কলমাকান্দা উপজেলা

নেত্রকোণা জেলার একটি উপজেলা

কলমাকান্দা উপজেলা বাংলাদেশের নেত্রকোণা জেলার একটি উপজেলা।

কলমাকান্দা
উপজেলা
মানচিত্রে কলমাকান্দা উপজেলা
মানচিত্রে কলমাকান্দা উপজেলা
স্থানাঙ্ক: ২৫°৫′২″ উত্তর ৯০°৫৩′৩৭″ পূর্ব / ২৫.০৮৩৮৯° উত্তর ৯০.৮৯৩৬১° পূর্ব / 25.08389; 90.89361 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগময়মনসিংহ বিভাগ
জেলানেত্রকোণা জেলা
আসননেত্রকোণা-১
সরকার
 • সংসদ সদস্যআলহাজ্ব মোশতাক আহমেদ রুহি (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ)
আয়তন
 • মোট৩৭৬.২২ বর্গকিমি (১৪৫.২৬ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[]
 • মোট২,৭১,৯১২
 • জনঘনত্ব৭২০/বর্গকিমি (১,৯০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
 • মোট%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড২৪০০ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৩০ ৭২ ৪০
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

অবস্থান ও আয়তন

সম্পাদনা

নেত্রকোণা জেলার সবচেয়ে উত্তরে ভারতের সীমান্ত লাগোয়া থানার নাম কলমাকান্দা। আয়তন ৩৭৬.২২ বর্গকিলোমিটার।[] উপজেলা শহরটি ২ টি মৌজা নিয়ে গঠিত। এর আয়তন ৮. ৩৭ বর্গকিলোমিটার। এই উপজেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয়, দক্ষিণে বারহাট্টা উপজেলানেত্রকোণা সদর উপজেলা, পূর্বে সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলা, পশ্চিমে দুর্গাপুর উপজেলা। এই উপজেলায় আছে অনেক দর্শনীয় স্থান, আছে নানা প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ।

নামকরণ

সম্পাদনা

কলমাকান্দার নামকরণে জনশ্রুতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এরকমই এক জনশ্রুতি থেকে জানা যায়, পাহাড়ি ঢলে নেমে আসা পানির সঙ্গে পলিমাটি এসে এ অঞ্চল ভরাট ভূমিতে রুপান্তরিত হয়। এ ভরাট ভূমির স্থানীয় নাম কান্দা। কান্দায় জন্মানো কলমি গাছ (জলজ উদ্ভিদ) মাটি আটকে ধরে এ ভরাট ভূমিতে আরও মাটি সঞ্চয় করতে সহায়তা করে। সে কারণেই প্রথমে স্থানটি কলমিকান্দা নামে পরিচিত হয় ও পরে মানুষের মুখের ভাষায় কলমাকান্দা নামে পরিণত হয়। আরেক জনশ্রুতি থেকে জানা যায়, গারো পাহাড়ে উৎপন্ন প্রচুর কমলা এ স্থানে সমতলবাসী ও পাহাড়ি গারোদের মাঝে ক্রয়-বিক্রয় হতো। এ কারণে এ কান্দা অঞ্চলটি কমলাকান্দা নামে পরিচিতি লাভ করে। কালের পরিক্রমায় কমলাকান্দা অঞ্চলে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হতে থাকলে তারা কমলাকান্দাকে কলমাকান্দা নামে আখ্যায়িত করে। এখন পর্যন্ত অনেকেই কলমাকান্দাকে কমলাকান্দা নামেই ডাকে। তবে অনেকের ধারণা, কলমাকান্দা শব্দের ধ্বনি বিপর্যয়ের ফলে কমলাকান্দা শব্দের উৎপত্তি।

