প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট

আন্তর্জাতিক কিংবা ঘরোয়া ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ের খেলা

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলা রাজকীয় খেলা ক্রিকেটের একটি স্তরবিশেষ ও ক্রিকেটের পরিভাষা। সাধারণতঃ পূর্ব নির্ধারিত সময়সূচী অনুযায়ী তিন বা ততোধিক দিন নিয়ে অনুষ্ঠিত খেলা প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলার মর্যাদা লাভ করে। এ খেলায় উভয় দলেই এগারোজন খেলোয়াড় থাকে। অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মাঝে নির্ধারিত মানদণ্ড থাকে ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত হতে হয়। খেলাগুলোতে অবশ্যই দুই দলকে দুইটি করে ইনিংস খেলার মনোভাব বিরাজমান থাকে। অবশ্য দলীয় শক্তিমত্তার উপর একাধিক ইনিংস খেলা নির্ভরশীল।

টেস্ট ক্রিকেট খেলা ক্রিকেটের সর্বোচ্চ স্তরের ও আদর্শ মানদণ্ডরূপে বিবেচিত এবং এটি স্বয়ংক্রীয়ভাবে নিজেই প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট হিসেবে পরিগণিত। তারপরও প্রথম-শ্রেণী পরিভাষাটি সচরাচর ও কেবলমাত্র ঘরোয়া প্রতিযোগিতাতেই সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়ে আসছে। একজন ক্রিকেটারের প্রথম-শ্রেণীর পরিসংখ্যানেও টেস্ট খেলায় সংগৃহীত ব্যক্তিগত পরিসংখ্যান অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

সাধারণতঃ প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলাগুলোয় উভয় দলে এগারোজন করে খেলোয়াড় থাকে। কিন্তু কিছু কিছু ব্যতিক্রমও লক্ষ করা যায়। কমপক্ষে তিনদিনব্যাপী এ ধরনের খেলা পূর্ব নির্ধারিত সময়সূচী মোতাবেক অনুষ্ঠিত হলেও ক্রিকেটের ইতিহাসে এর ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। সময়ের দাবী হিসেবে প্রথম-শ্রেণীর প্রতিযোগিতায় প্রায় সকল খেলোয়াড়ই পেশাদারী মনোভাব নিয়ে খেলে থাকেন। কিন্তু পূর্বে অনেক খেলোয়াড়ই শৌখিন খেলোয়াড়রূপে মাঠে নামতেন। প্রথম-শ্রেণীর দল বলতে ইংরেজ কাউন্টি, অস্ট্রেলীয় রাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকান প্রদেশ, নিউজিল্যান্ড প্রদেশ, কিংবা ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেশগুলোর ন্যায় ভূ-রাজনৈতিক অঞ্চলের খেলাগুলো বোঝানো হয়ে থাকে।

সংজ্ঞার্থ নিরূপণ সম্পাদনা

জিএইচকে ১৮৯৫ সম্পাদনা

১৯৪৭ সালের পূর্ব-পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের সংজ্ঞা ভিন্ন ছিল। মে, ১৮৯৪ সালে গ্রেট ব্রিটেনের লর্ডসে মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি)’র কমিটি ও ১৮৯০ সালে থেকে শুরু হওয়া কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের সাথে জড়িত ক্লাবগুলোর সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ক্লাবগুলোর খেলাগুলো ১৮৯৫ সাল থেকে প্রথম-শ্রেণীর বলে গণ্য করা হয়। এ ক্লাবগুলোর পাশাপাশি এমসিসি, ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ সফরকারী জাতীয় ক্রিকেট দল ও এমসিসি অনুমোদিত অন্যান্য দলগুলোর খেলা প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট হিসেবে বিবেচিত হয়।

আইসিসি ১৯৪৭ সম্পাদনা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলা বাতিল করা হয়। এরপর ১৯৪৫-৪৬ মৌসুমে এ স্তরের ক্রিকেট খেলা পুনরায় শুরু হয়।[১] অবশেষে মে, ১৯৪৭ সালে তৎকালীন ইম্পেরিয়াল ক্রিকেট কনফারেন্স (আইসিসি) আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট পরিভাষাটির সংজ্ঞা নিরূপণ করে। উভয় দলের এগারোজন খেলোয়াড় যদি তিন বা ততোধিক দিনব্যাপী ক্রিকেট খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তাহলে তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের মর্যাদা পাবে। দলের অবস্থান চিহ্নিত করে প্রত্যেক দেশের ক্রীড়া পরিচালনা পরিষদ এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। কিন্তু এ সংজ্ঞাটি তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। এমসিসি গ্রেট ব্রিটেনে অনুষ্ঠিত খেলাগুলোর কর্তৃত্ব বজায় রাখে। সকল উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ১৯৪৭ সালের গৃহীত আইসিসি’র সংজ্ঞায় ১৮৯৫ সালে এমসিসি’র সংজ্ঞাকে একীভূত করা হয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি এবং ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। তারপরও আনুষ্ঠানিক মর্যাদাপ্রাপ্তির জন্য পূর্ণাঙ্গ সদস্যভূক্ত প্রত্যেক দেশের ক্রীড়া পরিচালনা পরিষদ অথবা আইসিসি’র সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল। পরিচালনা পরিষদ আন্তর্জাতিক দলগুলোর প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলার মর্যাদা দেয় এবং ঘরোয়া ক্রিকেটের দলগুলো দেশের সর্বোচ্চ ক্রিকেট মানদণ্ডে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোও এ মর্যাদার দাবীদার। আইসিসি’র সহযোগী দেশভূক্ত দলগুলোও এ মর্যাদা লাভ করতে সক্ষম হবে যদি তাদের প্রতিপক্ষীয় দলগুলো এতে সম্মতি দেয়।

শর্তাবলী সম্পাদনা

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল বা আইসিসি’র প্রদত্ত শর্তাবলী অনুযায়ী একটি খেলা তখনই প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলারূপে গণ্য হবে যদি -

  • পূর্ব-নির্ধারিত তিন বা ততোধিক দিনের হয়
  • প্রতিটি দলে এগারোজন খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করে
  • প্রতিটি দল দুই ইনিংস খেলে
  • কৃত্রিম কিংবা টার্ফ ছাড়া প্রাকৃতিক মাঠে খেলা অনুষ্ঠিত হয়
  • আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হয়
  • ক্রিকেটের আইন অনুযায়ী খেলা অনুষ্ঠিত হয় (ব্যতিক্রম: গুরুত্বহীন ধারা বাদে)
  • উপযুক্ত দেশের ক্রীড়া পরিচালনা পরিষদ অথবা আইসিসি স্বয়ং খেলাটিকে প্রথম-শ্রেণীর মর্যাদা দেয়।

টেস্ট খেলা ৫দিনের ও প্রথম-শ্রেণীর খেলারূপে পরিগণিত। কেবলমাত্র আইসিসির পূর্ণাঙ্গ সদস্য দেশভূক্ত দলগুলো এতে অংশ নেয়। আইসিসিতে তাদের বর্তমান অবস্থান ও আইসিসির শর্তাবলী প্রয়োগের মাধ্যমে টেস্ট খেলা অনুষ্ঠিত হয়।

দুই ইনিংসে সম্পন্ন খেলায় ফলো-অনের নিয়মে ব্যতিক্রম রয়েছে।[২] যদি কোন দল প্রতিপক্ষের প্রথম ইনিংসের তুলনায় দ্বিতীয় ইনিংসে কম রান সংগ্রহ করে তাহলে দলটিকে পুনরায় ব্যাট করতে খেলার তৃতীয় ইনিংসে নামতে হয় অর্থাং, প্রথম ইনিংসের অব্যহতি পরেই পুনরায় ব্যাটিংয়ে নামলে তা ফলো-অন নামে পরিচিতি পায়। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে খেলার দিন সংখ্যার উপর ফলো-অন নির্ধারিত হয়। টেস্টে ২০০ বা ততোধিক রানের পার্থক্যের জন্য ফলো-অন হয়ে থাকে। যদি খেলা তিন বা চারদিনের জন্য অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে এক্ষেত্রে রানের পার্থক্য হবে ১৫০ রান।

স্বীকৃতিপ্রাপ্ত খেলা সম্পাদনা

নিম্নলিখিত খেলা কিংবা প্রতিযোগিতাগুলো প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলা হিসেবে বিবেচিত। এগুলো সংশ্লিষ্ট দেশের ক্রীড়া পরিচালনা পরিষদ আইসিসি’র সংজ্ঞা অনুযায়ী পরিচালনা করে:

টীকা:

  • প্রথম-শ্রেণীর দল নিজ দেশে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এবং সফরকারী টেস্টভূক্ত বিদেশী দলও এর প্রতিপক্ষরূপে পরিচিত। স্থানীয় ক্রিকেট বোর্ডের পূর্ব সিদ্ধান্তমাফিক কিছু প্রথম-শ্রেণীর দল অন্য দেশে খেলতে যায় না।
  • এ দল ও একাদশ দল টেস্ট দলের চেয়ে নিম্নসারির দল। এদলগুলোর খেলাকে সবসময় প্রথম-শ্রেণীর খেলারূপে গণ্য করা হয় না।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Harte, pp. 388–393.
  2. "एविएटर — गेम खेलें और आनंद लें"mostbet.com.in (হিন্দি ভাষায়)। ২০২৩-০৪-২০। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-১৬ 

আরও পড়ুন সম্পাদনা

  • Wisden Cricketers Almanack – 1895 and 1948 issues in particular
  • ACS (১৯৮১)। A Guide to Important Cricket Matches Played in the British Isles 1709 – 1863। Nottingham: ACS। 
  • ACS (১৯৮২)। A Guide to First-Class Cricket Matches Played in the British Isles। Nottingham: ACS। 
  • Altham, H. S. (১৯৬২)। A History of Cricket, Volume 1 (to 1914)। London: George Allen & Unwin। এএসআইএন B0014QE7HQ 
  • Birley, Derek (১৯৯৯)। A Social History of English Cricket। Aurum। 
  • Bowen, Rowland (১৯৭০)। Cricket: A History of its Growth and Development। Eyre & Spottiswoode। 
  • Carlaw, Derek; Winnifrith, John (২০২০)। Kent County Cricketers, A to Z: Part One (1806-1914) (পিডিএফ)। Cardiff: ACS। 
  • Frindall, Bill, সম্পাদক (১৯৯৮)। The Wisden Book of Cricket Records (Fourth সংস্করণ)। Alton, Hampshire: John Wisden & Co. Ltd। আইএসবিএন 978-07-47222-03-3 
  • Haygarth, Arthur (১৯৯৬) [1862]। Scores & Biographies, Volume 1 (1744–1826)। Kennington: Frederick Lillywhite। আইএসবিএন 978-19-00592-23-9 
  • McCann, Tim (২০০৪)। Sussex Cricket in the Eighteenth Century। Sussex Record Society। 
  • Playfair (২০১৮)। Marshall, Ian, সম্পাদক। Playfair Cricket Annual। London: Headline। আইএসবিএন 978-14-72249-82-1 
  • Webber, Roy (১৯৫১)। The Playfair Book of Cricket Records। Playfair Books Ltd। 
  • Wisden (১৯৪৮)। Preston, Hubert, সম্পাদক। Wisden Cricketers' Almanack (85th সংস্করণ)। London: Sporting Handbooks Ltd। 
  • Wisden (২০১৯)। Booth, Lawrence, সম্পাদক। Wisden Cricketers' Almanack (156th সংস্করণ)। London: John Wisden & Co.। আইএসবিএন 978-14-72964-05-2 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা