জাফর ইমাম
এই জীবিত ব্যক্তির জীবনীমূলক নিবন্ধটির তথ্য যাচাইয়ের জন্য অতিরিক্ত সূত্র থেকে উদ্ধৃতিদান করা প্রয়োজন। (নভেম্বর ২০২৪) |
জাফর ইমাম (জন্ম: ১৩ ডিসেম্বর ১৯৪৭) বাংলাদেশের একজন মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিবিদ। তিনি মুক্তিযুদ্ধে দুই নম্বর সেক্টরের রাজনগর সাব-সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও সাবেক মন্ত্রী।[১]
লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) জাফর ইমাম | |
---|---|
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ২৩ ডিসেম্বর ১৯৮৯ – ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ | |
পূর্বসূরী | এ.কে.এম. মাইদুল ইসলাম মুখল |
উত্তরসূরী | কাজী ফজলুর রহমান |
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ২৪ নভেম্বর ১৯৮১ – ২৪ মার্চ ১৯৮২ | |
পূর্বসূরী | ইমরান আলী সরকার |
উত্তরসূরী | আব্দুল মান্নান সিদ্দিকী (খাদ্য মন্ত্রী হিসেবে) |
সংসদ সদস্য | |
কাজের মেয়াদ ১০ জুলাই ১৯৮৬ – ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ | |
পূর্বসূরী | পদ প্রতিষ্ঠিত |
উত্তরসূরী | খালেদা জিয়া |
নির্বাচনী এলাকা | ফেনী-১ |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ফেনী, পূর্ব বাংলা, পাকিস্তান | ১৩ ডিসেম্বর ১৯৪৭
রাজনৈতিক দল | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
পুরস্কার | Bir Bikrom |
সামরিক পরিষেবা | |
আনুগত্য | পাকিস্তান (১৯৭১ সালের আগে) বাংলাদেশ |
শাখা | পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশ সেনাবাহিনী |
কাজের মেয়াদ | ১৯৬৭-১৯৭৬ |
পদ | লেফটেন্যান্ট কর্নেল |
ইউনিট | ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রেজিমেন্ট পূর্ব বাংলা রেজিমেন্ট |
কমান্ড |
|
যুদ্ধ | বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
সম্পাদনাজাফর ইমামের পৈতৃক বাড়ি ফেনী জেলার ফেনী পৌর এলাকায়। তার গ্রামের বাড়ি ফেনী জেলার ফুলগাজী থানার নোয়াপুর গ্রামে। বাবার নাম শেখ ওয়াহিদুল্লাহ চৌধুরী এবং মায়ের নাম আজমেরি বেগম। তার স্ত্রীর নাম নূরমহল বেগম। তাদের কোনো সন্তান নেই। জাফর ইমামের ডাক নাম হুমায়ুন। তিনি ফেনী হাইস্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন।[২]
কর্মজীবন
সম্পাদনাজাফর ইমাম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে ঢাকায় ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি ঢাকা থেকে পালিয়ে যুদ্ধে যোগ দেন। পরে দুই নম্বর সেক্টরের রাজনগর সাব-সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে তাকে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর কে ফোর্সের অধীন পুনর্গঠিত ১০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়কের দায়িত্বও দেওয়া হয়।
মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন জাফর ইমাম। লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে উন্নীত হয়েছিলেন। ১৯৭৬ সালে তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন।[৩]
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
সম্পাদনা১৯৭১ সালের জুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ফেনী জেলার অন্তর্গত বিলোনিয়া এলাকা মুক্ত ছিল। এরপর এই এলাকা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দখল করে। বিভিন্ন স্থানে ছিল তাদের প্রতিরক্ষা অবস্থান। ১৬ মাইল লম্বা এবং ছয় মাইল প্রস্থ সরু এ ভূখণ্ড এলাকাটি অনেকটা উপদ্বীপের মতো। প্রায় গোটা এলাকাই ভারতের মধ্যে প্রবেশ করেছে। এর তিন দিকেই ভারত সীমান্ত। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে নভেম্বর মাসের প্রথমার্ধে মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে বিলোনিয়ায় পাকিস্তানি সেনাদের অবরোধ করেন। সেখানে ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর পক্ষে নেতৃত্ব দেন জাফর ইমাম। অবরোধের কাজটি শুরু হয় রাতে। তখন ছিলো শীতকাল। মুহুরী নদী ও চিলনীয়া নদীর কোথাও বুকপানি, কোথাও কোমরপানি। কোথাও বা পিচ্ছিল রাস্তার বাধা পেরিয়ে এগিয়ে চলেছে মুক্তিযোদ্ধারা। ভোর হওয়ার আগেই মুক্তিযোদ্ধারা সবাই নির্ধারিত স্থানে হাজির হয়। শত্রুদের পরশুরাম ও চিথলিয়া ঘাঁটি পুরোপুরি এ মুক্তিযোদ্ধা দলের অবরোধের মধ্যে আটকা পড়ে। চিথলিয়া ঘাঁটি থেকে যাতে কোনো প্রকার আক্রমণ না আসতে পারে তার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। ৯ নভেম্বর সকাল থেকে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। শত্রুরা সারা দিন মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন পজিশনের ওপর আক্রমণ চালায়। জবাবও দেয়া হয় মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে। পরে শত্রুরা পরশুরাম ঘাঁটি থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ করে। এই আক্রমণ ছিল অতি ভয়ংকর। মুক্তিযোদ্ধারা তার পাল্টা জবাব দিতে থাকল। এ আক্রমণে শত্রুরা এমনভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের জালে আটকা পড়ে যে তাদের বের হওয়ার কোনো পথই আর বাকি থাকলো না। পরদিন সারা দিনই যুদ্ধ চলল। বেলা চারটার দিকে শত্রুরা মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর বিমান হামলা শুরু করে। ভারি কোন অস্ত্র না থাকলেও এলএমজি ব্যবহার করে একটি বিমান আক্রমণ করে মুক্তিযোদ্ধারা। শূন্যে ঘুরপাক খেয়ে ছিটকে পড়ল মাটিতে। কোনো যুদ্ধের ইতিহাসে এলএমজি দিয়ে এর আগে এভাবে বিমান ভূপাতিত করা হয়নি।[৩]
রাজনৈতিক জীবন
সম্পাদনাজাফর ইমাম ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন নোয়াখালী-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[৪]
আবদুস সাত্তারের মন্ত্রিসভায় তিনি ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন।[১]
তিনি ১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে ফেনী-১ আসন থেকে সংসদে নির্বাচিত হন।[৫] তিনি ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে ফেনী-১ থেকে পুনরায় নির্বাচিত হন।[৬]
১৯৮৯ -১৯৯০ সাল পর্যন্ত এরশাদ সরকারের বন ও পরিবেশমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।[১]
১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১২ জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ফেনী-১ থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও হেরে যান।
২০০১ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে তিনি অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-১ থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে হেরে যান।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ খালেদা হাবিব। বাংলাদেশঃ নির্বাচন, জাতীয় সংসদ ও মন্ত্রিসভা ১৯৭০-৯১।
- ↑ জাফর ইমাম (বীর বিক্রম) (২০১৬)। দাম দিয়ে কিনেছি এই বাংলা (হার্ডকভার)। বাংলাদেশ: ঐতিহ্য। পৃষ্ঠা ৩৫০। আইএসবিএন 9789847762647।
- ↑ ক খ একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ১০৬। আইএসবিএন 9789849025375।
- ↑ "২য় জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)। জাতীয় সংসদ। বাংলাদেশ সরকার। ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "৩য় জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)। জাতীয় সংসদ। বাংলাদেশ সরকার। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "৪র্থ জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)। জাতীয় সংসদ। বাংলাদেশ সরকার। ৮ জুলাই ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।