ইতিহাস

সম্পাদনা

সুসং ও সিংধা মৈন পরগণাভুক্ত কলমাকান্দার প্রথম প্রশাসনিক কাজ শুরু হয় ব্রিটিশ শাসনামলে। প্রথমে এ উপজেলার প্রশাসনিক কাজ দুর্গাপুর থেকে পরিচলিত হত। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে কলমাকান্দা উপজেলার দক্ষিণাংশ পরিচালিত হয় বারহাট্টা থেকে। ইস্ট বেঙ্গল ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ এর Notification no. 8909. P Dated 23 Rd July 1917 মূলে ১৯১৯ সালে দুর্গাপুর থানার একটি পুলিশ ফাঁড়ি প্রতিষ্ঠিত হয় কলমাকান্দায়। সে সময় বারহাট্টা থানারও কিছু অংশ এ ফাঁড়ি অধীনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে ছিল। ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ নভেম্বর কলমাকান্দা ফাঁড়ি থানাকে পূর্ণাঙ্গ থানায় রূপান্তর করা হয়। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে নেত্রকোণা মহকুমার অন্যান্য থানাগুলোর মত কলমাকান্দায়ও প্রশাসনিক কর্মের সঙ্গে সার্কেল উন্নয়ন ও রাজস্ব অফিস স্থাপিত হয়। ১৯৮৩ সনের ২৪ মার্চ কলমাকান্দা থানা উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। ১৪৫.৭২ বর্গমাইল আয়তনের কলমাকান্দা উপজেলায় বর্তমানে ৮টি ইউনিয়ন রয়েছে। কলমাকান্দা বরাবরই নেত্রকোণা-১ আসনের অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে সংসদীয় আসন ১৫৭।

প্রশাসনিক এলাকা

সম্পাদনা

কলমাকান্দা উপজেলায় বর্তমানে ৮টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম কলমাকান্দা থানার আওতাধীন।[]

ইউনিয়নসমূহ:

মুক্তিযুদ্ধে অবদান

সম্পাদনা

১৯৭১ সালের ২৫ শে জুলাই মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল কলমাকান্দা থানার নাজিরপুর বাজারে অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের আরও কয়েকটি দল বাজারের চারপাশের বিভিন্ন গ্রামে অবস্থান নেয়। সারা রাত অপেক্ষা করেও হানাদার বাহিনী না আসায় পরদিন অর্থাৎ ২৬শে জুলাই তারা এমবুশ প্রত্যাহার করে ক্যাম্পে ফেরার সময় নাজিরপুর তফসিল অফিসের সামনে আসতেই দক্ষিণ-পূর্ব দিক দিয়ে কলমাকান্দা ক্যাম্প হতে নদীপথে আসা হানাদার বাহিনীরা মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য করে বৃষ্টির মত গুলিবর্ষণ শুরু করে। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ৭ জন শহীদ হন এছাড়া এই দিন মর্টারের গুলিতে গৌরীপুর গ্রামে আরও ৩ জন শহীদ হন। শহীদ ৭ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ২৭শে জুলাই লেংগুরার ফুলবাড়ি নামকগ্রামে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে (১১৭২নং পিলার সংলগ্ন) বাংলাদেশের মাটিতে সমাহিত ও দাহ করা হয় যা পরবর্তীতে সাত শহীদের মাজার বা 'সপ্তশিখা' নামে পরিচিতি লাভ করে। প্রতি বছর ২৬শে জুলাই সেখানে শহীদদের স্মরণে অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহাসিক নাজিরপুর দিবস।

ঐতিহ্য

সম্পাদনা

কলমাকান্দা নামকরণের পূর্বে এ অঞ্চলে হিন্দু ধর্মালম্বী বা পৌত্তলিক জনগোষ্ঠীর যথেষ্ট প্রভাব পড়েছিল। কলমাকান্দা উপজেলার মহিষাসুর, মহাদেও, গণেশ্বরী, সংগেশ্বরী, মহেশ্বরী প্রভৃতি স্থান ও নদীর নাম এককালে এ অঞ্চলে হিন্দুদের আধিপত্যের সাক্ষ্যই বহন করে। চাঁদ সওদাগরের ডিঙ্গা এ অঞ্চলে ডুবেছিল, এ পৌরাণিক কাহিনীকে এ অঞ্চলবাসী সত্য বলেই মনে করে। তাদের বিশ্বাস ডুবে যাওয়া চাঁদ সওদাগরের ডিঙ্গার মাস্তুল গারো পাহাড়ের শিলাস্তরে অঙ্কিত হয়ে পূর্বের স্মৃতি বহন করছে। চন্দ্রডিঙ্গা নামক গ্রামটি সেই স্মৃতি চিহ্নের একটি।

ভাষা ও সংস্কৃতি

সম্পাদনা

যৌথ সাংস্কৃতিক ধারা প্রবাহিত কলমাকান্দায়। লেঙ্গুরা, খারনৈ, নাজিরপুর ও রংছাতি ইউনিয়নে গারো, হাজং ও বানাই জনজাতির বসবাস প্রাচীনকাল থেকে। ফলে বাঙালি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও জীবনধারা সমান্তরালে বহমান সেই প্রাচীনকাল থেকে।

প্রধান নদনদী

সম্পাদনা

জনসংখ্যা

সম্পাদনা

২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী কলমাকান্দা উপজেলার জনসংখ্যা ২,৭১,৯১২ জন।

শিক্ষা

সম্পাদনা

কলমাকান্দা উপজেলার শিক্ষার হার ৬৭.৮৯%।

কলমাকান্দা উপজেলায় রয়েছে

  • একটি টেকনিক্যাল স্কুল;
  • চারটি কলেজ।

চিকিৎসাব্যবস্থা

সম্পাদনা

কলমাকান্দা সদরে রয়েছে একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এখানেই সিংহভাগ মানুষ চিকিৎসা নিতে আসে। এই এলাকার বেশিরভাগ মানুষই বড় রকমের চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে আসে। এছাড়া সদরে রয়েছে কিছু প্রাইভেট চিকিৎসাকেন্দ্র।

যোগাযোগ ব্যবস্থা

সম্পাদনা

নেত্রকোণা জেলা থেকে যাতায়াতের জন্য রয়েছে বাস ও মিনি বাস। এছাড়া ঢাকা ও ময়মনসিংহের সাথে যোগাযোগের জন্য রয়েছে অল্প সংখ্যক বিআরটিসি বাস। উপজেলা শহর থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে যাতায়াতের জন্য রয়েছে অটোরিক্সা ও সাধারণ রিক্সা। মোটরসাইকেল যাতায়াতের অন্য একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। বর্ষাকালে উত্তর-পশ্চিমের কয়েকটি এলাকা ছাড়া প্রায় সব এলাকাতেই ইঞ্জিনচালিত নৌকা বা ট্রলারে যাতায়াত করা যায়।

অর্থনীতি

সম্পাদনা

গ্রাম এবং হাওর প্রধান এলাকা বিধায় অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। উত্তরের পাহাড়ি ঢলের সাথে নেমে আসা পলি মাটি এখানকার মাটিকে করেছে খুবই উর্বর, যে কারণে এখানে প্রচুর পরিমাণে ধান ফলে। এছাড়া এই এলাকায় রয়েছে চোখে পড়ার মতো গবাদি পশু ও হাঁসের খামার। ক্ষুদ্র এলাকা হিসেবে এই উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ডিম উৎপাদন হয়। কলমাকান্দার হাওর এবং নদীগুলোতে পাওয়া যায় বিপুল পরিমাণ মাছ। মহাশোল (মাশুল) নামক অতি সুস্বাদু মাছও পাওয়া যায় এই এলাকায়। নানা জাতের মৌসুমি ফসল, তরকারি, ফলমূল ইত্যাদিও প্রচুর পরিমাণে জন্মে। এই এলাকায় প্রচুর মিষ্টি আলুর চাষ হয়।

দর্শনীয় স্থানসমূহ

সম্পাদনা
  • ২৮ কেজি বিল;
  • রংছাতি, খারনৈ এবং লেঙ্গুরা এলাকার পাহাড়;
  • লেঙ্গুরার শুটিং স্পট;
  • খারনৈ ইউনিয়নের চেংনি মেলা;
  • টেংগার মেলা;
  • রংছাতি ইউনিয়নের পাঁচগাঁওর চন্দ্রডিঙ্গা পাহাড়।
  • সাত শহীদের মাজার
  • পাচঁগাও

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে কলমাকান্দা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১৫ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ নভেম্বর ২০১৭ 
  3. "ইউনিয়নসমূহ - কলমাকান্দা উপজেলা"kalmakanda.netrokona.gov.bd। জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ২৭ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০২০ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা