাকিকত (চূড়ান্ত সত্য) সন্ধানের লক্ষ্যে আধ্যাত্মিক অনুশীলনের জন্য ব্যবহৃত হয়। সাধারণত তরিকায় একজন মুর্শিদ (পীর/মুর্শিদ বা পথ প্রদর্শক) রয়েছে যিনি নেতা বা আধ্যাত্মিক পরিচালকের ভূমিকা পালন করেন। তরিকার অনুসারীরা মুরিদীন (একবচন মুরিদ) নামে পরিচিত, যার অর্থ "অভিলাষী", যেমন "মহান আল্লাহকে জানার এবং ভালোবাসার জ্ঞান কামনা "। সুফিবাদ উৎকর্ষ লাভ করে পারস্যে। সেখানকার প্রখ্যাত সুফি-দরবেশ, কবি-সাহিত্যিক এবং দার্শনিকগণ নানা শাস্ত্র, কাব্য ও ব্যাখ্যা-পুস্তক রচনা করে এই দর্শনকে সাধারণের নিকট জনপ্রিয় করে তোলেন। কালক্রমে বিখ্যাত ওলিদের অবলম্বন করে নানা তুরুক বা তরিকা গড়ে ওঠে। সেগুলির মধ্যে কয়েকটি প্রধান তরিকা সর্বাধিক প্রসিদ্ধি লাভ করে:

কাদেরিয়া তরিকা সম্পাদনা

কাদেরিয়া তরিকা পৃথিবীর প্রাচীনতম সুফি তরিকাগুলোর মধ্যে অন্যতম। আওলাদে রাসুল সাঃ গাউছুল আজম ছৈয়দ আবদুল কাদের জিলানির (১০৭৭-১১৬৬) নাম থেকে এই তরিকার নামকরণ করা হয়েছে। জিলান ইরানের একটি প্রদেশের নাম এবং এর অধিবাসীদের জিলানী বলা হয়ে থাকে। এই তরিকা ইসলামি বিশ্বে সর্বাধিক বিস্তৃততম সুফি তরিকাগুলো একটি এবং মধ্য এশিয়া, পাকিস্তান, তুরস্ক, বলকান এবং পূর্ব ও পশ্চিম আফ্রিকার বেশিরভাগ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে এই তরিকার অনুসারী রয়েছে। ইসলামের মূলধারার বাইরে কাদেরিয়া তরিকা কোন বিশেষ মতবাদ বা শিক্ষা গড়ে তোলেনি। এই তরিকার অনুসারীরা ইসলামের মৌলিক নীতিগুলিতে বিশ্বাস করে, কিন্তু আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সেই নীতিগুলোকে তারা ব্যাখ্যা করে। সমগ্র বিশ্বে লক্ষ কোটি কাদেরিয়া তরিকার অনুসারী রয়েছে।

চিশতিয়া তরিকা সম্পাদনা

চিশতিয়া ত্বরিকা (ফার্সি: چشتیہ) বর্তমান আফগানিস্তানের হেরাতের উত্তর দিকে প্রায় ৯৫ মাইল দূরের ক্ষুদ্র শহর চিশতে ৯৩০ সালের দিকে এই তরিকার উদ্ভব হয়। তরিকাটি প্রতিষ্ঠাতা হলেন (খাজা) আবু ইশক শামিলেভ্যান্টে ফিরে আসার পূর্বে, স্থানীয় আমীর (খাজা) আবু আহমাদ আবদালের (মৃত্যু ৯৬৬) পুত্রকে বায়াত করান, তাকে সুফিতত্ত্বের উপর প্রশিক্ষণ দেন এবং খেলাফত (আধ্যাত্মিক প্রতিনিধিত্ব) দান করেন। আবু আহমদের বংশধরদের, তারা চিশতিয়া নামেও পরিচিত, নেতৃত্বে চিশতিয়া তরিকা একটি অঞ্চলভিত্তিক তরিকা হিসেবে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।এই তরিকায় ভালবাসা, সহিষ্ণুতা ও উদারতার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। ১২ শতকের মধ্যভাগে গাউছুল আজম ছৈয়দ খাজা মুঈন উদ্দিন চিশতি লাহোর ও আজমিরে এই তরিকা আনয়ন করেন। চিশতি তরিকার প্রতিষ্ঠাতা আবু ইশক শামির পর তিনি এই ধারার অষ্টম ব্যক্তি। বর্তমানে এই তরিকার বেশ কিছু শাখা রয়েছে

