মরিস রিড

ইংরেজ ক্রিকেটার

জন মরিস রিড (ইংরেজি: Maurice Read; জন্ম: ৯ ফেব্রুয়ারি, ১৮৫৯ - মৃত্যু: ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৯) সারের টেমস ডিটনে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ও পেশাদার ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ছিলেন। ১৮৮২ থেকে ১৮৯৩ সময়কালে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি।

মরিস রিড
Marice Read.jpg
১৮৯৬ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে মরিস রিড
ক্রিকেট তথ্য
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম
ভূমিকাব্যাটসম্যান
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ১৭ ৩৮০
রানের সংখ্যা ৪৬১ ১৪,০০৮
ব্যাটিং গড় ১৭.০৭ ২৪.৬৬
১০০/৫০ ০/২ ১১/৭০
সর্বোচ্চ রান ৫৭ ১৮৬*
বল করেছে ৩,৯১১
উইকেট - ৭৩
বোলিং গড় - ২৪.৭৫
ইনিংসে ৫ উইকেট -
ম্যাচে ১০ উইকেট -
সেরা বোলিং - ৬/৪১
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৮/০ ২১৪/০
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২ আগস্ট ২০১৮

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন মরিস রিড

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটসম্পাদনা

সারের টেমস ডিটনে ৯ ফেব্রুয়ারি, ১৮৫৯ তারিখে মরিস রিডের জন্ম। ১৮৭৯ সালে স্থানীয় টেমস ডিটন ক্রিকেট ক্লাবে যোগ দেন।

১৮৮০ সালে সারের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে মরিস রিডের। এরপর থেকে পরবর্তী পনেরো বছর কাউন্টি দলটির পক্ষে নিয়মিতভাবে খেলতে থাকেন। ১৮৮৬ সালটি তার জন্যে স্বর্ণালী বছর ছিল। ৩৪.৯৭ গড়ে ১,৩৬৪ রান তুলেছিলেন তিনি। তন্মধ্যে দুইটি শতক ও সাতটি অর্ধ-শতকের ইনিংস ছিল তার।

১৮৮৯ সালের প্রথমার্ধ্বে অত্যন্ত ভালো খেলা উপহার দিয়েছিলেন মরিস রিড। ফলশ্রুতিতে ১৮৯০ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের মর্যাদা লাভ করেন তিনি।[১] তবে বছরের শেষদিকে আঙ্গুলের আঘাতের কারণে স্বাভাবিক খেলা উপহার দিতে পারেননি তিনি।

১৮৮৩ সাল বাদে উইকেট সংগ্রহে বেশ ভূমিকা রেখেছেন। ঐ মৌসুমে ২৭টি উইকেট দখল করেছিলেন তিনি। কেন্টের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ৬/৪১ দাঁড় করান।

টেস্ট ক্রিকেটসম্পাদনা

২৮ আগস্ট, ১৮৮২ তারিখে নিজ শহর ওভালে সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক ঘটে তার। ঐ খেলা থেকেই অ্যাশেজের ব্যুৎপত্তি ঘটে।

ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, রিডের অন্তর্ভুক্তি অনেকাংশেই পরীক্ষামূলক পর্যায়ের ছিল। সিরিজের শেষদিকে দুই কিংবা তিনটি সৌভাগ্যসূচক ইনিংস খেললেও তা ঐ গ্রীষ্মের খেলাগুলোয় তেমন প্রভাব ফেলতে পারেননি। টেস্ট শুরুর সপ্তাহখানেক পূর্বে সফরকারীদের বিপক্ষে সতীর্থ পেশাদার ও ইংল্যান্ডের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা বিলি বার্নসকে সাথে নিয়ে ১৫৮ রানের জুটি গড়েন। খেলায় তিনি ১৩০ রান করেন ও দলীয় অধিকাংশ সঙ্গীদের ন্যায় তিনিও চমৎকার অবস্থায় মাঠে নেমেছিলেন।

ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে স্থানীয় খেলোয়াড় হিসেবে ওভালের দর্শকদের হর্ষোৎফুল্ল পরিবেশে তুমুল হাততালির মধ্য দিয়ে মাঠে প্রবেশ করেন। তবে, ফ্রেড স্পফোর্থ সহসাই এ বীরের প্রতি তিনটি মৃত্যু সমতুল্য বোলিং করেন। একটি পাঁজরে, অপরটি হাটুতে ও আরও একটি কনুইয়ে তার বল আঘাত হানে। কমপক্ষে দুই বা তিনবার খেলা থামিয়ে কিছুটা সময় নেন তিনি। অপরাজিত ১৯ রান তুলে দলীয় ইনিংসে দ্বিতীয় সেরা রান তুলেন। অ্যাল্থামের মতে, রিড আউটফিল্ডার হিসেবে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছিলেন। বল রুখতে যথাসম্ভব চেষ্টা চালান ও অস্ট্রেলিয়ার নিশ্চিত বাউন্ডারিগুলো রুখে দিয়ে দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

দ্বিতীয় ইনিংসে ইংরেজ অধিনায়ক মাঙ্কি হর্নবি’র নির্দেশক্রমে ব্যাটিংয়ে স্থান পরিবর্তনের ফলে মাঠে নামতে বাধ্য হন ও অকুতোভয় সিটি স্টাডের পূর্বেই ব্যাটিংয়ে নামেন। এবারো তিনি স্পফোর্থের বলে শূন্য রানে প্যাভিলিয়নে ফেরৎ যান। খেলায় অস্ট্রেলীয়রা সাত রানে জয় পেলে ঘটনাক্রমে অ্যাশেজের সূত্রপাত ঘটে।

অস্ট্রেলিয়া গমনসম্পাদনা

১৮৮৬-৮৭ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। অস্ট্রেলীয়দের অভ্যর্থনায় বিস্মিত হন। এ প্রসঙ্গে তিনি লিখেন যে, দূর্ভাগ্যবশতঃ দুই বা তিনবার ব্যর্থ হলে অস্ট্রেলিয়ায় আপনি পাত্তাই পাবেন না ও দলের বাইরে থাকতে হবে। এমনকি ভালো করলেও এটি ধর্তব্য নয়। ইংল্যান্ডে এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। যদি আপনি স্বীকৃত খেলোয়াড় হন, তাহলে উপর্যুপরি অর্ধ-ডজন শূন্য রান পেলেও দল থেকে বিতাড়িত করা হয় না।

১৮৯৩ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ডের পক্ষে নিয়মিতভাবে খেলতে থাকেন। সৌভাগ্যবশতঃ ঐ বছরে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে লন্ডনের ওভাল টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। তবে ঐ পর্যায়ের ক্রিকেটে তার ব্যাটিং তেমন দর্শনীয় ছিল না।

২৯টি টেস্ট ইনিংসে মাত্র দুইবার পঞ্চাশোর্ধ্ব রান তুলেছিলেন। তবে তার থার্ডম্যান অঞ্চলের ফিল্ডিং বেশ চমৎকার ছিল। এছাড়াও, প্লেয়ার্সের সদস্যরূপে ১৭বার জেন্টলম্যানের বিপক্ষে খেলেছিলেন তিনি।

লোহম্যানের সাথে সম্পর্কসম্পাদনা

জর্জ লোহম্যান এই স্টডার্টসহ মরিস রিড থেকে শুরু করে আর্থার শ্রিউসবারি পর্যন্ত প্রত্যের উপর নজর রাখছিলেন। তাকে ডব্লিউ. জি. গ্রেস রিডের পর দ্বিতীয় স্থানে রেখেছিলেন। তাস্বত্ত্বেও রিড ও লোহম্যান একে-অপরের সেরা বন্ধু ছিলেন ও ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় মগ্ন থাকতেন। অতিরিক্ত বোলিংয়ের প্রেক্ষিতে শারীরিকভাবে ভীষণ অসুস্থ হয়ে যাবার পর লোহম্যান আরোগ্য লাভ করেন ও তাকে সহযোগিতাকল্পে একত্রে ১৮৯২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। সাউদাম্পটন থেকে যীশুর পুণরুত্থান দিবসের পূর্বে জাহাজে চড়েন।

মার্চ, ১৮৯৩ সালে লোহম্যানের স্বাস্থ্যোন্নতি ঘটলে তাকে ছেড়ে দেশে চলে আসেন ও নতুন মৌসুমের খেলায় অংশগ্রহণ করেন। তবে লোহম্যানের স্বাস্থ্যের পুনরায় অবনতি ঘটে ও একপর্যায়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় দেহাবসান ঘটে তার।

অবসরসম্পাদনা

১৮৯৫ সালে সারের সদস্যরূপে ১৩১ রান তুলে হ্যাম্পশায়ারের বিপক্ষে দলকে ইনিংস ব্যবধানে জয়লাভ করতে প্রভূতঃ ভূমিকা রাখেন। ৩৬ বছর বয়সে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেন যা উনবিংশ শতকের মানদণ্ডে বেশ তরুণ অবস্থায় ছিলেন তিনি। এরপর হ্যাম্পশায়ারের টিচবোর্ন পার্কের আবাসন শিল্পে কাজ করেন। এ অবস্থাতেই কম গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটে টিচবোর্ন দলের পক্ষে বেশ সফলতা পেয়েছিলেন।

মূল্যায়নসম্পাদনা

হ্যারি অ্যাল্থাম তার ‘এ হিস্ট্রি অব ক্রিকেট’ গ্রন্থে মরিস রিড সম্পর্কে লিখেছেন যে, টেস্ট খেলা প্রবর্তনের পর থেকে তার ন্যায় উদ্যমী খেলোয়াড়ের বিস্ময়কর ফিল্ডিং সম্পর্কে কিছুই বলার নেই। মারকুটে ব্যাটসম্যানের অধিকারী মরিস রিড সম্পর্কে লর্ড হক মন্তব্য করেন যে, চমৎকার ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি পরিবর্তিত বোলার হিসেবে তার অংশগ্রহণ থাকায় দলে দুশ্চিন্তার কিছুই ছিল না। জর্জ গিফেনের ভাষ্যমতে, তার জানা অন্যতম প্রকৃত ক্রিকেটার ছিলেন মরিস রিড।

ব্যক্তিগত জীবনসম্পাদনা

বৈবাহিক সূত্রে মরিস রিডের আত্মীয় হিথফিল্ড স্টিফেনসন সারে দলের পক্ষে দীর্ঘদিন খেলেছেন। তার ভাই ফ্রেডরিক রিড কাউন্টি দলটির পক্ষে একটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছিলেন।

জীবনের শেষদিকে দীর্ঘদিন অসুখে ভোগেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৯ তারিখে হ্যাম্পশায়ারের উইনচেস্টার এলাকায় ৭০ বছর বয়সে তার দেহাবসান ঘটে।

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. "Wisden Cricketers of the Year"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০২-২১ 

বহিঃসংযোগসম্পাদনা