ডুয়েল গেজ
ডুয়েল গেজ রেলপথ হলো একটি ট্র্যাক যাতে দুটি ভিন্ন ট্র্যাক গেজের ট্রেন চলাচল করতে পারে। মাঝেমধ্যে একে "মিশ্র গেজ" ট্র্যাক বলা হয়। একটি ডুয়েল গেজ ট্র্যাকে তিনটি রেল থাকে। এর মধ্যে প্রত্যেক গেজের জন্য দুটি ভাইটাল রেল ("গেজ" রেল) কাছাকাছি থাকে, এবং দূরে একটি "কমন" রেল থাকে। মাঝেমধ্যে ডুয়েল গেজ তৈরি করার জন্য চারটি রেল ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে দুটি বাইরে ও দুটি ভেতরে থাকে। ডুয়েল গেজের সাথে "তৃতীয় রেল" (বৈদ্যুতিক প্রবাহ ট্র্যাকশন রেল) বা "চেক বা গার্ড রেল"-এর পার্থক্য রয়েছে।
আকৃতি
সম্পাদনাডুয়েল-গেজ ট্র্যাকে তিনটি রেল থাকতে পারে, একটি "সাধারণ" রেল ভাগ করে; বা চারটি রেল, সংকীর্ণ গেজের রেলগুলি ব্রডগেজের মধ্যে পড়ে থাকে। থ্রি-রেল কনফিগারেশনে, সাধারণ রেলের পরিধান এবং টিয়ার অন্য দুটি বাইরের রেলের চেয়ে বেশি। ডুয়েল গেজ লাইনে, টার্নআউট ( রেলপথ সুইচ ) একক-গেজ ট্র্যাকের তুলনায় আরও জটিল, এবং ট্রেনগুলিকে অবশ্যই উভয় গেজে নিরাপদে সংকেত দিতে হয়। ট্র্যাক সার্কিট এবং যান্ত্রিক ইন্টারলকিং উভয় গেজে কাজ করতে হয়। [১]
মাল্টি-গেজ ট্র্যাক প্রায়শই একটি ব্রেক-অফ-গেজ স্টেশনের সাথে যুক্ত থাকে, যেখানে রেল যান বা যানবাহনের সামগ্রী এক গেজ থেকে অন্য গেজে স্থানান্তরিত হয়। গেজের বিরতি বিলম্ব ঘটায় এবং যানজট বাড়ায়, বিশেষ করে একক-ট্র্যাক লাইনে। মূলত, ডুয়েলগেজ লাইনে দুই প্রকার ট্রেন চলতে পারে৷ যখন ট্র্যাফিক প্রধানত এক দিক দিয়ে যায়, তখন সীমান্তে নেওয়া সম্পূর্ণ ওয়াগনগুলিকে খালি হিসাবে ফিরিয়ে দিতে হয়, এবং খালি ওয়াগনগুলির একটি ট্রেনকে অন্য দিক থেকে মালামাল আনার জন্য গেজের ব্রেকে আনতে হয়। আনলোড এবং পুনরায় লোড করার কারণেও যানজট হয়। [২] [৩] :৭৪–৭৫দুটি গেজে লোকোমোটিভ এবং যানবাহনের ক্ষমতার মধ্যে বৈষম্য থাকলে সমস্যাটি আরও খারাপ হয়: সাধারণত, একটি ব্রড-গেজ ট্রেন লোড বহন করার জন্য তিনটি ন্যারো-গেজ ট্রেনের প্রয়োজন হয়। [৪]
পটভূমি
সম্পাদনারেলপথের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্পেসিফিকেশন হল রেল গেজ। রেল ট্র্যাক ও বগিকে অবশ্যই একই গেজে ১৩ মি.মি. এর ইঞ্জিনিয়ারিং সহনশীলতা মধ্যে নির্মান করতে হয়। সঠিক গেজ না পাওয়া গেজে ট্রেন ট্র্যাক থেকে পড়ে যাবে এবং সুইচ ও ক্রসওভার পার হতে পারবে না।
ডুয়েল গেজ ট্রেনে কম উচ্চতার প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা যায়, কারণ ট্রেনের কামরা প্ল্যাটফর্মের চেয়ে উঁচুতে অবস্থান করে। তিন রেল ও উঁচু প্ল্যাটফর্মের ক্ষেত্রে কমন রেলের অবস্থানের উপর নির্ভর করে একটি গেজ খুব কাছে বা খুব দূরে থাকতে পারে। আরেকটি বিকল্প হচ্ছে প্ল্যাটফর্মে প্রত্যেক গেজের জন্য আলাদা ট্র্যাক নির্মান করা।
সহনশীলতা
সম্পাদনাযদি দুটি রেল গেজের মধ্যে পার্থক্য যথেষ্ট ছোট হয় অর্থাৎ একে অপরের সহনশীলতার মধ্যে থাকে, তখন সেই গেজদ্বয়ে একই রোলিং স্টক চলতে সক্ষম।
ফিনল্যান্ড–রাশিয়া সীমান্তে ফিনীয় গেজ ১,৫২৪ মি.মি. এবং রাশিয়ান গেজ ১,৫২০ মি.মি.। যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৭০ এর দশকে এর রেলপথের গেজ ১,৫২০ মি.মি. এ পরিবর্তন করে, তখন তাতে কোনো ব্রেক অব গেজ হয়নি, এবং কোনো ট্র্যাক রুপান্তর করা হয়নি। সহনশীলতা যেভাবে নির্ণয় করা হতো, তাতে এই পরিবর্তনটি এক নতুন সংজ্ঞা ছিল। উভয় রেলপথ একে অপরের সহনশীলতার মধ্যে ভালো অবস্থায় ছিল এবং একই রোলিং স্টক চালাতে পারতো।
তবে গেজে সহনশীলতার মধ্যে থাকলেই সবসময় দুটো ভিন্ন পদ্ধতি সফলভাবে একই রোলিং স্টক চালাতে পারে না। যেমন, হংকং এর ১,৪৩২ মি.মি. এর এমটিআর (মাস ট্রানজিট রেলওয়ে) ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ইমু) ১,৪৩৫ মি.মি. আদর্শ গেজের কাউলুন–ক্যান্টন রেলপথ (কেসিআর) এ চলতে পারে, তবে বিদ্যুতায়ন বিভবের পার্থক্যের কারণে একটি লোকোমোটিভ বা একটি কেসিআর ইমু দিয়ে তা টানতে হবে। ডুয়েল ভোল্টেজ ও কম্পাঙ্কের ইমু হলো অন্য সমাধান।
ব্রেক অব গেজ
সম্পাদনা"ব্রেক অব গেজ" ঘটে যখন স্বাভাবিক সহনশীলতার বাহিরে ভিন্ন গেজের রেল মিলিত হয়। যাত্রী ও মালামালগুলোকে অবশ্যই ট্রেন বদল করতে হবে, অথবা রোলিং স্টককে উঠিয়ে পরবর্তী গেজের জন্য বগি পরিবর্তন করতে হবে। ব্রেক অব গেজ এড়ানোর মাধ্যমে ব্যয় হ্রাস পায় ও অবকাঠামো যেমন প্ল্যাটফর্ম, সেতু ও সুড়ঙ্গ শেয়ার করতে পারে।
গেজ রুপান্তর
সম্পাদনাডুয়েল গেজে চালানো মাধ্যমে রেলপথ পরিচালক এক গেজ থেকে অন্য গেজে পরিবর্তন করতে পারে। যেমন, গ্রেট ওয়েস্টার্ন রেলওয়ে (জিডব্লিউআর) এর নেটওয়ার্কে ডুয়েল গেজের কার্যক্রমের মাধ্যমে ৭-ফুট গেজ থেকে আদর্শ গেজে রুপান্তর করেছে। তখন নতুন জিডব্লিউআর রোলিং স্টক ও লোকোমোটিভকে এই পরিবর্তন সমন্বয় করার জন্য তৈরি করা হয়।
যখন অধিকতর চওড়া-গেজের রেলগাড়ির জন্য রেল খুব হালকা হয়, তখন তাতে ডুয়েল গেজ রেল সম্ভব হতে নাও পারে। এক্ষেত্রে অধিকতর ভারী রেল স্থাপন করা হয়।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Rogers, K.C. (১৯৬৯)। Farewell narrow gauge। Australian Railway Historical Society (SA Division Inc.)। পৃষ্ঠা 19–22।
- ↑ Pratt, Edwin A. (১৯১২)। The state railway muddle in Australia। John Murray। পৃষ্ঠা 68। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-২৮ – Internet Archive-এর মাধ্যমে।
- ↑ The long haul: Australian National 1978–1988 (Revised সংস্করণ)। Australian National Railways Commission। ১৯৯১। আইএসবিএন 1875359087।
- ↑ Chambers, T.F. (ফেব্রুয়ারি ১৯৭১)। "The railways and Terowie – their early history and change of pattern over nearly a century": 34। আইএসএসএন 0005-0105।