মোহাম্মদপুর থানা
মোহাম্মদপুর ঢাকা শহরের একটি থানা। শুরুতে মোহাম্মদপুর একটি আবাসিক এলাকা হিসাবে গড়ে উঠলেও বর্তমানে এর বাণিজ্যিক গুরুত্বও দিন দিন বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে মোহাম্মদপুরের জনসংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্রুত নগরায়নের ফলে মোহাম্মদপুর একটি ছোট শহরের রূপ নিয়েছে এবং এর প্রাকৃতিক জলাশয়, বিল প্রভৃতি হারিয়ে যেতে বসেছে।
মোহাম্মদপুর | |
---|---|
থানা | |
বাংলাদেশে মোহাম্মদপুর থানার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৩°৪৫′৫″ উত্তর ৯০°২১′৪৮″ পূর্ব / ২৩.৭৫১৩৯° উত্তর ৯০.৩৬৩৩৩° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | ঢাকা বিভাগ |
জেলা | ঢাকা জেলা |
আয়তন | |
• মোট | ১২.১৩ বর্গকিমি (৪.৬৮ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০০১) | |
• মোট | ৪,৫৬,০৫৮ |
• জনঘনত্ব | ৩৮,০০০/বর্গকিমি (৯৭,০০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৩৮.০৪% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ১২০৭ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৩০ ২৬ ৫০ |
সাম্প্রতিক সময়ে মোহাম্মদপুর থানার কিছু এলাকা নিয়ে আদাবর থানা নামে একটি নতুন থানা গঠন করা হয়েছে।
অবস্থানসম্পাদনা
মোহাম্মদপুরের অবস্থান ২৩.৭৫৪২ ডিগ্রি উত্তর এবং ৯০.৩৬২৫ ডিগ্রি পূর্ব। এর উত্তরে আদাবর থানা, দক্ষিণে ধানমন্ডি থানা, পূর্বে শেরেবাংলা নগর থানা এবং পশ্চিমে কেরানীগঞ্জ উপজেলা। মোহাম্মদপুরের আয়তন ১২.১৩ বর্গ কিলোমিটার এবং এখানে ৯৮,৭৬৩টি বাড়ি রয়েছে[১]।
জনপরিসংখ্যানসম্পাদনা
মোহাম্মদপুর ঢাকা শহরের একটি দ্রুত বর্ধণশীল জনবহুল এলাকা। ২০০১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী মোহাম্মদপুরের মোট জনসংখ্যা ৪,৫৬,০৫৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫৪.৯৫% এবং মহিলা ৪৫.০৫%. মোহাম্মদপুরের গড় শিক্ষার হার ৬৩.৭০%; পুরুষদের মধ্যে শিক্ষার হার ৬৮.৬৬% এবং মহিলাদের মধ্যে শিক্ষার হার ৫৭.৫৭%। এ এলাকায় পরিবার প্রতি গড় সদস্য সংখ্যা ৫ জন[১]।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসম্পাদনা
এই এলাকায় প্রচুর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। কিছু উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হল
- সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়
- দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
- বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি
- গ্রাফিক আর্টস ইন্সটিটিউট
- সরকারী শারীরিক শিক্ষা কলেজ
- সরকারি মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
- ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ
- মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল এন্ড কলেজ
- মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজ
- লালমাটিয়া মহিলা কলেজ
- মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
- মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজ
- ধানমন্ডি পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ
- ঢাকা প্রি ল্যাবরেটরী স্কুল
- সানফ্লাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল স্কুল
- প্রতিভা আইডিয়াল ইনষ্টিটিউট
- মোহাম্মদপুর ল্যাবরেটরী হাই স্কুল
- ন্যাশনাল প্রি ক্যাডেট এন্ড হাই স্কুল
- জামেয়া রহমানিয়া ফাজিল মাদ্রাসা
- ঢাকা উদয়ন পাবলিক স্কুল
- ধানমন্ডি গভ: বয়েজ হাই স্কুল
- মোহাম্মদপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়
- জামিলা আইনুন আনন্দ উচ্চ বিদ্যালয়
- আলী হোসেন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়
- ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল
- উদ্দীপন বিদ্যালয়
- ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ
- মোহাম্মদপুর মহিলা কলেজ
- জামিয়া ইসলামিয়া লালমাটিয়া।
- কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া আলিয়া মাদ্রাসা
- নর্দান কলেজ
- ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ
- গাউছিয়া ইসলামিয়া ফাযিল (ডিগ্রী) মাদরাসা
- ড. এম. মিজানুর রহমান কলেজিয়েট স্কুল
- ড. এম. মিজানুর রহমান প্রফেশনাল কলেজ
- আল হেরা কলেজ
- ডিটারমাইন্ড মডেল স্কুল
- ঢাকা উদ্যান সরকারি কলেজ
বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসম্পাদনা
- শাহতাজ মনিরা (অভিনেত্রী)
যোগাযোগ ব্যবস্থাসম্পাদনা
মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড পুরো মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া এবং ধানমন্ডি এলাকার জনসাধারণের জন্য গণপরিবহন ব্যবস্থার একটা কেন্দ্র। এখান থেকে উত্তরে মিরপুর, পূর্বে গুলশান-বাড্ডা এবং দক্ষিণ পূর্বে মতিঝিল সহ বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল করে থাকে। মোহাম্মদপুর থেকে মিরপুর-বিমানবন্দর অবধি যাওয়ার জন্যে প্রজাপতি পরিবহন ও পরিস্থান পরিবহন নামে দুটি বাস পরিবহন ব্যাবস্থা আছে।
জেনেভা ক্যাম্পসম্পাদনা
জেনেভা ক্যাম্প হল বাংলাদেশে বসবাসকারী উর্দুভাষী বিহারীদের বাসস্থান। জেনেভা ক্যাম্প খুবই ঘিঞ্জি ও ঘনবসতিপূর্ণ। এখানকার পরিবেশ খুবই নোংরা। জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দারা সাধারণত উর্দু-বাংলা-হিন্দি মিশ্রিত ভাষায় কথা বলে। জেনেভা ক্যাম্পটি উত্তরে ক্যাম্পের বাজার,দক্ষিণে গজনবী রোড,পূর্ব দিকে হুমায়ূন রোড এবং পশ্চিমে মোহাম্মদপুর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় অবস্থিত।
আসাদ গেটসম্পাদনা
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের লালমাটিয়ায় অবস্থিত একটি তোরন। এই তোরনের নাম অনুযায়ী ঐ জায়গার নাম আসাদগেট হয়ে গেছে। এই রাস্তা আসাদগেট থেকে মোহাম্মদপুর চলে গিয়েছে। জাতীয় সংসদ ভবনের ডান পার্শ্বে অবস্থিত। এর আগের নাম আইয়ুব গেট। ১৯৬৯ সালে ১১ দফা দাবী আদায়ের গণ আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান আসাদ। আসাদের শহীদ হওয়া সেই সময়ের গণ আন্দোলনে আনে নতুন মাত্রা। তবে আসাদুজ্জামান আসাদ বর্তমান আসাদ গেটের কাছে শহীদ হন নি। সেই সময়কার আন্দোলনটি ছিল প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে। সেজন্যই আসাদের স্মৃতি রক্ষার জন্য ঢাকাবাসী আইয়ুব গেটের নাম পরিবর্তন করে আসাদ গেট রাখেন। এই পরিবর্তনটি পাকিস্তান আমলেই হয়েছিল। ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানের সাক্ষী আসাদগেট আজও আমাদের চেতনায় উজ্জ্বল।
ঐতিহাসিক নিদর্শনাবলীসম্পাদনা
ঢাকার মোহাম্মদপুরের ঐতিহাসিক সাত গম্বুজ মসজিদ খ্রিষ্টাব্দ ষোল শতকে মোঘল শাসন আমলে গড়ে উঠে। ১৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়। নবাব শায়েস্তা খাঁ-এর পুত্র উমিদ খাঁ এর নির্মাতা। এই মসজিদে ৩টি বড় গম্বুজ এবং প্রতিটি কোণায় একটি করে ছোট বা অণু গম্বুজ ধারক বরুজ রয়েছে। এজন্য এর নাম সাত গম্বুজ মসজিদ। ৩টি খিলান মসজিদটিকে বেশ আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এর পশ্চিম দেয়ালে ৩টি মেহরাব রয়েছে। মসজিদের ভিতরে ৪টি কাতারে প্রায় ৯০ জনের নামাজ পড়ার মত স্থান রয়েছে। মসজিদের পশ্চিমে মান্ধাতা আমলের একটি অজুখানা আছে। অজুখানাটি একটি পানির হাউজ যার চার পাশে বসে মুসল্লিগণ অজু করেন। সেখানে কিছু মাছও আছে। এখানে পাঁচওয়াক্ত নামাজ হয় এবং দুই ঈদেরও বিশাল জামাত হয় যা মসজিদ সংলগ্ন পুরোমাঠটি পরিপূর্ণ হয়ে রাস্তায় চলে যায়। তাছাড়া মসজিদের সামনে রয়েছে একটু কবরস্থান। পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বিশাল মাঠে ফুলের বাগান রয়েছে। মসজিদটি ছোট হলেও সাতটি আকর্ষণীয় গম্বুজ সকলের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। এই মসজিদের নামানুসারে মসজিদ সংলগ্ন রাস্তাটি ধানমন্ডি পর্যন্ত ‘সাত মসজিদ রোড’ বলা হয়।
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ ক খ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৬ অক্টোবর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১১।