মাইজভান্ডারীয়া ত্বরিকা


মূল নিবন্ধ: মাইজভান্ডারীয়া তরিকা

মাইজভান্ডারী তরিকা আওলাদে রাসুল সাঃ গাউছুল আজম মাওলানা ছৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী প্রকাশ- হযরত কেবলা কাবা ও ইউসুফে সানী গাউছুল আজম মাওলানা ছৈয়দ গোলামুর রহমান মাইজভান্ডারী প্রকাশ- বাবা ভান্ডারী কেবলা কাবা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একটি যুগল গাউছুল আজমের সুফি তরিকা। এই তরিকায় দুই জন গাউছুল আজম রয়েছে। এটি বাংলাদেশে সৃষ্ট একমাত্র তরিকা। এই তরিকা মূল নাম তরিকায়ে মাইজভান্ডারীয়া। এই তরিকা মূল বিষয় হচ্ছে প্রেমের মাধ্যমে স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ। এ রীতিমত যুগানতকারী ঘটনা মাইজভান্ডারী দর্শনের সমন্বয় ধর্মী,বিশ্বমানবতার মিলন মন্ত্রের যে বীজ রোপন করেছিলেন হযরত গাউছুল আযম মাওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ্‌ মাইজভান্ডারী (কঃ) তার তিরোধানের পর তারই ভ্রাতুস্পুত্র ও নয়নমনি ইউসুফে ছানী হযরত গাউছুল আযম সৈয়দ গোলামুর রহমান বাবা ভান্ডারী (কঃ) ফলে ফলে সুশোভিত করে বিশ্বব্যাপী পরিপূর্ণ বিকাশের ব্যবস্থা করে যথাযথ রূপদান করেছেন। গাউছে জামান ছৈয়দ শফিউল বশর মাইজভান্ডারীর মাধ্যমে এই ত্বরিকার প্রভাব সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বিগত শতাধিক বছর ধরে এ দরবার শরীফ পাপী-তাপী,শোষিত,নির্যাতিত,মোহান্ধ,অবহেলিত,রোগাক্রানত,দিশেহারা ও পথহারা নীতিহারা এবং অভাবগ্রস্থ’,দীনহীন মানবতার আশ্রয় সরল,পদপ্রদর্শক,আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জনের উপায় ও ধর্ম সাম্যের গান গেয়ে আধ্যাত্মিক লৌকিক,পরলৌকিক শানি-র ঠিকানা হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছে। এ দরবার শরীফে শায়িত আছেন গাউছুল আযম শাহসূফী হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজান্ডারী (কঃ) গাউসুল আযম ইউসুফে ছানী সৈয়দ গোলামুর রহমান (কঃ) বাবা ভান্ডারী। যুগল গাউছুল আযম সহ অসংখ্য আওলাদে রাসূল (দঃ) এর আউলিয়ার স্থান হিসেবেও মহিমান্বিত। বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলিম,খৃষ্টান ও ইহুদী সম্প্রদায়ের জন্য তীর্থ স্থান মাইজভান্ডার দরবার শরীফ জাতি,ধর্ম,বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে সকলের জন্য উন্মুক্ত। প্রাণের তাগিদে,ত্রাণের তাগিদে তাই প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসেন মাইজভান্ডার দরবার শরীফে। মাইজভান্ডারী ত্বরিকার দেশ বিদেশে লক্ষ কোটি ভক্ত অনুসারী রয়েছে।

মাইজভান্ডার শরীফের অনুষ্ঠান সমূহঃ- মহান ১০ই মাঘ হযরত গাউসুল আজম মাওলানা ছৈয়দ আহমদ উল্লাহ আল হাসানী ওয়াল হোসাইনী আল মাইজভান্ডারীর (প্রকাশ- হযরত কেবলা) পবিত্র ওরস শরীফ।

