চা

এক ধরনের উষ্ণ পানীয়

চা বলতে সচরাচর সুগন্ধযুক্ত ও স্বাদবিশিষ্ট এক ধরনের উষ্ণ পানীয়কে বোঝায় যা চাপাতা পানিতে ফুটিয়ে বা গরম পানিতে ভিজিয়ে তৈরী করা হয়। চা গাছ থেকে চা পাতা পাওয়া যায়। চা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ক্যামেলিয়া সিনেনসিস। চা পাতা কার্যত চা গাছের পাতা, পর্ব ও মুকুলের একটি কৃষিজাত পণ্য যা বিভিন্ন উপায়ে প্রস্তুত করা হয়। সর্বোচ্চ চা রপ্তানিকারক দেশ হলো চীন।ইংরেজিতে চায়ের প্রতিশব্দ হলো টি (tea)। গ্রিকদেবী থিয়ার নামানুসারে এরূপ নামকরণ করা হয়েছিল। চীনে ‘টি’-এর উচ্চারণ ছিল ‘চি’। পরে হয়ে যায় ‘চা’।[][ভাল উৎস প্রয়োজন]

চা
সবুজ চা পাতা
প্রকারগরম বা ঠাণ্ডা পানীয়
উৎপত্তির দেশচীন
প্রবর্তনআনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ১০ম শতাব্দী[]

পানির পরেই চা বিশ্বের সর্বাধিক উপভোগ্য পানীয়। এর একধরনের স্নিগ্ধ, প্রশান্তিদায়ক স্বাদ রয়েছে এবং অনেকেই এটি উপভোগ করে। প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া অনুসারে চা-কে পাঁচটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যেমন - কালো চা, সবুজ চা, ইষ্টক চা, উলং বা ওলোং চা এবং প্যারাগুয়ে চা।[] এছাড়াও, সাদা চা, হলুদ চা, পুয়ের চা-সহ আরো বিভিন্ন ধরনের চা রয়েছে। তবে সর্বাধিক পরিচিত ও ব্যবহৃত চা হল সাদা, সবুজ, উলং এবং কাল চা। প্রায় সবরকম চা-ই ক্যামেলিয়া সিনেনসিস থেকে তৈরি হলেও বিভিন্ন উপায়ে প্রস্তুতের কারণে এক এক ধরনের চা এক এক রকম স্বাদযুক্ত। পুয়ের চা অনেক ক্ষেত্রে ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

ক্যামেলিয়া সিনেনসিস বিহীন এক কাপ চা। এক্ষেত্রে চা তৈরীর জন্য অপরাজিতা ফুল ব্যবহার করা হয়েছে

কিছু কিছু চায়ে ক্যামেলিয়া সিনেনসিস থাকে না। ভেষজ চা হল একধরনের নিষিক্ত পাতা, ফুল, লতাউদ্ভিদের অন্যান্য অংশ যাতে কোন ক্যামেলিয়া সিনেনসিস নেই। লাল চা সাধারণত কাল চা (কোরিয়া, চীন ও জাপানে ব্যবহৃত হয়) অথবা দক্ষিণ আফ্রিকার রুইবস গাছ থেকে তৈরি হয় এবং এতেও কোন ক্যামেলিয়া সিনেনসিস নেই।

ইতিহাস

সম্পাদনা

চা মৌসুমী অঞ্চলের পার্বত্য ও উচ্চভূমির ফসল। একপ্রকার চিরহরিৎ বৃক্ষের পাতা শুকিয়ে চা প্রস্তুত করা হয়। চীন দেশই চায়ের আদি জন্মভূমি। বর্তমানে এটি বিশ্বের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য পানীয়রূপে গণ্য করা হয়।

১৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে চীনে বাণিজ্যিকভাবে চায়ের উৎপাদন শুরু হয়। আর ভারতবর্ষে এর চাষ শুরু হয় ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে। ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশরা সিলেটে সর্বপ্রথম চায়ের গাছ খুঁজে পায়। এরপর ১৮৫৭ সালে সিলেটের মালনীছড়ায় শুরু হয় বাণিজ্যিক চা-চাষ।[] এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে সমগ্র বিশ্বে ৩৮,০০,০০০ টন চা পাতা উৎপাদিত হয়েছে।

চাষ পদ্ধতি

সম্পাদনা

চা প্রধান ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চলের ফসল হলেও উপ-ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলেও এটি কিছু কিছু চাষ করা যায়। প্রথম অবস্থায় পাহাড়ের ঢালু জমি পরিষ্কার করা হয়। এর চারা পৃথক বীজতলায় তৈরী করা হয়। তারপর চা উষ্ণ ও আর্দ্র অধিক উচ্চতার জলবায়ু তে চাষ করা হয়।

চারাগুলো যখন ২০ সেন্টিমিটার দীর্ঘ হয়, তখন সেগুলোকে চা-বাগানে সারিবদ্ধভাবে রোপণ করা হয়। সাধারণতঃ দেড় মিটার পরপর চারাগুলোকে রোপণ করা হয়ে থাকে। এরপর গাছগুলোকে বৃদ্ধির জন্য যথামাত্রায় সার প্রয়োগ ও পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হয়। এভাবে দুই থেকে তিন বছর পরিচর্যার পর পাতা সংগ্রহের উপযোগী করে তোলা হয়। কিন্তু গাছগুলো পাঁচ বছর না হওয়া পর্যন্ত যথাযথভাবে পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে না। একটি চা গাছ গড়পড়তা ৩০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত উৎপাদনের উপযোগী থাকে। তারপর পুনরায় নতুন গাছ রোপণ করতে হয়।

প্রাকৃতিক উপাদান

সম্পাদনা

প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এমন পাহাড়িয়া বা উচ্চ ঢালু জমি চা চাষের জন্য সবিশেষ উপযোগী। পানি নিষ্কাশনের বন্দোবস্ত থাকলে উচ্চ সমতল ভূমিতেও চা চাষ করা সম্ভবপর। হিউমাস সারযুক্ত এবং লৌহমিশ্রিত দো-আঁশ মাটি চা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু চা উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন। চা চাষের জন্য ১৭৫ - ২৫০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত আবশ্যক। এজন্য মৌসুমী ও নিরক্ষীয় অঞ্চলের দেশগুলোয় চা চাষের উৎপাদন বেশি হয়ে থাকে।

প্রকারভেদ

সম্পাদনা

পৃথিবীতে আসাম এবং চীনজাতীয় - এ দুই প্রকারের চা গাছ দেখতে পাওয়া যায়।[] তন্মধ্যে আসামজাতীয় চা গাছ ভারতশ্রীলঙ্কায় অধিক চাষ করা হয়। এ ধরনের গাছ বেশ বড় এবং বহু পাতাযুক্ত হয়। বিধায়, এটি বাণিজ্যিকভিত্তিতে চাষ করার জন্যে বিশেষ উপযোগী। এ গাছ প্রায় ৬ মিটার বা ২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। পাতার নাগাল পাওয়া এবং পাতা সংগ্রহের জন্য গাছগুলোকে ১.২ মিটার বা ৪ ফুটের অধিক বড় হতে দেয়া হয় না। ছেঁটে দেয়ার ফলে চা গাছগুলো ঘণঝোঁপে পরিণত হয়।

অন্যদিকে চীনজাতীয় গাছ আকারে বেশ ছোট হয়। এতে পাতার সংখ্যাও অনেক কম থাকে। এ গাছ না ছাঁটলেও পাতা তোলার মতো উচ্চতাসম্পন্ন হয়ে থাকে।

ব্যবস্থাপনা

সম্পাদনা

চা গাছ রোপণ, আগাছা পরিষ্কারকরণ, সার প্রয়োগ করা, গাছ ছাঁটা, কচি পাতা চয়ন, চা-পাতা শুকানো, সেঁকা, চা-প্যাকিং ইত্যাদি বহুবিধ ধরনের কর্মকাণ্ডে দক্ষ-অদক্ষ প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন পড়ে। পাতা চয়নের কাজে দক্ষ মহিলা শ্রমিক নিয়োজিত থাকে।[] বিষয়টি বেশ ধৈর্য্যের বিধায় বাগান কর্তৃপক্ষ সাধারণত নারী শ্রমিকদেরকেই পাতা চয়নের জন্য নিয়োগ দিয়ে থাকে। এছাড়াও কম ফলনের স্বার্থে চা বাগানে প্রচুর জৈব ও রাসায়নিক সারসহ প্রয়োজনীয় কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়।

চা গাছ হতে পাতা সংগ্রহ করতে ব্যক্তিকে যথেষ্ট নৈপুণ্য ও দক্ষতা অর্জন করতে হয়। কারণ দু'টি পাতা ও একটি কুঁড়ি একসঙ্গে তুলতে না পারলে চায়ের উৎকর্ষ ও আমেজ অনেকাংশেই নষ্ট হয়ে যায়। চীন ও জাপানে বছরে গড়পড়তা তিনবার চা-পাতা সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু ভারত, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় খুব ঘন ঘন পাতা সংগ্রহ করা যায়। এদেশগুলোতে বছরে গড়ে ষোল থেকে বিশ বার পর্যন্ত চা পাতা সংগ্রহ করতে দেখা যায়।

গুণাগুন

সম্পাদনা

চীনজাতীয় গাছের পাতা স্বাদগন্ধের জন্য সুখ্যাত। কিন্তু আসামজাতীয় গাছের পাতা রঙের জন্য বিখ্যাত। এই দুই ধরনের চা-পাতার উন্নত সংমিশ্রণের উপরই এর গুণাগুন নির্ভর করে। স্বভাবতঃই চা মিশ্রণ একটি নিপুণতা ও অত্যন্ত কঠিন কাজ। তাই এটি অভিজ্ঞ ব্যক্তির দ্বারা সম্পাদনা করতে হয়। এরূপভাবে চা মিশ্রণে নৈপুণ্যের লাভের প্রেক্ষাপটে লিপটন, ব্রুকবণ্ড প্রভৃতি চা প্রস্তুতকারক কোম্পানী বিশ্ববাজার দখল ও খ্যাতি লাভ করেছে। উল্লেখ্য পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ের চা স্বাদে গন্ধে বিশ্বখ্যাত।

 
লাল চা
 
দুধ চা

উৎপাদন বণ্টন ব্যবস্থা

সম্পাদনা
 
বাংলাদেশে চা চাষ
 
ভাঁড়ে চা
 
এক কাপ চা

২০০৩ সালে বিশ্বে চা উৎপাদিত হয়েছিল ৩.২১ মিলিয়ন টন।[] ২০০৮ সালে বিশ্বের চা উৎপাদন ৪.৭৩ মিলিয়ন টনেরও বেশি হয়েছিল। সর্ববৃহৎ চা উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে - গণপ্রজাতন্ত্রী চীন, ভারত, কেনিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং তুরস্ক অন্যতম।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈশ্বিক চা উৎপাদন (টন হিসেবে) নিম্নের ছকে দেখানো হলো। জানুয়ারি, ২০১১ সালে উপাত্তগুলো জাতিসংঘের খাদ্য এবং কৃষি সংস্থার কাছ থেকে নেয়া হয়েছে -

নং দেশ[] ২০০৮ ২০০৯ ২০১০ ২০১১
  চীন ১২,৭৪,৯৮৪ ১৩,৭৫,৭৮০ ১৪,৬৭,৪৬৭ ১৬,৪০,৩১০
  ভারত ৯,৮৭,০০০ ৯,৭২,৭০০ ৯,৯১,১৮০ ১০,৬৩,৫০০
  কেনিয়া ৩,৪৫,৮০০ ৩,১৪,১০০ ৩,৯৯,০০০ ৩,৭৭,৯১২
  শ্রীলঙ্কা ৩,১৮,৭০০ ২,৯০,০০০ ২,৮২,৩০০ ৩,২৭,৫০০
  তুরস্ক ১,৯৮,০৪৬ ১,৯৮,৬০১ ২,৩৫,০০০ ২,২১,৬০০
  ভিয়েতনাম ১,৭৩,৫০০ ১,৮৫,৭০০ ১,৯৮,৪৬৬ ২,০৬,৬০০
  ইরান ১,৬৫,৭১৭ ১,৬৫,৭১৭ ১,৬৫,৭১৭ ১,৬২,৫১৭
  ইন্দোনেশিয়া ১,৫০,৮৫১ ১,৪৬,৪৪০ ১,৫০,০০০ ১,৪২,৪০০
  আর্জেন্টিনা ৮০,১৪২ ৭১,৭১৫ ৮৮,৫৭৪ ৯৬,৫৭২
১০   জাপান ৯৬,৫০০ ৮৬,০০০ ৮৫,০০০ ৮২,১০০
সর্বমোট বিশ্বে ৪২,১১,৩৯৭ ৪২,৪২,২৮০ ৪৫,১৮,০৬০ ৪৩,২১,০১১

জৈব জ্বালানি

সম্পাদনা

২০১০ সালে পাকিস্তানের কায়দে আজম বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যানোবিজ্ঞানীরা ব্যবহৃত চায়ের পাতা থেকে জৈব জ্বালানি তৈরির একটি উপায় বের করেছেন। তারা এ থেকে বিকল্প পদ্ধতিতে ব্যবহৃত ফেলে দেয়া চা পাতা থেকে গ্যাসিফিকেশন পদ্ধতিতে ২৮% হাইড্রোকার্বন গ্যাস উৎপাদন করা সম্ভব। এই গ্যাস কয়লার মতোই সরাসরি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। তবে অন্যান্য গবেষকদের মতে এ উপায়ে জৈব জ্বালানি তৈরির খরচ অনেক বেশি।[]

বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট

সম্পাদনা

চা গাছের জন্য অধিক পরিমাণে বৃষ্টিপাত ও তাপের প্রয়োজন হয় বলে বাংলাদেশের বৃষ্টিবহুল পাহাড়িয়া অঞ্চলে ব্যাপকভাবে চায়ের চাষ করা হয়। চা শিল্প বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প। জাতীয় অর্থনীতিতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশের চা উৎপাদনের পরিমাণ বছরে প্রায় সাড়ে ৬০০ মিলিয়ন কেজি এবং এখান থেকে চা রফতানি করা হয় ২৫টি দেশে। চা উৎপাদনের দিক থেকে এগিয়ে আছে চীন, ভারত, কেনিয়া, শ্রীলঙ্কা[] এ তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টমে। বাংলাদেশে চা পানকারীর সংখ্যা প্রতিবছর ৬ শতাংশ হারে বাড়ছে। চা পানে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ১৬তম ৷[] সে তুলনায় চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধি না-পাওয়ায় ১৯৮৪ সাল থেকে ক্রমান্বয়ে রপ্তানীর পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে।

বর্তমানে ৪৭,৭৮১ হেক্টর জমিতে ১৬৪টি[] চা বাগানের মধ্যে সিলেট বিভাগেই রয়েছে ১৪৮টি চা বাগান।[] তন্মধ্যে ৯০% চা সিলেট বিভাগে এবং অবশিষ্ট ১০% চট্টগ্রাম বিভাগে উৎপন্ন হয়। প্রায় সকল চা বাগান ব্রিটিশ আমলে স্থাপিত। তবে সাম্প্রতিককালে পঞ্চগড় জেলায় অনেক চা বাগান ও ( ৪৫ টি বটলিফ চা ফ্যাক্টরি) স্থাপিত হয়েছে। যার কারনে বর্তমানে চা উৎপাদনকারী হিসেবে উত্তরবঙ্গকে ২য় স্থান বলা হয়। এছাড়া ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, দিনাজপুর ও লালমনিরহাট জেলায় ক্ষুদ্র আকারে চা চাষ হচ্ছে। । এক সময় বাংলাদেশ চা রপ্তানি করে অনেক আয় করত। বাংলাদেশ চা বোর্ড এর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ৮ কোটি ৮৯ লাখ কেজি চা ভোগ করা হয়েছে। কিন্তু উৎপাদন ছিল এর থেকেও কম।[]

চা বাগানগুলোতে স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৯০ হাজার। অস্থায়ীভাবে কাজ করছে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিকবাংলাদেশ সরকারের সাথে ২০০৯ সালে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী বাগানের শ্রেণীভেদে শ্রমিকেরা যথাক্রমে দৈনিক ৪৮.৪৬ টাকা ও ৪৫ টাকা হারে মজুরি ছিল । স্থায়ী শ্রমিকদেরকে রেশন হিসেবে প্রতিদিন আধা-কেজি চাউল অথবা আটা দেওয়া হয়।[] চা শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর চুক্তি হওয়ার কথা প্রতি ২ বছর পর পর। পরবর্তীতে মজুরি ক্রমান্বয়ে ১০২ টাকা এবং ১২০ টাকায় উন্নীত করা হয়।চুক্তি অনুযায়ী ২০২১ সালে ১ জানুয়ারি থেকে চা-শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর কথা।[১০] ২০২১ সালের ১৩ জুন চা শিল্প খাতে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গেজেট আকারে খসড়া মজুরির ১২০টাকা সুপারিশ প্রকাশ করে। কিন্তু এর আগেই মালিক ও শ্রমিক পক্ষের দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১২০ টাকা মজুরি কার্যকর হয়। [১১]

যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, রাশিয়া, চেক ও স্লোভাক প্রজাতন্ত্র, বুলগেরিয়া, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরী, জাপান, মিশর, সুদান, জর্ডান, গ্রীস, সাইপ্রাস, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশে চা রপ্তানী করা হয়। বাংলাদেশের চা পৃথিবীব্যাপী '''সিলেট টি''' নামে খ্যাত।

 
বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলার একটি চা বাগানে চা গাছ

একুশ শতকে বাংলাদেশ অরগ্যানিক টী পঞ্চগড়ে চা উৎপাদন করা শুরু করেছে। এর উৎপাদক কাজী এন্ড কাজী। এছাড়াও, পঞ্চগড়ে ময়নাগুড়ি টি এস্টেট, কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেট, টিটিসিএল সহ নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ৫০০ এর বেশি চা বাগান রয়েছে।[১২]

বিশ্বের কয়েকটি দামী চা

সম্পাদনা
  • ডা-হোং পাও টি, চীন - প্রতি কেজি ১২ লাখ ডলার। এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে দামী চা।
  • পাণ্ডা ডাং টি, চীন - প্রতি কেজি প্রায় ৭০ হাজার ডলার।
  • ইয়েলো গোল্ড টি বাডস, সিঙ্গাপুর -

প্রতি কেজি প্রায় ৮০০০ ডলার।

  • ভিনটেজ নার্সিসাস, চীন - প্রতি কেজি ৩,২৫০ ডলার।
  • সিলভার টিপস ইমপেরিয়াল টি, দার্জিলিং - প্রতি কেজি ১৮৫০ ডলার।
  • গোল্ডেন বেঙ্গল টি, বাংলাদেশ - (প্রস্তাবিত) - যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লন্ডন টি এক্সচেঞ্জ তাদের উৎপাদিত 'গোল্ডেন বেঙ্গল টি' নামের বিশেষ চা-য়ের মূল্য নির্ধারণ করেছে প্রতি কেজি ১৪ লাখ পাউন্ড, বাংলাদেশি টাকায় যার মূল্য প্রায় ১৬ কোটি টাকা। ২০২২ সালের মে মাস নাগাদ তারা এই চা বাজারে আনার ঘোষণা দিয়েছে। সিলেটে এই চায়ের চাষ করা হচ্ছে। এই চা বাজারে আসলে এটি হবে বিশ্বের সবচেয়ে দামী চা। [১৩]

আন্তর্জাতিক চা দিবস

সম্পাদনা

বিশ্বজুড়ে দৈনিক ২ বিলিয়ন কাপ চা পান করেন মানুষ। চায়ের জনপ্রিয়তার কারণে প্রতি বছর ২১ মে আন্তর্জাতিক চা দিবস পালন করা হয়।[১৪]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Tea"Encarta। ২০০৮-০৩-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৭-২৩ 
  2. "প্রথম আলো"। ২০১৮-০৯-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-১২ 
  3. মানবীয় পরিবেশ, মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী, বাংলাদেশ বুক করপোরেশন লিঃ, ঢাকা, ২য় সংস্করণ, ২০১১ইং, পৃষ্ঠাঃ ১৩৯
  4. "The Official Website of Tea Board India"www.teaboard.gov.in। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-০৭ 
  5. উচ্চ মাধ্যমিক অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক ভূগোল, অধ্যাপক মোঃ বশির উদ্দিন সরদার, রতন পাবলিশার্স, ১ম সংস্করণ, ১৯৯৮ইং, পৃঃ ৬১-৬২
  6. Food and Agiculture Oraganization of the United Nations—Production FAOSTAT ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ নভেম্বর ২০১১ তারিখে. Retrieved January 9, 2010.
  7. "বাতিল চা-পাতা থেকে জৈব জ্বালানি", নুরুন্নবী চৌধুরী; বিজ্ঞান প্রজন্ম, দৈনিক প্রথম আলো, ঢাকা; জুলাই ৩, ২০১০। তথ্যসূত্র: Science & Development Network।
  8. "চা পানের ব্যয় বেড়ে গেল"। প্রথম আলো। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮। 
  9. দৈনিক সমকাল, মুদ্রিত সংস্করণ, লোকালয়, পৃষ্ঠা-৮, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১২ইং
  10. ১৬৮ বছরেও চা-শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ১৬৮ টাকাও হলো না, ডেইলি স্টার,বাংলা, ১৭ আগস্ট ২০২২
  11. চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি সময়ের দাবী, চ্যানেল আই অনলাইন ডটকম, ১৯ আগস্ট ২০২২
  12. দৈনিক ইত্তেফাক, মুদ্রিত সংস্করণ, কড়চা, এই শীতে পঞ্চগড়ে, পৃষ্ঠা-৫, ১৭ জানুয়ারি, ২০১২ইং
  13. গোল্ডেন বেঙ্গল টি: বাংলাদেশে তৈরি সোনালি চা কি হবে বিশ্বের সবচেয়ে দামী চা?, বিবিসি নিউজ বাংলা, ৯ মার্চ ২০২২
  14. বিশ্বজুড়ে দৈনিক ২ বিলিয়ন কাপ চা পান করেন মানুষ, জাগো নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম, ২১ মে ২০২৩

গ্রন্থপঞ্জী

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা