ফজলুল হক আমিনী
ফজলুল হক আমিনী (১৫ নভেম্বর ১৯৪৫ - ১২ ডিসেম্বর ২০১২) ছিলেন বাংলাদেশের একজন ইসলামী চিন্তাবিদ, ইসলামী আইনজ্ঞ (মুফতি) ও রাজনীতিবিদ। তিনি ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চার দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি কওমি মাদরাসা বোর্ডেও দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশের অন্যতম দেওবন্দি মাদ্রাসা জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ অধ্যক্ষ ছিলেন।[১]
মুফতি ফজলুল হক আমিনী | |
---|---|
ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান | |
কাজের মেয়াদ ২২ ডিসেম্বর ১৯৯০ – ১২ ডিসেম্বর ২০১২ | |
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন আসনের সংসদ সদস্য | |
কাজের মেয়াদ ১ অক্টোবর ২০০১ – অক্টোবর ২০০৬ | |
পূর্বসূরী | আবদুস সাত্তার ভূঞা |
উত্তরসূরী | জিয়াউল হক মৃধা |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | আমীনপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত। (বর্তমান বাংলাদেশ) | ১৫ নভেম্বর ১৯৪৫
মৃত্যু | ১২ ডিসেম্বর ২০১২ ঢাকা, বাংলাদেশ | (বয়স ৬৭)
সমাধিস্থল | লালবাগ মাদ্রাসা ঢাকা |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত) পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশি |
রাজনৈতিক দল | ইসলামী ঐক্যজোট |
পেশা | ইসলামী চিন্তাবিদ ও রাজনীতিবিদ |
ধর্ম | ইসলাম |
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাআমিনী ১৫ নভেম্বর ১৯৪৫ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আমীনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নিজ জেলার জামেয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসায় প্রাথমিক ও মুন্সীগঞ্জ জেলার মোস্তফাগঞ্জ মাদরাসায় ৩ বছর পড়ালেখা করে ১৯৬১ সালে জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ মাদ্রাসায় ভর্তি হন ও দাওরায়ে হাদীসে সনদ অর্জন করেন। ১৯৬৯ সালে পাকিস্তানের করাচির নিউ টাউন মাদরাসায় ভর্তি হন ও এক বছর উলুমুল হাদীসের উপর উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন।[২]
কর্মজীবন
সম্পাদনা১৯৭০ সালে আমিনী ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের মাদরাসা-ই-নূরিয়া তে শিক্ষকতার মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭৫ সালে জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ যোগদান করেন ও পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালে তৎকালীন অধ্যক্ষ মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী হুজুরের মুত্যুর পর প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এছাড়াও তিনি বড় কাটারা আশরাফুল উলুম মাদরাসাসহ আরও বেশ কিছু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন।[৩]
রাজনৈতিক জীবন
সম্পাদনাআমিনী ১৯৮০-এর দশকে খেলাফত আন্দোলন নামে একটি ইসলামী দলের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। পরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ও তেহরিক-ই-খাতমে নবুওয়াত নামের একটি দলের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চার দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধার কাছে পরাজিত হন।[৪]
আওয়ামী লিগ নেতৃত্বাধীন জোট ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর ২০১১ সাল থেকে প্রায় ২৩ মাস আমিনীকে গৃহবন্দি করে রাখার অভিযোগ রয়েছে।[৩]
সমালোচনা
সম্পাদনা২০০৯ সালে আওয়ামী লিগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালে নারী উন্নয়ন নীতিমালা,[৫] ২০১২ সালে শিক্ষা নীতি[৬] প্রণয়ন করে। ২০০১ সালে বাংলাদেশের হাইকোর্ট ফতোয়ার নামে বিচার-বর্হিভূত শাস্তি অবৈধ ও তা বন্ধে নির্দেশ প্রদান করে।[৭] কয়েকটি ইসলামী দলের নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত ‘ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি’ অন্যতম সমন্বয়ক হিসেবে আমিনী নারী উন্নয়ন নীতিমালা, শিক্ষা নীতি ও ফতোয়ার বিরুদ্ধে দেওয়া হইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং হরতাল পালন করেন।[৮] তিনি নারী উন্নয়নের এই নীতিমালা ও শিক্ষা নীতিমালার মাধ্যে নারীদের উত্তরাধিকরাসূত্রে পাওয়া সম্পত্তির উপর বেশি অধিকার, কর্মসংস্থান এবং শিক্ষা অধিকার প্রতিষ্ঠাকে ইসলাম বিরোধী বলে মত দেন।[৯][১০] কয়েকজন ইসলামি পণ্ডিত এগুলোর কোনটিই ইসলাম বিরোধী নয় বলে মত দেন ও আমিনী কোরআনের কথাকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করছেন বলে সমালোচনা করেন।[৯]
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনাআমিনীর দুই ছেলে ও চার মেয়ে রয়েছে। তিনি মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী হুজুরের জামাতা।[১১]
মৃত্যু ও উত্তরাধিকার
সম্পাদনা২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর আমিনী ঢাকার একটি হাসপাতালে ৬৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকার জাতীয় ঈদগাহ মাঠে ইসলামী রীতি অনুযায়ী জানাজা শেষে তাকে জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ মাদ্রাসায় সমাধিস্থ করা হয়।[৩]
২০১৩ সালে জীবন ও সংগ্রাম নামে তার একটি পূর্ণাঙ্গ স্মারক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। আলোকিত জীবন সংগ্রামী নেতৃত্ব নামে শাকিল আদনান তার একটি জীবনীগ্রন্থ রচনা করেছেন।[১২] মাওয়ায়েজে মুজাহিদে মিল্লাত নামে বিভিন্ন খণ্ডে তার বক্তৃতা সমূহ প্রকাশিত হয়েছে।
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- উল্লাহ, মুহাম্মদ আহসান (২০২১)। বাংলা ভাষায় হাদিস চর্চা (১৯৫২-২০১৫) (পিএইচডি)। বাংলাদেশ: ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ৪১৩–৪১৪।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- আশরাফ, জুবাইর আহমদ (২০২১)। স্মরণীয় মনীষী। ঢাকা: চেতনা প্রকাশন। পৃষ্ঠা ১৫৫–১৬৫। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২।
- আলম, মোঃ মোরশেদ (২০১৪)। হাদিস শাস্ত্র চর্চায় বাংলাদেশের মুহাদ্দিসগণের অবদান। পিএইচডি অভিসন্দর্ভ (গবেষণাপত্র)। ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ১০৯। ৩ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুন ২০২১।
- মাযহারুল ইসলাম ওসমান কাসেমী, মুফতী (২০১৫)। (আমীরে শরিয়ত হযরত মুহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর রহ.) । বিখ্যাত ১০০ ওলামা-মাশায়েখের ছাত্রজীবন (৩য় সংস্করণ)। ইসলামী টাওয়ার, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০: বাড কম্প্রিন্ট এন্ড পাবলিকেশন্স। পৃষ্ঠা ৩৩৫। আইএসবিএন 98483916605।
- ফরিদুদ্দিন, মুহাম্মদ (২০১৭)। মাশায়েখে হুফফায। বাংলাদেশ: তাহফীযুল কুরআন পাবলিকেশন। পৃষ্ঠা ৮৩—৮৫।
- নদভী, উবায়দুর রহমান খান (জানুয়ারি ২০১৩)। "যা রেখে গেলেন মুফতী আমিনী রহ."। মাসিক আল আবরার। বসুন্ধরা, ঢাকা: মারকাযুল ফিকরিল ইসলামী বাংলাদেশ: ২৫—২৮। ২৬ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- জাবেদ হোসাইন, মাওলানা (২০১৭)। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উলামা-মাশায়েখ জীবন ও কর্ম (২ সংস্করণ)। বাংলাবাজার, ঢাকা: আনোয়ার লাইব্রেরী। পৃষ্ঠা ৬৬। আইএসবিএন 9789849103530।
- স্মৃতির পাতায় মুফতি আমিনী রহ.
- মুফতী আমিনী রাহ. : সংগ্রামী এক আলেমের জীবন
- মুফতী ফজলুল হক আমিনী (রহ:) স্মৃতিতে অম্লান এক মহান ব্যক্তিত্ব
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "কালের কণ্ঠ"। Kalerkantho। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-৩০।
- ↑ "স্ম র ণ : মুফতি ফজলুল হক আমিনী"। নয়া দিগন্ত। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৯।
- ↑ ক খ গ ঢাকার লালবাগে চির নিদ্রায় শায়িত হলেন মুফতি ফজলুল হক আমিনী ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৬-০৩-০৪ তারিখে, রেডিও তেহরান, প্রকাশকাল: ১২ ডিসেম্বর ২০১২ খ্রিস্টাব্দ। পরিদর্শনের তারিখ: ১৪ ডিসেম্বর ২০১২ খ্রিস্টাব্দ।
- ↑ "ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৯।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "National Women Development Policy 2011" (পিডিএফ)। Ministry of Women and Children Affairs। মার্চ ২০১১। ২০১৩-০৭-১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "Education Policy"। Ministry of Education। ৩ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৫।
- ↑ "ফতোয়ার নামে বিচার-বর্হিভূত শাস্তি বন্ধে নির্দেশ"। বিডিনিউজ২৪.কম (ইংরেজি ভাষায়)। ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৯।
- ↑ "বাংলাদেশ 'অচল' করার হুমকী"। বিবিসি বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৯।
- ↑ ক খ Rashidul Hasan (২০১১-০৪-১১)। "Amini versions skewed"। দ্য ডেইলি স্টার। ২০১৫-০৪-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৪-১৭।
- ↑ "Dozens injured as Bangladeshi Islamists protest women's equality laws"। The Daily Telegraph। London। ২০১১-০৪-০৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৪-১৭।
- ↑ মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ইন্তেকাল ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৮-০৯-০৫ তারিখে, নিজস্ব প্রতিবেদক, দৈনিক প্রথম আলো, ঢাকা থেকে প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১২ ডিসেম্বর ২০১২ খ্রিস্টাব্দ। পরিদর্শনের তারিখ: ১৪ ডিসেম্বর ২০১২ খ্রিস্টাব্দ।
- ↑ "আলোকিত জীবন সংগ্রামী নেতৃত্ব - শাকিল আদনান | বইবাজার.কম"। BoiBazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২২।