ইউসুফে সানী গাউছুল আজম শাহছুফী মাওলানা ছৈয়দ গোলামুর রহমান আল্-হাসানী ওয়াল হোসাইনী আল মাইজভান্ডারীর (প্রকাশ-বাবা ভান্ডারী কেবলা কাবার) পবিত্র খোশরোজ শরীফ (জন্মদিন) মহান ২৯শে আশ্বিন ওরশ শরীফ মহান ২২শে চৈত্র।

হযরত গাউছে জামান শাহ্ছুফী আলহাজ্ব মাওলানা ছৈয়দ শফিউল বশর আল্-হাসানী ওয়াল হোসাইনী আল মাইজভান্ডারীর পবিত্র জন্মদিন মহান ৭ই ফাল্গুন। 
শাহেন শাহ হযরত ছৈয়দ জিয়াউল হক আল্-হাসানী ওয়াল হোসাইনী আল্-মাইজভান্ডারীর ওরশ মহান ২৬ আশ্বিন। 

শাজ্জাদানশীন শাহজাদায়ে গাউসুল আজম হযরত শাহ্ছুফী আলহাজ্ব মাওলানা ছৈয়দ মুজিবুল বশর আল্-হাসানী ওয়াল হোসাইনী আল-মাইজভাণ্ডারীর(মাঃজিঃ আঃ) জন্মদিন মহান ৭ই ভাদ্র পবিত্র মাইজভান্ডার শরীফে মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হয় এতে দেশ বিদেশের লক্ষ লক্ষ লোকের সমাগমন হয়।

নকশবন্দি তরিকা সম্পাদনা

নকশবন্দি তরিকা হল ইসলামের প্রধান সুফি তরিকাগুলোর একটি। পূর্বে এ তরিকা সিদ্দিকিয়া নামে পরিচিত ছিল, কারণ এই তরিকার ধারা পেছনের দিকে আবু বকরের মাধ্যমে মুহাম্মাদ (সা.) এর সাথে সম্পর্কিত করে। অনেকেই এই তরিকাকে "শান্ত" তরিকা হিসেবে বিবেচনা করে থাকে, কারণ এই তরিকায় জিকির (স্রষ্ঠাকে স্মরণ করা) নীরবভাবে করা হয়ে থাকে যদিও অন্য তরিকাগুলোতে উচ্চস্বরে বা হালকা উচ্চস্বরে জিকির করা হয়ে থাকে। "নকশবন্দি" শব্দটি (نقشبندی) ফার্সি শব্দ, এই তরিকার প্রতিষ্ঠাতা বাহা-উদ-দিন নকশবন্দ বুখারীর নাম থেকে গৃহীত হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন যে নকশবন্দ শব্দটির অর্থ "চিত্রকরের সাথে সম্পর্কিত", আবার অনেকে মনে করেন এর অর্থ "চিত্রকর" এর পরিবর্তে "আদর্শ প্রণেতা" এবং "নকশবন্দ" শব্দটির অর্থ "আদর্শ সংস্কারক" হিসেবে ব্যাখ্যা করে।

মুজাদ্দিদিয়া তরিকা সম্পাদনা

শায়খ আহমদ সিরহিন্দ মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহ এর প্রতিষ্ঠিত তরিকাকে মুজাদ্দিদিয়া তরিকা বলা হয়। এটি মুলত বাহা-উদ-দিন নকশবন্দ বুখারী রহ. এর নকশবন্দিয়া তরিকার একটি গুরত্বপূর্ণ সংস্করণ। তাই একে নকশবন্দিয়া-মুজাদ্দিদিয়া তরিকাও বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক ইত্যাদি দেশে নকশবন্দিয়া মুজাদ্দিয়া তরিকার প্রচলন বেশি। তবে সকল মুসলিম দেশেই এই তরিকার অনুসারি দেখা যায়। বাংলাদেশে এই তরিকার সফল প্রচারক হযরত খাজা ইউনুস আলী এনায়েতপুরী।

মুহম্মদিয়া তরিকা সম্পাদনা

সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলভী রহ এই তরিকার ইমাম। এই তরিকা মুলত নকশবদ্দিয়া-মুজাদ্দিয়া তরিকা একটি শাখা। বাংলাদেশভারতের অনেক দরবার শরীফ এই ছিলছিলার অনুসারি। ফুরফুরা, ছরছিনা, রাজারবাগ, দিনাজপুর নূরীয়া, জৈনপুরী, ফরায়েজিকান্দি, সোনাকান্দা ইত্যাদি দরবার শরীফ এই ছিলছিলার অন্তর্ভূক্ত।

উম্মিয়া তরিকা সম্পাদনা

সমসাময়িক কালে প্রতিষ্ঠিত একটি তরিকা। এই মহাসন্মানিত মহাপবিত্র তরিকায়ে উম্মিয়াহ প্রতিষ্ঠা করেরাজারবাগ দরবার ঢাকা। এটি নকশবন্দিয়া-মুজাদ্দিয়া তরিকার একটি সংষ্করণ।

বেকতাশিয়া তরিকা সম্পাদনা

তেরো শতকে ইসলামী সুফি সাধক বেকতাশ ভেলি বেকতাশি তরিকা প্রতিষ্ঠা করেন। পনের শতকে তরিকাটির প্রাথমিক পর্যায়ে হুরুফি আলী আল-আলা কর্তৃক ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছিল এবং ষোল শতকে বালিম সুলতান তরিকাটিকে পুর্নগঠন করেন।

মাদারিয়া তরিকা সম্পাদনা

মাদারিয়া তরিকা উত্তর ভারত, বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশ, মেওয়াত অঞ্চল, বিহার, গুজরাতবাংলায় জনপ্রিয় এবং একইসাথে নেপালেবাংলাদেশেও জনপ্রিয় সুফি তরিকা। প্রচলিত প্রথা ভাঙা, বাহ্যিক ধর্মীয় অনুশীলনের উপর শিথীলতা এবং আত্ম যিকিরের উপর জোর প্রয়োগের করনে সুপরিচিত, এটি প্রখ্যাত সুফি সাধক সৈয়দ বদিউদ্দীন জিন্দা শাহ মাদার (মৃত্যু ১৪৩৩খ্রি:) কর্তৃক প্রবর্তিত সূফি তরিকা এবং উত্তরপ্রদেশের কানপুর জেলার মকানপুরে তার দরবার ( দরগাহ ) কেন্দ্রিক তরিকা। তিনি তেরো শতকে আশরাফ জাহাঙ্গীর সেমনাণী সহ ভারতে আগমন করেন।

সুফিবাদের এই শাখা হজরত আলীর নিকট হইতে হজরত হাসান বসরী মারফত তাঁর শিষ্য খওয়াজা হাবিবে আজমী-এর সহিত সংযোগ সূত্র স্থাপন করে। খওয়াজা হাবিবে আজমীর নিকট হইতে তাঁর শিষ্য/মুরিদ বায়েজিদ বোস্তামী মারফত তৈয়ফুরিয়া প্রবর্তন হয়। তৈয়ফুরিয়া তরিকা থেকে শুরু করে, তাঁর পির বা আধ্যাত্মিক শিক্ষক বায়াজীদ তায়ফুর আল-বোস্তামি কর্তৃক প্রবর্তিত তৈয়ফুরিয়া তরিকা থেকে উৎপত্তি হয়ে মাদারীয়া তরিকা ১৫ থেকে ১৭ শতকের মাঝামাঝি মুগল আমলে বিশেষ গৌরব অর্জন করেছিল এবং শাহ মাদারের শিষ্যদের মাধ্যমে ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় এলাকা, বাংলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে এ নতুন তরিকা ছড়িয়ে পড়ে। বেশিরভাগ সুফি তরিকার মতই এটির প্রতিষ্ঠাতা মাদারের নামে একটি নিস্বাকে যুক্ত করে নির্মিত হয়েছে যা মাদারিয়া তরিকা নামে পরিচিত।

কুবরাইয়া তরিকা সম্পাদনা

কুবরাইয়া তরিকা তেরো শতকে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমান উজবেকিস্তানের বুখারায় তরিকাটি প্রতিষ্ঠা করেন নাজমুদ্দীন কুবরা নামে একজন ইসলামিক সুফি সাধক। ১২২১ সালে মঙ্গোলরা বুখারাকে দখল করে নিয়েছিল, তারা এলাকাটির প্রায় মানুষকেই গণহত্যার মাধ্যমে হত্যা করেছিল। মঙ্গলদের দ্বারা নিহতদের মধ্যে শেখ নাদজম ইদ-দিন কুবরাও ছিলেন।

মেভলেভি বা মৌলভি তরিকা সম্পাদনা

মেভলেভি বা মৌলভি তরিকা (তুর্কি:Mevlevilik বা Mevleviyye; ফারসি:طریقت مولویه) কোনিয়ার (বর্তমানে তুরষ্কে) একটি সুফি তরিকা। ১৩শ শতাব্দীর কবি, আইনবিদ, ধর্মতাত্ত্বিক, অতীন্দ্রিবাদী ও সুফি জালালউদ্দিন রুমির অনুসারীরা তার মৃত্যুর পর এই তরিকা প্রতিষ্ঠা করেন। পশ্চিমা বিশ্বে এই তরিকার অনুসারীদেরকে ঘূর্ণায়মান দরবেশও বলা হয়।

মুরিদিয়া তরিকা সম্পাদনা

মুরিদিয়া তরিকা সেনেগালগাম্বিয়ার অত্যন্ত সুপ্রসিদ্ধ সুবৃহৎ ইসলামি সুফি তরিকা। এই তরিকার মূল কেন্দ্র সেনেগালের তওবাতে, শহরটি এই তরিকার একটি তীর্থস্থান। আরবি শব্দ মুরীদ, যার অর্থ ইচ্ছাপোষণকারী, থেকে এই তরিকার নামকরণ করা হয়েছে। ১৮৮৩ সালে আমাদু বাম্বা সেনেগালে মুরিদিয়া তরিকার প্রতিষ্ঠা করেন। সেনেগালের প্রায় ৪০% মানুষ মুরিদিয়া তরিকার অনুসারী।

রায্যাক্বীয়্যাহ্ তরিকা সম্পাদনা

রায্যাক্বীয়্যাহ্ তরিকা পৃথিবীর প্রাচীনতম সুফি তরিকাগুলোর মধ্যে অন্যতম। রায্যাক্ব আলী গিলানীর (১০৯৩-১২০৮খৃঃ) নাম থেকে এই তরিকার নামকরণ করা হয়েছে। গিলান ইরানের একটি প্রদেশের নাম এবং এর অধিবাসীদের গিলানী বলা হয়ে থাকে। এই তরিকা ইসলামি বিশ্বে সর্বাধিক বিস্তৃততম সুফি তরিকাগুলো একটি এবং মধ্য এশিয়া, হিন্দুস্তান, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল এবং পূর্ব ও পশ্চিম দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে এই তরিকার অনুসারী রয়েছে। অনেকেই এই তরিকাকে "জালালী" তরিকা হিসেবে বিবেচনা করে থাকে, কারণ এই তরিকায় জিকির (স্রষ্ঠাকে স্মরণ করা) জালালতভাবে করা হয়ে থাকে যদিও অন্যান্য তরিকাগুলোতে উচ্চস্বরে বা হালকা উচ্চস্বরে জিকির করা হয়ে থাকে। ইসলামের মূলধারার বাইরে রায্যাক্বীয়্যাহ্ তরিকা কোন বিশেষ মতবাদ বা শিক্ষা গড়ে তোলেনি। এই তরিকার অনুসারীরা ইসলামের মৌলিক নীতিগুলিতে বিশ্বাস করে, কিন্তু আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সেই নীতিগুলোকে তারা ব্যাখ্যা করে। এই তরিকার বর্তমান মূল কেন্দ্র চট্টগ্রাম জেলার পাহাড়তলী থানার অন্তর্গত দরবারে, শহরটি এই তরিকার একটি তীর্থস্থান।

নি'মাতুল্লাহি তরিকা সম্পাদনা

নি'মাতুল্লাহি তরিকা পারস্যের সর্বাধিক বিস্তৃত সুফি তরিকার একটি। এটি শাহ নি'মাতুল্লাহ ওয়ালী (মৃত্য ১৩৬৭) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যা মা'রুফিয়াহ ধারার উত্তরাধিকার থেকে প্রতিষ্ঠিত এবং রূপান্তরিত হয়েছিল। বর্তমানে এই তরিকার অনেকগুলো উপশাখা রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে পশ্চিমা বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত ও প্রভাবশালী ড. জাবেদ নূরবখশের বংশধর যিনি ইরানে ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর পশ্চিমা বিশ্বকে এই তরিকার সাথে পরিচয় করান।

