হাবিবুল্লাহ কুরাইশি

বাংলার দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত

হাবিবুল্লাহ কুরাইশি (১৮৬৫ – ১৯৪৩) অবিভক্ত বাংলার একজন দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসার সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং এর প্রথম মহাপরিচালক।[১] তিনি আশরাফ আলী থানভীর শিষ্য ছিলেন। আব্দুল ওয়াহেদ বাঙ্গালীর সংস্কারকাজে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।


হাবিবুল্লাহ কুরাইশি
মহাপরিচালক, আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম
অফিসে
১৮৯৯ – ১৯৪১
উত্তরসূরীশাহ আবদুল ওয়াহহাব
উপাধিআল্লামা, বড় মৌলভি সাহেব[১]
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম১৮৬৫
কাজীপাড়া, চারিয়া, মির্জাপুর, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম
মৃত্যু১৯৪৩(1943-00-00) (বয়স ৭৭–৭৮)
সমাধিস্থলমাকবারায়ে হাবীবী, হাটহাজারী
ধর্মইসলাম
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয়
দাম্পত্য সঙ্গী[২]
সন্তান১০[২]
পিতামাতা
  • মতিউল্লাহ মিয়াজি (পিতা)
জাতিসত্তাবাঙালি
আখ্যাসুন্নি
ব্যবহারশাস্ত্রহানাফি
আন্দোলনদেওবন্দি
প্রধান আগ্রহতাসাউফ, শিক্ষা
উল্লেখযোগ্য কাজ
যেখানের শিক্ষার্থী
মুসলিম নেতা
এর শিষ্যআশরাফ আলী থানভী
যার দ্বারা প্রভাবিত

জীবনী সম্পাদনা

হাবিবুল্লাহ ১৮৬৫ সালে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের চারিয়া গ্রামের কাজী পাড়ার মিয়াজি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মতিউল্লাহ একজন আলেম ছিলেন।[৩] তিনি মারওয়ান ইবনে হাকামের বংশধর হওয়ায় তার নামের শেষে কুরাইশি যুক্ত করা হয়।[৪] পাঁচ বছর বয়সে তার মাতৃবিয়োগ হয়। তিনি পিতার একমাত্র সন্তান ছিলেন। শুরুতে ইমামুদ্দিন মিয়াজির নিকট কুরআন এবং মছিউল্লাহর নিকট জামাতে নাহুম–হাশতুমের বইগুলো অধ্যয়ন করেন।[৫] এরপরে ভর্তি হন তৎকালীন চট্টগ্রামের একমাত্র ইসলামি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান মোহসেনিয়া মাদ্রাসায়। সেখানে জামাতে দুয়াম পর্যন্ত পড়ার পর তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে চলে যান। দেওবন্দে কিছুদিন থাকার পর তিনি কানপুরের মাদ্রাসা জামেউল উলুমে চলে আসেন। সেখানে আশরাফ আলী থানভীর নিকট তিনি দীর্ঘ ৭ বছর অধ্যয়ন করেন। শিক্ষাজীবন সমাপ্তির পর তিনি থানভীর হাতে বায়আত গ্রহণ করেন। থানভী তাকে অনুমতি দিলে তিনি দেশে ফিরে এসে বাড়ির পাশে একটি হুজরা বানিয়ে আধ্যাত্মিক সাধনায় মগ্ন থাকতেন। এভাবে তিনি ২ বছর অবস্থান করেছেন।[৬] তারপরে আব্দুল ওয়াহেদ বাঙ্গালী, সুফি আজিজুর রহমানআব্দুল হামিদের সাথে তার সাক্ষাৎ হয়। তারা তাকে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব বুঝাতে শুরু করেন। বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করে তিনি স্বীয় পীর থানভীর কাছে অনুমতি চেয়ে একটি পত্র লিখেন।[৭] থানভী অনুমতি দিলে তিনি বর্তমান চারিয়া মাদ্রাসার পশ্চিম পাশে একটা ছোট মাদ্রাসা ঘর নির্মাণ করে সেখানে শিক্ষকতা শুরু করেন। পরবর্তীতে সতীর্থদের পরামর্শে তিনি মাদ্রাসাটি তৎকালীন হাটহাজারী বাজারের পাঁকা মসজিদের পাশে স্থানান্তর করেন। নানাবিধ কারণে সেটিও স্থানান্তরের প্রয়োজন দেখা যায়। ১৮৯৯ সালে তার সহকর্মী ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় বর্তমান স্থানে হাটহাজারী মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।[৮] তিনি তার পূর্বের মাদ্রাসা এবং তার সহকর্মী আব্দুল হামিদ তার মাদ্রাসাটি এখানে স্থানান্তর করেন। পরবর্তীতে মাদ্রাসার কর্মপরিধি বৃদ্ধি পেলে থানভীর নির্দেশে তিনি মাদ্রাসার মহাপরিচালক নিযুক্ত হন।[৯] ১৯৪১ সাল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেছেন। মাহমুদ হাসান দেওবন্দি, আশরাফ আলী থানভী, ইসহাক বর্ধমানী তার শিক্ষক ছিলেন।[১] ইসলামি শিক্ষা বিস্তারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মাধ্যমে অবিভক্ত বাংলা, আসামবার্মায় প্রচুর মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হয়েছে।[১] ১৯৪৩ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সাইদ আহমদ সন্দ্বীপির ইমামতিতে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।[১০] তাকে হাটহাজারী মাদ্রাসার কেন্দ্রীয় কবরস্থানে জমিরুদ্দিন আহমদের পাশে দাফন করা হয়[১১], বর্তমানে যা মাকবারায়ে হাবীবী নামে পরিচিত।[১০]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

উদ্ধৃতি সম্পাদনা

  1. ইসলামাবাদী, মুহাম্মদ আবদুর রহীম (৩ নভেম্বর ২০১৬)। "শায়খুল ইসলাম হযরত আল্লামা মাওলানা হাবীবুল্লাহ (রহ)"ইনকিলাব। সংগ্রহের তারিখ ১১ আগস্ট ২০২১ 
  2. আহমদুল্লাহ ২০১৬, পৃ. ১৩৬।
  3. আহমদুল্লাহ ২০১৬, পৃ. ১১০।
  4. আহমদুল্লাহ ২০১৬, পৃ. ১০৯, ১১০।
  5. আহমদুল্লাহ ২০১৬, পৃ. ১১১।
  6. আহমদুল্লাহ ২০১৬, পৃ. ১১২।
  7. আহমদুল্লাহ ২০১৬, পৃ. ১১৬,১১৭।
  8. আহমদুল্লাহ ২০১৬, পৃ. ১১৮।
  9. আহমদুল্লাহ ২০১৬, পৃ. ১২৬।
  10. নিজামপুরী ২০১৩, পৃ. ৩৫।
  11. আহমদুল্লাহ ২০১৬, পৃ. ১৩৩,১৩৪।

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা