তানভীর মোকাম্মেল
তানভীর মোকাম্মেল (জন্মঃ ১৯৫৫) একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশী চলচ্চিত্র পরিচালক।[৩] তিনি বাংলাদেশ ফিল্ম ইন্সটিটিউটের পরিচালক ও বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট।[৪] শিল্পকলায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০১৭ সালে একুশে পদকে ভূষিত করে।[২]
তানভীর মোকাম্মেল | |
---|---|
জন্ম | |
জাতীয়তা | পাকিস্তানি (১৯৫৫-১৯৭১) বাংলাদেশী (১৯৭১-) |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশ |
মাতৃশিক্ষায়তন | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | চলচ্চিত্র নির্মাণ,[১] শিক্ষকতা |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | চিত্রা নদীর পারে (১৯৯৯) লালসালু (২০০১) লালন (২০০৪) |
আন্দোলন | বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম আন্দোলন |
পুরস্কার | একুশে পদক (২০১৭)[২] জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৬, ১৯৯৯, ২০০১) |
ওয়েবসাইট | www |
প্রাথমিক ও শিক্ষাজীবন
সম্পাদনাতানভীর মোকাম্মেল খুলনায় বড় হন।[৫] তিনি সেন্ট জোসেফ্স উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। তার বাবা ছিলেন নড়াইলের ম্যাজিস্ট্রেট ও মা স্থানীয় একটি কলেজের শিক্ষিকা ছিলেন।[৫] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।[৬]
কর্মজীবন
সম্পাদনাবিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে মোকাম্মেল গ্রামীণ এলাকার ভূমিহীন কৃষকদের জন্য বামপন্থী সাংবাদিক হিসাবে কাজ করেছেন।[৭] একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসাবে তিনি ছয়টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, পনেরোটি প্রামাণ্যচিত্র এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, যাদের মধ্যে কয়েকটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করে।[৮]
তার নির্মিত চলচ্চিত্রগু হচ্ছে নদীর নাম মধুমতি, চিত্রা নদীর পারে, লালসালু, লালন, রাবেয়া, এবং জীবনঢুলী। তানভীর মোকাম্মেলের উল্লেখযোগ্য প্রামাণ্যচিত্র হলো দ্য গার্মেন্ট গার্ল অব বাংলাদেশ, দ্য আননোওন ব্যার্ড টিয়ারড্রপস অব কর্ণফুলী, রাইডার্স টু সুন্দরবনস, এ টেল অব দ্য যমুনা রিভার, 'দ্য প্রমিসড ল্যান্ড তাজউদ্দীন আহমেদ: অ্যান আনসাং হিরো, দ্য জাপানিজ ওয়াইফ, স্বপ্নভূমি এবং "১৯৭১। ব্রিটিশ ফিল্ম ইন্সটিটিউশন দ্বারা দর্শক ও সমালোচকদের মধ্যে পরিচালিত এক জরিপে তার চলচ্চিত্র নদীর নাম মধুমতি এবং চিত্রা নদীর পাড়ে বাংলাদেশের সেরা ১০ চলচ্চিত্রের মধ্যে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করে।[৯]
মোকাম্মেল কবিতা, ছোটগল্প এবং চলচ্চিত্র সংস্কৃতি বিষয়ে পত্রিকায় নিবন্ধ লিখেছেন। তানভীর মোকাম্মেলের লেখা বই হচ্ছে এ ব্রিফ হিস্টোরি অব ওয়ার্ল্ড সিনেমা, দ্য আর্ট অব সিনেমা, চার্লি চ্যাপলিন: কনকোয়েস্টস বাই এ ট্র্যাম্প, সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ, সিসিফাস অ্যান্ড কোয়েস্ট অব ট্রেডিশন ইন নভেল (সাহিত্য সমালোচনা বিষয়ক একটি কাজ), গ্রান্ডভিগ অ্যান্ড ফোক এডুকেশন (বিকল্প শিক্ষাব্যবস্থার ধারণা বিষয়ক বই), এবং ম্যাক্সিম গোর্কির দ্য লোয়ার ডেফথস নাটকের অনুবাদ।[৭]
মোকাম্মেল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র কেন্দ্র নামে একটি চলচ্চিত্র ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছেন।[৬]
চলচ্চিত্রের তালিকা
সম্পাদনাবছর | চলচ্চিত্রের নাম | অভিনয়ে | টীকা |
---|---|---|---|
১৯৯১ | হুলিয়া (স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র) | আসাদুজ্জামান নূর, আলী যাকের, লিলি চৌধুরী, হুমায়ুন ফরিদী ও অন্যান্য | কবি নির্মলেন্দু গুণের “হুলিয়া” কবিতা অবলম্বনে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র |
১৯৯১ | স্মৃতি একাত্তর | ১৯৭১-য়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও রাজাকার আলবদরদের হাতে নিহত শহীদ বাঙ্গালী বুদ্ধিজীবীদের উপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র | |
১৯৯৩ | একটি গলির আত্মকাহিনী | পুরনো ঢাকায় শাঁখারীবাজার গলির উপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র | |
১৯৯৫ | নদীর নাম মধুমতী | তৌকীর আহমেদ, আলী যাকের, রাইসুল ইসলাম আসাদ, আবুল খায়ের | বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষিতে নির্মিত কাহিনীচিত্র |
১৯৯৬ | স্বপ্নার স্কুল | বাংলাদেশের গ্রামীণ দরিদ্র তরুণ-তরুণীদের বিকল্প শিক্ষার উপর প্রামাণ্যচিত্র | |
১৯৯৬ | অচিন পাখি | লালন ফকিরের জীবন ও সঙ্গীতের উপর প্রামাণ্যচিত্র | |
১৯৯০ | ইমেজেস অ্যান্ড ইম্প্রেশনস | ডেনমার্কের বিকল্প শিক্ষার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান “ইন্টারন্যাশনাল পিপলস কলেজ”-কে নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র | |
১৯৯৯ | চিত্রা নদীর পারে | আফসানা মিমি, তৌকির আহমেদ, রওশন জামিল, মমতাজউদদীন আহমদ | ১৯৪৭-য়ের দেশভাগের প্রেক্ষিতে নির্মিত কাহিনীচিত্র |
২০০১ | লালসালু | রাইসুল ইসলাম আসাদ, তৌকির আহমেদ, চিত্রলেখা গুহ | সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর কালজয়ী উপন্যাস “লালসালু” অবলম্বনে কাহিনীচিত্র |
২০০৪ | লালন | রাইসুল ইসলাম আসাদ, আজাদ আবুল কালাম, শমী কায়সার, ওয়াহিদা মল্লিক জলি, রামেন্দু মজুমদার | লালন ফকিরের জীবন, সঙ্গীত ও দর্শন নিয়ে কাহিনীচিত্র |
২০০৫ | কর্ণফুলীর কান্না | পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী-বাঙ্গালী সমস্যা নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র | |
২০০৭ | তাজউদ্দীন আহমদ: নিঃসঙ্গ সারথি | বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদকে নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র যাঁকে, ১৯৭৫ সালের নভেম্বর মাসে জেলের ভেতরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। | |
২০০৭ | বস্ত্রবালিকারা | বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিক নারীদের উপর প্রামাণ্যচিত্র। | |
২০০৭ | স্বপ্নভূমি | বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের/উর্দূভাষী মুসলমানদের নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র | |
২০০৮ | রাবেয়া | বন্যা মীর্জা, আলী যাকের, রামেন্দু মজুমদার, কেরামত মওলা ও অন্যান্য | ১৯৭১-য়ের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষিতে নির্মিত কাহিনীচিত্র |
২০১১ | ১৯৭১ | বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর গবেষণাধর্মী দীর্ঘ মেগা-প্রামাণ্যচিত্র | |
২০১২ | দ্য জাপানীজ ওয়াইফ | প্রথম বাঙ্গালী নারী যিনি জাপান ভ্রমণের উপর বই লিখেছিলেন সেই হরিপ্রভা তাকেদার উপর প্রামাণ্যচিত্র | |
২০১৪ | জীবনঢুলী | শতাব্দী ওয়াদুদ, জ্যোতিকা জ্যোতি, রামেন্দু মজুমদার, চিত্রলেখা গুহ ও অন্যান্য | বাংলাদেশের মুক্তিযু্দ্ধের প্রেক্ষিতে নিম্নবর্গের এক দরিদ্র ঢাকীর অভিজ্ঞতা নিয়ে কাহিনীচিত্র |
সীমান্তরেখা | ১৯৪৭-য়ের বাংলাভাগের উপর প্রামাণ্যচিত্র | ||
২০১৯ | রূপসা নদীর বাঁকে | জাহিদ হোসেন শোভন, খায়রুল আলম সবুজ, নাজিবা বাশার, চিত্রলেখা গুহ, উত্তম গুহ ও অন্যান্য | একজন ত্যাগী বামপন্থী নেতার জীবন নিয়ে কাহিনীচিত্র |
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনা- শিল্পকলায় (চলচ্চিত্র) বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০১৭ সালে একুশে পদক লাভ করেন।[১][২]
- জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
- বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র (প্রযোজক) - ১৯৯৯ (চিত্রা নদীর পারে), ২০০১ (লালসালু)
- বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ পরিচালক - ১৯৯৯ (চিত্রা নদীর পারে), ২০০১ (লালসালু)
- বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা - ১৯৯৬ (নদীর নাম মধুমতী), ১৯৯৯ (চিত্রা নদীর পারে), ২০০১ (লালসালু)
- বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার - ১৯৯৬ (নদীর নাম মধুমতী), ১৯৯৯ (চিত্রা নদীর পারে)
- জিওনজু চলচ্চিত্র উৎসব
- মনোনীত: এশীয় নব আগমন - ২০০১ (লালসালু)
আরও দেখুন
সম্পাদনা- ২০১৭-এর একুশে পদক বিজয়ীগণ।
- বিডিনিউজ২৪-কে দেয়া তানভীর মোকাম্মেলের সাক্ষাৎকার ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ বাসস (২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭)। "একুশে পদক প্রদান করলেন প্রধানমন্ত্রী"। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাংলাদেশের জাতীয় সংবাদ সংস্থা)। ২০১৭-০২-২৮ তারিখে মূল (HTML) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুন ২০১৭।
- ↑ ক খ গ ইকবাল, দিদারুল (২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭)। "একুশে পদক প্রদান করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী" (HTML)। চীন আন্তর্জাতিক বেতার (সিআরআই)। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুন ২০১৭। উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "সিআরআই" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে - ↑ I had a dream team in Jibondhuli: Tanvir Mokammel ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে dhakatribune.com. June 12, 2013. Retrieved 20 January 2014
- ↑ Tanvir Mokammel ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ জুলাই ২০১৫ তারিখে ucfilms.in. Retrieved 2014-01-20
- ↑ ক খ "Rendering the great sense of loss of 1947 through film"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৮-২৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৬-১৩।
- ↑ ক খ "Tanvir Mokammel receives 'Chalachchitram Padak'"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০০৭-১১-২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৬-১৩।
- ↑ ক খ Islam, Nazrul। "A short profile of Tanvir Mokammel"। tanvirmokammel.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-০৮-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৬-১৩।
- ↑ Islam, Nazrul। "Awards"। tanvirmokammel.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০৬-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৬-১৩।
- ↑ "Top 10 Bangladeshi films"। British Film Institute। ২৭ মে ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১৪।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাএই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |