ওলি
ওলী শব্দের অর্থ বন্ধু, সাহায্যকারী বা অভিভাবক। ইসলামী পরিভাষায়, ওলী হলেন সেই ব্যক্তি যিনি আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করেছেন এবং তাকওয়া ও ইবাদতের মাধ্যমে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হয়েছেন। ইসলামী পরিভাষায় ‘বেলায়াত’ ‘ওলী’ ও ‘মাওলা’ শব্দের বিভিন্ন প্রকারের ব্যবহার রয়েছে। উত্তরাধিকার আইনের পরিভাষায় ও রাজনৈতিক পরিভাষায় এ সকল শব্দ বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত। তবে বেলায়াত বা ওলী শব্দদ্বয় সর্বাধিক ব্যবহৃত (ولاية الله) ‘আল্লাহর বন্ধুত্ব’ ও (ولى الله) ‘আল্লাহর বন্ধু’ অর্থে। কুরআনে বলা হয়েছে:
"জেনে রাখ! নিশ্চয় আল্লাহর ওলীগণের কোনো ভয় নেই এবং তাঁরা চিন্তাগ্রস্ত হবেন না— যারা ঈমান এনেছেন এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে আত্মরক্ষা করে চলেন।"
ওলীদের বৈশিষ্ট্য
সম্পাদনা- শক্তিশালী ঈমান ও তাকওয়া
- ফরয ইবাদত পালনে অটল থাকা
- হারাম ও নিষিদ্ধ বিষয় থেকে দূরে থাকা
- নফল ইবাদত ও আল্লাহর জিকিরে লিপ্ত থাকা
- আল্লাহর ওপর পূর্ণ নির্ভরশীলতা
ওলী সম্পর্কিত একটি প্রসিদ্ধ হাদিস
সম্পাদনারাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ বলেন: "যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলীর সাথে শত্রুতা করে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার নৈকট্য অর্জনের জন্য বান্দা যত কাজ করে, তন্মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় হলো যা আমি তার উপর ফরয করেছি। এরপর বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য অর্জন করে, ফলে আমি তাকে ভালোবাসি। যখন আমি তাকে ভালোবাসি, তখন আমি তার শ্রবণ, দর্শন, হাত ও পায়ে পরিণত হই, যা দিয়ে সে শোনে, দেখে, ধরে ও হাঁটে। সে যদি আমার কাছে কিছু প্রার্থনা করে, আমি অবশ্যই তাকে তা প্রদান করি; যদি আমার কাছে আশ্রয় চায়, আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় প্রদান করি।"
ওলী হওয়ার উপায়
সম্পাদনা- আল্লাহর প্রতি দৃঢ় ঈমান রাখা
- পাঁচ ওয়াক্ত নামাযসহ সকল ফরয ইবাদত পালন করা
- হারাম ও সন্দেহযুক্ত বিষয় থেকে দূরে থাকা
- বেশি বেশি নফল ইবাদত করা
- আল্লাহর জিকির ও দোয়া করা
ইসলামে ওলীদের গুরুত্ব
সম্পাদনাওলীগণ ইসলামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তারা দ্বীনের দাওয়াত, তাসাউফ ও আধ্যাত্মিকতার চর্চা করেছেন এবং উম্মাহকে সঠিক পথে পরিচালিত করেছেন। তবে ইসলামে প্রকৃত ওলীর পরিচয় শুধুমাত্র তাকওয়া ও কুরআন-সুন্নাহর অনুসরণের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়।
আরও পড়ুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনাএই নিবন্ধটিতে কোনো উৎস বা তথ্যসূত্র উদ্ধৃত করা হয়নি। |
ওলিদের পরিচয়
সম্পাদনাঈমান অর্থ তাওহীদ ও রিসালাতের প্রতি বিশুদ্ধ, শিরক ও কুফর মুক্ত বিশ্বাস। “তাকওয়া” শব্দের অর্থ আত্মরক্ষা করা। যে কর্ম বা চিন্তা করলে মহান আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন সেই কর্ম বা চিন্তা বর্জনের নাম তাকওয়া। মূলত সকল হারাম, নিষিদ্ধ ও পাপ বর্জনকে তাকওয়া বলা হয়।[১]
এখানে আমরা দেখতে পাই যে, দুটি গুণের মধ্যে ওলীদের পরিচয় সীমাবদ্ধ: ঈমান ও তাকওয়া। এই দুই গুণ যার মধ্যে যত বেশি ও যত পরিপূর্ণভাবে থাকবে, তিনি বেলায়াতের পথে তত বেশি অগ্রসর হবেন এবং আল্লাহর নিকট তত বেশি ওলী বা প্রিয় ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হবেন।
এক্ষেত্রে বোঝা যায় যে, প্রত্যেক মুসলিমই আল্লাহর ওলী। ঈমান ও তাকওয়ার গুণ যার মধ্যে যত বেশি থাকবে, তিনি তত বেশি আল্লাহর নিকট ওলিয়ুল্লাহ (প্রিয়জন) হিসেবে গণ্য হবেন। প্রসিদ্ধ হানাফী ফকীহ ইমাম আবু জা’ফর তাহাবী (৩২১ হিজরি) ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মুহাম্মাদ, ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ) ও আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আকীদা বা বিশ্বাস বর্ণনা করে বলেন:
المؤمنون كلهم أولياء الرحمن وأكرمهم عند الله أطوعهم وأتبعهم للقران
— “সকল মুমিন করুণাময় আল্লাহর ওলী। তাঁদের মধ্য থেকে যে যত বেশি আল্লাহর অনুগত ও কুরআনের অনুসরণকারী, সে তত বেশি আল্লাহর নিকট সম্মানিত (তত বেশি বেলায়াতের অধিকারী)।”[২]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা== আরও দেখুন= *
বেলায়েত