১৮৮৮-৮৯ ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর

ইংরেজ ক্রিকেট দল মেজর আর. জি. ওয়ারটনের ব্যবস্থাপনায় ডিসেম্বর, ১৮৮৮ থেকে মার্চ, ১৮৮৯ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করে। কেপটাউনে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং ওয়েস্টার্ন প্রভিন্স ক্রিকেট ক্লাবের সাবেক সদস্য হিসেবে ওয়ারটনকে স্থানীয় উৎসাহী ক্রিকেট অনুরাগীদের আমন্ত্রণে ইংরেজ প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটারদেরকে নিয়ে ঐ দেশে যান।[] তিনি ক্যাসল শিপিং লাইনের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ডোনাল্ড কারি’র নিযুক্ত স্থানীয় প্রতিনিধি বিলি সিমকিন্স ও উইলিয়াম মিল্টনের সাথে যোগাযোগ করেন। তারা সকল প্রস্তুতি-পর্ব সম্পন্ন করেন। অন্যদিকে, ওয়ারটন ইংল্যান্ডে চলে যান। সেখানে আর. জি. ওয়ারটন একাদশ নামীয় দলে ইংরেজ খেলোয়াড়দেরকে অন্তর্ভুক্ত করেন।[]

প্রথম টেস্টের বিজ্ঞাপনচিত্র

সি. অব্রে স্মিথ দলের অধিনায়কত্ব করেন। দলটিতে পূর্বেকার আন্তর্জাতিক খেলায় অভিজ্ঞতা অর্জনকারী পাঁচজন খেলোয়াড় - ববি অ্যাবল, জনি ব্রিগস, মরিস রিড, জর্জ ইউলিটহ্যারি উড ছিলেন। দলের অন্য খেলোয়াড়গণ কেবলমাত্র নম্বরধারী ছিলেন ও তারা ইতোঃপূর্বে কোন প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশগ্রহণ করেননি। হ্যারি অ্যাল্থাম দলটিকে দূর্বল কাউন্টি দলের সমমানসম্পন্নরূপে আখ্যায়িত করেছিলেন।[]

অংশগ্রহণকৃত খেলাগুলোর মধ্যে দুইটিতে তারা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিত্বকারী দলের বিপক্ষে খেলে। ১৮৯৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল যে এ খেলাগুলোকে স্মারকসূচক টেস্ট খেলার মর্যাদা দান করা হবে। ফলশ্রুতিতে, প্রথমটি দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্বোধনী টেস্ট খেলারূপে আখ্যায়িত হয়। লক্ষ্যণীয় যে, ১৮৮৯ সালের পূর্বে দেশটিতে কোন প্রথম-শ্রেণীর খেলা আয়োজন করা হয়নি। ফলে, দক্ষিণ আফ্রিকায় এটিই প্রথম প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলারূপে পরিগণিত হয়।[]

দলের শক্তিমত্তা অনুযায়ী টেস্টের ধারণা গড়ে উঠে। ১৮৮৯ সালে ‘টেস্ট ক্রিকেট’ পরিভাষাটি একেবারেই নতুন ছিল। ঐ বছরে উইজডেনের সংস্করণে প্রথমবারের মতো ব্যবহৃত হয়। এ ধরনের স্মারকসূচক মর্যাদা প্রদান বিতর্ক সৃষ্টি করে। রোল্যান্ড বোয়েনের ইতিহাসে দেখা যায় যে, দক্ষিণ আফ্রিকার খেলার মান অত্যন্ত নিচুস্তরের ছিল। ফলে, শুধু যে টেস্টের মর্যাদাই নয়; বরং, এ দুটো খেলাকে প্রথম-শ্রেণীর খেলা হিসেবেও গণনায় আনা যায় না। এছাড়াও, তিনি উল্লেখ করেছেন যে, ১৮৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ইংল্যান্ড সফরেও কোন প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলা ছিল না। উপরন্তু, ১৯১৪ সালে এম. জে. লাকিন দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটের ইতিহাসকে ঘিরে প্রথম লিখেছেন যে, তার মতে, ১৮৮৯ সালের খেলাগুলো উল্লেখযোগ্যতাবিহীন ছিল।[]

সার-সংক্ষেপ

সম্পাদনা

ওয়ারটন একাদশ সর্বমোট বিশটি খেলায় অংশ নেয়। তবে, কেবলমাত্র স্মারকসূচক দুইটি টেস্ট খেলাই প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলারূপে পরিগণিত হয়েছিল। এর প্রধান কারণ ছিল, খেলাগুলোর মধ্যে ১৭টিতে অসামঞ্জস্য অবস্থায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল। স্বাগতিক দল প্রত্যেক ক্ষেত্রেই ইংরেজ একাদশের বিপক্ষে ১৫ থেকে ২২ জন খেলোয়াড়কে ফিল্ডিং করতে নামিয়েছে। তবে, ঐ সফরের শেষ খেলাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকা দল ১১ জনকে খেলিয়েছিল। খেলাটি অবশ্য দুইদিনের ছিল। প্রথম-শ্রেণীর খেলার মর্যাদা লাভে একটি খেলাকে অবশ্যই কমপক্ষে তিনদিনের হতে হয়। অনেকগুলো খেলা ম্যাটিং পিচে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সাধারণমানের পিচ প্রস্তুতসহ আবরণ অরক্ষিত ছিল। উপকূলীয় এলাকার ঘাস ও অভ্যন্তরে শক্ত মাটি ব্যবহার করা হয়।[]

ইস্টার্ন প্রভিন্স, নাটাল, ট্রান্সভালওয়েস্টার্ন প্রভিন্স - এ চারটি দক্ষিণ আফ্রিকান প্রাদেশিক দলের সাথে ওয়ারটন একাদশ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়। এছাড়াও তারা কেপটাউন, ডারবান, জোহেন্সবার্গ, কিম্বার্লী, পিটারমারিৎজবার্গ ও পোর্ট এলিজাবেথ শহরের প্রতিনিধিত্বকারী দলের মুখোমুখি হয়েছিল। অসম খেলোয়াড়দের সাথে খেলায় অংশ নিলেও ইংরেজ দল সকল প্রাদেশিক ও শহরকেন্দ্রিক খেলায় জয়লাভ করে। তবে, কেপটাউন, কিম্বার্লী (দুইবার) ও পোর্ট এলিজাবেথের বিপক্ষে প্রথম ছয় খেলার চারটিতে বিস্ময়করভাবে পরাজিত হয়েছিল। কিন্তু, দুই টেস্টে অবশ্যম্ভাবী জয়লাভে সমর্থ হয়।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে আসতে এ সফরটির স্বার্থকতা ফুঁটে উঠে। সেলক্ষ্যে ঐ দেশে ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রচলন হয়। সফরের প্রধান পৃষ্ঠপোষক স্যার ডোনাল্ড কারি অত্যন্ত খুশি হন ও তার নাম অনুসরণে কারি কাপ ট্রফি প্রদান করেন। এ ট্রফিটি দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া চ্যাম্পিয়নশীপের বিজয়ী দলকে প্রদান করা হয়। ১৮৮৮-৮৯ মৌসুমের জন্যে ইংরেজ দলের বিপক্ষে সর্বাপেক্ষা ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনকারী দলকে ট্রফি প্রদানের কথা বলা হলে সফরকারী দল কিম্বার্লীকে নির্বাচন করে। ১৮৮৯-৯০ মৌসুমে প্রতিযোগিতাটি পুরোদমে শুরু হলে কিম্বার্লী ট্রান্সভালের কাছ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়।[] শারীরিক কারণে ফ্রাঙ্ক হার্ন ঐ দেশে অভিবাসিত হলে দক্ষিণ আফ্রিকা দল স্বল্পকালীন সময়ের জন্য সুবিধা লাভ করে।[] সফলতার সাথে প্রশিক্ষণ কার্যসম্পন্নসহ ১৮৯০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে বেশ কয়েকটি টেস্টে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন তিনি।[] অর্থনৈতিকভাবে এ সফরটি সফলতার মুখ দেখেনি। উইজডেন এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করে যে, কখনো এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গী ছিল না কিংবা এর প্রয়োজনও পড়েনি। শুধুমাত্র কেপে প্রথমবারের মতো ইংরেজ দলের প্রতিনিধিত্বমূলক সফরই এর প্রধান প্রাপ্তি ছিল।[][]

ইংরেজ দল

সম্পাদনা
 
সফরের শুরুতে ইংরেজ দল

ওয়ারটন একাদশের পনেরোজন খেলোয়াড় ভালো-মন্দ মিলিয়ে ছিল। জর্জ ইউলিট ইতোমধ্যেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২২ টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন। তার বিপরীতে ছয়জন খেলোয়াড়ের কেউই কোন কাউন্টি ক্লাবের সাথে যুক্ত ছিলেন না। ববি অ্যাবল, জনি ব্রিগস, মরিস রিড ও হ্যারি উড অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেছেন। মন্টি বাউডেন, আর্নল্ড ফদারগিল, ফ্রাঙ্ক হার্নঅব্রে স্মিথ কাউন্টি খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন।

ক্যামেরন স্কিনার কমেডিয়ান ছিলেন। শুধুমাত্র বিনোদনের উদ্দেশ্য নিয়ে তাকে দলে রাখা হয়েছিল ও চারটি অসম লড়াইয়ের খেলায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি। তিনি কোন প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেননি। এমনকি মেজর ওয়ারটনও কোন খেলায় অংশগ্রহণ করেননি। শুধুমাত্র চূড়ান্ত খেলায় শূন্যস্থান পূরণে তিনি অংশ নিয়েছিলেন। জেমস রবার্টস মাঝে-মধ্যে খেলায় অংশ নিতেন। প্রথম অসম লড়াইয়ের খেলায় অংশ নেয়ার পর পিতার মৃত্যু সংবাদে দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হন। ফলশ্রুতিতে, ইউলিটকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়।[] ১৮৯২ সালে রবার্ট মিডলসেক্সের পক্ষে একটিমাত্র প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশগ্রহণ করেছিলেন।

চার্লস কভেন্ট্রি, ব্যাসিল গ্রীভএমিল ম্যাকমাস্টার - প্রত্যেকেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলেন। ফলে তারা কোন প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ না নেয়া সত্ত্বেও টেস্ট খেলোয়াড়ের মর্যাদা লাভ করেছেন। কভেন্ট্রি ওরচেস্টারশায়ার ও পরবর্তীকালে ১৮৮৬ সালে মাইনর কাউন্টিতে খেলেছেন। এছাড়াও, কিছু স্থানীয় ও অজানা দলে খেলেছেন। গ্রীভ ও ম্যাকমাস্টার হ্যারো স্কুলের সাবেক ছাত্র ছিলেন। তারা উভয়েই ১৮৭০-এর দশকে বিদ্যালয় দলের পক্ষে খেলেছেন। তবে, ওয়ারটন একাদশ বাদে অন্য কোন দলে ম্যাকমাস্টার খেলেছিলেন কি-না তার কোন রেকর্ড নেই। ১৮৯২ সালে নির-ডু-ওয়েলস নামীয় একটি দলে কম গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেট খেলায় অংশ নিয়েছিলেন।

নিম্নবর্ণিত ছকে এ সফর শুরুর পূর্বে খেলোয়াড়ের বয়স, ব্যাটিংয়ের ধরন, বোলিংয়ের ধরন ও ঐ সময়ে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপ দলের সাথে সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।

ব্যাটসম্যান
নাম কাউন্টি জন্ম তারিখ ব্যাটিংয়ের ধরন বোলিংয়ের ধরন সূত্র
ববি অ্যাবল সারে (1857-11-30)৩০ নভেম্বর ১৮৫৭ (বয়স ৩১) ডানহাতি অফ ব্রেক []
মন্টি বাউডেন সারে (1865-11-01)১ নভেম্বর ১৮৬৫ (বয়স ২৩) ডানহাতি - [১০]
ফ্রাঙ্ক হার্ন কেন্ট (1858-11-23)২৩ নভেম্বর ১৮৫৮ (বয়স ৩০) ডানহাতি ডানহাতি ফাস্ট রাউন্ডআর্ম [১১]
মরিস রিড সারে (1859-02-09)৯ ফেব্রুয়ারি ১৮৫৯ (বয়স ২৯) ডানহাতি ডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম পেস [১২]
অল-রাউন্ডার
নাম কাউন্টি জন্ম তারিখ ব্যাটিংয়ের ধরন বোলিংয়ের ধরন সূত্র
জর্জ ইউলিট ইয়র্কশায়ার (1851-10-21)২১ অক্টোবর ১৮৫১ (বয়স ৩৭) ডানহাতি ডানহাতি ফাস্ট [১৩]
উইকেট-রক্ষক
নাম কাউন্টি জন্ম তারিখ ব্যাটিংয়ের ধরন বোলিংয়ের ধরন সূত্র
হ্যারি উড সারে (1853-12-14)১৪ ডিসেম্বর ১৮৫৩ (বয়স ৩৫) ডানহাতি - [১৪]
বোলার
নাম কাউন্টি জন্ম তারিখ ব্যাটিংয়ের ধরন বোলিংয়ের ধরন সূত্র
জনি ব্রিগস ল্যাঙ্কাশায়ার (1862-10-03)৩ অক্টোবর ১৮৬২ (বয়স ২৬) ডানহাতি স্লো লেফট আর্ম অর্থোডক্স স্পিন [১৫]
আর্নল্ড ফদারগিল সমারসেট (1854-08-26)২৬ আগস্ট ১৮৫৪ (বয়স ৩৪) বামহাতি বামহাতি মিডিয়াম পেস [১৬]
সি. অব্রে স্মিথ সাসেক্স (1863-07-21)২১ জুলাই ১৮৬৩ (বয়স ২৫) ডানহাতি ডানহাতি ফাস্ট [১৭]
অন্যান্য খেলোয়াড়
নাম কাউন্টি জন্ম তারিখ ব্যাটিংয়ের ধরন বোলিংয়ের ধরন সূত্র
চার্লস কভেন্ট্রি - (1867-02-26)২৬ ফেব্রুয়ারি ১৮৬৭ (বয়স ২১) ডানহাতি - [১৮]
ব্যাসিল গ্রীভ - (1864-05-28)২৮ মে ১৮৬৪ (বয়স ২৪) ডানহাতি ডানহাতি ফাস্ট [১৯]
এমিল ম্যাকমাস্টার - (1861-03-16)১৬ মার্চ ১৮৬১ (বয়স ২৭) ডানহাতি - [২০]
জেমস রবার্টস - (1864-07-01)১ জুলাই ১৮৬৪ (বয়স ২৪) বামহাতি - [২১]
ক্যামেরন স্কিনার - (1863-10-17)১৭ অক্টোবর ১৮৬৩ (বয়স ২৫) রেকর্ডবিহীন - [২২]
মেজর আর. জি. ওয়ারটন - (1847-01-16)১৬ জানুয়ারি ১৮৪৭ (বয়স ৪১) রেকর্ডবিহীন - [২৩]

দক্ষিণ আফ্রিকান দল

সম্পাদনা
 
উদ্বোধনী টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকান দল

দুই খেলায় অংশগ্রহণের জন্যে দক্ষিণ আফ্রিকা দল সর্বমোট চৌদ্দজন খেলোয়াড়কে মাঠে নামায়। শুধুমাত্র টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেকই নয়; বরং, প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটেও তাদের সকলের অভিষেক হয়। ১৮৮৯-৯০ মৌসুম থেকে ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট চালু হলেও তাদের কেউই প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনকে বিস্তৃত করেননি। শুধুমাত্র বার্নার্ড ট্যানক্রেড সর্বাধিক এগারোটি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। তিনি ফ্রেড স্মিথের কাকাতো ভাই ছিলেন। গাস কেম্পিস ২৭ ডিসেম্বর, ১৮৮৯ থেকে ৯ জানুয়ারি, ১৮৯০ তারিখের মধ্যে নাটালের পক্ষে পাঁচটি খেলায় অংশগ্রহণ করেন। তবে, চার মাস পরেই মোজাম্বিকে মাত্র ২৪ বছর বয়সে দেহাবসান ঘটে তার।

এ মৌসুম পর মাত্র তিনজন খেলোয়াড় - মিল্টন, স্মিথ ও ভিন্টসেন্ট আবারও দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে খেলেছিলেন। স্মারকসূচক টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবন শুরু করার পর তারা প্রত্যেকেই আর মাত্র তিনটি খেলায় অংশ নেন। মিল্টন ও ভিন্টসেন্ট ১৮৯১-৯২ মৌসুমে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেন। অন্যদিকে, স্মিথ ১৮৯৫-৯৬ মৌসুমে লর্ড হকের নেতৃত্বাধীন ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে খেলে সর্বাধিক টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেন।

নিম্নবর্ণিত ছকে ইংরেজ দলের সফরের পূর্বে খেলোয়াড়ের বয়স, ব্যাটিংয়ের ধরন, বোলিংয়ের ধরন ও ঐ সময়ে প্রাদেশিক দলের সাথে সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।

ব্যাটসম্যান
নাম প্রদেশ জন্ম তারিখ ব্যাটিংয়ের ধরন বোলিংয়ের ধরন সূত্র
ও. আর. ডানেল ইস্টার্ন প্রভিন্স (1856-07-15)১৫ জুলাই ১৮৫৬ (বয়স ৩২) ডানহাতি - [২৪]
পি. হাচিনসন নাটাল (1862-01-25)২৫ জানুয়ারি ১৮৬২ (বয়স ২৬) ডানহাতি - [২৫]
এ. ই. অশি ট্রান্সভাল (1870-03-11)১১ মার্চ ১৮৭০ (বয়স ১৮) ডানহাতি - [২৬]
ডব্লিউ. এইচ. এম. রিচার্ডস ওয়েস্টার্ন প্রভিন্স (1862-03-26)২৬ মার্চ ১৮৬২ (বয়স ২৬) ডানহাতি - [২৭]
আর. বি. স্টুয়ার্ট ‌ইস্টার্ন প্রভিন্স (1856-09-03)৩ সেপ্টেম্বর ১৮৫৬ (বয়স ৩২) ডানহাতি - [২৮]
অল-রাউন্ডার
নাম প্রদেশ জন্ম তারিখ ব্যাটিংয়ের ধরন বোলিংয়ের ধরন সূত্র
সি. ই. ফিনলাসন ট্রান্সভাল (1860-02-19)১৯ ফেব্রুয়ারি ১৮৬০ (বয়স ২৮) ডানহাতি অফ ব্রেক [২৯]
উইকেট-রক্ষক
নাম প্রদেশ জন্ম তারিখ ব্যাটিংয়ের ধরন বোলিংয়ের ধরন সূত্র
এফ. ডব্লিউ. স্মিথ ট্রান্সভাল (1861-03-31)৩১ মার্চ ১৮৬১ (বয়স ২৭) ডানহাতি - [৩০]
বোলার
নাম প্রদেশ জন্ম তারিখ ব্যাটিংয়ের ধরন বোলিংয়ের ধরন সূত্র
ডব্লিউ. এইচ. অ্যাশলে ওয়েস্টার্ন প্রভিন্স (1862-02-10)১০ ফেব্রুয়ারি ১৮৬২ (বয়স ২৬) বামহাতি বামহাতি মিডিয়াম পেস [৩১]
জি. এ. কেম্পিস নাটাল (1865-08-04)৪ আগস্ট ১৮৬৫ (বয়স ২৩) ডানহাতি বামহাতি মিডিয়াম পেস [৩২]
ডব্লিউ. এইচ. মিল্টন ওয়েস্টার্ন প্রভিন্স (1854-12-03)৩ ডিসেম্বর ১৮৫৪ (বয়স ৩৪) ডানহাতি ডানহাতি (অজানা) [৩৩]
এ. রোজ-ইন্স ট্রান্সভাল (1868-02-16)১৬ ফেব্রুয়ারি ১৮৬৮ (বয়স ২০) ডানহাতি স্লো লেফট আর্ম অর্থোডক্স স্পিন [৩৪]
এ. বি. ট্যানক্রেড গ্রিকুয়াল্যান্ড ওয়েস্ট (1865-08-20)২০ আগস্ট ১৮৬৫ (বয়স ২৩) ডানহাতি ডানহাতি মিডিয়াম পেস [৩৫]
এন. এইচ. থিউনিসেন ওয়েস্টার্ন প্রভিন্স (1867-05-04)৪ মে ১৮৬৭ (বয়স ২১) ডানহাতি ডানহাতি ফাস্ট [৩৬]
সি. এইচ. ভিন্টসেন্ট ট্রান্সভাল (1866-09-02)২ সেপ্টেম্বর ১৮৬৬ (বয়স ২২) বামহাতি বামহাতি মিডিয়াম ফাস্ট পেস [৩৭]

টেস্ট ক্রিকেট

সম্পাদনা

প্রথম টেস্ট

সম্পাদনা

ঐ সময়ে খেলাটি মেজর ওয়ারটন একাদশ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকান একাদশ নামে পরিচিত ছিল। পরবর্তীকালে এটিই স্মারকসূচক টেস্ট খেলার মর্যাদা পায় ও পুণঃনামাঙ্কিত হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম ইংল্যান্ড নামে পরিচিত হয়। পোর্ট এলিজাবেথের সবুজ ম্যাটিং উইকেটে খেলা সম্পন্ন হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ওয়েন ডানেল টসে জয়ী হয়ে অব্রে স্মিথের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। খেলাটি ম্যাটিং উইকেটে দীর্ঘক্ষণ টিকে থাকেনি ও বেশি রান ওঠেনি। খেলার প্রথম দিন প্রায় ৩,০০০ দর্শক উপস্থিত ছিলেন। উইজডেন মন্তব্য করে যে, অ্যাবল ও স্মিথের ন্যায় অল-রাউন্ডার চমৎকার খেলেছেন।

১২–১৩ মার্চ, ১৮৮৯
(৩-দিনের খেলা)
স্কোরকার্ড
উইজডেন
৮৪ (৭৫.২ ওভার)
এ. বি. ট্যানক্রেড ২৯
ও. আর. ডানেল ২৬*
সি. এ. স্মিথ ৫/১৯ (১৩.২ ওভার)
জে. ব্রিগস. ৪/৩৯ (৩৭ ওভার)
১৪৮ (৬৬.২ ওভার)
আর. অ্যাবল ৪৬
এ. রোজ-ইন্স ৫/৪৩ (১৮ ওভার)
১২৯ (৯০.১ ওভার)
এ. বি. ট্যানক্রেড ২৯
এ. জে. ফদারগিল ৪/১৯ (১৮.১ ওভার)
৬৭/২ (২১.১ ওভার)
আর. অ্যাবল ২৩*
জি. ইউলিট ২২
সি. ভিন্টসেন্ট ১/২১ (৮.১ ওভার)
ইংল্যান্ড ৮ উইকেটে বিজয়ী
সেন্ট জর্জেস পার্ক, পোর্ট এলিজাবেথ
আম্পায়ার: সি. আর. ডিয়ার (দক্ষিণ আফ্রিকা; প্রথম দিন) / হেনরি ওয়েবস্টার (ইংল্যান্ড; দ্বিতীয় দিন) ও আর. জি. ওয়ারটন (ইংল্যান্ড)

  • টসে জয়ী হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়
  • নির্ধারিত তিনদিনের খেলাটি সবুজ ম্যাটিং উইকেটে অনুষ্ঠিত হয় ও দ্বিতীয় দিন ১৬:৩০-এর ঠিক পূর্বক্ষণে শেষ হয়ে যায়
  • সি. আর. ডিয়ার প্রথম দিনে আম্পায়ারিত্ব করেন ও দ্বিতীয় দিন হেনরি ওয়েবস্টার তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। দক্ষিণ আফ্রিকার সকল খেলোয়াড় ও ইংল্যান্ডের পক্ষে ছয়জনের একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়।

দ্বিতীয় টেস্ট

সম্পাদনা

দক্ষিণ আফ্রিকা খুবই দূর্বলমানের দল ছিল। জনি ব্রিগস খেলায় মাত্র ২৮ রান দিয়ে পনেরো উইকেট পান। অ্যাবল এ সফরে তার তৃতীয় সেঞ্চুরি করেন। ২৩ বছর ১৪৪ দিন বয়সে বাউডেন ইংল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ অধিনায়কের মর্যাদা লাভ করেন। জ্বরে আক্রান্ত স্মিথের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। ট্যানক্রেড প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করে ২৬ রানে অপরাজিত ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা ফলো-অনের কবলে পড়ে। আবারও তারা খুব দ্রুত অল-আউট হয়। ব্রিগস দ্বিতীয় ইনিংসে প্রাপ্ত উইকেটের সবগুলোই বোল্ড করার মাধ্যমে লাভ করেন।

২৫-২৬ মার্চ, ১৮৮৯
(৩-দিনের খেলা)
স্কোরকার্ড
উইজডেন
২৯২ (১২৩.১ ওভার)
আর. অ্যাবল ১২০
ডব্লিউ. এইচ. অ্যাশলে ৭/৯৫ (৪৩.১ ওভার)
৪৭ (৪৭.১ ওভার)
এ. বি. ট্যানক্রেড ২৬*
জে. ব্রিগস ৭/১৭ (১৯.১ ওভার)
৪৩ (২৮.২ ওভার)
এফ. ডব্লিউ. স্মিথ ১১
জে. ব্রিগস ৮/১১ (১৪.২ ওভার)
ইংল্যান্ড দল ইনিংস ও ২০২ রানে বিজয়ী
নিউল্যান্ডস, কেপ টাউন
আম্পায়ার: জে. এ. ই. হিকসন (ইংল্যান্ড) ও আর. জি. ওয়ারটন (ইংল্যান্ড)

  • টসে জয়ী হয়ে ইংল্যান্ড ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়
  • নির্ধারিত তিনদিনের খেলাটি দুইদিনেই শেষ হয়ে যায়
  • দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে ডব্লিউ. এইচ. অ্যাশলে, ডব্লিউ. এইচ. এম. রিচার্ডস ও এন. এইচ. থিউনিসেন এবং ইংল্যান্ডের পক্ষে জে. ই. পি. ম্যাকমাস্টারের টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Barclays (১৯৮৬)। Swanton, E. W., সম্পাদক। Barclays World of Cricket। London: Willow Books। পৃষ্ঠা 114। আইএসবিএন 0-00-218193-2 
  2. "Tour of South Africa 1888-89"Test Cricket Tours। ৫ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৮ 
  3. Altham, H. S. (১৯৬২)। A History of Cricket, Volume 1 (to 1914)। London: George Allen & Unwin। পৃষ্ঠা 294। 
  4. Major, John (২০০৭)। More Than A Game। London: HarperCollins। পৃষ্ঠা 201আইএসবিএন 978-0-00-718364-7 
  5. Bowen, Rowland (১৯৭০)। Cricket: A History of its Growth and Development। London: Eyre & Spottiswoode। পৃষ্ঠা 134। আইএসবিএন 0-413-27860-3 
  6. Liverman, Dave। "A profile of Frank Hearne"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৮ 
  7. Wisden। Pardon, Charles, সম্পাদক। Wisden Cricketers' Almanack, 27th edition (1890 সংস্করণ)। London: John Wisden & Co. Ltd। 
  8. "The English team in South Africa 1888–89"Wisden Almanack online। ESPNcricinfo। ১৮৯০। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৮ 
  9. "Bobby Abel"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৮ 
  10. "Monty Bowden"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৮ 
  11. "Frank Hearne"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৮ 
  12. "Maurice Read"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৮ 
  13. "George Ulyett"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৮ 
  14. "Harry Wood"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৮ 
  15. "Johnny Briggs"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৮ 
  16. "Arnold Fothergill"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৮ 
  17. "Aubrey Smith"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৮ 
  18. "Charles Coventry"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৮ 
  19. "Basil Grieve"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৮ 
  20. "Emile McMaster"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৮ 
  21. "James Roberts"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৮ 
  22. "Cameron Skinner"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৮ 
  23. "Robert Warton"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৮ 
  24. "Owen Dunell"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৮ 
  25. "Philip Hutchinson"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৮ 
  26. "Arthur Ochse"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৮ 
  27. "Dicky Richards"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৮ 
  28. "Robert Stewart"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৮ 
  29. "Charlie Finlason"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৮ 
  30. "Fred Smith"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৮ 
  31. "Gobo Ashley"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৮ 
  32. "Gus Kempis"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৮ 
  33. "William Milton"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৮ 
  34. "Albert Rose-Innes"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৮ 
  35. "Bernard Tancred"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৮ 
  36. "Nicolaas Theunissen"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৮ 
  37. "Charles Vintcent"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৮ 

আরও পড়ুন

সম্পাদনা