ইমামত (শিয়া তত্ত্ব)

ইমামত (আরবি: إمامة) হল শিয়া ইসলামের একটি তত্ত্ব ও আকীদা। এই তত্ত্ব অনুসারে নবী মুহাম্মদের বংশোদ্ভূত নির্দিষ্ট ব্যক্তিরাই তার মৃত্যুর পর তার স্থলাভিষিক্ত ও মুসলিম উম্মাহর নেতা ও পথপ্রদর্শক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন।[] শিয়ারা বিশ্বাস করে যে ইমামগণ হলেন মুহাম্মদের খলিফা বা ন্যায্য উত্তরাধিকারী। তারা (জায়েদি ব্যতীত) আরও বিশ্বাস করে যে ইমামগণ ঐশী জ্ঞান, অভ্রান্ততা, নিষ্পাপতা, কর্তৃত্ব প্রভৃতির অধিকারী এবং মুহাম্মদের পরিবার বা আহল আল-বাইতের সদস্য।[] ইমামদের কুরআনের তাফসীর ও ব্যাখ্যার পাশাপাশি[] দিকনির্দেশনা দেওয়ার ক্ষমতা আছে।

ইমামত
إمامة‎
দায়িত্ব
বারো ইমাম
(ইসনা আশারিয়া)
ইসমাইলি ইমামগণ
(ইসমাইলি)
জায়েদি ইমামগণ
(জায়েদি)
বিস্তারিত
প্রথম সম্রাট/সম্রাজ্ঞীআলী
শেষ সম্রাট/সম্রাজ্ঞীমাহদী
গঠন৬৩২ খ্রি. (মুহাম্মদের ওফাত দিবসে)

নাসিরুদ্দীন তুসীর মতে ইমাম এমন এক মাধ্যম যার মাধ্যমে মানুষ ঐশ্বরিক অনুগ্রহ লাভ করে, কারণ “তিনি মানুষদেরকে আল্লাহর আনুগত্যের নিকটে নিয়ে আসেন এবং তাদের অবাধ্যতা থেকে দূরে রাখেন।” তার লক্ষ্য মানুষের পূর্ণতাপ্রাপ্তি, এটা যৌক্তিক যে ঈশ্বর ইমামকে তার ইচ্ছার অধীনে মনোনীত করেন। সুতরাং তার জীবন ও কর্মকাণ্ড মানুষের প্রতি ঈশ্বরের অনুগ্রহের দুটি রূপ প্রদর্শন করে।[]

ব্যুৎপত্তি

সম্পাদনা

"ইমাম" শব্দটি দ্বারা এমন একজন ব্যক্তিকে বোঝায় যে "সামনে" দাঁড়িয়ে বা হাঁটে। সুন্নি ইসলামে এই শব্দটি সাধারণত এমন একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় যিনি মসজিদে নামাজ পড়ার পথ দেখান। এর আরেকটি অর্থ একটি মাযহাবের প্রধান ("ধী গোষ্ঠী")। তবে শিয়া দৃষ্টিকোণ থেকে এটি কেবল আরবি ভাষায় শব্দটির প্রাথমিক ধারণা এবং এর সঠিক ধর্মীয় ব্যবহারের জন্য "ইমাম" শব্দটি কেবলমাত্র পূর্ববর্তী ইমাম কর্তৃক ভ্রমপ্রমাদশূন্য ভাবে মনোনীত মুহাম্মদের পরিবারের সদস্যদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

ভূমিকা

সম্পাদনা

শিয়ারা আরও বিশ্বাস করে যে কেবলমাত্র এই আ'ম্মাহরই খলিফা হওয়ার অধিকার রয়েছে, যার অর্থ ঐক্যমতের (ইজমা) দ্বারা নির্বাচিত হোক বা না হোক অন্য সকল খলিফা খিলাফতের দখলদার, তাই এই রাজনৈতিক অবস্থানগুলি ঐশ্বরিক অবস্থান নয়।

সকল মুসলমান বিশ্বাস করে যে মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন: "যার কাছে আমি মাওলা, আলী তার মাওলা।" সুন্নী ও শিয়া উভয়ের সংগ্রহের ৪৫ টির বেশি হাদীস গ্রন্থে এই হাদীসটি বিভিন্নভাবে বিভিন্ন সূত্র ধরে বর্ণনা করা হয়েছে। এই হাদীসটি আল-তিরমিযী, ৩৭১৩ নং হাদীস; পাশাপাশি ইবনে মাজাহ, ১২১ নং হাদীস; প্রমুখ হাদীস সংগ্রহকারীগণও বর্ণনা করেছেন। সুন্নি ও শিয়া-র মধ্যে বিরোধের প্রধান বিষয়টি 'মাওলা' শব্দের ব্যাখ্যা নিয়ে। শিয়াদের কাছে শব্দটির অর্থ 'মাস্টার' এবং এর উচ্চতর তাৎপর্য আছে, যেমনটি এই শব্দটি তার জীবদ্দশায় মুহাম্মদকে সম্বোধন করার জন্য ব্যবহৃত হতো। সুতরাং, মুহাম্মদ যখন মৃত্যুর মাত্র কয়েক মাস আগে প্রকৃতপক্ষে (মৌখিক ভাবে) ও শারীরিকভাবে (আবু বকর, উমর ও উসমান সহ [ভবিষ্যতের তিনজন খলিফা যারা আলীর আগে খলিফা হন] তার নিকটতম সহচরদের উপস্থিতিতে আলীর প্রতি আনুগত্যের চিহ্ন হিসেবে উভয়ের হাত ধরে প্রকাশ্যে আলীকে তাদের গুরু হিসেবে গ্রহণ করেন) গাদিরি খুম ওয়াসিসে তার উপাধি এবং সকল মুসলমানের জন্য আলীকে মাওলা হিসাবে সম্বোধন করার রীতিটি হস্তান্তর করেন, তখন মুহাম্মদ মারা যাওয়ার আগেই যে লোকেরা আলীকে মুহাম্মদের তাত্ক্ষণিক উত্তরসূরি হিসাবে দেখেছিল তারা শিয়া হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। তবে সুন্নিদের কাছে এই শব্দের অর্থ কেবলমাত্র 'প্রিয়' বা 'শ্রদ্ধেয়' এবং এর অন্য কোন তাৎপর্য নেই।

সম্প্রদায়

সম্পাদনা

মূল নিবন্ধ: মুসলিম সম্প্রদায়

শিয়া ইসলামের (শিয়াপন্থী) অভ্যন্তরে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উৎপত্তি হয়েছে, কারণ তাদের মধ্যে ইমামদের উত্তরসূরি নিয়ে মতভেদ আছে, যেমনটি মুহাম্মদের উত্তরাধিকার নিয়ে মতভেদের কারণে ইসলামের মধ্যে শিয়া - সুন্নি উদ্ভূত হয়েছে। প্রতিটি উত্তরসূরি নিয়ে বিরোধ শিয়া ইসলামের মধ্যে একটি ভিন্ন তরিকাহ (আক্ষরিক অর্থ 'পথ'; বর্ধিত অর্থ 'সম্প্রদায়') নিয়ে আসে। প্রতিটি শিয়া তরিকাহ তার নিজস্ব ইমামের বংশকে অনুসরণ করে, ফলে প্রতিটি নির্দিষ্ট শিয়া তারিকাহর জন্য বিভিন্ন সংখ্যক ইমাম আছেন। যখন কোন ইমামের উত্তরাধিকারী না থাকায় ধারাটি শেষ হয়ে যায় তখন তিনি (শেষ ইমাম) বা তার আজাত উত্তরাধিকারী আত্মগোপনে চলে গেছে বলে মনে করা হয়, অর্থাৎ গায়েব হয়ে গেছেন (The Occultation)।

অনুসারীর দিক দিয়ে সংখ্যাগুরু শিয়া তারিকাহ হলো দ্বাদশবাদি শিয়া ইসলাম (Twelvers) যারা সাধারণত "শিয়া" নামে পরিচিত। এর পরে আছে নিজারি ইসমাইলিরা, এরা সাধারণভাবে ইসমাইলি নামে পরিচিত; এবং তারপরে মুস্তালিয় ইসমাইলিরা, এরা সাধারণত তাদের বোহরি তরীকার মধ্যে আরও বিভেদ নিয়ে "বোহরা" নামে পরিচিত। দ্রুজ তরিকাহরা প্রথমে ফাতেমীয় ইসমাইলিদের অংশ ছিল পরে ফাতেমীয় ইমাম ও খলিফা আল হাকিম বি আমরিল্লাহর মৃত্যুর পরে ফাতেমীয় ইসমাইলিদের থেকে আলাদা হয়ে যায়। আরেকটি ছোট তরিকাহ হল জায়েদি শিয়া, যারা পঞ্চবাদি শিয়া নামেও পরিচিত এবং তারা তাদের শেষ ইমামের গায়েব হওয়া বিশ্বাস করে না।

যদিও এই সমস্ত ভিন্ন শিয়া তরিকাহগুলি ইসলামের শিয়া গ্রুপের (সুন্নি গোষ্ঠীর বিপরীতে) অন্তর্ভুক্ত, তবে মূল শিয়া তরিকাহদের মধ্যে গুরুতর মতবাদগত পার্থক্য আছে। শেষ ইমামর গায়েব হয়ে যাওয়ার ব্যপারে সমস্ত বিভিন্ন শিয়া তারিকাহরা মতপার্থক্যে সম্পূর্ণরূপে বিরতি দিয়েছে আর শিয়া নিজারি ইসমাইলিয়রা গায়েব হওয়ার ধারণাটিকে অস্বীকার করে। শিয়া নিজারি ইসমাইলিদের মতে সময়ের শেষ অবধি জীবিত ইমাম উপস্থিত থাকতে হবে। সুতরাং যদি কোনও জীবিত নিজারি ইসমাইলি ইমাম তার পরে কোনও উত্তরসূরিকে রেখে যেতে ব্যর্থ হয় তবে নিজারি ইসমাইলিদের মূল নীতিটি ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং এটি খুব গুরুতর যে সময়ের শেষ চলে এসেছে।

দ্বাদশবাদি দর্শন

সম্পাদনা

মূল নিবন্ধ: দ্বাদশবাদির ধর্মতত্ত্ব এবং দ্বাদশবাদি

শিয়ারা বিশ্বাস করে যে ইমামাহ হ'ল ঈমানের মূলনীতি (উসুল আল-দীন)। যেমন কুরআনের ৪:১৬৫ আয়াতে নবীদের নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হয়েছে; সুতরাং নবীর মৃত্যুর পরে যিনি নবীর ভূমিকা পালন করবেন; যতক্ষণ না লোকেরা আল্লাহর বিরুদ্ধে কোন ওজর না করে। যে যুক্তিতে নবীদের নিয়োগের প্রয়োজন হয়েছিল তা ইমামার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এটা হ'ল আল্লাহ অবশ্যই তার গুণাবলীতে নবীর অনুরূপ কাউকে এবং ইসমাহকে তার উত্তরাধিকারী হিসাবে দ্বীনের কোন বিচ্যুতি ছাড়াই জনগণকে গাইড করার জন্য নিয়োগ করবে।[]

তারা এই আয়াতটি উল্লেখ করে ("... আজ আমি আপনার জন্য আপনার ধর্মকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি এবং আপনার প্রতি আমার অনুগ্রহ পূর্ণ করেছি এবং আপনার জন্য ইসলামকে ধর্ম হিসাবে অনুমোদন করেছি ...") কোরআনের ৫:৩ আয়াত যা গাদীর খুম্মের দিন তিনি আলীকে তার উত্তরসূরি হিসাবে নিয়োগ করার সময় নবীর প্রতি অবতীর্ণ হয়।[]

কুরআনের ২:১২৪ আয়াত অনুসারে শিয়ারা বিশ্বাস করে যে ইমাম সর্বদা একটি ঐশ্বরিক অবস্থান যে, ইমাম অবশ্যই ঈশ্বরের নির্দেশিকা অনুসারে সর্বদা পথপ্রদর্শন করে থাকেন। এক ধরনের নির্দেশিকা যা মানবতাকে তার লক্ষ্যে নিয়ে যায়। ১৭:৭১ আয়াত সম্পর্কে, কোনও বয়সেই ইমাম ছাড়া চলতে পারে না। সুতরাং, উপরের আয়াত অনুসারে ১. ইমাম এমন একটি অবস্থান যা ঈশ্বর কর্তৃক নিযুক্ত এবং তার দ্বারা নির্দিষ্ট করা আবশ্যক ২. ইমাম ঐশ্বরিক সুরক্ষার দ্বারা সুরক্ষিত থাকে এবং শ্রেষ্ঠত্বে কেউ তার উপরে না ৩. কোনও বয়সেই ইমাম ছাড়া চলতে পারে না এবং সর্বশেষে ইমাম সত্য ও অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য মানুষের যা প্রয়োজন তার সবই জানেন।[]

কেন কেবলমাত্র (নির্দিষ্ট) মুহাম্মদের পরিবারের সদস্য হতে হবে?

সম্পাদনা

ঐশ্বরিক নেতা মুহাম্মদের পরিবারের বাইরে থেকে আসা নিষিদ্ধ।[] আলী আল-রিধার মতে, যেহেতু তার আনুগত্য করা বাধ্যতামূলক, তাই ঐশ্বরিক নেতাকে স্পষ্টভাবে নির্দেশ করার জন্য একটি চিহ্ন থাকতে হবে। এই চিহ্নটি হলো মুহাম্মদের সাথে তার আত্মীয়তার সুসম্পর্কীয় সম্পর্ক এবং তার বংশের সাথে সুস্পষ্ট সাক্ষাৎ যাতে লোকেরা তাকে অন্যের থেকে আলাদা করতে পারে এবং তার দিকে সুস্পষ্টভাবে পরিচালিত হয়।[১০][১১] অন্যথায় অন্যরা মুহাম্মদের বংশধরদের তুলনায় মহৎ এবং তাদের অনুসরণ ও আনুগত্য করা উচিত; এবং মুহাম্মদের বংশধররা হুকুমে আবদ্ধ এবং মুহাম্মদের শত্রু যেমন আবী জাহেল বা ইবনে আবী মায়েতের বংশধরদের অধীন। তবে, অন্যদের দায়িত্বে ও আনুগত্যের চেয়ে মুহাম্মদ (সা.) অনেক উন্নত।[১০][১১] অধিকন্তু, একবার মুহাম্মদের নবুওয়াত সাক্ষ্য দিলে তারা তার আনুগত্য করবে, কেউ তার বংশধরকে অনুসরণ করতে দ্বিধা করবে না এবং এটি কারও পক্ষে কঠিন হবে না।[১০][১১] দুর্নীতিগ্রস্ত পরিবারগুলির বংশকে অনুসরণ করা কঠিন। এবং সে কারণেই সম্ভবত মুহাম্মদ (সা.) এবং অন্যান্য নবীদের মূল বৈশিষ্ট্য ছিল তাদের শ্রেষ্ঠত্ব। বলা হয় যে একটি অসম্মানিত পরিবার থেকে উদ্ভূত কেহ তাদের কারও জন্য নয়। এটা বিশ্বাস করা হয় যে আদম পর্যন্ত মুহাম্মদের সমস্ত পূর্বপুরুষ সঠিক মুসলমান ছিলেন।[][তথ্যসূত্র প্রয়োজন] যিশুও এক ধার্মিক পরিবার থেকে এসেছিলেন, যেমন কুরআনে বর্ণিত আছে যে তার জন্মের পরে লোকেরা মরিয়মকে বলেছিল: "হে হারুনের বোন, তোমার পিতা খারাপ লোক ছিলেন না, বা তোমার মাও অসতী ছিলেন না।" []

ইসমাইলি দর্শন

সম্পাদনা

মূল নিবন্ধ: ইমামাহ (ইসমাইলি মতবাদ), নিজারি মতবাদে ইমাম, মুস্তা’আলি, তাইয়েবী ইসমাইলিবাদ এবং হাফিজী

ইসমাইলিয়দের ইমামতের মতবাদটি দ্বাদশবাদিদের থেকে আলাদা, কারণ শেষ দ্বাদশ ইমাম গায়েবিতে যাওয়ার পর শতাব্দী ধরে ইসমাইলিদের জীবিত ইমাম ছিল।তারা মুসা আল-কাদিমের বড় ভাই ইসমাইল ইবনে জাফরকে তার পিতা জাফর আল-সাদিকের পরে যথাযথ ইমাম হিসাবে অনুসরণ করে আসছে। ইসমাইলিরা বিশ্বাস করে যে ইমাম ইসমাইল, ইমাম জাফরের আগে মারা যান বা না যান তিনি পরবর্তী ইমাম হিসাবে পুত্র মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইলের নিকট ইমামতের দীপশিখা দিয়ে যান।

ইসমাইলি মতবাদ অনুসারে, ঈশ্বর তার ইসলামের দ্বীন প্রচার ও উন্নতি করার জন্য নতিক "বক্তা" নামে পরিচিত সাতজন মহান নবীকে প্রেরণ করেছেন। এই মহান নবীদের সোমাদ "নীরব" ইমাম বলে পরিচিত একজন সহচরও ছিলেন। প্রতি সাতটি সোমাদ সিলসিলার শেষে, বিশ্বাসকে উন্নত করার জন্য একজন মহান নতিককে প্রেরণ করা হয়েছে। আদম ও তার পুত্র শিষের পরে ছয় নতিক – সোমাদ সিলসিলা [১৩] (নূহসাম), (ইব্রাহিমইসমাইল), (মূসাহারুন), (যীশু  - ইয়াকুবের পুত্র সিমন), (মুহাম্মদআলী); মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইলের সাথে নতিক ও সোমাদদের সিলসিলার কাজ শেষ হয়েছে।

কেন ইমাম কেবলমাত্র (নির্দিষ্ট) পরিবারের সদস্য থেকে হতে হবে

সম্পাদনা

ইসমাইলি দর্শনে ইমামরা ঈশ্বরের সত্য প্রতিনিধি। আল্লাহ সকল নবীকে তার প্রতিনিধি বানিয়েছেন। প্রতিটি নবীর যুগ স্বতন্ত্র। এক নবীর পরে ঈশ্বর পরবর্তী নবীকে পাঠিয়েছেন। ইসলামের দৃষ্টিতে মোহাম্মদ (সা.) সর্বশেষ নবী। মোহাম্মদ তার সুনির্দিষ্ট প্রতিনিধি হিসেবে আলীকে মনোনীত করেছেন। আলী তার পরবর্তী প্রতিনিধি হিসাবে ইমাম তৈরি করেন এবং একজন ইমাম আজ অবধি অন্য আরেকজনকে নিযুক্ত করেন। ইসমাইলি মতবাদে এই ইমাম কেবল তাদের বংশ পরম্পরা থেকে এবং তাদের নিয়োগ অত্যাশ্যক, এবং ইমামের উপস্থিতি ব্যতীত পৃথিবী শূন্য হতে পারে না।[১৪][১৫]

জায়েদি দর্শন

সম্পাদনা

মূল নিবন্ধ: জায়েদি মতবাদ

জায়েদিয়া বা জায়েদি ইমাম জায়েদ ইবনে আলীর নামে প্রতিষ্ঠিত একটি শিয়া মাজহাব (উপসম্প্রদায়,সমধর্মী দার্শনিক গোষ্ঠী)। জায়েদি ফিকহের অনুসারীদের বলা হয় জায়েদিয় (বা মাঝেমধ্যে পশ্চিমে পঞ্চবাদি [Fivers] নামে পরিচিত)। তবে জায়িদি ওয়াস্তেস নামে একটি দল রয়েছে যারা দ্বাদশবাদী।

আধ্যাত্মিক নেতৃত্ব বা ইমামতিতে শিয়া মুসলিম বিশ্বাসের প্রসঙ্গে জায়েদিরা বিশ্বাস করেন যে উম্মাহ বা মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতা অবশ্যই ফাতেমীয় হতে হবে: মুহাম্মদের একমাত্র বেঁচে থাকা কন্যা ফাতেমার বংশধরদের মাধ্যমে, যার পুত্ররা ছিলেন হাসান ইবনে আলীহুসেন ইবনে আলী। এই শিয়াগ্রুপটি নিজেদের জায়েদি হিসেবে পরিচয় দেয়, যাতে তারা নিজেদেরকে অন্য শিয়াদের যারা যায়েদ ইবনে আলীর সাথে অস্ত্র নিতে অস্বীকার করেছিল তাদের থেকে পার্থক্য করতে পারে।

জায়েদিয়রা বিশ্বাস করেন যে জায়েদ ইবনে আলী ইমামতের যথাযথ উত্তরসূরি ছিলেন কারণ তিনি উমাইয়া খেলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছেন, তিনি বিশ্বাস করতেন যে উমাইয়ারা অত্যাচারী ও দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল। মুহাম্মদ আল-বাকির রাজনৈতিক কার্যকলাপে জড়িত ছিলেন না এবং জায়েদের অনুসারীরা বিশ্বাস করেন যে সঠিক ইমামকে অবশ্যই দুর্নীতিবাজ শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।[১৬] সুন্নি ইসলামের হানাফী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা খ্যাতিমান মুসলিম ফিকাহবিদ আবু হানিফা উমাইয়া শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে জায়েদের পক্ষে ফতোয়া বা আইনি বিবৃতি দেন। তিনি গোপনে জনগণকে এই বিদ্রোহে যোগদানের আহ্বান জানান এবং জায়েদকে অর্থ সরবরাহ করেন।[১৭]

দ্বাদশবাদী শিয়া সম্প্রদায়ের বিপরীতে জায়েদিয়রা ইমামের অপ্রাপ্তি বিশ্বাস করে না।[১৮][১৯][২০] ইমামতি মুহাম্মদের পরিবারের যে কারও কাছে দেওয়া যেতে পারে।

গায়েব হওয়ার সময়কাল

সম্পাদনা

দ্বাদশবাদি দর্শন

সম্পাদনা

মূল নিবন্ধ: গায়েব হওয়া

গায়েব হওয়ার সময়কাল (গায়েবত) দুটি ভাগে বিভক্ত:

  • গায়েবত আল-সুগরা বা ছোট গায়েব (৮৭৪-৯৪১) ইমামের নিখোঁজ হওয়ার প্রথম কয়েক দশক যখন ইমামের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে তার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা হত।
  • গায়েবত আল-কুবরা বা বড় গায়েব, ৯৪১ সালে শুরু হয়েছে এবং ইমাম মাহদী বিশ্বে খাটি ন্যায়পরতা আনতে পুনরাবির্ভূত না হওয়া পর্যন্ত ঈশ্বর কর্তৃক নির্ধারিত সময় অবধি তা অব্যাহত থাকবে বলে বিশ্বাস করা হয়।

এটি বিশ্বাস করা হয় যে ছোট গায়েব চলাকালে (গায়েবত আল-সুগরা) আল-মাহদী তার অনুগামীদের সাথে তার প্রতিনিধির (আরবি- আন-নোয়াব আল-আরবা বা "চার নেতা") মাধ্যমে যোগাযোগ বজায় রাখেন। তারা তার প্রতিনিধিত্ব করে এবং তার এবং তার অনুসারীদের মধ্যে মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। মুমিনগণ যখনই কোনও সমস্যার সম্মুখীন হন তখন তারা তাদের সমস্যাগুলো লিখেন এবং সেগুলি তার প্রতিনিধির নিকটে প্রেরণ করেন। প্রতিনিধি তার রায় নিরূপণ করেন, তার সীলমোহর এবং স্বাক্ষর দিয়ে এটি সমর্থন করেন এবং এটি সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলিকে ফিরিয়ে দেন। প্রতিনিধিরা তার পক্ষে জাকাতখুমুসও সংগ্রহ করেন।

শিয়াদের জন্য গায়েবি ইমামের সাথে পরামর্শ করার ধারণাটি নতুন কিছু ছিল না, কারণ দুজন পূর্ববর্তী দ্বাদশবাদি ইমাম সময়ে সময়ে পর্দার আড়াল থেকে তাদের অনুসারীদের সাথে সাক্ষাত করেছেন। আব্বাসীয় খলিফাদের অত্যাচারী শাসনকালে শিয়া ইমামগণকে কঠোরভাবে নির্যাতন ও বন্দী করে রাখা হয়েছিল, তাই তাদের অনুসারীরা তাদের ইমামদের সাথে বার্তাবাহক মাধ্যমে বা গোপনে পরামর্শের জন্য বাধ্য হয়েছিল।

শিয়া ঐতিহ্যে ধারণা করা হয় যে চার জন প্রতিনিধি পরস্পর পরম্পরায় প্রতিনিধিত্ব করেন:

  1. উসমান ইবনে সা'দ আল-আসাদি
  2. আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে উসমান
  3. আবুল কাসিম হুসেন ইবনে রুহ আল নওবখত
  4. আবুল হাসান আলী ইবনে মুহাম্মদ আল সামারি

৯৪১ (৩২৯ হিজরিতে) সালে চতুর্থ প্রতিনিধি আল-মাহদীর আদেশ ঘোষণা করেন যে, প্রতিনিধি শিগগিরই মারা যাবেন এবং প্রতিনিধিত্বকাল শেষ হবে এবং বড় গায়েবত সময়কাল শুরু হবে।

চতুর্থ প্রতিনিধি ছয় দিন পর মারা যান এবং শিয়া মুসলিমরা ইমাম মাহদীর পুনরাবির্ভাবের জন্য অপেক্ষায় আছেন। একই বছরে কিতাব আল-কাফি এর বিজ্ঞ সংকলক মুহাম্মদ ইবনে ইয়াকুব কুলায়্নি এবং আলী ইবনে বাবওয়াহে ক্বমি্ম’র মতো অনেক উল্লেখযোগ্য শিয়া পণ্ডিত মারা যান।

আরেকটি মত হলো  লুক্কায়িত ইমাম "শিয়া দেহ ধারণ করে" তবে "ছদ্মবেশীরূপে" পৃথিবীতে বিরাজমান। "উলামাদের বিশিষ্ট সদস্য হিসেবে নিজেকে প্রকাশ" করার জন্য গোপন ইমামের "অসংখ্য গল্প" বিদ্যমান।[২১]

