ফেনী জেলা
ফেনী জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এটা একসময়ে বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার অংশ ছিল ও তৎকালীন ত্রিপুরা জেলা(বর্তমান ত্রিপুরা রাজ্যের অংশ ছিল। ২০১১ সালের জনশুমারী অনুযায়ী, এর জনসংখ্যা ১৪৩৭৩৭১ জন, যা চট্টগ্রাম বিভাগের নবম জনবহুল জেলা হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। ফেনীর প্রধান প্রশাসনিক কেন্দ্র হলো ফেনী শহর, যা ফেনী সদর উপজেলার মূখ্য প্রশাসনিক কেন্দ্র। এর প্রকৃত নাম শমশের নগর। ১৯৮৪ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এটি এই নামে বৃহত্তর নোয়াখালী, কুমিল্লার (কিছু অংশ), চট্টগ্রাম জেলার (বাকি অংশ) উল্লেখযোগ্য মহকুমা ছিল।[১] ফেনী বাংলাদেশের ৬৪তম জেলা। এর উপজেলা সংখ্যা ৬টি। সেগুলো হলো: সোনাগাজী, ফুলগাজী, পরশুরাম, দাগনভুঁইয়া, ছাগলনাইয়া এবং ফেনী সদর।
ফেনী | |
---|---|
জেলা | |
![]() নদীতীরে বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প, সোনাগাজী | |
![]() বাংলাদেশে ফেনী জেলার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৩°১′০″ উত্তর ৯১°২৩′৩০″ পূর্ব / ২৩.০১৬৬৭° উত্তর ৯১.৩৯১৬৭° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | চট্টগ্রাম বিভাগ |
শহর | |
সদরদপ্তর | ফেনী |
প্রতিষ্ঠাকাল | ৭ নভেম্বর ১৯৮৩ (প্রস্তাবনা) ৬ ডিসেম্বর ১৯৮৪ (৬৪তম জেলা হিসেবে কার্যকর হয়) |
সরকার | |
• জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান | খায়রুল বশর মজুমদার (তপন) (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) |
আয়তন | |
• মোট | ৯২৮.৩৪ বর্গকিমি (৩৫৮.৪৩ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ১৪,৯৬,১৩৮ |
• জনঘনত্ব | ১,৬০০/বর্গকিমি (৪,২০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৬৯% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৩৯০০ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ২০ ৩০ |
ওয়েবসাইট | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট ![]() |
আয়তন সম্পাদনা
ফেনী জেলার মোট আয়তন ৯২৮.৩৪ বর্গ কিলোমিটার।[২]
প্রশাসনিক অঞ্চল ও জনসংখ্যা সম্পাদনা
ফেনী জেলায় ৬টি উপজেলা, ৬টি থানা, ৫টি পৌরসভা, ৪৩টি ইউনিয়ন, ৫৬৪টি গ্রাম ও ৫৪০টি মৌজা রয়েছে।
উপজেলার নাম | এলাকা (বর্গ কিমি) | সদর দপ্তর | ইউনিয়ন | জনসংখ্যা |
---|---|---|---|---|
ফেনী সদর উপজেলা | ১৯৭.৩৩ | ফেনী | ১২ | ৪০৪,৪৯৮ |
দাগনভূঞা উপজেলা | ১৬৫.৮৪ | দাগনভূঞা | ৮ | ২২৫,৪৬৪ |
ছাগলনাইয়া উপজেলা | ১৩৩.৪৯ | ছাগলনাইয়া | ৬ | ১৭০,৫২৪ |
সোনাগাজী উপজেলা | ২০৫.০৭ | সোনাগাজী | ৯ | ২৩৫,২২৯ |
পরশুরাম উপজেলা | ৯৭.৫৭ | পরশুরাম | ৩ | ৯৪,৩৭৮ |
ফুলগাজী উপজেলা | ৯৯.০৩ | ফুলগাজী | ৬ | ১১০,২৯১ |
অবস্থান ও সীমানা সম্পাদনা
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশে ২২°৪৪´ থেকে ২৩°১৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°১৫´ থেকে ৯১°৩৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে ফেনী জেলার অবস্থান।[২] রাজধানী ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব প্রায় ১৫১ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদর থেকে প্রায় ৯৭ কিলোমিটার। এ জেলার উত্তরে কুমিল্লা জেলা ও ভারতের ত্রিপুরা, দক্ষিণে নোয়াখালী জেলা ও চট্টগ্রাম জেলা, পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা, পশ্চিমে নোয়াখালী জেলা।
ইতিহাস সম্পাদনা
প্রতিষ্ঠাকাল সম্পাদনা
১৯৮৪ সালে প্রশাসনিক পুনর্গঠনের মাধ্যমে যে সকল মহকুমাকে মানোন্নীত করে জেলায় রূপান্তর করা হয়েছিল ফেনী জেলা তার একটি। ১৯৮৪ সালের পূর্বে এটি নোয়াখালী জেলার একটি মহকুমা ছিল। এ মহকুমার গোড়াপত্তন হয় ১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দে মীরসরাই, ছাগলনাইয়া ও আমীরগাঁও এর সমন্বয়ে। প্রথম মহকুমা প্রশাসক ছিলেন কবি নবীনচন্দ্র সেন। ১৮৭৬ সালে মীরসরাইকে কর্তন করে চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রথম মহকুমা সদর দপ্তর ছিল আমীরগাঁওয়ে। ১৮৭২ থেকে ১৮৭৪ সালের মধ্যে মোগল আমলের আমীরগাঁও থানা নদী ভাঙ্গনের ফলে ফেনী নদীর ঘাটের কাছাকাছি খাইয়ারাতে স্থানান্তরিত হয়। পরবর্তীতে এটি ফেনী থানা নামে পরিচিত হয়। অতঃপর ১৮৭৬ সালে নতুন মহকুমায় পতিত হলে খাইয়ারা থেকে থানা দপ্তরটি মহকুমা সদরে স্থানান্তরিত হয় ও নতুন মহকুমাটি ফেনী নামে পরিচিত হয়।[৩] পরবর্তীতে ১৮৮১ সালে তা ফেনী শহরে স্থানান্তরিত হয়।[৪]
নামকরণ সম্পাদনা
ফেনী নদীর নামানুসারে এ অঞ্চলের নাম রাখা হয়েছে ফেনী। মধ্যযুগে কবি-সাহিত্যিকদের লেখায় একটি বিশেষ নদীর স্রোতধারা ও ফেরী পারাপারের ঘাট হিসেবে ফনী শব্দের ব্যবহার পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ষোড়শ শতাব্দীর সময়ে কবি কবীন্দ্র পরমেশ্বর পরাগলপুরের বর্ণনায় উল্লেখ করেন, ফনী নদীতে বেষ্টিত চারিধার, পূর্বে মহাগিরি পার নাই তার। এরপর সতের শতকে মির্জা নাথানের ফার্সী ভাষায় রচিত বাহরিস্তান-ই-গায়েবীতে ফনী শব্দটি পরিবর্তিত হয়ে ফেনী-তে পরিণত হয়।[৫]
আঠারো শতকের শেষার্ধে কবি আলী রজা প্রকাশ কানু ফকির তার পীরের বসতি হাজীগাঁও এর অবস্থান সম্পর্কে লিখছেন, ফেনীর দক্ষিণে এক ষর উপাম, হাজীগাঁও করিছিল সেই দেশের নাম। কবি মুহম্মদ মুকিম তার পৈতৃক বসতির বর্ণনাকালে বলেছেন, ফেনীর পশ্চিমভাগে জুগিদিয়া দেশে। তারাও নদী অর্থে ফেনী ব্যবহার করেছেন। ধারণা করা হয় আদি শব্দ ফনী মুসলমান কবি ও সাহিত্যিকদের ভাষায় ফেনীতে পরিণত হয়েছে।[৪]
সাধারণ ইতিহাস সম্পাদনা
দূর অতীতে এ অঞ্চল ছিল সাগরের অংশ, তবে উত্তর পূর্ব দিক ছিল পাহাড়িয়া অঞ্চলের পাদদেশ। ফেনীর পূর্ব দিকের রঘুনন্দন পাহাড় থেকে কাজিরবাগের পোড়ামাটি অঞ্চলে হয়ত আদিকালে শিকারী মানুষের প্রথম পদচিহ্ন পড়েছিল। এখানকার ছাগলনাইয়া গ্রামে ১৯৬৩ সালে একটা পুকুর খননকালে নব্য প্রস্তর যুগের মানুষের ব্যবহৃত একটা হাতিয়ার বা হাতকুড়াল পাওয়া গেছে। পণ্ডিতদের মতে ঐ হাতকুড়াল প্রায় পাঁচ হাজার বছরের পুরাতন।[৩]
বৃহত্তর নোয়াখালীর মধ্যে পূর্ব দিকের ফেনী অঞ্চলকে ভূ-খণ্ড হিসেবে অধিকতর প্রাচীন বলে পণ্ডিতগণ মত প্রকাশ করেছেন। ফেনীর পূর্বভাগের ছাগলনাইয়া উপজেলার শিলুয়া গ্রামে রয়েছে এক প্রাচীন ঐতিহাসিক শিলামূর্তির ধ্বংসাবশেষ। প্রকাশ শিলামূর্তির অবস্থানের কারণে স্থানটি শিলুয়া বা শিল্লা নামে পরিচিত হয়েছে। প্রাচীন কালে হয়ত এখানে বৌদ্ধ ধর্ম ও কৃষ্টির বিকাশ ঘটেছিল।[৬]
ড. আহমদ শরীফ চট্টগ্রামের ইতিকথায় বলেছেন, প্রাচীনকালে আধুনিক ফেনী অঞ্চল ছাড়া নোয়াখালীর বেশির ভাগ ছিল নিম্ন জলাভূমি। তখন ভুলুয়া (নোয়াখালীর আদি নাম) ও জুগিদিয়া (ফেনী নদীর সাগর সঙ্গমে অবস্থিত) ছিল দ্বীপের মতো।[৭] ছাগলনাইয়া নামকরণ সম্পর্কে কেউ কেউ বলেন যে, ইংরেজ আমলের শুরুতে সাগর (Shagor) শব্দটি ভুল ক্রমে ছাগল (Chagol) নামে লিপিবদ্ধ হয়েছিল। তাই ছাগল নাইয়া শব্দটি প্রচলিত হয়ে ওঠে। উল্লেখ্য ইংরেজ আমলের পূর্বে কোন পুঁথি পত্রে ছাগল নাইয়া নামের কোন স্থানের নাম পাওয়া যায় না।[৬]
ফেনী নদীর তীরে রঘুনন্দন পাহাড়ের পাদদেশে অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে বীর বাঙ্গালী শমসের গাজীর রাজধানী ছিল। তিনি এখান থেকে যুদ্ধাভিযানে গিয়ে রৌশনাবাদ ও ত্রিপুরা রাজ্য জয় করেন। তিনি চম্পক নগরের একাংশের নামকরণ করেছিলেন জগন্নাথ সোনাপুর।[৬]
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি সম্পাদনা
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সাথে তিন দিক থেকে ফেনীর রয়েছে সীমান্ত।
১মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণার সাথে সাথে সারা দেশের মতো ফেনীও ফুঁসে ওঠে । বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের পরপরই ফেনীতে শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণের কাজ। জননেতা খাজা আহমদ ও জননেতা মালেক সাহেবের নেতৃত্বে গঠিত হয় ২টি সংগ্রাম কমিটি। একটি আওয়ামী লীগ সংগ্রাম কমিটি ও অপরটি যুব ও ছাত্র সংগ্রাম কমিটি। ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে একটি সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয় যা পরবর্তীতে সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির অন্তর্ভুক্ত হয়ে একত্রে কাজ করে। এরই ধারাবাহিকতায় জননেতা খাজা আহমদের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ সকাল থেকে ফেনীর পূর্বউকিল পাড়াসহ হাজী মনির উদ্দিন সওদাগর বাড়ির রফিকুল হকের বাসায় কর্মনির্ধারণী বৈঠকে ১১ জন সংগঠক পবিত্র কুরআন ছুঁয়ে স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রয়োজনে আত্মোৎসর্গের শপথ নেন । মূলত ঐদিন থেকেই শুরু হয় ফেনীর মুক্তিযুদ্ধের পথচলা। যুব ও ছাত্র সংগ্রাম কমিটিতে ছিলেন জয়নাল হাজারী, জয়নাল আবেদীন(ভিপি জয়নাল), কমান্ডার মুর্তজা ভূঁইয়া, আব্দুল মোতালেব (কমান্ডার), জহির উদ্দিন বাবর, হাফেজ আহমদ, নূর মোহম্মদ হাজারী, জাফর উল্ল্যাহ খান, খোন্দকার মোজাম্মেল, মোহাম্মদ মুছা, কাজী নূরুন নবী সহ আরো কয়েক জন।
২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী ঘুমন্ত বাঙ্গালীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লে ২৬ মার্চ বিকেলে জননেতা খাজা আহমদ ও জননেতা মালেক সাহেবের নেতৃত্বে বৈঠকে বসেন সংগঠকবৃন্দসহ অপরাপর নেতৃবৃন্দ। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফেনী পিটিআই'র মাঠে শুরু হয় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। ৩০ মার্চ সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ, সামরিক, আধা-সামরিকবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সৈনিক এবং যুব ও ছাত্রদের নিয়ে মিশ্রবাহিনী গঠিত হয়। তৎপূর্ব হতেই ৩০০ জনের একটি বাহিনী নিয়ে পিটিআই মাঠে শুরু হয় সামরিক প্রশিক্ষণ। প্রথম থেকে প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন সুবেদার মেজর(অবঃ) আবু আহম্মদ (খাজুরিয়া ইব্রাহিম মৌলবী বাড়ি), ফ্লাইট সার্জেণ্ট (অবঃ) নূরুল ইসলাম(কালিদহ), সার্জেণ্ট সামছুল হক(ফরহাদ নগর), সুবেদার সিদ্দিকুর রহমান, ব্যাটেলিয়ান সামছু(উকিল পাড়া), ক্যাপ্টেন আবদুররৌফ(সোনাপুর) সহ আরো কয়েকজন ।
