বাংলা লিপি

বাংলা ভাষার বর্ণমালা

বাংলা লিপি হলো একটি লিখন পদ্ধতি যেটি বাংলা, মণিপুরি, ককবরক, অসমীয়া ভাষায়‌ ব্যবহার করা হয়। পূর্ব নাগরী লিপি থেকে এই লিপির উদ্ভব। বাংলা লিপির গঠন তুলনামূলকভাবে কম আয়তাকার ও বেশি সর্পিল। বাংলা লিপিটি সিদ্ধং লিপি থেকে উদ্ভূত হয়েছে বলে মনে করা হয়। অনুরূপ হিসেবে অসমিয়াকে মনে করা হলেও অসমীয়া লিপির উৎপত্তি বাংলা লিপি উৎপত্তির অন্তত আড়াইশ বছর পর। যে ভিন্নতা (বাংলা ; অসমীয়া এবং স্বতন্ত্র বর্ণ হিসেবে ক্ষ) আধুনিক বাংলা ও অসমীয়া ভাষায় দেখা যায়, সেটি ১৮ শতকের আগে ছিল না। পরবর্তীতে নিচে ফোঁটা দেওয়া র বাংলায় ব্যবহৃত হয়। পূর্ব নাগরী লিপি বা বাংলা লিপি বিশ্বের ৫ম সর্বাধিক ব্যবহৃত লিখন পদ্ধতি।

বাংলা লিপি
লিপির ধরন
সময়কালখ্রিস্টীয় একাদশ শতক থেকে বর্তমান[১]
লেখার দিকবাম-থেকে-ডান উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
অঞ্চলবঙ্গ
ভাষাসমূহবাংলা, মৈতৈ মণিপুরি, মৈথিলী ভাষা, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী, ককবরক
সম্পর্কিত লিপি
উদ্ভবের পদ্ধতি
ভগিনী পদ্ধতি
তিব্বতি লিপি, ওড়িয়া লিপি, অসমীয়া লিপি
আইএসও ১৫৯২৪
আইএসও ১৫৯২৪Beng, , ​বাংলা
ইউনিকোড
ইউনিকোড উপনাম
বাঙালি
U+0980 থেকে U+09FF পর্যন্ত
এই নিবন্ধে আধ্বব চিহ্ন রয়েছে। সঠিক রেন্ডারিং সমর্থন ছাড়া, আপনি হয়ত ইউনিকোড অক্ষরের বদলে জিজ্ঞাসা চিহ্ন, বাক্স বা অন্য কোনো চিহ্ন দেখবেন।

ইতিহাস

 
এখানে বাংলা-অসমীয়া লিপিতে লেখা রয়েছে, "শ্রীশ্রীমত্‌শিৱসিংহমহাৰাজা" (শ্রীশ্রীমৎশিবসিংহমহারাজা)। লক্ষণীয়, এখানে আধুনিক অসমীয়া "ৱ" ("wô/vô")-এর পরিবর্তে ব্যবহৃত বিন্দু যুক্ত ব় (wô) ব্যবহৃত হয়েছে, যার ধ্বন্যাত্মক মান অপরিবর্তিত। এছাড়াও, অধুনা তির্যক দণ্ডযুক্ত "অনুস্বার" (ং)-এর পরিবর্তে শুধুমাত্র বিন্দু ব্যবহৃত হয়েছে।

উৎস

খ্রীঃ পূঃ দ্বিতীয়-প্রথম শতকে ব্রাহ্মী লিপির উত্তর ভারতীয় লিপিরূপ থেকে জন্ম নেয় কুষাণ লিপি, যা থেকে পরে গুপ্ত লিপির উৎপত্তি হয়। গুপ্ত লিপির ক্রমবিবর্তনের ফলে সিদ্ধমাতৃকা লিপির উৎপত্তি হয়, যার কালক্রমিক পরিণতি থেকে বাংলা লিপি বর্তমান রূপ ধারণ করে।

বাংলা লিপির ব্যবহার প্রায়ই মধ্যযুগীয় ভারতের পূর্বাঞ্চলে এবং তারপর পাল সাম্রাজ্যের মধ্যে ব্যবহার ছিল। পরে বিশেষভাবে বাংলার অঞ্চলে ব্যবহার করা অব্যাহত ছিল। পরে বাংলা লিপিটিকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্বের অধীনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর দ্বারা আধুনিক বাংলা লিপিতে প্রমিত করা হয়েছিল। বর্তমান দিনে বাংলা লিপিটি বাংলাদেশভারতে সরকারী লিপির পদমর্যাদা স্থানে আছে, এবং বাংলার মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে যুক্ত আছে।

বাংলা মুদ্রণের প্রথম অর্ধশতাব্দী

 
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ রচয়িতা ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেড কর্তৃক ১৭৭৮ সালে প্রকাশিত আ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ পুস্তকের স্ক্যান করা প্রচ্ছদ

১৭৭৮ সালে ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেডের (হালেদ) আ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রকাশনার মাধ্যমে বাংলা মুদ্রণশিল্পের জন্ম হয়। বইটি ইংরেজি ভাষাতে লেখা হলেও এতে বাংলা বর্ণপরিচয় ও বাংলা লেখার নিদর্শন সবই বাংলা মুদ্রাক্ষরে ছাপা হয়। এই মুদ্রণে প্রথমবারের মত "বিচল হরফ" প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এই কৌশলে প্রতিটি হরফের জন্য আলাদা একটি ব্লক থাকে, যে ব্লকটিকে ইচ্ছামত নড়ানো ও বসানো যায়। জার্মানির ইয়োহানেস গুটেনবের্গ ছিলেন এই প্রযুক্তির উদ্ভাবক। বাংলা মুদ্রণে হালেদের বইতে চার্লস উইলকিন্স এবং তার সহকারী পঞ্চানন কর্মকার এই প্রযুক্তি প্রথমবারের মত প্রয়োগ করেন। ধাতুর ব্লকে ঢালাই করা একই আকৃতি একই হরফের জন্য একাধিক পাতাতে ব্যবহার করা যায় বলে বাংলা ছাপা হরফে একটা স্থায়ী, বৈষম্যহীন রূপ এসেছিল। তবে এই প্রথম দিককার হরফগুলো খুব সুদৃশ্য ও পরিণত ছিল না। ইংরেজির তুলনায় বাংলা হরফের আকার ছিল বেশ বড়। ইউরোপে এর প্রায় তিনশত বছর আগেই বিচল হরফে ছাপার প্রযুক্তি শুরু হয়ে গেলেও বাংলাতে এটি ছিল একেবারেই নতুন একটি ঘটনা। চার্লস উইলকিন্স ও তার সহকারী পঞ্চানন কর্মকার সম্ভবত এই বিষয়ে অভিজ্ঞ কারিগর ছিলেন না।

১৮০০ সালে শ্রীরামপুরে ব্যাপটিস্ট মিশন প্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে উইলিয়াম কেরি ও উইলিয়াম ওয়ার্ড ছিলেন ছাপাখানা বিশেষজ্ঞ। তারা সেখানে পঞ্চানন কর্মকারের চাকরির ব্যবস্থা করেন। এদের মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলা হরফের চেহারার উন্নতি হতে থাকে। ১৯শ শতকের তৃতীয় দশকেই বাংলা ছাপার চেহারা অনেকখানি পাল্টে যায়। ১৮৩১ সালে ভিনসেন্ট ফিগিন্স সম্ভবত প্রথম বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির জন্য বাংলা হরফ তৈরি করেছিলেন।

এসময়কার বাংলা হরফের বৈশিষ্ট্যগুলো এরকম:

  • অনুস্বারের নিচের দাগটি ছিল না। ছিল কেবল গোল চিহ্নটি।
  • ব্যঞ্জনের খাড়া দাগের সাথে য-ফলা মিলে বাঁকিয়ে কমলার কোয়ার মত একটা চেহারা ছিল। এগুলো আজও কখনো কখনো দেখতে পাওয়া যায়। আধুনিক কম্পিউটারের লিখন হরফে স্য-তে এর দেখা মেলে।
  • "তু" যুক্তাক্ষরটি বর্তমান চেহারা পায়। অর্থাৎ ""-এর নিচে "ু" বসিয়ে।
  • "স্থ" (স+থ) যুক্তাক্ষরটি হালেদের সময়ে, অর্থাৎ ১৮শ শতকে "স"-এর নিচে পরিষ্কার "থ" লিখে দেখানো হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে এটি "স"-এর নিচে ছোট "হ"-এর মত অক্ষর বসিয়ে নির্দেশ করা হয়। ফলে যুক্তাক্ষরটি অস্বচ্ছ রূপ ধারণ করে। এখনো এই অস্বচ্ছ রূপটিই ব্যবহার করা হয়। এরকম আরো বহু যুক্তাক্ষরের অস্বচ্ছ রূপ ১৯শ শতকের শুরুর এই পর্বে নির্দিষ্ট হয়ে যায়।
  • "র" অক্ষরটির হরফটি হালেদের সময়ে পেট কাটা "ব" (অসমীয়া ) এবং "ব"-এর নিচে ফুটকি উভয় রূপেই বিদ্যমান ছিল। কিন্তু ১৮শ শতকের মাঝামাঝিতে এই পর্বের শেষে এসে বর্তমান ফুটকিযুক্ত রূপটিই সর্বত্র চালু হয়ে যায়।

বিদ্যাসাগরীয় সংস্কার

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৪৭ খ্রিষ্টাব্দে সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপনা ছেড়ে দিয়ে জীবিকা অর্জনের জন্য একটি ছাপাখানা খোলেন। বিদ্যাসাগর বাংলা বর্ণমালা সংস্কারের জন্য অনেকগুলো প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এগুলো হল এরকম:

  • সংস্কৃতের "य" বর্ণটি বাংলায় "" হরফ দিয়ে লেখা হত, কিন্তু শব্দে অবস্থানভেদে এর উচ্চারণ "" কিংবা "য়"-এর মতো উচ্চারিত হত। বিদ্যাসাগর "জ" উচ্চারণের ক্ষেত্রে "য" বর্ণটি ব্যবহার এবং "য়" উচ্চারণের ক্ষেত্রে "য"-এর নিচে ফুটকি দিয়ে নতুন বর্ণটি ব্যবহারের প্রস্তাব করেছিলেন।
  • একইভাবে "" ও ""-এর নিচে ফুটকি দিয়ে বিদ্যাসাগর "ড়" ও "ঢ়" হরফ দুইটির প্রচলন করেছিলেন।
  • বিদ্যাসাগর বাংলা ভাষায় অব্যবহৃত "দীর্ঘ-ৠ" ও "দীর্ঘ-ৡ" বর্ণ দুইটি বর্জন করেছিলেন। তবে কেবল "ঌ" বর্ণটিও বাংলায় অব্যবহৃত ছিল, কিন্তু বিদ্যসাগর এ নিয়ে কিছু বলেননি।
  • এছাড়া সংস্কৃত স্বরবর্ণমালার অন্তর্গত অনুঃস্বর (ং), বিসর্গ (ঃ), এবং চন্দ্রবিন্দু (ঁ) যেহেতু প্রকৃতপক্ষে ব্যঞ্জনবর্ণ সেহেতু বিদ্যাসাগর এই বর্ণগুলোকে ব্যঞ্জনবর্ণমালার অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। কিন্তু ব্যঞ্জনবর্ণ হলেও যেহেতু এগুলো স্বতন্ত্র বর্ণ নয়, অযোগবাহ বর্ণ সেহেতু কোন বাংলা অভিধানেই বিদ্যাসাগরপ্রণীত বর্ণক্রমটি গৃহীত হয়নি।

বিদ্যাসাগর "ণ-ন" এবং "শ-ষ-স"-এর মধ্যে উচ্চারণের সমতা সম্ভবত লক্ষ্য করলেও এর কোন সংস্কার করেন নি।

বিদ্যাসাগর বাংলা হরফের স্বচ্ছতা ও সমতা বিধানের জন্যও বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন:

  • তিনি যফলাকে ব্যাঞ্জনের সাথে যুক্ত করে কমলার কোয়ার মতো না লিখে আলাদা করে লেখার ধারা চালু করেন। ফলে সর্বত্র যফলার আকার একই রূপ পেল।
  • বিদ্যাসাগরের আগে ঋ-কার ব্যঞ্জনের তলে বিভিন্ন রূপে বসত। বিদ্যসাগরই প্রথম ব্যঞ্জনের নিচে পরিষ্কারভাবে "ৃ" চিহ্নটি বসিয়ে লেখা চালু করেন। একইভাবে হ্রস্ব-উ কারের জন্য "ু" লেখা চালু করেন।

কিন্তু বিদ্যাসাগরের সংস্কারগুলো সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। অনেকগুলো অস্বচ্ছ যুক্তব্যঞ্জনের চিহ্ন অস্বচ্ছই থেকে গিয়েছিল। যেমন - "তু" "ত"-এর নিচে উ-কার দিয়ে লেখা হলেও "ন্তু", "স্তু" যুক্তাক্ষরগুলোতে পুরনো অস্বচ্ছ রূপটিই থেকে গেল।

ইংরেজি বিচল হরফগুলো একটি ডালায় দুই খোপে নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী সাজানো থাকত। কিন্তু বাংলায় এ নিয়ে তেমন কোন চিন্তা হয় নি। বিদ্যাসাগরই প্রথম বাংলা হরফের জন্য ডালার একটি নকশা এবং কোন হরফের পর কোন হরফ বসবে তার নিয়ম স্থির করে দেন। তার এই নকশাই ক্রমে সমস্ত বিচল হরফ ব্যবহারকারী বাংলা ছাপাখানাতে গৃহীত হয়। বাংলা মুদ্রণশিল্পে প্রতিষ্ঠিত হয় সমতা। বিদ্যাসাগর বাংলা মুদ্রণশিল্পকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিলেন। মূলত তার বেঁধে দেয়া নিয়মনীতি অনুসারেই পরবর্তী একশো বছর, বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত বাংলা হরফ মুদ্রিত হয়।

সময়ের সাথে বিদ্যাসাগরীয় হরফের সামান্য কিছু পরিমার্জনের চেষ্টাও করা হয়েছে। বিদ্যাসাগর নিজে বর্ণপরিচয়-এর ৬০তম সংস্করণ থেকে শব্দের শেষে অন্তর্নিহিত ও উচ্চারণযুক্ত ব্যঞ্জন, যেমন- "বিগত", "কত" শব্দের শেষের "ত"-টা, যেন "ৎ"-এর মত উচ্চারণ না হয়, সেজন্য এগুলোর উপর তারাচিহ্ন দেয়া প্রবর্তন করেন। বিংশ শতাব্দীতে অনেক লেখক একই কাজে ঊর্ধ্বকমা (') ব্যবহার করেছেন, যেমন- একশ', ইত্যাদি। তবে এই সংস্কারটি সর্বজনগৃহীত হয়নি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিদ্যাসাগরী হরফের দুই ধরনের এ-কার (মাত্রাছাড়া ও মাত্রাসহ) দুইটি ভিন্ন কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন। তিনি শব্দের শুরুর মাত্রাযুক্র এ-কার দিয়ে "অ্যা" ধ্বনি বুঝিয়ে ছাপানো শুরু করেন। তবে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য বেশির ভাগ প্রকাশকই এই রীতিটি গ্রহণ করেনি।

লাইনোটাইপ পর্ব

ইউরোপে ১৯শ শতকের শেষ দিকে লাইনোটাইপ মেশিনে ছাপানোর চল হয়। ১৯৩০-এর দশকে বাংলা হরফও লাইনো মেশিনে ছাপানোর চিন্তাভাবনা শুরু হয়। লাইনোটাইপ মেশিনে ছাপানোর অনেক সুবিধা থাকলেও এর একটি অসুবিধা ছিল এতে আড়াইশো-র মত চিহ্ন রাখার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু বিদ্যাসাগরীয় পদ্ধতিতে হরফের সংখ্যা ছিল বিশাল। "করণ টাইপ" নামের এক পদ্ধতিতে এর সংখ্যা কমলেও তার পরেও সব মিলিয়ে প্রায় ৬০০-র মত হরফের ব্লক প্রয়োজন হত। আনন্দবাজার প্রকাশনা সংস্থার সুরেশচন্দ্র মজুমদার রাজশেখর বসুর পরামর্শে বাংলা হরফের বিরাট আকারের সংস্কার সাধন করেন। তিনি স্বরবর্ণের কার-চিহ্নগুলো সকল ক্ষেত্রে একই আকারের রাখার ব্যবস্থা করলেন এবং এগুলো ব্যঞ্জন বা যুক্তব্যঞ্জনের নিচে বা উপরে না বসিয়ে সামান্য ডানে বা বামে সরিয়ে আলাদা অক্ষর হিসেবে ছাপার ব্যবস্থা করলেন।

এছাড়াও তিনি অনেক যুক্তব্যঞ্জনের একই উপাদান ব্যঞ্জনাক্ষরের সাধারণ আদল আলাদা করে সেটির হরফ বানালেন, ফলে যুক্তব্যঞ্জন ছাপানোতেও হরফের সংখ্যার অনেক সাশ্রয় হল। শেষ পর্যন্ত সুরেশচন্দ্র বাংলা হরফের সংখ্যাকে চাবির ডালায় ১২৪টি এবং বিবিধ আরও ৫০টিতে নামিয়ে আনতে পেরেছিলেন।[২]

বাংলা অক্ষর

স্বরবর্ণ

 
ক ব্যঞ্জনবর্ণের পরে আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, এ, ঐ, ও, ঔ স্বরবর্ণের ব্যবহার

বাংলা লিপিতে বর্তমানে ১১টি স্বরবর্ণ অক্ষর আছে যা ৭টি প্রধান স্বর উচ্চারণের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই সাতটিকে মৌলিক স্বরবর্ণ বলে ৷

  • বাংলা ভাষার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো যে এই ভাষায় /ɔ/ স্বরবর্ণটির সংস্কৃত /sɔŋskṛt̪ɔ/ ভাষায় যেমন উচ্চারণ ছিল( ‌/ɔ/ ) বাংলায় সেই আসল উচ্চারণই আছে। বাংলা ভাষার মতোই অসমীয়াওড়িয়া ভাষাতেও এই উচ্চারণ আছে। কিন্তু হিন্দি ও অন্যান্য ভাষায় এটি আরবির সংস্পর্শে এসে হারিয়ে গেছে। এই /ɔ/ বর্ণ ও উচ্চারণটি প্রথম ইন্দো-ইউরোপীয় Proto-Indo-European ভাষায় ছিল এবং এটি উত্তরাধিকার সূত্রে সংস্কৃত, পুরোনো পার্সী, ল্যাটিন, গ্রিক, রাশিয়ান ইত্যাদি ইন্দো ইউরোপীয় ভাষাগুলোতে এসেছে।
  • বাংলা লিপিতে ই এবং উ উচ্চারণের জন্য ২টি করে বর্ণ ব্যবহৃত হয়। সংস্কৃত ভাষা থেকে প্রভাবিত বলে সংস্কৃত ভাষার মতনই বাংলা লিপিতে এবং উচ্চারণের জন্য উচ্চারণের তারতম্যের ভিত্তিতে হ্রস্ব ( এবং ) এবং দীর্ঘ ( এবং ) এই দুই রকম বর্ণ ব্যবহৃত হয়। কিন্তু কলকতার আধুনিক বাংলা উচ্চারণে হ্রস্ব আর দীর্ঘ উচ্চারণে কোনো পার্থক্য নেই।
  • যখন কোনো স্বরবর্ণ শব্দ বা শব্দাংশের প্রথমে বসে অথবা অন্য কোন স্বরবর্ণের পরে বসে, তখন তাকে আলাদা বর্ণ হিসেবে লেখা হয়। কিন্তু কোনো স্বরবর্ণ কোনো ব্যঞ্জনবর্ণের পরে বসলে, তখন নির্দিষ্ট চিহ্ন (বৈশিষ্ট্যসূচক চিহ্ন) দিয়ে একে প্রকাশ করা হয়। এই চিহ্নকে কার বলা হয়। যেমন, ব্যঞ্জনবর্ণের পরে স্বরবর্ণ বসলে তখন চিহ্ন বা এ-কার ব্যবহৃত হয়ে কে লেখা হয়।
  • এই নিয়মের একমাত্র ব্যতিক্রম হল স্বরবর্ণ। এই বর্ণের কোনো চিহ্ন নেই কারণ এটি পূর্বনির্ধারিত সহজাত স্বরবর্ণ।
  • ব্যঞ্জনবর্ণের পরে বা কোনো স্বরবর্ণ না থাকলে ব্যঞ্জনবর্ণটির সাথে হসন্ত চিহ্ন (্) ব্যবহার করা হয়, যেমন ক্

