১৯৬৪-এর পূর্ব পাকিস্তান দাঙ্গা

১৯৬৪ সালের পূর্ব-পাকিস্তানের দাঙ্গা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) বাঙ্গালী হিন্দুদেরকে জাতিগতভাবে নির্মূল করার জন্য তাদের উপর চালানো এক নিষ্ঠুর অমানবিক গণহত্যার নাম। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরে অবস্থিত হজরতবাল নামক তীর্থক্ষেত্রে হজরত মুহাম্মদের(সা) সংরক্ষিত মাথার চুল চুরি করা হয়েছে-এই সংবাদ ছড়ানোর মাধ্যমে পূর্ব-বাংলায় বাঙ্গালীহিন্দু হত্যার সূচনা করা হয়।[][] এই গণহত্যার একটি বিশেষ লক্ষণীয় দিক হল-ঢাকার ও পূর্ব-বাংলার অন্যান্য শহরাঞ্চলের যে সব নির্দিষ্ট এলাকাতে হিন্দু জনগোষ্ঠী বসবাস করে সেখানে হত্যাযজ্ঞ চালানো এবং হিন্দু মালিকানাধীন কলকারখানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা করা।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ফলশ্রুতিতে আরও একবার বাঙ্গালীহিন্দু শরণার্থীদের ঢেউ আছড়ে পড়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপর। এই আশ্রয়প্রার্থী পীড়িত-নির্যাতিত হিন্দু শরণার্থীরা ভারতের জাতীয় সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়। ভারত সরকার পূর্ববাংলার এই নিপীড়িত হিন্দুদেরকে মধ্যপ্রদেশের দণ্ডকারণ্যে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

১৯৬৪ সালের পূর্ব-পাকিস্তানের দাঙ্গা
স্থানপূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ)
তারিখজানুয়ারি, ১৯৬৪
লক্ষ্যবাঙালি হিন্দু
হামলার ধরনহত্যাযজ্ঞ, জোরপূর্বক ধর্মান্তর, লুটপাট, অপহরণ, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ
হামলাকারী দলপুলিশ, আনসার, সেনাবাহিনী, ইস্টপাকিস্তান রাইফেলস,স্থানীয় মুসলিম জনগোষ্ঠী
কারণধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, মুসলিম জনগোষ্ঠী দ্বারা হিন্দু জনগোষ্ঠীর উপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ ধর্মীয় কারণে

পটভূমি

১৯৬৩ সালের ২৭ ডিসেম্বরে ভারতের শ্রীনগরে অবস্থিত হজরতবাল দরগাশরীফে সংরক্ষিত হজরত মুহাম্মদ(সা)-এর সংরক্ষিত মাথার চুল চুরি হয়ে যায়। এজন্য ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরে ব্যাপক বিক্ষোভ সংগঠিত হয়। আব্দুল হাই নামে ইসলামিক বোর্ডের উপদেষ্টা কমিটির একজন সদস্য পূর্ব-পাকিস্তানের সকল হিন্দু এবং অমুসলিমদের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দেয়।[] ইসলামাবাদে ফেরার প্রাক্বালে ঢাকা বিমানবন্দরে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান ঘোষণা করেন যে, হজরতবাল ঘটনার কারণে পাকিস্তানের মুসলিমরা কোন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখালে তার কোন দায় নেই।[] পাকিস্তান কনভেনশন মুসলিম লীগ ১৯৬৪ সালের ৩ জানুয়ারী কে ‘কাশ্মীর দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে।[] ১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারিতে হারিয়ে যাওয়া চুল খুঁজে পাওয়া গেলেও পরেরদিনই পাকিস্তান রেডিও থেকে ওই ঘটনাকে মিথ্যা বলে প্রচার করা হয়।[]

হত্যাযজ্ঞ

খুলনা

পাকিস্তানের তৎকালীন কেন্দ্রীয় যোগাযোগমন্ত্রী আব্দুস সবুর খান ১৯৬০ সালে খুলনা জেলার মাটিখালীর একজন সম্ভ্রান্ত হিন্দু ভূমিধ্যিকারী রূপচাঁদ বিশ্বাসের ৩০ বিঘা জমি জোরপূর্বক দখল করে নেয় এবং সেখানে একটি তিনতলা ভবন নির্মাণ করে।[] রূপচাঁদ বিশ্বাস সাহসের সাথে আব্দুস সবুর খানের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় সবুর খান পরাজিত হয় এবং আদালত তাকে ১,৩৫,০০০ রুপি পরিশোধের নির্দেশ দেয়। কিন্তু সবুর খান বিচারালয়ের বাইরে এই দখলবাজির মীমাংসা করতে চাইলেও রূপচাঁদ তা দৃঢ় ভাবে প্রত্যাখান করেন।[] এর মাঝেই মজিদ মিয়াঁ নামে সবুর খানের মনোনীত প্রার্থী জেলা পরিষদ নির্বাচনে শোচনীয় ভাবে পরাজিত হয়।[] সবুর খান ও চামকুরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সহ তাদের দলের অন্যান্য সদস্যরা এই পরাজয়ের কারণ হিসেবে হিন্দুদেরকে দায়ী করে এবং হিন্দুদের প্রতি হুমকি,ভয়-ভীতি প্রদর্শন করতে শুরু করে। এই নাজুক অবস্থার মধ্যেই হজরতবাল ঘটনার গুজব ছড়ানো হয়। সবুর খান খুলনায় হিন্দু নিকেশের জন্য এই সুযোগটি দ্রুত লুফে নেয়।

 
সবুর খান,খুলনায় বাঙ্গালী হিন্দু নিধনের মূল উস্কানিদাতা

১৯৬৪ সালের ২ জানুয়ারি তারিখে হজরতবাল ঘটনার প্রেক্ষিতে মুসলিমরা হিন্দুদেরকে পায়ে জুতো পরতে, মাথায় ছাতা ব্যবহার করতে কিংবা রিকশায় চড়তে বাধা দেয়। মধ্যাহ্নে মুসলিমরা সমগ্র খুলনাব্যাপী মিছিল বের করে এবং মিছিল থেকে হুঙ্কার আসতে থাকে, ‘হিন্দুদেরকে হত্যা কর’।[] বিকাল চারটার দিকে খুলনায় হিন্দু নিধন শুরু হয়।[] টানা চার ঘণ্টা এই বীভৎস ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির পর রাত আটটায় সান্ধ্য আইন জারি করা হয়।[] এই তীব্র উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মাঝেই পাকিস্তান প্রাদেশিক মুসলিমলীগ ৩ জানুয়ারিকে ‘কাশ্মীর দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। খুলনায় সাধারণ ধর্মঘট আহ্বান করে পরিস্থিতিকে আরও বিভীষিকাময় ও সন্ত্রস্ত করে তোলার প্রয়াস চালানো হয়। খুলনার এক প্রান্তে দৌলতপুর শিল্প এলাকায় এক বিশাল জনসভায় আব্দুস সবুর খান বক্তব্য প্রদান করে। হাজার হাজার উগ্র মুসলিম বিশেষ করে বিহারীরা ভয়ঙ্কর সব মারণাস্ত্র হাতে নিয়ে এই উস্কানিমূলক বক্তব্য শ্রবণ করে। সবুর খান এই সুযোগে হিন্দু বিদ্বেষী এবং ভারত বিরোধী জ্বালাময়ী ভাষণ প্রদান করে।তৎক্ষণাৎ সেই সমাবেশ থেকে প্রায় ২০,০০০ মুসলিম জনতা সেনহাটি (দিঘলিয়া উপজেলা), মহেশ্বরপাশা, পাবলা,চন্দনীমহল, দৌলতপুরসহ আশেপাশের হিন্দুপ্রধান জনবসতি গুলোর উপর তীব্র আক্রোশে আক্রমণ শুরু করে।সেখানকার হিন্দুদের বাড়ি-ঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মস্থান লুট ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে তারা।অনেক হিন্দুকে নির্মম ভাবে হত্যা করে মুসলিমরা।এদের মধ্যে একটি দল সড়ক ও রেলপথ ধ্বংস করতে করতে সন্ধ্যায় খুলনা শহরে উপস্থিত হয়।পরবর্তী চার দিন খুলনার হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর লাগামহীন হত্যা,ধর্ষণ,অপহরণ, লুণ্ঠন, ধ্বংসের এক বন্য বীভৎসতা চলে।খুলনা শিপইয়ার্ড, দাদা কোম্পানি,ইস্পাহানী কোম্পানি,কাটা কোম্পানি,সোলম্যান কোম্পানিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার মুসলিম শ্রমিকরা হিন্দুদের উপর এই জঘন্য,অমানবিক জিঘাংসাবৃত্তি চরিতার্থ করে।লোপপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এদেরকে মারণাস্ত্র সরবারহ করে এই পাশবিক হিন্দু নিধনকে উৎসাহিত করে।খুলনা লঞ্চঘাটে কমপক্ষে ২০০-৩০০ হিন্দুকে নির্মমভাবে হত্যা করে মুসলিম হত্যাকারীরা।[] খুলনা থেকে চালনা পর্যন্ত রাস্তার দু’দিকে থাকা প্রতিটি হিন্দু জনপদ,গ্রাম ধ্বংস করে দেয় মুসলিমরা।[১০] ৪ জানুয়ারি মোংলায় হিন্দু হত্যাযজ্ঞের বিস্তার লাভ করে।[] মোংলা বন্দরে ৩০০ হিন্দুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।[১০]

বাগেরহাটের রামপালে আব্দুস সবুর খান আরও তিনটি জনসভা করে। সেখানে পূর্ব-পাকিস্তানে চলমান প্রলয়ঙ্কারী হিন্দু নিধনের বিশদ বর্ণনা সংবলিত প্রচারপত্র বিলি করতে শুরু করে মুসলিমরা। বাঙ্গালী হিন্দুদেরকে অবিলম্বে পাকিস্তান ত্যাগের জন্য হুমকি প্রদান করে তারা।[১১] লোপপুর বাজারে আব্দুস সবুর খান অন্য একটি জনসভায় সদর্পে ঘোষণা করে, সে হিন্দুদের পৃষ্ঠদেশ থেকে চামড়া তুলে পায়ের জুতো তৈরি করবে। হিন্দুদের উপর মাত্রা ছাড়া গণহত্যার ভিত রচনা করে সবুর খান তার ভ্রাতুষ্পুত্রীর বিয়ের জন্য এক রাজকীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করে। ফলে একদিকে দিন দিন গণহত্যার তীব্রতা বাড়তে থাকে অন্যদিকে বিয়ের অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয় পূর্ব-পাকিস্তানের কুখ্যাত গভর্নর আব্দুল মোনায়েম খান, ভূতপূর্ব পূর্ব-পাকিস্তান আইনপরিষদের সদস্য এবং তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য কাজী আব্দুল কাদের। খুলনার বিখ্যাত আইনজীবী অরবিন্দ ভট্টাচার্য এই নৃশংস হিন্দু হত্যাবন্ধের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তাকে অনুরোধ করেন। কিন্তু সবুর খান তার ভ্রাতুষ্পুত্রীর বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যস্ততা দেখিয়ে কোনরূপ ব্যবস্থা অপারগতা প্রকাশ করে।[১২]

ঢাকা

 
ঢাকার লালবাগে অবস্থিত বিখ্যাত ঢাকেশ্বরী মন্দিরে উন্মত্ত মুসলিম জনতা হামলা করে

জানুয়ারি মাসের ১৩ তারিখে ঢাকা স্টেডিয়ামে হজরতবাল ঘটনার প্রেক্ষিতে মুসলিমরা একটি জনসভা আয়োজন করে।[১৩] জানুয়ারির ১৪ ও ১৫ তারিখে চট্টগ্রামসিরাজগঞ্জ থেকে আগত ঢাকাগামী ট্রেনের হিন্দু যাত্রীদেরকে টঙ্গীতেজগাঁও নেমে যেতে বলে মুসলিম গুণ্ডারা।যে সকল হিন্দু ট্রেন থেকে নামতে অস্বীকৃতি জানায় তাদেরকে সেখানেই গলা কেটে হত্যা করে তারা।[১৪][১৫] জানুয়ারির ১৫ তারিখে একদল হিংস্র মুসলিম জনতা ২০, নবাবপুর রোডের পুরোহিতের বাড়িতে ঢুকে রাধা-কৃষ্ণ মন্দির ধ্বংস করে এবং পুরোহিতের গলা কেটে মুণ্ডচ্ছেদ করে। বাড়ির আরও চারজন পুরুষ সদস্যকেও একইভাবে হত্যা করে উল্লাস করে তারা।[১৬] নবাবপুরের বিখ্যাত দাস স্টুডিও লুটপাট করে তারা এবং আগুনে পুড়িয়ে সম্পূর্ণ ভস্মে পরিণত করে। ১৫ জানুয়ারি রাতে নগরখানপুরের প্রত্যেকটি হিন্দু বাড়িতে একই ভাবে আক্রমণ করে মুসলিমরা এবং লুটপাট-রাহাজানি শেষে ধ্বংস করে দেয় সেগুলো।[১৭] ১৫ জানুয়ারি প্রকাশ্য দিবালোকে টিকাটুলির রামকৃষ্ণ মিশন আক্রমণ করে মুসলিমরা। পূর্ববঙ্গের রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধান কার্যালয় এই মঠের তিনটি ভবন, সাতটি আধাপাকা বাড়ি, একটি মন্দির, একটি দাতব্য চিকিৎসালয়, একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার, একটি সুখ্যাত ছাত্রাবাস সম্পূর্ণ রূপে ধুলিস্যাত হয় সহিংস মুসলিম জনতার হিংস্রতায়।[১৮] সেখানে দু’জনকে হত্যা করে তারা।[১৯]

হজরতবাল ঘটনার গুজব ছড়ানোর পর থেকেই পূর্ব-পাকিস্তান প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দু ছাত্রাবাসের উপর পাথর নিক্ষেপ করে মুসলিমরা তাদের প্রচণ্ড আক্রোশের প্রকাশ করত।[২০] জামাত-ই-ইসলামের অনুগত মুসলিম শিক্ষার্থীরা প্রকাশ্যে হিন্দু শিক্ষার্থীদেরকে ভারতীয় অনুচর আখ্যা দিয়ে সাধারণ মুসলিমদের মাঝে ঘৃণার চাষ শুরু করে। জানুয়ারির ১৬ তারিখে সেন্ট্রাল ব্যাংকে কর্মরত কৃষ্ণ দে, ইউনাইটেড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ব্যাংকে কর্মরত প্রাণ কুমার দে, বরদা ব্যাংকে কর্মরত আরও একজন হিন্দু কর্মকর্তা ব্যাংক চত্বরে দুই দিন লুকিয়ে থাকার পর গাড়িতে করে পালানোর সময় মুসলিমরা তাদের গাড়ি থামিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করে।[১৬] এফ.এম.ই. স্কুল, পাবলিক লাইব্রেরী,বিবেকানন্দ ফিজিক্যাল ক্লাব,হিরালাল লহিয়া চ্যারিটেবল হসপিটাল সহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান মুসলিমরা আগুনে পুড়িয়ে ছাই বানিয়ে দেয়।[২১] সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ট্রাকে ভরে ভরে মৃতদেহগুলো হাসপাতালে নিয়ে আসে তারা এবং সেগুলো সেখান থেকেই সরাসরি নিয়ে মাটি চাপা দেয়া হয়।এভাবে শতশত হিন্দুর মৃতদেহ সেনাবাহিনী গুম করে ফেলে।এমনকি যে সকল মৃতদেহ শনাক্ত করা হয়েছিল সেগুলোকেও তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর না করে গুম করে ফেলে তারা।[২২]

রায়েরবাজারের হিন্দু মৃৎশিল্পীদের উপর হামলে পড়ে হাজারীবাগ চামড়া কারখানার নোয়াখালীর মুসলিম শ্রমিকরা এবং মুহাম্মদপুরের বিহারী মুসলিমরা[২৩] রায়েরবাজারের প্রতিটি বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেয় উন্মত্ত মুসলিমরা।কমপক্ষে ৯৬ জন হিন্দুকে সে সময়ে পাশবিক উপায়ে হত্যা করে তারা।[২৩] অনেক হিন্দু মহিলাকে নিষ্ঠুরভাবে ধর্ষণ করে এবং অসহায় হিন্দু বালিকাদের অপহরণ করে মুসলিমরা।[২৩] সমগ্র জনপদের বাঙ্গালী হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর জাতিগত নির্মূলীকরণ অভিযান চালানোর পরে ঐ এলাকার নাম পরিবর্তন করে জাফরাবাদ রাখা হয়।[২৪] ঈশ্বর দাস লেনের নামকরা হিন্দু ছাত্রাবাস ‘বাণী ভবন’ লুটপাটের পর সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে ফেলা হয়।আবাসিক ছাত্ররা নিকটস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে পালিয়ে জীবন রক্ষা করে।[১৯] মেয়েদের বিখ্যাত একটি শিক্ষাঙ্গন 'নারী শিক্ষা মন্দির' আক্রমণ করে মুসলিমরা।বিদ্যালয়ের প্রধান কেরানী অবনী গুহরায়কে হত্যা করা হয় এবং জ্যেষ্ঠ শিক্ষক যোগজীবন বসুকে কুপিয়ে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়।[১৯] বিভিন্ন এলাকা যেমন টিকাটুলি, ওয়ারীর দেয়াল গুলোতে মুসলিমরা বিভিন্ন হিন্দু বিদ্বেষপূর্ণ স্লোগান যেমন ‘হিন্দুদেরকে হত্যা কর, হিন্দু মারোয়াড়ীদের হত্যা কর’ লিখে রাখত।[২৫] ১৮ জানুয়ারি পূর্ব-পাকিস্তান সরকার রাত ৮ টা পর্যন্ত সান্ধ্য আইন জারি করে। ১৯ জানুয়ারি থেকে সেটি বাড়িয়ে ২৪ ঘণ্টা করা হয়।[২৬]

ঢাকার চারপাশের শতশত হিন্দু বসতির গ্রাম আগুনে জ্বালিয়ে ভস্মে পরিণত করে দেয় মুসলিমরা।[১৬] ১৮ জানুয়ারি দৈনিক ইত্তেফাক প্রতিবেদন করে, পুরনো ঢাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের ৯৫ শতাংশ বাড়ি-ঘর ধ্বংস করে দিয়েছে মুসলিমরা।[২৭] শুধুমাত্র ঢাকা শহরেই ১,০০,০০০ হিন্দু আশ্রয়স্থল হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে ঠাই নিয়েছে।২৩ জানুয়ারি দ্য হিন্দু প্রতিবেদন করে,পাকিস্তানের সরকারী হিসেবেই ঢাকা শহরে ১০০০ এর উপর হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছে গত এক সপ্তাহে।[২৮] যদিও একজন অ্যামেরিকান শান্তিরক্ষী সেনাবাহিনীর নার্স বিবৃতি দেন,শুধুমাত্র ২১ জানুয়ারিতেই তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কমপক্ষে ৬০০ মৃতদেহ দেখতে পান।[২৮]

নারায়ণগঞ্জ

আদমজী গ্রুপের ব্যবস্থাপক জনাব করিম ১৩ এবং ১৪ জানুয়ারি আদমজী পাট কলে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে এবং পরিকল্পিত ভাবে গুজব ছড়িয়ে দেয় যে, কোলকাতায় তার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে।[২১] ১৩ জানুয়ারি রাতে আদমজী পাট কলের মুসলিম শ্রমিকরা আশেপাশের যে কোয়ার্টার গুলোতে হিন্দুরা বসবাস করত সেগুলোতে আক্রমণ করে।বিশেষ করে দুই নং ঢাকেশ্বরী কটন মিলের হিন্দু শ্রমকিদের বাসস্থান গুলো এই ঘৃণ্য আক্রমণের শিকার হয় এবং সে গুলোকে পুড়িয়ে ছাই করে ফেলা হয়।দুই নং ঢাকেশ্বরী কটন মিলে উন্মত্ত মুসলিমদের সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ড সম্পর্কে মিলের ব্যবস্থাপক সত্যেন রায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুনীল বসুকে রাত তিনটার সময় অবগত করেন এবং অনতিবিলম্বে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলেন।[২৯] ভোর পাঁচটার দিকে আদমজী পাট কলের ২০,০০০ অস্ত্রধারী উন্মত্ত মুসলিম শ্রমিক ২নং ঢাকেশ্বরী কটন মিলে হামলে পড়ে এবং সেখানে হিন্দুদের উপর বিরামহীন হত্যা,লুটপাট,অপহরণ,ধর্ষণ চালায়।[৩০] ৭০০এরও বেশি হিন্দু হতভাগ্য আবালাবৃদ্ধবণিতাকে নির্মম ভাবে হত্যা করে।শতশত হিন্দু মহিলাকে নিষ্ঠুর উপায়ে ধর্ষণ করে বিজয়োল্লাস করে।[৩০] সকাল সাতটার দিকে প্রায় ২,০০০-৩,০০০ হিন্দু নর-নারী লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিল চত্বরে এসে জড় হয়। মিলের সকল কার্যক্রম বন্ধ ছিল এবং আশ্রয়প্রার্থীরা মিলের গেটের বাইরে জড় হতে থাকে।সকাল ৯টায় মিলের গেট উন্মুক্ত হলে কমপক্ষে ১০,০০০ হিন্দু মিল চত্বরের মধ্যে আশ্রয় পায়।কিছুক্ষনের মাঝেই মারাত্মক প্রাণঘাতী অস্ত্র হাতে ২,০০০ উন্মত্ত মুসলিম ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরস্ত্র অসহায় হিন্দুদের উপরে।সেখানে ৩ জন ভাগ্যহত হিন্দু নির্মম ভাবে নিহত হয় এবং আর ১২ জনের বেশি আহত হয়।[২৯] মিলের অভ্যন্তরে আশ্রয় নেয়া কেদারনাথ ঘোষ নামে এক ব্যক্তির বাড়িঘর লুটপাট করে মুসলিমরা।[১৭] বিকেল চারটার দিকে মাত্র ২০ জন পুলিশ এসে সেখানে উপস্থিত হয়।আধা ঘণ্টার মধ্যে পুলিশের সামনেই আবার মুসলিমরা হামলে পরে অসহায় হিন্দুদের উপর।সেখানে একজন হিন্দুকে আবারো হত্যা করা হয়।সন্ধ্যার মধ্যেই ২৫,০০০ এরও বেশি হিন্দু লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিল চত্বরে জীবন বাঁচাতে জমায়েত হয়।এ সকল আর্ত হিন্দু ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত টানা চারদিন একবিন্দু জলও কোন জায়গা থেকে সাহায্য পায়নি।ফলে চার দিন তাদেরকে খাদ্য-পানীয় বিহীন অবস্থায় কাটাতে হয়।[২১] নারায়ণগঞ্জের হিন্দুদের উপর মুসলিমদের চালানো নারকীয় বীভৎস গণহত্যা, ধর্ষণ,অপহরণ,নির্যাতন,লুটপাটের আলোকচিত্র সংগ্রহের জন্য নটরডেম কলেজের অধ্যাপক রিচার্ড নোভাক আসেন।কিন্তু তাকে আদর্শ কটন মিলের নিকটে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে মুসলিমরা।[৩১]

১৪ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের নামকরা ব্যবসায়ী গোষ্ঠবিহারী সাহাকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর তার বিখ্যাত ‘সত্যসাধন ছাপাখানা’ লুটপাট করে আগুনে পুড়িয়ে দেয় মুসলিমরা।[১৬] পঞ্চসার গ্রামের (বর্তমান মুন্সীগঞ্জ জেলায়) দুটি দুগ্ধপোশ্য শিশু সন্তান সহ রেনুবালা পাইন নামক এক গৃহবধূকে নিষ্ঠুর উপায়ে হত্যা করে তারা। একই গ্রামের শোভারানী বসু ও তার দু’কন্যাকে পৈশাচিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।[১৬] নরসিংদীর (তৎকালীন নারায়ণগঞ্জের অন্তর্গত) গ্রামে গ্রামে হত্যা,ধর্ষণ,লুটপাট আর অগ্নিসংযোগ করে মুসলিমরা।কমপক্ষে ৩৫০ টি হিন্দু বাড়ি পুড়িয়ে দেয় তারা।বিমলা সুন্দরী পাল নামের এক মহিলাকে ধরে নিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করে তারা।[৩২] মইমান ইউনিয়ন পরিষদের সভাপতি বরদা প্রসাদ রায় এবং তার পরিবারের ১৬ জন সদস্যকে নির্মম ভাবে হত্যা করে উন্মত্ত মুসলিমরা।[২২] মুরাপাড়ার প্রত্যেকটি হিন্দু বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে ছাই বানানো হয়।১৭ জন হিন্দু মহিলাকে জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে ফেলে বীভৎসভাবে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে তারা।[৩২] ভুতলা গ্রামে ২৫০ জন হিন্দু নরনারীকে হত্যা করা হয় এবং অনেককে জীবন্ত আগুনে পুড়িয়ে নিষ্ঠুর উপায়ে হত্যা করা হয়।[৩৩]

১৭ ফেব্রুয়ারি,নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের ৬২৩ জন হিন্দুকে নির্মমভাবে হত্যা করে মুসলিমরা।নরসিংদীর(তৎকালীন নারায়ণগঞ্জের অন্তর্গত) ঘোষপাড়ার হারান ঘোষের বাড়িটি লুটপাট করে পুড়িয়ে দেয় মুসলিম গুন্ডারা।তারা ঘোষপাড়া,মুদকপাড়া(কুরিপাড়া), বাউলপাড়া, পাইত্তালপাড়ার প্রত্যেকটি হিন্দু বাড়িতে আক্রমণ ও লুটপাট করে আগুনে জ্বালিয়ে দেয়।এই সকল আক্রান্ত হাজার হাজার হিন্দু নরসিংদী কলেজ ভবনে আশ্রয় গ্রহণ করে। শুধুমাত্র নারায়ণগঞ্জ সাব-ডিভিশনে ৩,৫০০ এরও বেশি হিন্দুকে হত্যা করে মুসলিমরা।[১৮] কমপক্ষে ৩০০ হিন্দু নারীকে নির্মমভাবে ধর্ষণ করে তারা।এছাড়া ৩১,০০০ বাড়ি-ঘর লুটপাট ও ভাংচুর করে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়।ফলশ্রুতিতে ১৫১ টি গ্রামের ৮০,০০০ হিন্দু আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে।[১৮]

রাজশাহী

তৎকালীন রাজশাহী জেলার নওগাঁর নিকটে অবস্থিত মইনাম গ্রামের সকল হিন্দু গ্রামবাসীকে নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা করা হয়;শুধুমাত্র দুটি নাবালিকাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়।[২০] দুরুশা নামক স্থানের সাঁওতাল আদিবাসী সম্প্রদায়ও হিন্দু বিরোধী এই পাশবিক হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়।[৩৪]

সিলেট

সিলেটে রমযান মাসে হিন্দুসম্প্রদায়ের সকল দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বাধ্য করা হয়।কীর্তনসহ অন্যান্য ধর্মানুষ্ঠান নিশিদ্ধ করে দেয় বিরামহীন হিংসার প্রকাশ ঘটায় মুসলিমরা।[১০] সিলেটের ৩৫ টি চা বাগানের সকল হিন্দু শ্রমিকদেরকে ইসলাম গ্রহণের জন্য হুমকি দেয়া হয়।তাদেরকে গো-মাংস ভক্ষনে বাধ্য করা হয়।বাসুদেব শর্মা নামে একজন অত্যন্ত সজ্জন হিন্দু গুরু ছিলেন,যিনি সেখানকার হাজার হাজার হিন্দু শ্রমিকদের নিকট অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন।ঈদ-উল-ফিতরের দিনে নিরীহ এই মানুষটিকে মুসলিমরা জোর করে গো-মাংস ভক্ষণে বাধ্য করে।[২২]

ময়মনসিংহ

তৎকালীন বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার নালিতাবাড়ী, কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, হালুয়াঘাট, শ্রীবরদী এলাকায় বসবাসকারী আদিবাসী গারো এবং হাজং জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদ করা হয়।ফলে তাদের অনেকেই হাজার হাজার বছর ধরে আঁকড়ে থাকা স্বভূমি ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।[৩৫]

হিন্দুজনগোষ্ঠীর উপর দমনমূলক ব্যবস্থা

গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ

পাকিস্তানে গণমাধ্যমের উপর সর্বোচ্চ বিধিনিষেধ আরোপ করে সম্পূর্ণভাবে কণ্ঠরোধ করা হয়।আলোকচিত্র ধারণ করাও নিষিদ্ধ করা হয়।[৩৬] দৈনিক ইত্তেফাক ও পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকায় কিছু সত্য ঘটনা প্রকাশের জন্য সেগুলোর উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।এর প্রতিবাদে পূর্ব পাকিস্তানের পাঁচটি দৈনিক পত্রিকা তাদের ছাপানো বন্ধ করে দেয়।[১৬] আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করে যে,শুধুমাত্র ঢাকা শহরেই ১,০০০ এর উপর নিরীহ হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছে। এ রিপোর্ট প্রকাশের পরে পাকিস্তান সরকার তীব্র প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে।[১৪]

বাঙ্গালী হিন্দুদের পূর্ববঙ্গ ত্যাগ

 
কলকাতার উদ্দ্যেশ্যে যাত্রাপথে পূর্ববঙ্গের হতভাগ্য হিন্দু শরণার্থী

হাজার হাজার হতভাগ্য অসহায় শরণার্থীর ঢেউ আছড়ে পরে প্রতিবেশী ভারতের উপরে।প্রতিদিনই ৫,০০০ থেকে ৬,০০০ আর্ত হিন্দু সর্বস্ব ত্যাগ করে প্রাণ বাঁচানোর জন্য দেশান্তরী হবার উদ্দ্যেশ্যে ভারতীয় দূতাবাসের সামনে জড় হত।কিন্তু মাত্র ৩০০-৪০০ ভাগ্যবান হিন্দুই ভারতে প্রবেশের অনুমতি লাভে সমর্থ হত।[৩৭] অন্তহীন দেশান্তরের কারণে পূর্ব-পাকিস্তানের একমাত্র হিন্দু গরিষ্ঠ জেলা খুলনাও মুসলিম গরিষ্ঠ জেলাতে রূপান্তরিত হয়।[] পূর্ব-পাকিস্তানের অভ্যন্তরে থাকা ভারতীয় ছিটমহল গুলোতে পাকিস্তান রাইফেলস বাহিনীর অকথ্য নির্যাতনের ফলে বিশাল পরিমানে হিন্দু শরণার্থী ভারতের জলপাইগুড়িতে প্রবেশ করতে বাধ্য হয়।[১০] ২মার্চ 'দ্যা গ্লোব এ্যান্ড মেইল'(The Globe and Mail) তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে,ঢাকার হাজার হাজার নিরুপায় হিন্দু ভারতে যাবার জন্য তীর্থের কাকের মত অপেক্ষা করছে।[৩৮] ভারতীয় কর্তৃপক্ষের এক হিসাব থেকে জানা যায়,শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই কমপক্ষে ১,৩৫,০০০ হিন্দু শরণার্থী প্রবেশ করেছে।[৩৯] এই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে নারায়ণগঞ্জের পানাম নগরের সকল হিন্দু পালিয়ে ভারতে চলে যায়।[৪০]

আদিবাসীদের উচ্ছেদ

 
ভারতের আসামের গারো পাহাড়ে আশ্রয় নেয়া পূর্ব-বঙ্গের গারো আদিবাসী সম্প্রদায়

গণহত্যা শুরুর দেড় মাসের মধ্যে পূর্ববঙ্গ থেকে ৭৫,০০০এর বেশি পীড়িত সর্বহারা শরণার্থী ভারতের আসামে জীবন বাঁচানোর তাগিদে আশ্রয় নেয় যাদের মধ্যে ৩৫,০০০ বেশি ছিল খৃস্টান ধর্মাবলম্বী।ময়মনসিংহের গারো, হাজং, ডালুস সহ অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জাতি সমূহ সম্পূর্ণ অসহায় অবস্থায় আসামের গারো পাহাড়ে (বর্তমানে মেঘালয়ে) আশ্রয় নিয়ে জীবন রক্ষা করে।[৪১] দি অবজার্ভারের প্রতিবেদন অনুসারে গারো পাহাড়ের তুরা নামক স্থানে ৫০,০০০ হাজার আর্ত শরণার্থীকে ঠাই দেবার লক্ষ্যে আসাম সরকার ১২ টি শিবির স্থাপন করে।[৪১] ভারতের উপপররাষ্ট্র মন্ত্রী লক্ষ্মী মেনন লোকসভায় একটি বিবৃতিতে বলেন,ময়মনসিংহ থেকে প্রায় ১,০০০ শরণার্থীর একটি দল সীমান্ত অতিক্রম করার সময় পাকিস্তান রাইফেলস তাদের উপর অমানবিক ঘৃণ্য উপায়ে নির্বিচারে গুলি করে।[৪২] ২৮ মার্চের মধ্যেই শুধুমাত্র ময়মনসিংহ থেকে ৭৮,০০০ আর্ত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায় বর্তমান ভারতের মেঘালয়ে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হয়।[৩৯]

পীড়িত ক্ষুদ্র খৃস্টান নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর দেশত্যাগে বাধ্য হয়ে ভারতে গমন সে সময়ে বৈশ্বিক রাজনীতিতে একটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা ছিল।[৩৯] খৃস্টান আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উপর মুসলিমদের অমানবিক নিষ্ঠুর অত্যাচারের বৈশ্বিক ফলাফল অনুধাবন করতে পেরেছিল পাকিস্তান সরকার। এজন্য পাকিস্তান সরকার আদিবাসীদেরকে স্বভূমিতে ফিরে আসতে অনুরোধ জানায়। ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন তাদেরকে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করে। ঢাকার আর্চবিশপ রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং খ্রৃস্টান আদিবাসী শরণার্থীদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনতে অনুরোধ করেন।[৩৯] ভারতীয় কর্তৃপক্ষ পাকিস্তান সরকার ও ঢাকার আর্চবিশপের এই আবেদন খৃস্টান শরণার্থীদের কাছে পৌঁছে দেয় এবং তাদেরকে বিনা খরচে সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার ঘোষণা দেয়। কিন্তু খৃস্টান আদিবাসী সম্প্রদায় পাকিস্তান সরকার ও আর্চবিশপের অনুরোধ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে এবং পূর্ব-পাকিস্তানে ফিরতে অস্বীকৃতি জানায়।[৩৯]

ভারত সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন

হতভাগ্য, অসহায়, বাস্তুচ্যুত আশ্রয়প্রার্থীদেরকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসামত্রিপুরাতে স্থাপন করা অস্থায়ী শিবিরে ত্রান সাহায্য দেয়া হয়। পরবর্তীতে রিফিউজিদেরকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে পুনর্বাসিত করা হয়। শিলচরে প্রায় ৬,০০০ চাকমা সম্প্রদায়ের মানুষকে আশ্রয় দেয়া হয়।[১৫] গারোপাহাড়ি অঞ্চলের তুরা নামক স্থানে স্থাপিত ১২ টি অস্থায়ী শিবিরে ৫০,০০০ গারো ও অন্যান্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মাথা গোজার ঠাঁই মেলে।[৪৩]

পূর্ব-পাকিস্তানে ত্রাণ বিতরণ

১৫ জানুয়ারি, ১৯৬৪ তারিখে ঢাকার সূত্রাপুরের হেমন্দ্র দাস রোডের স্বদেশ নাগের বাড়িতে আশেপাশের ৩০০ জন উদ্বাস্তু হিন্দু তাদের স্ত্রী, পুত্র, কন্যাসহ আশ্রয়ের জন্য হাজির হয়। স্বদেশ নাগ তাদের জন্য ডাল-ভাতের ব্যবস্থা করেছিলেন। পরেরদিন পূর্ব-পাকিস্তান সরকার ঢাকার বিভিন্ন গোলযোগপূর্ণ এলাকা থেকে অসহায় হিন্দুদেরকে ট্রাকে করে ঢাকা কোর্ট চত্বরে নিয়ে আসতে শুরু করে। অল্প সময়ের মধ্যেই কোর্ট প্রাঙ্গনে আর তিল ধারনেও ঠাই ছিল না। ১৭ জানুয়ারিতে কর্তৃপক্ষ সর্বহারা উদ্বাস্তু রিফুউজি হিন্দুদেরকে জগন্নাথ কলেজ চত্বরে অপসারিত করতে শুরু করে। জগন্নাথ কলেজ প্রাঙ্গনে প্রায় ৭,০০০ থেকে ১০,০০০ হিন্দু তাদের আবাস ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেখানে শৌচাগারের ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়। ফলে কয়েক দিনের মধ্যেই আশ্রয়কেন্দ্রটি রীতিমত অস্বাস্থ্যকর একটি নরকতুল্য স্থানে পরিণত হয়েছিল।[৪৪] নিকটস্থ তাঁতিবাজার ও শাঁখারীবাজারের হিন্দুরা এই সব নিদারুন বিপর্যয়ে বিপর্যস্ত রিফিউজিদেরকে দু’দিন খিচুড়ি খেতে দেয়ার ব্যবস্থা করেছিল।[৪৪] ঢাকাতে ২৫ টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছিল[৪৫] যার মাঝে একটি মাত্র কেন্দ্র পরিচালিত হত সরকারের সহায়তায়। বাকি একটিরও দায়িত্ব নিতে পূর্ব-পাকিস্তান সরকার অস্বীকার করে এবং সেগুলো বিভিন্ন হিন্দু সংগঠন ও হিন্দু ব্যক্তির সাহায্যে পরিচালিত হত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৮০০ সম্বলহীন হতভাগ্য হিন্দু রিফিউজির সাথে দুই জন হিন্দু আইনপ্রনেতা জনপ্রতিনিধিও আশ্রয় নিয়েছিলেন।[৪৬] বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুসারে জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে ঢাকার ২০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৫০,০০০-৮০,০০০ বাস্তুচ্যুত হিন্দু ঠাঁই পেয়েছিল।[৪৭]

হিন্দুদের উপর মুসলিমদের বর্বর নির্যাতন সেখানকার প্রকৃত শিক্ষিত মুসলিমদের মনে সীমাহীন লজ্জা ও গ্লানির সূত্রপাত করেছিল।[৪৭] এসময়ে সেখানকার কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যেমন আতাউর রহমান খান, শেখ মুজিবুর রহমান, মামুদ আলী, জিল্লুর হোসেন, তোফাজ্জল হোসেন কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।[৪৪]

সাহিত্য ও অন্যান্য সৃজনশীল মাধ্যমে গণহত্যার চিত্রায়ন

১৯৮৮ সালে বিখ্যাত লেখক অমিতাভ ঘোষের লেখা সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার প্রাপ্ত ইংরেজি উপন্যাস 'দ্যা শ্যাডো লাইন্স' (The Shadow Lines)'র অন্তর্নিহিত বিষয় ছিল ১৯৬৪ সালের গণহত্যা। এরকম আরেকটি বই শুভশ্রী ঘোষের লেখা 'এ্যাক্রস বর্ডারস'(Across Borders)। ১৯৬৪ সালের গণহত্যায় হিন্দুদের পাশাপাশি পূর্ববঙ্গের অনেক নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী অত্যাচারের শিকার হয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। এমনই এক আদিবাসী সম্প্রদায় ছিল গারো জনগোষ্ঠী। এই ঘটনাকে উপজীব্য করে উমাকান্ত শর্মা ১৯৬৫ সালে অহমিয়া ভাষায় 'ছিমছাঙ্গার দুটো পাড়' নামে একটি উপন্যাস লেখেন। এই গন্যহত্যার ফলে সৃষ্ট হিন্দুদের দেশত্যাগের বিষয়বস্তু নিয়ে বিখ্যাত বাংলাদেশি চলচ্চিত্রকার তানভীর মোকাম্মেল 'চিত্রা নদীর পারে' নামে একটি বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন ১৯৯৯ সালে।[৪৮]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. Baidya, Kalidas (2005). Bangalir Muktiyuddhe Antaraler Sheikh Mujib. Kolkata: Shankar Karmakar. p. 84.
  2. Mukhopadhyay, Kali Prasad (2007). Partition, Bengal and After: The Great Tragedy of India. New Delhi: Reference Press. p. 48. আইএসবিএন ৮১-৮৪০৫-০৩৪-৮.
  3. Bhattacharyya, S.K. (1987). Genocide in East Pakistan/Bangladesh. Houston: A. Ghosh (Publisher). p. 89. আইএসবিএন ০-৯৬১১৬১৪-৩-৪.
  4. Trivedi, Rabindranath (২৩ জুলাই ২০০৭)। "The Legacy of the plight of Hindus in Bangladesh - Part-VII: Bengali Muslims Fight Communalism in 1964"Asian Tribune। World Institute for Asian Studies। 12 (492)। ৩১ মার্চ ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ আগস্ট ২০১৩ 
  5. Mukhopadhyay, Kali Prasad (2007). Partition, Bengal and After: The Great Tragedy of India. New Delhi: Reference Press. p. 53. আইএসবিএন ৮১-৮৪০৫-০৩৪-৮.
  6. Mukhopadhyay, Kali Prasad (2007). Partition, Bengal and After: The Great Tragedy of India. New Delhi: Reference Press. p. 52. আইএসবিএন ৮১-৮৪০৫-০৩৪-৮.
  7. Mukhopadhyay, Kali Prasad (2007). Partition, Bengal and After: The Great Tragedy of India. New Delhi: Reference Press. p. 56. আইএসবিএন ৮১-৮৪০৫-০৩৪-৮.
  8. Mukhopadhyay, Kali Prasad (2007). Partition, Bengal and After: The Great Tragedy of India. New Delhi: Reference Press. p. 58. আইএসবিএন ৮১-৮৪০৫-০৩৪-৮.
  9. Ghosh Dastidar, Sachi (2008). Empire's Last Casualty: Indian Subcontinent's vanishing Hindu and other Minorities. Kolkata: Firma KLM. p. 170. আইএসবিএন ৮১-৭১০২-১৫১-৪.
  10. Bhattacharyya, S.K. (1987). Genocide in East Pakistan/Bangladesh. Houston: A. Ghosh (Publisher). p. 95. আইএসবিএন ০-৯৬১১৬১৪-৩-৪.
  11. Mukhopadhyay, Kali Prasad (2007). Partition, Bengal and After: The Great Tragedy of India. New Delhi: Reference Press. p. 54. আইএসবিএন ৮১-৮৪০৫-০৩৪-৮.
  12. Mukhopadhyay, Kali Prasad (2007). Partition, Bengal and After: The Great Tragedy of India. New Delhi: Reference Press. p. 57. আইএসবিএন ৮১-৮৪০৫-০৩৪-৮.
  13. Mukhopadhyay, Kali Prasad (2007). Partition, Bengal and After: The Great Tragedy of India. New Delhi: Reference Press. p. 66. আইএসবিএন ৮১-৮৪০৫-০৩৪-৮.
  14. Bhattacharyya, S.K. (1987). Genocide in East Pakistan/Bangladesh. Houston: A. Ghosh (Publisher). p. 102. আইএসবিএন ০-৯৬১১৬১৪-৩-৪.
  15. Mukhopadhyay, Kali Prasad (2007). Partition, Bengal and After: The Great Tragedy of India. New Delhi: Reference Press. p. 50. আইএসবিএন ৮১-৮৪০৫-০৩৪-৮.
  16. Bhattacharyya, S.K. (1987). Genocide in East Pakistan/Bangladesh. Houston: A. Ghosh (Publisher). p. 101. আইএসবিএন ০-৯৬১১৬১৪-৩-৪.
  17. Mukhopadhyay, Kali Prasad (2007). Partition, Bengal and After: The Great Tragedy of India. New Delhi: Reference Press. p. 61. আইএসবিএন ৮১-৮৪০৫-০৩৪-৮.
  18. Bhattacharyya, S.K. (1987). Genocide in East Pakistan/Bangladesh. Houston: A. Ghosh (Publisher). p. 96. আইএসবিএন ০-৯৬১১৬১৪-৩-৪.
  19. Mukhopadhyay, Kali Prasad (2007). Partition, Bengal and After: The Great Tragedy of India. New Delhi: Reference Press. p. 68. আইএসবিএন ৮১-৮৪০৫-০৩৪-৮.
  20. Roy, Tathagata (২০০১)। My People, Uprooted: A Saga of the Hindus of Eastern Bengal। Kolkata: Ratna Prakashan। পৃষ্ঠা 220–221। আইএসবিএন 81-85709-67-X 
  21. Mukhopadhyay, Kali Prasad (2007). Partition, Bengal and After: The Great Tragedy of India. New Delhi: Reference Press. p. 62. আইএসবিএন ৮১-৮৪০৫-০৩৪-৮.
  22. Bhattacharyya, S.K. (1987). Genocide in East Pakistan/Bangladesh. Houston: A. Ghosh (Publisher). p. 103. আইএসবিএন ০-৯৬১১৬১৪-৩-৪.
  23. Das, Swapan Kumar (৩০ অক্টোবর ২০১০)। "রায়েরবাজারের পালপাড়া এখন শুধু নামেই"Kaler Kantho (Bengali ভাষায়)। Dhaka। ১৯ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ আগস্ট ২০১৩ 
  24. Ahmed, Mahiuddin (১৬ নভেম্বর ২০১২)। "প্রতিমা ভাঙেনি, ভেঙেছে আস্থা ও বিশ্বাস"Prothom Alo (Bengali ভাষায়)। Dhaka। ২০১৩-০৮-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ আগস্ট ২০১৩ 
  25. Mukhopadhyay, Kali Prasad (2007). Partition, Bengal and After: The Great Tragedy of India. New Delhi: Reference Press. p. 70. আইএসবিএন ৮১-৮৪০৫-০৩৪-৮.
  26. "Dacca: Troops Bring Peace"The Straits Times। Singapore। ১৯ জানুয়ারি ১৯৬৪। সংগ্রহের তারিখ ২৯ আগস্ট ২০১৩ 
  27. "none"। The Daily Ittefaq। Dhaka। জানুয়ারি ১৮, ১৯৬৪। 
  28. "1,000 KILLED IN RIOTS"The Hindu। Madras। ২৩ জানুয়ারি ১৯৬৪। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০১৪ 
  29. Mukhopadhyay, Kali Prasad (2007). Partition, Bengal and After: The Great Tragedy of India. New Delhi: Reference Press. p. 60. আইএসবিএন ৮১-৮৪০৫-০৩৪-৮.
  30. Mukhopadhyay, Kali Prasad (2007). Partition, Bengal and After: The Great Tragedy of India. New Delhi: Reference Press. p. 64. আইএসবিএন ৮১-৮৪০৫-০৩৪-৮.
  31. Novak, Michael (ডিসেম্বর ২০০৮ – জানুয়ারি ২০০৯)। "The Day My Brother Was Murdered"The American Spectator। ডিসেম্বর ১০, ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মে ২, ২০১১ 
  32. Bhattacharyya, S.K. (1987). Genocide in East Pakistan/Bangladesh. Houston: A. Ghosh (Publisher). p. 99. আইএসবিএন ০-৯৬১১৬১৪-৩-৪.
  33. Bhattacharyya, S.K. (1987). Genocide in East Pakistan/Bangladesh. Houston: A. Ghosh (Publisher). p. 100. আইএসবিএন ০-৯৬১১৬১৪-৩-৪.
  34. "Rajshahi Deanery"। Church of Bangladesh। ১৯ জুলাই ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ আগস্ট ২০১৩ 
  35. "Bangladesh: Indigenous Leaders Demand Land Commission For Restoration Of Their Dispossessed Lands In Greater Mymensigh Area". Commercial Pressures on Land. International Land Coalition. Retrieved 1 September 2013.
  36. Bhattacharyya, S.K. (1987). Genocide in East Pakistan/Bangladesh. Houston: A. Ghosh (Publisher). p. 91. আইএসবিএন ০-৯৬১১৬১৪-৩-৪.
  37. Baidya, Kalidas (2005). Bangalir Muktiyuddhe Antaraler Sheikh Mujib. Kolkata: Shankar Karmakar. p. 91.
  38. "none"। The Globe and Mail। Toronto। মার্চ ২, ১৯৬৪। 
  39. Brady, Thomas F. (৫ এপ্রিল ১৯৬৪)। "Moslem-Hindu Violence Flares Again"New York Times। New York। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০১৪ 
  40. Ahmed, Iftekhar (২০০৬)। "A Participatory Approach to Conservation: Working With Community To Save The Cultural Heritage of Panamnagar" (পিডিএফ)BRAC University Journal। Dhaka। 3 (2): 26। ১৯ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০১৪ 
  41. Bhattacharyya, S.K. (1987). Genocide in East Pakistan/Bangladesh. Houston: A. Ghosh (Publisher). p. 108. আইএসবিএন ০-৯৬১১৬১৪-৩-৪.
  42. Bhattacharyya, S.K. (1987). Genocide in East Pakistan/Bangladesh. Houston: A. Ghosh (Publisher). p. 114. আইএসবিএন ০-৯৬১১৬১৪-৩-৪.
  43. Bhattacharyya, S.K. (১৯৮৭)। Genocide in East Pakistan/Bangladesh। Houston: A. Ghosh (Publisher)। পৃষ্ঠা 109আইএসবিএন 0-9611614-3-4 
  44. Mukhopadhyay, Kali Prasad (2007). Partition, Bengal and After: The Great Tragedy of India. New Delhi: Reference Press. p. 47. আইএসবিএন ৮১-৮৪০৫-০৩৪-৮.
  45. Bhattacharyya, S.K. (1987). Genocide in East Pakistan/Bangladesh. Houston: A. Ghosh (Publisher). p. 106. আইএসবিএন ০-৯৬১১৬১৪-৩-৪.
  46. Halder, Dhirendra Nath। "Jagannath Hall - Background"। Jagannath Hall Alumni Association UK। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০১৩ 
  47. Nevard, Jacques (২৪ জানুয়ারি ১৯৬৪)। "Riots Arouse Moslem Shame"New York Times। New York। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০১৪ 
  48. "চিত্রা নদীর পারে : একটি পরিপূর্ণ অর্থের বাংলাদেশী চলচ্চিত্র - বাংলা মুভি ডেটাবেজ"