মুহুরী প্রজেক্ট

বাংলাদেশের সেচ প্রকল্প

মুহুরী প্রকল্প বা মুহুরী প্রজেক্ট বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প। এছাড়াও দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি এখানে অবস্থিত। দেশের সবচেয়ে বড় মৎস্য জোন হিসেবেও মুহুরী প্রকল্প পরিচিতি পেয়েছে। ফলে এটি বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান ও পর্যটন কেন্দ্ৰ হিসেবে গড়ে উঠেছে।

অবস্থান সম্পাদনা

মুহুরী প্রকল্প বা মুহুরী সেচ প্রকল্প বাংলাদেশের ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলায় অবস্থিত। ফেনী সদর হতে সোনাগাজী উপজেলা পর্যন্ত দূরত্ব ২০ কি.মি. এবং সোনাগাজী উপজেলা হতে এর দূরত্ব ১০কি.মি.। অর্থাৎ ফেনী সদর হতে মুহুরী প্রকল্পের দূরত্ব সর্বমোট ৩০কি.মি.। এর কিছু অংশ চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার মধ্যেও পড়েছে।

সেচ প্রকল্প সম্পাদনা

১৯৭৭-৭৮ অর্থ বছরে মুহুরী সেচ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় এবং ১৯৮৫-৮৬ অর্থ বছরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম[১] এই সেচ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ফেনী নদী, মুহুরী নদী এবং কালিদাস পাহালিয়া নদীর সম্মিলিত প্রবাহকে আড়ি বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ৪০ ফোক্ট বিশিষ্ট একটি বৃহদাকার পানি নিয়ন্ত্রণ কাঠামো তৈরী করে ফেনী জেলার ফেনী সদর, ছাগলনাইয়া, পরশুরাম, ফুলগাজী, সোনাগাজী এবং চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার কিয়দংশ এলাকায় বর্ষা মৌসুমে বন্যার প্রকোপ কমানো ও আমন ফসলে অতিরিক্ত সেচ সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছিল মুহুরী সেচ প্রকল্প।সিডা, ইইসি , বিশ্বব্যাংক অর্থ সহায়তায় জাপানের সিমুজু কোম্পানী ১৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেচ প্রকল্প নির্মাণ করে। এর ফলে ২০,১৯৪ হেক্টর এলাকায় সেচ সুবিধা এবং ২৭,১২৫ হেক্টর এলাকা সম্পুরক সেচ সুবিধার আওতায় আসে। [২]

বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প সম্পাদনা

 
নদীতীরে বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প, সোনাগাজী, ফেনী

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নযন বোর্ড (পিডিবি) ২০০৪-০৫ অর্থ বছরে প্রায় সাত কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি ২২৫ কিলোওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন দেশের প্রথম বায়ু শক্তি চালিত বিদ্যুৎ ইউনিট স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। প্রকল্পের স্থান নির্বাচন করা হয় সোনাগাজী উপজেলার ফেনী নদীর ওপর নির্মিত ফেনী রেগুলেটরের (মুহুরী সেচ প্রকল্প হিসেবে পরিচিত) প্রায় ৫০০ গজ দূরে থাক খোয়াজের লামছি গ্রামে। প্রকল্প এলাকার পাশ দিয়ে ফেনী নদী বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। দক্ষিণে বিস্তীর্ন মাঠ এবং বন বিভাগের সবুজ বেষ্টনী। ২০০৪ সালে ভারতের নেভ্যুলা টেকনো সোল্যুশনস লিমিটেডের সাথে এ প্রকল্প নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের রাজস্ব খাত থেকে এ প্রকল্পের ব্যয় নির্বাহ করা হয়।[৩]

মৎস্য জোন সম্পাদনা

বর্তমানে মৎস্য চাষে বিপ্লব ঘটিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় মৎস্য জোন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে এ মুহুরী প্রকল্প এলাকা। এখানে দেশের অনেক নামিদামি প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে মৎস্য প্রকল্প গড়ে তুলেছে। বসুন্দরা গ্রুপ, মেরিডিয়ান গ্রুপ, ক্লিফটন গ্রুপ, আবুল খায়ের কোম্পানি, মেহের গ্রুপ অব কোম্পানি, মামুন গ্রুপ, সততা ফিস প্রকল্প, হাজী আমিনুল্লাহ মৎস্য প্রকল্প, গাজী মৎস্য ও ডেইরি ফার্ম, রিংকু ফিস প্রকল্পসহ দুই হাজার মৎস্য প্রকল্প রয়েছে।[৪]

পর্যটন কেন্দ্র সম্পাদনা

মুহুরী সেচ প্রকল্পকে ঘিরে গত আড়াই দশকে গড়ে ওঠে বিনোদন ও পিকনিক স্পট।শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে ভ্রমণ পিপাসু লোক এবং পর্যটক বেড়াতে আসে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর মুহুরী রেগুলেটরের চারদিকে বাঁধ দিয়ে ঘেরা কৃত্রিম জলরাশি, বনায়ন, মাছের অভয়ারণ্য, পাখির কলকাকলি, বাঁধের দুপাশে নিচে খেকে পাথর দিয়ে বাঁধানো এবং উপরদিকে দুর্বা ঘাসের পরিপাটি বিছানা। মুহুরী জলরাশিতে নৌভ্রমণের সময় খুব কাছ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস এবং প্রায় ৫০ জাতের হাজার হাজার পাখির দেখা পাওয়া যায়।[২]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "ফেনী নদীতে ২৬টি পাম্প বসিয়ে ৫০ কিউসেক পানি নিচ্ছে ভারত ধুধু বালুচর হয়েছে নদী, মুহুরী সেচ প্রকল্প হুমকির মুখে"। ৩১ জানুয়ারি ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১৪, ২০১৫  line feed character in |শিরোনাম= at position 56 (সাহায্য)
  2. "পর্যটকদের হাতছানি দিচ্ছে মুহুরী প্রকল্প"ফেনীর সময়। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১৪, ২০১৫ 
  3. "সোনাগাজীর মুহুরী প্রকল্পে বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প চালু হতে যাচ্ছে"। ২৮/১১/১৩। ৭ আগস্ট ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১৪, ২০১৫  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  4. "মুহুরী সেচ প্রকল্প এলাকা"দৈনিক সংগ্রাম। ২২ অক্টোবর ২০১১। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১৪, ২০১৫ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা