মহিষকুন্ডি, মহিষকুণ্ডি বা মহিষকুণ্ডী বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার পদ্মা নদীর তীরবর্তী একটি গ্রাম।

মহিষকুন্ডি
গ্রাম
রাতের বেলা মহিষকুন্ডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়
রাতের বেলা মহিষকুন্ডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়
মহিষকুন্ডি বাংলাদেশ-এ অবস্থিত
মহিষকুন্ডি
মহিষকুন্ডি
বাংলাদেশে মহিষকুন্ডির অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৪°৩′৬″ উত্তর ৮৮°৪৫′৩৬″ পূর্ব / ২৪.০৫১৬৭° উত্তর ৮৮.৭৬০০০° পূর্ব / 24.05167; 88.76000 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগখুলনা বিভাগ
জেলাকুষ্টিয়া জেলা
উপজেলাদৌলতপুর উপজেলা
ইউনিয়নপ্রাগপুর ইউনিয়ন
সরকার
 • চেয়ারম্যানমোঃ আশরাফুজ্জামান
আয়তন
 • মোট৮ বর্গকিমি (৩ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা
 • মোট১২,৭৪৩।
সাক্ষরতার হার
 • মোট৬১%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড৭০৫২ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
ওয়েবসাইটপ্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
মহিষকুন্ডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা
মহিষকুন্ডি কলেজ রোড

ভৌগোলিক অবস্থান সম্পাদনা

মহিষকুন্ডি বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগের অন্তর্গত কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী একটি প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন অঞ্চল। ব্রিটিশ শাসন আমলে তখনকার সময় মহিষকুন্ডি বাজারের নিকট বর্তমানে (মহিষকুন্ডি বাজার জামে মসজিদ) একটি নীলকুঠি স্থাপিত হয়েছিলো। ১৮০০ সালের দিকে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।[১] উত্তরে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের মধুগড়ি মৌজা ও পদ্মা নদী, দক্ষিণে প্রাগপুর, পূর্বে মথুরাপুর ও পশ্চিমে ভারত সীমান্ত। বাজারের মাঝ বরাবর দিয়ে গেছে কুষ্টিয়া-মহিষকুন্ডি প্রধান সড়ক। যেটি এই এলাকার প্রাধান সড়ক হিসেবে পরিচিত।

 
মহিষকুন্ডির উত্তরে প্রবাহিত পদ্মা নদী

প্রশাসনিক এলাকাসমূহ সম্পাদনা

মহিষকুন্ডি গ্রাম প্রাশাসনিকভাবে দুটি ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত। মহিষকুন্ডির উত্তর অংশ রামকৃষ্ণপুর এবং দক্ষিণ অংশ প্রাগপুর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত। তবে প্রাগপুরেই বৃহত্তর অংশ বিদ্যমান। রামকৃষ্ণপুরের অংশটি চর মহিষকুন্ডি এবং প্রাগপুর অংশ মহিষকুন্ডি মৌজার অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে গ্রামটি পাকুড়িয়া, জামালপুর, জয়পুর, মাদাপুর এবং আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের মূল বাজার হিসেবেও পরিচিত।

নামকরণ সম্পাদনা

মহিষকুন্ডি গ্রামের নামকরণ নিয়ে অনেক মজার মজার গল্প ছড়িয়ে আছে লোকমুখে। সবথেকে প্রচলিত গল্পটা একদম সাধারণ। এখানে নাকি অনেক মহিষ থাকতো সে কারনেই এই গ্রামের নাম মহিষকুন্ডি। অনেকে নীলকুঠি থেকে নামকরণের সূত্র খোজার চেষ্টা করেন। আরও অনেক গল্প ছড়িয়ে আছে। তবে সবথেকে সাম্প্রতিক ও প্রাসঙ্গিক মতবাদটি একটু অন্যরকম। মহিষকুন্ডি এর আদি নাম মহিষকুণ্ডী। বাংলা অভিধান অনুসারে কুণ্ডী শব্দের অর্থ পানি রাখার স্থানমহিষকুণ্ডী শব্দের অর্থ মহিষকে পানি খাওয়ানোর বা গা ধোয়ানোর স্থান। ধারণা করা হয় পদ্মা নদীর একটি বিশেষ এলাকাকে বা মহিষকুন্ডিতে অবস্থিত বর্তমান বিলকে মহিষকুণ্ডী বলা হতো। মহিষকুণ্ডী-এর সবথেকে কাছের গ্রামের নাম মহিষকুণ্ডী গ্রাম নামে পরিচিতি পায়। যা কালক্রমে মহিষকুন্ডি-তে পরিণত হয়।

ইতিহাস সম্পাদনা

ঠিক কবে নাগাদ মহিষকুন্ডিতে মানুষের বসবাস শুরু হয় সে সম্মন্ধে খুব বেশি কিছু জানা যায়নি। তবে এর নামকরন থেকে ধারণা করা হয় মধ্যযুগ থেকেই এখানে মানুষের যাতায়াত রয়েছে। ১৮০০ সালের দিকে এখানে একটি নীলকুঠি স্থাপন করে ব্রিটিশ সরকার। বর্তমান যেখানে মহিষকুন্ডি বাজার জামে মসজিদ রয়েছে। এই নীলকুঠি মহিষকুন্ডির টিকে থাকা সবথেকে প্রাচিন স্থাপনা।

বাঙালি হিন্দুরা মহিষকুন্ডির আদি বাসিন্দা। দেশভাগ ও তার পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে ভারত থেকে আসা মুসলমান রিফিউজিরা এখানে বসতি গড়তে থাকে। হিন্দুরা ভারতে পাড়ি দিতে থাকে। ফলে মুসলমান সম্প্রদায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। এই অঞ্চলে পদ্মার ভাঙন শুরু হলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা এখানে বসতি গড়তে থাকে। তখন থেকে এটি একটি ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে পরিনত হয়। এছাড়াও ব্রিটিশ আমলে স্বল্পসংখ্যক বাগদি সম্প্রদায় এখানে বসতি গড়ে তোলে। তারা সাধারণত মহিষকুন্ডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আশেপাশে থাকতো। দেশভাগের সময় তারা ভারত চলে যায়।

অল্প কিছু দোকান নিয়ে মহিষকুন্ডি বাজারের যাত্রা শুরু হয়। মহিষকুন্ডি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (স্থাপিত-১৯১৭), মহিষকুন্ডি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (স্থাপিত-১৯৬৩ ) ও মহিষকুন্ডি কলেজ (স্থাপিত-১৯৯৯) প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়াও বর্তমানে ২ টা মাদ্রাসা, ৮ টা মসজিদ,২ টা ঈদগাহ, ৩ টা কবরস্থান, ২ টি বিজিবি ক্যাম্প আছে । এখানেই ইউনিয়ন ভূমি অফিস অবস্থিত।

যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পাদনা

মহিষকুন্ডি বাজারের সাথে এর কাছাকাছি জেলা শহর ও উপজেলা শহর সহ অন্যান্য জেলায় যাবার সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে। জেলা শহর ও উপজেলা শহরে পরিবহনের জন্য এখানে মহাসড়ক আছে। সহজ যোগাযোগের জন্য রয়েছে বাস, থ্রি-হুইলার, ইজি বাইক, ভ্যান, অটোভ্যান ইত্যাদি।

নদীসমূহঃ পদ্মা নদী, মাথাভাঙ্গা নদী

ডাকঘরঃ মহিষকুন্ডি

পোষ্টকোডঃ ৭০৫২

জনসংখ্যার উপাত্ত সম্পাদনা

মহিষকুন্ডির জনসংখ্যা

  পূর্ব মহিষকুন্ডি (৫১.৭৮%)
  মহিষকুন্ডি (৩৫.১৯%)
  চর মহিষকুন্ডি (১৩.০৩%)

২০১১ সালের বাংলাদেশ আদমশুমারী অনুযায়ী মহিষকুন্ডির জনসংখ্যা ৭,৬৭৩ জন। পদ্মার ভাঙন,উন্নত জীবন যাপন ইত্যাদি কারণে গত এক দশকে এর জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে। জনসংখ্যার প্রায় সবাই ইসলাম ধর্মাবলম্বী। কিছুসংখ্যক হিন্দু জনগোষ্ঠীও বাস করেন। তাদের সংখ্যা ৩০০-এর উপরে হবেনা। [২]

অর্থনীতি সম্পাদনা

আয়ের সিংহভাগ অংশ আসে কৃষি থেকে। এখানকার মানুষের প্রধান কৃষি হচ্ছে ধান। সারাবছরই তারা ধানের চাষ করে। এছাড়া একেক মৌসুমে একেক রকম ফসল তৈরি করে এ অঞ্চলের মানুষেরা। যেমন গম, আলু, রসুন, পিঁঁয়াজ, পাট, মরিচ ইত্যাদি। এখানে পেয়াজের মৌসুমে পেয়াজের পাইকারি বাজার বসে। মহিষকুন্ডি মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণে এই বাজার বসে। সেটি অনেক শ্রমিককে কর্মের সুযোগ করে দেয়।

 
পেয়াজ শুকচ্ছেন একজন শ্রমিক

আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে ব্যবসা। অনেকে চাকুরিও করে থাকেন। মহিষকুন্ডি বাজারে সপ্তাহে দুইদিন সোমবার আর বৃহষ্পতিবার হাট বসে। হাটে নানা রকমের শাকসবজী,ফলমুল, মিষ্টি, খাদ্যদ্রব্য খুচরা ও পাইকারী ক্রয় বিক্রয় করা হয়।


প্রধান ফল-ফলাদিঃ  আম,জাম, কলা, কাঁঠাল, পেঁপে, লিচু, পেয়ারা, তাল,নারিকেল,

হোটেল/রেস্তোরাঃ এখানে ৪ টা ভালো মানের হোটেল আছে। এখানে মোটামুটি খাওয়া-দাওয়া করা যায়। এছাড়া দধি, মিষ্টি, দৈ, সার্বক্ষনিক পাওয়া যায়।

এনজিও: ব্র্যাক, আশা, বেঙ্গল, গ্রামীণ ব্যাংক

শিক্ষা সম্পাদনা

মসজিদ সমূহ সম্পাদনা

  • মহিষকুন্ডি বাজার জামে মসজিদ
  • মহিষকুন্ডি মাদ্রাসা জামে মসজিদ
  • ত্রিমোহনী জামে মসজিদ
  • মহিষকুন্ডি বালিকা বিদ্যালয় সংলগ্ন জামে মসজিদ
  • ডাকপাড়া জামে মসজিদ
  • ফাতেমাতুজ্জোহরা জামে মসজিদ
  • কারিগর পাড়া জামে মসজিদ

চিকিৎসা সম্পাদনা

এখানে ১টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আছে। তাছাড়া আরো অন্যান্য ছোটবড় বেসরকারি ক্লিনিক-ডায়াগোনেস্টিক সেন্টার রয়েছে।[৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা