জয়নাল হাজারী

বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ

জয়নাল হাজারী (জয়নাল আবেদীন হাজারী) (২৪ আগষ্ট ১৯৪৫ – ২৭ ডিসেম্বর ২০২১) ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক ও কলামিস্ট। বাংলাদেশী সংসদ সদস্য এবং ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।[৩] তিনি ফেনীর গডফাদার নামেও পরিচিতি পেয়েছিলেন।[২] তিনি কয়েকটি আলোচিত বইয়ের লেখক।

জয়নাল হাজারী
ফেনী-২ আসনের সাংসদ
কাজের মেয়াদ
১০ জুলাই ১৯৮৬ – ৬ ডিসেম্বর ১৯৮৭
পূর্বসূরীপ্রতিষ্ঠিত
উত্তরসূরীজয়নাল আবেদীন
কাজের মেয়াদ
২০ মার্চ ১৯৯১ – ৩০ মার্চ ১৯৯৬
কাজের মেয়াদ
২৩ জুন ১৯৯৬ – ১৫ জুলাই ২০০১
উত্তরসূরীজয়নাল আবেদীন
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(১৯৪৫-০৮-২৪)২৪ আগস্ট ১৯৪৫
ফেনী, বাংলাদেশ
মৃত্যু২৭ ডিসেম্বর ২০২১(2021-12-27) (বয়স ৭৬)[১]
ল্যাবএইড হাসপাতাল, ঢাকা, বাংলাদেশ
নাগরিকত্ববাংলাদেশ
জাতীয়তাবাংলাদেশী
রাজনৈতিক দলআওয়ামী লীগ
পেশা
  • রাজনীতিবিদ
  • সাংবাদিক
ডাকনামফেনীর গডফাদার[২]

প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

জয়নাল হাজারী ১৯৪৫ সালের ২৪ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম গনি হাজারী। ফেনী সরকারি কলেজের ছাত্র থাকাকালীন, ১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।

রাজনৈতিক জীবন সম্পাদনা

জয়নাল হাজারী ১৯৮৪ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রায় বিশ বছরের বেশি সময় ধরে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।[২] বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-২ (ফেনী সদর) আসন থেকে ১৯৮৬, ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালে তিনবার সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি।[৪] তিনি "ফেনীর গডফাদার" নামে পরিচিত ছিলেন। ক্ষমতায় থাকার সময় তার বিরুদ্ধে নির্যাতন, চাঁদাবাজি ও হত্যার অভিযোগ ছিল।[৫] তার ফুপাতো ভাই ও এক সময়ের সহযোগী নিজাম উদ্দিন হাজারী তার পুরানো নির্বাচনী এলাকা ফেনী-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য।

তিনি ১৯৯৩ সালে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের নিয়ে একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করেন।[৫] ২০০৩ সালের এপ্রিল মাসে, তৎকালীন দলীয় সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিলের উপস্থিতিতে ফেনীর সভায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে এবং একই বছরে সদর উপজেলা নির্বাচনে দলীয় সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। সাংগঠনিক বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে ২ মে ২০০৫ সালে তাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।[৫]

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০১ সালের ১৬ আগস্ট জয়নাল হাজারীর বাড়িতে অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। তিনি তখন পালিয়ে আত্মগোপনে ভারতে চলে যান।[৬] তার অনুপস্থিতিতে পাঁচটি মামলায় তাকে মোট ৬০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই ফেব্রুয়ারিতে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন।[৬] ১৫ এপ্রিল তিনি ফেনী আদালতে আত্মসমর্পণ করেন এবং তাকে কুমিল্লা কারাগারে পাঠানো হয়। একই বছরের ২৬ আগস্ট মোট ২৩টি মামলার মধ্যে ১১টিতে হাইকোর্ট তাকে জামিন দেয় এবং বাকি ১২টি মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়।[৫] এরপর তিনি কারাগার থেকে মুক্ত হন।[৬]

২০১২ সালে হাজারী গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করেন এবং রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার অনুমতি চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠি হস্তান্তর করেন। তার অসুস্থতার জন্যে চিকিৎসা ব্যয় হিসেবে ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ত্রাণ তহবিল থেকে হাজারীকে ৪০ লাখ টাকার অনুদান প্রদান করেন।[৭] ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা পদ পান তিনি।[৬]

বিতর্ক সম্পাদনা

হাজারী ১৯৯৬ সালে নির্বাচিত হবার পর, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ফেনীতে সন্ত্রাসের শিকার হয়ে প্রায় ১২০ জন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর মৃত্যু হয়। এর জন্যে প্রতিবারই হাজারীকে সন্দেহ করা হয়। ২০০১ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ১৬ আগস্ট রাতে হাজারীর বাসভবনে অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। এরপরই তিনি আত্মগোপনে চলে যান। ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে দল থেকে বহিষ্কৃত ঘোষণা করা হয় তাকে। চার বছর পর ২০০৯ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর তিনি ভারত থেকে দেশে ফিরে আসেন এবং আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।[৮]

ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক হত্যাকাণ্ডের পর বিভিন্নভাবে আলোচনায় উঠে আসেন হাজারী। তিনি আওয়ামী লীগের বাইরে ‘স্টিয়ারিং’ কমিটি নামে একটি নিজস্ব বাহিনী গড়ে সন্ত্রাসের রাজত্ব গড়ে তোলেন।[২] ২০১৯ সালে ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন “স্টিয়ারিং কমিটি মানুষের জন্য কাজ করেছে”।[৯]

গ্রন্থতালিকা সম্পাদনা

  • জয়নাল হাজারী বলছি (২০১০)[১০][১১]
  • বিজুর বিচার চাই
  • বাধনের বিচার চাই (২০০০)[১২]
  • বাধন আছে, বিজু কোথায়?

সম্পাদনা ও প্রকাশনা সম্পাদনা

জয়নাল হাজারী সাপ্তাহিক হাজারিকা নামে একটি আঞ্চলিক পত্রিকা সম্পাদনা করতেন, পরবর্তীতে ঢাকা থেকে প্রকাশিত হাজারিকা প্রতিদিন নামে দৈনিক পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন, তিনি এই পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা, প্রকাশক এবং সম্পাদক ছিলেন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "জয়নাল হাজারী আর নেই"যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-২৭ 
  2. সংবাদদাতা, ফেনী জেলা। "বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল আবেদীন হাজারীর চির প্রস্থান"দৈনিক ইনকিলাব। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ডিসেম্বর ২০২১ 
  3. "জয়নাল হাজারী ফেনীর তিনটি আসনেই প্রার্থী!"দৈনিক প্রথম আলো। ৩ ডিসেম্বর ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০১৫ 
  4. "জয়নাল হাজারী তিন আসনে প্রার্থী"দৈনিক প্রথম আলো। ২ ডিসেম্বর ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০১৫ 
  5. "জয়নাল হাজারী: আলোচিত-সমালোচিত এক রাজনীতিক"দৈনিক সমকাল। সংগ্রহের তারিখ ৯ জানুয়ারি ২০২২ 
  6. "জয়নাল হাজারী আর নেই"banglanews24.com। ২৭ ডিসেম্বর ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ৯ জানুয়ারি ২০২২ 
  7. "প্রধানমন্ত্রী ৪০ লাখ টাকার অনুদান দিলেন জয়নাল হাজারীকে"বাংলাদেশ প্রতিদিন। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-০৭ 
  8. আবু তাহের (৫ ডিসেম্বর ২০১৩)। "ফেনীতে দুই হাজারীর লড়াই"দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০১৫ 
  9. "নেত্রী বলেছেন তাই আসলেন জয়নাল হাজারি"DW.COMডয়চে ভেলে। ৩০ অক্টোবর ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ডিসেম্বর ২০২১ 
  10. "হাজারীর বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে যা হলো"দৈনিক প্রথম আলো। সেপ্টেম্বর ২, ২০১০। ২৯ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১৪, ২০১৫ 
  11. "স্বাধীনতা পদক নিতে পারলে হাজারীর বইয়ের মোড়ক উন্মোচন নয় কেন"দৈনিক কালের কণ্ঠ। ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০১৫ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  12. https://hazarikapratidin.com/details.php?id=45101