চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। রাজশাহী বিভাগের অন্তর্গত এই জেলাটিকে কখনো নবাবগঞ্জ এবং চাঁপাই নামেও ডাকা হয়। ভারত উপমহাদেশ বিভাগের আগে এটি মালদহ জেলার একটি অংশ ছিল। ১৯৪৭ সালে এটি মালদহ থেকে আলাদা হয়ে পূর্ব পাকিস্থানে অন্তর্ভুক্ত হয় এবং রাজশাহী জেলার একটি মহাকুমা হিসেবে গন্য হয়। ১৯৮৪ সালে একটি একক জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। অনেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কে 'আমের শহর' বা 'আমের দেশ' বলেও জানে। এই জেলায় বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত আমের একটি বড় অংশ উৎপাদিত হয় যার ফলে একে 'Capital of Mango'বলা হয় এবং উৎপাদিত এই আমগুলো হয়ে থাকে খুবই সুস্বাদু যার কারনে একে 'City Of Mango' বা 'আমের শহর' বলা হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ | |
---|---|
জেলা | |
চাঁপাই নবাবগঞ্জ | |
![]() বাংলাদেশে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৪°৪৩′৪৮″ উত্তর ৮৮°১২′০″ পূর্ব / ২৪.৭৩০০০° উত্তর ৮৮.২০০০০° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | রাজশাহী বিভাগ |
সরকার | |
• জেলা প্রশাসক | এ কে এম গালীভ খান |
আয়তন | |
• মোট | ১,৭০২.৫৬ বর্গকিমি (৬৫৭.৩৬ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ১৬,৪৭,৫২১ |
• জনঘনত্ব | ৯৭০/বর্গকিমি (২,৫০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৬৭% [১] |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৬৩০০ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৫০ ৭০ |
ওয়েবসাইট | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট ![]() |
ভৌগোলিক সীমানাসম্পাদনা
মোট ১,৭৪৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অবস্থান বাংলাদেশের মানচিত্রে সর্ব পশ্চিমে। এর পূর্বে রাজশাহী ও নওগাঁ জেলা, উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদহ জেলা, পশ্চিমে পদ্মা নদী ও মালদহ জেলা দক্ষিণে পদ্মা নদী ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলা। এটি ভৌগোলিকভাবে ২৪°২২′ হতে ২৪°৫৭′ উত্তর অক্ষাংশে এবং ৮৭°৫৫′ হতে ৮৮°২৩′ পূর্ব দ্রাঘিমার মধ্যে অবস্থিত।[২]
প্রশাসনিক এলাকাসমূহসম্পাদনা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ৫টি উপজেলায় বিভক্ত। এগুলি হলঃ
উপজেলা | ওয়েবসাইট | আয়তন (কি.মি.²) | জনসংখ্যা |
---|---|---|---|
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট | ৪৫১.৮০ | ৪,৫২,৬৫০ |
গোমস্তাপুর উপজেলা | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট | ৩১৮.১৩ | ২,৪০,১২৩ |
নাচোল উপজেলা | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট | ২৮৩.৬৮ | ১,৪৬,৬২৭ |
ভোলাহাট উপজেলা | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট | ১২৩.৫২ | ১,২০,৪২৯ |
শিবগঞ্জ উপজেলা | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট | ৫২৫.৪৩ | ৫,৯১,১৭৮ |
ইতিহাসসম্পাদনা
নামকরণসম্পাদনা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নামটি সাম্প্রতিকালের। জেলাবাসীর দাবির মুখে ২০০১ সালের ১লা আগস্ট সরকারিভাবে নবাবগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রাখা হয়। পূর্বে এই এলাকা ‘নবাবগঞ্জ নামে পরিচিত ছিল। চাঁপাইনবাবগঞ্জ নামকরণ সম্পর্কে জানা যায়, প্রাক-ব্রিটিশ আমলে এ অঞ্চল ছিল মুর্শিদাবাদের নবাবদের বিহারভূমি এবং এর অবস্থান ছিল বর্তমান সদর উপজেলার দাউদপুর মৌজায়। নবাবরা তাঁদের পাত্র-মিত্র ও পরিষদ নিয়ে এখানে শিকার করতে আসতেন বলে এ স্থানের নাম হয় নবাবগঞ্জ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ নামের ইতিবৃত্ত নবাব আমলে মহেশপুর গ্রামে চম্পাবতী মতান্তরে ‘চম্পারানী বা চম্পাবাঈ’ নামে এক সুন্দরী বাঈজী বাস করতেন। তার নৃত্যের খ্যাতি আশেপাশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং তিনি নবাবের প্রিয়পাত্রী হয়ে ওঠেন। তার নামানুসারে এই জায়গার নাম ‘চাঁপাই”। এ অঞ্চলে রাজা লখিন্দরের বাসভূমি ছিল। লখিন্দরের রাজধানীর নাম ছিল চম্পক। চম্পক নাম থেকেই চাঁপাই। ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর (১৮৮৫-১৯৬৯ খ্রি) বাঙলা সাহিত্যের কথা গ্রন্থের প্রথম খণ্ডে বর্ণিত লাউসেনের শত্রুরা জামুতিনগর দিয়ে গৌড়ে প্রবেশ করে। বর্তমান ভোলাহাট উপজেলার জামবাড়িয়া পূর্বে জামুতিনগর নামে পরিচিত ছিল। এসবের ওপর ভিত্তি করে কোনো কোনো গবেষক চাঁপাইকে বেহুলার শ্বশুরবাড়ি চম্পকনগর বলে স্থির করেছেন এবং মত দিয়েছেন যে, চম্পক নাম থেকেই চাঁপাই নামের উৎপত্তি হয়েছে ।
তেভাগা আন্দোলনসম্পাদনা
নাচোলে তেভাগা আন্দোলন শুরু হয়। পদ্মা-মহানন্দা-পুনর্ভবার কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছিল মধ্যযুগের মুসলিম বাংলার প্রাণকেন্দ্র গৌড় নগরীর এক অগ্রসর জনপদ। ইতিহাসের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় এই জনপদ কখনোই বাংলার শাশ্বত প্রতিবাদমুখর ঐতিহ্যের পথ থেকে বিচ্যুত হয়নি ; বরং স্বদেশী ও ভিনদেশী সব রকমের শোষণ, নিপীড়ন ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রামে এখানকার বরেন্দ্রভূমি চিরকাল স্বাধীনচেতা মানুষের বুকের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সংঘটিত নীল বিদ্রোহ ও সাঁওতাল বিদ্রোহ, পাকিস্তান আমলে নাচোলের কৃষক বিদ্রোহ, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং এমনকি স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে স্বৈরাচারবিরোধী গণঅভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসী তাদের বিদ্রোহী ও অধিকারসচেতন সত্তার প্রমাণ দিয়েছেন।
পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশ যুগসম্পাদনা
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের সময় র্যাডক্লিফ রোয়েদাদ অনুসারে নবাবগঞ্জ এবং তার পার্শ্ববর্তী শিবগঞ্জ, নাচোল, ভোলাহাট ও গোমস্তাপুর থানাকে মালদহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে পূর্ব পাকিস্তানের রাজশাহী জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। শাসন ব্যবস্থার সুবিধার্থে ১৯৪৮ সালের ১ নভেম্বর রাজশাহী জেলার একটি থানা ও দিনাজপুরের অন্তর্ভুক্ত পোরশা থানাসহ একটি নতুন মহকুমার সৃষ্টি হয় এবং নবাবগঞ্জ শহরে মহকুমা সদর দপ্তর স্থাপিত হয় । এই নতুন মহকুমার নাম রাখা হয় ‘নবাবগঞ্জ’।
১৯৮২ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রশাসনকে জনগণের দোর গোড়ায় পৌঁছে দেয়ার ঘোষণা দিয়ে থানাগুলোকে উপজেলা এবং মহকুমাকে জেলায় রূপান্তরিত করেন। এই পদক্ষেপের কারণে নবাবগঞ্জের ৫টি থানা শিবগঞ্জ, নাচোল, ভোলাহাট, গোমস্তাপুর ও নবাবগঞ্জ সদর থানা উপজেলায় উন্নীত হয়। ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ নবাবগঞ্জ মহকুমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা ঘোষণা করা হয়।
