জাবির ইবনে হায়য়ান

মুসলিম বহুবিদ্যাবিশারদ
(জাবির ইবনে হাইয়ান থেকে পুনর্নির্দেশিত)

আবু মুসা জাবির ইবন হাইয়ান (আল-বারিজি/আল-আযদি/আল-কুফি/আল-তুসি/আল-সুফি, আরবি: جابر بن حیان, ফার্সি: جابرحیان) (জন্ম:৭২১ - মৃত্যু:৮১৫ খ্রিষ্টাব্দ)[] বিখ্যাত শিয়া মুসলিম বহুবিদ‍্যাবিশারদ। পাশ্চাত্য বিশ্বে তিনি জেবার নামে পরিচিত যা তার নামের লাতিন সংস্করণ। তিনি ছিলেন একাধারে রসায়নবিদ ও আলকেমিবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানীজ্যোতিষী, প্রকৌশলী, দার্শনিক, পদার্থবিজ্ঞানী এবং ঔষধ বিশারদ ও চিকিৎসক। তার প্রকৃত জাতীয়তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। অনেকে বলেন তিনি আরব, অনেকে আবার বলেন তিনি পারস্যের নাগরিক ছিলেন। তাকে "রসায়নের জনক" হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। জাবির ইবন হাইয়ান আলকেমিতে পরীক্ষণমূলক পদ্ধতির গোড়াপত্তন করেছিলেন।[]

ইসলামী রসায়নবিদ

জাবির ʾইবনে হ়াইয়ান
جابر بن حيان
জাবিরের ১৫শ শতাব্দীর ইউরোপীয় প্রতিকৃতি, কোদিচি আশবুর্নহামিয়ানি ১১৬৬, বিব্লিওতেকা মেদিচেয়া লরেঞ্জিয়ানা, ফ্লোরেন্স
জন্মআনু. ৭২১ খ্রি.
মৃত্যুআনু. ৮১৫ খ্রি.
অন্যান্য নামGeber
পেশাআলকেমিবিদ, রসায়নবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, জ্যোতিষশাস্ত্রজ্ঞ, সংখ্যাতাত্ত্বিক, ঔষধশাস্ত্রবিদ, আধ্যাত্মবাদী
উল্লেখযোগ্য কর্ম
কিতাব আল-কিমিয়া, কিতাব আস-সাবিন, দ্য সেভেন্টি বুকস, কিতাব আল-মিজান, দ্য ফাইভ হানড্রেড বুকস[]

দার্শনিক জীবন
যুগইসলামি স্বর্ণযুগ
অঞ্চলরসায়ন, আলকেমি, জ্যোতির্বিজ্ঞান, জ্যোতিষশাস্ত্র, প্রকৌশল, দর্শন, পদার্থবিজ্ঞান, সংখ্যাতত্ত্ব, ঔষধশাস্ত্র
ধারাআদি শিয়া দর্শন[]
ভাষাআরবি
প্রধান আগ্রহ
আলকেমিরসায়ন, শিয়া নাজাততত্ত্ব ও ইমামতত্ত্ব, তাসলিমান, নির্দিষ্ট পদার্থ, ঔষধশাস্ত্র, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিষশাস্ত্র
উল্লেখযোগ্য অবদান
ভারসাম্য তত্ত্ব (ʿইল্ম আল-মিজান), কৃত্রিম উৎপাদন তত্ত্ব (ʿইল্ম আল-তকবীন), ধাতুর গন্ধক-পারদ তত্ত্ব, রসায়নে জৈব উপাদানের প্রয়োগ
ভাবশিষ্য
  • ইবনে ওয়াহশিয়া, মুহাম্মদ ইবন উমাইল আত-তামীমী, মাসলামা আল-কুরতুবী, ছদ্ম-ইবনে সীনা, ছদ্ম জাবির, আল-জালদাকি
ব্যক্তিগত তথ্য
ধর্মইসলাম
আখ্যাশিয়া
ব্যবহারশাস্ত্রজাফরি
ধর্মীয় মতবিশ্বাসইসমাইলি
শিক্ষকজাফর আস-সাদিক

১০ম শতাব্দীর প্রাথমিক দিকে, জাবিরের কাজের পরিচয় এবং সঠিক রচনাসমূহের সংগ্রহ ইসলামী চক্রের মধ্যে বিতর্ক ছিল।[] তিনি ১৩শ শতাব্দীতে ইউরোপে একজন বেনামী লেখক ছিলেন এবং পাশ্চাত্যের খ্রিস্টানরা লাতিন অনুযায়ী তার নাম "জেবার" দেন। সাধারণত তাকে ছদ্ম-জেবার হিসাবে উল্লেখ করে। তিনি কলম-নাম জেবার অধীনে আল-কেমি ও ধাতুবিদ লিখেন।[]

তিনি রসায়নের অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেছিলেন যার অনেকগুলো এখনও ব্যবহৃত হয়। যেমন: হাইড্রোক্লোরিক ও নাইট্রিক এসিড সংশ্লেষণ, পাতন এবং কেলাসীকরণ। তার অধিকাংশ রচনায় দুর্বোধ্য এবং বিভিন্নভাবে সংকেতায়িত। বিশেষজ্ঞ ছাড়া তার রচনা কেউ খুব একটা বোঝেন না, বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও কেউ জানেন না ঠিক কি সংকেতের মাধ্যমে লিখেছিলেন তিনি। তাক্বিনের ধারণা এবং সে সময় আরবে প্রচলিত বিভিন্ন পদার্থের নামের মাধ্যমে তিনি বিস্তৃত রাসায়নিক সংখ্যায়ন পদ্ধতি তৈরি করেছিলেন। তার আলকেমি ক্যারিয়ার এই পদ্ধতিকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে। তাক্বিন বলতে আলকেমি গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে জীবন সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে বোঝায়। বর্তমানে প্রমাণিত হয়েছে যে, জাবিরের প্রাথমিক গবেষণামূলক রচনাগুলো পারস্যের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বৈজ্ঞানিক সংস্কৃতির পটভূমিতে রচিত হয়েছে। কৌশলগত শব্দভাণ্ডারে ব্যবহৃত ফার্সি ভাষা এবং মধ্য পারস্য দেশীয় শব্দের মাধ্যমে তার অভিসন্দর্ভগুলো পড়া যায়। তিনি লোহার মরিচা রোধক বার্নিস আবিষ্কার করেছিলেন।এছাড়া ধাতুর শোধন,তরলীকরন, বাষ্পীকরন ও তার আবিষ্কার।

তিনিই সর্বপ্রথম ইস্পাত তৈরী করার পদ্ধতি বের করেছেন। চুলের কলব,কাচ,লেখার কালি তৈরীর প্রক্রিয়া ও ব্যবহার বিধি সম্পর্কে বিস্তারিত বলেছিলেন।

জাবির ইবন হাইয়ান ৭২২ খ্রিষ্টাব্দে তুস, পারস্যে জন্ম গ্রহণ করেন।[] ধ্রুপদী সূত্র অনিয়ায়ী জাবির ভিন্নভাবে আল-আযদি বা আল-বারিজি বা আল-কুফি বা আল-তুসি বা আল-সুফী হিসেবে অধিকারী হয়েছেন।[] তার জন্ম স্থান নিয়ে মত পার্থক্য রয়েছে, কারো মতে তিনি ছিলেন একজন খোরাসান, পারস্য যিনি পরে কুফাতে যান, অন্যদের মতে তিনি ছিলেন সিরিয়া আদিবাসি পরে তিনি পারস্য ও ইরাকে বসবাস করেন।[] তার পূর্বপুরুষগনের পটভূমি স্পষ্ট নয়, কিন্তু অধিকাংশ সূত্র তাকে একজন ফার্সি হিসেবে উল্লেখ করে।[] কিছু সূত্রে জানা যায় যে, তার পিতা ছিলেন হাইয়ান আল-আযদি। তিনি ছিলেন আরব আযদ উপজাতির একজন ফার্মাসিস্ট যিনি উমাইয়া খিলাফতের সময় ইয়েমেন থেকে কুফাতে প্রবসিত হন।[][১০]

জাবিরের রচনাসমূহ

সম্পাদনা

জাবির ইবন হাইয়ানকে প্রায় ৩,০০০ থেরাপিই এবং নিবন্ধসমূহের কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে।[১১] তার রচনার পরিধি ছিল সুবিশাল: সৃষ্টিতত্ব, সঙ্গীত, ঔষধ, জাদু, জীববিজ্ঞান, রাসায়নিক প্রযুক্তি, জ্যামিতি, ব্যাকরণ, দর্শনশাস্ত্র, যুক্তিবিদ্যা, জীবিত প্রাণীর কৃত্রিম প্রজন্ম, জ্যোতির্বিদ্যার পূর্বাভাস এবং সাঙ্কেতিক ইমামি কাল্পনিক।[১২]

  • ১১২টি বই বারমাকিডসকে উত্সর্গীকৃত করেছে।
  • দ্য সেভেন্টি বুক, যার বেশিরভাগ মধ্যযুগে লাতিন ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে।
  • দ্য টেন বুক অন রেক্টিফিকেশন, আল-কেমির বিবরণ ধারণকারী, যেমন, পাইথাগোরাস (পিথাগোরাস), সক্রেটিস, প্লেটো এবং এরিস্টটল
  • দ্য বুক অন ব্যালেন্স, এই গ্রুপে তার বিখ্যাত 'প্রকৃতি মধ্যে ভারসাম্য তত্ত্ব' রয়েছে।


তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Forster 2018.
  2. Kraus 1930; Kraus 1942; Corbin 1950; Lory 1989: 47–125; Lory 2000, Lory 2016, Capezzone 2020.
  3. "Abu Musa Jabir ibn Hayyan"। Encyclopædia Britannica Online। সংগ্রহের তারিখ ১১ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ 
  4. Julian, Franklyn, Dictionary of the Occult, Kessinger Publishing, 2003, আইএসবিএন ০-৭৬৬১-২৮১৬-৪, আইএসবিএন ৯৭৮-০-৭৬৬১-২৮১৬-৩, p. 8.
  5. Glick, Thomas; Eds (২০০৫)। Medieval science, technology, and medicine: an encyclopedia। New York: Routledge। পৃষ্ঠা 279। আইএসবিএন 0-415-96930-1 
  6. Principe, Lawrence (২০১৩)। "2"। The Secrets of Alchemy। Chicago: University of Chicago। আইএসবিএন 0226682951 
  7. S.N. Nasr, "Life Sciences, Alchemy and Medicine", The Cambridge History of Iran, Cambridge, Volume 4, 1975, p. 412: "Jabir is entitled in the traditional sources as al-Azdi, al-Kufi, al-Tusi, al-Sufi. There is a debate as to whether he was a Persian from Khorasan who later went to Kufa or whether he was, as some have suggested, of Syrian origin and later lived in Iran".
  8. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; SourcesP নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  9. Holmyard, Eric John (১৯৩১)। Makers of chemistry। The Clarendon press। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০১০ 
  10. Richard Russell (১৯২৮)। Holmyard, E.J., সম্পাদক। The Works of Geberআইএসবিএন 0-7661-0015-4 
  11. Josef W. Meri, Jere L. Bacharach (২০০৬)। Medieval Islamic CivilizationTaylor and Francis। পৃষ্ঠা 25। আইএসবিএন 0-415-96691-4 
  12. Haq, Syed Nomanul (২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫)। Names, Natures and Things: The Alchemist Jabir Ibn Hayyan and His Kitab Al-Ahjar (Book of Stones)। Springer। পৃষ্ঠা 5। আইএসবিএন 978-0-7923-3254-1। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০১০ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা