কাবা

সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত ইমারত, যা মুসলমানদের কিবলা

কাবা, কাবাঘর, কাবা শরীফ (আরবি: الكعبة al-Ka‘bah; আ-ধ্ব-ব: ['kɑʕbɑ]), আরও যে নামে পরিচিত al-Kaʿbatu l-Mušarrafah (الكعبة المشرًّفة), al-Baytu l-ʿAtīq (البيت العتيق "আদিম বাড়ি"), অথবা al-Baytu l-Ḥarām (البيت الحرام "পবিত্র বাড়ি"), একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত, যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারামের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।

কাবা
স্থানাঙ্ক: ২১°২৫′২১″ উত্তর ৩৯°৪৯′৩৪″ পূর্ব / ২১.৪২২৫° উত্তর ৩৯.৮২৬১৮১° পূর্ব / 21.4225; 39.826181
অবস্থান সৌদি আরব মক্কা, সৌদি আরব
শাখা/ঐতিহ্য ইসলাম

ইসলাম ধর্ম মতে কাবাকে সবচেয়ে পবিত্র স্থান হিসেবে মনে করা হয়।[] এটি মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ তারা যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে। পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন। বিশেষ করে রমাদান মাসের শেষ দশকে ও হজ্জের সময় মানুষের সমাগম সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়।।[]

ভৌগোলিক অবস্থান

সম্পাদনা

এটি সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে মসজিদ আল হারামের ' মাঝখানে অবস্থিত। এর ভৌগোলিক অবস্থান ২১°২৫′২১″ উত্তর ৩৯°৪৯′৩৪″ পূর্ব / ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব / 21.4224935; 39.8262013

কাবা শরীফের গিলাফ

সম্পাদনা
 
মক্কায় অবস্থিত কাবা ঘর।

কাবা কালো সিল্কের উপরে স্বর্ণ-খচিত ক্যালিগ্রাফি করা কাপড়ের গিলাফে আবৃত থাকে। কাপড়টি কিসওয়াহ নামে পরিচিত; যা প্রতিবছর পরিবর্তন করা হয়।[][] এ কাপড়ের মধ্যে সুতা দিয়ে কালেমা শাহাদাত লিখা হয়। এর দুই তৃতীয়াংশ স্থাণে কোরআনের বাণী স্বর্ণ দিয়ে এম্রোয়ডারি করা হয়।

কিবলা হচ্ছে নামাজের জন্য মুসলমানদের যেদিকে মুখ করে দাঁড়াতে হয়, সেই দিকটি। অনেক ধর্মেই উপাসনার জন্য কোনো নির্দিষ্ট দিক থাকে। সেরকমই মুসলমানদের জন্য কিবলা হচ্ছে মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারাম, যা কাবা শরিফ নামে বেশি পরিচিত। তবে, প্রথমে কাবা শরিফ কিবলা ছিল না। বরং প্রথম কিবলা ছিল জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদুল আকসা। মদীনায় হিজরতের ষোল মাস পর কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী কিবলা পরিবর্তিত হয়ে বর্তমানের কিবলা অর্থাৎ কাবা শরীফ কিবলা হিসেবে নির্ধারিত হয়।

তাওয়াফ

সম্পাদনা

তাওয়াফ হল ঘড়ির কাটার বিপরীতমুখী হয়ে কাবা ঘরের চারপাশে ৭ বার প্রদক্ষিণ করা। কাবার চারদিকে একত্রে ঘুরন্ত মুসলমানেরা এক আল্লাহ্‌র নামে একাত্মতা প্রকাশ করার জ্বলন্ত উদাহরণ । তাওয়াফ শুরুর পূর্বে হাজারে আসওয়াদে চুমু দেয়ার নিয়ম। তবে ভিড়ের কারণে এর কাছে যাওয়া সম্ভব না হলে হাত দিয়ে ইশারা করে তাওয়াফ শুরু করতে হয়।

হজের গুরুত্বপূর্ণ রুকন তাওয়াফ। তাছাড়া হজ্ব নির্দিষ্ট ৫ দিনে সম্পন্ন হয়। কিন্তু হজ্বের সফরে হাজিগণ দীর্ঘ দিন মক্কায় অবস্থান করেন। এ সময়ে প্রতিনিয়ত তাঁরা তাওয়াফ করবেন।

তাওয়াফের অনেক ফযীলত রয়েছে। সে কারণেই তাওয়াফ যেন সঠিক এবং সহীহ হয় সে জন্য তাওয়াফের নিয়ম-কানুন জানা জরুরী। তাই ধারাবাহিকভাবে পবিত্র কাবা শরিফ তাওয়াফ করার পদ্ধতি তুলে ধরা হল :-

তাওয়াফ শুরুর স্থান পবিত্র কাবা শরীফের যে কোনায় হাজরে আসওয়াদ স্থাপিত, সেই কোন্ থেকে মাত'আফের (তাওয়াফের জায়গার) ওপর দিয়ে মসজিদে হারামের দিকে একটা দাগ দিয়ে চিহ্নিত করে দেয়া আছে এবং কাবা শরীফের গিলাফের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত আরবিতে ‘আল্লাহু আকবার’ শব্দের ক্যালিগ্রাফি খচিত লেখা রয়েছে। সে বরাবর দাগের ওপর দাঁড়ানো।

তাওয়াফ শুরু করার আগে হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করা অথবা স্পর্শ করা সম্ভব না হলে দাগের ওপর দাঁড়িয়ে চলা শুরু করার সময় নামাজের নিয়ত বাঁধার মতো করে ডান হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠিয়ে হাজরে আসওয়াদের দিকে ইশারা করে মুখে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার` বলে চক্কর দেয়া শুরু করা।

যেদিকে যাবে হাজরে আসওয়াদ থেকে পবিত্র কাবা শরিফের দরজার দিকে অগ্রসর হওয়া। এর পর হাতিমে কাবার বাহিরে দিয়ে রুকনে ইরাকী ও শামী অতিক্রম করে রুকনে ইয়ামানী বরাবর এসে তা স্পর্শ করা। যদি সম্ভব না হয় তবে ডান হাতে ইশারা করে আল্লাহু আকবার বলবে।

রুকনে ইয়ামানী থেকে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত আসতে এই দোয়া পড়া-‘রাব্বানা আ-তিনা ফিদ্ দুন্ইয়্যা হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতে হাসানাতাও ওয়াক্বিনা আযা-বান্ না-র ।’ অর্থাৎ ‘হে আমাদের প্রতিপালক। আমাদেরকে দুনিয়া এবং পরকালের কল্যাণ দান করুন এবং জাহান্নামের আগুণ থেকে মুক্তি দান করুন।’

হাজারে আসওয়াদের কোনায় এসে আগের মতো আবারো স্পর্শ বা ইশারার মাধ্যমে আল্লাহু আকবার বলে চক্কর শুরু করা। এভাবে সাত চক্করের মাধ্যমে তাওয়াফ সম্পন্ন করা।

তাওয়াফ আদায়কালে যে বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে:-

>> ইযতিবা করা যারা ইহরাম বেঁধে হজ ও ওমরার জন্য ফরয তাওয়াফ করবেন, তাঁদেরকে তাওয়াফের সময় অবশ্যই ইযতিবা করতে হবে। আর তাহলো বীর-বাহাদুরিসূলভ চাদর পরিধান করা। চাদরের মধ্যভাগ থাকবে ডান বগলের নিচে।

আর ফরয তাওয়াফ না হলে সাধারণ তাওয়াফের বেলায় যে কোনো পোশাকেই তাওয়াফ করা যাবে।

>> হাতিমে কাবাসহ রুকনে ইরাকী ও রুকনে শামীর মধ্যে অবস্থতি অর্ধবৃত্তাকার অংশটিকে হাতিমে কাবা বলা হয়। বাইতুল্লাহ তাওয়াফকালে হাতিমে কাবাকেও প্রদক্ষিণ করা।

>> হাজারে আসওয়াদ থেকে শুরু এবং শেষ তাওয়াফ হাজারে আসওয়াদ থেকে শুরু হয়ে মুলতাযেম, কাবা শরিফের দরজা, হাতিমে কাবা হয়ে রুকনে ইরাকী ও রুকনে শামী শেষ করে রুকনে ইয়ামানী অতিক্রম করে আবার হাজরে আসওয়াদে এসে শেষ করা। বাইতুল্লাহ প্রদক্ষিণ করার সময় রুকনে ইয়ামানী কোণ অতিক্রমকালে সম্ভব হলে চুম্বন করা বা হাতে স্পর্শ করা। ভিড় থাকলে ইশারা করাই যথেষ্ট।

>>বাইতুল্লাহকে সাতবার চক্করের মাধ্যমে তাওয়াফ শেষ হয়। এ সাত চক্করের প্রথম তিন চক্করে রমল করতে হবে। প্রথম তিন চক্বরকে রমল বলে। অর্থাৎ বীর দর্পে দ্রুততার সঙ্গে তাওয়াফ করা। পরবর্তী চার চক্কর স্বাভাবিকভাবে হেঁটে তাওয়াফ সম্পন্ন করা।

স্থাপত্য এবং অভ্যন্তর

সম্পাদনা

কাবা হল একটি ঘনক আকৃতির কাঠামো যা পাথর দিয়ে তৈরি।এটি প্রায় ১৩.১ মিটার (৪৩ ফুট ০ ইঞ্চি) লম্বা (কেউ কেউ দাবি করে যে এটি ১২.০৩ মিটার বা ৩৯ ফুট ৫+১⁄২ ইঞ্চি), যার বাহুগুলি ১১.০৩ মি × ১২.৮৬ মিটার (৩৬ ফুট ২+১⁄২ ইঞ্চি × ৪২ ফুট ২+ ১⁄২ ইঞ্চি)।কাবার ভিতরের মেঝে মার্বেল ও চুনাপাথর দিয়ে তৈরি।অভ্যন্তরীণ দেয়ালের পরিমাপ ১৩ মি × ৯ মি (৪৩ ফু × ৩০ ফু), ছাদের অর্ধেক পথ টাইল্ড, সাদা মার্বেল দিয়ে তৈরি, মেঝে বরাবর গাঢ় ছাঁটাই সহ।অভ্যন্তরের মেঝে প্রায় ২.২ মি (৭ ফু ৩ ইঞ্চি) স্থলভাগের উপরে যেখানে তাওয়াফ করা হয়।

কাবার প্রবেশপথের সরাসরি সংলগ্ন দেয়ালে শিলালিপি সহ ছয়টি ফলক রয়েছে এবং অন্যান্য দেয়াল বরাবর আরও বেশ কয়েকটি ফলক রয়েছে।দেয়ালের উপরের কোণে স্বর্ণাক্ষরে কোরআনের আয়াত দিয়ে সূচিকর্ম করা একটি কালো কাপড় আছে।তত্ত্বাবধায়করা মার্বেল ক্ল্যাডিংকে একই সুগন্ধযুক্ত তেল দিয়ে অভিষেক করে যা কালো পাথরের বাইরে অভিষেক করতে ব্যবহৃত হয়।কাবার অভ্যন্তরে তিনটি স্তম্ভ আছে, একটি এবং অন্য দুটির মধ্যে একটি ছোট বেদি বা টেবিল সেট করা আছে।বাতির মতো বস্তু (সম্ভাব্য লণ্ঠন বা ক্রুসিবল সেন্সার ) সিলিং থেকে ঝুলে থাকে।সিলিং নিজেই গাঢ় রঙের, নিচের ছাঁটাইয়ের মতো রঙের।বাব উত-তওবাহ— ডান দেয়ালে (প্রবেশের ডানদিকে) একটি সিঁড়ি আছে, তার মাধ্যমে কাবার ছাদে যাওয়া যায় ।ছাদ এবং সিলিং উভয়ই (সম্মিলিতভাবে দ্বৈত স্তরযুক্ত) তৈরি স্টেইনলেস স্টীল- ক্যাপড সেগুন কাঠ দ্বারা।

 
কাবার একটি প্রযুক্তিগত অঙ্কন যেখানে মাত্রা এবং উপাদান দেখানো হয়েছে
 
রুকন আল-ইয়ামানি (ইয়েমেনি কোণ)
 

নিম্নলিখিত তালিকার প্রতিটি সংখ্যাযুক্ত আইটেম ডায়াগ্রাম ছবিতে উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলির সাথে মিলে যায়।

  1. হাজার আল-আসওয়াদ ( আরবি: الحجر الأسود, প্রতিবর্ণীকৃত: al-Hajar al-Aswad, অনুবাদ'The Black Stone' : الحجر الأسود , রোমানাইজড : আল-হাজার আল-আসওয়াদ , আলোকিত'কালো পাথর'), কাবার পূর্ব কোণে অবস্থিত। এটি সেই স্থান যেখানে মুসলমানরা তাদের কাবা প্রদক্ষিণ শুরু করে, যা তাওয়াফ নামে পরিচিত।
  2. প্রবেশদ্বারে একটি দরজা ২.১৩ মি[রূপান্তর: অজানা একক] মাটির উপরে কাবার উত্তর-পূর্ব দেয়ালে, যাকে বলা হয় বাব আর-রাহমাহ ( আরবি: باب الرحمة : باب الرحمة , রোমানাইজড : বাব আর-রহমাহ , লিট'রহমতের দরজা'), এটিও প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে)।[] ১৯৭৯ সালে, ৩০০ কেজি (৬৬০ পা) সোনা দ্বারা শিল্পী আহমদ বিন ইব্রাহিম বদর কর্তৃক তৈরি সোনার দরজা, যা ১৯৪২ সালে তার পিতা ইব্রাহিম বদরের তৈরি পুরানো রূপার দরজা প্রতিস্থাপন করে বসানো হয়। বনু শায়বার খিলান আকৃতির গেট এবং জমজম কূপের মধ্যে মসজিদে একটি কাঠের সিঁড়ি রয়েছে।প্রাচীনতম টিকে থাকা দরজাটি ১০৪৫ সালের পূর্বের। []
  3. মিজাব আল-রাহমাহ, যাকে সাধারণত মিজাব বলা হয় । এটি সোনার তৈরি একটি বৃষ্টির স্পাউট।১৬২৭ সালে যখন কাবা পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল, ১৬২৬ সালে একটি বন্যার কারণে চারটি দেয়ালের মধ্যে তিনটি ভেঙে পড়ার পরে যোগ করা হয়েছিল।
  4. কাবার তিন দিকের এই তির্যক কাঠামোটি শাদেরওয়ান নামে পরিচিত ( আরবি: شاذروان : شاذروان ) এবং ১৬২৭ সালে মিজাব আল-রাহমাহ এর সাথে বৃষ্টির পানি থেকে ভিত্তি রক্ষা করার জন্য যুক্ত করা হয়েছিল।
  5. হাতিম এবং হিজর ইসমাইল নামেও পরিচিত, এটি একটি নিম্ন প্রাচীর যা মূল কাবার অংশ ছিল।এটি একটি অর্ধবৃত্তাকার দেয়াল বিপরীত দিকে, কিন্তু কাবার উত্তর-পশ্চিম দেয়ালের সাথে সংযুক্ত নয়।এটা১.৩১ মি (৪ ফু + ইঞ্চি) উচ্চতা এবং ১.৫ মি (৪ ফু ১১ ইঞ্চি) প্রস্থ বিশিষ্ট, এবং সাদা মার্বেল দিয়ে গঠিত।হাতিম এবং কাবার মধ্যবর্তী স্থানটি মূলত কাবার অংশ ছিল এবং তাই তাওয়াফের সময় এখানে প্রবেশ করা হয় না।
  6. আল-মুলতাজাম, হাজরে আসওয়াদ এবং প্রবেশ দরজার মধ্যে মোটামুটি২ মি (+ ফু) জায়গা রয়েছে।একজন হাজীর জন্য কাবার এই অঞ্চলটি স্পর্শ করা বা এখানে দুআ করা অনেক আকাঙ্ক্ষিত।
  7. ( মাকামে ইব্রাহিম ) হল একটি কাঁচ এবং ধাতব ঘের যার মধ্যে ইব্রাহিম (আঃ) এর পায়ের ছাপ রয়েছে।কাবার উপরের অংশগুলি নির্মাণের সময় ইব্রাহিম(আঃ) এই পাথরের উপর দাঁড়িয়েছিলেন এবং উপরের অংশগুলির জন্য ইসমাইল(আঃ)কে তার কাঁধে তুলেছিলেন।
  8. কালো পাথরের কোণে।এটি কাবার কেন্দ্র থেকে খুব সামান্য দক্ষিণ-পূর্ব দিকে মুখ করে।কাবার চারটি কোণ মোটামুটিভাবে কম্পাসের চারটি মূল দিক নির্দেশ করে। []
  9. রুকন আল-ইয়ামানি ( আরবি: الركن اليمني, প্রতিবর্ণীকৃত: ar-Rukn al-Yamani, অনুবাদ'The Yemeni Corner' : الركن اليمني , রোমানাইজড : আর-রুকন আল-ইয়ামানি , লিট'ইয়েমেনি কোণ'), যা রুকন-ই-ইয়ামানি বা ইয়েমেনি কর্ণার নামেও পরিচিত, কাবার কেন্দ্র থেকে সামান্য দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে মুখ করা কাবার কোণ।[][]
  10. রুকন উশ-শামি ( আরবি: الركن الشامي : الركن الشامي , রোমানাইজড : আর-রুকন আশ-শামি , লিট'শামি কোণ'), যা রুকন-ই-শামি নামেও পরিচিত, কাবার কেন্দ্র থেকে খুব সামান্য উত্তর-পশ্চিম দিকে মুখ করা কাবার কোণ।[]
  11. রুকন আল-ইরাকি ( আরবি: الركن العراقي : الركن العراقي , রোমানাইজড : আর-রুকন আল-ইরাকি , lit. 'ইরাকি কোণ'), হল কাবার কেন্দ্র থেকে সামান্য উত্তর-পূর্ব দিকে মুখ করা কাবার কোন।
  12. কিসওয়াহ, এমব্রয়ডারি করা আবরণ।কিসওয়া হল একটি কালো রেশম এবং সোনার পর্দা যা প্রতি বছর হজ যাত্রার সময় প্রতিস্থাপন করা হয়। এর দুই-তৃতীয়াংশ হল হিজাম, সোনার সূচিকর্ম করা কোরানিক পাঠের একটি ব্যান্ড, শাহাদা সহ, ঈমানের ইসলামী ঘোষণা।কাবার দরজার পর্দা বিশেষভাবে অলংকৃত এবং সিতারা বা বোরকু' নামে পরিচিত। হিজাম এবং সিতারায় সোনা ও রূপার তারে সূচিকর্ম করা শিলালিপি রয়েছে, কুরআনের আয়াত এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা সহ।
  13. মার্বেল স্ট্রাইপ প্রতিটি প্রদক্ষিণের শুরু এবং শেষ চিহ্নিত করে।

দ্রষ্টব্য: কাবার প্রধান (দীর্ঘ) অক্ষটি ক্যানোপাস নক্ষত্রের উত্থানের সাথে সারিবদ্ধ হতে পরিলক্ষিত হয়েছে যার দিকে এর দক্ষিণ প্রাচীর নির্দেশিত হয়েছে, যখন এর ছোট অক্ষ (এর পূর্ব-পশ্চিম সম্মুখভাগ) মোটামুটি গ্রীষ্মের সূর্যোদয়ের সাথে সারিবদ্ধ। এবং শীতকালীন সূর্যাস্তের সূর্যাস্ত।

 
বাব আত-তওবাহ, "তাওবার দরজা"
 
সৌদি আরবে ৫০০-রিয়ালের (প্রায় ১৩৩ ডলার ) নোটের উল্টো দিকে একই রকম দৃশ্য ছাপা হয়েছে।
 
মাকামে ইব্রাহিম
 
মিজাব আল-রাহমাহ

পরিষ্কার

সম্পাদনা

"পবিত্র কাবা পরিষ্কার" ( আরবি: تنظيف الكعبة المشرفة, প্রতিবর্ণীকৃত: Tanzif al-Ka'bat al-Musharrafah, অনুবাদ'Cleaning of the Sacred Cube' : تنظيف الكعبة المشرفة , রোমানাইজড : তানযীফ আল-কাবাত আল-মুশাররাফাহ , লি .'কাবা পরিষ্কার করা'). অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয় ইসলামিক ক্যালেন্ডারের অষ্টম মাস শা'বানের ১ তারিখে, রমজান মাস শুরু হওয়ার প্রায় ত্রিশ দিন আগে এবং প্রথম মাস মুহাররমের ১৫ তারিখে।কাবার চাবি বনি শায়বাহ ( আরবি: بني شيبة ) গোত্রের কাছে , এটি একটি সম্মান যা তাদের উপর মুহাম্মদ(স:) দ্বারা অর্পিত। পরিচ্ছন্নতার অনুষ্ঠান উপলক্ষে উপজাতির সদস্যরা কাবার অভ্যন্তরে দর্শনার্থীদের অভ্যর্থনা জানায়।

মক্কা প্রদেশের গভর্নর এবং সহকারী গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ওদ সুগন্ধি দিয়ে জমজমের পানিতে ডুবানো কাপড় ব্যবহার করে কাবার অভ্যন্তর পরিষ্কার করেন।তায়েফ গোলাপ, আউদ ও কস্তুরী সহ বেশ কিছু বিলাসবহুল পারফিউমের সাথে জমজমের পানির মিশ্রণের সাথে নির্ধারিত তারিখের একদিন আগে ধোয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়।গোলাপের সুগন্ধি মিশ্রিত জমজমের পানি মেঝেতে ছড়িয়ে খেজুর পাতা দিয়ে মুছে দেওয়া হয়।সাধারণত, পুরো প্রক্রিয়াটি দুই ঘন্টার মধ্যে সম্পন্ন হয়।

ইসলামে তাৎপর্য

সম্পাদনা

কাবা হল ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র স্থান, এবং প্রায়ই বাইতুল্লাহ ( আরবি: بيت الله, প্রতিবর্ণীকৃত: Bayt Allah, অনুবাদ'House of Allah' : بيت الله নামে ডাকা হয়।  'আল্লাহর ঘর'). এবং বাইত আল্লাহ আল-হারাম (আরবি: بيت الله الحرام, প্রতিবর্ণীকৃত: বাইত আল্লাহ ইল-হারাম, অনুবাদ'আল্লাহর পবিত্র ঘর''আল্লাহর পবিত্র ঘর').

তাওয়াফ

সম্পাদনা
হাজীরা হজের সময় কাবার চারপাশে তাওয়াফ করছেন (ভিডিও)
 
২০০৮ সালে হজ্জের সময় কাবা এবং মসজিদ আল-হারাম

তাওয়াফ ( আরবি: طَوَاف, অনুবাদ'going about' : طَوَاف , lit. ' যাচ্ছে '

) তীর্থযাত্রার একটি ইসলামী আচার এবং হজ এবং ওমরাহ উভয় সময়েই এটি বাধ্যতামূলক।হাজীরা কাবার (ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র স্থান ) চারপাশে সাতবার ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে যান; প্রথম তিনটি দ্রুত গতিতে মাতাফের বাইরের অংশে এবং পরেরটি চারবার অল্প গতিতে কাবার কাছাকাছি। প্রদক্ষিণটি আল্লাহর উপাসনায় বিশ্বাসীদের একতা প্রদর্শন করে বলে বিশ্বাস করা হয়, কারণ তারা কাবার চারপাশে একসাথে চলাফেরা করে, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার সময়। তাওয়াফ করার সময় অযু অবস্থায় থাকা বাধ্যতামূলক কারণ এটিকে একটি ইবাদত ( 'ইবাদাহ ) বলে মনে করা হয়।

কাবার কোণের কালো পাথর থেকে তাওয়াফ শুরু হয়।সম্ভব হলে, মুসলমানরা এটিকে চুম্বন করতে বা স্পর্শ করতে পারে, কিন্তু বেশি ভিড়ের কারণে এটি প্রায়শই সম্ভব হয় না।প্রতিবার একটি প্রদক্ষিণ সম্পন্ন করার সময় তারা বাসমালাতাকবীর উচ্চারণ করবে। হজ্বযাত্রীদের সাধারণত অন্তত দুবার "তাওয়াফ করার" পরামর্শ দেওয়া হয় - একবার হজ্বের অংশ হিসেবে এবং আবার মক্কা ছাড়ার আগে। এই তাওয়াফকে "বিদায়ী তাওয়াফ" বলা হয়।

পাঁচ প্রকার তাওয়াফ হল:-

  • ত্বওয়াফ আল-কুদুম (আগমন তাওয়াফ) যারা পবিত্র নগরীর বহিরাগত এবং মক্কায় বসবাস করবে না তারা এ ধরনের তাওয়াফ করে।
  • তাওয়াফ আত-তাহিয়াহ (সালাম ত্বওয়াফ) যেকোনো সময়ে আল-মসজিদ আল-হারামে প্রবেশ করার পরে করা হয় এবং এটি মুস্তাহাব
  • ত্বওয়াফ আল- ওমরাহ (উমরাহ তাওয়াফ) বিশেষভাবে ওমরাহর জন্য করা তাওয়াফকে বোঝায়।
  • মক্কা ত্যাগ করার আগে তাওয়াফ আল-ওয়াদা' ("বিদায়ী তাওয়াফ") করা হয়।
  • তাওয়াফ আয-জিয়ারাহ (দর্শনের তাওয়াফ), তাওয়াফ আল-ইফাদ (ক্ষতিপূরণের তাওয়াফ) বা তাওয়াফ আল- হাজ্ব (হজ্ব তাওয়াফ) হজ্ব শেষ করার পরে করা হয়।

কিবলা হিসেবে

সম্পাদনা

নামাজের সময় যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়া হয় তাই কিবলা[কুরআন ২:১৪৩–১৪৪] নামাযের সময় প্রার্থনাকারী ব্যক্তির সাপেক্ষে যে দিকে মুখ করা হয় তা হল কাবার দিক। প্রার্থনা ছাড়াও, মুসলমানরা কেবলার দিকে মুখ করে কুরআন তেলাওয়াত করাকে ভাল শিষ্টাচারের অংশ বলে মনে করে।

 
কাবার দৃশ্য, ১৭১৮। আদ্রিয়ান রিল্যান্ড : ভার্হ্যান্ডেলিং ভ্যান ডি গডসডিয়েনস্ট ডের মহোমেটানেন

ইতিহাস

সম্পাদনা

ব্যুৎপত্তি

সম্পাদনা

কাবা শব্দের আভিধানিক অর্থ ( আরবি: كعبة : كعبة ) হল ঘনক । কোরআনে, মুহাম্মদের জীবনের যুগ থেকে, কাবাকে নিম্নলিখিত নামে উল্লেখ করা হয়েছে:

•আল-বায়ত (আরবি: ٱلْبَيْت, lit. 'ঘর') ২:১২৫ এ

•বাইতি (আরবি: بَيْتِي, lit. 'আমার বাড়ি') ২২:২৬ এ

•বায়তিক আল-মুহররম (আরবি: بَيْتِكَ ٱلْمُحَرَّم, lit. 'আপনার অলঙ্ঘনীয় ঘর') ১৪:৩৭ এ

•আল-বায়ত আল-হারাম (আরবি: ٱلْبَيْت ٱلْحَرَام, lit. 'পবিত্র ঘর') ৫:৯৭ এ

•আল-বায়ত আল-আতীক (আরবি: ٱلْبَيْت ٱلْعَتِيق, lit. 'প্রাচীন বাড়ি') ২২:২৯ এ

পটভূমি

সম্পাদনা

মক্কা শহরটি ইসলামের উত্থানের তিন শতাব্দী আগে লিখিত কোনো পরিচিত ভৌগোলিক বা ইতিহাস থেকে অনুপস্থিত, যদিও অনেক মুসলিম এবং শিক্ষাবিদ ঐতিহাসিক প্রাক-ইসলামী মক্কার শক্তি ও গুরুত্বের ওপর জোর দেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] তারা এটিকে একটি শহর হিসাবে চিত্রিত করেছে যা মশলা ব্যবসার আয়ের উপর সমৃদ্ধ হয়েছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] প্যাট্রিসিয়া ক্রোন বিশ্বাস করেন যে এটি একটি অতিরঞ্জন এবং মক্কা শুধুমাত্র চামড়া, কাপড় এবং উটের মাখনের জন্য যাযাবরদের সাথে ব্যবসার জন্য একটি আউটপোস্ট ছিল। ক্রোন যুক্তি দেন যে মক্কা যদি বাণিজ্যের একটি সুপরিচিত কেন্দ্র হত, তবে এটি সম্পর্কে পরবর্তী লেখক যেমন প্রকোপিয়াস, নননোসাস, বা সিরিয়াক গির্জার ক্রনিকলাররা সিরিয়াক ভাষায় লিখতেন। [] এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার মতে, "ইসলামের উত্থানের আগে, এটি একটি পবিত্র অভয়ারণ্য হিসাবে সম্মানিত ছিল এবং এটি একটি তীর্থস্থান ছিল।"

ইসলামের আগে, কাবা সমগ্র আরব উপদ্বীপ জুড়ে বিভিন্ন বেদুইন উপজাতিদের জন্য একটি পবিত্র স্থান ছিল। প্রতি চান্দ্র বছরে একবার বেদুইনরা মক্কায় তীর্থযাত্রা করত। যে কোন উপজাতীয় বিবাদকে একপাশে রেখে, তারা কাবায় তাদের দেবতাদের পূজা করত এবং শহরে একে অপরের সাথে ব্যবসা করত। কাবার অভ্যন্তরে বিভিন্ন ভাস্কর্য ও চিত্রকর্ম রাখা হয়েছিল। হুবালের একটি মূর্তি (মক্কার প্রধান মূর্তি) এবং অন্যান্য পৌত্তলিক দেব-দেবীর মূর্তি কাবার বা তার আশেপাশে স্থাপন করা হয়েছে বলে জানা যায়। দেয়ালে মূর্তি আঁকা ও সাজানো ছিল। ফেরেশতাদের ছবি, 'ইব্রাহিম আঃ এর ভবিষ্যদ্বাণীর তীর ধারণকারী এবং 'ঈসা ( যীশু ) এবং তার মা মরিয়ম ( মেরি ) এর দৃশ্যও কাবার অভ্যন্তরে অঙ্কিত ছিল এবং পরে মক্কা বিজয়ের পর মুহাম্মদের নির্দেশে ধ্বংস করা হয়েছিল। [] অনির্ধারিত সাজসজ্জা, টাকা এবং একজোড়া মেষের শিং কাবার ভিতরে থাকার কথা রেকর্ড করা হয়েছিল। [] কথিত আছে যে, মেষের শিং জোড়া ইব্রাহিম কর্তৃক তার পুত্র ইসমাইলের পরিবর্তে যে মেষ কুরবানী দেওয়া হয়েছিল, তার।[]

আল-আজরাকি তার পিতামহের কর্তৃত্বে নিম্নলিখিত বর্ণনা প্রদান করেছেন: []

আমি শুনেছি যে আল-বাইতে (কাবাকে নির্দেশ করে) একটি ছবি স্থাপন করা হয়েছিল (আরবি: تمثال, অনুবাদ'চিত্রণ') মরিয়ম ও ঈসার। ['আতা'] বললেন: "হ্যাঁ, এতে মরিয়মের একটি সুশোভিত ছবি ছিল ('মুজাওওয়াকান'); তাঁর কোলে, তাঁর পুত্র ঈসা শোভিত হয়ে বসেছিলেন।"

— আল-আজরাকি, আখবার মক্কা: মক্কার ইতিহাস[]

কারেন আর্মস্ট্রং তার বই ইসলাম: এ শর্ট হিস্ট্রি -এ দাবি করেছেন যে কাবা আনুষ্ঠানিকভাবে হুবাল, একজন নাবাতেন দেবতাকে উত্সর্গীকৃত ছিল এবং এতে ৩৬০টি মূর্তি ছিল যা সম্ভবত বছরের দিনগুলিকে প্রতিনিধিত্ব করে। যাইহোক, মুহাম্মদ(স:)এর যুগে কাবাকে আল্লাহর ঘর হিসাবে উপাসনা করা হয়েছিল।বছরে একবার, আরব উপদ্বীপের চারপাশের উপজাতিরা হজযাত্রা সম্পাদনের জন্য মক্কায় একত্রিত হত, যা ব্যাপকভাবে দৃঢ় বিশ্বাসের একটি চিহ্ন ছিল যে, একেশ্বরবাদীদের দ্বারা উপাসনা করা একমাত্র দেবতা ছিলেন আল্লাহ। এই সময়ে মুসলমানরা মুহাম্মাদের নির্দেশ অনুযায়ী জেরুজালেমের দিকে মুখ করে সালাতের নামাজ আদায় করবে এবং কাবার পৌত্তলিক সংঘের দিকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। [] আলফ্রেড গুইলাউম তার ইবনে ইসহাকের সিরাহের অনুবাদে বলেছেন যে কাবাকে হয়তো মেয়েলি আকারে উল্লেখ করা যেতে পারে। পূর্বে তাওয়াফ প্রায়ই পুরুষদের এবং মহিলাদের দ্বারা প্রায় নগ্ন অবস্থায় সঞ্চালিত হত। আল্লাহ ও হুবল একই উপাস্য নাকি ভিন্ন ছিল তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। উরি রুবিন এবং ক্রিশ্চিয়ান রবিনের একটি অনুমান অনুসারে, হুবাল শুধুমাত্র কুরাইশদের দ্বারাই পূজা করা হতো এবং কাবা প্রথমে আল্লাহর কাছে উৎসর্গ করা হয়েছিল, যা বিভিন্ন গোত্রের লোকদের সর্বোচ্চ দেবতা ছিল, যখন কুরাইশদের দেবতাদের প্যান্থিয়ন কাবাতে স্থাপন করা হয়েছিল। তারা মুহাম্মদের সময়ের এক শতাব্দী আগে মক্কা জয় করেছিল।

ইমোতি দাবি করেন যে, এক সময় আরবে এ ধরনের অসংখ্য কাবা অভয়ারণ্য ছিল, কিন্তু এটিই ছিল পাথরের তৈরি একমাত্র অভয়ারণ্য। অন্যদেরও কালো পাথরের প্রতিপক্ষ ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। দক্ষিণ আরবের ঘাইমান শহরের কাবাতে একটি "লাল পাথর" ছিল; এবং আল-আবালাতের কাবার "সাদা পাথর" ছিল। ধ্রুপদী ইসলামে গ্রুনবাউম উল্লেখ করেছেন যে সেই সময়ের দেবত্বের অভিজ্ঞতা প্রায়শই পাথর, পর্বত, বিশেষ শিলা গঠন বা "অদ্ভুত বৃদ্ধির গাছ" ইত্যাদির ফেটিসিজমের সাথে যুক্ত ছিল। আর্মস্ট্রং আরও বলেছেন যে কাবাকে বিশ্বের কেন্দ্রে বলে মনে করা হয়েছিল, যার সরাসরি উপরে স্বর্গের গেট রয়েছে। কাবা সেই স্থানটিকে চিহ্নিত করেছে যেখানে পবিত্র বিশ্ব অপবিত্রের সাথে ছেদ করেছে।

সারওয়ারের মতে, মুহাম্মদের জন্মের প্রায় ৪০০ বছর আগে, আমর বিন লুহায় নামক একজন ব্যক্তি, যিনি কাহতান থেকে এসেছেন এবং হিজাজের রাজা ছিলেন তিনি কাবার ছাদে হুবালের একটি মূর্তি স্থাপন করেছিলেন। এই মূর্তিটি শাসক কুরাইশ গোত্রের অন্যতম প্রধান দেবতা ছিল। মূর্তিটি লাল এগেট দিয়ে তৈরি এবং মানুষের মতো আকৃতির, কিন্তু ডান হাতটি ভেঙে সোনার হাত দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়েছিল। যখন মূর্তিটি কাবার ভিতরে স্থানান্তরিত হয়েছিল, তখন এর সামনে সাতটি তীর ছিল যা ভবিষ্যদ্বাণীর জন্য ব্যবহৃত হত। চিরকাল যুদ্ধরত উপজাতিদের মধ্যে শান্তি বজায় রাখার জন্য, মক্কাকে একটি অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়েছিল যার আয়তন ছিল কাবার ৩০ কিলোমিটার (২০ মা) এর মধ্যে। এই যুদ্ধ-মুক্ত অঞ্চলটি মক্কাকে কেবল তীর্থস্থান হিসাবেই নয়, একটি বাণিজ্য কেন্দ্র হিসাবেও উন্নতি করতে দেয়।

সামারিটান সাহিত্যে, সামারিটান বুক অফ দ্য সিক্রেটস অফ মোজেস ( আসাতির ) বলে যে ইসমাইল এবং তার জ্যেষ্ঠ পুত্র নেবাইওথ কাবা এবং মক্কা শহরও নির্মাণ করেছিলেন।" আসাতির বইটি সম্ভবত ১০ম শতাব্দীতে সংকলিত হয়েছিল, যদিও মোসেস গ্যাস্টার ১৯২৭ সালে প্রস্তাব করেছিলেন যে এটি খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের পরে লেখা হয়েছিল।

ইসলামী মতানুযায়ী

সম্পাদনা
 
কাবা এবং মসজিদ আল-হারাম একটি তাবিজ শার্টে চিত্রিত, ১৬ বা১৭তম শতকের প্রথম দিকে

কোরআনে কাবার উৎপত্তি সম্পর্কে বেশ কিছু আয়াত রয়েছে। এটি বলে যে কাবা ছিল মানবজাতির জন্য প্রথম উপাসনার ঘর, এবং এটি আল্লাহর নির্দেশে ইব্রাহিম এবং ইসমাইল দ্বারা নির্মিত হয়েছিল।

প্রকৃতপক্ষে, মানবজাতির জন্য নির্ধারিত প্রথম ঘর (ইবাদত) ছিল বাক্কায় (মক্কা), (যা) বরকতময় এবং মানবজাতির জন্য পথনির্দেশক।

দেখো! আমরা ইব্রাহীমকে (পবিত্র) ঘরের স্থানটি দিয়েছিলাম, (এই বলে যে) "আমার সাথে (ইবাদতে) কোন কিছুকে শরীক করো না; এবং আমার গৃহকে পবিত্র কর তাদের জন্য যারা একে প্রদক্ষিণ করে, বা দাঁড়ায়, বা রুকু বা সেজদা করে।

— কুরআন, সূরা আল-হজ্জ (২২), আয়াত ২৬[১৩][১৪][১৫]

এবং মনে রাখবেন ইব্রাহিম ও ইসমাইল ঘরের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন (এই প্রার্থনার মাধ্যমে): "হে আমাদের প্রভু! আমাদের কাছ থেকে (এই সেবা) গ্রহণ করুন: আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।"

— কুরআন, আল-বাকারা (২), আয়াত ১২৭[১৬][১৭][১৮]

ইবনে কাসির, তার বিখ্যাত(তাফসির )কুরআনের ব্যাখ্যায় কাবার উৎপত্তি নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে দুটি ব্যাখ্যা উল্লেখ করেছেন। একটি হল, কাবা মানুষ সৃষ্টির আগে মালাইকা ফেরেশতাদের উপাসনার স্থান ছিল। পরে, স্থানটিতে একটি উপাসনালয় তৈরি করা হয়েছিযা নূহ ( আঃ ) এর সময়ে বন্যার সময় হারিয়ে গিয়েছিল এবং অবশেষে ইব্রাহিম (আঃ) এবং ইসমাইল (আঃ) দ্বারা পুনঃনির্মাণ করা হয়েছিল যেমনটি পরে কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। ইবনে সিথির এই রেওয়ায়েতটিকে দুর্বল বলে গণ্য করেছেন এবং আলী ইবনে আবি তালিবের বর্ণনার পরিবর্তে পছন্দ করেছেন যে যদিও কাবার আগে আরও কয়েকটি মন্দির থাকতে পারে, তবে এটি ছিল প্রথম বায়তুল্লাহ ("আল্লাহর ঘর"), যাইব্রাহিম ও ইসমাইলের দ্বারাআল্লাহর নির্দেশে এবং সম্পূর্ণরূপে তাঁর জন্য উত্সর্গকৃত যেমনটি কুরআনের ২২:২৬-২৯ এ লা হয়েছে। সহিহ আল-বুখারির একটি হাদিসে বলা হয়েছে যে কাবা ছিল পৃথিবীর প্রথম মসজিদ এবং দ্বিতীয়টি ছিল জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ

আবু জর বর্ণনা করেন: আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! পৃথিবীর পৃষ্ঠে সর্বপ্রথম কোন মসজিদ নির্মিত হয়েছিল? তিনি বললেন, আল-মসজিদ-উল-হারাম (মক্কায়)। আমি বললাম, "পরে কোনটি নির্মিত হয়েছিল?" তিনি উত্তর দিলেন "আল-আকসার মসজিদ (জেরুজালেমে)।" আমি বললাম, উভয়ের মধ্যে নির্মাণের সময়কাল কত ছিল? তিনি বললেন, চল্লিশ বছর। তিনি আরো বলেন, "যেখানে (তোমরা থাকো এবং) নামাযের ওয়াক্ত হয়ে যায়, সেখানেই নামায আদায় কর, কেননা সর্বোত্তম কাজ হল তা করা (অর্থাৎ সময়মত নামায পড়া)।"

সহীহ আল-বুখারী: খন্ড ৪, বই ৫৫ , হাদিস নম্বর ৫৮৫[১৯][২০]

ইব্রাহীম যখন কাবা নির্মাণ করছিলেন, তখন একজন ফেরেশতা তার কাছে কালো পাথরটি নিয়ে আসেন যা তিনি কাঠামোর পূর্ব কোণে রেখেছিলেন। আরেকটি পাথর ছিল মাকাম ইব্রাহিম বা ইব্রাহিমের স্টেশন, যেখানে দাঁড়িয়ে ইব্রাহিম (আঃ) কাঠামো নির্মাণের কাজ করেছিলেন। কালো পাথর এবং মাকাম ইব্রাহীমকে মুসলমানরা আব্রাহামের তৈরি মূল কাঠামোর একমাত্র অবশিষ্টাংশ বলে বিশ্বাস করে কারণ অবশিষ্ট কাঠামোটি ইতিহাসে এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বহুবার ভেঙে ফেলা হয়েছিল এবং পুনর্নির্মাণ করতে হয়েছিল। কাবার নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর, আল্লাহ ইসমাইলের বংশধরদেরকে একটি বার্ষিক তীর্থযাত্রা করার জন্য আদেশ দেন: হজ এবং কুরবানী।কাবার আশেপাশে একটি অভয়ারণ্যও করা হয়েছিল যেখানে রক্তপাত এবং যুদ্ধ নিষিদ্ধ ছিল।[কুরআন ২২:২৬–৩৩]ইসলামী ঐতিহ্য অনুসারে, ইসমাইলের মৃত্যুর পর সহস্রাব্দ বছর ধরে, তার বংশধর এবং স্থানীয় উপজাতি যারা জমজমের চারপাশে বসতি স্থাপন করেছিল তারা ধীরে ধীরে বহুশ্বরবাদ এবং মূর্তিপূজার দিকে ঝুঁকে পড়ে। কাবার মধ্যে বেশ কিছু মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল যা প্রকৃতির বিভিন্ন দিক এবং বিভিন্ন উপজাতির দেবতাদের প্রতিনিধিত্ব করে। তীর্থযাত্রায় নগ্ন প্রদক্ষিণ সহ বেশ কিছু আচার-অনুষ্ঠান গৃহীত হয়েছিল। [২১] আল-আজরাকির আখবার মক্কায় লিপিবদ্ধ বাণী অনুসারে তুব্বা' নামে একজন রাজা প্রথম কাবার দরজা তৈরি করেন বলে মনে করা হয়।

টলেমি এবং ডিওডোরাস সিকুলাস

সম্পাদনা

এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ইসলামে লেখা, ওয়েনসিঙ্ক টলেমি দ্বারা উল্লেখিত ম্যাকোরাবা নামক একটি স্থান দিয়ে মক্কাকে চিহ্নিত করেছেন। [২২] জিই ভন গ্রুনবাউম বলেছেন: " টলেমি মক্কা উল্লেখ করেছেন। তিনি যে নামটি দিয়েছেন তা আমাদের এটিকে একটি অভয়ারণ্যের চারপাশে তৈরি একটি দক্ষিণ আরব ভিত্তি হিসাবে চিহ্নিত করতে দেয়।" মেকান ট্রেড অ্যান্ড দ্য রাইজ অফ ইসলামে, প্যাট্রিসিয়া ক্রোন যুক্তি দেন যে মক্কার সাথে মাকোরাবার পরিচয় মিথ্যা এবং ম্যাকোরাবা দক্ষিণ আরবের একটি শহর ছিল যা তখন আরাবিয়া ফেলিক্স নামে পরিচিত ছিল। একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষা ম্যাকোরাবার যুক্তিগুলি পুনর্বিবেচনা করেছে এবং সেগুলিকে অসন্তোষজনক বলে মনে করেছে৷

 
কাবার প্রতিনিধিত্বকারী অটোমান টাইলস, ১৭ শতকের।

সিনিডাসের আগাথারচাইডের পূর্ববর্তী প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে, ডিওডোরাস সিকুলাস লোহিত সাগরের উপকূলে একটি মন্দিরের কথা উল্লেখ করেছেন, "যা অত্যন্ত পবিত্র এবং সমস্ত আরববাসীদের দ্বারা অত্যন্ত সম্মানিত"। এডওয়ার্ড গিবন বিশ্বাস করতেন এটাই কাবা। যাইহোক, ইয়ান ডি. মরিস যুক্তি দেন যে গিবন উৎসটি ভুলভাবে পড়েছিলেন: ডিওডোরাস উপাসনালয়টিকে মক্কা বলে অনেক উত্তরে রেখেছেন।

খুজিস্তান ক্রনিকল

সম্পাদনা

এই সংক্ষিপ্ত নেস্টোরিয়ান (খ্রিস্টান বংশোদ্ভূত) ধারাবিবরণীটি ৬৬০-এর দশকের পরে লেখা হয়েছে, যা আরব বিজয় পর্যন্ত ইতিহাসকে কভার করে এবং আরব ভূগোলের উপর একটি আকর্ষণীয় ধারণাও দেয়। ভূগোল কভার করা অংশটি আরবে মুসলিম অভয়ারণ্যের উৎপত্তি সম্পর্কে একটি অনুমান দিয়ে শুরু হয়:

"ইব্রাহিমের ক্বতা (কাবা) সম্পর্কে, আমরা এটি ছাড়া আর কী তা আবিষ্কার করতে পারিনি, কারণ আশীর্বাদপুষ্ট আব্রাহাম সম্পত্তিতে সমৃদ্ধ হয়েছিলেন এবং কেনানীয়দের হিংসা থেকে দূরে থাকতে চেয়েছিলেন, তিনি বাস করতে বেছে নিয়েছিলেন মরুভূমির দূরবর্তী এবং প্রশস্ত অংশ। যেহেতু তিনি তাঁবুতে বাস করতেন, তাই তিনি আল্লাহর উপাসনা এবং বলিদানের জন্য সেই জায়গাটি তৈরি করেছিলেন। জায়গাটির স্মৃতি সংরক্ষিত থাকায় এটির বর্তমান নামটি পূর্বের নাম অনুসারে রাখা। আরবদের জন্য সেখানে উপাসনা করা কোন নতুন বিষয় ছিল না, কিন্তু প্রাচীনকালে ফিরে যায়, তাদের প্রথম দিকে, যেখানে তারা তাদের জনগণের প্রধান পিতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে।"[২৩]

এটি খ্রিস্টান বংশোদ্ভূত রাশিদুন খিলাফতের একটি প্রাথমিক রেকর্ড যা স্পষ্টভাবে কাবার উল্লেখ করে এবং এই ধারণাটিকে নিশ্চিত করে যে কেবল আরবরা নয়, কিছু খ্রিস্টানও সপ্তম শতাব্দীতে ইব্রাহিমের সাথে স্থানটিকে যুক্ত করেছিল। এটি কাবার উল্লেখ করা দ্বিতীয় তারিখযোগ্য পাঠ্য, প্রথমটি হচ্ছে কুরআনের কিছু আয়াত।

শিলালিপি

সম্পাদনা

সৌদি প্রত্নতাত্ত্বিক মোহাম্মদ আলমাগথাভি মসজিদ আল-হারাম এবং কাবার উল্লেখ করে কিছু শিলালিপি আবিষ্কার করেছেন, যা ইসলামের প্রথম ও দ্বিতীয় শতাব্দীর। তাদের মধ্যে একটি নিম্নরূপ পড়ে:

"ঈশ্বরই যথেষ্ট এবং লিখেছেন মায়সারা বিন ইব্রাহিম কাবার সেবক (খাদিম আল-কাবা)।"[২৪]

জুয়ান কোলের অভিমত যে শিলালিপিটি সম্ভবত হিজরি দ্বিতীয় শতাব্দীর (সি. ৭১৮ – ৮১৫ খ্রি.)।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

মুহাম্মদ(স:) এর যুগ

সম্পাদনা
 
কালো পাথরটি কাবার একটি পোর্টালের মাধ্যমে দেখা যায়

মুহাম্মদ (স:)-এর জীবদ্দশায় (৫৭০-৬৩২ খ্রিস্টাব্দ), কাবা স্থানীয় আরবদের দ্বারা একটি পবিত্র স্থান হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল। ৬০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে বন্যার কারণে কাবার কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর মুহাম্মদ (স:) কাবার পুনর্নির্মাণে অংশ নেন। ইবনে ইসহাকের সিরাত রাসুল আল্লাহ (মুহাম্মদ (স:)-এর জীবনীগুলির মধ্যে একটি) বর্ণনা করে যে মুহাম্মদ (স:) মক্কার বংশের মধ্যে একটি ঝগড়া মীমাংসা করেছিলেন যে কোন বংশটি কাবায় কালো পাথরটি স্থাপন করবে। ইসহাকের জীবনী অনুসারে, মুহাম্মদের সমাধান ছিল সমস্ত গোত্রের প্রবীণদের একটি চাদরের উপর ভিত্তিপ্রস্তরটি তুলে দেওয়া, যার পরে মুহাম্মদ (স:) নিজের হাতে পাথরটিকে তার চূড়ান্ত স্থানে স্থাপন করেছিলেন। ইবনে ইসহাক বলেছেন যে কাবার পুনর্নির্মাণের জন্য কাঠ একটি গ্রীক জাহাজ থেকে এসেছে যা শুয়াবায় লোহিত সাগরের উপকূলে বিধ্বস্ত হয়েছিল এবং বাকুম নামক একজন কপটিক ছুতার এ কাজটি করে। মুহাম্মদ (স:)-এর মেরাজ'-এ তাকে কাবা থেকে মসজিদ আল-আকসা এবং সেখান থেকে সপ্তম আসমানে নেওয়া হয়েছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] [ উদ্ধৃতি প্রয়োজন ]


মুসলমানরা প্রাথমিকভাবে জেরুজালেমকে তাদের কিবলা বা প্রার্থনার দিক হিসাবে বিবেচনা করেছিল এবং প্রার্থনা করার সময় এটির দিকে মুখ করেছিল; যাইহোক, কাবার তীর্থযাত্রা একটি ধর্মীয় কর্তব্য হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল যদিও এর আনুষ্ঠানিকতা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। একজন নবী হিসাবে মুহাম্মদের সময়ের প্রথমার্ধে যখন তিনি মক্কায় ছিলেন, তখন তিনি এবং তার অনুসারীরা মারাত্মকভাবে নির্যাতিত হন যে কারণে শেষ পর্যন্ত ৬২২ খ্রিস্টাব্দে তারা মদিনায় হিজরত করে। ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে, মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে কিবলার দিকটি মসজিদ আল-আকসা থেকে মক্কার মসজিদ আল-হারামে পরিবর্তিত হয়েছিল, সূরা ২, আয়াত ১৪৪-এর নাযিলের মাধ্যমে।[কুরআন ২:১৪৪] ৬২৮ খ্রিস্টাব্দে, মুহাম্মদ ওমরাহ পালনের অভিপ্রায়ে মুসলিমদের একটি দলকে মক্কার দিকে নিয়ে যান, কিন্তু কুরাইশরা তা করতে বাধা দেন। তিনি তাদের সাথে একটি শান্তি চুক্তি , হুদায়বিয়ার চুক্তি, যা মুসলমানদের পরের বছর থেকে কাবায় অবাধে তীর্থযাত্রা করার অনুমতি দেয়।

তার মিশনের চূড়ান্ত পর্যায়ে, ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে, কুরাইশদের মিত্র, বনু বকর, হুদায়বিয়ার চুক্তি লঙ্ঘন করার পর, মুহাম্মদ (স:) মক্কা জয় করেন । তার প্রথম কাজ ছিল কাবা থেকে মূর্তি ও ছবি অপসারণ করা। ইবনে ইসহাক এবং আল-আজরাকি দ্বারা সংগৃহীত প্রতিবেদন অনুসারে, মুহাম্মদ(স:) মেরি এবং যীশুর একটি চিত্রকর্ম এবং ইব্রাহিমের একটি ফ্রেস্কো রেখেছিলেন। [২৫]

আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবীজি যখন মক্কা বিজয়ের দিনে প্রবেশ করেন তখন কাবার চারপাশে ৩৬০টি মূর্তি ছিল। নবী তার হাতে থাকা একটি লাঠি দিয়ে তাদের আঘাত করতে শুরু করলেন এবং বলছিলেন, "সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়ে গেছে..." (কোরআন ১৭:৮১)"

আল-আজরাকি আরও জানায় কীভাবে মুহাম্মদ বিজয়ের দিনে কাবাতে প্রবেশ করার পর, সমস্ত ছবি মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন:

শিহাব (বলেন) যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বিজয়ের দিন কাবাতে প্রবেশ করেছিলেন এবং তাতে অন্যদের মধ্যে ফেরেশতাদের (মালাইকা) একটি ছবি ছিল এবং তিনি ইব্রাহিম (আ.)-এর একটি ছবি দেখেছিলেন এবং তিনি বলেছেন: "আল্লাহ তাদের হত্যা করুন যারা তাকে ভবিষ্যদ্বাণীতে তীর নিক্ষেপকারী শ্রদ্ধেয় বৃদ্ধ হিসাবে প্রতিনিধিত্ব করে (শাইখান ইয়াস্তাকসিম বিল-আজলাম)।"

— আল-আজরাকি, আখবার মক্কা: মক্কার ইতিহাস

বিজয়ের পর, মুহাম্মদ(স:) ইসলামে এর মহান মসজিদ (মসজিদ আল-হারাম) সহ মক্কার পবিত্রতাও পুনরুদ্ধার করেন। তিনি ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে হুজ্জাত উল-ওয়াদা' ("বিদায় তীর্থযাত্রা") নামে হজ করেন কারণ মুহাম্মদ এই হজে তার আসন্ন মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।

মুহাম্মদ (সা:) মৃত্যুর পরে

সম্পাদনা
 
১৯১০ সালে
 
২০১৩ সালে একটি সম্প্রসারণ পর্যায়ে কাবা

কাবা বহুবার মেরামত ও পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। উমাইয়াদের এবং আবদুল্লাহ ইবনে আল-জুবায়েরের(একজন প্রারম্ভিক মুসলিম যিনি বহু বছর ধরে মক্কা শাসন করেছিলেন, আলির মৃত্যু এবং উমাইয়াদের দ্বারা ক্ষমতার একত্রীকরণের মধ্যে)মধ্যে যুদ্ধে মক্কার প্রথম অবরোধের সময় ৩ রবিউল আউয়াল ৬৪ হিজরি বা রবিবার, ৩১ অক্টোবর ৬৮৩ খ্রিস্টাব্দে অগ্নিকাণ্ডের ফলে কাঠামোটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।আব্দুল্লাহ হাতিমকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এটি পুনরায় নির্মাণ করেন। তিনি এমনটি করেছিলেন একটি ঐতিহ্যের ভিত্তিতে (বেশ কয়েকটি হাদিস সংগ্রহে পাওয়া গেছে) যে হাতিম ছিল আব্রাহামিক কাবার ভিত্তির একটি অবশিষ্টাংশ, এবং মুহাম্মদ নিজে এটিকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এটি পুনর্নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন।

৬৯২ সালে মক্কার দ্বিতীয় অবরোধের সময় উমাইয়া সেনাবাহিনী আল-হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের নেতৃত্বে কাবাকে পাথর দিয়ে বোমাবর্ষণ করা হয়েছিল। শহরটির পতন এবং আব্দুল্লাহ ইবনে আল-জুবায়েরের মৃত্যুর ফলে আবদ আল-মালিক ইবনে মারওয়ানের অধীনে উমাইয়ারা অবশেষে সমস্ত ইসলামী সম্পত্তি পুনরায় একত্রিত করে এবং দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটায়। ৬৯৩ খ্রিস্টাব্দে, 'আব্দ আল-মালিক আল-জুবায়ের কাবার অবশিষ্টাংশগুলিকে ভেঙ্গে ফেলেন এবং কুরাইশদের দ্বারা স্থাপন করা ভিত্তির উপর এটি পুনর্নির্মাণ করেন। কাবা মুহম্মদের সময়ের ঘনক আকৃতিতে ফিরে আসে।

৯৩০ খ্রিস্টাব্দের হজের সময়, শিয়া কারমাতিয়ানরা আবু তাহির আল-জান্নাবির অধীনে মক্কা আক্রমণ করে, জমজম কূপকে তীর্থযাত্রীদের মৃতদেহ দিয়ে অপবিত্র করে এবং কালো পাথর চুরি করে, এটি আল-আহসা' নামে পরিচিত পূর্ব আরবের মরূদ্যানে নিয়ে যায়। আব্বাসীয়রা ৯৫২ খ্রিস্টাব্দে এটির মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত এটি সেখানে ছিল। এরপর থেকে কাবার মৌলিক আকৃতি ও গঠনের কোনো পরিবর্তন হয়নি।

১৬২৬ সালে ভারী বর্ষণ ও বন্যার পর কাবার দেয়াল ধসে পড়ে এবং মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একই বছর, অটোমান সম্রাট মুরাদ চতুর্থের শাসনামলে, মক্কা থেকে গ্রানাইট পাথর দিয়ে কাবা পুনর্নির্মিত হয় এবং মসজিদটি সংস্কার করা হয়।

কাবাকে ৫০০ সৌদি রিয়াল এবং ২০০০ ইরানি রিয়াল ব্যাঙ্কনোটের বিপরীতে চিত্রিত করা হয়েছে।

গ্রন্থপঞ্জি

সম্পাদনা
  • আর্মস্ট্রং, কারেন (২০০০,২০০২)।ইসলামঃ একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাসআইএসবিএন ০-৮১২৯-৬৬১৮-X
  • ক্রোন, প্যাট্রিসিয়া (২০০৪)।মক্কান বাণিজ্য এবং ইসলামের উত্থান ।পিসকাটাওয়ে, নিউ জার্সি: গর্গিয়াস।
  • এলিয়ট, জেরি (১৯৯২)।আরবে তোমার দরজাআইএসবিএন ০-৪৭৩-০১৫৪৬-৩
  • গুইলাম, এ (১৯৫৫)।মুহাম্মদের জীবন ।অক্সফোর্ড: অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস।
  • গ্রুনবাউম, জি.ই. ভন (১৯৭০)। ধ্রুপদী ইসলাম: একটি ইতিহাস ৬০০ এডি থেকে ১২৫৮ এডি । অ্যালডাইন পাবলিশিং কোম্পানি। আইএসবিএন 978-0-202-30767-1 
  • হাউটিং, জিআর; কাবা।কোরানের বিশ্বকোষ
  • হিশাম ইবন আল-কালবি দ্য আইডলস বই, নাবিহ আমিন ফারিস ১৯৫২ এর ভূমিকা এবং নোট সহ অনুবাদ করেছেন
  • ম্যাকোলে-লুইস, এলিজাবেথ, দ্য কাবা ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে (টেক্সট), স্মার্টহিস্ট্রি ।
  • মোহাম্মদ, মামদুহ এন. (১৯৯৬)।হজ থেকে ওমরাহ: এ থেকে জেড পর্যন্ত । আমানা পাবলিকেশন্স।আইএসবিএন ০-৯১৫৯৫৭-৫৪-X
  • পিটারসন, অ্যান্ড্রু (১৯৯৭)।ইসলামিক আর্কিটেকচারের অভিধান লন্ডন: রাউটলেজ।
  • ওয়েনসিঙ্ক, এ জে; কাবা।ইসলাম এনসাইক্লোপিডিয়া IV
  • [১৯১৫] দ্য বুক অফ হিস্ট্রি, এ হিস্ট্রি অফ অল নেশনস ফ্রম দ্য আর্লিয়েস্ট টাইমস টু দ্য প্রেজেন্ট, ভিসকাউন্ট ব্রাইস (পরিচয়), দ্য গ্রোলিয়ার সোসাইটি।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Wensinck, A. J; Ka`ba. Encyclopaedia of Islam IV p. 317
  2. "'House of God' Kaaba gets new cloth"। The Age Company Ltd.। ২০০৩। ২০১৭-১০-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৮-১৭ 
  3. "The Kiswa - (Kaaba Covering)"। Al-Islaah লPublications। ২০০৩-০৭-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৮-১৭ 
  4. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Al Arabiya নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  5. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; eq76 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  6. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Patricia Crone নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  7. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; :2 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  8. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; :0 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  9. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; armstrong নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  10. কুরআন ৩:৯৬ (অনুবাদ করেছেন ইউসুফ আলী)
  11. An alternative version is in Pickthall, Muhammad M. (সম্পাদক)। "The Quran"। সংগ্রহের তারিখ ১০ জানুয়ারি ২০১৮Lo! the first Sanctuary appointed for mankind was that at Becca, a blessed place, a guidance to the peoples; 
  12. Another version is in Shakir, M. H. (সম্পাদক)। "The Quran"। সংগ্রহের তারিখ ১০ জানুয়ারি ২০১৮Most surely the first house appointed for men is the one at Bekka, blessed and a guidance for the nations. 
  13. কুরআন ২২:২৬ (অনুবাদ করেছেন ইউসুফ আলী)
  14. Another version is in Pickthall, Muhammad M. (সম্পাদক)। "The Quran"। সংগ্রহের তারিখ ১০ জানুয়ারি ২০১৮And (remember) when We prepared for Abraham the place of the (holy) House, saying: Ascribe thou no thing as partner unto Me, and purify My House for those who make the round (thereof) and those who stand and those who bow and make prostration. 
  15. Another version is in Shakir, M. H. (সম্পাদক)। "The Quran"। সংগ্রহের তারিখ ১০ জানুয়ারি ২০১৮And when We assigned to Ibrahim the place of the House, saying: Do not associate with Me aught, and purify My House for those who make the circuit and stand to pray and bow and prostrate themselves. 
  16. কুরআন ২:১২৭ (অনুবাদ করেছেন ইউসুফ আলী)
  17. Another version is in Pickthall, Muhammad M. (সম্পাদক)। "The Quran"। সংগ্রহের তারিখ ১০ জানুয়ারি ২০১৮And when Ibrahim and Ismail were raising the foundations of the House, (Abraham prayed): Our Lord! Accept from us (this duty). Lo! Thou, only Thou, art the Hearer, the Knower. 
  18. Another version is in Shakir, M. H. (সম্পাদক)। "The Quran"। সংগ্রহের তারিখ ১০ জানুয়ারি ২০১৮And when Ibrahim and Ismail raised the foundations of the House: Our Lord! accept from us; surely Thou art the Hearing, the Knowing: 
  19. সহীহ বুখারী, ৫:৫৮:২২৬ (ইংরেজি)
  20. "A history of the Al Asqa Mosque"Arab World Books 
  21. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Ishaq2 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  22. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; eoi318 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  23. Robert G., Hoyland (১৯৯৭)। Seeing Islam as others saw it। THE DARWIN PRESS। পৃষ্ঠা 187। 
  24. Juan, Cole (২০২০)। "Hijazi Rock Inscriptions, Love of the Prophet, and Very Early Islam: Essays from Informed Comment"Hijazi Rock Inscriptions, Love of the Prophet, and Very Early Islam: Essays from Informed Comment 
  25. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; EllenbogenTugendhaft2011 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা

টেমপ্লেট:Holiest sites in Shia Islam