জনসংখ্যাসম্পাদনা
চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার জনসংখ্যা ১৬৪৭৫২১ জন। পুরুষ জন ও নারী জন। মোট জনসংখ্যার ৯৫.৩৬% ইসলাম ধর্মালম্বী, ৪.০৪% হিন্দু ধর্মালম্বী, ০.৩৫ % খ্রিস্টান ধর্মালম্বী এবং ০.২৫% জনগণ অন্যান্য ধর্মের অনুসারী।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ধর্মবিশ্বাসসম্পাদনা
অর্থনীতিসম্পাদনা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। এই জেলার বেশিরভাগ মানুষ গ্রামে বাস করে। তারা মূলত কৃষিকাজ করে তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে। তার মধ্যে কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী আছে যারা মৌসুমের সময় অর্থ উপার্জন করে। তার মধ্যে আম ব্যবসায়ী প্রধান। চাঁপাই নবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা এই মৌসুমি আম ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসার উপযুক্ত স্থান। আমের মৌসুমে এই শিবগঞ্জ উপজেলা হয়ে উঠে লোকে লোকারণ্য। আমের মৌসুমে এখানে চাঁপাই নবাবগঞ্জের সবচেয়ে বড় আমের বাজার বসে যা বাংলাদেশের আর কোথাও দেখা যায় না।
আম ব্যবসায়ী ছাড়াও এখানে টমেটো ব্যবসায়ী,কাঁসা-পিতল ব্যবসায়ী, পান ব্যবসায়ী দেখতে পাওয়া যায়। তবে আমের ব্যবসায়ীই প্রধান। উল্লেখ্য যে সদর উপজেলার যাদুপুর গ্রামের পান এই অঞ্চলের সেরা পান। অধিকাংশ পান ব্যবসায়ীই এই অঞ্চলের।
আমসম্পাদনা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিত, কারণ গ্রীষ্মকালীন এই ফলটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অর্থনীতির প্রধান উৎস। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অধিকাংশ জমি বিভিন্ন ধরনের আমের গাছে ভরপুর থাকে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় সবচেয়ে বেশি আম উৎপন্ন হয় শিবগঞ্জ, ভোলাহাট,নাচোল ও গোমস্তাপুর উপজেলায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় উৎপাদিত আমের মধ্যে হচ্ছে, ফজলি, ল্যাংড়া, ক্ষীরশাপাতি, আশ্বিনা, বোম্বাই অন্যতম ।
ধর্মসম্পাদনা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ১৯৮৭ টি মসজিদ, ৪৭৪ টি মন্দির, ৫৬ টি বৌদ্ধ মন্দির এবং ২৮ টি চার্চ আছে । ছোট সোনামসজিদ, চাঁপাই মসজিদ, ১৫শতকের দারসবাড়ী মসজিদ ইত্যাদি হচ্ছে বিখ্যাত মসজিদ । জোড়া মঠ হচ্ছে বৌদ্ধদের অন্যতম আশ্রম এবং নওদা স্তুপ হল বৌদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ।
শিক্ষাসম্পাদনা
শিক্ষা ক্ষেত্রে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বেশ উন্নত। এখানে রয়েছেঃ
- ৩৭০টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়;
- ২৮২টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়;
- ৪টি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়;
- ২০৪টি বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়;
- ৪টি সরকারি কলেজ;
- ৪৮টি বেসরকারি কলেজ;
- ১২৮টি মাদ্রাসা;
- ১টি সরকারী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র;
- ১টি বেসরকারী কারীগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
- ১টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং
- ১টি যুব উন্নয়ন কেন্দ্র ।
- ২টি PTI আছে।
এখানকার উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ
- শিবগঞ্জ সরকারী মডেল হাইস্কুল,
- চাঁপাইনবাবগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট,
- নাচোল এশিয়ান স্কুল এন্ড কলেজ,
- হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়,
- নবাবগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ,
- রাজারামপুর হামিদুল্লহ উচ্চ বিদ্যালয়,
- রাজারামপু হাসিনা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়,
- সরকারি টেকনিকাল স্কুল এন্ড কলেজ,
- নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ,
- নবাবগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ,
- এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
- আদিনা ফজলুল হক সরকারি কলেজ
- বিনোদপুর কলেজ
- রহনপুর এ. বি. সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়।
চিত্তাকর্ষক স্থানসম্পাদনা
- ছোট সোনা মসজিদ
- ছোট সোনা মসজিদ পার্ক
- তোহাখানা
- শাহ নেয়ামতুল্লাহ এর মাজার
- চামচিকা মসজিদ
- দারাসবাড়ি মসজিদ
- ধানিয়াচক মসজিদ
- স্বপ্নপল্লী
- নাচোল রাজবাড়ী
- বাবুডাইং
- রহনপুর নওদা বুরুজ
- গোয়াইন বাধ ৭ টি*
- নীলকুঠি
- মহানন্দা নদী
- শুড়লার তেঁতুল গাছ
- স্বপ্ন পল্লী পার্ক
- টাংঘন পিকনিক পার্ক
- কানসাটের জমিদার বাড়ি
সংস্কৃতিসম্পাদনা
ভাষাসম্পাদনা
চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষেরা বাংলাতে কথা বললেও তাদের উচ্চারণশৈলী প্রমিত বাংলা থেকে একটু আলাদা। তাদের কিছু শব্দের উচ্চারণ এখানে দেয়া হলঃ
অ্যাইগন্যা = উঠান, আইলস্যা = অলস, কাড়ি, আইড় = ধানের খড়, ইন্দারা/কুমহা = কুয়া, উফাদিক = উপাধিক/অকর্মন্য, উসকাঠী = রান্নার কাজে ব্যবহৃত একটি দন্ড যা দ্বারা জ্বালানী চুলার মধ্যে পাঠানো হয় (পাট গাছের কাণ্ড), কান্টা = বাড়ির পিছনের জায়গা, গঁঢ়্যা = ছোট ডোবা, ভূঁইশ = মহিষ, বল/আঁইড়্যা = ষাঁড়, বকরী = ছাগল, পাঘা = দড়ি, লাহি = নাভী, ঘুটা/নোন্দা = গরুর গোবর দিয়ে তৈরি এক প্রকার জ্বালানি, তহোমন = লুঙ্গী, সাঠা = এক ধরনের লাঠি, পির্হ্যান = পোশাক, ছুঁড়ি = কুমারী মেয়ে, ঘাঁটা = রাস্তা, গাঁটঠা/বেহুদ্দা= বদমাইশ, ড্যারমা/মোটাহুস/হুসমোটা = কাণ্ডজ্ঞানহীন ব্যক্তি, নাথ = গরুর নাখের ভিতর ফুটো করে দড়ি হিসাবে যেটা দেয়া হয়, গোলদান= গরুর গলায় যে দড়ি পরানো থাকে, ছাইনচ্যা = টিনের চালা বেয়ে যেখানে পানি পড়ে, সলহি = গরুর গাড়ির জোয়ালের দুই ফুটোর মধ্যে দেয়ার জন্য কাঠের লম্বা দন্ড, ঢুঁইড়া = খোঁজ করা, সানকি = রান্না ঘরে ব্যবহারিত মাটির পাত্র, ছেঁচকি = তরকারী নাড়ার জন্য ব্যবহারিত লোহার দন্ড, ঢাকুন = ঢাকনা, ডই = ডাল নাড়ার জন্য কাঠের দন্ড, হাইস্যা = হাসুয়া, পাইহ্যা = চাকা, লদ্দি = নদী, পোখর = পুকুর, গোহিল = গোয়াল, আইল = জমির কিনারা, হ্যালা = সাঁতার কাটা, কোচ্চুল= চামচ, লেহেলি = লেপ, পঁহাত = সকাল, কান্ধা = কিনারা, আড়া/আইল = জমির সীমানা/আল, জাফত = দওয়াত, ন্যাংটা= উলঙ্গ, টাপিয়্যা = দৌড়ে, তাম্বাস= ভাত উঠানো চামচ, প্যাইচ্ছা = ডালি, গুড়ল বাতি/গুললতি = গুলতি,লাহার়ী=নাস্তা,খইলহ্যা=অলস, হামি=আমি, হাঁকে/হামাকে=আমাকে, হাঁরঘে=আমাদের, তাঁহিস -জ্বালা, হাঁরাকে= আমাদেরকে, পিন্ধা= পরা, দুপ্পহার= দুপুর, রায়িত= রাত, আইন্যা= এনে/আনিয়া দেয়া, কর্যা লে= করে নে, কহা= বল(বলা অর্থে), কহলি= বললি, কহিল্যা= বললা, কহিলেন= বলিলেন, কাইদ্যা= কাস্তে, স্যাকারগন= মিষ্টি আলু, বাগুন= বেগুন, ভুঁই= জমি, কুনঠেকার= কোথাকার, কুনঠে= কোথায়, কুমহার= কুমার, ছুথাইর্যা= অপরিচ্ছন্ন, অপরিষ্কার। লম্ভা= লম্বা, ছুটু= ছোট, বিসোইদব্যার= বৃহস্পতিবার, আঘুন= অগ্রহায়ণ, সোরিল= শরীর, গতর= গা,দেহ। রাম পটল= ঢেড়স, খুচপুইচ্যা= অস্থির, লেও= নাও।
গম্ভীরাসম্পাদনা
গম্ভীরা বাংলাদেশের লোকসঙ্গীতের অন্যতম একটি ধারা। বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ও পশ্চিমবঙ্গের মালদহ অঞ্চলে গম্ভীরার প্রচলন রয়েছে। গম্ভীরা দলবদ্ধভাবে গাওয়া হয়। এটি বর্ণনামূলক গান। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা অঞ্চলের গম্ভীরার মুখ্য চরিত্রে নানা-নাতি খুব জনপ্রিয়। ধারণা করা হয় যে, গম্ভীরা উৎসবের প্রচলন হয়েছে শিবপূজাকে কেন্দ্র করে। শিবের এক নাম ‘গম্ভীর’, তাই শিবের উৎসব গম্ভীরা উৎসব এবং শিবের বন্দনাগীতিই হলো গম্ভীরা গান। গম্ভীরা উৎসবের সঙ্গে এ সঙ্গীতের ব্যবহারের পেছনে জাতিগত ও পরিবেশগত প্রভাব রয়েছে।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিসম্পাদনা
- গোলাম আরিফ টিপু
- ইলা মিত্র - উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী।
- প্রফেসর ড. এমাজউদ্দিন আহমদ - বাংলাদেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য।
- প্রফেসর মো.রফিকুন নবী (র’নবী) - আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রথিতযশা চিত্রশিল্পী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অফ ফাইন আর্টস এর
সাবেক পরিচালক।
- আলোকচিত্রাচার্য মঞ্জুর আলম বেগ - বাংলাদেশের আলোকচিত্র আন্দোলনের পথিকৃৎ, আধুনিক ফটোগ্রাফীর জনক, একুশে পদক প্রাপ্ত আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আলোকচিত্রাচার্য।
- বিচারপতি মুহম্মদ হাবিবুর রহমান শেলি - ১৯৯৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা/অন্তবর্তীকালীন বাংলাদেশ সরকার প্রধান, বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি, মহান ভাষা আন্দোলের বীর সৈনিক, প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, গবেষক ও লেখক।
- মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিঞা একজন বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে ১৯৯০ সালের মার্চ থেকে ১৯৯২ সালে অক্টোবর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। মনিরুজ্জামান মিঞা শিক্ষা কমিশনের প্রধান ছিলেন। তিনি ২০০৪ সালে শিক্ষায় একুশে পদক লাভ করেন।
- প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মিজান উদ্দিন - শিক্ষাবিদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য(২০১৩-২০১৭)।
- মমতাজউদদীন আহমদ - নাট্যকার, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ।
- ভাষা সৈনিক - এ্যাডভোকেট ওসমান গণি
- রাজিত রহমান - (১৯৯২-২০১২)কানসাট আন্দোলনের প্রথম কবি
- লে. জে. (অব) ড. আমিনুল করিম - সেনা কর্মকর্তা
- মেসবাহুল হক বাচ্চু - ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক
আরও দেখুনসম্পাদনা
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন, ২০১৪)। "এক নজরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ৩ মে ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০১৪। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ "অবস্থান"। ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।