খসড়া:কুষ্টিয়ার ইতিহাস

(খসড়া:কুষ্টিয়া জেলার ইতিহাস থেকে পুনর্নির্দেশিত)

কুষ্টিয়া জেলা বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের একটি জেলা।

জেলা হিসেবে অভ্যুদয় সম্পাদনা

১৭২৫ সালে কুষ্টিয়া নাটোর জমিদারীর অধীনে ছিল এবং এর পরিচিতি আসে কান্ডানগর পরগণার রাজশাহী ফৌজদারীর সিভিল প্রশাসনের অন্তর্ভূক্তিতে। পরে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৭৬ সালে কুষ্টিয়াকে যশোর জেলার অন্তর্ভূক্ত করে। কিন্তু ১৮২৮ সালে এটি পাবনা জেলার অন্তর্ভূক্ত হয়। ১৮৬১ সালে নীল বিদ্রোহের কারণে কুষ্টিয়া মহকুমা প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং ১৮৭১ সালে কুমারখালী ও খোকসা থানা নিয়ে কুষ্টিয়া মহকুমা নদীয়ার অর্ন্তগত হয়। ভারত উপমহাদেশ বিভক্তির পূর্বে কুষ্টিয়া নদীয়া জেলার আওতায় একটি মহকুমা ছিল। ১৯৪৭ সালে কুষ্টিয়া জেলার অভ্যুদয় ঘটে। তখন কুষ্টিয়া জেলা ৩ টি মহকুমা নিয়ে গঠিত ছিল। এগুলো কুষ্টিয়া , চুয়াডাঙ্গা এবং মেহেরপুর। এরপর ১৯৮৪ সালে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর আলাদা জেলা হিসেবে পৃথক হয়ে গেলে কুষ্টিয়া মহকুমার ৬ টি থানা নিয়ে বর্তমান কুষ্টিয়া জেলা গঠিত হয়।[১]

নামকরণ সম্পাদনা

কুষ্টিয়া বহুপূর্ব থেকেই বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে এর অবিসংবাদিত পরিচিতি রয়েছে। তবে কুষ্টিয়া নামটি কীভাবে এলো, তা নিয়ে ইতিহাসকারদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

  • মতামত ০১ (সবচেয়ে সমর্থিত মত): ১৮২০ প্রকাশিত হেমিলটনসের গেজেট-এর সূত্রে পাওয়া যায়। সেটি হলো, কুষ্টিয়াতে এক সময় প্রচুর পরিমাণে পাট উৎপাদিত হতো। পাটকে স্থানীয় ভাষায় কোষ্টা (এখনো বলা হয়) বা কুষ্টি বলতো, যার থেকে কুষ্টিয়া নামটি এসেছে।[২][৩]
  • মতামত ০২: ফার্সি ভাষার শব্দ ‘কুশতহ’ থেকে কুষ্টিয়ার নামকরণ হয়েছে যার অর্থ ছাই দ্বীপ। আবার ৫ম মুঘল সম্রাট শাহ জাহানের সময় কুষ্টি বন্দরকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়া শহরের উৎপত্তি হয় বলেও একটি মত রয়েছে।[২][৩]

মুঘল আমল সম্পাদনা

সম্রাট শাহজাহান মুঘল সাম্রাজ্যের শাসক ছিলেন যিনি ১৬২৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ভারত উপমহাদেশ শাসন করেছেন। সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকালে এখানে কুষ্টি নদীবন্দর স্থাপিত হয়।[৪]

কুষ্টিয়াতে মুঘল আমলে তৈরি ০৫টি মসজিদের নিদর্শন পাওয়া যায়।[৫][৬] এগুলো হলো:

  1. ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ
  2. কুশলীবাসা শাহী মসজিদ[৭]
  3. তেবাড়িয়া তিন গম্বুজ জামে মসজিদ
  4. বানিয়াকান্দী তিন গম্বুজ শাহী মসজিদ
  5. স্বস্তিপুর শাহী মসজিদ
 
ঝাউদিয়া শাহী মসজিদের অভ্যন্তরীণ দৃশ্য

ব্রিটিশ আমল সম্পাদনা

ব্রিটিশ আমলে কুষ্টিয়া জেলার অনেক উন্নতি হয়। ১৮৬০ সালে ব্রিটিশরা বাংলাদেশের প্রথম রেলওয়ে স্টেশন[৮] জগতি রেলওয়ে স্টেশন স্থাপন করে। এটি স্থাপনের মাধ্যমে কলকাতার সাথে সরাসরি কুষ্টিয়া জেলার রেললাইন স্থাপিত হয়। পরবর্তীতে ১৮৬২ সালছ ব্রিটিশরা পোড়াদহে বাংলাদেশের প্রথম রেলওয়ে জংশন পোড়াদহ রেলওয়ে জংশন তৈরি করে। এর মাধ্যমে কলকাতার সাথে উত্তরবঙ্গের সাথে রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়।

 
বাংলাদেশের প্রথম রেলওয়ে স্টেশন জগতি রেলওয়ে স্টেশন

পরবর্তীতে এই রেললাইন গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয় এবং ঢাকার সাথে যোগাযোগ সহজ হয়ে ওঠ। একারণে ব্রিটিশদের কাছে এই অঞ্চল শিল্প-কারখানার জন্য আদর্শ স্থান বলে তখন বিবেচিত হয়েছিল। তৎকালীন সময়ে রেনউইক যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড (১৮৯৬), মোহিনী মিল (১৯০৮) প্রতিষ্ঠিত হয়।[৯] ১৮৬৯ সালে কুষ্টিয়া পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সম্রাট শাহজাহানের আমলে প্রতিষ্ঠিত কুষ্টি নদী বন্দর ব্যবহার করত‌। কিন্তু কুষ্টিয়াতে নীলচাষী ও নীলকরদের আগমনের পরেই নগরায়ন শুরু হয়।[৪] ১৮৬১ সালে নীল বিদ্রোহের কারণে কুষ্টিয়া মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৮৭১ সালে কুমারখালীখোকসা থানা নিয়ে কুষ্টিয়া মহকুমা নদিয়া জেলার অন্তর্গত হয়‌।[১]

রবীন্দ্রনাথ ও কুষ্টিয়া সম্পাদনা

 
শিলাইদহ কুঠিবাড়ি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯১ সাল থেকে পিতার আদেশে নদিয়া (নদিয়ার উক্ত অংশটি অধুনা বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলা), পাবনারাজশাহী জেলা এবং উড়িষ্যার জমিদারিগুলির তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ।[১০] কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে রবীন্দ্রনাথ দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেছিলেন। জমিদার রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে “পদ্মা” নামে একটি বিলাসবহুল পারিবারিক বজরায় চড়ে প্রজাবর্গের কাছে খাজনা আদায় ও আশীর্বাদ প্রার্থনা করতে যেতেন। গ্রামবাসীরাও তার সম্মানে ভোজসভার আয়োজন করত।[১১]

 
কুষ্টিয়ার মিল পাড়ায় অবস্থিত টেগর লজ

কুষ্টিয়া জেলা মিল পাড়ায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ব্যবসায়িক কাজের উদ্দেশ্যে টেগর লজ স্থাপন করেছিলেন।[১২]

পাকিস্তান আমল সম্পাদনা

১৯৪৭-এ ব্রিটিশ ভারত ভাগের সময় কুষ্টিয়া নদিয়া জেলা থেকে পৃথক হয়ে পূর্ব-পাকিস্তানের জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।[১৩] এর মহকুমাসমূহ ছিল বর্তমানের কুষ্টিয়া জেলা, চুয়াডাঙ্গা জেলামেহেরপুর জেলা। তৎকালীন এস.ডি.ও মৌলভি আব্দুল বারী বিশ্বাসকে প্রধান করে ১৯৫৪ সালে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের সদর দপ্তর কুষ্টিয়া জেলায় স্থাপন করা হয়। এ ছাড়া আরো বেশ কিছু সরকারি অফিস কুষ্টিয়ায় স্থাপনের পরে শহরটিতে পুনরায় উন্নয়ন শুরু হয়।

ভাষা আন্দোলনে কুষ্টিয়া সম্পাদনা

ভাষা আন্দোলনের তীব্র ঢেউ লেগেছিল দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ জনপদ কুষ্টিয়াতেও। বাংলা ভাষার ওপর আকস্মিক আঘাত মেনে নিতে পারেননি কুষ্টিয়ার সাধারণ জনগণ। যদিও ১৯৪৮ সালের প্রথম পর্বের ভাষা আন্দোলনের তেমন হাওয়া লাগেনি কুষ্টিয়াতে। ১৯৪৮-এর ভাষা আন্দোলনে কুষ্টিয়াতে কিছুটা তৎপরতা লক্ষ্য করা গিয়েছিল। তবে তা কুষ্টিয়া জুড়ে তেমন একটা আলোড়ন সৃষ্টি করেনি।[১৪]

স্বাধীনতা যুদ্ধে কুষ্টিয়া সম্পাদনা

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় কুষ্টিয়া জেলা ০৮ নং সেক্টরের অধীনে ছিল।‌ পাকিস্তানি সেনারা কুষ্টিয়া জিলা স্কুলকে তাদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছিল।[১৫]

কুষ্টিয়া জেলায় ২৯০৭ জন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন।[১৬] ২০০৪ সালের প্রদত্ত গেজেট অনুযায়ী কুষ্টিয়া জেলায় ০৮ জন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে।[১৭]

নং গেজেট নম্বর (২০০৪) নাম গ্রাম উপজেলা প্রতীক
০১ খেতাবপ্রাপ্ত-৫৩ আবু তালেব জগতি কুষ্টিয়া বীর উত্তম
০২ খেতাবপ্রাপ্ত- শরফুদ্দীন আহমেদ সুলতানপুর কুমারখালী
০৩ খেতাপ্রাপ্ত-২৩৭ খালেদ সাইফুদ্দীন কাটদহ কুষ্টিয়া বীর বিক্রম
০৪ খেতাবপ্রাপ্ত-৬২৩ হাবিবুর রহমান শেরপুর দৌলতপুর বীর প্রতীক
০৫ খেতাবপ্রাপ্ত-৬২৮ শামসুদ্দীন আহমেদ মহিষখোলা মিরপুর
০৬ খেতাবপ্রাপ্ত-৬৩০ কে এম রফিকুল ইসলাম গোলাপনগর ভেড়ামারা
০৭ খেতাবপ্রাপ্ত-৬৩১ শেখ দিদার আলী আড়ুয়াড়া কুষ্টিয়া
০৮ খেতাবপ্রাপ্ত-৬৩৩ আবদুল আলিম সাহাপুর

স্বাধীনতার পরবর্তী সময় সম্পাদনা

বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশের প্রথম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলায় স্থাপন করা হয়।

 
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়-এর প্রধান ফটক

১৯৮৪ সালে ০১ মার্চ রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলাকে ভেঙে তিনটি জেলায় রূপান্তর করেন। এগুলো হলো কুষ্টিয়া জেলা, মেহেরপুর জেলাচুয়াডাঙ্গা জেলা‌

বর্তমান সময়ে সম্পাদনা

চিত্রশালা সম্পাদনা

স্থাপত্য শিল্প সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "জেলা হিসেবে অভ্যুদয়"জাতীয় তথ্য বাতায়ন - কুষ্টিয়া জেলা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-২০ 
  2. শাহজাহান আমান (২০২১-১০-১৫)। "ইতিহাসের পাতাজুড়ে যার গৌরব-ঐতিহ্য"বনিক বার্তা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৭ 
  3. "কুষ্টিয়া নামকরণ"বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন-কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৭ 
  4. "কুষ্টিয়া জেলার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস"সংগ্রামের নোটবুক। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-২০ 
  5. আল আমিন ইসলাম নাসিম (২০২০-১০-০৬)। "কুষ্টিয়ায় মুঘল স্থাপত্যের মসজিদ"দেশ রূপান্তর। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-১০ 
  6. আল আমিন ইসলাম নাসিম (২০২৩-০৬-১৬)। "কুষ্টিয়ার ঝাউদিয়া মসজিদ"যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-১০ 
  7. ড. মুহাম্মদ এমদাদ হাসনায়েন (২০২২-০১-১২)। "কুষ্টিয়ার 'কুশলীবাসা শাহী মসজিদ': মুঘল আমলের নন্দনশৈলীর নিদর্শন"ঢাকা প্রকাশ। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-১০ 
  8. এস.এম. জামাল (২০২১-১১-১৫)। "বাংলাদেশের প্রথম রেলওয়ে স্টেশন জগতে রেলওয়ে স্টেশন"বার্তা ২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৯ 
  9. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "শিল্প প্রতিষ্ঠান"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১৪ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০১৪ 
  10. শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথ, প্রমথনাথ বিশী, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, ১৩৯৫ সংস্করণ, পৃ. ১৮
  11. Dutta ও Robinson 1995, পৃ. 109–111
  12. "টেগর লজ"জাতীয় তথ্য বাতায়ন - কুষ্টিয়া জেলা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-২০ 
  13. "ইতিহাস ঐতিহ্য সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক রাজধানী কুষ্টিয়া"। দৈনিক সংগ্রাম। ৯ জুলাই ২০১২। ৬ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০১৪ 
  14. আহমদ ইশতিয়াক (২০২৩-০২-০৯)। "ভাষা আন্দোলনে কুষ্টিয়া"The Daily Star - বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-২০ 
  15. আবু ওসমান চৌধুরী (২০২০-০২-১২)। "মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরে কুষ্টিয়ায় প্রতিরোধ যুদ্ধ"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-২২ 
  16. "বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বিত তালিকা - কুষ্টিয়া জেলা"মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-২০ 
  17. "খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা"বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-২০