২৩ এপ্রিল সংগঠকগনসহ হাজার হাজার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন জনতা সীমান্ত অতিক্রম করে বিলোনিয়া সহ ভারতের বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং ফেনীসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। এইসময় বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স - বি এল এফ (বিলোনিয়া ) প্রধান হিসাবে দায়িত্ব নেন জননেতা আব্দুল মালেক ।
ফেনী সীমান্তে মুক্তিযুদ্ধের বেশ কয়েকটি যুদ্ধ হয়। এর মধ্যে শুভপুর ও বিলোনিয়া যুদ্ধ অন্যতম। তৎকালীন আওয়ামী লীগের নেতা ফেনী মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আব্দুল মালেক (যুদ্ধকালীন সময়ে বি এল এফ এর প্রেসিডেন্ট) ও খাজা আহমদের নেতৃত্বে ফেনীর মুক্তিযোদ্ধারা দেরাদুন ও চোত্তাখোলায় প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন সাব-সেক্টর কমান্ডার জাফর ইমামের নেতৃত্বে বিলোনিয়া যুদ্ধ একটি অনন্য রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে।
৬ ডিসেম্বর ফেনী জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে ফেনীকে মুক্ত করেন। প্রতি বছর ৬ ডিসেম্বর দিনটিকে ফেনী জেলাবাসী ফেনী মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করে।[৮] মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য ফেনীর ৩১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় খেতাব দেওয়া হয়। খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ৪ জন বীর উত্তম, ৭ জন বীর বিক্রম এবং ২০ জন বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হন।[৯]
শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পাদনা
ফেনী জেলার সাক্ষরতার হার ৫৯.৬০%। এ জেলায় রয়েছে:[১০]
- বিশ্ববিদ্যালয় : ১টি
- ডিগ্রী কলেজ : ১১টি
- উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ : ১০টি
- ক্যাডেট কলেজ : ১টি (বালিকা)
- কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : ৭টি
- কম্পিউটার ইনস্টিটিউট : ১টি
- মাদ্রাসা : ৯৭টি
- মাধ্যমিক বিদ্যালয় : ১৫৫টি
- শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র : ১টি
- নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় : ১৯টি
- পিটিআই : ১টি
- প্রাথমিক বিদ্যালয় : ৫২৮টি
অর্থনীতি সম্পাদনা
ফেনী জেলার অর্থনীতি
জেলার মানুষের প্রধান পেশা কৃষি ও প্রবাসী। এ জেলার অর্থনীতি- কৃষি ২১%, অকৃষি শ্রমিক ২.৫৭%, শিল্প ৩৫%, ব্যবসা-বাণিজ্য ১৫.৯৮%, পরিবহন ও যোগাযোগ ৪.৬৬%, নির্মাণ ১.৮%, ধর্মীয় সেবা ০.৪৩%, ভাড়া এবং রেমিট্যান্স ১১.৪৩% এবং অন্যান্য ১২.১৯%। এই জেলায় দুটি শিল্প এলাকা রয়েছে। মোট বৃহৎ শিল্পের সংখ্যা ৪টি তার মধ্যে একটি স্টার লাইন গ্রুপ, মাঝারি শিল্প ১৪টি, ক্ষুদ্র শিল্প ৮২৬টি এবং কুটির শিল্প ৩৪১৯টি। ফেনী সদর এলাকার ধালিয়া ইউনিয়নে একটি গ্যাসক্ষেত্র আছে। কৃষি জমির পরিমাণ ৭৫,৯২২ হেক্টর এবং আবাদি জমির পরিমাণ ৭৪,৭২০ হেক্টর।[১১][১২]
যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পাদনা
ফেনী জেলায় যোগাযোগের প্রধান সড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও ফেনী-নোয়াখালী মহাসড়ক। সব ধরনের যানবাহনে যোগাযোগ করা যায়। এছাড়া এ জেলায় রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাও রয়েছে।
স্বাস্থ্য সম্পাদনা
ফেনী জেলায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ১টি আধুনিক হাসপাতাল, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট ২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্স, ৩১ শয্যা বিশিষ্ট ৩টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্স,১০ শয্যা বিশিষ্ট ১টি হাসপাতাল(মঙ্গলকান্দি), ১টি হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল, ১টি ডায়াবেটিক হাসপাতাল, ১টি বক্ষ ব্যাধি ক্লিনিক, ১টি ট্রমা সেন্টার, ১টি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, ১টি নার্সিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ১৯টি ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ৩৩টি ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং ১১৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে।[১০]
নদ-নদী সম্পাদনা
ফেনী জেলার প্রধান প্রধান নদীগুলো হল ফেনী নদী, মুহুরী নদী, ছোট ফেনী নদী, কহুয়া নদী, সিলোনিয়া নদী এবং কালিদাস পাহালিয়া নদী।[১০]
দর্শনীয় স্থান সম্পাদনা
- ফেনী নদী
- ফেনী বিমানবন্দর
- মুহুরী প্রজেক্ট
- শমসের গাজীর কেল্লা
- বিজয় সিংহ দীঘি
- রাজাঝির দীঘি
- চাঁদগাজী ভূঁইয়া মসজিদ
- শর্শাদী শাহী মসজিদ
- মোহাম্মদ আলী চৌধুরী মসজিদ
- প্রতাপপুর জমিদার বাড়ি
- বাঁশপাড়া জমিদার বাড়ি
- কালীদহ বরদা বাবু জমিদার বাড়ি
- সেনেরখিল জমিদার বাড়ি
- শিলুয়া মন্দির
- সাত মঠ
- ভারত-বাংলাদেশ প্রীতি রাধানগর-কৃষ্ণনগর সীমান্ত হাট
- কৈয়ারা দীঘি
- জগন্নাথ মন্দির ও জয় কালী মন্দির[১৩]
- ভাষা শহীদ সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব সম্পাদনা
- খালেদা জিয়া – রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বাংলাদেশের সাবেক এবং প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী।
- শমসের গাজী – জমিদার, ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী।
- আবদুস সালাম – ভাষা শহীদ।
- জহির রায়হান – ভাষা সৈনিক, চলচ্চিত্র পরিচালক, ঔপন্যাসিক এবং গল্পকার।
- আওরঙ্গজেব চৌধুরী – বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রাক্তন প্রধান।
- আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রাক্তন উপাচার্য।
- আবদুল আউয়াল মিন্টু – এফবিসিসিআই সাবেক প্রেসিডেন্ট, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, বাংলাদেশী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।।
- ওবায়েদ উল হক - কবি, ঔপন্যাসিক, চলচ্চিত্র পরিচালক, গীতিকার
- আবদুস সালাম – বাংলাদেশ প্রেস ইন্সটিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম মহাপরিচালক।
- আবুল কালাম আজাদ চৌধুরী – বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)’র প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রাক্তন উপাচার্য।
- আমিন আহমদ – প্রাক্তন বিচারপতি।
- এ এফ রহমান - ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য।
- আমীন আহম্মেদ চৌধুরী – বীর বিক্রম খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা।
- আহমেদ ফজলুর রহমান – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বাঙালি উপাচার্য।
- ইকবাল সোবহান চৌধুরী – সাংবাদিক নেতা এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা।
- ইনামুল হক – অভিনেতা, লেখক এবং নাট্যকার।
- এ বি এম মূসা – সাংবাদিক এবং বাংলাদেশী প্রাক্তন সংসদ সদস্য।
- ওয়াসফিয়া নাজরীন – পর্বতারোহী, এভারেস্ট বিজয়ী দ্বিতীয় বাঙালি নারী।
- কাইয়ুম চৌধুরী – চিত্রশিল্পী।
- কাজী এবাদুল হক – ভাষা সৈনিক এবং প্রাক্তন বিচারপতি।
- খান বাহাদুর আবদুল আজিজ – শিক্ষাবিদ, লেখক এবং সমাজকর্মী।
- গাজীউল হক – সাহিত্যিক, গীতিকার এবং ভাষাসৈনিক।
- গিয়াস উদ্দিন সেলিম – নাট্যকার, নাট্যনির্মাতা এবং চলচ্চিত্রকার।
- গিয়াস কামাল চৌধুরী – সাংবাদিক, কলামিস্ট এবং সংবাদ বিশ্লেষক।
- জহুর হোসেন চৌধুরী – সাংবাদিক।
- খাজা আহমেদ – মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক,বাংলাদেশী প্রাক্তন সংসদ সদস্য এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
- মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন - ব্যবসায়ী,শিল্পপতি,প্রাক্তন সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।।
- মাহবুবুল আলম তারা - প্রাক্তন সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
- জয়নাল হাজারী – বীর মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশী প্রাক্তন সংসদ সদস্য এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
- জয়নাল আবেদিন – বীর মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশী প্রাক্তন সংসদ সদস্য এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
- জাফর ইমাম – বীর মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশী প্রাক্তন মন্ত্রী,প্রাক্তন সংসদ সদস্য এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
- সাঈদ এস্কান্দার – প্রাক্তন সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
- রেহানা আক্তার রানু প্রাক্তন সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
- শিরীন আখতার – সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
- নিজাম উদ্দিন হাজারী – সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
- মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী – প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তা, সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
- রহিম উল্লাহ – প্রাক্তন সংসদ সদস্য।
- জাহান আরা বেগম সুরমা – রাজনীতিবিদ।
- নজির আহমেদ – ছাত্রনেতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার তিনি প্রথম শিকার।
- পান্না কায়সার – রাজনীতিবিদ।
- ফয়জুল মহিউদ্দিন – শহীদ বুদ্ধিজীবী।
- শহীদুল্লা কায়সার – লেখক এবং বুদ্ধিজীবী।
- বেলাল চৌধুরী – সাংবাদিক এবং প্রাবন্ধিক।
- মকবুল আহমদ – বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সাবেক আমির। বাংলাদেশী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
- মিজানুর রহমান সাঈদ – ইসলামি পণ্ডিত ও মুফতি
- মহম্মদ আবুল কাসেম – বাংলাদেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতি।
- মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন – ক্রিকেটার।
- আবদুস সালাম (বীর বিক্রম) -বীর মুক্তিযোদ্ধা।
- রবিউল হক – বীর বিক্রম খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা।
- রোকেয়া প্রাচী – অভিনেত্রী এবং নাট্যকার।
- শমী কায়সার – অভিনেত্রী এবং প্রযোজক।
- শরিফা খাতুন – শিক্ষাবিদ এবং ভাষা সৈনিক।
- শামসুন নাহার মাহমুদ – নারী মুক্তি আন্দোলনের নেত্রী।
- শাহরিয়ার কবির – লেখক এবং সাংবাদিক।
- শেখ পাশা হাবিব উদ্দিন – সেনা কর্মকর্তা।
- সালাহউদ্দিন মমতাজ – বীর মুক্তিযোদ্ধা।
- সিরাজুল হক খান – শহীদ বুদ্ধিজীবী।
- সুমাইয়া কাজী – নারী উদ্যোক্তা।
- সুলতান মাহমুদ – বীর উত্তম খেতাব প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা।
- আনিসুর রহমান আনিস - চলচ্চিত্র অভিনেতা।
- সেলিনা পারভীন – শহীদ বুদ্ধিজীবী।
- সেলিম আল দীন – নাট্যকার এবং গবেষক।
- হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী – রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক এবং ফুটবলার।
একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্যগণ সম্পাদনা
আসন | এমপির নাম | রাজনৈতিক দল |
---|---|---|
ফেনী-১ | শিরিন আক্তার | জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল |
ফেনী-২ | নিজাম উদ্দিন হাজারী | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
ফেনী-৩ | মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী | জা. পা. |
সংবাদপত্র সম্পাদনা
- সাপ্তাহিক ফেনীর তালাশ
- দৈনিক অজেয় বাংলা
- সাপ্তাহিক নবকিরন
- পাক্ষিক পরশুরাম
- সাপ্তাহিক স্বদেশ বার্তা
- সাপ্তাহিক ফেনীর আলো
- সাপ্তাহিক ফেনী বার্তা
- সাপ্তাহিক নবীন বাংলা
- দৈনিক আমাদের ফেনী
- ফেনী প্রতিদিন
- দৈনিক স্টার লাইন
- দৈনিক ফেনীর সময়
- দৈনিক নয়া পয়গাম
আরো দেখুন সম্পাদনা
তথ্যসূত্র সম্পাদনা
- ↑ Sultan, Tipu (২০১২)। "Feni District"। Islam, Sirajul; Jamal, Ahmed A.। Banglapedia: National Encyclopedia of Bangladesh (Second সংস্করণ)। Asiatic Society of Bangladesh।
- ↑ ক খ http://bn.banglapedia.org/index.php?title=%E0%A6%AB%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A7%80_%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE
- ↑ ক খ জমির আহমেদ। ফেনীর ইতিহাস। চট্টগ্রাম: সমতট প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ১২।
- ↑ ক খ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
- ↑ জমির আহমেদ। ফেনীর ইতিহাস। চট্টগ্রাম: সমতট প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ১১।
- ↑ ক খ গ জমির আহমেদ। ফেনীর ইতিহাস। চট্টগ্রাম: সমতট প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ১৩।
- ↑ ফেনীর ইতিহাস-জমির আহমেদ(সমতট প্রকাশনী, ৩২, কাতাল গঞ্জ ,চট্টগ্রাম) পৃষ্ঠা-১৩, লাইন-১৬
- ↑ "ফেনী মুক্ত দিবস আজ"। দৈনিক প্রথম আলো। ৬ ডিসেম্বর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১৬, ২০১৫।
- ↑ "ফেনীর খেতাবপ্রাপ্ত ৩১ বীর মুক্তিযোদ্ধা"। দৈনিক ইত্তেফাক। ২৪ অক্টোবর ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১৬, ২০১৫।
- ↑ ক খ গ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;feni.gov.bd
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ এক নজরে ফেনী ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে, জাতীয় তথ্য বাতায়ন
- ↑ ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর, সম্পাদকগণ (২০১২)। "ফেনী জেলা"। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ "দর্শনীয় স্থান"। zpfeni.gov.bd। ২৪ মার্চ ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ৮, ২০১৫।