সেগুন
সেগুন (ইংরেজি: Teak) হল নিরক্ষীয় ও ক্রান্তিয় অঞ্চলের এক প্রজাতির গাছ এবং এ গাছের কাঠ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Tectona grandis।[১] এ গাছের কাঠ বেশ শক্ত হয় এবং আসবাবপত্র বানাতে সেগুন কাঠের ব্যবহার সমাদৃত। সেগুন গাছ একটি বৃহৎ পর্ণমোচী বা পাতাঝরা উদ্ভিদ যা শক্তকাঠের মিশ্রবনভূমিতে বেশি দেখা যায়। সেগুন গাছের ফুল আকারে ছোট, রং সাদা এবং সুগন্ধ যুক্ত আর এর পাতা আকারে বড় এবং পেছন দিকে ছোট আঁশ থাকে।
সেগুন Tectona grandis | |
---|---|
Teak foliage and seeds | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | উদ্ভিদ |
শ্রেণীবিহীন: | সপুষ্পক উদ্ভিদ |
শ্রেণীবিহীন: | Eudicots |
শ্রেণীবিহীন: | Asterids |
বর্গ: | Lamiales |
পরিবার: | Lamiaceae |
গণ: | Tectona |
প্রজাতি: | T. grandis |
দ্বিপদী নাম | |
Tectona grandis L.f. |
বর্ণনা
সম্পাদনাসেগুন একটি বৃহদাকার পর্ণমোচী বা পাতাঝরা উদ্ভিদ যা উচ্চতায় ৪০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর কাণ্ড ধূসর বা ধূসর–বাদামি রংয়ের। পাতাগুলো অনেকটা ডিম্বাকার এবং মাঝে বেশ চওড়া, দৈর্ঘ্যে ১৫–৪৫ সে.মি. (৫.৯–১৭.৭ ইঞ্চি) এবং প্রস্থে ৮–২৩ সে.মি. (৩.১–৯.১ ইঞ্চি)। পাতাগুলো শক্ত বোঁটার দ্বারা কাণ্ডের সাথে যুক্ত থাকে এবং বোঁটা গুলো দৈর্ঘ্যে ২–৪ সে.মি. (০.৮–১.৬ ইঞ্চি) হয়ে থাকে। পাতার প্রান্তগুলো সমান ।[২]
সুগন্ধি সাদা ফুল গুলো ২৫–৪০ সে.মি. লম্বা আর ৩০ সে.মি. ছড়ানো গুচ্ছের মধ্যে জুন থেকে আগস্ট মাসে ফুটে থাকে [৩]। ফল গুলো পরিপক্ব হয়ে অক্টোবর - নভেম্বর মাসে গাছ থেকে ঝরে পড়ে । একটি ফলে মাত্র একটি বীজ থাকে । বীজ থেকে চারা গজানোর জন্য বীজকে বারবার পানিতে ভেজান ও রোদে শুকানোর দরকার হয় ।
বিস্তৃতি
সম্পাদনাসেগুন গাছের আদি নিবাস দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া, বিশেষত: ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া । তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বর্তমানে এ গাছ পাওয়া যায় ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা হয় যার মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হল আফ্রিকা ও ক্যারিবিয়ান দেশকসমূহ । পৃথিবীর মোট সেগুন কাঠের যোগানের একতৃতীয়াংশই আসে মায়ানমার থেকে।
সেগুনের প্রয়োজনীয়তা
সম্পাদনাএই কাঠ দিয়ে গৃহনির্মাণের জন্যে বীম, বরগা, দরজা, জানালা তৈরি হয়। ঘরের যাবতীয় আসবাব তৈরীতে এই কাঠ আদর্শ। সুন্দর সুন্দর খেলনা, হার্মোনিয়ম, পিয়ানো, বেহালা প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্র তৈরির জন্যে সেগুন কাঠ ব্যবহৃত হয়। নৌকা, জাহাজ, মাস্তুল প্রভৃতি তৈরির কাজে সেগুন কাঠ ব্যবহৃত হয়। বাড়ি ও ব্রিজ তৈরির কাজে সেগুন কাঠের প্রয়োজন হয়। সেগুন কাঠ থেকে এক প্রকার তেল পাওয়া যায় যা ভার্নিশের কাজে লাগে। এবং ব্যথা-বেদনানাশক। সেগুনপাতা কুঁড়ে ঘর ছাওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়।[৪]
চিত্রশালা
সম্পাদনা-
পাতা সহ সেগুন গাছ, রমনাপার্ক, ঢাকা।
-
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের গ্রামীণ হাওড়ায় নবীন সেগুন গাছ।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "GRIN Taxonomy for Plants - Tectona"। United States Department of Agriculture।
- ↑ Tectona grandis. Flora of China 17: 16. Accessed online: 17 December 2010.
- ↑ দ্বিজেন শর্মা লেখক; বাংলা একাডেমী ; ফুলগুলি যেন কথা; মে, ১৯৮৮; পৃষ্ঠা-৪০, আইএসবিএন ৯৮৪-০৭-৪৪১২-৭
- ↑ বই: জীবন বিজ্ঞান (সপ্তম), লেখক:তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী, প্রকাশক: সর্বভারতীয় শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী কংগ্রেস, পশ্চিমবঙ্গ শাখা,বছর: ১৯৮৩, পৃঃ ৬৩