নারায়ণগঞ্জ–বাহাদুরাবাদ ঘাট রেলপথ
নারায়ণগঞ্জ-বাহাদুরাবাদ ঘাট লাইন বৃটিশ শাসনামলে তৈরি একটি রেলপথ। এই লাইনটি বাংলাদেশের রেলসেবায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। লাইনটি সমগ্র বাংলাদেশের রেলপথের সাথে যুক্ত শাখা রেললাইন দ্বারা।[২]
নারায়ণগঞ্জ-বাহাদুরাবাদ ঘাট লাইন | |
---|---|
![]() | |
সংক্ষিপ্ত বিবরণ | |
স্থিতি | সক্রিয় |
মালিক | বাংলাদেশ রেলওয়ে |
অঞ্চল | ![]() |
বিরতিস্থল | |
স্টেশন | ৪৫ |
পরিষেবা | |
পরিচালক | পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে |
ইতিহাস | |
চালু |
|
কারিগরি তথ্য | |
ট্র্যাক গেজ |
|
চালন গতি | ৩০/৮০ |
ইতিহাসসম্পাদনা
১৮৭১ সালের মধ্যে কলকাতা থেকে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত রেলপথ তৈরি হয়। এ সময়ের গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দর ছিলো নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর। পাট রপ্তানী ও কলকাতার সাথে রেল যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে ঢাকা স্টেট রেলওয়ে কম্পানি দ্বারা নারায়ণগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ১৪৪ কিলোমিটার রেলপথ চালু করা হয় ১৮৮৫/১৮৮৬ সালে এবং নারায়ণগঞ্জ থেকে গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত স্টিমার চালু করা হয়। এই লাইনটি পরে বাহাদুরাবাদ ও জগন্নাথগঞ্জ ঘাট পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।[৩]
নির্মাণকালসম্পাদনা
নারায়ণগঞ্জ থেকে বাহাদুরাবাদ ঘাট রেলপথ চারধাপে নির্মাণ কাজ করা হয়।
- ১ম ধাপ = ঢাকা(ফুলবাড়িয়া)-নারায়ণগঞ্জ (১৮৮৫ সালের ৪ জানুয়ারি)
- ২য় ধাপ = ঢাকা-ময়মনসিংহ (১৮৮৫ সালের মধ্যভাগে)
- ৩য় ধাপ = ময়মনসিংহ-জামালপুর(১৮৯৪)
- ৪র্থ ধাপ = জামালপুর-বাহাদুরাবাদ(১৯১২)[৪]
ঘাট লাইনসম্পাদনা
নারায়ণগঞ্জ-বাহাদুরাবাদ ঘাট লাইন শুরু ও শেষ প্রান্ত যথাক্রমে শীতলক্ষ্যা নদী ও যমুনা নদীর ঘাটে অবস্থিত। নারায়ণগঞ্জ স্টেশন থেকে স্টিমার দ্বারা গোয়ালন্দ ঘাট পৌঁছে গোয়ালন্দ-শিলাইদহ রেলপথে কলকাতা পৌছানো যেত।[৫] নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর তীর পর্যন্ত অনেক গুলো ঘাট রেললাইন ছিলো। আদমজী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল,[৬] কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট [৭] ও গেন্ডারিয়া থেকে বুড়িগঙ্গা নদী পর্যন্ত ঘাট লাইন ছিলো যা কালের বিবর্তনে এখন বিলুপ্ত।[৮] বাহাদুরাবাদ ঘাটের সাথে যমুনা নদীর ওপারে রেলফেরি দ্বারা তিস্তামুখ ঘাট পর্যন্ত সংযুক্ত ছিলো সান্তাহার-কাউনিয়া লাইন দ্বারা।[৯]
গতিসীমাসম্পাদনা
নারায়ণগঞ্জ-বাহাদুরাবাদ ঘাট রেললাইনে সর্বোচ্চ গতিসীমা ৮০ কিলোমিটার কিন্তু রেলপথ সংস্কারের অভাবে কিছু কিছু স্থানে ৩০ কিলোমিটার গতিতেও ট্রেন চলে।[১০][১১] নারায়ণগঞ্জ থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ৩৯টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে, যার মধ্যে ২৬টি অবৈধ।[১২]
শাখা লাইনসম্পাদনা
নারায়ণগঞ্জ-বাহাদুরাবাদ ঘাট লাইন শাখা রেললাইন দ্বারা সারা বাংলাদেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রেখেছে। শাখা লাইন গুলো হচ্ছে:
ঢাকা-যশোর রেলপথসম্পাদনা
নির্মাণাধীন এই রেলপথটি ঢাকা জেলার গেন্ডারিয়া থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে যশোরে দর্শনা জংশন-খুলনা লাইনে সংযুক্ত হবে। এই রেলপথ হবে ব্রডগেজ এপথের মোট দূরত্ব ১৭২ কিলোমিটার। ভাঙ্গা থেকে মাওয়া ৫২ কিলোমিটার রেলপথ ২০২২ সালে চালুর আশা করছে সরকার।[১৩]
টঙ্গী-ভৈরব-আখাউড়া রেলপথসম্পাদনা
বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের সাথে উত্তর,দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলকে যুক্ত করেছে এই মিটারগেজ রেলপথটি। এই রেলপথটি চালু হয় ১৯১০-১৯১৪ সালের মধ্যে।
জয়দেবপুর-জামতৈল রেলপথসম্পাদনা
জয়দেবপুর-জামতৈল রেলপথটি বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হলে, ঢাকার সাথে সরাসরি রেলপথে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলকে যুক্ত করতে তৈরি করা ২০০৩ সালের মধ্যে।
ময়মনসিংহ-গৌরীপুর-ভৈরব রেলপথসম্পাদনা
ময়মনসিংহ-ভৈরববাজার রেলওয়ে কম্পানি দ্বারা এই মিটারগেজ রেলপথ তৈরি করা হয় ১৯১২-১৯১৮ সালের মধ্যে।
জামালপুর-বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেলপথসম্পাদনা
জামালপুর থেকে তারাকান্দি হয়ে জগন্নাথগঞ্জ ঘাট পর্যন্ত রেললাইন ১৮৯৯ সালে তৈরি করা হয়। বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হলে ঘাট স্টেশন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। জনগণের দাবী প্রেক্ষিতে সরকার ২০১২ সালে তারাকান্দি থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পর্যন্ত রেলপথ বর্ধিত করে।[১৪]
স্টেশন তালিকাসম্পাদনা
নারায়ণগঞ্জ-বাহাদুরাবাদ ঘাট লাইনে থাকা রেলওয়ে স্টেশনগুলোর তালিকা নিম্নে দেওয়া হলো:
- বাহাদুরাবাদ ঘাট রেলওয়ে স্টেশন
- দেওয়ানগঞ্জ বাজার রেলওয়ে স্টেশন
- মোশারফগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন
- ইসলামপুর বাজার রেলওয়ে স্টেশন
- দুরমুঠ রেলওয়ে স্টেশন
- মেলান্দহ বাজার রেলওয়ে স্টেশন
- জামালপুর কোর্ট রেলওয়ে স্টেশন
- জামালপুর টাউন জংশন রেলওয়ে স্টেশন
- নান্দিনা রেলওয়ে স্টেশন
- নরুন্দি রেলওয়ে স্টেশন
- পিয়ারপুর রেলওয়ে স্টেশন
- মশিউরনগর রেলওয়ে স্টেশন
- নিমতলী বাজার রেলওয়ে স্টেশন
- বিদ্যাগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন
- বাইগনবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন
- ময়মনসিংহ রোড রেলওয়ে স্টেশন
- ময়মনসিংহ জংশন রেলওয়ে স্টেশন
- কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রেলওয়ে স্টেশন
- সুতিয়াখালী রেলওয়ে স্টেশন
- ফাতেমানগর রেলওয়ে স্টেশন
- আহমদবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন
- আউলিয়ানগর রেলওয়ে স্টেশন
- ধলা রেলওয়ে স্টেশন
- গফরগাঁও রেলওয়ে স্টেশন
- মশাখালী রেলওয়ে স্টেশন
- কাওরাইদ রেলওয়ে স্টেশন
- সাত খামাইর রেলওয়ে স্টেশন
- শ্রীপুর রেলওয়ে স্টেশন
- ইজ্জতপুর রেলওয়ে স্টেশন
- রাজেন্দ্রপুর রেলওয়ে স্টেশন
- ভাওয়াল গাজীপুর রেলওয়ে স্টেশন
- জয়দেবপুর জংশন রেলওয়ে স্টেশন
- ধীরাশ্রম রেলওয়ে স্টেশন
- টঙ্গী জংশন রেলওয়ে স্টেশন
- ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন
- ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশন
- বনানী রেলওয়ে স্টেশন
- তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন
- কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন
- গেন্ডারিয়া রেলওয়ে স্টেশন
- শ্যামপুর বড়ইতলা রেলওয়ে স্টেশন
- পাগলা রেলওয়ে স্টেশন
- ফতুল্লা রেলওয়ে স্টেশন
- চাষাঢ়া রেলওয়ে স্টেশন
- নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন
ফেরীসম্পাদনা
বাংলাদেশে ফেরী ছিলো রেলওয়ে পরিবহন ব্যবস্থার একটি সমন্বিত অংশ। যমুনা নদীর দুইটি প্রধান ঘাটের মাধ্যমে রেলফেরি যোগাযোগ চালু ছিলো একটি হচ্ছে এই বাহাদুরাবাদ ঘাট ও তিস্তামুখ ঘাটের মাধ্যমে ও অন্যটি হচ্ছে জগন্নাথগঞ্জ ঘাট ও সিরাজগঞ্জ ঘাটের মাধ্যে।[১৫] ৪.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার বিশাল পরিবর্তন ঘটায়। বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হলে ঘাটের রেলফেরি ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। কেবলমাত্র সীমিত মালবাহী ফেরী চালু ছিলো। ২০১০ সালে ঘাটের সীমিত মালামাল পরিবহন ব্যবস্থাও বন্ধ হয়ে যায় নদীতে চর গঠনের কারণে।[১৬]
রোলিং স্টকসম্পাদনা
দেশের প্রথম ডিজেল ইলেকট্রিক্যাল মাল্টিপল ইউনিট (DEMU) পরিষেবা নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার মধ্যে উদ্বোধন করা হয় ২৪ এপ্রিল ২০১৩ সালে। বিশটি DEMU সেট চীনা প্রস্তুতকারক থেকে ৪৬০ কোটি টাকায় কেনা হয়েছিল (২০১৩ সালের হিসাবে US$59 মিলিয়ন)। প্রতিটি সেটে তিনটি গাড়ি থাকে, যার উভয় প্রান্তে ইঞ্জিন যুক্ত থাকে এবং এর ধারণক্ষমতা ১৪৯ জন যাত্রী এবং ১৫১ জন যাত্রী দাঁড়িয়ে যেতে পারে। আঠারো মাস পরে, ঢাকা ট্রিবিউন ডেমু পরিষেবাটিকে "একটি লেবু" হিসাবে চিহ্নিত করেছে কারণ ভ্রমণের সময় প্রচলিত পরিষেবার তুলনায় একটু ভাল ছিল, গাড়িগুলির অপর্যাপ্ত বায়ুচলাচল ছিল এবং গাড়ির দরজা এবং স্টেশন প্ল্যাটফর্মের উচ্চতার মধ্যে তিন ফুটের অমিল ছিল। জুলাই ২০১৯ এর মধ্যে, অর্ধেক ডিইএমইউ ভেঙে যাওয়ার কারণে অপারেশনের বাইরে ছিল।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের ‘অযোগ্য’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন আর কেনা হবে না।
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ বাংলাদেশ রেলওয়ে
- ↑ "বাংলাদেশ রেলওয়ে অতীত-বর্তমান"। The Daily Sangram। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-২৭।
- ↑ "[IRFCA] Mymensingh District (1917)"। www.irfca.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-২৬।
- ↑ "রেলওয়ে - বাংলাপিডিয়া"। bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-২৭।
- ↑ "নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন"। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-২৭।
- ↑ "একনেকে পুরাতন রেলপথে চাষাঢ়া-আদমজী মহাসড়কের অনুমোদন"। pressnarayanganj.com। ২০২০-০৪-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-২৭।
- ↑ "নারায়ণগঞ্জের যানজট নিরসনে কয়েকটি প্রস্তাবনা"। NewsNarayanganj24.net। ২০২০-০২-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-২৭।
- ↑ "শত বছরের ঐতিহ্যবাহী নদীবন্দর সদরঘাট"। The Daily Sangram। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-২৭।
- ↑ "১৯৩৮ সাল, যখন ফেরীতে পার হতো ট্রেন"। প্রবাসীর দিগন্ত। ২০১৯-১১-১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-২৭।
- ↑ "ঢাকা-ময়মনসিংহ পথে ট্রেনের গতি গড়ে ৩০ কিমি"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-২৭।
- ↑ "বসতির চাপে গতিহারা ট্রেন"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-২৭।
- ↑ "রেলওয়ের ৮৪ শতাংশ লেভেল ক্রসিং অরক্ষিত"। দৈনিক যুগান্তর। ২০২০-১১-২৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২৬।
- ↑ "ভাঙ্গা-মাওয়া ট্রেন আগামী বছরেই"। বাংলাদেশ প্রতিদিন। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-২৭।
- ↑ "পাঁচ জেলার মানুষের স্বপ্নের যমুনা সেতু লিংক রেলপথ"। banglanews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-২৭।
- ↑ "বাহাদুরাবাদ ঘাটের ফেরি চালু এ বছরই : ত্রিমোহিনী-বালাসীঘাট রেলপথ মেরামতের উদ্যোগ নেই"। www.bhorerkagoj.com। ২০২০-০২-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-২৭।
- ↑ "Drastic fall in Jamuna water level hampers transport"। archive.thedailystar.net (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-২৭।