সেনুসি তরিকা সম্পাদনা

সেনুসি একটি ধর্মীয়-রাজনৈতিক সুফি তরিকা যা মুহাম্মদ ইবনে আলী-সেনুসসি কর্তৃক। মিশরীয় উলেমার সমালোচনার কারণে মুহাম্মদ ইবনে আলী-সেনুসি এই তরিকা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মূলত মক্কাতে এই আদর্শের সূচনা হয়, তবে ওহাবীদের অত্যধিক চাপের কারণে আস-সেনুসি মক্কা ছেড়ে চলে যান এবং সাইরেইনিকায় বসতি স্থাপন করেন যেখানে তাকে সাদরে গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে ইদ্রিস বিন মুহম্মদ আল-মাহদী আস-সেনুসি সাইরেইনিকার আমির পদে অধিষ্ঠিত হন এবং লিবিয়ার রাজা পর্যন্ত হয়েছিলেন। মুয়াম্মার গাদ্দাফি তার এই রাজতন্ত্র বিলুপ করেন, কিন্তু লিবিয়ার এক তৃতীয়াংশ লোক এখনও নিজেকে সেনুসি বলে দাবি করেন।

শাযিলিয়া তরিকা সম্পাদনা

Shadhili

শাযিলিয়া তরিকা হল আবুল-হাসান-আশ-শাযিলি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সুফি তরিকা। এই তরিকার মুরিদরা (অনুসারী) প্রায়শ শাযূলিয়া নামে পরিচিত। ফাসিয়া তরিকা, শাযিলিয়া তরিকার একটি শাখা, মক্কার ইমাম আল ফাসি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই তরিকার অসংখ্য অনুসারী সৌদি আরব, মিশর, ভারত, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, মরিশাস, ইন্দোনেশিয়া এবং অন্যান্য মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলিতে রয়েছে।

সোহরাওয়ার্দিয়া তরিকা সম্পাদনা

মূ সোহরাওয়ার্দিয়া ত্বরিকা

সোহরাওয়ার্দিয়া হল সুফি আবুল নাজিব সোহরাওয়ার্দি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সুফি তরিকা। তার ভাতিজা শাহাব আল-দীন আবু হাফস উমর সোহরাওয়ার্দী দ্বারা বিধিবদ্ধ করা হয়েছিল।

তিজান্যিয়া তরিকা সম্পাদনা

মূল নিবন্ধ: তিজান্যিয়া তরিকা

তিজান্যিয়া তরিকা শিক্ষা ও সংস্কৃতির উপর গুরুতারোপ করেছে এবং শিষ্যদের মধ্যে একে অপরের সাথে পারষ্পরিক সম্পর্কের উপরের জোর দিয়েছে।


এছাড়া মাদারিয়া, আহমদীয়া, কলন্দরিয়া, রাহে ভান্ডার নামে আরও কয়েকটি তরিকার উদ্ভব ঘটে।

য়ার্সী (ওয়ারেছী) তরিকা

মূল নিবন্ধঃ ওয়ার্সী ওয়ারেছী

হযরত হাজী হাফেজ সাইয়্যাদ ওয়ারেছ আলী শাহ্ আল হোসাইনী (রঃ)। তিনি  হযরত সাইয়্যাদ ইমাম হোসাইন (রাঃ) এর ২৬ তম মতান্তরে ২৮ তম বংশধর।তিনি চিশতিয়া ও কাদেরিয়া তরিকার সমন্বয়ে ওয়ারেছী তরিকা প্রবর্তন করেন।  এই তরিকার মূল বাণী সৃষ্টি কর্তার সঙ্গে "ইশক" বা প্রেম।  ভারত উপমহাদেশ সহ বিশ্বের প্রায় ১০ টার মত দেশে তিনি তার তরিকা প্রচার করে গেছেন। ভারতের উত্তর প্রদেশের বারাবাংকিতে তার মাজার অবস্থিত। তাকে ১৯ শতকের শ্রেষ্ঠ ওলী বলা হয়।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা