সূরা বাকারা

আল-কুরআন কারীমের ২য় সূরা

সূরা বাকারা, কুরআনের সবচেয়ে দীর্ঘতম সূরা, আয়াত সংখ্যা ২৮৬, মাসহাফে এটি সূরা ফাতিহার পর দ্বিতীয় ক্রমে এর অবস্থান। রেওয়ায়েত রয়েছে যে ইহা মদিনায় নাযিল হওয়া সর্বপ্রথম সূরা, তবে এই আয়াতটি ছাড়া وَاتَّقُوا يَوْمًا تُرْجَعُونَ فِيهِ إِلَى اللَّهِ ثُمَّ تُوَفَّى كُلُّ نَفْسٍ مَا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ  ‎ , কেননা, এটি আসমান থেকে নাযিলকৃত শেষ আয়াত যা বিদায় হজ্জের সময় মিনায় কোরবানীর দিন নাযিল হয়েছে। সুদ সংক্রান্ত আয়াতও কুরআনের প্রথম দিকে নাযিল হয়। খালিদ বিন মা'দান বলেন, এ সূরার মর্যাদা, মহিমা, হুকুম-আহকাম ও উপদেশের আধিক্য ইত্যাদি কারণে একে ফুসতাতুল কুরআন (কুরআনের বসতি) বলা হয়। উমর ইবনুল খাত্তাব এ সূরাটির আইনশাস্ত্র এবং এতে যা আছে তা শিখতে বারো বছর সময় নেন, যেখানে তাঁর পুত্র আবদুল্লাহ ইবনে উমর আট বছরেই শিখে ফেলেছিলেন। কারণ এ সূরাটি একেবারে নাযিল না হয়ে ধাপে ধাপে নাযিল হয়।[]

আল বাকারা
سورة البقرة
শ্রেণীমাদানী
নামের অর্থগাভী
অবতীর্ণ হওয়ার সময়হিজরতের পর মাদানী জীবনের শুরুর দিকে
পরিসংখ্যান
সূরার ক্রম
আয়াতের সংখ্যা২৮৬
পারার ক্রম১ (১-১৪১ আয়াত)
২ (১৪২-২৫২ আয়াত)
৩ (২৫৩-২৮৬ আয়াত)
রুকুর সংখ্যা৪০
সিজদাহ্‌র সংখ্যানেই
শব্দের সংখ্যা৬,২২১
অক্ষরের সংখ্যা২৫,‌৫০০[]
← পূর্ববর্তী সূরাসূরা ফাতিহা
পরবর্তী সূরা →সূরা আল-ইমরান
আরবি পাঠ্য · বাংলা অনুবাদ

এ সূরার ২৫৫ (দুইশত পঞ্চান্ন) নং আয়াতে আয়াতুল কুরসি রয়েছে, যা কুরআনের সবচেয়ে মহিমান্বিত আয়াত। আবু হুরাইরাহ রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ «وكلني رسول الله

بحفظ زكاة رمضان فأَتاني آت فجعل يحثو من الطعامِ فأَخذته فقلت لأَرفعنك إِلى رسول الله فقص الحديث فقال إِذا أَويت إِلى فراشك فاقرأ آية الكرسيِ لن يزال معك من الله حافظ ولا يقربك شيطان حتى تصبِح وقال النبِي: صدقك وهو كذوب ذاك شيطان»

[][][] তাছাড়া কুরআনের সবচেয়ে বড় আয়াত এ সূরার অন্তর্ভুক্ত, আর তা হল আয়াতুল মুদায়ানাহ[][]

নামকরণ

সম্পাদনা

বাকারাহ মানে গাভী। এ সূরার ৬৭ থেকে ৭৩ নম্বর আয়াত পর্যন্ত হযরত মুসা এর সময়কার বনি ইসরাইল এর গাভী কুরবানীর ঘটনা উল্লেখ থাকার কারণে এর এই নামকরণ করা হয়েছে। কুরআন মাজীদের প্রত্যেকটি সূরার এত ব্যাপক বিষয়ের আলোচনা করা হয়েছে যার ফলে বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে তাদের জন্য কোন পরিপূর্ণ ও সার্বিক অর্থবোধক শিরোনাম উদ্ভাবন করা সম্ভব নয়। শব্দ সম্ভারের দিক দিয়ে আরবি ভাষা অত্যন্ত সমৃদ্ধ হলেও মূলত এটি তো মানুষেরই ভাষা আর মানুষের মধ্যে প্রচলিত ভাষাগুলো খুব বেশি সংকীর্ণ ও সীমিত পরিসর সম্পন্ন। সেখানে এই ধরনের ব্যাপক বিষয়বস্তুর জন্য পরিপূর্ণ অর্থব্যাঞ্জক শিরোনাম তৈরি করার মতো শব্দ বা বাক্যের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এ জন্য নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী কুরআনের অধিকাংশ সূরার জন্য শিরোনামের পরিবর্তে নিছক আলামত ভিত্তিক নাম রেখেছেন। এই সূরার নামকরণ আল বাকারাহ করার অর্থ কেবল এতটুকু যে, এটি এমন সুরা যেখানে গাভীর কথা বলা হয়েছে।

  • সূরা আল-বাকারাহকে এই নামে নামকরণ করা হয়েছিল কারণ এতে আল-বাকারা এবং ইসরায়েলের সন্তানদের গল্প রয়েছে যা ৬৭ থেকে ৭৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহর নবী মুসা আ এর যুগে ঘটেছিল।[]
  • সূরাটিতে এক হাজার আদেশ, এক হাজার নিষেধাজ্ঞা, এক হাজার উপদেশ এবং এক হাজার সংবাদ অন্তর্ভুক্ত।
  • লিখিত, মুদ্রিত এবং সংরক্ষিত কুরআনের বাকারা সূরার আয়াত সংখ্যা ২৮৬ টি, যা হাফস বিন সুলেমান বিন আল- মুগিরাহ আল-আসাদি আল-কুফি এর বর্ণনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এবং আর কোনো ভিন্ন মত পাওয়া যায় না।
  • একইভাবে বাকারা সূরার আয়াতসংখ্যা যে ২৮৬ টি তা ওয়ারশ নামে প্রসিদ্ধ উসমান বিন সাঈদ আল-মিসরির বর্ণনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
  • তবে এই কিরাতগুলিতে পার্থক্য হলো, "হাফসের" কিরাআতে সূরার শুরুতে হুরুফে মুকাত্তায়াত যেমন বাকারার শুরুতে "আলিফ লাম মিম" এবং সূরা আরাফের শুরুতে "আলিফ লাম মিম সাদ" ও ইত্যাদিকে ১ আয়াত হিসেবে গণনা করা হয়েছে। কিন্তু "ওয়ারশ" কিরাআতে সেই হুরুফগুলিকে একটি স্বাধীন আয়াত হিসাবে গণনা না করে পরবর্তী আয়াতের সাথে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে।

নাযিলের সময়কাল

সম্পাদনা

সূরার বেশীর ভাগ আয়াত মহানবী-এর মদীনায় হিজরতের পর মাদানী জীবনের একেবারে প্রথম যুগে নাযিল হয়। আর এর কিছু অংশ পরে নাযিল হয়। বিষয়বস্তুর সাথে সামঞ্জস্য ও সাদৃশ্যের সম্পর্কিত যে আয়াতগুলো নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের একেবারে শেষ পর্যায়ে নাযিল হয় সেগুলোও এখানে সংযোজিত করা হয়েছে। যে আয়াতগুলো দিয়ে সূরাটি শেষ করা হয়েছে সেগুলো হিজরাতের আগে মক্কায় নাযিল হয়। কিন্তু বিষয়বস্তুর সাথে সামঞ্জস্যের কারণে সেগুলোকেও এ সূরার সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে।

অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট

সম্পাদনা

এ সূরাটি বুঝতে হলে প্রথমে এর ঐতিহাসিক পটভূমি ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে।

(১) হিজরাতের আগে ইসলামের দাওয়াতের কাজ চলছিল কেবল মক্কায়। এ সময় পর্যন্ত সম্বোধন করা হচ্ছিল কেবলমাত্র আরবের মুশরিকদেরকে। তাদের কাছে ইসলামের বাণী ছিল সম্পূর্ণ নতুন ও অপরিচিত। এখন হিজরাতের পরে ইহুদিরা সামনে এসে গেল। তাদের জনবসতিগুলো ছিল মদীনার সাথে একেবারে লাগানো। তারা তাওহীদ, রিসালাত, অহী, আখেরাত ও ফেরেশতার স্বীকৃতি দিত। আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের নবী মূসা আলাইহিস সালামের ওপর যে শরিয়াতী বিধান নাযিল হয়েছিল তারও স্বীকৃতি দিত। নীতিগতভাবে তারাও সেই দীন ইসলামের অনুসারী ছিল যার শিক্ষা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিয়ে চলছিলেন। কিন্তু বহু শতাব্দী কালের ক্রমাগত পতন ও অবনতির ফলে তারা আসল দীন থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছিল। তাদের আকীদা-বিশ্বাসের মধ্যে বহু অনৈসলামিক বিষয়ের অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। তাওরাতে এর কোন ভিত্তি ছিল না। তাদের কর্মজীবনে এমন অসংখ্য রীতি-পদ্ধতির প্রচলন ঘটেছিল যথার্থ দীনের সাথে যেগুলোর কোন সম্পর্ক ছিল না। তাওরাতের মধ্যে তারা মানুষের কথা মিশিয়ে দিয়েছিল। শাব্দিক বা অর্থগত দিক দিয়ে আল্লাহর কালাম যতটুকু পরিমাণ সংরক্ষিত ছিল তাকেও তারা নিজেদের মনগড়া ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিকৃত করে দিয়েছিল। দীনের যথার্থ প্রাণবস্তু তাদের মধ্য থেকে অন্তরহিত হয়ে গিয়েছিল। লোক দেখানো ধার্মিকতার নিছক একটা নিস্প্রাণ খোলসকে তারা বুকের সাথে আঁকড়ে ধরে রেখেছিল। তাদের উলামা,মাশায়েখ, জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও জনগণ – -সবার আকীদা-বিশ্বাস এবং নৈতিক ও বাস্তব কর্ম জীবন বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। নিজেদের এই বিকৃতির প্রতি তাদের আসক্তি এমন পর্যায়ে পৌছে দিয়েছিল যার ফলে কোন প্রকার সংস্কার সংশোধন গ্রহণের তারা বিরোধী হয়ে উঠেছিল। যখনই কোন আল্লাহর বান্দা তাদেরকে আল্লাহর দীনের সরল-সোজা পথের সন্ধান দিতে আসতেন তখনই তারা তাকে নিজেদের সবচেয়ে বড় দুশমন মনে করে সম্ভাব্য সকল উপায়ে তার সংশোধন প্রচেষ্টা ব্যর্থ করার জন্য উঠে পড়ে লাগতো। শত শত বছর ধরে ক্রমাগতভাবে এই একই ধারার পুনরাবৃত্তি হয়ে চলছিল। এরা ছিল আসলে বিকৃত মুসলিম। দীনের মধ্যে বিকৃতি, দীন বহির্ভূত বিষয়গুলোর দীনের মধ্যে অনুপ্রবেশ, ছোটখাটো বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি, দলাদলি, বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে বাদ দিয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ ও গুরুত্বহীন বিষয় নিয়ে মাতামাতি, আল্লাহকে ভুলে যাওয়া ও পার্থিব লোভ-লালসায় আকন্ঠ নিমজ্জিত হয়ে যাওয়ার কারণে তারা পতনের শেষ প্রান্তে পৌছে গিয়েছিল। এমন কি তারা নিজেদের আসল ‘মুসলিম’নামও ভুলে গিয়েছিল। নিছক ‘ইহুদি’ নামের মধ্যেই তারা নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। আল্লাহর দীনকে তারা কেবল ইসরাঈল বংশজাতদের পিতৃসূত্রে প্রাপ্ত উত্তরাধিকারে পরিণত করেছিল। কাজেই নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় পৌছার পর ইহুদিদেরকে আসল দীনের দিকে আহবান করার জন্য আল্লাহ তাকে নির্দেশ দিলেন। সূরা বাকারার ১৫ ও ১৬ রুকূ’ এ দাওয়াত সন্বলিত। এ দু’রুকূ’তে যেভাবে ইহুদিদের ইতিহাস এবং তাদের নৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থার সমালোচনা করা হয়েছে এবং যেভাবে তাদের বিকৃত ধর্ম ও নৈতিকতার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যের মোকাবিলায় যথার্থ দীনের মূলনীতিগুলো পাশাপাশি উপস্থাপন করা হয়েছে, তাতে আনুষ্ঠানিক ধার্মিকতার মোকাবিলায় যথার্থ ধার্মিকতা কাকে বলে, সত্য ধর্মের মূলনীতিগুলো কি এবং আল্লাহর দৃষ্টিতে কোন্‌ কোন্‌ জিনিস যথার্থ গুরুত্বের অধিকারী তা দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

এ সময়ের প্রায় ১৯শ ’ বছর আগে হযরত মূসার (আ)যুগ অতীত হয়েছিল। ইসরাঈলী ইতিহাসের হিসেব মতে হযরত মূসা (আ)খৃঃ পূঃ ১২৭২ অব্দে মৃত্যুবরণ করেন। অন্যদিকে নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে নবুওয়াত লাভ করেন।

(২) মদীনায় পৌছার পর ইসলামী দাওয়াত একটি নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছিল। মক্কায় তো কেবল দীনের মূলনীতিগুলোর প্রচার এবং দীনের দাওয়াত গ্রহণকারীদের নৈতিক প্রশিক্ষণ দানের মধ্যেই ইসলামী দাওয়াতর কাজ সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু হিজরাতের পর যখন আরবের বিভিন্ন গোত্রর লোকেরা ইসলাম গ্রহণ করে চতুর্দিক থেকে মদীনায় এসে জমায়েত হতে থাকলো এবং আনসারদের সহায়তায় একটি ছোট্ট ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত্‌ গড়ে উঠলো তখন মহান আল্লাহ সমাজ, সংস্কৃতি, লোকাঁচার, অর্থনীতি ও আইন সম্পর্কিত মৌলিক বিধান দিতে থাকলেন এবং ইসলামী মূলনীতির ভিত্তিতে এ নতুন জীবন ব্যবস্থাটি কীভাবে গড়ে তুলতে হবে তারও নির্দেশ দিতে থাকলেন। এ সূরার শেষ ২৩টি রুকু’তে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে এ নির্দেশ ও বিধানগুলো বয়ান করা হয়েছে। এর অধিকাংশ শুরুতেই পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল এবং কিছু পাঠানো হয়েছিল পরবর্তী পর্যায়ে প্রয়োজন অনুযায়ী বিক্ষিপ্তভাবে।

(৩) হিজরাতের পর ইসলাম ও কুফরের সংঘাতও একটি নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছিল। হিজরাতের আগে ইসলামের দাওয়াত কুফরের ঘরের মধ্যেই দেয়া হচ্ছিল। তখন বিভিন্ন গোত্রের যেসব লোক ইলাম গ্রহণ করতো তারা নিজেদের জায়গায় দীনের প্রচার করতো। এর জবাবে তাদের নির্যাতনের শিকার হতে হতো। কিন্তু হিজরাতের পরে এ বিক্ষিপ্ত মুসলমানরা মদীনায় একত্র হয়ে একটি ছোট্ট ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করার পর অবস্থা পরিবর্তিত হয়ে গেলো। তখন একদিকে ছিল একটি ছোট জনপদ এবং অন্যদিকে সমগ্র আরব ভূখণ্ড তাকে ধ্বংস করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল। এখন এ ছোট্ট দলটির কেবল সাফল্যই নয় বরং তার অস্তিত্ব ও জীবনই নির্ভর করছিল পাঁচটি জিনিসের ওপর। এক, পূর্ণ শক্তিতে ও পরিপূর্ণ উৎসাহ-উদ্দীপনা সহকারে নিজের মতবাদের প্রচার করে সর্বাধিক সংখ্যক লোককে নিজের চিন্তা ও আকীদা-বিশ্বাসের অনুযায়ী করার চেষ্টা করা। দুই, বিরোধীদের বাতিল ও ভ্রান্ত পথের অনুসারী বিষয়টি তাকে এমনভাবে প্রমাণ করতে হবে যেন কোন বুদ্ধি-বিবেকবান ব্যক্তির মনে এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্রও সংশয় না থাকে। তিন, গৃহহারা ও সারা দেশের মানুষের শত্রুতা ও বিরোধিতার সম্মুখীন হবার কারণে অভাব-অনটন, অনাহার-অর্ধহার এবং সার্বক্ষণিক অশান্তি ও নিরাপত্তাহীনতায় সে ভুগছিল। চতুর্দিকে থেকে বিপদ তাকে ঘিরে নিয়েছিল এ অবস্থায় যেন সে ভীত-সন্ত্রস্ত না হয়ে পড়ে। পূর্ণ ধৈর্য ও সহিষ্ণতা সহকারে যেন অবস্থার মোকাবিলা করে এবং নিজের সংকল্পের মধ্যে সামান্যতম দ্বিধা সৃষ্টির সুযোগ না দেয়। চার, তার দাওয়াতকে ব্যর্থকাম করার জন্য যে কোন দিক থেকে যে কোন সশস্ত্র আক্রমণ আসবে পূর্ণ সাহসিকতার সাথে তার মোকাবিলা করার জন্য তাকে প্রস্তুত হতে হবে। বিরোধী পক্ষের সংখ্যা ও তাদের শক্তির আধিক্যের পরোয়া করা চলবে না। পাঁচ, তার মধ্যে এমন সুদৃঢ় হিম্মত সৃষ্টি করতে হবে যার ফলে আরবের লোকেরা ইসলাম যে নতুন ব্যবস্থা কায়েম করতে চায় তাকে আপসে গ্রহণ করতে না চাইলে বল প্রয়োগে জাহেলিয়াতের বাতিল ব্যবস্থাকে মিটিয়ে দিতে সে একটুকু ইতস্তত করবে না। এ সূরায় আল্লাহ এ পাঁচটি বিষয়ের প্রাথমিক নির্দেশনা দিয়েছেন।

(৪) ইসলামী দাওয়াতের এ পর্যায়ে একটি নতুন গোষ্ঠীও আত্মপ্রকাশ শুরু করেছিল। এটি ছিল মুনাফিক গোষ্ঠী। নবী করীমের মক্কায় অবস্থান কালের শেষের দিকেই মুনাফিকীর প্রাথমিক আলামতগুলো সুস্পষ্ট হতে শুরু হয়েছিল। তবুও সেখানে কেবল এমন ধরনের মুনাফিক পাওয়া যেতো যারা ইসলামের সত্যতা স্বীকার করতো এবং নিজেদের ঈমানের ঘোষণাও দিতো। কিন্তু এ সত্যের খাতিরে নিজেদের স্বার্থ বিকিয়ে দিতে নিজেদের পার্থিব সম্পর্কচ্ছেদ করতে এবং এ সত্য মতবাদটি গ্রহণ করার সাথে সাথেই যে সমস্ত বিপদ-আপদ, যন্ত্রণা-লাঞ্ছনা ও নিপীড়ন –নির্যাতন নেমে আসতে থাকতো তা মাথা পেতে নিতে তারা প্রস্তুত ছিল না। মদীনায় আসার পর এ ধরনের মুনাফিকদের ছাড়াও আরো কয়েক ধরনের মুনাফিক ইসলামী দলে দেখা যেতে লাগলো। মুনাফিকদের এটি গোষ্ঠ ছিল ইসলামকে চুড়ান্তভাবে অস্বীকারকারী। তারা নিছক ফিত্‌না সৃষ্টি করার জন্য মুসলমানদের দলে প্রবেশ করতো। মুনাফিকদের দ্বিতীয় গোষ্ঠীটির অবস্থা ছিল এই যে, চতুর্দিক থেকে মুসলিম কর্তৃত্ব ও প্রশাসন দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে যাবার কারণে তারা নিজেদের স্বার্থ-সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে একদিকে নিজেদেরকে মুসলমানদের অন্তরভুক্ত করতো এবং অন্যদিকে ইসলাম বিরোধীদের সাথেও সম্পর্ক রাখতো। এভাবে তারা উভয় দিকের লাভের হিস্‌সা ঝুলিতে রাখতো এবং উভয় দিকের বিপদের ঝাপ্‌টা থেকেও সংরক্ষিত থাকতো। তৃতীয় গোষ্ঠীতে এমন ধরনের মুনাফিকদের সমাবেশ ঘটেছিল যারা ছিল ইসলাম ও জাহেলিয়াতের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে দোদুল্যমান। ইসলামের সত্যতার ব্যাপারে তারা পূর্ণ নিশ্চিন্ত ছিল না। কিন্তু যেহেতু তাদের গোত্রের বা বংশের বেশির ভাগ লোক মুসলমান হয়ে গিয়েছিল তাই তারাও মুসলমান হয়ে গিয়েছিল। মুনাফিকদের চতুর্থ গোষ্ঠীটিতে এমন সব লোকের সমাবেশ ঘটেছিল যারা ইসলামকে সত্য বলে স্বীকার করে নিয়েছিল কিন্তু জাহেলিয়াতের আচার –আচরণ, কুসংস্কার ও বিশ্বাসগুলো ত্যাগ করতে, নৈতিক বাধ্যবাধকতার শৃংখল গলায় পরে নিতে এবং দায়িত্ব ও কর্তব্যের বোঝা বহন করতে তাদের মন চাইতো না।

সূরা বাকারাহ নাযিলের সময় সবেমাত্র এসব বিভিন্ন ধরনের মুনাফিক গোষ্ঠীর আত্মপ্রকাশ শুরু হয়েছিল। তাই মহান আল্লাহ এখানে তাদের প্রতি সংক্ষিপ্ত ইঙ্গিত করেছেন মাত্র। পরবর্তীকালে তাদের চরিত্র ও গতি-প্রকৃতি যতই সুস্পষ্ট হতে থাকলো ততই বিস্তারিতভাবে আল্লাহ তা’আলা বিভিন্ন মুনাফিক গোষ্ঠীর প্রকৃতি অনুযায়ী পরবর্তী সূরাগুলোয় তাদের সম্পর্কে আলাদা আলাদাভাবে নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রথম আয়াত নাযিলের কারণ

সম্পাদনা

মুজাহিদের বর্ণনায়, তিনি বলেন: সূরার প্রথমদিকের চারটি আয়াত ঈমানদারদের প্রশংসায় নাযিল হয়েছে, এরপর দুটি আয়াত কাফেরদের এবং পরবর্তী তেরোটি আয়াত মুনাফিকদের দোষণায় নাযিল হয়েছে।[]

২৬তম আয়াত নাযিলের কারণ

সম্পাদনা

ইবনে আব্বাস এবং ইবনে মাসউদ বলেন: সর্বশক্তিমানের বাণীঃ (مثلهم كمثل الذي استوقد نارا) ও (أو كصيب من السماء), আল্লাহ যখন মুনাফিকদের ব্যাপারে এই দুটি উদাহরণ প্রদান করেন, তখন মুনাফিকগণ বলাবলি করতে লাগল, মহান আল্লাহ তায়ালা এহেন উদাহরণ দেওয়া থেকে পাক ও পবিত্র। তখন আল্লাহ তায়ালা নাযিল করেন (إن الله لا يستحيي أن يضرب مثلا ما بعوضة فما فوقها)।[১০]

৬২তম আয়াত নাযিলের কারণ

সম্পাদনা

মুজাহিদের সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: সালমান আল-ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন: আমি নবীকে এমন একটি ধর্মের লোকদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম যাদের সাথে আমি সময় অতিবাহিত করেছি এবং আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! তারা নামাজ পড়ত, রোজা রাখত এবং আপনার প্রতি ঈমান আনত এবং তারা সাক্ষ্য দিত যে আপনি একজন নবী হিসেবে আসবেন। অতঃপর আল্লাহ ৬২ তম আয়াতটি নাযিল করেন।[১১]

  • আবু মাসউদ আল-আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ﷺ বলেছেনঃ "সূরা বাকারার শেষের দুটি আয়াত, যে ব্যক্তি রাতে পাঠ করবে, তা তার জন্য যথেষ্ট।"[১২]
  • আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ﷺ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "তোমরা তোমাদের ঘরকে কবর বানাবে না, আর যে ঘরে সূরা বাকারা পাঠ করা হয় সে ঘরে শয়তান প্রবেশ করবে না।"[১৩][১৪][১৫]
  • সাহল বিন সাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ "প্রত্যেক জিনিসেরই একটি কুঁজ থাকে, এবং কুরআনের কুঁজ হল বাকারা সুরা, আর যে ব্যক্তি এক রাতে নিজের ঘরে এটি পাঠ করবে, শয়তান তার তিন রাত পর্যন্ত প্রবেশ করবে না।"[১৬]
  • আবূ ﷺ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি: "তোমরা কোরআন পড়, কেননা কেয়ামতের দিন এটি তার লোকদের জন্য সুপারিশ করবে। তোমরা জাহরাউইন (আল-বাকারা এবং আল-ইমরান) পাঠ কর, কারণ তারা কিয়ামতের দিন আসবে যেন তারা মেঘ বা দুটি মেঘ। অথবা যেন কিয়ামতের দিন তারা দুই দল পাখী তাদের পরিবারের পক্ষে তর্ক করছে। তারপর তিনি বললেন: সুরা বাকারা পড়, কেননা এটা আকড়ে ধরা আশীর্বাদ, আর ছেড়ে দেয়াটা আফসোস। এবং কোনো বাতলাহ ধরতে পারবে না।" [১৭]

জাহরাউইন অর্থ: দুটি আলোক, আল-গিয়াবাহ অর্থ: যা উপর থেকে ছায়া দেয়, আল-ফারাক: কোন কিছুর টুকরো, বাতালাহ অর্থ: যাদুকররা।

গাভীর ঘটনাটি

সম্পাদনা

ঘটনাটি সূরা আল-বাকারার ৬৭-৭৩ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছেঃ

"স্মরণ কর, যখন মূসা (আ.) স্বীয় সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে একটি গরু যবহ করার আদেশ দিচ্ছেন’; তারা বলেছিল, ‘তুমি কি আমাদের সঙ্গে ঠাট্টা করছো’? মূসা বলল, আল্লাহর আশ্রয় নিচ্ছি, যাতে আমি অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত না হই।"

"তারা বলল, ‘আমাদের জন্য তোমার প্রতিপালককে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে বল তা কীরূপ’? মূসা বলল, ‘আল্লাহ বলছেন, তা এমন এক গরু যা বৃদ্ধও নয় এবং অল্প বয়স্কও নয়- মধ্য বয়সী। সুতরাং যা (করতে) আদিষ্ট হয়েছ, তা পালন কর’।"

"তারা বলল, ‘তুমি আমাদের জন্য তোমার রবের নিকট দো‘আ কর, তিনি যেন আমাদের জন্য স্পষ্ট করে দেন, কেমন তার রঙ’? সে বলল, ‘নিশ্চয় তিনি বলছেন, নিশ্চয় তা হবে হলুদ রঙের গাভী, তার রঙ উজ্বল, দর্শকদেরকে যা আনন্দ দেবে’।"

"তারা বলল, ‘তুমি আমাদের জন্য তোমার রবের নিকট দো‘আ কর, তিনি যেন আমাদের জন্য স্পষ্ট করে দেন, তা কেমন? নিশ্চয় গরুটি আমাদের জন্য সন্দেহপূর্ণ হয়ে গিয়েছে। আর নিশ্চয় আমরা আল্লাহ চাহে তো পথপ্রাপ্ত হব’।"

"সে বলল, ‘নিশ্চয় তিনি বলছেন, ‘নিশ্চয় তা এমন গাভী, যা ব্যবহৃত হয়নি জমি চাষ করায় আর না ক্ষেতে পানি দেয়ায়। সুস্থ যাতে কোন খুঁত নেই’। তারা বলল, ‘এখন তুমি সত্য নিয়ে এসেছ’। অতঃপর তারা তা যবেহ করল অথচ তারা তা করার ছিল না।"

"আর স্মরণ কর, যখন তোমরা একজনকে হত্যা করলে অতঃপর সে ব্যাপারে একে অপরকে দোষারোপ করলে। আর আল্লাহ প্রকাশ করে দিলেন তোমরা যা গোপন করছিলে।"

"অতঃপর আমি বললাম, ‘তোমরা তাকে আঘাত কর গাভীটির (গোশতের) কিছু অংশ দিয়ে। এভাবে আল্লাহ জীবিত করেন মৃতদেরকে। আর তিনি তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শনসমূহ দেখান, যাতে তোমরা বুঝ।"

সূরা বাকারার বৈশিষ্ট্য

সম্পাদনা

সূরা আল-বাকারার এই নামে নামকরণ করা হয়েছে কারণ এতে বনী ইসরাঈলের গাভীর কাহিনী রয়েছে এবং এটি ইহুদীদের কাছ থেকে যেমন ঘটেছিল আল্লাহর আইন বাস্তবায়নের জন্য তাড়াহুড়ো করার প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে। সূরা আল-বাকারার অন্যতম উদ্দেশ্য হল উম্মতকে পৃথিবী গড়ার জন্য প্রস্তুত করা, আল্লাহর ধর্ম প্রতিষ্ঠা করা এবং মানুষের প্রকৃতি স্পষ্ট করে দেওয়া এবং এতে রয়েছে ইমানের ভিত্তি এবং শরীয়তের সম্পূর্ণতা[১৮]

সূরা আল-বাকারার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে রয়েছে:

  1. এটি কোরানের দীর্ঘতম সূরা। [১৯]
  2. এতে পবিত্র কোরআনের শেষ আয়াত রয়েছে।
  3. এটি কোরানের দীর্ঘতম আয়াত (ঋণের দায়েনা আয়াত) ধারণ করে।
  4. এতে রয়েছে কোরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত (আয়াতুল কুরসি)।
  5. নবীর জীবনীতে উল্লেখ করা হয়েছে, এ সূরা কিয়ামতের দিন তার পাঠকের পক্ষে লড়বে, এ সূরাতে রয়েছে ইসমে আজম, তাকে এটি দ্বারা ডাকা হলে তিনি উত্তর দেন এবং এটি আকড়ে ধরা আশীর্বাদ এবং এটি ছেড়ে যাওয়া অনুশোচনা, এবং যাদুকরেরা এটি বহন করতে পারে না।

ফটো গ্যালারি

সম্পাদনা

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. তাফসীর ইবনে কাসির
  2. الجامع لأحكام القرآن، محمد بن أحمد الأنصاري القرطبي، ج 1 / 148، دار الفكر
  3.   অজানা প্যারামিটার |مسار أرشيف= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |عنوان= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |مسار= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |تاريخ الوصول= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |تاريخ أرشيف= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |عمل= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য);
  4. টেমপ্লেট:استشهاد بكتاب
  5.   অজানা প্যারামিটার |مسار أرشيف= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |عنوان= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |مسار= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |تاريخ الوصول= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |ناشر= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |تاريخ أرشيف= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য);
  6. المصحف الإلكتروني، نبذة عن سورة البقرة ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৭-০৭-১৪ তারিখে
  7.   অজানা প্যারামিটার |مسار أرشيف= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |عنوان= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |تاريخ= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |مسار= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |تاريخ أرشيف= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |تاريخ الوصول= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |لغة= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |موقع= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য);
  8. الإتقان في علوم القرآن، السيوطي، ج 1 / 156، دار الفكر، لبنان.
  9. أخرجه الإمام أبو جعفر بن جرير الطبري
  10. أسباب النزول للنيسابوري
  11. أخرجه ابن أبي حاتم
  12. صحيح البخاري (5040)
  13. رواه الترمذي وقال: حسن صحيح
  14. رواه مسلم
  15. رواه النسائي
  16. رواه الطبراني وابن حيان وابن مردويه عن سهل بن سعد
  17. رواه أحمد ومسلم عن أبي أمامة الباهلي
  18. المختصر في تفسير القرآن الكريم - سورة البقرة ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০২০-০৬-০৪ তারিখে
  19. مقاصد سورة البقرة - فايز السريح ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০২০-০৬-০৪ তারিখে

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা