এলাহাবাদ স্তম্ভ মৌর্য্য সাম্রাজ্যের সময়কালে নির্মিত একটি অশোক স্তম্ভ। এই স্তম্ভ মৌর্য্য সম্রাট অশোকের লিপি ছাড়াও[]: গুপ্ত সম্রাট সমুদ্রগুপ্তের প্রশস্তি উৎকীর্ণ রয়েছে। [] এই স্তম্ভে সপ্তদশ শতাব্দীর মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের লিপিও বর্তমান।[]

এলাহাবাদ স্তম্ভ
১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে এলাহাবাদ স্তম্ভ
লুয়া ত্রুটি মডিউল:মানচিত্রের_কাঠা এর 318 নং লাইনে: attempt to perform arithmetic on local 'lat_d' (a nil value)।
স্থানাঙ্ক
অবস্থানএলাহাবাদ, উত্তর প্রদেশ, ভারত
ধরনস্তম্ভ
উপাদানবেলেপাথর
প্রস্থ৩৫ ইঞ্চি (০.৯ মি)[]
উচ্চতা৩৫ ফুট (১০.৭ মি)[]
সম্পূর্ণতা তারিখখ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী

কোন এক সময় এই স্তম্ভটিকে তার প্রকৃত অবস্থান থেকে সরিয়ে আকবরের এলাহাবাদ দুর্গে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এই দুর্গ বর্তমানে ভারতীয় সেনাবাহিনী দ্বারা অধিকৃত রয়েছে বলে জনগণের জন্য উন্মুক্ত নয় এবং এই স্তম্ভ দর্শন করতে বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয়ে থাকে।[][]

বৈশিষ্ট্য

সম্পাদনা

৩৫ ফুট (১০.৭ মি) উচ্চ এলাহাবাদ স্তম্ভ পালিশকরা একটি একক বেলেপাথর দ্বারা নির্মিত। এই স্তম্ভের নিচের দিকের ব্যাস ৩৫ ইঞ্চি (০.৯ মি) এবং ওপরের দিকের ব্যাস ২৬ ইঞ্চি (০.৭ মি)। অন্যান্য অশোক স্তম্ভে প্রাপ্ত ঘণ্টাকৃতি পদ্মফুলের ভাস্কর্য্য যুক্ত স্তম্ভশীর্ষ এই স্তম্ভে অনুপস্থিত। আলেকজান্ডার কানিংহামের মতে, এই স্তম্ভের শীর্ষে একটি সিংহের মূর্তি ছিল।[][]

ইতিহাস

সম্পাদনা
 
অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে জোসেফ টাইফেনথেলারের নকশায় এলাহাবাদ স্তম্ভ

অশোকের শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, এই স্তম্ভ কৌশাম্বী নামক প্রাচীন নগরীতে স্থাপন করা হয়, যা বর্তমান অবস্থান থেকে প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছিল। কৌশাম্বীতে অবস্থিত অপর একটি স্তম্ভের ভাঙ্গা অংশের উপস্থিতি[] দেখে অনেকে মনে করেন যে, এলাহাবাদ স্তম্ভ ও এই ভাঙ্গা স্তম্ভটি অতীতে পাশাপাশি অবস্থান করত।[] ত্রয়োদশ শতক থেকে মুসলিম শাসনে শুরু হলে বহুবার এই স্তম্ভটিকে স্থানান্তর করা হয়[]:৯৬৮ ও অবশেষে ১৬০৫ খ্রিষ্টাব্দে জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে এলাহাবাদ শহরে সরিয়ে আনা হয়।[][] এই সময় স্তম্ভের শীর্ষে একটি গোলক স্থাপন করা হয়। অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে জোসেফ টাইফেনথেলার এই স্তম্ভের নকশা অঙ্কন করেন।[] ১৮৩৮ খ্রিষ্টাব্দে ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ড স্মিথ স্তম্ভের শীর্ষে নিজের নকশানুযায়ী একটি সিংহের মূর্তি স্থাপন করার চেষ্টা করেন, কিন্তু আলেকজান্ডার কানিংহাম এই পদক্ষেপকে বাতিল করে দেন।[]

শিলালিপি

সম্পাদনা

১৮৩৪ খ্রিষ্টাব্দে এশিয়াটিক সোসাইটির জেমস প্রিন্সেপ যখন এলাহাবাদ দুর্গের মধ্যে এই স্তম্ভটি দেখতে পান, ততদিনে আবহাওয়ার প্রকোপে এই স্তম্ভের শিলালিপিগুলি যথেষ্ট ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে।[][১০] এই স্তম্ভে অশোক, সমুদ্রগুপ্তজাহাঙ্গীর এই তিনজন সম্রাটের লিপি বর্তমান।

অশোকের লিপি

সম্পাদনা
 
এলাহাবাদ স্তম্ভে উৎকীর্ণ অশোকের শিলালিপি

এলাহাবাদের স্তম্ভে অশোকের শিলালিপি ব্রাহ্মী লিপিতে লিখিত। অন্যান্য অশোক স্তম্ভের মত এই স্তম্ভেও ছয়টি শিলালিপি রয়েছে। কিন্তু জাহাঙ্গীরের মহিমা ও পূর্বপুরুষদের কথা উৎকীর্ণ করতে গিয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ লিপিগুলি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।[] এছাড়া এই স্তম্ভে কৌশাম্বীর লিপি বর্তমান[], যেখানে অশোক কৌশাম্বী নগরীর মহামাত্রদের ভেদভাব ভুলে একত্রে থাকার উপদেশ দেন।[] এই সাতটি লিপি ছাড়াও এই স্তম্ভে সম্রাজ্ঞীর লিপি উৎকীর্ণ রয়েছে, যেখানে অশোকের পত্নী ও তিবলের মাতা কারুবকীর দানকার্য্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।[১১][১২] জেমস প্রিন্সেপ এলাহাবাদ স্তম্ভ ও অন্যান্য অশোক স্তম্ভে উৎকীর্ণ অশোকের শিলালিপি থেকে ব্রাহ্মী লিপির রহস্য অনুধাবন করেন, যার ফলে মৌর্য্য সাম্রাজ্য সম্বন্ধে বহু অজানা তথ্য আবিষ্কৃত হয়।[][১৩][১৪]

সমুদ্রগুপ্তের প্রশস্তি

সম্পাদনা

এই স্তম্ভে আনুমানিক চতুর্থ শতাব্দীতে উৎকীর্ণ গুপ্ত সম্রাট সমুদ্রগুপ্তের লিপি অশোকের লিপির ঠিক নিচে অবস্থিত। এই লিপিটি গুপ্ত যুগের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নথি বিশেষ।[] সংস্কৃত ভাষায় গুপ্ত লিপিতে মন্ত্রী ও রাজকবি হরিষেণ এই লিপি রচনা করেন।[১৫] এই লিপিতে সমুদ্রগুপ্তের দাক্ষিণাত্য অভিযান সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামরিক সাফল্যের বর্ণনা করে তার প্রশংসা করা হয়েছে।[][১৬] শুধু তাই নয়, এই লিপি থেকে গুপ্ত সাম্রাজ্য ও তার প্রতিবেশী রাজ্যগুলির বিভিন্ন দিক সম্বন্ধে তথ্যপ্রদান করায় ঐ সময়কার ভূ-রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে জানা যায়।[][১৫] ইংরেজ ভাষাবিদ জন ফেইথফুল ফ্লীট[১৭] ও পরবর্তীকালে ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক দেবদত্ত রামকৃষ্ণ ভাণ্ডারকর এই প্রশস্তির ইংরেজি অনুবাদ করেন।[১৮][১৯]|group="পা"}}

জাহাঙ্গীরের লিপি

সম্পাদনা

ষোড়শ শতাব্দীতে জাহাঙ্গীর মুঘল সিংহাসন লাভ করার ঠিক পূর্বে এলাহাবাদ স্তম্ভে ফার্সি ভাষায় এই লিপি উৎকীর্ণ হয়, যেখানে তার পূর্বপুরুষদের কাহিনী বর্ণিত আছে। জাহাঙ্গীরের প্রিয় লিপিকার মীর আব্দুল্লাহ মুশকিন কালাম এই লিপির লিখনশৈলী অঙ্কন করেন,[২০] কিন্তু দুঃখজনক ভাবে, তা অশোকের প্রাচীন শিলালিপির নষ্ট করেই উৎকীর্ণ হয়।[][১০] ১৫৭৫ খ্রিষ্টাব্দে আকবরের সভাসদ বীরবলের ত্রিবেণী সঙ্গমে তীর্থভ্রমণের ঘটনাও এই লিপিতে উৎকীর্ণ রয়েছে।[][]:৬৯৮

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Cunningham, Alexander (১৮৭৯)। Corpus Inscriptionum Indicarum: Inscriptions of Ashoka। Office of the Superintendent of Government Printing। পৃষ্ঠা 37–38। সংগ্রহের তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 
  2. Kulke, Hermann; Rothermund, Dietmar (২০১০)। "A History of India: Samudragupta: "a God whose residence is this world?""। Routledge। ৪ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১৪ 
  3. Kumar, Arjun। "Allahabad's hidden treasure"। Times of India। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১৪ 
  4. "Indian Army, SCE Allahabad, Places of Interest"। Indian Army। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১৪ 
  5. Le, Huu Phuoc (২০১০)। Buddhist Architecture। Grafikol। পৃষ্ঠা 39। আইএসবিএন 0984404309 
  6. "Ashoka Pillar Kaushambi (Excavation site of ancient ruins)"। Wikimapia। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০১৪ 
  7. Prinsep, James (১৮৩২)। "Journal of the Asiatic Society of Bengal"। Open Library। পৃষ্ঠা 566–609, 953–980। সংগ্রহের তারিখ ২ অক্টোবর ২০১৪ 
  8. Krishnaswamy, C.S.; Ghosh, Amalananda (অক্টোবর ১৯৩৫)। "A Note on the Allahabad Pillar of Aśoka"The Journal of the Royal Asiatic Society of Great Britain and Ireland4: 697–706। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১৪ 
  9. Allen, Charles (২০১২)। Ashoka: The Search for India's Lost Emperor। Hachette UK। আইএসবিএন 1408703882 
  10. Prinsep, James (মার্চ ১৮৩৪)। "Note on Inscription on the Allahabad Column"Journal of the Asiatic Society of Bengal3: 114–123। 
  11. Bhandarkar, D. R. (১৯২৫)। Ashoka। Asian Educational Services। পৃষ্ঠা 336। আইএসবিএন 8120613333। সংগ্রহের তারিখ ৬ অক্টোবর ২০১৪ 
  12. Smith, Vincent Arthur (১৯২০)। Ashoka, the Buddhist Emperor of India। Asian Educational Services। পৃষ্ঠা 215–219। আইএসবিএন 8120613031 
  13. Kang, Kanwarjit Singh (মার্চ ২৮, ২০১০)। "He deciphered India's past"। The Tribune। সংগ্রহের তারিখ ২ অক্টোবর ২০১৪ 
  14. Charry, V Shankar (সেপ্টেম্বর ১৪, ২০০৩)। "Re-discovering an Emperor"। Deccan Herald। ৯ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ অক্টোবর ২০১৪ 
  15. Majumdar, Ramesh Chandra; Altekar, Anant Sadashiv (১৯৬৭)। Vakataka - Gupta Age Circa 200-550 A.D.। Motilal Banarsidass Publ.। পৃষ্ঠা 136–155। 
  16. Singh, Upinder (২০০৮)। A History of Ancient and Early Medieval India: From the Stone Age to the 12th Century। Pearson Education India। পৃষ্ঠা 477–478। আইএসবিএন 813171120X। সংগ্রহের তারিখ ৬ অক্টোবর ২০১৪ 
  17. Fleet, John F (১৮৮৮)। Corpus Inscriptionum Indicarum: Inscriptions of the Early Guptas. Vol. III। Government of India, Central Publications Branch, Calcutta। পৃষ্ঠা 10–17। 
  18. Bhandarkar, D. R.; Chhabra, B. C. (১৯৮১)। Gai, G. S., সম্পাদক। Corpus Inscriptionum Indicarum: Inscriptions of the early Gupta Kings। Archaeological Survey of India। 
  19. Ganguly, Dilip Kumar (১৯৮৭)। The Imperial Guptas and Their Times। Abhinav Publications। পৃষ্ঠা 63–64। আইএসবিএন 8170172225 
  20. Asher, Catherine B. (১৯৯২)। The New Cambridge History of India: Architecture of Mughal India, Part 1, Volume 4। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 102। আইএসবিএন 0521267285। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১৪