ইসমাইলি দর্শন

সম্পাদনা

মূল নিবন্ধ: ইমামাহ (ইসমাইলি মতবাদ)

ইসমাইলিরা দ্বাদশবাদিদের থেকে আলাদা কারণ শেষ দ্বাদশবাদি ইমাম গায়েব হওয়ার পর শতাব্দী ধরে তাদের জীবিত ইমাম ছিল। তারা মুসা আল-কাদিমের বড় ভাই ইসমাইল ইবনে জাফরকে তার বাবা জাফর আল-সাদিকের পরে যথাযথ ইমাম হিসাবে অনুসরণ করে।[২২] ইসমাইলিরা বিশ্বাস করেন যে ইমাম ইসমাইল ইমাম জাফরের আগে মারা যান বা না যান, তিনি পরবর্তী ইমাম হিসাবে পুত্র মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইলের নিকট ইমামতের দায়িত্ব দিয়ে যান।[২৩] সুতরাং, তাদের ইমামের ধারাটি নিম্নরূপ (প্রচলিত যুগে তাদের পৃথক ইমামতির বছরগুলি বন্ধনীতে দেওয়া হয়েছে):

নিজারি ইমাম মুস্তালি ইমাম ইসমাইলি ইমাম সময়কাল
1 আসা/ওয়াসিস আলী: মুস্তালি "প্রতিষ্ঠা" এবং প্রথম নিজারি ইমাম (৬৩২–৬৬১)
পীর 1 হাসান ইবনে আলী: প্রথম মুস্তালি ইমাম; নিজারিরা তাকে ইমাম নয়, পীর মনে করে (৬৬১–৬৬৯) মুস্তালি
2 2 হুসেন ইবনে আলী: দ্বিতীয় ইসমাইলি ইমাম (৬৬৯–৬৮০) মুস্তালি
(৬৬১–৬৮০) নিজারি
3 3 আলী ইবনে হুসেন যয়নাল আবিদিন: তৃতীয় ইসমাইলি ইমাম (৬৮০–৭১৩)
4 4 মুহাম্মদ আল-বাকির: চতুর্থ ইসমাইলি ইমাম (৭১৩–৭৩৩)
5 5 জাফর আল-সাদিক: পঞ্চম ইসমাইলি ইমাম (৭৩৩–৭৬৫)
6 6 ইসমাইল ইবনে জাফর: ষষ্ঠ ইসমাইলি ইমাম (৭৬৫–৭৭৫)
7 7 মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাইল: সপ্তম ইসমাইলি ইমাম এবং প্রথম স্বতন্ত্র্র ইসমাইলি (দ্বাদশবাদি নয়) ইমাম (৭৭৫–৮১৩)

প্রথম পর্ব

সম্পাদনা

অষ্টম ইসমাইলি শিয়া ইমাম আবদুল্লাহ আল-আকবর আত্মগোপনে থাকলেও নবম শতাব্দীতে সিরিয়ার সালামিয়ায় ইসমাইলি বিচরণ অব্যাহত থাকে। অষ্টম থেকে দশম ইমাম (আবাদুল্লাহ, আহমদ ও হোসেন) আত্মগোপনে থেকে এ সময়কালের শাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পক্ষে কাজ করেন। নির্জনতার প্রথম পর্যায়টি দশম ইমামের সাথে শেষ হয়। একাদশ ইমাম আবদুল্লাহ আল-মাহদী বিল্লাহ বণিকের ছদ্মবেশে তার পুত্রসহ আব্বাসীয়দের অত্যাচারের হাত থেকে পালিয়ে সিজিলমাসায় পাড়ি জমান।[২৪] ইমাম আবদুল্লাহ ফাতেমিয় খিলাফত প্রতিষ্ঠা করেন। বিংশতম ইমাম পর্যন্ত ফাতেমিয় ইসমাইলি ইমামরা খলিফার পদেও অধিষ্ঠিত ছিলেন, তারা আরব উপদ্বীপের এক বিস্তৃত এলাকা শাসন করেন।

দ্বিতীয় পর্ব

সম্পাদনা

বিংশতম ইমামের মৃত্যুর পরে, আল-আমির বি-আহকামিল-লাহ [মৃত্যু: ৫২৬ হিজরি (১১৩১/১১৩২ খ্রিষ্টাব্দ)] তার দুই বছর বয়সি সন্তান আত-তায়েব আবুল-কাসিম [জন্ম ৫২৪ হিজরি (১১২৯/১১৩০ খ্রিষ্টাব্দ)] একবিংশ ইমাম নিযুক্ত হন। তাইয়েবের সমর্থকরা তাইয়েবি ইসমালি হিসেবে পরিচিত। তাইয়েব দাওয়াতের কাজ পরিচালনার পক্ষে উপযুক্ত না থাকায় রানী আরওয়া আল-সুলাইহি, দা’য়ী আল-মুতালাক  হিসাবে তার শাসন কাজ পরিচালনা করেন। ইমাম তাইয়েব আত্মগোপনে গেলে দ্বিতীয় পর্বের নির্জনতা শুরু হয়। দা'য়ীকে তখন অবাধ কর্তৃত্ব দেওয়া হয় এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্বাধীনতা দেওয়া হয়। সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন দা’য়ীর নেতৃত্বে তাইয়েবিরা আরও কয়েকটি বিভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই দা'য়ী আল-মুতালাক আজ অবধি লুকিয়ে থাকা তায়িবি ইসমালি ইমামদের পক্ষে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। দাউদি বোহরা হ'ল তাইয়েবি ইসমালির মধ্যে বৃহত্তম উপ-সম্প্রদায় যারা বহু দেশে ছড়িয়ে রয়েছে।

 
মসজিদে নববীতে ইমাম মাহদীর নাম সংবলিত চারুলিপি

দ্বাদশী ইমামগণ

সম্পাদনা

শিয়াদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অনুসারি যারা দ্বাদশী (ইসনা আশারিয়া) নামে পরিচিত তাদের মতানুসারে নিচে মুহাম্মদের বৈধ উত্তরসূরীদের একটি তালিকা দেওয়া হলো। হুসেন ইবনে আলী বাদে প্রতিটি ইমাম পূর্বের ইমামের পুত্র ছিলেন, হুসেন ইবনে আলী হাসান ইবনে আলীর ভাই ছিলেন। মুহাম্মদের এই উত্তরাধিকারের বিশ্বাসটি কুরআনের বিভিন্ন আয়াত থেকে উদ্ভূত যা কুরআনের এই আয়াতগুলোর অন্তর্ভুক্ত: ৭৫:৩৬, ১৩:৭, ৩৫:২৪, ২:৩০, ২:১২৪, ৩৬:২৬, ৭:১৪২, ৪২:২৩। তাদের আলোচনার সমর্থনে তারা কুরআনের ১৭: ১৯-২০ নং আয়াত এবং সুন্নি হাদীস: সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর ৪৪৭৮, আবদুল হামিদ সিদ্দিকীর ইংরেজি অনুবাদ উদ্ধৃত করে থাকে।[২৫]

দ্বাদশী ইমামগণের তালিকা

সম্পাদনা

দ্বাদশীদের মতে, যুগে যুগে সর্বদা একজন ইমাম রয়েছেন, যিনি মুসলিম সম্প্রদায়ের বিশ্বাস ও আইন সম্পর্কিত সকল বিষয়ে ঐশ্বরিকভাবে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ। দ্বাদশী দৃষ্টিতে আলী ছিলেন দ্বাদশ ইমামের মধ্যে প্রথম ইমাম ও মুহাম্মদের যথাযথ উত্তরসূরি এবং তার পরে মুহাম্মদের কন্যা ফাতেমার মাধ্যমে মুহাম্মদের পুরুষ বংশধররা। হোসাইন ইবনে আলী বাদে প্রত্যেক ইমাম পূর্বের ইমামের পুত্র ছিলেন, হুসেন ইবনে আলী হাসান ইবনে আলীর ভাই ছিলেন। দ্বাদশ ও শেষ ইমাম হলেন মুহম্মদ আল-মাহদী, বিশ্বাস করা হয় যে দ্বাদশ ইমাম বর্তমানে জীবিত আছেন এবং তিনি বিশ্বে ন্যায়বিচার ও শান্তি আনতে পুনরাবির্ভূত না হওয়া পর্যন্ত আত্মগোপনে থাকবেন।[২৬] দ্বাদশী এবং আলেভি মুসলমানদের বিশ্বাস যে দ্বাদশ ইমামের বিষয়ে হাদিসে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। শেষ ইমাম ব্যতীত সকল ইমাম অস্বাভাবিক মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন, দ্বাদশী ও আলেভিদের বিশ্বাস অনুসারে দ্বাদশ ইমাম গায়েবী জীবনযাপন করছেন।

ক্রম ইসলামি চারুলিপি নাম
কুনিয়া
আরবি উপাধি
তুর্কি উপাধি[২৭]
জীবনকাল (খ্রিস্টাব্দ)
জীবনকাল (হিজরি)[২৮]
জন্মস্থান
ইমামত গ্রহণকালে বয়স মৃত্যুকালে বয়স ইমামতকাল গুরুত্ব মৃত্যুর কারণ ও মৃত্যুস্থল
সমাধি[২৯]
  ʿআলী ʾইবনে ʾআবী ত়ালিব
ٱلْإِمَام عَلِيّ ٱبْن أَبِي طَالِب عَلَيْهِ ٱلسَّلَام
আবুল হ়াসান
أَبُو ٱلْحَسَن
  • আমীরুল মুʾমিনীন
    (أَمِير ٱلْمُؤْمِنِين)
    (বিশ্বাসীদের নেতা)[৩০]
  • আল-মুর্তজ়া
    (ٱلْمُرْتَضَىٰ)
    (প্রিয়জন)
  • আল-ওয়াস়ী
    (ٱلْوَصِيّ)
    (স্থলাভিষিক্ত)
  • আল-ওয়ালী[৩১]
    (ٱلْوَلِيّ)
    (ওয়ালি)
  • আবু তুরাব
    (أَبُو تُرَاب)
    (মাটির পিতা)
  • আসাদুল্লাহ
    (أَسَد الله)
    (আল্লাহর সিংহ)
  • ওয়ালীউল্লাহ[৩২]
    (وَلِيّ الله)
    (আল্লাহর ওয়ালি)
  • মওলা
    (مَوْلَاه)
    (সর্দার, কর্তা, বন্ধু)
  • হয়দর
    (حَيّدَر)
    (সিংহ)
  • উলিল আমর[৩৩]
    (أُولِي الْأَمْرِ‌)
    (কর্তৃত্বের অধিকারী)
  • মুশকিল কুশা
    (مُشْکِل کُشَاہ)
    (কষ্ট দূরকারী)
  • নফসে নবী[৩৪]
    (نَفْسِ نَبِيّ)
    (নবীর নফস)
  • বাব আল-মদীনাতুল ʿইলম
    (بَابِ ٱلْمَدِيْنَةُ ٱلْعِلْمِ)
    (জ্ঞানের শহরের দরজা)
  • আন-নাসি মাইয়াশরিয়ুন নফসাহুব তিগাআ মরদাতিল্লাহ[৩৫]
    (النَّاسِ مَنۡ يَّشۡرِىۡ نَفۡسَهُ ابۡتِغَآءَ مَرۡضَاتِ اللّٰهِ​)
    (যে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিজেকে বিকিয়ে দেয়)

  • বিরিঞ্জি আলী
    (Birinci Ali)
    (প্রথম আলী)[৩৬]
৬০০–৬৬১[৩০]
২৩ হিজরতপূর্ব–৪০[৩৭]
মক্কা, হেজাজ[৩০]
৩৩ বছর ৬১ বছর ২৮ বছর মুহম্মদের ﷺ চাচাতো ভাই ও জামাতা। শিয়া বিশ্বাসমতে তিনি ইসলামের পবিত্রতম স্থান কাবার অভ্যন্তরে জন্মগ্রহণকারী একমাত্র ব্যক্তি এবং প্রথম ইসলামগ্রহণকারী পুরুষ। শিয়া মুসলমানেরা তাঁকে মুহম্মদের ﷺ একমাত্র ন্যায্য স্থলাভিষিক্ত এবং প্রথম ইমাম হিসেবে বিবেচনা করে। সুন্নি মুসলমানেরা তাঁকে চতুর্থ রাশিদুন খলিফা হিসেবে গণ্য করে। সুফিবাদের প্রায় সকল তরিকায় তাঁকে উচ্চ মর্যাদা দেওয়া হয়; তরিকাসমূহের সদস্যগণ মুহম্মদ ﷺ পর্যন্ত তাদের সিলসিলা আলীর মাধ্যমে জারি রাখেন।[৩০] রমজান মাসে মসজিদ আল-কুফায় নামাজে সেজদারত অবস্থায় আব্দুর রহমান ইবনে মুলজিম নামক এক খারিজি গুপ্তঘাতকের বিষাক্ত তরবারির আঘাতে আহত হয়ে বিষক্রিয়ায় মৃত্যুবরণ করেন।[৩০][৩৮]
শিয়া বিশ্বাসমতে তাঁকে ইরাকের নাজাফ শহরের ইমাম আলী মসজিদে দাফন করা হয়।
  হ়াসান ʾইবনে ʿআলী
ٱلْإِمَام ٱلْحَسَن ٱبْن عَلِيّ عَلَيْهِ ٱلسَّلَام
আবু মুহ়ম্মদ
أَبُو مُحَمَّد
  • আল-মুজতবা
    (ٱلْمُجْتَبَىٰ)
    (মনোনীত)
  • আস-সৈয়দ
    (ٱلْسَّيِّد)
    (সর্দার)
  • সৈয়দু শবাবি আহলিল জান্নাহ[৩৯][৪০]
    (سَيِّدُ شَبَابِ أهْلِ ٱلْجَنَّةِ)
    (জান্নাতি যুবকদের সর্দার)
  • সিবত় আন-নবী
    (سِبْط ٱلنَّبِيّ)
    (নবীর বংশ)

  • ইকিঞ্জি আলী
    (İkinci Ali)
    (দ্বিতীয় আলী)[৩৬]
৬২৫–৬৭০[৪১]
৩–৫০[৪২]
মদীনা, হেজাজ[৪১]
৩৯ বছর ৪৭ বছর ৮ বছর তিনি ছিলেন মুহম্মদের ﷺ কন্যা ফাতিমার গর্ভজাত দৌহিত্রদের মধ্যে সবার বড়। হাসান কুফায় তাঁর পিতা আলীর স্থলাভিষিক্ত হিসেবে নিযুক্ত হন। সাত মাস খলিফা হিসেবে দায়িত্বপালনের পর মুয়াবিয়া ইবনে আবী সুফিয়ানের সঙ্গে একটি শান্তিচুক্তির ভিত্তিতে তিনি পদত্যাগ করেন।[৪১] মুয়াবিয়ার প্ররোচনায় স্বীয় স্ত্রীর মাধ্যমে বিষপ্রয়োগে হত্যা করা হয়।[৪৩]
তাঁকে মদীনার জান্নাতুল বাকিতে দাফন করা হয়।
  হ়োসাইন ʾইবনে ʿআলী
ٱلْإِمَام ٱلْحُسَيْن ٱبْن عَلِيّ عَلَيْهِ ٱلسَّلَام
আবু ʿআব্দুল্লাহ
أَبُو عَبْد ٱللَّٰه
  • আশ-শহীদ[৩৯]
    (ٱلشّهِيْد)
    (শহীদ)
  • সৈয়দ আশ-শুহাদাʾ[৪৪][৪৫][৪৬]
    (سَيِّد ٱلشُّهَدَاء)
    (শহীদদের সর্দার)
  • সৈয়দু শবাবি আহলিল জান্নাহ[৩৯][৪৭]
    (سَيِّدُ شَبَابِ أَهْلِ ٱلْجَنَّةِ)
    (জান্নাতি যুবকদের সর্দার)
  • আর-রশীদ[৩৯]
    (ٱلرَّشِيْد)
    (ন্যায়নিষ্ঠ)
  • আত-তাবিঈ লি মর্দাতিল্লাহ[৩৯]
    (ٱلتَّابِعّ لِي مَرۡضَاتِ اللّٰهِ)
    (দৈব ইচ্ছার অনুসারী)
  • আল-মুবারক[৩৯]
    (ٱلْمُبَارَك)
    (মহিমান্বিত)
  • আত়-ত়ৈয়িব[৩৯]
    (ٱلطَّيِّب)
    (বিশুদ্ধ)
  • আল-মজ়লুম
    (ٱلْمَظْلُوم)
    (নিপীড়িত)
  • আল-ওয়াফী[৩৯]
    (ٱلْوَافِيّ)
    (বিশ্বস্ত)
  • সিবত় আন-নবী
    (سِبْط ٱلنَّبِيّ)
    (নবীর বংশ)

  • উচুঞ্জু আলী
    (Üçüncü Ali)
    (তৃতীয় আলী)[৩৬]
৬২৬–৬৮০[৪৮]
৪–৬১[৪৯]
মদীনা, হেজাজ[৪৮]
৪৬ বছর ৫৭ বছর ১১ বছর তিনি ছিলেন মুহম্মদের ﷺ দৌহিত্র, আলীর পুত্র এবং হাসানের ভাই। হোসাইন উমাইয়া শাসক ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার দুঃশাসনের বিরোধিতা করেন। ফলস্রুতিতে তিনি, তাঁর পরিবার ও সহচারীরা কারবালার যুদ্ধে ইয়াজিদের সৈন্যবাহিনী কর্তৃক নির্মমভাবে শহীদ হন। এই ঘটনার পর থেকে হোসাইনের শাহাদতের স্মৃতিচারণ শিয়া আত্মপরিচয়ের একটি কেন্দ্রীয় বিষয় হয়ে ওঠে।[৪৮] কারবালার যুদ্ধে শিরশ্ছেদ করে হত্যা করা হয়।
তাঁকে ইরাকের কারবালার ইমাম হোসেনের মাজারে দাফন করা হয়।[৪৮]
  ʿআলী ʾইবনে হ়োসাইন
ٱلْإِمَام عَلِيّ ٱبْن ٱلْحُسَيْن ٱلسَّجَّاد عَلَيْهِ ٱلسَّلَام
আবু মুহ়ম্মদ
أَبُو مُحَمَّد
  • আস-সাজ্জাদ
    (ٱلسَّجَّاد)
    (অবিচল সেজদাকারী)
  • জ়য়নুল ʿআবেদীন
    (زَيْن ٱلْعَابِدِين)
    (উপাসকদের অলঙ্কার)[৫০]

  • দর্দুঞ্জু আলী
    (Dördüncü Ali)
    (চতুর্থ আলী)[৩৬]
৬৫৮/৬৫৯[৫০] – ৭১২[৫১]
৩৮[৫০]–৯৫[৫১]
মদীনা, হেজাজ[৫০]
২৩ বছর ৫৭ বছর ৩৪ বছর সহিফা আস-সাজ্জাদিয়ার রচয়িতা, যা আহল আল-বাইতের স্তোত্র হিসেবে পরিচিত।[৫১] দুর্বলতাজনিত অসুস্থতার কারণে কারবালার যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান। উমাইয়া খলিফা প্রথম আল-ওয়াহিদের নির্দেশে তাঁকে বিষপ্রয়োগ করে হত্যা করা হয়।[৫১]
মদীনার জান্নাতুল বাকিতে তাঁকে দাফন করা হয়।
  মুহ়ম্মদ ʾইবনে ʿআলী
ٱلْإِمَام مُحَمَّد ٱبْن عَلِيّ ٱلْبَاقِر عَلَيْهِ ٱلسَّلَام
আবু জাʿফর
أَبُو جَعْفَر
  • আল-বাক়ির
    (ٱلبَاقِر)
    (উন্মোচনকারী)[৫২]

  • বেশিঞ্জি আলী
    (Beşinci Ali)
    (পঞ্চম আলী)[৩৬]
৬৭৭–৭৩২[৫২]
৫৭–১১৪[৫২]
মদীনা, হেজাজ[৫২]
৩৮ বছর ৫৭ বছর ১৯ বছর সুন্নিশিয়া উভয় সূত্রমতে তিনি অন্যতম প্রাচীন ও বিশিষ্ট ফিকহশাস্ত্রবিদ ছিলেন যিনি তাঁর জীবদ্দশায় অসংখ্য শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন।[৫২][৫৩] উমাইয়া খলিফা হিশাম ইবনে আবদুল মালিকের নির্দেশে ইব্রাহীম ইবনে ওয়ালিদ ইবনে আব্দুল্লাহ কর্তৃক বিষপ্রয়োগে তাঁকে হত্যা করা হয়।[৫১]
মদীনার জান্নাতুল বাকিতে তাঁকে দাফন করা হয়।
  জাʿফর ʾইবনে মুহ়ম্মদ
ٱلْإِمَام جَعْفَر ٱبْن مُحَمَّد ٱلصَّادِق عَلَيْهِ ٱلسَّلَام
আবু ʿআব্দুল্লাহ[৫৪]
أَبُو عَبْد ٱللَّٰه
  • আস়-স়াদিক়[৫৫]
    (ٱلصَّادِق)
    (সজ্জন)

  • আলতিঞ্জি আলী
    (Altıncı Ali)
    (ষষ্ঠ আলী)[৩৬]
৭০২–৭৬৫[৫৫]
৮৩–১৪৮[৫৫]
মদীনা, হেজাজ[৫৫]
৩১ বছর ৬৫ বছর ৩৪ বছর শিয়া বিশ্বাসমতে তিনি জাফরি মাজহাব এবং দ্বাদশী ধর্মতত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে অসংখ্য পণ্ডিতদের শিক্ষাদান করেছিলেন। তাঁর ছাত্রদের মধ্যে ফিকহশাস্ত্রে আবু হানিফামালিক ইবনে আনাস, কালামশাস্ত্রে ওয়াসিল ইবনে আতা ও হিশাম ইবনে হাকাম, এবং বিজ্ঞানআলকেমিতে জাবির ইবনে হাইয়ান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।[৫৫] আব্বাসীয় খলিফা আল-মনসুরের নির্দেশে মদীনায় বিষপ্রয়োগ করে তাঁকে হত্যা করা হয়।[৫৫]
তাঁকে মদীনার জান্নাতুল বাকিতে দাফন করা হয়।
  মুসা ʾইবনে জাʿফর
ٱلْإِمَام مُوسَىٰ ٱبْن جَعْفَر ٱلْكَاظِم عَلَيْهِ ٱلسَّلَام
আবুল হ়াসান
أَبُو ٱلْحَسَن ٱلْأَوَّل[৫৬]
  • আল-কাজ়িম[৫৭]
    (ٱلْكَاظِم)
    (কারারুদ্ধ)

  • ইয়েদিঞ্জি আলী
    (Yedinci Ali)
    (সপ্তম আলী)[৩৬]
৭৪৪–৭৯৯[৫৭]
১২৮–১৮৩[৫৭]
আল-আবওয়াʿ, হেজাজ[৫৭]
২০ বছর ৫৫ বছর ৩৫ বছর তিনি জাফর আস-সাদিকের মৃত্যুর পর ইসমাইলি ও ওয়াকিফি বিচ্ছেদকালীন শিয়া সম্প্রদায়ের নেতা ছিলেন।[৫৮] তিনি মধ্যপ্রাচ্যবৃহত্তর খোরাসানের শিয়া মতাবলম্বীদের কাছ থেকে খুমুস সংগ্রহের উদ্দেশ্যে প্রতিনিধিদের একটি অন্তর্জাল গড়ে তোলেন। তিনি মাহদবী তরিকায় উচ্চ সম্মানে ভূষিত যারা তাঁর মাধ্যমে মুহম্মদ ﷺ অবধি সিলসিলা চিহ্নিত করে থাকে।[৫৯] আব্বাসীয় খলিফা হারুনুর রশিদের নির্দেশে বাগদাদে তাঁকে কারাবন্দী করা হয় এবং বিষপ্রয়োগ করে হত্যা করা হয়।
ইরাকের বাগদাদ শহরের কাজিমিয়া শহরতলীর আল-কাজিমিয়া মসজিদের তাঁকে দাফন করা হয়।[৫৭]

 

ʿআলী ʾইবনে মুসা
ٱلْإِمَام عَلِيّ ٱبْن مُوسَىٰ ٱلرِّضَا عَلَيْهِ ٱلسَّلَام
দ্বিতীয় আবুল হ়াসান
أَبُو ٱلْحَسَن ٱلثَّانِي[৫৬]
  • আর-রিদ়া[৬০]
    (ٱلرِّضَا)
    (মনোরম)

  • সেকিজ়িঞ্জি আলী
    (Sekizinci Ali)
    (অষ্টম আলী)[৩৬]
৭৬৫–৮১৭[৬০]
১৪৮–২০৩[৬০]
মদীনা, হেজাজ[৬০]
৩৫ বছর ৫৫ বছর ২০ বছর আব্বাসীয় খলিফা আল-মামুন তাঁকে যুবরাজ ঘোষণা করেন। তিনি মুসলিম ও অমুসলিম ধর্মীয় পণ্ডিতদের সাথে তাঁর আলোচনার জন্য বিখ্যাত।[৬০] শিয়া সূত্রমতে আল-মামুনের নির্দেশে পারস্যের মাশহাদে তাঁকে বিষপ্রয়োগ করে হত্যা করা হয়৷
তাঁকে ইরানের মাশহাদের ইমাম রেজার মাজারে দাফন করা হয়।[৬০]
  মুহ়ম্মদ ʾইবনে ʿআলী
ٱلْإِمَام مُحَمَّد ٱبْن عَلِيّ ٱلْجَوَّاد عَلَيْهِ ٱلسَّلَام
আবু জাʿফর
أَبُو جَعْفَر
  • আল-জওয়াদ[৬১]
    (ٱلْجَوَّاد)
    (উদার)
  • আত-তক়ী[৬১]
    (ٱلتَّقِيّ)
    (খোদাভীরু)

  • দোকুজ়ুঞ্জু আলী
    (Dokuzuncu Ali)
    (নবম আলী)[৩৬]
৮১০–৮৩৫[৬১]
১৯৫–২২০[৬১]
মদীনা, হেজাজ[৬১]
৮ বছর ২৫ বছর ১৭ বছর আব্বাসীয় খলিফাদের নিপীড়নের মুখেও তাঁর উদারতা ও ধার্মিকতার জন্য বিশেষভাবে খ্যাত। খলিফা আল-মুতাসিমের নির্দেশে আল-মামুনের কন্যা ও স্বীয় স্ত্রীর মাধ্যমে বিষপ্রয়োগ করে তাঁকে হত্যা করা হয়।
তাঁকে ইরাকের বাগদাদ শহরের কাজিমিয়া শহরতলীর আল কাজিমিয়া মসজিদে দাফন করা হয়।[৬১]
১০   ʿআলী ʾইবনে মুহ়ম্মদ
ٱلْإِمَام عَلِيّ ٱبْن مُحَمَّد ٱلْهَادِي عَلَيْهِ ٱلسَّلَام
তৃতীয় আবুল হ়াসান
أَبُو ٱلْحَسَن ٱلثَّالِث[৬২]
  • আল-হাদী[৬২]
    (ٱلْهَادِي)
    (পথপ্রদর্শক)
  • আন-নক়ী[৬২]
    (ٱلنَّقِيّ)
    (পবিত্র)

  • ওনুঞ্জু আলী
    (Onuncu Ali)
    (দশম আলী)[৩৬]
৮২৭–৮৬৮[৬২]
২১২–২৫৪[৬২]
মদীনার নিকটস্থ সুরাইয়া গ্রাম, হেজাজ[৬২]
৮ বছর ৪২ বছর ৩৪ বছর তিনি শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রতিনিধিদের অন্তর্জালকে জোরদার করেন। তিনি তাঁদের নির্দেশনা প্রদান করেন এবং বিনিময়ে বিশ্বাসীদের কাছ থেকে খুমুস জাতীয় আর্থিক অনুদান ও ধর্মীয় প্রতিশ্রুতি লাভ করেন।[৬২] খলিফা আল-মুতাজের নির্দেশে ইরাকের সামাররায় তাঁকে বিষপ্রয়োগ করে হত্যা করা হয়।[৬৩]
তাঁকে ইরাকের সামাররা শহরের আল-আসকারী মসজিদে দাফন করা হয়।
১১   হ়াসান ʾইবনে ʿআলী
ٱلْإِمَام ٱلْحَسَن ٱبْن عَلِيّ ٱلْعَسْكَرِيّ عَلَيْهِ ٱلسَّلَام
আবুল মাহদী
أَبُو ٱلْمَهْدِيّ
  • আল-ʿআসকারী[৬৪]
    (ٱلْعَسْكَرِيّ)
    (সামরিক ঘাঁটির নাগরিক)

  • ওনবিরিঞ্জি আলী
    (Onbirinci Ali)
    (একাদশ আলী)[৩৬]
৮৪৬–৮৭৪[৬৪]
২৩২–২৬০[৬৪]
মদীনা, হেজাজ[৬৪]
২২ বছর ২৮ বছর ৬ বছর তাঁর পিতার মৃত্যুর পর তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময়ই খলিফা আল-মুতামিদের নজরদারিতে গৃহবন্দী অবস্থায় কাটে। এই সময় শিয়া মুসলমানেরা সংখ্যায় ও শক্তিতে বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের ওপর নিপীড়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়।[৬৫] ইরাকের সামাররায় খলিফা আল-মুতামিদের নির্দেশে বিষপ্রয়োগ করে তাঁকে হত্যা করা হয়।[৬৬]
তাঁকে ইরাকের সামাররা শহরের আল-আসকারী মসজিদে দাফন করা হয়।
১২   মুহ়ম্মদ ʾইবনে হ়াসান
مُحَمَّد ٱبْن ٱلْحَسَن
আবুল ক়াসিম
أَبُو ٱلْقَاسِم

  • ওনিকিঞ্জি আলী
    (Onikinci Ali)
    (দ্বাদশ আলী)[৩৬]
৮৬৯–বর্তমান[৭০]
২৫৫–বর্তমান[৭০]
সামাররা, ইরাক[৭০]
৫ বছর অজানা বর্তমান দ্বাদশী শিয়া বিশ্বাসমতে তিনি হলেন বর্তমান ইমাম এবং প্রতীক্ষিত মাহদী, একজন মসীহীয় ব্যক্তিত্ব যিনি নবী ঈসা ইবনে মরিয়মের সঙ্গে শেষ জমানায় আবির্ভূত হবেন। তিনি ইসলামের ন্যায়ভিত্তিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবেন এবং সমগ্র পৃথিবীতে ন্যায়বিচার ও বিশ্বশান্তি কায়েম করবেন।[৭১] দ্বাদশী শিয়া তত্ত্বমতে তিনি ৮৭৪ সাল থেকে গয়বত বা সমাবরণে চলে গিয়েছেন এবং আল্লাহর নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত এ অবস্থাতেই থাকবেন।[৭০]

ইসমাইলি ইমামগণ

সম্পাদনা

ইসমাইলি শিয়াদের উভয় সম্প্রদায়ের (নিজারিমুস্তালি) ক্ষেত্রে ইমামের বংশতালিকা আল-মুস্তানসীর বিল্লাহ (মৃত্যু ১০৯৪) পর্যন্ত একই। তার মৃত্যুর পরে ইমামতের ধারাটি নিজারি ও মুস্তা‘লি রাজবংশে পৃথক হয়ে যায়।

মুস্তা‘লি মুসলিমদের ইমামের ধারাটি (দাউদি বোহরা নামেও পরিচিত) আমির ইবনে মুস্তালি পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। তারা বিশ্বাস করে যে তার মৃত্যুর পরে তাদের ২১তম ইমাম আত-তাইয়েব আবুল-কাসিম দাওর-ই সতরে (গোপনের সময়কাল) চলে যান যা আজও অব্যাহত আছে। ইমামের অনুপস্থিতিতে তাদের নেতৃত্ব দা’য়ী আল-মুতলাক (পরম ধর্মপ্রচারক) দ্বারা করা হয় যিনি ইমামের গোপনীয়তা থেকে ইমামের পুনরায় উত্থানের আগ পর্যন্ত গায়েবি ইমামের হয়ে কাজ পরিচালনা করেন।

নিজারি ইসমাইলি শিয়া মুসলমানদের ইমামের ধারাটি (দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ায় আগা খানী ইসমাইলি নামেও পরিচিত) তাদের বর্তমান জীবিত ৪৯তম পুরুষানুক্রমিক ইমাম চতুর্থ আগা খান (প্রিন্স অলি খানের পুত্র) অব্যাহত রেখেছেন। তারা বর্তমানে একমাত্র শিয়া মুসলিম সম্প্রদায় যাদের উপস্থিত এবং জীবিত (হাজির ওয়া মাওজুদ) ইমাম নেতৃত্ব দিচ্ছেন।[৭২]

 
টীকা: কেয়াসানির ইমাম মুহাম্মদ ইবনে আল-হানাফিয়াহ আলীর স্ত্রী খওলা বিনতে জাফরের মাধ্যমে আলীর বংশধর

জায়েদি ইমামগণ

সম্পাদনা

শিয়া সম্প্রদায়ের জায়েদি শাখাটি ৮৯৭ সাল থেকে শুরু হয়ে ইমামতের নিজস্ব ধারা স্থাপন করে; ১৯৬২ সালে উত্তর ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধের অবসান এবং একটি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই ধারাটি কোনও বাধা ছাড়াই জারি ছিল।

শিয়া ইমামতের বিষয়ে সুন্নী অভিমত

সম্পাদনা

সিরিয়ার মুফতী ইবনে তাইমিয়া (মৃত্যু: ৭২৮ হিজরি/ ১৩২৮ খ্রিস্টাব্দ) তার মিনহাজ আস-সুন্নাহ আন-নাবিয়াহ তে ইমামের ধারণা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেন।[৭৩]

মুহাম্মদ (সা.) এর নিম্নোক্ত হাদিস দ্বারা চার রশিদুন খলিফার পবিত্র মর্যাদার বিষয়টি বিবেচনা করে দ্বাদশ ইমামের বিশ্বাস সুন্নি ইসলামে ভাগ করা হয়েছে:

আমি আল্লাহর নবীকে বলতে শুনেছি, 'ইসলাম বারো খলিফা পর্যন্ত মহিমান্বিত হয়ে থেমে যাবে না, তাদের প্রত্যেকেই কুরাইশ থেকে আগত'।"(এবং আরেকটি বর্ণনায়) যতক্ষণ না বারোজন লোক তাদের উপরে রাজত্ব করবে ততক্ষণ পুরুষের বিষয়গুলি থামবে না, তাদের প্রত্যেকে কুরাইশ বংশ থেকে আসবে। এবং অপর একটি বর্ণনায় আছে: তাদের উপর বারোজন খলিফা আসা পর্যন্ত এই ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হতে থাকবে, তাদের প্রত্যেকেই কুরাইশ থেকে আগত।[৭৪]

জনগণের বিষয় পরিচালনা করা অব্যাহত থাকবে যতক্ষণ না তারা বারোজন দ্বারা পরিচালিত হয়, এরপর তিনি যোগ করেন তারা কুরাইশ বংশ থেকে আসবে।[৭৫]

আমার অনুসরণকারি বারো খলিফার সবাই কুরাইশ হবেন।[৭৬]

উত্তরাধিকার

সম্পাদনা

আরও দেখুন

সম্পাদনা

পাদটিকা

সম্পাদনা
  1. The Sufi spiritual leader Ibn Arabi said: "A Muslim is a person who has dedicated his worship exclusively to God...Islam means making one's religion and faith God's alone."[১২]
  2. 19:28

উদ্ধৃতিসমূহ

সম্পাদনা
  1. Badruddīn, Amir al-Hussein bin (১৮ ডিসেম্বর ২০০৮)। The Precious Necklace Regarding Gnosis of the Lord of the Worlds। Imam Rassi Society। 
  2. Amir-Moezzi, Mohammad Ali। "SHIʿITE DOCTRINE"। Encyclopædia Iranica। সংগ্রহের তারিখ ২৪ এপ্রিল ২০১৬ 
  3. Nasr 2006, পৃ. 38
  4. Sociology of religions: perspectives of Ali Shariati (2008) Mir Mohammed Ibrahim
  5. Nasr, Seyyed Hossein; Dabashi, Hamid; Nasr, Seyyed Vali Reza (১৯৮৮)। Shi'ism: Doctrines, Thought, and Spirituality। SUNY Press। আইএসবিএন 978-0-88706-689-4 
  6. Tabataba'i 2008
  7. al-Tijani al-Samawi, পৃ. 79
  8. Ayoub 1984, পৃ. 157
  9. Moslem bin Hajjaj (২০০৬)। Sahih Moslem। Dar Tayibbah। পৃষ্ঠা 882। 
  10. al-Shaykh al-Saduq 2006, পৃ. 194
  11. Sharif al-Qarashi 2003
  12. Razi 1900, পৃ. 432
  13. টেমপ্লেট:Iranica
  14. Historical representations of a Fatimid Imam-caliph: Exploring al-Maqrizi’s and Idris’ writings on al-Mu‘izz Li Din Allah, Dr. Shainool Jiwa[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  15. shiite-encyclopedia-ahlul-bayt
  16. Islamic Dynasties of the Arab East: State and Civilization during the Later Medieval Times by Abdul Ali, M.D. Publications Pvt. Ltd., 1996, p97
  17. Ahkam al-Quran By Abu Bakr al-Jassas al-Razi, volume 1 page 100, published by Dar Al-Fikr Al-Beirutiyya
  18. Francis Robinson, Atlas of the Islamic World Since 1500, pg. 47. New York: Facts on File, 1984. আইএসবিএন ০৮৭১৯৬৬২৯৮
  19. "Zaidiyyah"The Free Dictionary 
  20. Zaydi Islam John Pike – http://www.globalsecurity.org/military/intro/islam-zaydi.htm
  21. Momen, Moojan, An Introduction to Shi'i Islam, Yale University Press, 1985, p. 199
  22. Rise of The Fatimids, by W. Ivanow. Page 81, 275
  23. "ISMAʿILISM xvii. THE IMAMATE IN ISMAʿILISM" 
  24. Yeomans 2006, পৃ. 43।
  25. Imam Muslim (translated by Aftab Shahryar) (২০০৪)। Sahih Muslim Abridged। Islamic Book Service। আইএসবিএন 81-7231-592-9 
  26. Gleave, Robert। "Imamate"। Encyclopaedia of Islam and the Muslim world; vol.1। MacMillan। আইএসবিএন 0-02-865604-0 
  27. The Imam's Arabic titles are used by the majority of Twelver Shia who use Arabic as a liturgical language, including the Usooli, Akhbari, Shaykhi, and to a lesser extent Alawi. Turkish titles are generally used by Alevi, a fringe Twelver group, who make up around 10% of the world Shia population. The titles for each Imam literally translate as "First Ali", "Second Ali", and so forth. Encyclopedia of the Modern Middle East and North Africa। Gale Group। ২০০৪। আইএসবিএন 978-0-02-865769-1 
  28. The abbreviation CE refers to the Common Era solar calendar, while AH refers to the Islamic Hijri lunar calendar.
  29. Except Twelfth Imam
  30. Nasr, Seyyed Hossein"Ali"Encyclopædia Britannica Online। ২০০৭-১০-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১০-১২ 
  31. [কুরআন ৫:৫৫]
  32. [কুরআন ৫:৫৫]
  33. [কুরআন ৪:৫৯]
  34. [কুরআন ৩:৬১]
  35. [কুরআন ২:২০৭]
  36. Encyclopedia of the Modern Middle East and North Africa। Gale Group। ২০০৪। আইএসবিএন 978-0-02-865769-1 
  37. Tabatabae (1979), pp.190–192
  38. Tabatabae (1979), p.192
  39. al-Qarashi, Baqir Shareef (২০০৭)। The life of Imam Husain। Qum: Ansariyan Publications। পৃষ্ঠা 58। 
  40. Tirmidhi, Vol. II, p. 221 ; تاريخ الخلفاء، ص189 [History of the Caliphs]
  41. Madelung, Wilferd"ḤASAN B. ʿALI B. ABI ṬĀLEB"Encyclopaedia Iranica। ২০১৪-০১-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৭-০৬ 
  42. Tabatabae (1979), pp.194–195
  43. Tabatabae (1979), p.195
  44. A Brief History of The Fourteen Infallibles। Qum: Ansariyan Publications। ২০০৪। পৃষ্ঠা 95। 
  45. Kitab al-Irshad। পৃষ্ঠা 198। 
  46. Nakash, Yitzhak (১ জানুয়ারি ১৯৯৩)। "An Attempt To Trace the Origin of the Rituals of Āshurā¸"। Die Welt des Islams33 (2): 161–181। ডিওআই:10.1163/157006093X00063 
  47. Tirmidhi, Vol. II, p. 221 ; تاريخ الخلفاء، ص189 [History of the Caliphs]
  48. Madelung, Wilferd। "ḤOSAYN B. ʿALI"Encyclopaedia Iranica। ২০১১-০৪-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৩-২৩ 
  49. Tabatabae (1979), pp.196–199
  50. Madelung, Wilferd"ʿALĪ B. ḤOSAYN B. ʿALĪ B. ABĪ ṬĀLEB, ZAYN-AL-ʿĀBEDĪN"Encyclopaedia Iranica। ২০১৭-০৮-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১১-০৮ 
  51. Tabatabae (1979), p.202
  52. Madelung, Wilferd"BĀQER, ABŪ JAʿFAR MOḤAMMAD"Encyclopaedia Iranica। ২০১১-০৪-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১১-০৮ 
  53. Tabatabae (1979), p.203
  54. "JAʿFAR AL-ṢĀDEQ, ABU ʿABD-ALLĀH"Encyclopaedia Iranica। ২০১৮-১০-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৭-০৭ 
  55. Tabatabae (1979), p.203–204
  56. Madelung, Wilferd"ʿALĪ AL-REŻĀ"Encyclopaedia Iranica। ২০১২-০৯-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১১-০৯ 
  57. Tabatabae (1979), p.205
  58. Tabatabae (1979) p. 78
  59. Sachedina 1988, পৃ. 53–54
  60. Tabatabae (1979), pp.205–207
  61. Tabatabae (1979), p. 207
  62. Madelung, Wilferd"ʿALĪ AL-HĀDĪ"Encyclopaedia Iranica। ২০১৫-১১-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১১-০৮ 
  63. Tabatabae (1979), pp.208–209
  64. Halm, H। "ʿASKARĪ"Encyclopaedia Iranica। ২০১১-০৪-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১১-০৮ 
  65. Tabatabae (1979) pp. 209–210
  66. Tabatabae (1979), pp.209–210
  67. "THE CONCEPT OF MAHDI IN TWELVER SHIʿISM"Encyclopaedia Iranica। ২০১১-০৪-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৭-০৭ 
  68. "ḠAYBA"Encyclopaedia Iranica। ২০১৪-০৮-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৭-০৭ 
  69. "Muhammad al-Mahdi al-Hujjah"Encyclopædia Britannica Online। ২০০৭-১০-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১১-০৮ 
  70. Tabatabae (1979), pp.210–211
  71. Tabatabae (1979), pp. 211–214
  72. "Aga Khan Development Network" 
  73. See "Ibn Taymiyya's Critique of Shia Imamology. Translation of Three Sections of his 'Minhāj al-Sunna'", by Yahya Michot, The Muslim World, 104/1–2 (2014), pp. 109–149.
  74. Mishkat al Masabih Vol 4 p 576, Hadith 5
  75. Sahih Muslim, Hadith number 4478
  76. Sunan Tirmidhi Volume 1 page 813

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা