তেঁতুলিয়া উপজেলা
তেঁতুলিয়া বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলার অন্তর্গত বাংলাদেশের সর্বউত্তরের একটি উপজেলা। এখানে রয়েছে ভারতের মহানন্দা নদী। [২]
তেঁতুলিয়া | |
---|---|
উপজেলা | |
মানচিত্রে তেঁতুলিয়া উপজেলা | |
স্থানাঙ্ক: ২৬°২৯′ উত্তর ৮৮°২১′ পূর্ব / ২৬.৪৮৩° উত্তর ৮৮.৩৫০° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | রংপুর বিভাগ |
জেলা | পঞ্চগড় জেলা |
আসন | পঞ্চগড়-১ |
আয়তন | |
• মোট | ১৮৯.১২ বর্গকিমি (৭৩.০২ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০২১)[১] | |
• মোট | ১,৬০,০৯০ |
• জনঘনত্ব | ৮৫০/বর্গকিমি (২,২০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৭৭. ৬% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৫০৩০ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৫৫ ৭৭ ৯০ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
অবস্থান ও আয়তন
সম্পাদনাবাংলাদেশের সর্বোত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়া। আয়তন: ১৮৯.১০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৬°২৪´ থেকে ২৬°৩৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°২১´ থেকে ৮৮°৩৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, পূর্বে পঞ্চগড় সদর উপজেলা। বাংলাদেশের সর্ব উত্তর সীমান্তে তেঁতুলিয়া উপজেলা অবস্থিত।
ভৌগোলিক স্থানাংক অনুযায়ী তেঁতুলিয়া উপজেলাটি ২৬°২৪ থেকে ২৬°৩৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°২০ থেকে ৮৮°৩২ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত।
ইতিহাস
সম্পাদনাতেঁতুলিয়া নামকরণের ইতিবৃওঃ
সম্পাদনাএ উপজেলা বাংলাদেশের প্রাচীনতম থানারগুলোর মধ্যে একটি থানা। তেঁতুলিয়া নামকরণের উৎপত্তি কখন, কিভাবে হয়েছে এর কোন দালিলিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে জনাব ড. নাজমুল হক রচিত 'পঞ্চগড়: ইতিহাস ও লোক ঐতিহ্য' গ্রন্থে প্রদ তথ্য মতে জানা যায়, কোচবিহারের রাজা যেসব প্রজা খাজনা দিতে পারতো না তাদেরকে এই স্থানের তেঁতুল গাছের তলায় বেঁধে মারধর করতেন। অন্য মতে, খাজনা দিতে অক্ষম প্রজাদের নিকট হতে টাকার পরিবর্তে প্রতীকী বাজনাস্বরূপ তেঁতুলের বীজ গ্রহণ করা হতো। অনেকের ধারণা কোচবিহারের মহারাণী তেঁতুল পছন্দ করতেন। রাজার নির্দেশে প্রজারা নিয়ে আসতো অজস্র তেঁতুল। রাণী খুশি হয়ে মওকুফ করে দিতেন সেই সব প্রজার খাজনা। অপরদিকে জনশ্রুতি রয়েছে, ডাকবাংলোর উঁচু টিলার উপর বাস করতেন একজন বিশিষ্ট বণিক। তার বাবার নাম ছিল 'টিটু'। সেই বণিকের বাবার নাম 'টিটু' অথবা 'তেঁতুল' থেকে এই জনপদের নামকরণ 'তেঁতুলিয়া' হতে পারে বলে প্রচলিত লৌকিক গল্প হতে জানা যায়।
তেতুঁলিয়া সৃষ্টির ইতিহাসঃ
সম্পাদনা‘তেঁতুলিয়া’র সুপ্রাচীন ইতিহাস অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও গৌরবের। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে প্রাচীনকাল হতে তেঁতুলিয়ার ঐতিহাসিক গুরুত্ব পরিলক্ষিত হয়। স্থল ও নৌপথে তেঁতুলিয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল বেশ উন্নত। যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে শিল্প বাণিজ্য ও নদী বন্দর হিসেবে ধীরে ধীরে তেঁতুলিয়া হয়ে উঠে সুবিখ্যাত। ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় পঞ্চগড় জেলার প্রাচীন সড়কগুলোর মধ্যে বিখ্যাত সড়ক হল দার্জিলিং-বর্ধমান রোড (বর্তমানে বাংলাদেশ অংশের তেঁতুলিয়া-বাংলাবান্ধা রোড) । এটি এক সময় গ্যাঞ্জেস-দার্জিলিং রোড নামেও পরিচিত ছিল। ভারতে রেলপথ নির্মাণের পূর্বে এটিই ছিল কলকাতা থেকে দার্জিলিং যাওয়ার অন্যতম প্রধান সড়ক । প্রাচীনকালের এই সড়ক পথ ও নদী বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বাণিজ্য কেন্দ্র থেকেই ধীরে ধীরে সৃষ্টি হয় তেঁতুলিয়া।
প্রাচীন ও মধ্যযুগের তেঁতুলিয়াঃ
সম্পাদনাতেঁতুলিয়া অঞ্চলের প্রাচীনকালের ইতিহাস সম্পর্কে জনাব ড. নাজমুল হক রচিত ‘পঞ্চগড়: ইতিহাস ও লোকঐতিহ্য' গ্রন্থ হতে জানা যায়, এই ভূখণ্ড প্রাচীনকালে প্রাগজ্যোতিষ, কামরূপ, রত্নপীঠ, সৌমারপীঠ, পুণ্ড্রবর্ধন' এবং মধ্যযুগে কোচবিহার রাজ্যের অবিচ্ছিন্ন অংশ ছিল। কোচবিহার রাজ্যের পুণ্ড্র জনপদটি বিহার রাজ্যের কুশী বা কৌশিক নদী ও করতোয়া নদীর মধ্যবর্তী ভূ-ভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত এবং সমগ্র উত্তরবঙ্গ ছিল এর অধীনে। যার নিদর্শন স্বরূপ চতুর্দশ শতাব্দীর গৌড়েশ্বর সেকান্দার শাহ এবং পঞ্চদশ শতাব্দীর হোসেন শাহী মুদ্রায় ‘কামরূপ' ও 'কামতা' দু'টি দেশের নাম লেখা পাওয়া যায় । এছাড়াও তৎকালীন সময়ে রচিত ‘আইন-ই-আকবরী' ও ‘বাহরিস্তান-ই-গাইবী' গ্রন্থে ‘কোচ' দেশের মধ্যে ‘কামতা' এবং ‘কামরূপ রাজ্যের নাম উল্লেখ রয়েছে। সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে রচিত ‘শাহনামা'-তে কামরূপ রাজ্যের পশ্চিমার্ধের নাম ‘কামতার' পরিবর্তে ‘কোচবিহার' এবং পূর্বাঞ্চলের ‘কামরূপ' এর স্থলে 'কোচ' এবং ‘হাজো' নামের উল্লেখ রয়েছে। বস্তুত, 'কামরূপ' বিভক্ত ছিল চারভাগে- রত্নপীঠ, কামপীঠ, স্বর্ণপীঠ এবং সৌমারপীঠ। ইতিহাস অনুযায়ী যে স্থানের নাম সৌমারপীঠ সেটিই মূলত 'কামতা' রাজ্য। পঞ্চদশ শতকের প্রথম ভাগে সেন বংশীয় রাজা নীলধ্বজ স্থাপন করেছিলেন এই 'কামতা' রাজ্য। রাজা 'নীলধ্বজ' তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগর ইউনিয়নে একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে জানা যায়। সে সময় তেঁতুলিয়া থানার ভজনপুর অঞ্চল থেকে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত পাল, সেন ও মুসলমান শাসনামলে ছিল গৌড় (মোঘল) রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত প্রত্যন্ত অঞ্চল। প্রাচীন এ অঞ্চলে (এক সময়ের রংপুর জেলা ও ভারত ভাগের পরে সাবেক দিনাজপুর জেলা এবং আধুনিককালের পঞ্চগড় জেলা) কোচ অধিবাসী বসবাস করতো। তারা ঐতিহাসিক কালে ছিল উত্তরবঙ্গ বিজেতা মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠী। এরপর ১৭৬৫ সালে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি দেওয়ানী ক্ষমতা লাভ করে। অতঃপর ১৭৭৩ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে একটি চুক্তির মাধ্যমে প্রাচীন কামরূপ রাজ্যের অন্তর্গত পশ্চিমার্ধের অঞ্চল ‘কামতা’-কে ‘কোচবিহার' (অর্থ: কোচ জাতির বাসস্থান) নামে নামকরণ করা হয়। এই প্রাচীন জনপদটি প্রায় চারশত বছর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কোচবিহার রাজ্যের শাসনাধীন ছিল।
আধুনিক যুগের তেঁতুলিয়াঃ
সম্পাদনাপ্রশাসনিক ইতিবৃত্ত অনুযায়ী আধুনিক যুগ শুরু হওয়ার পর কোচবিহার রাজার শাসনাধীন সময়ে (মোঘল আমলে) 'ফকিরকুণ্ডি' নামক ফৌজদারী অঞ্চলকে ‘রংপুর' জেলায় রূপান্তরিত করা হয়। প্রশাসনিক সুবিধার্থে রংপুর জেলার আওতায় নেয়া হয় তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড়, বোদা, ও দেবীগঞ্জ এই ৪টি থানাকে। পরবর্তীতে অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দশকে এসে সিকিম রাজ্য তেঁতুলিয়া ও শিলিগুড়ি অঞ্চল দখল করে নেয়। পরবর্তী এক শতাব্দীকাল তেঁতুলিয়া অঞ্চল ছিল সিকিম রাজ্যের অধীন। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষার্ধে সিকিমের নিকট থেকে এই অঞ্চল ছিনিয়ে নেয় প্রতিবেশী পার্বত্য রাজ্য নেপাল। তারা ১৮৫০ সালে তেঁতুলিয়া ও শিলিগুড়িসহ তরাই অঞ্চলের পুরোটাই দখল করে নেয়। ১৮৫৭ সালে প্রশাসনিক সুবিধার্থে রংপুর জেলায় তিনটি নতুন মহকুমার সৃষ্টি করা হয়। তন্মধ্যে প্রশাসনিক ইউনিট হিসেবে উত্তরতম মহকুমা হিসেব গঠিত হয় “তেঁতুলিয়া মহকুমা’। এই মহকুমার সাথে সংযুক্ত করা হয় বোদা, সন্ন্যাসীকাটা ও ফকিরগঞ্জ পুলিশ সার্কেলকে। এ সময় হতে বৃদ্ধি পেতে থাকে তেঁতুলিয়া মহকুমার নদী বন্দরের (পুরাতন হাট) গুরুত্ব। এটিকে কেন্দ্র করে গড়ে বেশ কিছু চমৎকার ঘর-বাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ও ঘোড়-দৌড়ের মাঠ (শারিয়ালজোত) । এ সময় নদী পথ (মহানন্দা নদী) দিয়ে আসা যাওয়া করতো মহাজনী নৌকা ।নিয়মিত বসানো হতো বাণিজ্য মেলা। সড়ক পথে বর্ধমান রোড হয়ে কলকাতা থেকে কাপড়, ইসলামপুর থেকে আম, পাহাড়ী অঞ্চল দার্জিলিংত ও ভুটান থেকে নিয়ে আসা হতো রেশমের বন্ধ, টাঙ্গন হাতি-ঘোড়াসহ বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী। হাতি-ঘোড়া বিক্রয়ের জন্য চলে যেতে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলের নেকমরদ" হাটে ও আটোয়ারীর আলোয়াখোয়া মেলায়। ১৮৬৪ সালে সংঘটিত হয় ভুটান-ব্রিটিশ যুদ্ধ। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পঞ্চগড় ভূ-খণ্ড থেকে যুদ্ধ পরিচালনা করে। সে সময় তেঁতুলিয়ার নিকটবর্তী সন্ন্যাসীকাটার একটি ছোট ভূখণ্ড ছিল ভুটানের দেবরাজার অন্তর্গত। ঐ যুদ্ধে ব্রিটিশরা দখল করে নেয়। তেঁতুলিয়ার পার্শ্ববর্তী ডুয়ার্স অঞ্চল। ডুয়ার্সকে পূর্ব ও পশ্চিম দুই খণ্ডে বিভক্ত করা হয়। পশ্চিমাংশ নিয়ে গঠিত হয় 'ওয়েস্টার্ন ডুয়ার্স' নামে নতুন জেলা। 'ডুয়ার্স প্রদেশ বিস্তৃত ছিল ভুটান রাজ্য পর্যন্ত। তৎকালীন সময়ে প্রশাসনিক সুবিধার্থে ১৮৬৬ সালের ১ ডিসেম্বর তারিখে গেজেট নোটিফিকেশনের মধ্যেমে তেঁতুলিয়া মহকুমাকে রংপুর জেলা হতে বিচ্ছিন্ন করে ওয়েস্টার্ন ডুয়ার্সের সঙ্গে আংশিক যুক্ত করা হলেও সকল প্রশাসনিক কার্যক্রম একই সঙ্গে নাস্ত করা হয়নি। এরই ধারাবাহিকতায় ১৮৬৭ সালের ১ জানুয়ারি রংপুর হতে তেঁতুলিয়া মহকুমার ফৌজদারী কার্যক্রম ওয়েস্টার্ন ডুয়ার্সের ডেপুটি কালেক্টরের উপর ন্যস্ত করা হয়। কিন্তু ‘দেওয়ানী' ও 'রাজস্ব' ক্ষমতা পূর্বের ন্যায় বহাল থাকে রংপুরের কালেক্টরের উপরেই। ফলে পুনরায় ১৮৬৯ সালের ১ জানুয়ারি গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে প্রশাসনিক সুবিধার্থে ও রাজস্ব সংক্রান্ত কাজে তেঁতুলিয়া মহকুমার ফকিরগঞ্জ, বোদা ও সন্ন্যাসীকাটা পুলিশ সার্কেলকে ওয়েস্টার্ন ডুয়ার্সের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। একই সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত রেগুলেশন, ১৭৯৩ অনুযায়ী তেঁতুলিয়া, দেবীগঞ্জ, বোদা, ফকিরগঞ্জ, সন্ন্যাসীকাটা, বৈকুণ্ঠপুর, আলিপুর দুয়ার এবং ওয়েস্টার্ন ডুয়ার্স অঞ্চলকে একত্রিত করে গঠন করা হয় 'জলপাইগুড়ি জেলা। যার প্রাচীন নাম ছিল বৈকুণ্ঠপুর। পরের বছর ১৮৭০ সালের ১ এপ্রিল পুনরায় গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে তেঁতুলিয়া মহকুমার প্রশাসনিক ক্ষমতা বিলুপ্ত করে চূড়ান্তভাবে জলপাইগুড়ি জেলা কালেক্টরেটের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। রংপুর জেলার সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে প্রশাসনিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় এবং কাছাকাছি জেলা হিসেবে জলপাইগুড়ির নব উত্থানের কারণে দ্রুত হ্রাস পায় তেঁতুলিয়ার প্রশাসনিক গুরুত্ব। একই সময়ে ম্যালেরিয়ায় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। ফলে শহর হিসেবে গড়ে উঠা তেঁতুলিয়া বন্দর নগরটি হয়ে পড়ে অস্বাস্থ্যকর এবং জনশূন্য। কেবলমাত্র রয়ে যায় একটি পুলিশ আউটপোস্ট। অতঃপর জনমানবহীন তেঁতুলিয়া ১৯১১ সাল পর্যন্ত যুক্ত থাকে জলপাইগুড়ি জেলার 'রাজগঞ্জ" থানার সঙ্গে। পরবর্তীতে ১৯১৩ সালে তেঁতুলিয়ায় একটি পূর্ণাঙ্গ থানা স্থাপন করা হয়। মূলত, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে তেঁতুলিয়া অঞ্চলটি মগধ, অযোধ্যা, বিহার, নেপাল, সিকিম, ভুটান, তিব্বত, আসাম রাজ্যের নিকটবর্তী ও সীমান্তবর্তী হওয়ায় এই ভূখণ্ড প্রাচীনকাল থেকেই যথাক্রমে প্রাগজ্যোতিষ-কামরূপ-কামতা-গৌড়-কোচবিহার-দিল্লীর সাম্রাজ্য এবং ব্রিটিশদের অধীনে শাসিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ব্রিটিশ রাজশক্তির শাসনকর্তৃত্ব থেকে মুক্ত হয়ে ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। ব্রিটিশদের ১৯০ বছরের শাসনামলের অবসান ঘটে। এ সময় তেঁতুলিয়া থানা জলপাইগুড়ি জেলার গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশাসনিক কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার পাশাপাশি মারোয়াড়ীদের প্রসিদ্ধ বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট দেশ ভাগের সময় ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সীমা নির্ধারণ কার্যক্রম "র্যাডক্লিফ লাইন" অনুযায়ী তেঁতুলিয়া থানাকে পূর্ব পাকিস্তানের দিনাজপুর জেলার সাথে যুক্ত করা হয়। এরপর ১৯৮০ সালের ১ জানুয়ারি তেঁতুলিয়া, বোদা, দেবীগঞ্জ, পঞ্চগড় ও আটোয়ারী এই ৫টি থানাকে একত্রিত করে গঠিত হয় 'পঞ্চগড় মহকুমা'। কালের বিবর্তনে বহু ঘাত-প্রতিঘাত এবং চড়াই-উত্রাই পার করে ১৯৮৩ সালের ১৫ এপ্রিল তেঁতুলিয়া একটি পূর্ণাঙ্গ উপজেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড়, বোদা, আটোয়ারী ও দেবীগঞ্জ এই ৫টি উপজেলা নিয়ে 'পঞ্চগড় জেলা গঠিত হয়। বর্তমানে পঞ্চগড় জেলার আওতাধীন এ উপজেলার মোট আয়তন ১৮৯.১২ বর্গ কিলোমিটার এবং ২০২১ সালের জনশুমারী ও গৃহগণনার পরিসংখ্যানের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী বর্তমান লোকসংখ্যা ১,৬০,০৯০ জন।
প্রাকৃতিক দুর্যোগঃ
সম্পাদনা১৯৪২ সালের ভূমিকম্প ও ১৯৬৮ সালের বন্যায় এ উপজেলার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন
সম্পাদনাক্রম নং. | পদবী | নাম |
---|---|---|
০১ | উপজেলা চেয়ারম্যান | শূণ্য পদ |
০২ | ভাইস চেয়ারম্যান | শূণ্য পদ |
০৩ | মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান | শূণ্য পদ |
০৪ | উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা | মোঃ ফজলে রাব্বি |
প্রশাসনিক এলাকা
সম্পাদনাতেঁতুলিয়া উপজেলায় সাতটি ইউনিয়ন আছে। ইউনিয়ন গুলো হচ্ছেঃ-
মুক্তিযুদ্ধে তেঁতুলিয়া
সম্পাদনামুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে পাক হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের প্রায় সব জনপদ দখল করে নিলেও মূলত দুর্গমতার কারণে সীমান্তবর্তী কিছু জনপদে পৌছাতে পারেনি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এ এলাকাগুলো পরিচিত ছিল 'মুক্তাঞ্চল' নামে। মুক্তিযুদ্ধে তেঁতুলিয়া ছিল ৬ নম্বর সেক্টরের অধীন। ঐ সময় বাংলাদেশে যে কয়েকটি অঞ্চল মুক্ত ছিল তার মধ্যে তেঁতুলিয়া অন্যতম। বেশিরভাগ এলাকা সমুহে পাকিস্তানি খান সেনারা আংশিক হলেও দখল করেছিল বা সাময়িকভাবে দখলে নিয়েছিল। কিন্তু পঞ্চগড় থেকে তেঁতুলিয়াগামী মহাসড়কের অমরখানা এলাকা দিয়ে প্রবাহিত চাওয়াই নদীর (ভারত ও বাংলাদেশ আন্তঃসীমান্ত) ওপর নির্মিত সেতুটি (অমরখানা ব্রীজ নামে পরিচিত) ডায়নামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ায় পাকবাহিনী তেঁতুলিয়ায় প্রবেশ করতে পারেনি। ফলে, মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টা তেঁতুলিয়া ছিল সম্পূর্ণ মুক্তাঞ্চল । জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অমরখানার চাওয়াই নদীর পাশে স্বাধীনতার মুক্তাঞ্চল নামে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে তেঁতুলিয়া উপজেলায় (১ অক্টোবর, ২০২২ তারিখ পর্যন্ত) মোট ভাতা ভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৪৬৩ জন। দুই জন খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন তারা হলেন- বীর বিক্রম শহীদ সকিম উদ্দীন ও বীর প্রতীক ল্যান্স নায়েক মো. আব্দুল মান্নান।
বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ
সম্পাদনা- জমির উদ্দিন সরকার - বাংলাদেশের একজন প্রথম সারির প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা। তিনি দুই দফা বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জনসংখ্যা
সম্পাদনামোট-১,৬০,০৯০ জন, নারী ৭৯,৯২৪ জন, পুরুষ ৮০,১৬৬ জন। এ উপজেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অন্তর্গত ০২ (দুই) টি সম্প্রদায়ের লোক বাস করে। সম্প্রদায় দুটি হলো সাঁওতাল ও ওঁরাও। এই দুই সম্প্রদায়ের লোকসংখ্যা আনুমানিক ২০০ জন। বর্তমানে অধিকাংশই খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত। তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নের দর্জিপাড়া ও ভাদ্রবাড়ী গ্রাম, তিরনইহাট ইউনিয়নের ইসলামপুর এবং শালবাহান ইউনিয়নের ডাহুক গুচ্ছগ্রামে এ সকল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সম্প্রদায়ের পরিবারবর্গ বসবাস করেন। বুড়াবুড়ি ও শালবাহান ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে প্রবাহিত ডাহুক নদীর তীরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় নৃ-তাত্বিক জনগোষ্ঠীদের নিয়ে একটি আশ্রয়ণ গ্রাম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শতভাগ পরিবারকে একক গৃহ প্রদানের মাধ্যমে পুনর্বাসন করে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত করা হয়েছে।
ভাষা ও সংস্কৃতি
সম্পাদনাভাষা-
সম্পাদনাভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে তেঁতুলিয়া অঞ্চলটি মগধ, অযোধ্যা, বিহার, নেপাল, সিকিম, ভুটান, তিব্বত ও আসাম রাজ্যের নিকটবর্তী ও সীমান্তবর্তী হওয়ায় এই ভূখণ্ড প্রাচীনকাল থেকেই যথাক্রমে প্রাগজ্যোতিষ - কামরূপ - কামতা গৌড় কোচবিহার - দিল্লীর সাম্রাজ্য এবং ব্রিটিশদের অধীনে শাসিত হয়। সেই সুবাদে এ অঞ্চলে আগমন ঘটে বহু জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের লোকজনের। এছাড়া, স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন অঞ্চল হতে লোকজন এখানে এসে বসতি গড়ে তোলেন। ফলে, তেঁতুলিয়া অঞ্চলের মৌখিক ভাষায় বহুরূপ বৈচিত্র পরিলক্ষিত হয়। ভাষার ইতিহাস সম্পর্কে জনাব ড. নাজমুল হক রচিত ‘পঞ্চগড়: ইতিহাস ও লোক ঐতিহ্য' গ্রন্থে প্রদত্ত তথ্য মতে জানা যায়, এ অঞ্চলের আঞ্চলিক লোকভাষাকে প্রান্ত-উত্তরবঙ্গের উপভাষা হিসেবে অভিহিত করা হয়। প্রচলিত শব্দাবলি মূলত প্রাকৃত ও প্রাচীন বাংলারই সামান্য পরিবর্তিত রূপ। এ অঞ্চলে পালি, প্রাকৃত, প্রাচীন ও মধ্য বাংলা এবং ব্রজবুলি আসামী হিন্দী-বিহারী ইত্যাদি শব্দগুচ্ছ অধিক প্রচলিত। বর্তমানে মুক্তা ও সাঁওতালি ভাষার কয়েকটি প্রচলিত শব্দ যেমন, চাউলি, চুলা, জাইত, পাড়া, হাল, ভোলা, চেংরা, চেংরি ইত্যাদি। স্বামী অর্থে 'ভাতার', বিবাহ অর্থে 'বিহা', যুবক-যুবতি অর্থে 'গান্ডুর বিধবা অর্থে 'রাড়ি', বাউন্ডুলে অর্থে 'বাউনিয়া', স্ত্রী অর্থে 'মাইয়া', ঘর জামাই অর্থে 'ডাঙ্গুয়া', বাঘা অর্থে 'বিষ' ইত্যাদি শব্দগুলো ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়। তাছাড়া স্থানীয় বহুল প্রচলিত আঞ্চলিক শব্দের মধ্যে মুই (আমি), বহিন (বোন), খাম (খাব), ভেল্লা (অনেকগুলো), ছুয়া (বাচ্চা), কেরং (কেমন), বিহা (বিয়ে), এলাই (এখনই) ও পিদিম (পড়ব) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
লোক সংস্কৃতি-
সম্পাদনাভাওয়াইয়া গান-
বাংলাদেশের বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুর এবং পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি, পশ্চিম দিনাজপুর ও কোচবিহার ভাওয়াইয়া গানের আদি জন্মভূমি। উল্লিখিত ভৌগোলিক পরিবেষ্টনীতে অবস্থিত বলে এ অঞ্চলও ভাওয়াইয়া গানের উর্বর পরিচর্যার স্থান। এ গানের আদি উৎপত্তিস্থল হিমালয়ের পাদদেশীয় তরাই অঞ্চল, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার। ভৌগোলিক পরিবেশের কারণেই এ ভূখন্ডে উদ্ভব ঘটেছে ভাওয়াইয়া সঙ্গীতের। ভাব থেকে রচিত হয়েছে ভাওয়াইয়া। প্রেমের ভাব, বিরহ মিলনের আকুতি এবং নারীমনের দুঃখ বেদনার আর্তির যে ভাবময় প্রকাশ, তা থেকেই সৃষ্টি হয়েছে উদাস ধর্মী ভাওয়াইয়া গানের। আরেকটি অভিমত হচ্ছে (ভাওয়া, নিচু জমি বা মহিষের চারণ ক্ষেত্র) অঞ্চলের বাউদিয়া মৈষাল বা বিরাগী বাউদিয়ার কন্ঠ নিঃসৃত বাওয়াইয়া আসা ভাবের নাম ভাওয়াইয়া। উত্তরবঙ্গের অন্যান্য স্থানের মতো এ অঞ্চলের রাজবংশীরা এই গানের ধারক ও বাহক। তবে এই গান হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সমান জনপ্রিয়। নারীমনের আর্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটলেও ভাওয়াইয়া গানের রচয়িতা ও গায়ক সাধারণত পুরুষ। এ গানের নায়ক মৈষাল বন্ধু, গাড়িয়াল, মাহুত, বৈদেশী বন্ধু, রাখাল প্রভৃতি।
হুলির গান-
তেঁতুলিয়া উপজেলায় হুলির গান সর্বাধিক প্রচলিত ও জনপ্রিয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের হোলি পূজা থেকে হুলির গান নামটির উৎপত্তি হলেও সমসাময়িক ঘটনা বা অসঙ্গতিপূর্ণ সামাজিক চিত্র, প্রেম কাহিনী ইত্যাদিকে কেন্দ্র করেও ব্যঙ্গাত্মক ও হাস্যরসাত্মকভাবে এই গান পরিবেশিত হয়। সাধারণত শীতকালে রাতের বেলা এই গান পরিবেশন করা হয়। হুলি পালা শ্রেণির গান। এতে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা থাকে ১০ থেকে ২০ জন পর্যন্ত । এই গানে যেমন রয়েছে নাটকীয়তা, তেমনি আছে কাহিনীর ধারাবাহিক বিন্যাস। কাহিনীকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য একজন ছোকরা (মেয়ের সাজে ছেলে অভিনেতা) এবং একজন সং (জোকার) উপস্থিত থাকে। এরাই দর্শক ও শ্রোতার মনোযোগ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। হুলি পরিবেশনের সময় ঢোল, বাঁশি, কাসর, সারেঙ্গী ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র এবং বর্ণিল পোষাক ব্যবহৃত হয়।
হেরোয়া-
বিয়ে উপলক্ষ্যে পরিবেশন করার জন্য বিয়ের গীতকে এ অঞ্চলে বলা হয় হেরোয়া। অবশ্য গানে ও পরিবেশনের ভঙ্গি উত্তরবঙ্গের অন্যান্য এলাকার মতোই অভিন্ন । হেরোয়ার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো বিয়ের কয়েকদিন পূর্ব থেকেই বিশেষত কনের বাড়িতে একদল মহিলা সমবেত হয়ে বিলম্বিত লয়ে গান গাইতে থাকে। এই সব গানের মধ্যে থাকে কনের জীবনের স্মৃতিচারণ, তার ভবিষ্যৎ করুণ অবস্থার বর্ণনা এবং বর ও তার আত্মীয় স্বজনদের উদ্দেশ্যে মন্দ উক্তি। অবশ্য কনে বিদায়ের দৃশ্যে প্রকাশিত হয় চিরন্তন করুণ সুরের মূর্ছনা।
ঐতিহ্যবাহী খাবার
সম্পাদনাসিদল-
উত্তরাঞ্চলের জনপ্রিয় মুখরোচক খাবার সিদল। বর্ষা পরবর্তী সময়ে খাল বিলের পানি শুকিয়ে গেলে মলা, পুঁটি, টাকি ইত্যাদি মাছ নদীসহ বিভিন্ন জলাশয়ে ধরা পড়ে। ক্ষুদ্র মৎস্য ব্যবসায়ী বা জেলে পরিবার কর্তৃক এসব মাছ পরিষ্কার করে শুকানো হয়। সাধারণত মাছের শুঁটকির সাথে মানকচুর ডাটা দিয়ে প্রথমে সিদল তৈরি করতে হয়, তারপরে উক্ত সিদলকে বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভর্তার উপযোগী করা হয়। মাছের শুঁটকিগুলো ঢেঁকি বা ছাম-গাহিন (বড় আকারের কাঠের হামানদিস্তা) বা শিল-পাটায় গুঁড়া করে নিতে হয়। এরপর মানকচুর ডাঁটা ছিলে ধুয়ে নিয়ে কাঁচা অবস্থাতেই ঢেঁকি বা ছাম-গাহিন অথবা শিল-পাটায় পিষে মানকচুর ডাটার মন্ড করা হয়। মানকচুর ডাটার মন্ডের সঙ্গে মলা, পুঁটি, টাকি মাছের গুঁড়া, প্রয়োজনমতো খাবার সোডা ধীরে ধীরে সবকিছুর সঙ্গে মিশিয়ে সমন্বিত মন্ড তৈরি করতে হয়। সব মেশানো হয়ে গেলে মন্ডগুলো হলুদ ও সরিষার তেল দিয়ে মেখে হাত দিয়ে গোল বা চ্যাপ্টা করে নিতে হয়। অতঃপর ৮-১০ দিন রোদে শুকিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যায় সিদল । মানসম্মতভাবে দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য সিদল ছাইয়ের কলসিতে বা পটে রাখা হয়।
পেলকা-
পেলকা বা প্যালকা হল এক ধরনের স্যুপ জাতীয় খাবার । যার প্রধান উপকরণ শাক বা পাতা। প্রাচীন উত্তরবঙ্গ (রংপুর বিভাগ), ভারতের জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলাসহ আসামের গোয়ালপাড়া এলাকায় এ খাবার খুবই জনপ্রিয় ।
বিভিন্ন শাক যেমন নাপা শাক, সজনে পাতা, কচু পাতা, পুঁইশাক, কুমড়া শাক, বথুয়া, কাকড়ি, বাবরি, সলুক, ধনিয়া, পেয়াজ, রসুন, মরিচ, লবণ ও খাবার সোডা পেলকা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। যদিও এলাকা বা ব্যক্তির পছন্দ ভেদে উপকরণের কম-বেশি তারতম্য ঘটে। এরপর পরিমাণ মতো, লবণ, কাঁচামরিচ, পানি এবং সামান্য খাবার সোডা এক সাথে মিশিয়ে পেলকা রান্না করা হয়। পেলকার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি রান্না করতে কোনো তেল ব্যবহার করা হয় না। পেলকা শাক অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার।
অর্থনীতি
সম্পাদনাপ্রধান কৃষি ফসলাদি ধান, পাট, গম, আখ, আলু, রসুন, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি কাউন, যব, সরিষা, মিষ্টি আলু, অড়হর, তিসি।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, তরমুজ, পেঁপে, আনারস, কমলা।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য তরমুজ, আনারস, কাঁঠাল, পেঁপে, রসুন, পাথর, চা।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬১.৭২%, অকৃষি শ্রমিক ১৬.০১%, ব্যবসা ৮.৮৪%, পরিবহন ও যোগাযোগ ২.৩৩%, চাকরি ৪.৩৮%, নির্মাণ ০.৪৬%, ধর্মীয় সেবা ০.০৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.০৯% এবং অন্যান্য ৬.০৮%।
প্রাকৃতিক সম্পদ কাঁচবালি, বোল্ডার পাথর, চিপপাথর, নুড়িপাথর।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮১.২৪%, পুকুর ০.৮১%, ট্যাপ ০.৪৯% এবং অন্যান্য ১৭.৪৬%।
স্বাস্থ্যসেবা
সম্পাদনা- উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-১,
- পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র-৬ ও
- উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র-৩।
বিনোদন
সম্পাদনা- সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব-১৬
- লাইব্রেরি-১
- সঙ্গীত নিকেতন-১
- সিনেমা হল-১ (আপাদত বন্ধ) ও
- নাট্যগোষ্ঠী-১।
শিক্ষা
সম্পাদনাঅএ উপজেলার শিক্ষার হার ৭৭. ৬%; পুরুষ ৪৪.১%, মহিলা ৩৩.৫%। অএ উপজেলায় ৫টি কলেজ, ২৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৭৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১১টি মাদ্রাসা (তন্মধ্যে ২টি ফাযিল মাদ্রাসা) রয়েছে।
উল্লেখ যোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-
- তেঁতুলিয়া সরকারি ডিগ্রি কলেজ
- তেঁতুলিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়
- ভজনপুর ডিগ্রি কলেজ
- বেগম খলেদা জিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ভজনপুর।
- মাঝিপাড়া মহিলা ডিগ্রি কলেজ
- বেগম ফখরুন নেছা ফাযিল মাদ্রসা ভজনপুর
- কালান্দিগজ সিনিয়র মাদ্রাসা
- কাজী শাহাবুদ্দীন স্কুল এন্ড কলেজ
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান
সম্পাদনানদীসমূহ
সম্পাদনাতেঁতুলিয়া উপজেলায় প্রায় ৯টি নদী রয়েছে। নদীগুলো হচ্ছে-
- করতোয়া নদী - করতোয়া নদী টি বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলা এবং বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পঞ্চগড় ও দিনাজপুর জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত একটি নদী। নদীটির বাংলাদেশ অংশের দৈর্ঘ্য ১৮৭ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১৩৫ মিটার এবং প্রকৃতি সর্পিলাকার। নদীটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জলপাইগুড়ি জেলায় উৎপত্তি হয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের ভদ্রেশ্বর শান্তিনগর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং দিনাজপুর সদর উপজেলার সরকারপুর ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে আত্রাই নদীতে পতিত হয়েছে। করতোয়া নদী প্রধানত রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের অন্তর্গত একটি ছোট নদী, যা একসময় একটি বড় ও পবিত্র নদী ছিল। এর একটি গতিপথ, বর্তমানে যেটির নাম করতোয়া নিম্ন নদী, বগুড়া জেলার মহাস্থানগড় দিয়ে (যা পুন্ড্রনগর নামে পরিচিত ও প্রাচীন পুন্ড্রবর্ধন নগরীর রাজধানী) প্রবহমান। করতোয়ার মাহাত্ম্য এর অতীত ঐতিহ্যের প্রমাণক। মহাভারতে বলা আছে যে, তিনদিন উপবাসের পর করতোয়া নদীতে ভ্রমণ করা অশ্বমেধা (ঘোড়া বলিদান) এর পূণ্যের সমান। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত করতোয়া নদীর পরিচিতি নম্বর-১৩।
- গোবরা নদী - গোবরা নদী বাংলাদেশ ও ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের মাথাফাটা ও আজিজনগর গ্রামের নিম্নাঞ্চল হতে উৎপত্তি হয়ে তেঁতুলিয়া চৌরাস্তার পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ডাঙ্গাপাড়া-দর্জিপাড়া এলাকায় বেরং নদীতে এসে মিলিত হয়ে বেরং নাম ধারণ করেছে। এই নদী বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট নদী। এর দৈর্ঘ্য ৪ কিলোমিটার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত গোবরা নদীর পরিচিতি নম্বর-৩২।
- ডাহুক নদী - ডাহুক নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। তেঁতুলিয়া উপজেলার এই নদীটি বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পঞ্চগড় জেলা, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি এবং বিহারের কিশানগঞ্জ জেলার একটি নদী। নদীটির আনুমানিক দৈর্ঘ্য ১৫০ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৮০ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। নদীটির দৈর্ঘ্য বাংলাদেশ অংশে প্রায় ১০ কিলোমিটার। এই নদীতে প্রচুর নুড়িপাথর, উন্নতমানের বালি ও কাঁচবালি পাওয়া যায়। ব্রিটিশ শাসনামলে এই নদীটি কিছু দিনের মতো বোদা থানা ও উত্তর দিনাজপুর জেলার সীমানা নির্ধারণের কাজ করেছিলো । ডাহুক নদী জলপাইগুড়ি এলাকা থেকে তেঁতুলিয়া উপজেলার রওশনপুর গ্রামের পাশ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সেখান থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার প্রবাহিত হওয়ার পর মাঝিপাড়া ক্যাম্পের দক্ষিণ দিক দিয়ে পুনরায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর দিনাজপুর জেলায় প্রবেশ করেছে। এরপর ভারতের উত্তর দিনাজপুর থেকে বিহারের কিষানগঞ্জ জেলায় গিয়ে মহানন্দা নদীতে পতিত হয়েছে । বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত ডাহুক নদীর পরিচিতি নম্বর ৪৯।
- বেরং নদী - বেরং নদীটি শালবাহান ও তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল হতে উৎপত্তি হয়ে তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের গড়িয়াগছ, খালপাড়া, বিড়ালীজোত, মাথা ফাটা, আজিজনগর, দর্জিপাড়া, প্রেমচরণজোত, কানকাটা ও শারিয়ালজোত হয়ে ভারতের উত্তর দিনাজপুর জেলায় প্রবেশ করেছে। বেরং নদী বাংলাদেশ ও ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৯ কিলোমিটার, প্রস্থ ৫০ মিটার এবং প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত বেরং নদীর পরিচিতি নম্বর ৮৭।
- মহানন্দা নদী - মহানন্দা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত দিয়ে বয়ে চলেছে দুই দেশকে বিভক্তকারী নদী মহানন্দা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী মহানন্দা নদী বাংলাদেশে গঙ্গার একমাত্র উপনদী। এটি বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এর উৎপত্তিস্থল নেপালের দক্ষিণ-পশ্চিমস্থ হিমালয় পর্বত থেকে উদ্ভূত হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দার্জিলিং জেলার অংশে। দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি ও ফুলবাড়ী দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের ঝাড়ুয়াপাড়া এলাকা দিয়ে এটি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। অতঃপর ১৮ কি.মি. পথ পাড়ি দিয়ে আবার তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়ন হয়ে উত্তর দিনাজপুর জেলার হাফতিয়াগছ হয়ে ভারতে প্রবেশ করে ও পরে আবার বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোদাগাড়ী হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে; চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পদ্মা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত মহানন্দা নদীর অংশটির দৈর্ঘ্য ৩৬০ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৪৬০ মিটার ও এর প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত মহানন্দা নদীর পরিচিতি নম্বর ৯৫।
- তিরনই নদী - নদী টি বাংলাবান্ধা ও তিরনইহাট ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীটি বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল চতুরাগছ থেকে উৎপত্তি হয়ে মহানন্দা নদীতে পতিত হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য ৪ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১৫ মিটার এবং প্রকৃতি সর্পিলাকার। মূলত এটি মহানন্দা নদীর একটি উপনদী। সারা বছর পানি প্রবাহ না থাকলেও বর্ষা মৌসুমে যথেষ্ট পানি প্রবাহিত হয়। শুকনো মৌসুমে উজানে নদীটি শুকিয়ে গেলে নদীর কিছু এলাকাজুড়ে ধান চাষ করা হয়। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত তিরনই নদীর পরিচিতি নম্বর ৫৫।
- ভেরসা নদী - ভেরসা নদী বুড়াবুড়ি ইউনিয়নে অবস্থিত বাংলাদেশ ও ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১১ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১৫ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার । বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত ভেরসা নদীর পরিচিতি নম্বর ৯৩।
- সাঁও নদী - নদী টি দেবনগর ইউনিয়নে অবস্থিত বাংলাদেশ ও ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী । এটি ভারতের জলপাইগুড়ি জেলায় উৎপত্তি হয়ে বাংলাদেশের দেবনগর ইউনিয়নের ভদ্রেশ্বরের পূর্ব পার্শ্বে করতোয়া নদীতে মিলিত হয়ে করতোয়া নাম ধারণ করেছে।
- রনচন্ডী নদী - রনচন্ডি নদী তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল দগরবাড়ী হতে উৎপত্তি হয়ে রনচন্ডি বাজারের পশ্চিম পার্শ্বে মহানন্দা নদীতে পতিত হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৪ কিলোমিটার। মূলত এটি মহানন্দা নদীর একটি উপনদী । রনচন্ডি নদীতে সারা বছর পানি প্রবাহ থাকে না, মৌসুমি প্রকৃতির এই নদীতে বর্ষা মৌসুমে যথেষ্ট পানি প্রবাহিত হয়। শুকনো মৌসুমে নদীটি শুকিয়ে গেলে নদীর কিছু এলাকাজুড়ে ধান চাষ করা হয়।[৪][৫]
প্রাচীন নিদর্শন ও দর্শনীয় স্থান
সম্পাদনা- তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্ণার
- ডাহুক বনভোজন কেন্দ্র
- রওশনপুর আনন্দধারা ও চা বাগান
- বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট ও স্থল বন্দর
- বুড়াবুড়ি ইউনিয়নে একটি দুর্গের ভগ্নাংশের
- ভদ্রেশ্বর মন্দির (শিবমন্দির) ও গ্রিক ভাস্কর্ষ রীতিতে নির্মিত দুটি সমাধিসম্ভ
- থানার সীমানা ঘেসে চলে যাওয়া মহানন্দা নদীর তীরে দাড়িয়ে কাঞ্চনজঙ্গা পর্বত দেখা যায়।[৬]
বাংলাদেশের তেল বিতর্ক ও তেঁতুলিয়া
সম্পাদনাবাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জ্বালানি তেলের খনির অবস্থান উত্তরাঞ্চলের সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান গ্রাম। ১৯৮৬-৮৭ অর্থবছরে সন্ধান মেলে জ্বালানি কেরোসিন তেলের খনির। সে সময় পেট্রোলিয়াম ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের অধীনে অনুসন্ধান চালানো হয় দেশের উত্তরের নীলফামারী, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম ও পঞ্চগড় জেলায়। পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলায় ৫ হাজার পয়েন্ট গভীরে এ খনির অবস্থান নিশ্চিত করা হয়। পরবর্তীতে ফরাসি কোম্পানি অনুসন্ধান চালায়। টানা দু’বছর ধরে অনুসন্ধান শেষে বিশেষজ্ঞ দল নিশ্চিত হয় তেঁতুলিয়া উপজেলায় ৯০০ মিটার গভীরে রয়েছে উত্তোলনযোগ্য জ্বালানি তেল। শালবাহান এলাকার কূপ খননের জন্য শেল (পেট্রোলিয়াম কোম্পানি) বিদেশী কোম্পানি ফরাসল-এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে খনির কূপ খনন কাজ শুরু করে। ১৯৮৮-৮৯ সালের জাতীয় বাজেটে ৩৫ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয়। ১৯৮৮ সালের ১০ এপ্রিল তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ আনুষ্ঠানিকভাবে খনির তেল উত্তোলনের কাজ উদ্বোধন করেন। অজ্ঞাতকারণে এক সপ্তাহের মধ্যেই খনি থেকে তেল উত্তোলন বন্ধ করে দেয়া হয়। কেউ কেউ দাবী করেন ভারতের চাপের মুখে তৎকালীন সরকার এ কুপ হতে তেল উত্তোলন বন্ধ করে দেয়। [৭][৮]
আরও দেখুন
সম্পাদনা
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে তেতুলিয়া"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারী ২০১৫।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "তেঁতুলিয়া উপজেলা"। tetulia.panchagarh.gov.bd (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-০৯।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ তেতুলিয়া তথ্য বাতায়ন[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ড. অশোক বিশ্বাস, বাংলাদেশের নদীকোষ, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ৪০৫।
- ↑ মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক (ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি। ঢাকা: কথাপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ৬১৭। আইএসবিএন 984-70120-0436-4।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৪ সেপ্টেম্বর ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৯।
- ↑ "সাপ্তাহিক এর ওয়েব পৃষ্ঠা"। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৯।
- ↑ RAW in Bangladesh