শাহরিয়ার কবির
শাহরিয়ার কবির (জন্ম: ২০ নভেম্বর ১৯৫০) একজন বাংলাদেশী লেখক, সাংবাদিক ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা। তিনি মানবাধিকার, সাম্যবাদ, মৌলবাদ, ইতিহাস এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ৭০টিরও বেশি বই লিখেছেন। ১৯৯৫ সালে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।[১]
শাহরিয়ার কবির | |
---|---|
জন্ম | ফেনী, বাংলাদেশ | ২০ নভেম্বর ১৯৫০
পেশা |
|
পরিচিতির কারণ | লেখক, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি |
দাম্পত্য সঙ্গী | ডানা কবির |
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা
শাহরিয়ার কবির ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২০ নভেম্বর ফেনীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুল পড়াশোনা করেন। তারপর জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্র ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন তিনি শিশু ও কিশোরদের জন্য লেখালেখি শুরু করেন। শাহরিয়ার কবির মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম বিশিষ্ট কর্মী ছিলেন। তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামীর জন্য অনুপ্রেরণামূলক পাণ্ডুলিপি এবং কবিতা লিখতে সহায়তা করেছিলেন, যেগুলি পরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে বাজানো হয়।
কর্মজীবন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা সম্পূর্ণ করে শাহরিয়ার কবির ১৯৭২ সালে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় সাংবাদিক হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৯২ সাল পর্যন্ত নির্বাহী সম্পাদক পদে থাকেন। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ লেখক শিবিরের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
তিনি একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাথে যুক্ত আছেন। ১৯৯২ সালের জানুয়ারি মাসে ১০১ জন ব্যক্তি মিলে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠন করেন। এই কমিটি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে একত্রে মিলে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধকারী ব্যক্তিদের বিচারের আহ্বান জানায়। এই কমিটি ১৯৯২ সালে ২৬ মার্চ গণ-আদালত-এর মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একাত্তরের ঘাতক গোলাম আযমের প্রতীকী বিচারের কাজ শুরু করে। গণআদালাতে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে দশটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপিত হয়। ১২ জন বিচারক সমন্বয়ে গঠিত গণআদালতের চেয়ারম্যান জাহানারা ইমাম গোলাম আযমের ১০টি অপরাধ মৃত্যুদন্ডযোগ্য বলে ঘোষণা করেন। গণআদালত অনুষ্ঠিত হবার পর সরকার ২৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিসহ জাহানারা ইমামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে অ-জামিনযোগ্য মামলা দায়ের করে। জাহানারা ইমামের মৃত্যুর পর, ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান এই অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠনে শাহরিয়ার কবির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৯৯৪ সালে জাহানারা ইমামের মৃত্যুর পর, শাহরিয়ার কবির একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি হন।
শাহরিয়ার কবির সাংবাদিক হিসেবে মানবাধিকার নিয়ে লেখালেখি করেন। সরকার একে অবৈধ আক্রমণ আখ্যায়িত করে ২০০০-এর দশকের শুরুতে তাকে দুবার গ্রেপ্তার করেছিল। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের খালেদা জিয়ার সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০১ সালের নভেম্বর মাসে তাকে প্রথম গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রন্থতালিকা
- পুবের সূর্য (কলকাতা, ১৯৭২)
- নুলিয়াছড়ির সোনার পাহাড় (ঢাকা, ১৯৭৬)
- হারিয়ে যাওয়ার ঠিকানা (ঢাকা, ১৯৭৬)
- কমরেড মাও সেতুঙ (ঢাকা, ১৯৭৭)
- আবুদের অ্যাডভেঞ্চার (ঢাকা, ১৯৮৩)
- একাত্তরের যীশু (ঢাকা, ১৯৮৬)
- ওদের জানিয়ে দাও (ঢাকা, ১৯৮৬)
- জনৈক প্রতারকের কাহিনী
- সীমান্তে সংঘাত
- নিকোলাস রোজারিওর ছেলেরা
- আনোয়ার হোজার স্মৃতি: রাষ্ট্রনায়কদের সঙ্গে
- হানাবাড়ির রহস্য
- মওলানা ভাসানী
- মিছিলের একজন
- পাথারিয়ার খনি রহস্য
- মহা বিপদ সংকেত
- নিশির ডাক
- পাথারিয়ার খনি রহস্য
- বার্চবনে ঝড়
- ক্রান্তিকালের মানুষ
- বিরূদ্ধ স্রোতের যাত্রী
- রাজপ্রাসাদে ষড়যন্ত্র
- রত্নেশ্বরীর কালো ছায়া
- কয়েকটি রাজনৈতিক প্রতিবেদন ও সাক্ষাৎকার
- কার্পথিয়ানের কালো গোলাপ
- বহুরূপী
- অন্যরকম আটদিন
- চীনা ভূতের গল্প
- অনীকের জন্য ভালবাসা
- বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িকতার চালচিত্র
- গণআদালতের পটভূমি
- একাত্তরের পথের ধারে
- লুসাই পাহাড়ের শয়তান
- ব্যভারিয়ার রহস্যময় দুর্গ
- সাধু গ্রেগরীর দিনগুলি
- আলোর পাখিরা
- বাংলাদেশের মৌলবাদ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়
- হাত বাড়ালেই বন্ধু
- জাহানারা ইমামের শেষ দিনগুলি
- ঘাতকের সন্ধানে
- নিশির ডাক
- মরু শয়তান
- অপহরণ
- দক্ষিণ এশিয়ার মৌলবাদ প্রসঙ্গ বাংলাদেশ
- পাকিস্তান থেকে ফিরে
- বাংলাদেশে জঙ্গী মৌলবাদ
- বাংলাদেশের মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা
- বাংলাদেশের আমরা এবং ওরা
- ভয়ঙ্করের মুখোমুখি
- মুক্তিযুদ্ধের বৃত্তবন্দি ইতিহাসে
- মৌলবাদ ও যুদ্ধাপরাধ
- যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং জামায়াতের অপরাজনীতি
- যুদ্ধাপরাধীর বিচার : পক্ষ ও বিপক্ষ
- সেক্টর কমান্ডাররা বলছেন মুক্তিযুদ্ধের স্বরণীয় ঘটনা
- কাশ্মীরের আকাশে মৌলবাদের কালো মেঘ
- অবরুদ্ধ স্বদেশ থেকে প্যারোলে ইউরোপে[২]
- একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায় (১৯৮৭, সম্পাদনা)
পুরস্কার
- বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৫)
- কবীর চৌধুরী শিশু সাহিত্য পুরস্কার (২০১৯)[৩]
সমালোচনা
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাবেক আহ্বায়ক মুশতারী শফী লিখিত ‘জাহানারা ইমামের স্মৃতির উদ্দেশ্যে লেখা চিঠি’ নামক বইয়ে শাহরিয়ার কবিরকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি এবং মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীদের ক্যাম্পে মুরগি সরবরাহকারী বলে উল্লেখ করা হয়। শাহরিয়ার কবির এই লেখাটি সত্য নয় ও নির্জলা মিথ্যা বলে আখ্যায়িত করেন।[৪]
২০২৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হত্যাকাণ্ড ও শাপলা চত্ত্বর গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হন।[৫][৬]
তথ্যসূত্র
- ↑ "পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক তালিকা"। banglaacademy.org.bd। বাংলা একাডেমি। ২৭ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৬ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ এপ্রিল ২০১২।
- ↑ "বাংলা একাডেমি প্রদত্ত অন্যান্য পুরস্কার"। banglaacademy.org.bd।
- ↑ "মুক্তিযুদ্ধকালে আমি পাক আর্মিদের ক্যাম্পে মুরগী সাপ্লাই করতাম, এটা সত্য নয় -শাহরিয়ার কবির"। দৈনিক সংগ্রাম। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১২-১৯।
- ↑ রিপোর্ট, স্টার অনলাইন (২০২৪-০৯-১৭)। "ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির গ্রেপ্তার"। The Daily Star Bangla (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-৩০।
- ↑ "'মুরগি কবির' শাহরিয়ারের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ"। দৈনিক ইনকিলাব। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-৩০।
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |