বাঁকুড়া সদর মহকুমা

পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার একটি মহকুমা

বাঁকুড়া সদর মহকুমা হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাঁকুড়া জেলার একটি প্রশাসনিক বিভাগবাঁকুড়া পৌরসভা ও আটটি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক (বাঁকুড়া ১, বাঁকুড়া ২, বড়জোড়া, ছাতনা, গঙ্গাজলঘাটি, মেজিয়াশালতোড়া) নিয়ে এই মহকুমাটি গঠিত। এই আটটি সমষ্টি উন্নয়নের অধীনে দু’টি জনগণনাশহর (বড়জোড়াবেলিয়াতোড়) এবং ৭৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে।

বাঁকুড়া সদর মহকুমা
মহকুমা
উপর থেকে ঘড়ির কাঁটার ক্রমে: এক্তেশ্বর শিবমন্দির, আড়া গ্রামের সঙ্কেত মিনার, মহাদেবসিনান পাহাড়, রাজগ্রামের শ্রীধর মন্দির, শুশুনিয়া পাহাড়ে রাজা চন্দ্রবর্মণের শিলালিপি, বহুলাড়া গ্রামের সিদ্ধেশ্বর মন্দির, বাঁকুড়া শহরের রেল স্টেশন, সোনাতাপালের প্রাচীন সূর্যমন্দির
বাঁকুড়া জেলায় বাঁকুড়া সদর মহকুমার অবস্থান
বাঁকুড়া জেলায় বাঁকুড়া সদর মহকুমার অবস্থান
বাঁকুড়া সদর মহকুমা পশ্চিমবঙ্গ-এ অবস্থিত
বাঁকুড়া সদর মহকুমা
বাঁকুড়া সদর মহকুমা
বাঁকুড়া সদর মহকুমা ভারত-এ অবস্থিত
বাঁকুড়া সদর মহকুমা
বাঁকুড়া সদর মহকুমা
পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে বাঁকুড়া সদরের অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৩°১৫′ উত্তর ৮৭°০৪′ পূর্ব / ২৩.২৫° উত্তর ৮৭.০৭° পূর্ব / 23.25; 87.07
দেশ ভারত
রাজ্যপশ্চিমবঙ্গ
জেলাবাঁকুড়া
সদরবাঁকুড়া
আয়তন
 • মোট২,৫৯৬.১১ বর্গকিমি (১,০০২.৩৬ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)
 • মোট১৪,৩৯,১৪৮
 • জনঘনত্ব৫৫০/বর্গকিমি (১,৪০০/বর্গমাইল)
ভাষা
 • সরকারিবাংলা, ইংরেজি
সময় অঞ্চলভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+০৫:৩০)
আইএসও ৩১৬৬ কোডআইএস-ডব্লিউবি
যানবাহন নিবন্ধনডব্লিউবি
ওয়েবসাইটhttp://bankura.gov.in/

বাঁকুড়া সদর মহকুমা একটি ঘন জনবসতিপূর্ণ মহকুমা। এই মহকুমার জনঘনত্বের হার প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৫৫৪ জন। জেলার মোট জনসংখ্যার ৪০.১ শতাংশ এই মহকুমার অধিবাসী।[]

নাম-ব্যুৎপত্তি

সম্পাদনা

বাঁকুড়া সদর মহকুমার নামকরণ করা হয়েছে এই মহকুমার সদর বাঁকুড়া শহরের নামানুসারে। "বাঁকুড়া" নামটির ব্যুৎপত্তি প্রসঙ্গে একাধিক মত প্রচলিত রয়েছে। কোল-মুন্ডা ভাষায় "বাঁকু" শব্দের অর্থ "অত্যন্ত সুন্দর" এবং "ওড়া" বা "ড়া" শব্দের অর্থ "জনবসতি"। অপরপক্ষে, বাঁকুড়া নামটির উৎস বাংলা "বাঁকা" অর্থাৎ "বক্র" বা "বঙ্কিম" শব্দটিও হতে পারে, যা এই অঞ্চলের আঁকাবাঁকা গ্রাম্য পথের দ্যোতক। বাঁকুড়া জেলার সর্বাধিক প্রভাবশালী লোকদেবতা ধর্মঠাকুর স্থানীয়ভাবে "বাঁকুড়া রায়" নামে পূজিত হন। এই "বাঁকুড়া রায়" নামটি থেকেও শহরের নামকরণ হওয়া সম্ভব।[] একটি প্রথাগত বিশ্বাস অনুযায়ী, বাঁকুড়া শহরের নামকরণ হয়েছিল এই শহরের প্রতিষ্ঠাতা বাঁকু রায় নামে এক গোষ্ঠীপতির নামানুসারে। আবার অপর একটি কিংবদন্তি অনুযায়ী, এই শহরের নামকরণ করা হয়েছিল বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজা বীর হাম্বীরের পুত্র বীর বাঁকুড়ার নামানুসারে। বীর হাম্বীর তাঁর রাজ্যকে বাইশটি তরফ অর্থাৎ এলাকায় বিভক্ত করে তাঁর বাইশ পুত্রের প্রত্যেককে একটি করে তরফ দান করেছিলেন। জয়বেলিয়া তরফটি পড়েছিল বীর বাঁকুড়ার ভাগে। তিনিই তাঁর নামাঙ্কিত এই শহরটি গড়ে তুলেছিলেন। আবার বাঁকুড়া নামটিকে সংস্কৃত "বানকুণ্ড" (অর্থাৎ "পাঁচটি পুষ্করিণী") নামের অপভ্রংশও মনে করা হয়। পুরনো সরকারি নথিপত্রে ইংরেজি বাকুন্ডা (Bacoonda) বানানটি পাওয়া যায়।[]

ইতিহাস

সম্পাদনা

প্রাগৈতিহাসিক যুগ

সম্পাদনা

আনুমানিক ১২০০-১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ দ্বারকেশ্বর নদের উত্তর পাড়ে তাম্রযুগীয় মানবগোষ্ঠী বসতি স্থাপন করেছিল। বাঁকুড়া জেলার প্রাচীনতম মানববসতির নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে বিষ্ণুপুর মহকুমার অন্তর্গত ডিহরে[] প্রাগৈতিহাসিক যুগের শেষভাগে বিভিন্ন প্রত্ন-অস্ট্রালয়েড ও কয়েকটি প্রত্ন-দ্রাবিড়ীয় জাতিগোষ্ঠী এই জেলায় বসতি স্থাপন করেছিল। এই সব উপজাতি ছিল শিকারী-সংগ্রাহক, পশুপালক ও কৃষিজীবী।[][]

প্রাচীন যুগ

সম্পাদনা

সমগ্র বাঁকুড়া জেলা ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক দিক থেকে রাঢ় অঞ্চলের অন্তর্গত। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে লিখিত ঐতরেয় আরণ্যকে এই অঞ্চলের অধিবাসীদের "অসুর" নামে অভিহিত করা হয়েছিল। বর্তমান যুগেও এই জেলার বহু গ্রামের নাম এই অসুরদের নামের সঙ্গে যুক্ত। সেই যুগে বাংলার অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় রাঢ় অঞ্চলে আদিবাসি জনগোষ্ঠীগুলির সংখ্যা অধিক ছিল। নিষাদ (প্রত্ন-অস্ট্রালয়েড উপজাতি) ও "দাস-দস্যু" (দ্রাবিড় জাতিগোষ্ঠীর শাখাবিশেষ) ছিল এখানকার প্রধান দুই জাতিগোষ্ঠী। উপগোষ্ঠীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বাগদি, বাউড়ি, জেলে, হাড়ি, ডোম ও অন্যান্যেরা। সাঁওতাল ও মালপাহাড়িয়ারা সম্ভবত গোড়া থেকেই এই অঞ্চলের অধিবাসী ছিল।[] এই সব জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে খাদ্যাভ্যাস, পোষাকপরিচ্ছদ, ধর্ম, আচার-ব্যবহার সহ নানা বিষয়ে যেমন পার্থক্য ছিল, তেমন পারস্পরিক মেলামেশাও ছিল না; স্বগোষ্ঠীর বাইরে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন তো দূরের কথা।[] উত্তর ভারত থেকে আগত প্রত্ন-ইন্দো-আর্য জাতিগোষ্ঠীর মাধ্যমে এই অঞ্চলের আর্যীকরণের সূত্রপাত ঘটে। ফলে এই অঞ্চলে বর্ণভিত্তিক একটি সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠতে শুরু করে। পুরনো সমাজব্যবস্থার সঙ্গে কয়েক শতকে সংঘাত ও সহযোগিতার পরিবেশের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে এই আর্যীকরণের কাজ সম্পন্ন হয়েছিল।[] উল্লেখ্য, আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ-পঞ্চম শতাব্দীর বৌধায়ন ধর্মসূত্রে বলা হয়েছে, অঙ্গ (অধুনা পূর্ব বিহার) ও মধ্যদেশে (গঙ্গা-যমুনা দোয়াব অঞ্চল) আংশিক আর্যীকরণ সম্পন্ন হলেও পুণ্ড্র (অধুনা উত্তর বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের উত্তরদক্ষিণ দিনাজপুর জেলা), বঙ্গ (গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চল) ও কলিঙ্গ (দক্ষিণ ওডিশা ও উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশের অংশবিশেষ) কেবলমাত্র উত্তর ভারতীয় আর্যদের সংস্পর্শেই এসেছে।[]

সংস্কৃতপ্রাকৃত ভাষায় লিখিত শুশুনিয়া লিপি থেকে জানা যায়, খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে পুষ্করণার (অধুনা বাঁকুড়া সদর মহকুমার পোখরনা) রাজা সিংহবর্মণের পুত্র চন্দ্রবর্মণ প্রায় সমগ্র রাঢ়ে নিজ কর্তৃত্ব স্থাপন করে পূর্বে অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলা পর্যন্ত রাজ্যবিস্তার করেছিলেন।[][১০] এলাহাবাদ প্রশস্তি থেকে জানা যায়, গুপ্ত সম্রাট সমুদ্রগুপ্ত চন্দ্রবর্মণকে পরাজিত করেছিলেন এবং তার ফলে প্রাচীন বাংলায় গুপ্ত সাম্রাজ্যের প্রসারের পথ সুগম হয়েছিল।[১১] বর্ধমানভুক্তি (অধুনা পূর্বপশ্চিম বর্ধমান জেলা) ও দণ্ডভুক্তি (অধুনা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা) দীর্ঘকাল পুষ্করণার রাজাদের অধীনস্থ ছিল।[১২]

আনুমানিক খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে রচিত জৈন ধর্মগ্রন্থ আচারাঙ্গ সূত্রে সুহ্ম (পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল) ও "লাঢ়া" (রাঢ়) অঞ্চল দু’টিকে বর্বর জাতি অধ্যুষিত আখ্যা দেওয়া হয়েছে। কোনও কোনও ইতিহাসবিদ মনে করেন, বাংলায় আর্যীকরণের কাজ শুরু হয়েছিল উত্তর ও পূর্ববঙ্গ থেকে, পরে তা শুরু হয় পশ্চিমবঙ্গে। এই সময়েই বাংলায়, বিশেষত বাঁকুড়া জেলায় জৈনবৌদ্ধধর্ম প্রসার লাভ করে। খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে বাংলায় আর্যসভ্যতার প্রসারের একাধিক নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে।[] বাঁকুড়া সদর মহকুমার সোনাতাপালবহুলাড়ায় বেশ কিছু জৈন প্রত্নসামগ্রীর সন্ধান পাওয়া যায়, যেগুলিকে স্থানীয় অধিবাসীরা এখন হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি হিসেবে পূজা করেন।[১৩]

মল্লভূম রাজ্য

সম্পাদনা

খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দী থেকে ব্রিটিশ শাসনের সূচনাকাল পর্যন্ত প্রায় এক হাজার বছর সমগ্র বাঁকুড়া জেলার ইতিহাস বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজবংশের উত্থান ও পতনের সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত।[১৪] মল্ল রাজাদের উৎসব রহস্যাবৃত। তাঁরা নিজেদের উত্তর ভারতীয় ক্ষত্রিয় রাজপুত বংশোদ্ভূত বলে দাবি করলেও অনেক ইতিহাসবিদ তাঁদের বাগদি রাজা বলে উল্লেখ করে থাকেন। সংস্কৃত ভাষায় "মল্ল" শব্দের অর্থ মল্লযোদ্ধা। যদিও শব্দটির সঙ্গে এই অঞ্চলের মাল উপজাতির সম্পর্ক থাকাও সম্ভব। উল্লেখ্য, এই উপজাতির সঙ্গে বাগদিদের একটি সম্পর্ক রয়েছে।[১৪]

মল্লভূম রাজ্যের কেন্দ্রীয় এলাকাটি ছিল অধুনা বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর মহকুমা এবং বাঁকুড়া সদর মহকুমার বাঁকুড়া ১বাঁকুড়া ২, ওন্দা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক। তবে প্রাচীন মল্লভূম রাজ্যের আয়তন ছিল আরও বড়ো। সেই যুগে উত্তরে অধুনা ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সাহেবগঞ্জ-পাকুড়-গোড্ডা অঞ্চল (দামিন-ই-কোহ) থেকে দক্ষিণে পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা এবং পূর্বে পূর্ব বর্ধমান জেলা থেকে পশ্চিমে ছোটোনাগপুর মালভূমির একটি অংশ এই রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরবর্তীকালে ধলভূম (অধুনা খাতড়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক), তুঙ্গভূম (অধুনা রায়পুর সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক), সামন্তভূম (অধুনা ছাতনা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক) ও বরাভূমও (অধুনা পুরুলিয়া জেলার বলরামপুর সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকবাঘমুন্ডি পাহাড় অঞ্চল) মল্ল রাজারা নিজ অধিকারে আনেন।[১৪]

কিংবদন্তি অনুযায়ী, ৬৯৫ খ্রিস্টাব্দে আদিমল্ল মল্ল রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[১৪] তাঁর পুত্র জয়মল্ল বন-বিষ্ণুপুরে (অধুনা বিষ্ণুপুর) রাজধানী স্থানান্তরিত করেন।[১৪] এই রাজবংশের ৪৯শ শাসক বীর হাম্বীর ১৫৮৬ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন। তিনি শ্রীনিবাস আচার্যের নিকট গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ম গ্রহণ করেন। বীর হাম্বীরের পুত্র রঘুনাথ সিংহের শাসনকাল থেকেই মল্লভূম রাজ্যের সুবর্ণযুগের সূচনা ঘটে।[১৪] পারিবারিক নথি অনুযায়ী, বিষ্ণুপুরের রাজারা মুসলমান শাসকদের রাজস্ব প্রদান করলেও, অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে তারা স্বাধীনই ছিলেন। মুসলমান ঐতিহাসিকেরাও এই ব্যাপারে একই কথা লিখছেন। বিষ্ণুপুরের রাজারা করদ রাজা হলেও, মুর্শিদাবাদের দরবারে তাদের উপস্থিত থাকতে হত না। তবে মুর্শিদাবাদে তাদের একজন রাজপ্রতিনিধি থাকতেন।[১৪]

বাঁকুড়া জেলার বাঁকুড়া সদর মহকুমার বিভিন্ন স্থান
পৌ: পৌরসভা, জন: জনগণনা নগর, গ্রা: গ্রামীণ/ শহরাঞ্চলীয় কেন্দ্র, পা: পার্বত্য কেন্দ্র, ম: মন্দির, বাঁ: বাঁধ
ছোটো মানচিত্রে স্থানসংকুলান হেতু বড়ো মানচিত্রে প্রকৃত স্থাননির্দেশনায় সামান্য হেরফের হতে পারে

বাঁকুড়া সদর মহকুমার আয়তন ২,৫৯৬.১১ বর্গকিলোমিটার (১,০০২.৩৬ মা)।[১৫] এই মহকুমার উত্তর দিকে পশ্চিম বর্ধমান জেলা, পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে যথাক্রমে বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর মহকুমাখাতড়া মহকুমা এবং পশ্চিম দিকে পুরুলিয়া জেলা অবস্থিত।[] দামোদর নদ এই মহকুমাকে পশ্চিম বর্ধমান জেলার থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে।[১৬]

 
কারো পাহাড়ের পথ

ছোটোনাগপুর মালভূমির বহির্ভাগস্থ দু’টি উঁচু পাহাড় বাঁকুড়া সদর মহকুমার মধ্যে অবস্থিত – বিহারীনাথ (উচ্চতা ৪৪৮ মিটার (১,৪৭০ ফু)) ও শুশুনিয়া (উচ্চতা ৪৪০ মিটার (১,৪৪০ ফু))। এই মহকুমার শালতোড়া এলাকায় কয়েকটি ছোটো ছোটো টিলা দেখা যায়। এছাড়া রয়েছে মেজিয়া পাহাড় ও কারো পাহাড়ের মতো কয়েকটি ছোটো পাহাড়ও। মেজিয়া পাহাড়ের উচ্চতা মাত্র ৬০ মিটার (২০০ ফু)। মেজিয়াবাঁকুড়া শহরের মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থিত কারো পাহাড়ের উচ্চতা ১২০ মিটার (৩৯০ ফু)।[]

 

বাঁকুড়া সদর ও বিষ্ণুপুর মহকুমার উত্তর সীমান্ত বরাবর দামোদর নদ প্রায় ৭২ কিলোমিটার (৪৫ মা) প্রসারিত হয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলায় প্রবেশ করেছে। দামোদরের বন্যা এই দুই মহকুমায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটায়। বাঁকুড়া সদর মহকুমার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত শালি নদী দামোদরের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপনদী।[] দ্বারকেশ্বর নদ এই মহকুমার অপর একটি প্রধান নদী। এই নদী ছাতনা থানা এলাকায় বাঁকুড়া সদর মহকুমায় প্রবেশ করে বাঁকুড়া ১ওন্দা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ওন্দা থানা এলাকায় এই নদের অনেকগুলি শাখা অথবা পুরনো খাত বিদ্যমান। দ্বারকেশ্বরের প্রধান উপনদীগুলি হল গন্ধেশ্বরী, কুখড়া ও বিড়াই। গন্ধেশ্বরী নদীটি শুশুনিয়া পাহাড়ের উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে ভূতশহরের কাছে দ্বারকেশ্বরে পতিত হয়েছে।[] এই নদীটিতেও বর্ষাকালে হঠাৎ হঠাৎ বন্যা আসে।[] মেজিয়া বিল নামে একটি বৃহৎ জলাভূমিও দামোদরের বন্যায় প্লাবিত হয়।[]

জলবায়ু

সম্পাদনা

পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমের উচ্চভূমি অঞ্চলে পূর্ব বা দক্ষিণাঞ্চলের চেয়ে অনেক বেশি শুষ্ক। বাঁকুড়া সদর মহকুমা এই উচ্চভূমি অঞ্চলেরই একটি অংশ। মার্চ মাসের গোড়া থেকে জুন মাসের গোড়ার দিকে বর্ষা নামার আগে পর্যন্ত এই অঞ্চলে উষ্ণ পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত হয় এবং এখানকার তাপমাত্রা প্রায় ৪৫ °সে (১১৩ °ফা) পর্যন্ত উঠে যায়। সূর্যাস্তের সময় পশ্চিমা বায়ুর প্রভাব হ্রাস পায় এবং দক্ষিণ দিক থেকে আগত শীতল বায়ু বইতে শুরু করে। এই সময় প্রায়শই কালবৈশাখী ঝড় ওঠে, যা অত্যধিক উষ্ণতা হ্রাসে সহায়তা করে।[]

জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বর্ষাকাল। এই সময় এখানকার আবহাওয়া পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য অঞ্চলের মতো গুমোট থাকে না। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১,৪০০ মিলিমিটার (৫৫ ইঞ্চি)। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সর্বাধিক থাকে।[]

শীতকালের আবহাওয়া আরামদায়ক থাকে। ডিসেম্বরের তাপমাত্রা ২৭ °সে (৮১ °ফা)-এর নিচে নেমে যায়।[]

প্রশাসনিক বিভাগ

সম্পাদনা

বাঁকুড়া সদর মহকুমায় ৯টি থানা, ৮টি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক, ৮টি পঞ্চায়েত সমিতি, ৭৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ১,৩৮৪টি জনবসতিপূর্ণ গ্রাম, একটি পৌরসভা ও ৪টি জনগণনা নগর রয়েছে। বাঁকুড়া এই মহকুমার একমাত্র পৌরসভা। জনগণনা নগরগুলি হল ঝাঁটিপাহাড়ি, বড়জোড়া, ঘুটগড়্যাবেলিয়াতোড়। মহকুমার সদর বাঁকুড়া শহরে অবস্থিত।[১৭][১৮]

বাঁকুড়া সদর মহকুমার অন্তর্ভুক্ত থানাগুলির ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য ও এক্তিয়ারভুক্ত এলাকার বিবরণ নিম্নরূপ:[১৯]

থানা আয়তন
কিলোমিটার
পৌরসভা (পৌ.)/
জনগণনা নগর (জ.ন.)
সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক
বাঁকুড়া ৪৩৯ বাঁকুড়া (পৌ.) বাঁকুড়া ১, বাঁকুড়া ২
বাঁকুড়া সদর মহিলা ২,৫৯৬.১১ সকল শহরাঞ্চল বাঁকুড়া সদর মহকুমার অন্তর্গত সকল সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক
ছাতনা ৪৪১ ঝাঁটিপাহাড়ি (জ.ন.) ছাতনা
শালতোড়া ৩১২.৬২ শালতোড়া
মেজিয়া ১৬২.৯০ মেজিয়া
গঙ্গাজলঘাটি ৩৭১.২ গঙ্গাজলঘাটি
বড়জোড়া ২৩৯.৬০ বড়জোড়া (জ.ন.), ঘুটগড়্যা (জ.ন.) বড়জোড়া
বেলিয়াতোড় ২২২.৭১ বেলিয়াতোড় (জ.ন.) বড়জোড়া
ওন্দা ৪৯৯.৪১ ওন্দা

সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক

সম্পাদনা

বাঁকুড়া সদর মহকুমার অন্তর্গত সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকগুলি হল:[২০][২১]

 
সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক সদর আয়তন
কিলোমিটার
জনসংখ্যা
(২০১১)
তফসিলি জাতি % তফসিলি উপজাতি % সাক্ষরতার
হার %
জনগণনা
নগর
বাঁকুড়া ১ পুয়াবাগান ১৭১.০৯ ১০৭,৬৮৫ ৩৭.১০ ৬.০৯ ৬৮.৭৪
বাঁকুড়া ২ বিকনা ২২০.৮৪ ১৪০,৮৬৪ ২৯.৮১ ২.৪৯ ৭৩.৫৯
বড়জোড়া বড়জোড়া ৩৯৩.২৩ ২০২,০৪৯ ৩৩.৮৫ ১.৬৪ ৭১.৬৭
ছাতনা ছাতনা ৪৪৭.৪৭ ১৯৫,০৩৮ ২৯.৯৯ ২০.৫০ ৬৫.৭৩
গঙ্গাজলঘাটি অমরকানন ৩৬৬.৪৭ ১৮০,৯৭৪ ৩৫.২৭ ৩.৯৬ ৬৮.১১
মেজিয়া মেজিয়া ১৬২.৮৭ ৮৬,১৮৮ ৩৪.১৯ ২.৪৫ ৬৬.৮৩
ওন্দা ওন্দা ৫০২.৪৬ ২৫২,৯৮৪ ৩৩.১৮ ৪.৯২ ৬৫.৮২
শালতোড়া শালতোড়া ৩১২.৬২ ১৩৫,৯৮০ ৩৪.১৯ ১৮.৯০ ৬১.৪৫

গ্রাম পঞ্চায়েত

সম্পাদনা

বাঁকুড়া সদর মহকুমার আটটি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের অধীনে মোট ৭৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে:[২২]

  • বাঁকুড়া ১ ব্লকটি ছয়টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত: আঁচুড়ি, জগদ্দল ১, কালাপাথর, আন্ধারথাউল, জগদ্দল ২ ও কেঞ্জাকুড়া।
  • বাঁকুড়া ২ ব্লকটি সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত: বিকনা, কোষ্ঠিয়া, নাড়া, সানবান্ধা, জানবেদিয়া, মানকানালি ও পুরন্দরপুর।
  • বড়জোড়া ব্লকটি ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত: বড়জোড়া, ছন্দর, হাতাসুরিয়া, পোখোন্না, বেলিয়াতোড়, ঘুটগড়্যা, খানরাড়ি, শাহারজোড়া, বৃন্দাবনপুর, গোদারডিহি ও মালিয়াড়া।
  • ছাতনা ব্লকটি ১৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত: আড়া, ধাবান, জিড়া, তেঘড়ি, চিনাবাড়ি, ঘোষেরগ্রাম, মেট্যালা, ছাতনা ১, জামতোড়া, শালডিহা, ছাতনা ২, ঝুঞ্ঝকা ও শুশুনিয়া।
  • গঙ্গাজলঘাটি ব্লকটি ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত: বানাসুরিয়া, গঙ্গাজলঘাটি, লছমনপুর, পিরাবনি, বারাসোল, গোবিন্দধাম, লাটিয়াবনি, ভক্তবাঁধ, কাপিসতা ও নিত্যানন্দপুর।
  • মেজিয়া ব্লকটি পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত: অর্ধগ্রাম, কুশতোড়, রামচন্দ্রপুর, বানজোড়া ও মেজিয়া।
  • ওন্দা ব্লকটি ১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত: চিংগানি, লোদনা, নিকুঞ্জপুর, রামসাগর, চূড়ামণিপুর, মাজডিহা, ওন্দা ১, রতনপুর, কল্যাণী, মেদিনীপুর, ওন্দা ২, সানতোড়, কান্তবাড়ি, নাকাইজুড়ি ও পুনিসোল।
  • শালতোড়া ব্লকটি আটটি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত: বামুনতোড়, গোগড়া, পাবড়া, শালতোড়া, ঢেকিয়া, কানুড়ি, সালমা ও তিলুড়ি।

অর্থনীতি

সম্পাদনা

বাঁকুড়া সদর মহকুমার বিহারীনাথ এলাকায় কয়লাস্তর রয়েছে। বিহারীনাথ ব্লকটি দামোদরোত্তর অঞ্চলের রানিগঞ্জ কয়লাক্ষেত্রের দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চল। সমগ্র এলাকাটি পলিমাটিতে আবৃত।[২৩]

শিক্ষাব্যবস্থা

সম্পাদনা

২০১১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাঁকুড়া জেলার সার্বিক সাক্ষরতার হার ৭০.২৬ শতাংশ; নির্দিষ্টভাবে বাঁকুড়া সদর মহকুমার সাক্ষরতার হার ৬৯.৫৬ শতাংশ, খাতড়া মহকুমার ৬৯.৭৯ শতাংশ এবং বিষ্ণুপুর মহকুমার সাক্ষরতার হার ৭১.৬০ শতাংশ।[২৪]

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

সম্পাদনা

নিম্নলিখিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি বাঁকুড়া সদর মহকুমায় অবস্থিত:

স্বাস্থ্যব্যবস্থা

সম্পাদনা

বাঁকুড়া সদর মহকুমার স্বাস্থ্য পরিষেবার চিত্রটি নিম্নরূপ:

হাসপাতাল: (নাম, অবস্থান, শয্যাসংখ্যা) [৪১]

গ্রামীণ হাসপাতাল: (নাম, সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক, অবস্থান, শয্যাসংখ্যা) [৪২]

  • গঙ্গাজলঘাটি (অমরকানন) গ্রামীণ হাসপাতাল, গঙ্গাজলঘাটি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক, ডাকঘর অমরকানন, ৩০টি শয্যা
  • আঁচুড়ি গ্রামীণ হাসপাতাল, বাঁকুড়া ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক, আঁচুড়ি, ৩০টি শয্যা
  • ছাতনা গ্রামীণ হাসপাতাল, ছাতনা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক, ছাতনা, ৩০টি শয্যা
  • শালতোড়া গ্রামীণ হাসপাতাল, শালতোড়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক, শালতোড়া, ৩০টি শয্যা
  • বড়জোড়া গ্রামীণ হাসপাতাল, বড়জোড়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক, বড়জোড়া, ৩০টি শয্যা
  • ওন্দা গ্রামীণ হাসপাতাল, ওন্দা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক, ডাকঘর মেদিনীপুর গ্রাম, ৩০টি শয্যা

ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র: (নাম, সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক, অবস্থান, শয্যাসংখ্যা)[৪৩]

  • কাঞ্চনপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বাঁকুড়া ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক, কাঞ্চনপুর, ১৫টি শয্যা
  • মেজিয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মেজিয়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক, মেজিয়া, ২৫টি শয্যা

প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র: (সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক-ভিত্তিক) (সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অবস্থান, শয্যাসংখ্যা)[৪৪]

  • বাঁকুড়া ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক: হেলনা শুশুনিয়া (১০), কাঞ্জাকুড়া (১০)
  • বাঁকুড়া ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক: নাড়া (৪), মানকানালি (১০)
  • ছাতনা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক: জোড়িয়া (১০), শালচূড়া (কমলপুর) (২), ঝাঁটিপাহাড়ি (৬), ভগবানপুর (৬)
  • শালতোড়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক: গোগড়া (১০), ইতুড়ি (তিলুড়ি) (১০), কাশতোড়া (৬)
  • গঙ্গাজলঘাটি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক: গঙ্গাজলঘাটি (৪), রামহরিপুর (৪), শ্রীচন্দ্রপুর (১০)
  • মেজিয়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক: রামচন্দ্রপুর (৪), পায়রাসোল (১০)
  • বড়জোড়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক: বেলিয়াতোড় (১০), ছন্দর (৪), গোদারডিহি (জগন্নাথপুর) (৪), পাখান্না (১০)
  • ওন্দা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক: রতনপুর (১০), নাকাইজুড়ি (ঘোড়াসোল) (১০), রামসাগর (১০), সানতোড় (গড় কোটালপুর) (১০), নিকুঞ্জপুর (১০)

দর্শনীয় স্থান

সম্পাদনা

এক্তেশ্বর শিবমন্দির

সম্পাদনা

বাঁকুড়া শহরের উপকণ্ঠে দ্বারকেশ্বর নদের তীরে অবস্থিত এক্তেশ্বর অঞ্চলে একটি প্রাচীন শিবমন্দির অবস্থিত। অনেকে এই মন্দিরের শিবকে "একপাদেশ্বর" মনে করেন, যা শিবের একটি বিরল রূপভেদ।[৪৫] যদিও বর্তমানে পূজিত বিগ্রহটি একপাদেশ্বরের নয়। অতীতে কখনও তা ছিল কিনা তাও নিশ্চিতরূপে বলা যায় না। স্থানীয় কিংবদন্তি অনুযায়ী, এক্তেশ্বরের শিব স্বয়ং মল্লভূমসামন্তভূম রাজ্যের সীমানা-সংক্রান্ত বিবাদ মীমাংসা করেছিলেন।[৪৬] এক্তেশ্বর শিবের নামানুসারেই এই অঞ্চলের নামকরণ হয়েছিল। মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজবংশ। আদি মন্দিরটি ল্যাটেরাইট পাথরে নির্মিত হয়। পরবর্তীকালে বেলেপাথর ও ইটের কিছু অংশ এই মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত হয়। মন্দিরটির কিছু বিশেষত্ব রয়েছে। এই মন্দিরের গঠন অত্যন্ত শক্তপোক্ত, যা সচরাচর বাংলার মন্দিরগুলিতে দেখা যায় না। তাছাড়া মন্দিরটি বাংলার মন্দির স্থাপত্যশৈলী অনুযায়ী নির্মিত হয়নি। মন্দিরের উপরিভাগ সম্ভবত ভগ্ন, তাই এটিকে অসম্পূর্ণ দেখায়।[৪৭] চৈত্র মাসে চড়ক পূজা এই মন্দিরের একটি প্রধান উৎসব।[৪৮]

সোনাতাপালের সূর্যমন্দির

সম্পাদনা

বাঁকুড়া শহরের কাছে অবস্থিত এক্তেশ্বরের ৩.২ কিলোমিটার (২.০ মা) উত্তর-পূর্বে দ্বারকেশ্বর নদের তীরে অবস্থিত সোনাতাপালে একটি বৃহৎ সূর্যমন্দির অবস্থিত।[৪৯] কথিত আছে, মন্দিরটি বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজবংশ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত। মন্দিরটি লক্ষণীয়ভাবে শক্তপোক্ত ও দীর্ঘাকৃতি ইষ্টকনির্মিত রেখ দেউল শৈলীর মন্দির।[৫০] মন্দিরের কাছেই নিচু জমিতে বেশ কয়েকটি ঢিপি দেখা যায়। কথিত আছে, নদীর তীরবর্তী ঢিপিগুলি রাজা শালিবাহনের "গড়" বা দুর্গের অংশবিশেষ ছিল।[৪৯]

বহুলাড়া সিদ্ধেশ্বর মন্দির

সম্পাদনা

বাঁকুড়া সদর মহকুমার ওন্দা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে দ্বারকেশ্বর নদের তীরে বহুলাড়া গ্রামে সিদ্ধেশ্বর শিবমন্দিরটি এক স্বতন্ত্র স্থাপত্যশৈলী ও মন্দিরগাত্রের সুন্দর কারুকার্যের জন্য বিখ্যাত।[৫১] ১৯.২ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট মন্দিরটি পালযুগের রেখ দেউল শৈলীর একটি বিশিষ্ট নিদর্শন। মন্দিরের অভ্যন্তরে শিবলিঙ্গ, গণেশ, মহিষাসুরমর্দিনীর পাশাপাশি জৈন তীর্থংকর পার্শ্বনাথের একটি মূর্তিও শিবের সহচর রূপে পূজিত হয়। মন্দিরচত্বরটি একাধিক প্রাচীন ধ্বংসস্তুপ ও ঢিবিতে পরিপূর্ণ।[৫২] এই ঢিবিগুলিতে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য চালিয়ে প্রাপ্ত প্রত্নবস্তুগুলি দেখে অনুমান করা হয় যে, অতীতে কোনও এক সময়ে এটি একটি বৌদ্ধ কেন্দ্র ছিল এবং ঢিবিগুলি ছিল বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দেহাবশেষের উপর নির্মিত চৈত্য। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দী নাগাদ এই অঞ্চলে শৈবধর্মের প্রসারের আগে এখানে বৌদ্ধ ও জৈনধর্মের বিশেষ প্রভাব ছিল।[৫৩] নলিনীকান্ত ভট্টশালীর মতে, "…বহুলাড়ার সিদ্ধেশ্বর মন্দির সম্ভবত মধ্যযুগীয় বাংলার ইষ্টকনির্মিত 'রেখ দেউল' মন্দিরশৈলীর শ্রেষ্ঠ নিদর্শন।" মন্দিরে শীর্ষভাগ বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত। প্রতি বছর চৈত্র মাসে এই মন্দিরে তিনদিনব্যাপী গাজন উৎসবে বহু পূণ্যার্থী যোগ দিতে আসেন।[৫৪]

শুশুনিয়া

সম্পাদনা

বাঁকুড়া সদর মহকুমার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ছাতনা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের সদর ছাতনা থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত শুশুনিয়া পাহাড় এই মহকুমার একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র।[৫৫] এই পাহাড়টির উচ্চতা ৪৪০ মিটার (১,৪৪০ ফু)।[] পাহাড়টি একটি প্রত্নস্থল তথা পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।[৫৬] শুশুনিয়া পাহাড় ও তার আশেপাশের অঞ্চল থেকে প্রাচীনমধ্য প্রস্তরযুগের বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র এবং প্রাগৈতিহাসিক হাতি, মোষ, ঘোড়া প্রভৃতি প্রাণীর জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়েছে।[৫৭] খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীতে পুষ্করণার (অধুনা পোখরনা) রাজা চন্দ্রবর্মণের একটি শিলালিপিও পাওয়া গিয়েছে শুশুনিয়া থেকে।[৫৮] শুশুনিয়ার কাছে ছাতনা থানা এলাকার বিন্ধ্যজাম গ্রাম ও শালতোড়া থানা এলাকার নেতকমলা গ্রাম এই মহকুমার দু’টি প্রসিদ্ধ ডোকরা শিল্পকেন্দ্র।[৫৯]

বিহারীনাথ

সম্পাদনা
 
বিহারীনাথ পাহাড়

বাঁকুড়া সদর মহকুমার শালতোড়া থানা এলাকার বিহারীনাথ পাহাড় একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র। ৪৫১ মিটার (১,৪৮০ ফু)উচ্চতাবিশিষ্ট এই পাহাড়টি বাঁকুড়া জেলার উচ্চতম পাহাড় তথা জেলার একটি গভীর বনাঞ্চল।[৬০] বিহারীনাথ অঞ্চলে আদিম প্রস্তর যুগের প্রত্নবস্তু আবিষ্কৃত হওয়ার পর এই এলাকা প্রত্নতত্ত্ববিদদের আগ্রহ সৃষ্টি করে।[৬১] এখানে ০.৫০ হেক্টরের একটি ছোটো পুকুরে মাছ ধরার সুবিধে পাওয়া যায়। বিহারীনাথের কাছেই একটি প্রাচীন শিবমন্দিরও রয়েছে।[৬২]

নির্বাচনী কেন্দ্র

সম্পাদনা

বাঁকুড়া জেলার অন্তর্গত লোকসভাবিধানসভা কেন্দ্রগুলির বিবরণ নিচে দেওয়া হল:[৬৩]

লোকসভা কেন্দ্র বিধানসভা কেন্দ্র সংরক্ষণ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক এবং/অথবা গ্রাম পঞ্চায়েত
বাঁকুড়া রঘুনাথপুর তফসিলি জাতি পুরুলিয়া জেলায় অবস্থিত
শালতোড়া তফসিলি জাতি শালতোড়ামেজিয়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক; গঙ্গাজলঘাটি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের বানাসুরিয়া, বরাশাল, লছমনপুর ও লাটিয়াবনি গ্রাম পঞ্চায়েত
ছাতনা অসংরক্ষিত ছাতনা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক; ইঁদপুর সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের ভেদুয়াশোল, ব্রাহ্মণডিহা, হাটগ্রাম, ইঁদপুর ও রঘুনাথপুর গ্রাম পঞ্চায়েত
রানিবাঁধ তফসিলি উপজাতি রানিবাঁধ, হীরবাঁধখাতড়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক
রায়পুর তফসিলি জাতি রায়পুরসারেঙ্গা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক
তালড্যাংরা অসংরক্ষিত তালড্যাংরা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের বিবরদা, ফুলমতী, হাড়মাসড়া, খালগ্রাম, পাঁচমুড়া ও তালড্যাংরা গ্রাম পঞ্চায়েত; ইঁদপুর সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের ব্রজরাজপুর ও গৌরবাজার গ্রাম পঞ্চায়েত; সিমলাপাল সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক
বাঁকুড়া অসংরক্ষিত বাঁকুড়া পৌরসভা; বাঁকুড়া ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক; বাঁকুড়া ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের জুনবেদিয়া, মানকানালি ও পুরন্দরপুর গ্রাম পঞ্চায়েত
বিষ্ণুপুর (তফসিলি জাতি) বড়জোড়া অসংরক্ষিত বড়জোড়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক; গঙ্গাজলঘাটি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের ভক্তবাঁধ, গঙ্গাজলঘাটি, গোবিন্দধাম, কাপিস্তা, নিত্যানন্দপুর ও পিরাবনি গ্রাম পঞ্চায়েত
ওন্দা অসংরক্ষিত ওন্দা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক; বাঁকুড়া ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের বিকনা, কোষ্ঠিয়া, নাড়া ও সানবান্ধা গ্রাম পঞ্চায়েত
বিষ্ণুপুর অসংরক্ষিত বিষ্ণুপুর পৌরসভা; বিষ্ণুপুর সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক; তালড্যাংরা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের আমড্যাংরা, শালতোড়া ও সাতমৌলি গ্রাম পঞ্চায়েত
কোতুলপুর তফসিলি জাতি কোতুলপুর সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের দেশড়া-কোয়ালপাড়া, গোপীনাথপুর, কোতুলপুর, লেগো, মির্জাপুর ও সিহড় গ্রাম পঞ্চায়েত; জয়পুর সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের গেলিয়া, জগন্নাথপুর, কুচিয়াকোল, ময়নাপুর, শালদা, উত্তরবাঢ়, হেতিয়া, রৌতখণ্ড ও শ্যামনগর গ্রাম পঞ্চায়েত
ইন্দাস তফসিলি জাতি ইন্দাস সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক; পাত্রসায়ের সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের বলসি ১, বলসি ২, বিউর বেতুড়, জামকুড়ি ও কুশদ্বীপ গ্রাম পঞ্চায়েত; কোতুলপুর সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের লাউগ্রাম ও মদনমোহনপুর গ্রাম পঞ্চায়েত
সোনামুখী তফসিলি জাতি সোনামুখী পৌরসভা; সোনামুখী সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক; পাত্রসায়ের সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের বেলুত রসুলপুর, বীরসিংহ, হামিরপুর, নারায়ণপুর ও পাত্রসায়ের গ্রাম পঞ্চায়েত
খণ্ডঘোষ অসংরক্ষিত পূর্ব বর্ধমান জেলায় অবস্থিত

বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "District Statistical Handbook 2014 Bankura"Table 2.2। Department of Planning and Statistics, Government of West Bengal। ২১ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মে ২০২০ 
  2. "Welcome to Historical Details of Bankura"Origin of Name। www.bankura,org। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুলাই ২০০৯ 
  3. O’Malley, L.S.S., ICS, Bankura, Bengal District Gazetteers, pp. 1-20, first published 1908, 1995 reprint, Government of West Bengal
  4. Das, Dipak Ranjan। "Dihar"Banglapedia। Asiatic Society of Bangladesh। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৭-১২ 
  5. Ghosh, Binoy, Paschim Banger Sanskriti, (in Bengali), part I, 1976 edition, p. 62, Prakash Bhaban
  6. Ray, Nihar Ranjan, Bangalir Itihas Adi Parba, (in Bengali), 1980 edition, pp. 276-281, Paschim Banga Niraksharata Durikaran Samiti
  7. Ghosh, Binoy, pp. 328-331
  8. Ghosh, Binoy, pp. 60-61
  9. Majumdar, R.C., History of Ancient Bengal, pp. 32, 444, Tulshi Prakashani.
  10. Ghosh, Binoy, Paschim Banger Sanskriti, (in Bengali), part I, 1976 edition, pp. 408-409, Prakash Bhaban
  11. Sengupta, Nitish, History of the Bengali-speaking People, p.21, UBS Publishers’ Distributors Pvt. Ltd.
  12. Ghosh, Binoy, Paschim Banger Sanskriti, (in Bengali), part I, 1976 edition, pp. 82-86, Prakash Bhaban
  13. "Temples and Legends of Bengal"Bankura। Hindu Books। ২০১১-০৬-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৭-১২ 
  14. O’Malley, L.S.S., ICS, Bankura, Bengal District Gazetteers, pp. 21-46, 1995 reprint, Government of West Bengal
  15. "District Statistical Handbook 2014 Bankura"Tables 2.1, 2.2। Department of Planning and Statistics, Government of West Bengal। ২১ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মে ২০২০ 
  16. "Bankura, West Bengal"Location and extent। District administration। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-২০ 
  17. "District Statistical Handbook 2014 Bankura"Table 2.1। Department of Planning and Statistics, Government of West Bengal। ২১ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মে ২০২০ 
  18. "Directory of District, Sub division, Panchayat Samiti/ Block and Gram Panchayats in West Bengal, March 2008"West Bengal। National Informatics Centre, India। ১৯ মার্চ ২০০৮। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ 
  19. "District Statistical Handbook 2014 Bankura"Tables 2.1, 2.2। Department of Planning and Statistics, Government of West Bengal। ২১ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মে ২০২০ 
  20. "Provisional population totals, West Bengal, Table 4, Bankura District"Census of India 2001। Census Commission of India। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ আগস্ট ২০১৬ 
  21. "C.D. Block Wise Primary Census Abstract Data(PCA)"2011 census: West Bengal – District-wise CD Blocks। Registrar General and Census Commissioner, India। সংগ্রহের তারিখ ২৯ আগস্ট ২০১৬ 
  22. "Directory of District, Subdivision, Panchayat Samiti/ Block and Gram Panchayats in West Bengal"Bankura – Revised in March 2008। Panchayats and Rural Development Department, Government of West Bengal। সংগ্রহের তারিখ ২৭ আগস্ট ২০১৬ 
  23. "Salient Features"। Coal ministry। ২০০৭-১২-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৩-১৯ 
  24. "District Statistical Handbook 2014 Bankura"Basic data: Table 4.4, 4.5, Clarifications: other related tables। Department of Planning and Statistics, Government of West Bengal। ২১ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মে ২০২০ 
  25. "Bankura University"। Bankura University। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  26. "Bankura Sammilani Medical College"। BSMC। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  27. "Bankura Unnayani Institute of Engineering"। BUIE। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  28. "Bankura Christian College"। BCC। ১৩ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  29. "Bankura Sammilani College"। BSC। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  30. "Bankura Zilla Saradamani Mahila Mahavidyapith"। BZSM College। ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  31. "Saldiha College"। Saldiha College। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  32. "Gobinda Prasad Mahavidyalaya"। GPV। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  33. "Barjora College"। Barjora College। ৮ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  34. "Jamini Roy College"। JRC। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  35. "Jamini Roy College"। College Admission। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  36. "Saltora Netaji Centenary College"। SNCC। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  37. "Chhatna Chandidas Mahavidyalaya"। icbse। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  38. "Onda Thana Mahavidyalaya"। OTM। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  39. "Government General Degree College at Mejia (Gopalpur)"। GGDC। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  40. "Bidhan Chandra Krishi Vishwavidyalaya"Extended campus of BCKV, Bankura, College of Agriculture। BCKV। ৩০ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  41. "Health & Family Welfare Department" (পিডিএফ)Health Statistics - Hospitals। Government of West Bengal। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ এপ্রিল ২০২০ 
  42. "Health & Family Welfare Department" (পিডিএফ)Health Statistics – Rural Hospitals। Government of West Bengal। ৮ অক্টোবর ২০২২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ এপ্রিল ২০২০ 
  43. "Health & Family Welfare Department" (পিডিএফ)Health Statistics – Block Primary Health Centres। Government of West Bengal। ১৬ আগস্ট ২০২০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ এপ্রিল ২০২০ 
  44. "Health & Family Welfare Department" (পিডিএফ)Health Statistics – Primary Health Centres। Government of West Bengal। ২১ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ এপ্রিল ২০২০ 
  45. "Abodes of Shiva"। Temple Net। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৮-১৫ 
  46. Ghosh, Binoy, p. 367
  47. Ghosh, Binoy, Paschim Banger Sanskriti, (in Bengali), part I, 1976 edition, p. 368, Prakash Bhaban
  48. O’Malley, L.S.S., ICS, Bankura, Bengal District Gazetteers, pp. 195–199, 1995 reprint, first published 1908, Government of West Bengal
  49. O’Malley, L.S.S., ICS, Bankura, Bengal District Gazetteers, pp. 207–209, 1995 reprint, first published 1908, Government of West Bengal
  50. McCutchion, David J., Late Mediaeval Temples of Bengal, first published 1972, reprinted 2017, pages 3,13. The Asiatic Society, Kolkata, আইএসবিএন  ৯৭৮-৯৩-৮১৫৭৪-৬৫-২
  51. "Incredible India"West Bengal। India tourism। ২০০৮-০৩-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৩-১৭ 
  52. "Bahulara"West Bengal। blessingsonthenet.com। ২০০৭-১১-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৩-১৭ 
  53. Ghosh, Binoy, Paschim Banger Sanskriti, (in Bengali), part I, 1976 edition, p. 363, Prakash Bhaban
  54. "Temples of West Bengal"Siddheswari temple। Hindu Links Universe। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৩-১৭ 
  55. Social Search, 1995. Published by Bankura Exploration Nature Academy, Kenduadihi, Bankura 722102, West Bengal, India.
  56. "Rock Climbing"। ২০১২-০৩-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৩-১৯ 
  57. প্রাগৈতিহাসিক শুশুনিয়া, পরেশচন্দ্র দাশগুপ্ত, প্রত্নতত্ত্ব ও সংগ্রহালয় অধিকার, তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার, কলকাতা, ২০১৯ সংস্করণ, পৃ. ১৫-২২
  58. Majumdar, R.C., History of Ancient Bengal, pp. 32, 444, Tulshi Prakashani.
  59. Ghosh, Binoy, Paschim Banger Sanskriti, (in Bengali), part I, 1976 edition, pp. 408-409, Prakash Bhaban
  60. "Biharinath"West Bengal। india9.com। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৩-১৭ 
  61. "Status of Prehistoric studies in the twenty first century in India" (পিডিএফ)C01-13 Progress of Prehistory in Bengal: a cultural overview। UISPP / IUPPS │ XV Congress। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৩-১৩ 
  62. "Biharinath"। District administration। ২০১২-০৯-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৩-১৯ 
  63. "Delimitation Commission Order No. 18 dated 15 February 2006" (পিডিএফ)West Bengal। Election Commission of India। ১৯ জুন ২০০৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০১৬