গারো

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রুদ্র

গারো হল একটি তিব্বত-বর্মী জাতিগোষ্ঠী যারা প্রধানত উত্তর- পূর্ব ভারতীয় রাজ্য মেঘালয়, আসাম, ত্রিপুরা এবং নাগাল্যান্ড এবং বাংলাদেশের কিছু প্রতিবেশী এলাকায় বসবাস করে । খাসিদের পরে তারা মেঘালয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম উপজাতি এবং স্থানীয় জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ নিয়ে গঠিত।

গারো
ঐতিহ্যবাহী পোশাকে একটি গারো দম্পতি
মোট জনসংখ্যা
১১ লাখ (২০১১)
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল
ভারত, বাংলাদেশ
ভারত৯,৯৭,৭১৬
              মেঘালয়৮,২১,০২৬
              আসাম১,৩৬,০৭৭
              ত্রিপুরা৬,০০০
বাংলাদেশ১,২০,০০০
ভাষা
আচিক ভাষা
ধর্ম
খ্রিস্টধর্ম[১]  • সাংসারিক
সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী
বড়ো-কাছাড়ি জনগোষ্ঠী, কোন্যাক জাতি

গারোরা ভাষা অনুযায়ী বোডো মঙ্গোলীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। জাতিগত পরিচয়ের ক্ষেত্রে অনেক গারোই নিজেদেরকে মান্দি বলে পরিচয় দেন। গারোদের ভাষায় 'মান্দি' শব্দের অর্থ হল 'মানুষ'।[২] গারোদের সমাজে মাতৃতান্ত্রিক পরিবার প্রথা প্রচলিত। তাদের প্রধান ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবের নাম 'ওয়ানগালা'; যাতে দেবতা মিসি আর সালজং এর উদ্দেশ্যে উৎপাদিত ফসল উৎসর্গ করা হয়। উল্লেখ্য ওয়ানগালা না হওয়া পর্যন্ত মান্দিরা নতুন উৎপাদিত ফসলাদি খেত না। আশ্বিন মাসে একেক গ্রামের মানুষদের সামর্থ্যানুযায়ী সাত দিন কিংবা তিনদিন ধরে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হতো। অতীতে গারোরা সবাই তাদের নিজস্ব ধর্ম পালন করত। তাদের আদি ধর্মের নাম ‌'সাংসারেক'। ১৮৬২ সালে খৃষ্টধর্ম গ্রহণের পর থেকে বর্তমানে ৯০ ভাগ গারোরাই খ্রীষ্টধর্মে বিশ্বাসী। খ্রীষ্টধর্ম গ্রহণের পর থেকে তাদের সামাজিক নিয়ম-কানুন, আচার-অনুষ্ঠানে বেশ পরিবর্তন এসেছে।

গারোদের প্রধান দেবতার নাম তাতারা রাবুগা। এছাড়াও অন্যান্য দেবতারা হলেন- মিসি সালজং, সুসমি, গয়ড়া প্রমুখ। বিভিন্ন গবেষকগণ বিভিন্ন সময়ে গবেষণা করে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি গারো বর্ণমালা আবিষ্কার করেছেন। সেগুলো উচ্চ গবেষণার জন্য বিরিশিরি কালচারাল একাডেমি-তে সংরক্ষণ করা আছে।গারোদের সমাজ মাতৃতান্ত্রিক। তাদের সমাজে মাতা হলো পরিবারের প্রধান। গারোদের সমাজে বেশ কয়েকটি দল রয়েছে। সাংমা, মারাক, মোমিন, শিরা ও আরেং হচ্ছে প্রধান পাঁচটি দলে বিভক্ত।গারো সমাজ মাতৃতান্ত্রিক।

ভাষা সম্পাদনা

গারোদের ভাষার নাম আচিক ভাষা। ভাষাতাত্ত্বিকদের মতে, গারোরা যে ভাষায় কথা বলে তা মূলত সিনো-টিবেটান (Sino Tibetan) ভাষার অন্তর্গত টিবেটো বার্মান (Tibeto Burman) উপ-পরিবারের আসাম-বার্মা শাখার অন্তর্গত বোডো বা বরা (Bodo/Bora) ভাষা উপ-গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। গারোদের কোনো লিপি বা অক্ষর নেই।তারা মুখেই শুধু তাদের ভাষা বলে থাকে।

দৈহিক বৈশিষ্ট্য সম্পাদনা

গারোদের দৈহিক আকৃতি মাঝারি ধরনের, চ্যাপ্টা নাক, চোখ ছোট, ফর্সা থেকে শ্যামলা রং। দৈহিক গঠনে বেশ শক্তিশালী। তাদের চুল সাধারণত কালো, সোজা এবং বেশ ঘন হয়ে থাকে। আবার অনেক কোকড়া চুলের অধিকারীও লক্ষ্য করা যায়।

ধর্ম সম্পাদনা

গারোরা প্রধানত খ্রিষ্টধর্মের অনুসারী। তাদের ঐতিহ্যবাহী ধর্মের নাম সাংসারেক, যা 'প্রকৃতি পূজারী' ধর্ম হিসেবে উল্লেখ্য হয়ে থাকে। সাংসারেক ধর্মের অর্থ নিয়ে মতের প্রচুর ভিন্নতা রয়েছে, কিছু গবেষক মনে করেন বাংলা শব্দ সংসার থেকে শব্দটি এসেছে; তবে এ নিয়ে কোনো স্পষ্ট ধারণা কারো কাছে সঠিকভাবে নেই। গারোরা হিন্দু ধর্মালম্বীদের মতো পূজা করে থাকে। এদের প্রধান দেবতার নাম 'তাতারা রাবুগা'। গারোরা ধর্ম প্রধান কে কামাল বলে। মিসি সালজং(Saljong) তাদের উর্বরতার দেবতা এবং সূর্য সালজং এর প্রতিনিধি। ফসলের ভালোমন্দ এই দেবতার উপর নির্ভর করে বলে তাদের বিশ্বাস। সুসাইম(Susime) ধন দৌলতের দেবী এবং চন্দ্র এই দেবীর প্রতিনিধি। গোয়েরা(Goera) গারোদের শক্তি দেবতার নাম। মাটিকে গারোরা আমা অর্থাৎ "মা" হিসেবে অভিহিত করে। কালকেম(Kal Kame) জীবন নিয়ন্ত্রণ করে বলে গারোদের বিশ্বাস। মৃত্যুর পরে আত্মা "চিকমাং" অর্থাৎ বর্তমান কৈলাশ পর্বত যায় বলেই তারা বিশ্বাস করে না।

খাদ্যাভাস সম্পাদনা

বাংলাদেশি গারোরা হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল,শূকর প্রভৃতি খায়। মদ তাদের অন্যতম পানীয়। বর্তমানে গারোরা লেখাপড়া ও চাকুরিতে বেশ এগিয়ে আসছে। নিজস্ব সংস্কৃতির পাশাপাশি তারা বাঙালী খাবার খেতেও ভালোবাসে। গারোদের সবচেয়ে প্রিয় খাবার হচ্ছে-নাখাম কারি। যা পুটি মাছের শুটকি দিয়ে তৈরি হয়। এছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শূকরের মাংস গারোদের অতি প্রিয়। গারোদের বিশেষ খাদ্য হচ্ছে কচি বাঁশের গুঁড়ি । এর জনপ্রিয় নাম মোয়া।

উৎসব সম্পাদনা

তাদের ফসল ঘরে তোলার উৎসব হলো ওয়ানগালা। এছাড়াও তাদের আরো অনেক উৎসব আছে। এটি তাদের একটি প্রধান সামাজিক ও কৃষি উৎসব।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "People of Meghalaya"। ৮ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩ 
  2. "Official Homepage of Meghalaya State of India"। ৮ মার্চ ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা