বাংলাদেশের জেলা

বাংলাদেশের জেলাসমূহের তালিকা
(Districts of Bangladesh থেকে পুনর্নির্দেশিত)

জেলা বাংলাদেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর। কয়েকটি উপজেলা নিয়ে একটি জেলা গঠিত হয়। প্রশাসনিকভাবে একটি জেলা একটি বিভাগের অধিক্ষেত্রভুক্ত।

বর্তমানে বাংলাদেশের বিভাগ ৮টি: ১. ঢাকা বিভাগ, ২. চট্টগ্রাম বিভাগ ৩. রাজশাহী বিভাগ, ৪. রংপুর বিভাগ, ৫. বরিশাল বিভাগ, ৬. সিলেট বিভাগ, ৭. খুলনা বিভাগ, ও ৮. ময়মনসিংহ বিভাগ। বিভাগগুলোর অন্তর্গত ৬৪টি জেলা রয়েছে। এছাড়া প্রস্তাবিত নতুন দুইটি বিভাগ রয়েছে। এগুলো হলো পদ্মা বিভাগ[১] এবং মেঘনা বিভাগ[২]। ১৯৭১-এ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাকালে জেলার সংখ্যা ছিল ১৯ টি । সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ মহকুমাগুলোকে জেলায় উন্নীতকরণের প্রক্রিয়া চালু করেন।

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠালগ্নে পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশের জেলার সংখ্যা ছিল ১৭ টি। ১৯৬৯-এ ময়মনসিংহ জেলার টাঙ্গাইল মহকুমা ও বরিশাল জেলার পটুয়াখালী মহুকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ১৯৭৮ সালে ময়মনসিংহের জামালপুর মহুকুমাকে একটি জেলায় উন্নীত করা হয়।[৩]

শ্রেণিবিভাগ সম্পাদনা

বাংলাদেশ সরকার জেলা সমূহকে গুরুত্ব ও উপজেলার সংখ্যার ভিত্তিতে ৪টি শ্রেণিতে ভাগ করে। শ্রেণিগুলো হলো 'বিশেষ', 'এ', 'বি' ও 'সি'। বর্তমানে ৬৪টি জেলার মধ্যে ‘বিশেষ’ শ্রেণিতে ৬টি, ‘এ’ শ্রেণিতে ২৬টি, ‘বি’ শ্রেণিতে ২৬টি এবং ‘সি’ শ্রেণিতে ৬টি জেলা রয়েছে।

জেলা পরিষদ সম্পাদনা

একজন চেয়ারম্যান, পনেরো জন সদস্য ও পাঁচ জন সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য নিয়ে জেলা পরিষদ গঠিত হয়, যারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন।[৪]

জেলার প্রধান সম্পাদনা

জেলা ও দায়রা জজ হচ্ছেন বাংলাদেশের জেলার বিচার বিভাগের প্রধান। তিনি একাধারে জজ কোর্ট অধিকর্তা, জেলার প্রধান বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা, জেলার দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতের কর্ণধার এবং জাস্টিস অব পিস বা শান্তি রক্ষাকারী বিচারপতি। তিনি জেলাতে একমাত্র গ্রেড-১ অফিসার। জেলা ও দায়রা জজ জেলার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সহ প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটদের এবং জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের আপীল কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রম অনুযায়ী জেলা ও দায়রা জজের পদমর্যাদা ১৬ নং ক্রমিকে অবস্থিত। জেলা ও দায়রা জজ পদে ৫ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করা বিচারক সিনিয়র সচিব পদমর্যাদার।[৫][৬] জেলা ও দায়রা জজ জেলার প্রধান কোর অফিসার।

চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বাংলাদেশের জেলার প্রধান ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি একাধারে জেলার ম্যাজিস্ট্রেটদের অধিকর্তা, ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের কর্ণধার, জেলা ম্যাজিস্ট্রেসির প্রধান এবং জাস্টিস অব পিস বা শান্তি রক্ষাকারী বিচারপতি হিসেবে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখার নিমিত্তে ত্বরিত সিদ্ধান্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য দায়িত্ব ও ক্ষমতাপ্রাপ্ত।[৭] জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, সর্বত্র শান্তি রক্ষা করা এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তার দায়িত্ব। ফৌজদারি কার্যবিধির বিধান মোতাবেক প্রাপ্ত ক্ষমতাবলে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জেলার পুলিশ, প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও বিভাগগুলো ক্ষমতার অপব্যবহার করছে কিনা বা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে কিনা তা দেখভাল করেন। জেলা ও দায়রা জজ এবং চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জেলাতে রাষ্ট্রপতিপ্রধান বিচারপতির সাথে যোগাযোগের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বাংলাদেশের জেলার দ্বিতীয় প্রধান কোর অফিসার বা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কর্মকর্তা এবং জেলার সর্বোচ্চ কর্মকর্তা বা প্রধান কোর অফিসার জেলা ও দায়রা জজের পরেই তার অবস্থান। বাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রম অনুযায়ী চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের পদমর্যাদা ১৭ নং ক্রমিকে অবস্থিত।[৮][৯]

জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার ডিভিশন ভিত্তিক সেনানিবাসের প্রধান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা জিওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশে ঢাকা,‌ টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, যশোর,পটুয়াখালী, বগুড়া, রংপুর, সিলেট ইত্যাদি জেলাতে ডিভিশন ভিত্তিক সেনানিবাস রয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, যে সেনানিবাসে একটি ডিভিশন আছে সেই সেনানিবাসের প্রধান থাকেন একজন মেজর জেনারেল পদমর্যাদার অফিসার। আর যেই সেনানিবাসে একটি ব্রিগেড বা লগ এরিয়া রয়েছে সেই সেনানিবাসের প্রধান থাকেন একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অথবা কর্নেল পদের অফিসার। অন্যদিকে, যেই সেনানিবাসে মাত্র একটি ইউনিট থাকে সেই সেনানিবাসের প্রধান থাকেন একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদের অফিসার। বাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রম অনুযায়ী মেজর জেনারেলের পদমর্যাদা ১৬, ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের পদক্রম ২১, কর্নেলের পদক্রম ২২ এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেলের পদক্রম ২৪।

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা পরিষদের প্রশাসনিক প্রধান। তার নেতৃত্বে ১৫ জন সদস্য ও ৫ জন সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য নিয়ে জেলা পরিষদ গঠিত হয়, যারা জেলার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন।[১০] বাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রম অনুযায়ী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদক্রম ২৪।

জেলা প্রশাসক জেলার মুখ্য আমলা ও ভূমিরাজস্ব কর্মকর্তা। তিনি একই সাথে জেলা কালেক্টর, ডেপুটি কমিশনার ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট‌। ফলে তিনি ভূমি ব্যবস্থা পরিচালনা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমন্বয় সাধন এবং সাধারণ ও স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে কাজ করেন। জেলা প্রশাসক মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের একজন প্রতিনিধি। তিনি তার কাজের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট জবাবদিহি করেন। তিনি জেলার মুখ্য প্রটোকল অফিসার হিসেবে জেলাতে সফরকারী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রটোকল দেবার দায়িত্ব পালন করেন। অর্ডার অব প্রিসিডেন্স অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের পদক্রম ২৪।

পুলিশ সুপার জেলার পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব দেন। তিনি থানায় দায়েরকৃত মামলার যথাযথ তদন্ত নিশ্চিত করে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক নির্ধারিত আমলী আদালতের অধিক্ষেত্রের প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট পুলিশ রিপোর্ট দাখিলের ব্যবস্থা করেন। পুলিশ সুপার অপরাধ প্রতিরোধ, উদঘাটন এবং অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে সচেষ্ট থাকেন। তিনি আদালতের নির্দেশ মোতাবেক ওয়ারেন্ট, সমন, তদন্তের আদেশ ইত্যাদি তামিল ও বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। আদালত কর্তৃক সুষ্ঠু বিচারকার্য সম্পাদনার স্বার্থে তিনি প্রসিকিউশন বিভাগের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আদালতের সাথে সমন্বয় ও সম্পর্ক রক্ষা করেন। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে পুলিশ সুপারের পদক্রম ২৫।

পদমর্যাদা সম্পাদনা

বাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রম অনুযায়ী সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজের পদক্রম ১৫, জেলা ও দায়রা জজ এবং মেজর জেনারেলের পদক্রম ১৬, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের পদক্রম ১৭, কর্নেলের পদক্রম ২২, জেলা প্রশাসক (ডিসি)/লেফটেন্যান্ট কর্নেলের পদক্রম ২৪ এবং পুলিশ সুপার (এসপি) এবং মেজরের পদক্রম ২৫ নম্বরে অবস্থিত।[১১][১২][১৩]

জেলার তালিকা সম্পাদনা

 
বাংলাদেশের জেলাসমূহ

বিভাগীয় জেলাসমুহ সম্পাদনা

জেলার নাম বিভাগ সৃষ্টিক্রম
চট্টগ্রাম জেলা চট্টগ্রাম বিভাগ ১৬৬৬
ঢাকা জেলা ঢাকা বিভাগ ১৭৭২
রাজশাহী জেলা রাজশাহী বিভাগ ১৭৭২
রংপুর জেলা রংপুর বিভাগ ১৭৭২
বরিশাল জেলা বরিশাল বিভাগ ১৭৯৭
সিলেট জেলা সিলেট বিভাগ ১৭৮৬
ময়মনসিংহ জেলা ময়মনসিংহ বিভাগ ১৭৮৭
খুলনা জেলা খুলনা বিভাগ ১৮৮২

সৃষ্টির সময়রেখা সম্পাদনা

১৬৬৬
১৭৬৯
১৭৭২
১৭৮১
১৭৮৬
১৭৮৭
১৭৯০
১৭৯৭
১৮১৫
১৮২১
১৮৩২
১৮৬০
১৮৮২
১৯৪৭
১৯৬৯
১৯৭১
  • ঢাকা বিভাগ: ঢাকা জেলা, ফরিদপুর জেলা, ময়মনসিংহ জেলা, টাঙ্গাইল জেলা
  • চট্টগ্রাম বিভাগ: পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা, চট্টগ্রাম জেলা, কুমিল্লা জেলা, নোয়াখালী জেলা, সিলেট জেলা
  • রাজশাহী বিভাগ: বগুড়া জেলা, দিনাজপুর জেলা, রাজশাহী জেলা, রংপুর জেলা, পাবনা জেলা
  • খুলনা বিভাগ: বরিশাল জেলা, যশোর জেলা, খুলনা জেলা, কুষ্টিয়া জেলা, পটুয়াখালী জেলা
১৯৭৮
১৯৮৩
  • বগুড়া জেলা থেকে জয়পুরহাট জেলা সৃষ্টি।
  • যশোহ জেলা থেকে মাগুরা জেলা সৃষ্টি
  • পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা থেকে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলা সৃষ্টি
১৯৮৪
২২ ফেব্রুয়ারি
১ মার্চ

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "'বৃহত্তর ফরিদপুরকে ফরিদপুর বিভাগ ঘোষণা করা হবে'" 
  2. "প্রস্তাবিত কুমিল্লা বিভাগের নাম হবে ময়নামতি/মেঘনা বিভাগ প্রধানমন্ত্রী" 
  3. "বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো"। Archived from the original on ৪ সেপ্টেম্বর ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  4. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ২৬ জুলাই ২০১২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ডিসেম্বর ২০১২ 
  5. "জেলা জজের পদমর্যাদা সচিব ও চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের পদমর্যাদা সচিব মর্যাদাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের সমান" 
  6. "পদমর্যাদার ক্রম রিটের সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ" 
  7. "ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮" 
  8. "পদমর্যাদা ক্রমে জেলা জজ ১৬ ও চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১৭ তে উন্নীত" 
  9. "Supreme Court releases full verdict on Warrant of Precedence" 
  10. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ২৬ জুলাই ২০১২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ডিসেম্বর ২০১২ 
  11. "সাংবিধানিক পদ সর্বাগ্রে থাকবে"। ১ জুন ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুন ২০২২ 
  12. "দশ পদের পদমর্যাদা পরিবর্তন" 
  13. "ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স মামলায় সর্বোচ্চ আদালতের রায় প্রকাশ" 

বহি:সংযোগ সম্পাদনা