আলম খান
খুরশিদ আলম খান (২২ অক্টোবর ১৯৪৪ - ৮ জুলাই ২০২২), বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি একাধারে গীতিকার, সুরকার এবং সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন।[৩] চলচ্চিত্রের গানে অবদানের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক ও সুরকার বিভাগে সাতবার বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।[৪]
আলম খান | |
---|---|
জন্ম | খুরশিদ আলম খান ২২ অক্টোবর ১৯৪৪[১] |
মৃত্যু | ৮ জুলাই ২০২২ | (বয়স ৭৮)
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশ |
পেশা | গীতিকার, সুরকার এবং সঙ্গীত পরিচালক |
পরিচিতির কারণ | সঙ্গীতজ্ঞ |
পিতা-মাতা | আফতাব উদ্দিন খান (বাবা) জোবেদা খানম (মা) |
আত্মীয় | আজম খান (ভাই) |
পুরস্কার | জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (৭ বার) |
সঙ্গীত কর্মজীবন | |
ধরন | |
বাদ্যযন্ত্র | |
লেবেল | অণুপম মিউজিক[২] |
প্রাথমিক জীবন
সম্পাদনাআলম খান ১৯৪৪ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার বানিয়াগাতি গ্রামে নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার আদি নিবাস টাঙ্গাইল।তার বাবা আফতাব উদ্দিন খান ছিলেন সেক্রেটারিয়েট হোম ডিপার্টমেন্ট এর এডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার ও মা জোবেদা খানম ছিলেন গৃহিণী। তার মা জোবেদা খানম ছিলেন নবাব সিরাজউদ্দৌলার দরবারের এক শিল্পীর বংশধর।[৫] সিরাজগঞ্জে কয়েক বছর থাকার পর বাবার চাকরি সুবাদে কলকাতায় চলে যান। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর বাবার সাথে ফিরে আসেন ঢাকায়। তারপর ঢাকাতেই স্থায়ী হন এবং সিদ্ধেশ্বরী স্কুলে ভর্তি হন। এই স্কুল থেকেই মেট্রিক পাস করেন। স্কুলে থাকাকালীন তার গানের প্রতি ঝোঁক সৃষ্টি হয়। বাবা আফতাব উদ্দিন প্রথমে অনাগ্রহ দেখালেও মায়ের উৎসাহে গানের চর্চা চালিয়ে যান। পরবর্তীতে তার বাবাই তাকে ওস্তাদ ননী চ্যাটার্জীর কাছে গানের তালিমের জন্য নিয়ে যান। পাঁচ ভাই তিন বোনের মধ্যে আলম খান মেজো। বাংলাদেশের প্রখ্যাত পপ সঙ্গীত শিল্পী আজম খান ছিলেন তার ছোট ভাই।[৬]
সঙ্গীত জীবন
সম্পাদনাআলম খান ১৯৬৩ সালে রবিন ঘোষের সহকারী হিসেবে তালাশ চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনা করেন। ১৯৭০ সালে প্রথম চলচ্চিত্রকার আব্দুল জব্বার খান পরিচালিত কাচ কাটা হীরে চলচ্চিত্রের মাধ্যমে এককভাবে সঙ্গীত পরিচালনা শুরু করেন। তার সুরকৃত প্রথম জনপ্রিয় গান স্লোগান ছায়াছবির "তবলার তেড়ে কেটে তাক"। এরপর ১৯৭৭ সালে আবদুল্লাহ আল মামুন তার পরিচালিত সারেং বৌ চলচ্চিত্রের গান নিয়ে কথা বলার সময় তার ১৯৬৯ সালের সুর করা একটি মুখরা শুনালে ছবির পরিচালক তা নিতে আগ্রহী হন। ১৯৭৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সেই ছবির আবদুল জব্বারের কণ্ঠে "ওরে নীল দরিয়া" গানটি তার এক অনন্য সৃষ্টি।[৭] ১৯৮২ সালে রজনীগণ্ধা চলচ্চিত্রে সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া "আমি রজনীগণ্ধা ফুলের মত" ও বড় ভালো লোক ছিল চলচ্চিত্রের সৈয়দ শামসুল হকের লেখা এন্ড্রু কিশোরের কণ্ঠে "হায়রে মানুষ রঙ্গীন ফানুস" দর্শকদের মনোযোগ কাড়ে। বড় ভালো লোক ছিল চলচ্চিত্রের জন্য অর্জন করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।[৮] ১৯৮৫ সালে তার সুর করা তিন কন্যা চলচ্চিত্রের "তিন কন্যা এক ছবি" গান দিয়ে প্লেব্যাক শুরু করেন কলকাতার নামকরা সঙ্গীতশিল্পী কুমার শানু। নাগ পূর্ণিমা চলচ্চিত্রের এন্ড্রু কিশোরের গাওয়া রক ধাঁচের "তুমি যেখানে আমি সেখানে", ভেজা চোখ চলচ্চিত্রের এন্ড্রু কিশোরের কণ্ঠে "জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প" গানগুলো শ্রোতাপ্রিয়তা লাভ করে।[৯]
পারিবারিক জীবন
সম্পাদনাআলম খান ১৯৭৬ সালে হাবিবুননেসা গুলবানুর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। গুলবানু একজন গীতিকার। আলম খানের সুরে সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠে গাওয়া "তুমি তো এখন আমারই কথা ভাবছো" গানটির গীতিকার গুলবানু। তাদের দুই ছেলে আরমান খান ও আদনান খান দুজনেই সঙ্গীত পরিচালক এবং একমাত্র মেয়ে আনিকা খান।[১০]
শারীরিক স্বাস্থ্য ও মৃত্যু
সম্পাদনাখান ২০১১ সালে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। চিকিৎসার জন্য তিনি বিভিন্ন দেশে যান। ০৮ জুলাই, ২০২২ সকাল ১১:৩২ টায়, তিনি ইন্তেকাল করেন।[১১][১২]
ডিস্কোগ্রাফি
সম্পাদনাচলচ্চিত্রের গান
সম্পাদনা- কাঁচ কাটা হীরে (১৯৭০)
- স্মৃতিটুকু থাক (১৯৭১)
- আমার জন্মভূমি (১৯৭৩)
- খেলাঘর (১৯৭৩)
- পায়ে চলার পথ (১৯৭৩)
- অন্তরালে (১৯৭৪)
- লাভ ইন সিমলা (১৯৭৫)
- সুপ্রভাত (১৯৭৬)
- কি যে করি (১৯৭৬)
- গুন্ডা (১৯৭৬)
- রাজ রানী (১৯৭৬)
- দোস্ত দুশমন (১৯৭৭)
- সারেং বউ (১৯৭৮)
- আসামী হাজির (১৯৭৮)
- আরাধনা (১৯৭৯)
- এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী (১৯৮০)
- বাঁধনহারা (১৯৮১)
- রজনীগন্ধা (১৯৮২)
- বড় ভালো লোক ছিল (১৯৮২)
- নাগ পূর্ণিমা (১৯৮৩)
- তিন কন্যা (১৯৮৫)
- সারেন্ডার (১৯৮৭)
- লালু মাস্তান (১৯৮৭)
- দুই জীবন (১৯৮৮)
- বীর পুরুষ (১৯৮৮)
- ভেজা চোখ (১৯৮৮)
- বোনের মত বোন (১৯৮৯)
- ভাইজান (১৯৮৯)
- বজ্রমুষ্টি (১৯৮৯)
- ভাই ভাই (১৯৯০)
- অচেনা (১৯৯১)
- সান্ত্বনা (১৯৯১)
- ত্যাগ (১৯৯২)
- বেপরোয়া (১৯৯২)
- সত্য মিথ্যা (১৯৯২)
- কেয়ামত থেকে কেয়ামত (১৯৯৩)
- ঘৃণা (১৯৯৪)
- কমান্ডার (১৯৯৪)
- অন্তরে অন্তরে (১৯৯৪)
- স্বপ্নের ঠিকানা (১৯৯৫)
- বিশ্বপ্রেমিক (১৯৯৫)
- সন্ত্রাস (১৯৯৫)
- এই ঘর এই সংসার (১৯৯৬)
- প্রিয়জন (১৯৯৬)
- বিচার হবে (১৯৯৬)
- কুলি (১৯৯৭)
- ভন্ড (১৯৯৮)
- অনন্ত ভালবাসা (১৯৯৯)
- ম্যাডাম ফুলি (১৯৯৯)
- একটি সংসারের গল্প (১৯৯৯)
- রাজার ভাই বাদশা (১৯৯৯)
- যোদ্ধা (২০০০)
- এই মন চায় যে..! (২০০০)
- মেজর সাহেব (২০০২)
- মাস্তানের উপর মাস্তান (২০০২)
- মুখোশধারী (২০০২)
- ভয়ানক সংঘর্ষ (২০০২)
- ভালবাসার মূল্য কত (২০০২)
- টপ সম্রাট (২০০৩)
- বাদশা কেন চাকর (২০০৩)
- অন্তরে ঝড় (২০০৩)
- দুই বধূ এক স্বামী (২০০৩)
- চাই ক্ষমতা (২০০৩)
- চাচ্চু (২০০৬)
- কি যাদু করিলা (২০০৮)
- এক বুক ভালোবাসা (২০০৮)
- এবাদত (২০০৯)
- কাজের মানুষ (২০০৯)
- হায় প্রেম হায় ভালোবাসা (২০১০)
- মায়ের চোখ (২০১০)
- আমার স্বপ্ন আমার সংসার (২০১০)
- কে আপন কে পর (২০১১)
- শবনম (২০১৪)
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনা- জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
- বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক - বড় ভালো লোক ছিল (১৯৮২)
- বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক - তিন কন্যা (১৯৮৫)
- বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক - সারেন্ডার (১৯৮৭)
- বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক - দিনকাল (১৯৯২)
- বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক - এবাদত (২০০৯)
- বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ সুরকার - কি যাদু করিলা (২০১০)
- বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার
- চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি পুরস্কার
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "শুভ জন্মদিন শ্রদ্ধেয় আলম খান !!!"। মিডিয়া খবর। ২২ অক্টোবর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুলাই ২০১৩।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "এ প্রজন্মের শিল্পীদের কণ্ঠে আলম খান-এর গান"। দৈনিক ইত্তেফাক। ২০ জানুয়ারি ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৮ মে ২০১৬।
- ↑ "'পুরানো সেই দিনের কথা'য় আলম খান"। দৈনিক ইত্তেফাক। ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ৮ মে ২০১৬।
- ↑ "ফুসফুসে ক্যানসার আক্রান্ত আলম খান"। দৈনিক প্রথম আলো। ২৬ জুলাই ২০১১। ২৯ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুলাই ২০১৩।
- ↑ ইমা খান (৬ আগস্ট ২০১১)। "আমার চাচা আলম খান"। বাংলানিউজ। সংগ্রহের তারিখ ৮ মে ২০১৬।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ নাইস নূর (২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। "আজম খুব সাধারণ ছিল : আলম খান"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ৮ মে ২০১৬।
- ↑ "সোনালী দিনের সেইসব গান"। চ্যানেল আই অনলাইন। ২০১৫-০৭-১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২৩।
- ↑ "সম্পর্কের তিন যুগে গুরু-শিষ্য"। দৈনিক যুগান্তর। ১৪ নভেম্বর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৮ মে ২০১৬।
- ↑ কবির বকুল (অক্টোবর ২৯, ২০১৫)। "আলম খানের গান ও গল্প"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ৮ মে ২০১৬।
- ↑ রওশন আরা বিউটি (১২ নভেম্বর ২০১৫)। "সুরের জাদুকর আলম খান"। দৈনিক আজাদী। সংগ্রহের তারিখ ৮ মে ২০১৬।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ " কালজয়ী সংগীত পরিচালক আলম খান মারা গেছেন"। risingbd.com। ২০২২-০৭-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-০৮।
- ↑ প্রতিবেদক, বিনোদন। "চলে গেলেন সুরকার আলম খান"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-০৮।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- বাংলা মুভি ডেটাবেজে আলম খান
- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে আলম খান (ইংরেজি)
- বাপ্পা মজুমদারের কাছে দেয়া আলম খানের সাক্ষাৎকার