আ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ

১৭৭৮ সালের আধুনিক বাংলা ব্যাকরণ

অ্যা গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল লেঙ্গুয়েজ (বাংলা ভাষার ব্যাকরণ) ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হালেদ কর্তৃক ইংরেজি ভাষায় রচিত আধুনিক বাংলা ব্যাকরণ বই। এটি বাংলা ভাষার সর্বপ্রথম ব্যাকরণ[][] ১৭৭৮ সালে প্রকাশিত এই বইটি সম্ভবত বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির হুগলিতে এনড্রুজ ছাপাখানা থেকে মুদ্রিত হয়।[]

অ্যা গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল লেঙ্গুয়েজ
border=yes
হ্যালহেড প্রণীত প্রথম প্রকাশের আখ্যাপত্র
লেখকন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হালেদ
মূল শিরোনামA Grammar of the Bengal Language
দেশবেঙ্গল প্রেসিডেন্সি
ভাষাইংরেজি
বিষয়বাংলা ব্যাকরণ
প্রকাশিত১৭৭৮
মিডিয়া ধরনমুদ্রণ
পৃষ্ঠাসংখ্যা২১৭ (প্রথম সংস্করণ)
ওসিএলসি৪৫৭৫৭১৪০৫
পূর্ববর্তী বইঅ্যা কোড অব জেন্টু লস্ (১৭৭৬) 

পটভূমি

সম্পাদনা

হালেদের এই বই প্রকাশের পূর্বে কিছু বাংলা পদ্য বইয়ের সন্ধান পাওয়া গেলেও কোনো গদ্যের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তৎকালীন সময়ের পূর্বে বঙ্গদেশে গদ্যের চর্চা হতো না। এ কারণে হালেদ এই বইয়ে কোনো গদ্যের উদ্ধৃতি রাখেননি। তবে তিনি কাশীরাম দাসের মহাভারত-এর অনুবাদ, মহাপ্রভুর লীলাময় বৈষ্ণব গ্রন্থসমূহ এবং ভারতচন্দ্র রায়ের বিদ্যাসুন্দর প্রভৃতি বই থেকে উদাহরণ সংগ্রহ করেছিলেন। মূলতঃ ইংরেজিতে লিখিত হলেও এতে বাংলায় লেখা অনেক অক্ষর, শব্দ, বাক্য, পদ্যাংশ ও শ্লোক বাংলা হরফেই মুদ্রিত হয়েছিল ; কয়েকটি স্থানে কিছু ফারসি লিপিও ছিল। মূলত প্রাচ্য ভাষার সাথে পশ্চিমাদের পরিচিত করে তোলাই বই রচনায় মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল। হালেদ এই বইয়ে বাংলার ক্যাক্সটন নামে খ্যাত চার্লস উইলকিন্সের তৈরি বাংলা হরফ ব্যবহার করেন।[][]

বর্ণনা

সম্পাদনা

ইংরেজি ভাষায় লেখা বাংলা ভাষার প্রথম ব্যাকরণ A Grammar Of The Bengal Language গ্রন্থটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ২৪৮। মূল গ্রন্থভাগ শুরু হয়েছে প্রথম ত্রিশ পৃষ্ঠার পর। প্রথমাংশের শিরোনাম-পৃষ্ঠার পর রয়েছে পঁচিশ পৃষ্ঠাব্যাপী লেখকের ভূমিকা এবং পরবর্তী পাঁচ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে সূচীপত্র এবং সংশোধন ও সংযোজনের বিজ্ঞাপন ইত্যাদি। গ্রন্থটি আকারে হালের A4 মাপের কিছু ছোট–যাকে বলা হতো Crown আকারের কাগজ–তার এক-অষ্টমাংশ। মুদ্রিত এলাকার পরিমাপ কমবেশি ৬.৫ x ৪.৫ ইঞ্চি। পাতার শীর্ষভাগে (Header) গ্রন্থের নাম ও পৃষ্ঠা নম্বর মুদ্রিত ছিল। বিজোড় সংখ্যক পৃষ্ঠার শীর্ষভাগে বাম প্রান্তে পৃষ্ঠা সংখ্যা এবং জোড় সংখ্যক পৃষ্ঠার ডান প্রান্তে পৃষ্ঠা সংখ্যা উল্লিখিত হয়েছিল। শীর্ষভাগে গ্রন্থনাম দুই অংশে মুদ্রিত হয়েছিল: বিজোড় সংখ্যক পাতার শীর্ষে A GRAMMAR OF THE এবং জোড়সংখ্যক পাতার শীর্ষে BENGAL LANGUAGE মুদ্রিত হয়েছিল। পাঠক লক্ষ্য করবেন গ্রন্থের নামপত্রে চারটি অংশ রয়েছে। মধ্য ভাগে লেখা গ্রন্থের নাম ও লেখকের নাম : A
GARMMAR
OF THE
BENGAL LANGUAGE
BY
NATHANIEL BRASSEY HALHED

এর ওপরে–নামপত্রের শীর্ষভাগে লিখিত ছিল :

বোধপ্রকাশ শব্দশাস্ত্র
ফিরিঙ্গিনামুপকারার্থ
ক্রিয়তে হালেদঙ্গ্রেজী

যার অর্থ হলো যে, হালেদ ফিরিঙ্গিদের উপকার সাধনে এই গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন।

বাঙ্গালায় নিযুক্ত ব্রিটিশ রাজকর্মচারি ও বণিকদের জন্য–যারা বাঙলা ভাষা শিক্ষায় আগ্রহী–হালেদ সাহেব গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন। ইংরেজি Grammar শব্দের তিনি বঙ্গার্থ করেছিলেন “শব্দশাস্ত্র”। নামপত্রের তৃতীয়ভাগে অর্থাৎ গ্রন্থ ও গ্রন্থকারের নামের পরে লিখিত ছিল: ইন্দ্রাদয়োপি যস্যান্ত নয়যুঃ শব্দবারিধেঃ। প্রক্রিয়ান্তস্য কৃৎস্নস্য ক্ষমোবক্তু নরঃ কথ।। যার অর্থ হলো : ইন্দ্র ইত্যাদি (দেবতারা)ও যে শব্দসমুদ্রের কুলকিনারা পেলেন না, সেই শব্দবারিধির কলাকৌশল মানুষের পক্ষে কী ক’রে বলা সম্ভব! নামপত্রের শেষভাগে মুদ্রণস্থল এবং প্রকাশবর্ষের কথা নিম্নরূপ উল্লিখিত ছিল: PRINTED AT HOOGLY IN BENGAL M DCC LXXVIII.

অর্থাৎ গ্রন্থটি বাঙ্গালা দেশের হুগলিতে মুদ্রিত এবং ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে (বাঙলা ১১৮৫ সন) প্রকাশিত। মুদ্রকের নাম উল্লেখ করা হয় নি ; তবে আমরা জানি মুদ্রাঙ্কনে যার প্রধান ভূমিকা ছিল তিনি চার্লস উইলকিনস সাহেব (১৭৪৯-১৮৩৬)–যিনি লোহা খোদাই ক’রে, ছাঁচে সীসা ঢালাই ক’রে মুদ্রণ কাজে ব্যবহার্য সচল বাংলা অক্ষর বা টাইপ তৈরি করেছিলেন। হালেদের গ্রন্থে ব্যবহৃত বাংলা অক্ষরের উচ্চতা প্রায় আধা ইঞ্চি। জন ক্লার্ক মার্শম্যানের (১৭৯৪-১৮৭৭) সূত্রে আমরা জেনেছি হুগলিতে অবস্থিত অ্যান্ড্রুজ সাহেবের ছাপাখানায় মুদ্রিত হয়েছিল A Grammar Of The Bengal Language গ্রন্থটি। এর জন্য উন্নতমানের কাগজ ও কালি আমদানি ক’রে নিয়ে আসা হয়েছিল ব্রিটেন থেকে।[]

বাংলাদেশ সংস্করণ ২০১৮

সম্পাদনা

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা থেকে অ্যা গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল লেঙ্গুয়েজ বইটির একটি ফ্যাকসিমিলি সংস্করণ মুদ্রিত হয়। এটি প্রকাশ করে জার্নিম্যান বুক্স, ইস্টার্ন প্লাজা, ঢাকা। প্রচ্ছদ করেন তারিক সুজাত। মূল্য রাখা হয় ৭৫০ টাকা। আইএসবিএন: 978 984 92914 97[][][]

কাঠামো

সম্পাদনা

হ্যালহেডের বাংলা ব্যাকরণ গ্রন্থে আটটি অধ্যায় রয়েছে। তাঁর দীর্ঘ ভূমিকার পর একটি বিষয়সূচী রয়েছে ভাষান্তরক্রমে যা নিম্নরূপ দাঁড়ায় :

  • ১ম অধ্যায়: ভাষার উপাদান / পৃ: ১
  • ২য় অধ্যায়: বিশেষ্য পদ / পৃ: ১৬
  • ৩য় অধ্যায়: সর্বনাম / পৃ: ৭৫
  • ৪র্থ অধ্যায়: ক্রিয়াপদ / পৃ: ১০০
  • ৫ম অধ্যায়: শব্দবিশেষণ ও শব্দযোগ / পৃ: ১৪৩
  • ৬ষ্ঠ অধ্যায়: সংখ্যা লিখন / পৃ: ১৫৯
  • ৭ম অধ্যায়: বাক্যে পদ সংস্থাপনের ক্রম / পৃ: ১৭৭
  • ৮ম অধ্যায়: উচ্চারণ ও ছন্দপ্রকরণ / পৃ: ১৯০

উপর্যুক্ত ৮টি পৃথক অধ্যায়ের পর রয়েছে ‘সংযোজনী’ অংশ (Appendix)। সূচীপত্রের পর রয়েছে শুদ্ধিপত্র। ভূমিকায় তিনি লিখেছেন—

বাংলা ভাষার শব্দগৌরব অসীম। বাংলা ভাষায় সাহিত্য, বিজ্ঞান, ইতিহাসাদি যে-কোন বিষয় রচিত হতে পারে। কিন্তু বাঙ্গালিরা এ বিষয়ে যত্নশীল নন।

[]

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. মুহাম্মদ শফিক হোসাইন (ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০০৭)। "বাংলা ভাষার জন্ম"দ্য ডেইলি স্টার। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ৬, ২০১৪ 
  2. "বাংলা ভাষার ইতিহাস"। bengalitranslation.net। ২১ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ৬, ২০১৪ 
  3. গোলাম মঈনউদ্দিন (ডিসেম্বর ১৯৮৫)। "বাংলা বই: প্রকাশনার গোড়ার কথা"। বইঢাকা: বাংলা একাডেমি। পৃষ্ঠা ১৬। আইএসবিএন 9-840-72928-4 
  4. "২৪০ বছর পর হালেদ সাহেবের বাংলা ভাষার ব্যাকরণের দ্বিতীয় মুদ্রণ"। ৬ অক্টোবর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ অক্টোবর ২০২১ 
  5. "Faizul Latif Chowdhury"id.oclc.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৩-৩১ 
  6. লতিফ চৌধুরী, ফয়জুল (২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮)। "২৪০ বছর পর হালেদ সাহেবের বাংলা ভাষার ব্যাকরণের দ্বিতীয় মুদ্রণ"Bd News। ৬ অক্টোবর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ 
  7. সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ৮৮৫, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা