রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন, ঢাকা

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলায় প্রতিষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান যা রামকৃষ্ণ মিশন (প্রচলিত নাম বেলুড় মঠ) নামে খ্যাত তার একটি একটি শাখাকেন্দ্র বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে অবস্থিত রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন। বাংলাদেশে রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধাণ কেন্দ্রও ঢাকার এই মঠটি।[১] এটি বাংলাদেশে রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ আন্দোলন পরিসঞ্চালনের একটি অন্যতম প্রধাণ পীঠস্থান।পুরান ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর নিকটে টিকাটুলির রামকৃষ্ণ মিশন রোডে এটি অবস্থিত।১৮৯৯ সালে স্বয়ং স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর দু'জন শিষ্য স্বামী বিরজানন্দ ও স্বামী প্রকাশনন্দকে ঢাকায় প্রেরণ করেন পূর্ববঙ্গে রামকৃষ্ণ ভাবধারা প্রচার করার উদ্দেশ্যে।[২] ১৯০৪ সাল থেকে এটি নিয়মিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও প্রকাশনা কাজ করতে শুরু করে।[২] ১৯১৪ সালের অক্টোবর মাসে বেলুড় মঠ কর্তৃক এটি রামকৃষ্ণ মিশনের একটি শাখা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।[৩] ১৯১৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি রামকৃষ্ণ মিশনের তৎকালীন সঙ্ঘাধ্যক্ষ স্বামী ব্রহ্মানন্দ ও স্বামী প্রেমানন্দ রামকৃষ্ণ মন্দিরের ভিত্তি স্থাপন করেন।[৪][৫] ঢাকার জমিদার, ধর্ম ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক যোগেশ চন্দ্র দাসের দান করা সাত বিঘা জমিতে এ মঠ ও মিশন প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এই মঠটি বাংলাদেশস্থ রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধান কার্যালয়।

রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন, ঢাকা
Emblem-Ramakrishna-Mission-Transparent.png
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
অবস্থান
অবস্থানঢাকা
দেশবাংলাদেশ
স্থানাঙ্ক
ওয়েবসাইট
dhakarkmm.org
রামকৃষ্ণ মিশন মন্দির, ঢাকা

ইতিহাসসম্পাদনা

১৯১৬ সালে স্বামী ব্রহ্মানন্দ এবং স্বামী প্রেমানন্দ ঢাকা সফর করেছিলেন। ১৯১৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি স্বামী ব্রহ্মানন্দ এবং স্বামী পরমানন্দ রামকৃষ্ণ মঠ এবং রামকৃষ্ণ মিশনের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন।[৬] ৮ মাস পর,২৪ অক্টোবর পূর্ববঙ্গের প্রথম রাজ্যপাল লর্ড কারমাইকেল মেডিকেল সার্ভিস সেন্টারের উদ্বোধন করেন। এই বছরের মার্চ মাসে ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশন বেলুড় সদর দফতরের স্বীকৃতি  লাভ করে।ঢাকার জমিদার যোগেশ চন্দ্র দাস রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের জন্য সাত বিঘা জমি দান করেন । তার দান করা জমিতে মন্দির, সাধু নিবাস, হাসপাতাল, স্কুল, সংস্কৃতি ভবন তৈরি করা হয়।বর্তমানে এটি বাংলাদেশে রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধান কার্যালয়।[৭][৮]

বেলুড়ের রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষ ৫ বছর ব্যবহারের পরে মন্দিরটি জরাজীর্ণ হয়ে যাওয়ার কারণে সংস্কার কাজ শুরু করতে স্থানীয় নির্বাহী কমিটি নিয়োগ করেছিল। মূল নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ২০০০ সালে। ২০০৫ সালে যার কাজ শেষ হয়। বাংলাদেশের শ্রীজ্যোতির্ময় ভট্টাচার্যের কলা-কৌশলে এই মন্দিরের নির্মাণ করা হয়। এজন্য তিনি কোনরকম পারিশ্রমিক গ্রহণ করেননি।[৯]২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই মন্দিরে গিয়েছিলেন।[১০]

মন্দির স্থাপত্যসম্পাদনা

 
রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন, ঢাকা

মন্দিরে প্রায় ৬০০ জন লোকের বসার ক্ষমতা রয়েছে। এতে ৫ টি প্রবেশপথ রয়েছে। ষড়ভুজ আকৃতির মন্দির ঘরটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে ভক্তরা মন্দিরটি পিছন বাদে প্রতিটি দিক থেকে দেখতে পারেন। প্রধান চূড়াটিকে ঘিরে ৬ টি ছোট ছোট চূড়া রয়েছে ।[৯]

কার্যক্রমসম্পাদনা

বিদ্যালয়সম্পাদনা

১৯১৪ সালের ৮ নভেম্বর শ্রী রামকৃষ্ণ অবৈতনিক বিদ্যালয় নামক প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয় । ২০০৮ সালে এটিকে হাইস্কুলে উন্নীত করা হয়েছিল।[১১]

বিবেকানন্দ বিদ্যার্থী ভবন/ ছাত্রাবাসসম্পাদনা

এটি একটি আদর্শ ছাত্রাবাস যা রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকা কর্তৃক পরিচালিত। এখানে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির মোট ৬৭ জন বিদ্যার্থী থাকেন। এরা সবাই নটরডেম কলেজ, ঢাকার শিক্ষার্থী। বিদ্যার্থিদের সার্বিক দেখভালের জন্য দুজন মহারাজ নিয়োজিত রয়েছেন।

গ্রন্থাগারসম্পাদনা

১৯৭৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি গ্রন্থাগারের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল। গ্রন্থাগারের পরিবেশ শান্ত ও ভাবগম্ভীর । এখানে প্রায় ষাটজন পাঠক একসাথে বই পড়তে পারে।এখানে প্রায় ১৫০০০ এর মত বই আছে। এখানে প্রায় ৬৪টি পত্রিকা ও সাময়িকী রাখা হয়।[৯]

দাতব্য চিকিৎসালয়সম্পাদনা

এখানে এলোপ্যাথি পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হয়। এখানে বিনামূল্যে ঔষধ দেয়া হয়। এতে নাক, কান , গলা চোখের চিকিৎসা করা হয় । এছাড়া প্যাথলজি ও দন্ত বিভাগ আছে।

প্রশিক্ষণ কর্মসূচীসম্পাদনা

এখানে কারিগরী প্রশিক্ষণ যেমন মোটরগাড়ি মেরামত, ওয়েল্ডিং , কম্পিউটার ট্রেনিং ও অন্যান্য প্রশিক্ষণ দেয়া হত।[৮]

সেবা বিভাগসম্পাদনা

রামকৃষ্ণ মিশন বন্যা ও দুর্যোগে মানুষের সাহায্য করে। রক্তদান কর্মসূচীর আয়োজন করে। দূর্গাপূজায় দুদিন রক্তদান করা হয়।

সাংস্কৃতিক কর্মসূচীসম্পাদনা

এটি একটি আদর্শ ছাত্রাবাস যা রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকা কর্তৃক পরিচালিত। এখানে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির মোট ৬৭ জন বিদ্যার্থী থাকেন। এরা সবাই নটরডেম কলেজ, ঢাকার শিক্ষার্থী। বিদ্যার্থিদের সার্বিক দেখভালের জন্য দুজন মহারাজ নিয়জিত রয়েছেন।

শতবর্ষ উদযাপনসম্পাদনা

২০১৭ সালে রামকৃষ্ণ মিশনের শতবর্ষ উপলক্ষ্যে ৫ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। এর মধ্যে পূজা, আলোচনা সভা, নাটক ও রক্তদান কর্মসূচী ছিল।এছাড়া সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে বাংলাদেশ ও ভারতের শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করে। ২০১৭ সালের ১৯ মার্চ মঙ্গলারতি, প্রভাতী প্রার্থনা, ঊষা কীর্তন ও মন্দির পরিক্রমার মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানের শুরু হয়েছিল।[১২]

আরও দেখুনসম্পাদনা

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. "রামকৃষ্ণ মিশন, বাংলাদেশ - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org 
  2. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৫ জুলাই ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জুলাই ২০১৭ 
  3. bonikbarta.com। "রামকৃষ্ণ মিশন ঢাকার শতবর্ষ পূর্তি উৎসব শুরু আজ"। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. "রামকৃষ্ণ মিশন :শত বছরের পথচলা - দৃষ্টিকোন - The Daily Ittefaq"। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. "Address and Activities of Dhaka Branch of the Ramakrishna Math and Ramakrishna Mission"belurmath.org। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০১৭ 
  6. "Ramakrishna Mission, Bangladesh - Banglapedia"en.banglapedia.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২৯ 
  7. "ইতিহাস আর ঐতিহ্যের যুগলবন্দী, ঢাকা শহরের এই প্রাচীন মন্দিরগুলি"Aaj Tak বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২৯ 
  8. "রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন, ঢাকা"www.poriborton.news। ২০২১-০৭-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২৯ 
  9. "রামকৃষ্ণ মঠ - আমরা ঢাকা" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২৯ 
  10. "Narendra Modi visits Ramakrishna Mission in Dhaka"The Economic Times। ২০১৫-০৬-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-১৭ 
  11. টেলিভিশন, Ekushey TV | একুশে। "রামকৃষ্ণ মিশনে হচ্ছে ১০ তলা ভবন"Ekushey TV (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২৯ 
  12. "রামকৃষ্ণ মিশন ঢাকা'র শতবর্ষ পূর্তি উৎসব ১৯ মার্চ"banglanews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২৯