জাতীয় সংসদ নির্বাচন
জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের আইনসভার সদস্য নির্বাচন করার পদ্ধতি। প্রতি পাঁচ বছর পর পর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালন করে।[১]
জাতীয় সংসদ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইনসভা ও এটি এককক্ষ বিশিষ্ট। এ আইনসভার জন্য জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে ৩০০ জন সংসদ সদস্যকে নির্বাচিত করা হয়। এছাড়াও ৫০ জন মহিলা সংসদ সদস্য সংরক্ষিত আসনের মাধ্যমে সংসদ সদস্যরূপে মনোনীত হন।[২] নির্বাচিত রাজনৈতিক দলের নেতাই হলেন সরকার প্রধান বা প্রধানমন্ত্রী। তবে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে, তখন কোন দলের জোট থেকে কে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পাবেন, তা রাষ্ট্রপতিই নির্ধারণ করবেন।[৩] রাষ্ট্রের প্রধান হলেন একজন রাষ্ট্রপতি যিনি জাতীয় সংসদ কর্তৃক নির্বাচিত হন। বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতির পদ হলো আনুষ্ঠানিকতা, প্রকৃতপক্ষে সকল ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে সরকার প্রধানের হাতে।[৩]
প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
সম্পাদনাপ্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৭৩, বাংলাদেশে ৭ই মার্চ ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় লাভ করে এবং ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৯৩টি আসন লাভ করে ও অন্য কোনো রাজনৈতিক দল ১টির বেশি আসন লাভ করেনি।।[৪] মোট ভোট সংগৃহীত হয়েছিল ৫৪.৯%।
দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন
সম্পাদনাদ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৭৯, বাংলাদেশে ১৮ই ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) জয় লাভ করে; তারা জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২০৭টি আসন লাভ করে। মোট ভোট সংগৃহীত হয়েছিল ৫১.৩%। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ (মালেক) ৩৯, আওয়ামী লীগ (মিজান) ২, জাসদ ৮, মুসলিম লীগ ও ডেমোক্রেটিক লীগ ২০, ন্যাপ (মোজাফফর) ১, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ ২, বাংলাদেশ গণফ্রন্ট ২, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল ১, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন ১, জাতীয় একতা পার্টি ১ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১৬টি আসনে জিতেন।[৪]
তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন
সম্পাদনাতৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৮৬, বাংলাদেশে ৭ই মে ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মোট ১,৫২৭ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করে।[৫] নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসন নিয়ে জয় লাভ করে। মোট ভোটারের ৬১.১% ভোট সংগৃহীত হয়েছিল।[৬] পূর্বের নির্বাচনের বিজয়ী বিএনপি এই নির্বাচনটি বর্জন করেছিল।
চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
সম্পাদনাচতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৮৮ বাংলাদেশে ৩রা মার্চ ১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনটি বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রধান দলই বর্জন করেছিল; যেমন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ, জাতীয় আওয়ামী পার্টি (মোজাফফর) এবং বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি।[৬] নির্বাচনে জাতীয় পার্টি জয় লাভ করে, তারা ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৫১টি আসন লাভ করে। মোট ভোটারদের মধ্যে ৫২.৫% ভোট গৃহীত হয়েছিল।
পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
সম্পাদনাপঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৯১, বাংলাদেশে ২৭শে ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বাংলাদেশে এ নির্বাচনের মাধ্যমেই একটি গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা উপহার পায়।তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এটি ছিল প্রথম নির্বাচন। নির্বাচনে দুটি প্রধান দল, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিল শেখ হাসিনা; বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নেতৃত্বে ছিল খালেদা জিয়া। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০টি আসনের বিপরীতে ৪২৪ জন সতন্ত্র প্রার্থীসহ ৭৫টি দল থেকে মোট ২৭৮৭ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেয়। নির্বাচনে খালেদা জিয়া নেতৃত্বাধীন বিএনপি জয় লাভ করে। তারা ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৪২টি আসন লাভ করে। মোট ভোট গৃহীত হয়েছিল ৫৫.৪%।[৭]
ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
সম্পাদনাষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৯৬, ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়। অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দল নির্বাচনটি বর্জন করেছিল। মোট ভোট গৃহীত হয়েছিল মাত্র ২১%।[৮] বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নির্বাচনে জয় লাভ করে এবং ৩০০টি আসনের মধ্যে ৩০০টি আসনই লাভ করে।[৭] পরবর্তীতে নিরপেক্ষ নির্বাচন জুনে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে ছোট সংসদ ছিল এটি।
সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
সম্পাদনাসপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন জুন, ১৯৯৬, জুন ১২, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়।[৯] নির্বাচনে দুটি প্রধান দল, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিল শেখ হাসিনা; বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নেতৃত্বে ছিল খালেদা জিয়া। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০টি আসনের বিপরীতে ২৮১জন সতন্ত্র প্রার্থীসহ ৮১টি দল থেকে মোট ২৫৭৪ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেয়। ৩০০টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৪৬টি আসনে জয়লাভ করে। উক্ত নির্বাচনে সতন্ত্র প্রার্থীরা ০.৬৭% এবং দলীয় প্রার্থীরা ৭৪.৮২% ভোট লাভ করে।[৮]
অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
সম্পাদনাঅষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০০১, অক্টোবর ১, ২০০১ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে দুটি প্রধান দল, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিল শেখ হাসিনা; বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নেতৃত্বে ছিল খালেদা জিয়া। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০টি আসনের বিপরীতে ৪৮৪জন সতন্ত্র প্রার্থীসহ ৫৪টি দল থেকে মোট ১৯৩৫ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেয়। এটি হলো ১৯৯৬ সালে চালু হওয়া তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দ্বিতীয় নির্বাচন। নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ছিলেন লতিফুর রহমান।এই নির্বাচন এ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল(বিএনপি) জয় লাভ করে
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
সম্পাদনাবাংলাদেশে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২৯শে ডিসেম্বর ২০০৮ সালে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমদ-এর নেতৃত্বাধীন সামরিক সরকারের অধীনে। সামরিক সরকার ২০০৭ সালের শুরুর দিকে জরুরী অবস্থা জারি করে যা ২০০৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর তুলে নেওয়া হয়। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এবং এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয় লাভ করে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
সম্পাদনাদশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০১৪ বাংলাদেশে ৫ই জানুয়ারি ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনটি নবম জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ দলই বর্জন করে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্রসহ ১৭টি দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এছাড়াও নির্বাচনে সাধারণ মানুষের ভোটের মাধ্যমে ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
সম্পাদনাএকাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০১৮ বাংলাদেশে ৩০ শে ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন লাভ করে বিজয় অর্জন করে। [১০]
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
সম্পাদনা৭ জানুয়ারি, ২০২৪, রোববার ভোটগ্রহণের দিন রেখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়।[১১][১২] ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত চলে, তা বাছাই হয় ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। তার তিন সপ্তাহ পর হয় ভোটগ্রহণ। [১২][১৩] [১৪]এটি মূলত একটি একতরফা নির্বাচন হিসাবে দেশে - বিদেশে সমালোচিত, এই নির্বাচনে ব্যাপক ভোট কারচুপি করা হয়, বিকাল ৩ টায় ২৭.১৫% ভোট পড়ে বলে নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয় কিন্তুু তার ১ ঘন্টা পর ভোট শেষ হলে জানানো হয় ৪১% হয়েছে, ১ ঘন্টায় ১৩% ভোট, যা কল্পনার বাহিরে কারচুপির উদাহরন।[১৫] এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২২২, জাতীয় পার্টি ১১, ওয়ার্কার্স পার্টি ১, জাসদ ১, কল্যাণ পার্টি ১ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬২ আসনে বিজয়ী হয়েছেন।[১৬] বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।[১৭]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Bangladesh Election Commission"। www.ecs.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-৩০।
- ↑ নিউজ, সময় (১৯৭০-০১-০১)। "যেভাবে নির্বাচিত হন সংরক্ষিত নারী আসনের এমপিরা"। Somoy News। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-৩০।
- ↑ ক খ প্রতিনিধি, বিশেষ (২০২৩-০২-১৩)। "রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা কতটুকু"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-৩০।
- ↑ ক খ Nohlen, D, Grotz, F & Hartmann, C (2001) Elections in Asia: A data handbook, Volume I, p535 ISBN 019924958
- ↑ Bangladesh Inter-Parliamentary Union
- ↑ ক খ Nohlen, D, Grotz, F & Hartmann, C (2001) Elections in Asia: A data handbook, Volume I, p536 ISBN 019924958
- ↑ ক খ Nohlen, D, Grotz, F & Hartmann, C (2001) Elections in Asia: A data handbook, Volume I, p537 ISBN 019924958
- ↑ ক খ Nohlen, D, Grotz, F & Hartmann, C (2001) Elections in Asia: A data handbook, Volume I, p525 ISBN 019924958
- ↑ "বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন"। ১ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
- ↑ "সংসদ নির্বাচন: ২৩শে ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে ভোট"। বিবিসি বাংলা। ২০১৮-১১-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-০৯।
- ↑ প্রতিবেদক, জ্যেষ্ঠ। "তফসিল ঘোষণা, ভোট ৭ জানুয়ারি"। bdnews24। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১১-১৫।
- ↑ ক খ "নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা : কী প্রতিক্রিয়া বিএনপি ও আওয়ামী লীগের?"। বিবিসি বাংলা। ২০২৩-১১-১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১১-১৫।
- ↑ "দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা, ভোট ৭ জানুয়ারি"। সংগ্রহের তারিখ ১৫ নভেম্বর ২০২৩।
- ↑ দিগন্ত, Daily Nayadiganta-নয়া। "কার অধীনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন?"। Daily Nayadiganta (নয়া দিগন্ত) : Most Popular Bangla Newspaper। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১১-২১।
- ↑ ঢাকা, নিজস্ব প্রতিবেদক। "ভোটের দিন ফেসবুক বন্ধ রাখার আলোচনা"। www.prothomalo.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১১-২১।
- ↑ প্রতিবেদক, জ্যেষ্ঠ। "দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন: ২৯৮ আসনে বিজয়ীদের গেজেট প্রকাশ"। bdnews24। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-১০।
- ↑ রিপোর্ট, স্টার অনলাইন (২০২৪-০১-০৯)। "বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু হয়নি: যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য"। The Daily Star Bangla (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-১০।