চন্দ্রবর্মণ (খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দী) ছিলেন প্রাচীন বঙ্গের পুষ্করণা রাজ্যের একজন রাজা। এই রাজ্যটি অধুনা পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলা থেকে বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলা পর্যন্ত ভূখণ্ড জুড়ে বিস্তৃত ছিল।[১][২] গুপ্ত সাম্রাজ্যের উত্থানের অব্যবহিত পূর্বে এই রাজ্যটি স্থাপিত হয়েছিল এবং এটি পূর্ববঙ্গের (অধুনা বাংলাদেশ) সমতট রাজ্যের পশ্চিমে অবস্থিত ছিল।[১]

রাজা চন্দ্রবর্মণের শিলালিপি, শুশুনিয়া, বাঁকুড়া জেলা

চন্দ্রবর্মণ ছিলেন রাজা সিংহবর্মণের পুত্র। তিনি তাঁর রাজ্য পূর্ব দিকে অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলা পর্যন্ত বিস্তৃত করেন।[১] ৩১৫ খ্রিস্টাব্দে চন্দ্রবর্মণ প্রাচীন চন্দ্রদ্বীপের সমুদ্রবন্দর ও শাসনকেন্দ্র নব্যাবকাশিকার অঞ্চল জয় করে ৩০ ফুট উঁচু একটি মাটির দুর্গ (“কোট”) নির্মাণ করেন। এই দুর্গপ্রাচীরের দৈর্ঘ্য পূর্ব-পশ্চিমে ছিল ৪.৪৫ কিলোমিটার ও উত্তর-দক্ষিণে ছিল ৩ কিলোমিটার। দুর্গটি পরিচিত ছিল “চন্দ্রবর্মণ কোট” নামে এবং দুর্গপ্রাচীরের রক্ষকদের বলা হত “কোটপাল”। অধুনা বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার অন্তর্গত কোটালীপাড়া শহরটির নামের উৎপত্তি ঘটে এই “কোট” বা “কোটপালে”র নামানুসারে।[৩]

গুপ্ত সম্রাট সমুদ্রগুপ্তের এলাহাবাদ প্রশস্তি অনুযায়ী, সমুদ্রগুপ্ত চন্দ্রবর্মণকে পরাজিত করেছিলেন এবং তারপরেই এই অঞ্চল গুপ্ত সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল:[১]

"(এল. ২১.)- (সমুদ্রগুপ্ত,) যিনি রাজকীয় ক্ষমতার প্রাচুর্যে ভূষিত ছিলেন[। সেই ক্ষমতা] বৃদ্ধি পেয়েছিল রুদ্রদেব, মতিল, নাগদত্ত, চন্দ্রবর্মণ, গণপতিনাগ, নাগসেন, অচ্যুতনন্দিন্, বলবর্মণ ও আর্যাবর্তের অন্য অনেক রাজার [রাজ্য] তীব্র আক্রমণে ধ্বংস করে; যিনি অরণ্যরাজ্যসমূহের সকল রাজন্যবর্গকে নিজ দাসে পরিণত করেছিলেন।"

অপরপক্ষে মালোয়ার মন্দসাউরে প্রাপ্ত শিলালিপিতেও চন্দ্রবর্মণের নাম পাওয়া যায়।[২]

চন্দ্রবর্মণের পরাজয় বাংলায় গুপ্ত সার্বভৌমত্বের পথ সুগম করে।[১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Ancient Indian History and Civilization, Sailendra Nath Sen, New Age International, 1999, p.274
  2. A History of Ancient and Early Medieval India: From the Stone Age to the 12th Century, Upinder Singh, Pearson Education India, 2008 p.477
  3. খান, শামসুজ্জামান (জুন ২০১৩)। বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা : গোপালগঞ্জ। ঢাকা: বাংলা একাডেমি। পৃষ্ঠা ২৫। আইএসবিএন 984-07-5316-9