নিম্নে আধুনিক বাংলা স্বরবর্ণের তালিকা ও উচ্চারণ প্রণালী দেখানো হল। এই ১১টি স্বরবর্ণ ছাড়াও , এবং এই তিনটি স্বরবর্ণ পূর্বে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে এদের ব্যবহার করা হয় না, এবং "অ" হচ্ছে সম্পূর্ণ ভাবে স্বতন্ত্র স্বরবর্ণ এবং পুরো বাংলা লিপির পূর্বনির্ধারিত সহজাত স্বরবর্ণ, তাই তার বৈশিষ্ট্যসূচক চিহ্ন নেই।

স্বরবর্ণ
স্বতন্ত্র
আকার
স্বতন্ত্র
আকারের নাম
বৈশিষ্ট্যসূচক
চিহ্ন
বৈশিষ্ট্যসূচক
চিহ্নের নাম
রোমানীকরণ আ-ধ্ব-ব
প্রতিলিপি
স্বর অ - - a,ô ও o(বিকৃত উচ্চারণ) /ɔ//o/(বিকৃত উচ্চারণ)
স্বর আ আ কার aa/ ā /ā/
হ্রস্ব ই ি হ্রস্ব ই কার i /i/
দীর্ঘ ই দীর্ঘ ই কার i ও ee /i/
হ্রস্ব উ হ্রস্ব উ কার u /u/
দীর্ঘ উ দীর্ঘ উ কার u ও oo /u/
হ্রস্ব ঋ হ্রস্ব ঋ কার ri /ṛi/
দীর্ঘ ঋ দীর্ঘ ঋ কার rii /ṛii/
হ্রস্ব ঌ হ্রস্ব ঌ কার li /ḷi/
দীর্ঘ ঌ দীর্ঘ ঌ কার lii /ḷii/
স্বর এ এ কার e ও ê /e//æ/
স্বর ঐ ঐ কার ôi ও oi /ɔi//oi/
স্বর ও ও কার u ও o /ʊ//o/
স্বর ঔ ঔ কার ôu ও ou /ɔu//ou/

ব্যঞ্জনবর্ণ

 
এলোমেলো ভাবে বাংলা লিপির অক্ষরগুলো দেখানো হয়েছে
  • বাংলায় কিছু ব্যঞ্জনবর্ণের মধ্যে পূর্বে উচ্চারণে পার্থক্য থাকলেও এখন আর নেই, যেমন "ন" (দন্ত্য ন) ও "ণ" (মূর্ধন্য ণ)।
  • "শ" (তালব্য শ) আর "ষ" (মূর্ধন্য ষ)-কে আধুনিক বাংলায় একই রকম উচ্চারণ করা হয়। "স" (দন্ত্য স) -র উচ্চারণ শব্দের উপর নির্ভর করে।
  • "য" (অন্তঃস্থ য) আর "জ" (বর্গীয় জ)-র উচ্চারণও একই, তবে ফারসি-আরবি শব্দে এই ধ্বনির যে দন্ত্য উচ্চারণটি আছে, সেটি বুঝাতেও "য" ব্যবহৃত হয়, যেমন "দোযখ", "যাকাত"। এই দন্ত্য উচ্চারণটি বিভিন্ন আঞ্চলিক উচ্চারণেও শোনা যায়।
  • নাসিক্য বর্ণ "ঙ" (উঙ/উম/উঁঅ) ও "ঞ" (ইঞ/নীয়/ইঁঅ) এবং অর্ধস্বর বর্ণ "য়" (অন্তঃস্থ অ) শব্দের প্রথমে আসতে পারে না।
  • চলিত উচ্চারণে "ড়" (ড-এ শূন্য ড়) আর "ঢ়" (ঢ-এ শূন্য ঢ়)-এর উচ্চারণ কিছুটা "র"-এর কাছাকাছি। দুটোই শব্দের প্রথমে আসে না কারণ বিদ্যাসাগর এদের প্রবর্তন করেন শব্দের (শুধু) মাঝে বা শেষে "ড" এবং "ঢ"-এর তাড়ণযাত উচ্চারণ ইঙ্গিত করতে।
ব্যঞ্জনবর্ণ
স্পর্শ অনুনাসিক অন্তঃস্থ ঊষ্ম
বর্গীয় বর্ণ
অঘোষ ঘোষ অঘোষ ঘোষ
অল্পপ্রাণ মহাপ্রাণ অল্পপ্রাণ মহাপ্রাণ অল্পপ্রাণ মহাপ্রাণ
কন্ঠ্য[টীকা ১]
/kɔ/

/ɔ/

/gɔ/

/ɡʱɔ/

/ŋɔ/

/ɦɔ~hɔ/[টীকা ২]
তালব্য[টীকা ৩]
/ɔ~tsɔ~sɔ/

/tʃʰɔ~tsʰɔ~sɔ/

/ɔ~dzɔ~zɔ/

/dʒʱɔ~dzʱɔ/

/nɔ~ɔ/[টীকা ৪]

/ɔ~dzɔ~zɔ/[টীকা ৫]

/ʃɔ~ɕɔ/[৩]
মূর্ধন্য[টীকা ৬]
/ɔ/

/t̠ʰɔ/

/ɔ/

/d̠ʱɔ/

/nɔ/[টীকা ৭]

/rɔ/

/ɕɔ~ʃɔ/[টীকা ৮]
দন্ত্য
/ɔ/

/t̪ʰɔ/

/ɔ/

/d̪ʱɔ/

/nɔ/

/lɔ/

/sɔ~ɕɔ~ʃɔ/[টীকা ৮]
ওষ্ঠ্য
/pɔ/

/ɔ~ɸɔ~/f//[টীকা ৯]

/bɔ/

/ɔ/

/mɔ/
[টীকা ১০]
/bɔ/
সংস্কার- পরবর্তী অক্ষরসমুহ ড়
/ɽɔ/
ঢ়
/ɽʱɔ/
য়
/ɔ/

সংশোধক বর্ণ

সংশোধক
চিহ্ন চিহ্নের নাম কাজ
খণ্ড ত "ত" এর খণ্ড রূপ
অনুঃস্বর "ঙ" এর খণ্ড রূপ
বিসর্গ "হ্" এর আরেকটি রূপ, র এবং স বিলুপ্ত হয়ে বানানে বিসর্গ আসতে পারে, যেমন পুনর>পুনঃ, নমস> নমঃ
চন্দ্রবিন্দু অনুনাসিক স্বর
হসন্ত ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত হলে পূর্বনির্ধারিত সহজাত স্বর "অ" উচ্চারিত হয় না
অবগ্রহ স্বরবর্ণের শব্দ দীর্ঘ করার জন্য ব্যবহৃত
উদাহরণ ১: শুনঽঽঽ (এইখানে "ন"-র পূর্বনির্ধারিত সহজাত স্বর "অ" দীর্ঘ করা হচ্ছে)
উদাহরণ ২: কিঽঽঽ? (এইখানে "ক" এর সাথে যুক্ত স্বর "ই" দীর্ঘ করা হচ্ছে)
‍্য যফলা "এ্যা" বা "অ্যা" উচ্চারণ বিশিষ্ট শব্দের জন্য ব্যবহৃত
"মুখ্য"-এর মতন বানানে ব্যবহৃত
ফরাসিজার্মান বর্ণ "ü"-কে "উ্য" আর "ö"-কে "ও্য" বা "এ্য" -তে প্রতিলিপি করা জন্য ব্যবহৃত।
‍্র রফলা যুক্তাক্ষরের র-কারান্ত রূপ
র্‍ রেফ যুক্তাক্ষরের র-কারাদি রূপ
‍্ব বফলা শুধু সংস্কৃত থেকে গৃহীত শব্দের বানান সংরক্ষণ করার জন্য ব্যবহৃত যেমন, "স্বাধীন", "বিদ্বান", "বিশ্ব"
মাঝে-মধ্যে ইসলাম-সংক্রান্ত আরবি শব্দ প্রতিলিপি করা জন্য ব্যবহৃত।
উল্লেখ্যঃ সব ব-কারান্ত যুক্তাক্ষরের 'ব' বফলা নয়; যেমন অম্বর, লম্বা, তিব্বত, বাল্ব এসব যুক্তাক্ষরের 'ব' বফলা নয়।
ঈশ্বার স্বর্গীয় অথবা মৃত ব্যক্তির নামের আগে এই চিহ্ন ব্যবহৃত
আঞ্জী
(সিদ্ধিরস্তু)
আহাবন

সংখ্যা

সংখ্যা
বাংলা সংখ্যা পদ্ধতি

বিরামচিহ্ন ও অন্যান্য ব্যবহৃত চিহ্ন

বিরামচিহ্ন ও অন্যান্য ব্যবহৃত চিহ্ন
চিহ্ন চিহ্নের নাম
দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ
, কমা
: কোলন
; সেমিকোলন
:- কোলন ড্যাস
- ড্যাশ বা হাইফেন চিহ্ন
? প্রশ্নবোধক চিহ্ন
! বিস্ময়বোধক চিহ্ন
' ইলেক বা লোপ চিহ্ন
' ' একক উদ্ধৃতি চিহ্ন
" যুগল উদ্ধৃতি চিহ্ন
টাকা
... ঊহ্য বা বর্জন চিহ্ন
/ বিকল্প বা স্ল্যাশ চিহ্ন
\ ব্যাকস্ল্যাশ চিহ্ন
[ ] ( ) { } ⟨ ⟩ বন্ধনী চিহ্ন সমূহ
° তাপাঙ্ক / ডিগ্রী
% শতাংশ চিহ্ন
~ টিল্ডা চিহ্ন
= সমান চিহ্ন

ঝঞ্জায়

কোনো স্বরবর্ণ দ্বারা পৃথক না থাকলে সর্বাধিক চারটি ব্যঞ্জনবর্ণ পরস্পর যুক্ত হয়ে যুক্তাক্ষর তৈরী করতে পারে। সাধারণতঃ প্রথম ব্যঞ্জনবর্ণ যুক্তাক্ষরের ওপরের দিকে বা বাম দিকে দেখা যায়। যুক্তাক্ষরে অনেক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারী ব্যঞ্জনবর্ণ সংক্ষিপ্ত আকারে লেখা হয়, আবার অনেক ক্ষেত্রে মূল ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে তার কোনো সাদৃশ্য থাকে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাধারণ অবস্থায় ব্যঞ্জনবর্ণের যা উচ্চারণ, যুক্তাক্ষরে ব্যবহৃত হলে তার উচ্চারণের পরিবর্তন হয়ে যায়। যেমন "জ" এবং "ঞ" এর মিলনের ফলে তৈরী "জ্ঞ" যুক্তাক্ষরের উচ্চারণ "জ্ন" না হয়ে হয় "গ্গ"।

 
ন্দ্র (ন + দ + র)

(ব্যবহৃত ফন্টের কারণে কিছু অক্ষর উল্লেখিত রূপে প্রতীয়মান না হয়ে অন্য রূপে হতে পারে)

নিলীন রূপ

  • উচুনিচু: ক্ক, গ্ন, গ্ল, ন্ন, প্ন, প্প, ল্ল, ইত্যাদি...
  • ব-কারান্ত (বফলা এর অন্তর্ভুক্ত): গ্ব, ণ্ব, দ্ব, ল্ব, শ্ব ইত্যাদি...
  • পাশাপাশি: দ্দ, ন্দ, ব্দ, ব্জ, প্ট, শ্চ, শ্ছ, ইত্যাদি...

আনুমানিক রূপ

  • পাশাপাশি: দ্গ, দ্ঘ, ড্ড
  • ব-কারান্ত (বফলা এর অন্তর্ভুক্ত): ধ্ব, ব্ব, হ্ব

সঙ্কুচিত রূপ

  • পাশাপাশি: ঙ্ক্ষ, ঙ্খ, ঙ্ঘ, ঙ্ম, চ্চ, চ্ছ, চ্ঞ, ড্ঢ, ব্‍ব
  • "ত", উচুনিচু: ত্ন, ত্ম, ত্ব
  • "ম", উচুনিচু এবং পাশাপাশি: ম্ন, ম্প, ম্ফ, ম্ব, ম্ভ, ম্ম, ম্ল
  • "ষ", উচুনিচু এবং পাশাপাশি: ষ্ক, ষ্ট, ষ্ঠ, ষ্প, ষ্ফ, ষ্ম
  • "স", উচুনিচু এবং পাশাপাশি: স্ক, স্খ, স্ট, স্ত, স্থ, স্ন, স্প, স্ফ, স্ব, স্ম, স্ল

সংক্ষিপ্ত রূপ

  • "জ", উচুনিচু এবং পাশাপাশি: জ্জ, জ্ঞ, জ্ব
  • "ঞ", উচুনিচু এবং পাশাপাশি: ঞ্চ, ঞ্ছ, ঞ্জ, ঞ্ঝ
  • "ণ" ও "প", উচুনিচু এবং পাশাপাশি: ণ্ঠ, ণ্ড, প্ত, প্স, প্ট, ণ্ট, ণ্ঢ
  • "ত" ও "ভ", আকৃতি পরিবর্তন: ত্ত, ত্থ, ত্র, ভ্র
  • "থ", উচুনিচু এবং পাশাপাশি: ন্থ, স্থ, ম্থ
  • "ম", উচুনিচুতে নিচে (নিজের উপরের আকার প্রায় হারিয়ে দেয়): ক্ম, গ্ম, ঙ্ম, ট্ম, ণ্ম, ত্ম, দ্ম, ন্ম, ম্ম, শ্ম, ষ্ম, স্ম
  • "স", উচুনিচুতে নিচে (নিজের উপরের আকার হারিয়ে দেয়): ক্স

বৈকল্পিক রূপ

  • "ঙ", আকৃতি পরিবর্তন: ঙ্ক, ঙ্গ, উদাহরণ: অঙ্ক, সঙ্গীত,সঙ্গ ইত্যাদি।
  • "ধ", আকৃতি পরিবর্তন করে আর "ঝ"-র মতন রূপ নেয়: গ্ধ, দ্ধ, ন্ধ, ব্ধ,ল্ধ,
  • রেফ: র্ক, র্খ, র্গ, র্ঘ, ইত্যাদি...
  • রফলা: খ্র, গ্র, ঘ্র, ব্র, জ্র, ট্র, ঠ্র, ড্র, ম্র, স্র, ইত্যাদি...
    • রফলা যুক্ত হলে আকৃতি পরিবর্তন হয়: ক্র, ত্র, ভ্র
  • যফলা: ক্য, খ্য, গ্য, ঘ্য, দ্য, ন্য, শ্য, ষ্য, স্য, হ্য, ইত্যাদি...

ব্যতিক্রমসমূহ

  • "ক", "ত"-র মতন রূপ নেয়: ক্র, ক্ত
  • "চ", "ব"-র মতন রূপ নেয়: ঞ্চ
  • "ট"+"ট" (নিজের নিচে একটি বক্ররেখা তৈরি করে): ট্ট
  • "ষ"+"ণ" -তে "ণ" নিজেকে ২বার বক্র করে: ষ্ণ
  • "হ"+"ন" -তে "ন" নিজেকে বক্রের মতন করে নেয়: হ্ন
  • "হ"+"ম" (আকৃতি পরিবর্তন): হ্ম

ব্যতিক্রমী ব্যঞ্জনবর্ণ-স্বরবর্ণ সমন্বয়

    • "গ" আর "শ" -র সঙ্গে "উ" যুক্ত হলে "ও"- র মতন নিচে বক্র তৈরি করে: গু, শু
    • "ন" বা "স" এর সাথে "তু" যুক্ত হলে "ও"- র মতন নিচে বক্র তৈরি করে: ন্তু, স্তু
    • ব্যঞ্জনের ডানে বক্র তৈরি করে: রু, গ্রু, ত্রু, থ্রু, দ্রু, ধ্রু, ব্রু, ভ্রু, শ্রু
    • "হ"-র সঙ্গে উপরে বক্র তৈরি করে: হু
    • যুক্ত হলে ডানে ঘাই তৈরি করে: রূ, গ্রূ, থ্রূ, দ্রূ, ধ্রূ, ভ্রূ, শ্রূ
    • "হ" -র সঙ্গে যুক্ত হলে ডানে ঘাই তৈরি করে: হৃ

কিছু উদাহরণ: স+ত +র=স্ত্র, ম+প+র=ম্প্র, জ+জ+ব=জ্জ্ব, ক্ষ+ম=ক্ষ্ম

  • চারবর্ণের যুক্তাক্ষর হতে পারে যেমন ন+ত+র+য= ন্ত্র্য, স্বাতন্ত্র্য শব্দে এটি দেখা যায়

লিপি বৈশিষ্ট্য

বাংলা অক্ষরগুলোর উপর মাত্রা অর্থাৎ একটি আনুভূমিক রেখা দেয়া হয়। বাংলাতে মাত্রার প্রদর্শন পরিমাণ অনেক কম। , , , , ইত্যাদি বাংলা হরফে মাত্রার পরিমাণ খুব কম। বাংলাতে একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের কিছু স্বতন্ত্র জ্যামিতিক বৈশিষ্ট্য এই প্রাক-মুদ্রণ যুগেই নির্দিষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এগুলোর মধ্যে নিচেরগুলো উল্লেখযোগ্য

  • অনুভূমিক মাত্রা এবং বিভিন্ন হরফে এর পরিমাণ
  • বেশির ভাগ বাংলা হরফে ব্যবহৃত উল্লম্ব রেখাকৃতি অংশটি।
  • , , , , , ইত্যদি হরফে ব্যবহৃত ত্রিভুজাকৃতি রূপটি। একই ত্রিভুজটির খানিকটা বিকৃত রূপ , , , , , , ইত্যাদিতে দেখতে পাওয়া যায়।
  • লেখার দিকের সাথে অর্ধ-সমকোণে অঙ্কিত বিভিন্ন রেখাংশ বিভিন্ন হরফে দেখতে পাওয়া যায়। , , , ইত্যাদির নিচের অংশে, এবং , , , ইত্যাদিতে উল্লম্ব রেখার সাথে সংযুক্ত অবস্থায় এরকম রেখাংশ দেখতে পাওয়া যায়।

উপরের সবগুলোই বাংলা হরফকে নিজস্ব জ্যামিতিক বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছে এবং অন্যান্য লিপি থেকে আলাদা করেছে।

এসময়কার বাংলা হরফে আরও কিছু বৈশিষ্ট্য ছিল, যেগুলো বর্তমান বাংলা হরফে অনুপস্থিত। যেমন -

  • "" হরফটিকে ""-এর পেটে দাগ কেটে দেখানো যেত। অর্থাৎ পেট-কাটা "ব" (ৰ) দিয়ে এটি নির্দেশ করা হত। বর্তমানে এটি অসমীয়া ভাষাতে প্রচলিত হলেও বাংলায় আর প্রচলিত নেই।
  • বর্তমান বাংলা বেশ কিছু হরফের নিচে ফুটকি বা বিন্দু দেয়া হয়। এই ফুটকিগুলো এই যুগে প্রচলিত ছিল না। ""-কে পেটকাটা ব দিয়ে নির্দেশ করা হত। "য়"-এর নিচে কোন বিন্দু ছিল না; এটি শব্দে অবস্থানভেদে ভিন্ন ভাবে উচ্চারিত হত। আবার "ড়" এবং "ঢ়"-এরও কোন অস্তিত্ব ছিল না। "" এবং "" শব্দের মাঝে বসলে "ড়" এবং "ঢ়"-এর মতো উচ্চারিত হত।
  • ত+উ ব্যঞ্জন-স্বর সমবায়টি "ত্ত" দিয়ে প্রকাশ করা হত। আজও কোন কোন আধুনিক বাংলা যুক্তাক্ষরে, যেমন স+ত+উ = "স্তু" (যেমন- বস্তু) এবং ন+ত+উ = "ন্তু" (যেমন- কিন্তু) --- এই দুইটি যুক্তাক্ষরের ত+উ অংশে এর ফসিল দেখতে পাওয়া যায়।

এ সময় বাংলা ছাপা বইও বের হয়েছে। এগুলোতে বইয়ের একটি পাতা প্রথমে হাতে লেখা হত। তারপর সেই পুরো পাতার একটি প্রতিলিপি কাঠে বা ধাতুতে খোদাই করে নেওয়া হত। শেষে এই কাঠ বা ধাতুর ফলকে কালি লাগিয়ে একই পাতার অনেক কপি ছাপানো হত। একই লোকের হাতের লেখাতে যে বৈচিত্র্য থাকতে পারে, সেগুলো এই ছাপায় শুধরানো যেত না।

বাংলা মুদ্রিত হরফের জ্যামিতিক গড়ন

প্রতিটি মুদ্রিত বাংলা হরফ একটি অদৃশ্য চতুর্ভুজের মধ্যে বসানো থাকে। হরফের এই অদৃশ্য নকশাতে অনুভূমিক বরাবর প্রসারিত বেশ কিছু রেখা বাংলা হরফের জ্যামিতিক বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করেছে।

মাত্রা বরাবর যে রেখাটি চলে গেছে, যা থেকে বেশিরভাগ হরফ ঝুলে থাকে বলে মনে হয়, তাকে মাত্রারেখা বলে। বেশির ভাগ হরফের নিচ যেখানে ঠেকে যায়, সেই বরাবর কল্পিত অনুভূমিক রেখাটিকে ভূমিরেখা বলে। রোমান হরফগুলোর মূল অংশ সর্বদা একটি অদৃশ্য ভূমিরেখার উপর দাঁড়িয়ে থাকে। অন্যদিকে বাংলা হরফগুলো মাত্রা নামের একটি দৃশ্যমান রেখা থেকে নিচে ঝুলে থাকে। ফিওনা রস তাই বাংলা হরফের ভূমিরেখাকে "ধারণাগত ভূমিরেখা" আখ্যা দিয়েছেন। মাত্রারেখা থেকে ভূমিরেখার ব্যবধানকে "হরফের মূল উচ্চতা" বলে।

মাত্রারেখার কিছু উপরে আরেকটি অনুভূমিক রেখা কল্পনা করা যায়, যাতে ই-কার, ঈ-কার, ঐ-কার, রেফ ইত্যাদির মাথা গিয়ে ছুঁয়েছে; এটিকে শিরোরেখা বলে। একইভাবে ভূমিরেখার খানিকটা নিচে আরেকটি অনুভূমিক রেখা কল্পনা করা যায়, যেখানে উ-কার, ঊ-কার, ঋ-কার, ইত্যাদির নিচের প্রান্ত গিয়ে ঠেকেছে; একে পাদরেখা বলে। পাদরেখা থেকে শিরোরেখার ব্যবধানকে "হরফের উচ্চতা" হিসেবে ধরা যায়। মাত্রারেখার খানিকটা নিচে আরেকটি রেখা কল্পনা করা যায়, যেখানে বহু হরফের অংশবিশেষ দিক পরিবর্তন করে; একে মধ্যরেখা বলে।

প্রতিটি হরফ যে অদৃশ্য চতুর্ভুজাকৃতি স্থানে বসে, তার দুইপাশে খানিকটা খালি জায়গা থাকে, একে পার্শ্বস্থান বলে। দুপাশের পার্শ্বস্থান বাদ দিলে হরফের মূল প্রস্থ পাওয়া যায়। আর পাশাপাশি দুইটি হরফের প্রতিটির পার্শ্বস্থান যোগ করলে পাওয়া যায় ঐ দুই হরফের মধ্যে ফাঁক।

রোমানীকরণ

বাংলার রোমানীকরণ হল বাংলা লিপিটিকে রোমান লিপিতে উচ্চারণ মতে অনুবাদ করা। বাংলা ভাষার জন্যে অনেক রকম রোমানীকরণ পদ্ধতি প্রস্তাবিত করা আছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনোটাই সরকারি ভাবে স্বীকৃত নয় বা ব্যবহারে কোনো সমরূপতা নেই।

ইউনিকোড

১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে ইউনিকোড স্ট্যাণ্ডার্ড এ বাংলা লিপিকে যোগ করা হয়। ইউনিকোডে বাংলা লিপির অবস্থান U+0980 থেকে U+09FF পর্যন্ত।

বাংলা[১][২]
অফিসিয়াল ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম কোড চার্ট (পিডিএফ)
  0 1 2 3 4 5 6 7 8 9 A B C D E F
U+098x
U+099x
U+09Ax
U+09Bx ি
U+09Cx
U+09Dx
U+09Ex
U+09Fx
টীকা
১.^ ইউনিকোড সংস্করণ ১৪.০ অনুসারে
২.^ ধূসর এলাকা অনির্ধারিত জায়গা ইঙ্গিত করে।

আরও দেখুন

গ্রন্থ ও রচনাপঞ্জি

বাংলা

  • পলাশ বরন পাল। বাংলা হরফের পাঁচ পর্ব। স্বপন চক্রবর্তী সম্পাদিত মুদ্রণের সংস্কৃতি ও বাংলা বই গ্রন্থে। অবভাস। কলকাতা। ২০০৭।
  • পলাশ বরন পাল। ধ্বনিমালা বর্ণমালা। প্যাপিরাস। কলকাতা। ২০০১।
  • চিত্তরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। দুই শতকের বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশন। আনন্দ পাবলিশার্স। কলকাতা। ১৯৮১।
  • অতুল সুর। বাংলা মুদ্রণের দুশো বছর। জিজ্ঞাসা। কলকাতা। ১৯৮৬।
  • শ্রীপান্থ। যখন ছাপাখানা এল। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি। কলকাতা। ১৯৯৬।

ইংরেজি

  • Ross, Fiona. The Printed Bengali Character and Its Evolution (1999). London. Curzon.

টীকা

  1. যদিও আধুনিক বাংলায় "ক", "খ", "গ", "ঘ", "ঙ" আসলে জিহ্বামূলীয় ব্যঞ্জনধ্বনি এবং "হ" আসলে কণ্ঠনালীয় ব্যঞ্জনধ্বনি, পাঠ্য-পুস্তকে সংস্কৃত নাম "কন্ঠ্য"-ই ব্যবহৃত হয়।
  2. শব্দের শুরুতে ও শেষে "হ"-এর উচ্চারণ হবে অঘোষ (/ɦ/) তবে মাঝে থাকলে হবে ঘোষ (/h/)।
  3. আধুনিক বাংলায় তালব্য অক্ষরসমূহ আসলে তালুদন্তমূলীয় ব্যঞ্জনধ্বনি। তবে কিছু পূর্বাঞ্চলিক উচ্চারণে তা অতালব্যীভূত হয়ে যায়।
  4. "ঞ"-এর আসল ধ্বনি তালব্য আনুনাসিক /ɲ/ হলেও আধুনিক বাংলায় নাসিক্য স্বরধ্বনি // প্রকাশ করে। তবে যুক্তাক্ষরে ব্যবহৃত হলে এর উচ্চারণ 'ন'-এর ন্যায় (দন্তমূলীয় আনুনাসিক, /n/) হয়ে যায়।
  5. সংস্কৃতে "য" দিয়ে ঘোষ তালব্য অন্তঃস্থধ্বনি /j/ (ইংরেজি 'ওয়াই'-এর উচ্চারণ) বুঝানো হতো। বাংলায় এর দুটি ধ্বনি ছিল। শব্দের শুরুতে ঠিক "জ"-এর ন্যায় (ঘোষ তালুদন্তমূলীয় ঘৃষ্টধ্বনি, //) উচ্চারিত হতো আর অন্য ক্ষেত্রে এর উচ্চারণ ছিল তালব্য অন্তঃস্থধ্বনির। বর্ণমালা সংস্কারের সময় ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর শব্দের মাঝে বা শেষে "য"-এর অন্তঃস্থ উচ্চারণ ইঙ্গিত করতে "য়" (যা কার্যতভাবে অর্ধস্বরধ্বনি // প্রকাশ করে)-এর প্রবর্তন করেন। আধুনিক বাংলায় "য"-এর দুটি ধ্বনি, একটি "জ"-এর ন্যায় ও অপরটি হল যফলা হিসেবে অর্ধ-বিবৃত সম্মুখ প্রসারিত স্বরধ্বনি /ɛ/ , যেমন "অ্যা", "ক্যা"। এর পূর্বাঞ্চলিক উচ্চারণে ঘোষ দন্তমূলীয় শিস-ঘৃষ্ট /dz/ প্রকাশ পায়। তবে বর্তমানে ফারসি-আরবি শব্দে ঘোষ দন্তমূলীয় শিসধ্বনি /z/ (ইংরেজি 'জেড'-এর উচ্চারণ) বুঝাতেও ব্যবহৃত হয়, যেমন "দোযখ", "যাকাত"।
  6. বর্ণশিক্ষাদানের সময় এখনও "মূর্ধন্য" বললেও বর্তমানে বাংলায় সত্যিকার অর্থে মূর্ধন্য ব্যঞ্জনধ্বনি নেই। তাই পূর্বে "মূর্ধন্য" হিসেবে অভিহিত অক্ষরমালা আধুনিক পাঠ্য-পুস্তকে প্রায়ই "দন্তমূলীয়" কিংবা "পশ্চাদ্দন্তমূলীয়" হিসেবে অভিহিত করা হয়।
  7. "ণ"-এর আসল ধ্বনি মূর্ধন্য আনুনাসিক /ɳ/ হলেও আধুনিক বাংলায় প্রায় সবসময়ই 'ন'-এর ন্যায় (দন্তমূলীয় আনুনাসিক, /n/) উচ্চারিত হয়। অন্যান্য মূর্ধন্য বর্ণের সঙ্গে যুক্তাক্ষরে ছাড়া এর আসল ধ্বনি কদাচিৎ পাওয়া যায়।
  8. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; শ/ষ/স নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  9. যদিও "ফ" দিয়ে অঘোষ ওষ্ঠ্য স্পর্শধ্বনির মহাপ্রাণ রূপকে // বোঝানো হয়, চলিত উচ্চারণে তা অঘোষ দন্তৌষ্ঠ্য ঊষ্মধ্বনির /f/ (ইংরেজি 'এফ'-এর উচ্চারণ) অথবা অঘোষ ওষ্ঠ্য ঊষ্মধ্বনির /ɸ/ ('এফ'-এর খুব কাছকাছি উচ্চারণ) ন্যায় উচ্চারিত হয়।
  10. পূর্বে "ব" দিয়ে দুটি বর্ণ বুঝানো হতো। একটিকে বলা হতো "বর্গীয় ব" ("প", "ফ"-এর পর যে "ব") ও অপরটি "অন্তঃস্থ ব" (এই "ব") নামে পরিচিত ছিল। "অন্তঃস্থ ব"-এর আসল ধ্বনি ছিল সংস্কৃতে ঘোষ ওষ্ঠ্য অন্তঃস্থধ্বনি যা নির্দিষ্টভাবে ঘোষ কন্ঠৌষ্ঠ্য অন্তঃস্থধ্বনি /w/ (ইংরেজি 'ডাবল ইউ'-র উচ্চারণ) অথবা ঘোষ দন্তৌষ্ঠ্য অন্তঃস্থধ্বনি /ʋ/ (ইংরেজি 'ভি'-এর খুব কাছাকাছি উচ্চারণ) হতো। বাংলায় এর ধ্বনি মুলত প্রথমটাই হতো। কালক্রমে তা হারিয়ে যায় ও "অন্তঃস্থ ব"-এর উচ্চারণ "বর্গীয় ব"-এর ন্যায় (ঘোষ ওষ্ঠ্য স্পর্শধ্বনি, /b/) হয়ে যায়। তার ওপর আবার দুই বর্ণ একই অক্ষর দিয়ে বুঝানো হতো (অসমীয়া বর্ণমালায় "অন্তঃস্থ ব"-কে "ৱ" দিয়ে বুঝানো হয় এবং এর আসল ধ্বনি এখনও বিদ্যমান)। এসব কারণে সাম্প্রতিক দুই "ব"-কে একই অক্ষর অর্থাৎ যেটা "বর্গীয় ব" ছিল সেটা হিসেবে চিহ্নিত করে দেয়া হয়। যদিও বফলার মাধ্যমে "অন্তঃস্থ ব"-এর উপস্থিতি এখনও লক্ষণীয়।

তথ্যসূত্র

  1. "প্রাচীন লিপিগুলি (ইংরেজি'তে)"। ১৬ নভেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১০ 
  2. Ross পৃষ্ঠা ১৩৮
  3. বাংলা ভাষায় শিসধ্বনির জন্য তিনটি বর্ণ আছে: "শ", "ষ" ও "স"। আধুনিক বাংলায় সবচেয়ে প্রচলিত শিসধ্বনি অঘোষ তালুদন্তমূলীয় শিসধ্বনি /ʃ/ ও অঘোষ দন্তমূল-তালব্য শিসধ্বনির /ɕ/ মধ্যেই হয়ে থাকে এবং তা "শ" দিয়ে বুঝানো হয়। তবে আজ "স" এবং "ষ"-ও প্রায়ই এই ধ্বনির ন্যায় উচ্চারিত হয়। আরেকটি শিসধ্বনি হল অঘোষ দন্তমূলীয় শিসধ্বনি /s/ (ইংরেজি 'এস'-এর উচ্চারণ) যা প্রারম্ভ হতে "স" দিয়ে বুঝনো হতো। তবে আজ কার্যতভাবে "শ" এবং "ষ"-ও এভাবে উচ্চারিত হয়। আরেকটি শিসধ্বনি (যা বিলুপ্ত হয়ে গেছে) ছিল অঘোষ মূর্ধন্য শিসধ্বনি /ʂ/ যা প্রারম্ভ হতে "ষ" দিয়ে বুঝনো হতো। বর্তমানে "ষ"-এর উচ্চারণ অঘোষ দন্তমূল-তালব্য শিসধ্বনি /ɕ/ ও অঘোষ তালুদন্তমূলীয় শিসধ্বনির /ʃ/ মধ্যেই হয়ে থাকে তবে মূর্ধন্য ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে যুক্তাক্ষরে এর আসল ধ্বনি /ʂ/ মাঝেমধ্যে পাওয়া যায়।

বহিঃসংযোগ