পারমাণবিক ব্যাসার্ধ

কোনো মৌলিক পদার্থের পারমাণবিক ব্যাসার্ধ তার পরমাণুর আকারের এক পরিমাপ, যা সাধারণত নিউক্লিয়াসের কেন্দ্র থেকে সর্ববহিস্থ বিচ্ছিন্ন ইলেকট্রন পর্যন্ত গড় বা সাধারণ দূরত্বকে বোঝায়। যেহেতু সীমানাটি কোনো সুনির্দিষ্ট ভৌত সত্ত্বা নয়, সেহেতু একাধিক প্রকারের পারমাণবিক ব্যাসার্ধের বর্তমান। চারটি বহুল প্রচলিত প্রকারভেদ হলো: ভান ডার ওয়ালস ব্যাসার্ধ, আয়নীয় ব্যাসার্ধ, ধাতব ব্যাসার্ধসমযোজী ব্যাসার্ধ। পরমাণুদের ব্যাসার্ধগুলিকে আলাদা করে পরিমাপ করার জন্য তাদের আলাদা করার যে জটিলতা থাকে, তার জন্য রাসায়নিকভাবে আবদ্ধ অবস্থায় পরমাণুদের ব্যাসার্ধ পরিমাপ করা হয়। তবে আলাদা অবস্থায় ব্যাসার্ধের তাত্ত্বিক গণনা আরও সহজ হয়ে যায়।

হিলিয়াম পরমাণুর গঠন। ধুসর রঙে ইলেকট্রন সম্ভাবনা ঘনত্ব দেখানো হয়েছে।
ইথানল অণুর (CH3CH2OH) আনুমানিক গঠন। প্রত্যেক পরমাণুকে মৌলের ভান ডার ওয়ালস ব্যাসার্ধের গোলক দিয়ে দেখানো হয়েছে।

প্রকারভেদ অনুযায়ী এই শব্দটি সংঘনিত পদার্থ, অণুর সমযোজী বন্ধন, কিংবা আয়নিতউত্তেজিত অবস্থায় পরমাণুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং এর মান পরীক্ষার দ্বারা নির্ণয় বা তাত্ত্বিক মডেলের দ্বারা গণনা করা যায়। পারমাণবিক ব্যাসার্ধের মান পরমাণুর অবস্থা ও প্রসঙ্গ অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।[]

ইলেকট্রনদের কোনো নির্দিষ্ট কক্ষপথ বা পরিসর নেই। বরং তাদের অবস্থানকে সম্ভাবনা বিন্যাস দিয়ে ব্যাখ্যা করা উচিত যা নিউক্লিয়াস থেকে দূরে যাওয়ার সঙ্গে কোনো নির্দিষ্ট সীমা ছাড়াই মিলিয়ে যায়। এটি পারমাণবিক কক্ষক বা ইলেকট্রন মেঘ নামে পরিচিত। এছাড়া সংঘনিত পদার্থ বা অণুর পরমাণুর ইলেকট্রন মেঘ কিছুটা ক্ষেত্র জুড়ে অভিলেপিত হয় এবং কিছু ইলেকট্রন দুই বা ততোধিক পরমাণু দ্বারা গঠিত এক বড় এলাকা জুড়ে ঘুরে বেড়াতে পারে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন নিস্তরিৎ পরমাণুর ব্যাসার্ধ ৩০ থেকে ৩০০ পিকোমিটার (৩.০×১০−১১ থেকে ৩.০০×১০−১০ মিটার)। সুতরাং, এক পরমাণুর ব্যাসার্ধ ওর নিউক্লিয়াসের ব্যাসার্ধের (১–১০ ফেমটোমিটার) ১০,০০০ গুণের বেশি[] এবং দৃশ্যমান আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের (৪০০–৭০০ ন্যানোমিটার) ১০০০ ভাগের ১ ভাগের তুলনায় কম।

প্রকারভেদ

সম্পাদনা
  • ভান ডার ওয়ালস ব্যাসার্ধ: সরলতম সংজ্ঞায়, সমযোজী বা ধাতব বন্ধনে আবদ্ধ নয় এমন মৌলের দুটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসের মধ্যে সর্বনিম্ন দূরত্বের অর্ধেক।[] যেসব মৌলের ক্ষেত্রে ভান ডার ওয়ালস বলের উপর অন্যান্য আন্তরাণবিক বলের আধিপত্য বর্তমান তাদের ক্ষেত্রেও ভান ডার ওয়ালস ব্যাসার্ধ নির্ণয় করা যায়। যেহেতু পারমাণবিক মেরুকরণে কোয়ান্টাম চাঞ্চল্যের দ্বারা ভান ডার ওয়ালস বলের উদ্ভব হয়, মেরুকরণের প্রবণতার (যা সাধারণত আরও সহজে নির্ণয় বা গণনা করা যায়) দ্বারা ভান ডার ওয়ালস ব্যাসার্ধ পরোক্ষভাবে নির্ণয় করা যায়।[]
  • আয়নীয় ব্যাসার্ধ: এক বিশেষ আয়নীয় অবস্থায় কোনো মৌলের আয়নের সাধারণ ব্যাসার্ধ, যা ঐ আয়ন বর্তমান এমন কেলাসাকার লবণের পারমাণবিক নিউক্লিয়াসের ব্যবধানের দ্বারা নির্ণয় করা যায়। দুটি পাশাপাশি পরস্পর বিপরীতধর্মী আয়নের মধ্যে ব্যবধান (তাদের মধ্যে আয়নীয় বন্ধনের দৈর্ঘ্য) তাদের আয়নীয় ব্যাসার্ধের যোগফলের সঙ্গে সমান হওয়া উচিত।[]
  • সমযোজী ব্যাসার্ধ: অন্য পরমাণুর সঙ্গে সমযোজীভাবে আবদ্ধ কোনো মৌলের পরমাণুর সাধারণ ব্যাসার্ধ, যা সংশ্লিষ্ট অণুর পারমাণবিক নিউক্লিয়াসের মধ্যে ব্যবধানের দ্বারা নির্ণয় করা যায়। কোনো অণুর দুটি পরমাণুর মধ্যে ব্যবধান (তাদের মধ্যে সমযোজী বন্ধনের দৈর্ঘ্য) তাদের সমযোজী ব্যাসার্ধের যোগফলের সঙ্গে সমান হওয়া উচিত।[]
  • ধাতব ব্যাসার্ধ:
  • বোর ব্যাসার্ধ: পরমাণুর বোর মডেল (১৯১৩) দ্বারা নির্ণয় করা সর্বনিম্ন শক্তিস্তরের ইলেকট্রনের কক্ষপথের ব্যাসার্ধ।[][] এটি হাইড্রোজেন, একক আয়নীয় হিলিয়ামপজিট্রনিয়ামের মতো এক-ইলেকট্রনবিশিষ্ট পরমাণু ও আয়নের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মডেলটি বাতিল হলেও হাইড্রোজেন পরমাণুর বোর ব্যাসার্ধকে এখনও এক গুরুত্বপূর্ণ ভৌত ধ্রুবক হিসেবে অভিহিত করা হয়।

পরীক্ষার দ্বারা পরিমাপ করা পারমাণবিক ব্যাসার্ধ

সম্পাদনা

নিম্নলিখিত পর্যায় সারণীতে পরীক্ষার দ্বারা পরিমাপ করা মৌলের সমযোজী ব্যাসার্ধ দেখানো হয়েছে, যা জে. সি. স্লেটার (১৯৬৪) প্রকাশিত করেছিলেন।[] মানগুলি পিকোমিটারে আছে এবং এটি ৫ পিকোমিটার অব্ধি নিখুঁত। ব্যাসার্ধ বৃদ্ধির সঙ্গে বাক্সের রং লাল থেকে হলুদে বিবর্তিত হচ্ছে। ধূসর রঙের দ্বারা তথ্যের অভাবকে দেখানো হয়েছে।

শ্রেণী ১০ ১১ ১২ ১৩ ১৪ ১৫ ১৬ ১৭ ১৮
পর্যায়
H
২৫
He
 
Li
১৪৫
Be
১০৫
B
৮৫
C
৭০
N
৬৫
O
৬০
F
৫০
Ne
 
Na
১৮০
Mg
১৫০
Al
১২৫
Si
১১০
P
১০০
S
১০০
Cl
১০০
Ar
 
K
২২০
Ca
১৮০
Sc
১৬০
Ti
১৪০
V
১৩৫
Cr
১৪০
Mn
১৪০
Fe
১৪০
Co
১৩৫
Ni
১৩৫
Cu
১৩৫
Zn
১৩৫
Ga
১৩০
Ge
১২৫
As
১১৫
Se
১১৫
Br
১১৫
Kr
 
Rb
২৩৫
Sr
২০০
Y
১৮০
Zr
১৫৫
Nb
১৪৫
Mo
১৪৫
Tc
১৩৫
Ru
১৩০
Rh
১৩৫
Pd
১৪০
Ag
১৬০
Cd
১৫৫
In
১৫৫
Sn
১৪৫
Sb
১৪৫
Te
১৪০
I
১৪০
Xe
 
6 Cs
২৬০
Ba
২১৫
*
 
Lu
১৭৫
Hf
১৫৫
Ta
১৪৫
W
১৩৫
Re
১৩৫
Os
১৩০
Ir
১৩৫
Pt
১৩৫
Au
১৩৫
Hg
১৫০
Tl
১৯০
Pb
১৮০
Bi
১৬০
Po
১৯০
At
 
Rn
 
Fr
 
Ra
215
**
 
Lr
 
Rf
 
Db
 
Sg
 
Bh
 
Hs
 
Mt
 
Ds
 
Rg
 
Cn
 
Nh
 
Fl
 
Mc
 
Lv
 
Ts
 
Og
 
* ল্যান্থানাইড
 
La
১৯৫
Ce
১৮৫
Pr
১৮৫
Nd
১৮৫
Pm
১৮৫
Sm
১৮৫
Eu
১৮৫
Gd
১৮০
Tb
১৭৫
Dy
১৭৫
Ho
১৭৫
Er
১৭৫
Tm
১৭৫
Yb
১৭৫
** অ্যাক্টিনাইড
 
Ac
১৯৫
Th
১৮০
Pa
১৮০
U
১৭৫
Np
১৭৫
Pu
১৭৫
Am
১৭৫
Cm
 
Bk
 
Cf
 
Es
 
Fm
 
Md
 
No
 

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Cotton, F. A.; Wilkinson, G. (১৯৮৮)। Advanced Inorganic Chemistry (5th সংস্করণ)। Wiley। পৃষ্ঠা 1385আইএসবিএন 978-0-471-84997-1 
  2. Basdevant, J.-L.; Rich, J.; Spiro, M. (২০০৫)। Fundamentals in Nuclear PhysicsSpringer। পৃষ্ঠা 13, fig 1.1। আইএসবিএন 978-0-387-01672-6 
  3. Pauling, L. (১৯৪৫)। The Nature of the Chemical Bond (2nd সংস্করণ)। Cornell University Pressএলসিসিএন 42034474 
  4. Federov, Dmitry V.; Sadhukhan, Mainak; Stöhr, Martin; Tkatchenko, Alexandre (২০১৮)। "Quantum-Mechanical Relation between Atomic Dipole Polarizability and the van der Waals Radius"Physical Review Letters121 (18): 183401। arXiv:1803.11507 এসটুসিআইডি 53564141ডিওআই:10.1103/PhysRevLett.121.183401পিএমআইডি 30444421বিবকোড:2018PhRvL.121r3401F। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০২১ 
  5. বোর, নিলস (১৯১৩)। "On the Constitution of Atoms and Molecules, Part I. – Binding of Electrons by Positive Nuclei" (পিডিএফ)Philosophical Magazine। 6। 26 (151): 1–24। ডিওআই:10.1080/14786441308634955বিবকোড:1913PMag...26....1B। ২০১১-০৯-০২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুন ২০১১ 
  6. বোর, নিলস (১৯১৩)। "On the Constitution of Atoms and Molecules, Part II. – Systems containing only a Single Nucleus" (পিডিএফ)Philosophical Magazine। 6। 26 (153): 476–502। ডিওআই:10.1080/14786441308634993বিবকোড:1913PMag...26..476B। ২০০৮-১২-০৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুন ২০১১ 
  7. Slater, J. C. (১৯৬৪)। "Atomic Radii in Crystals"। Journal of Chemical Physics41 (10): 3199–3205। ডিওআই:10.1063/1.1725697বিবকোড:1964JChPh..41.3199S