ফিল্ডিং (ক্রিকেট)
ফিল্ডিং ক্রিকেট খেলায় ব্যাটসম্যান কর্তৃক বলে আঘাতের পর বলটি সংগ্রহে ফিল্ডারদের করণীয়বিশেষ। এরফলে ব্যাটসম্যানের রান সংগ্রহকে সীমিত রাখা হয় বা শূন্য থেকে ক্যাচ নিয়ে বা দৌঁড়ানো অবস্থায় ব্যাটসম্যানকে আউট করা হয়। মাঠে ক্রিকেটের ফিল্ডিং অবস্থান অফসাইড ও লেগসাইডে বিভক্ত করা হয়ে থাকে।
একজন ফিল্ডার বা ফিল্ডসম্যান তার শরীরের যে-কোন অংশ দিয়ে বলকে মাঠে রাখতে পারেন। তবে, খেলা চলাকালীন বলটিকে মাঠে রাখতে হয়, অন্যথায় (যেমন: টুপি ব্যবহার) বলটিকে মৃত ঘোষণা করা হবে ও ব্যাটিংকারী দলকে জরিমানাস্বরূপ ৫ রান দিতে হবে। তবে বলটিকে ব্যাটসম্যান আঘাত করার চেষ্টা না চালালে বা বলকে এড়িয়ে গেলে এটি প্রয়োগ হবে না। ফিল্ডারদের বিষয়ে অধিকাংশ নিয়মই ক্রিকেটের আইনের ৪১ ধারায় বর্ণিত রয়েছে।
টেস্ট ক্রিকেটের শুরুতে ফিল্ডিংকে অগ্রাধিকার দেয়া হতো না এবং অনেক খেলোয়াড়ই ফিল্ডিংয়ে নেমে আড়ষ্টভাব বজায় রাখতো। একদিনের আন্তর্জাতিক খেলা প্রচলনের পর রান বাঁচানোকে সবিশেষ গুরুত্ব দিতে গিয়ে ফিল্ডিং আরও পেশাদারীত্বের পর্যায়ে চলে যায়। ভালোমানের ফিল্ডিংকারী দল তাদের ওডিআই ইনিংসে প্রায়শঃই ৩০+ রান আটকিয়ে দিতে সক্ষম।
ফিল্ডিং অবস্থানের নাম ও অবস্থান
সম্পাদনাকেবলমাত্র ১১জন খেলোয়াড় নিয়ে গড়া একটি দলের অন্যতম হচ্ছেন বোলার ও সচরাচর অন্যজন হচ্ছেন উইকেট-রক্ষক, অন্য নয়জনের ফিল্ডিংয়ের অবস্থান যে-কোন সময় ব্যবহৃত হতে পারে। খেলোয়াড়েরা কোন অবস্থানে থাকবেন ও কৌশলগত কারণে কোনগুলো ফাঁকা থাকবে, তা ফিল্ডিং পক্ষের দলনেতা কর্তৃক নির্ধারিত হয়। ব্যাটসম্যানকে লক্ষ্য করে বোলিংভঙ্গীমায় নিয়োজিত বোলার বাদে অধিনায়ক যে-কোন সময় খেলোয়াড়দেরকে ফিল্ডিং অবস্থানে স্থানান্তর করার ক্ষমতা রাখেন। এ সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে সাধারণতঃ বোলার ও মাঝে-মধ্যে দলের অন্যান্য খেলোয়াড়ের পরামর্শ নিয়ে থাকেন।
মৌলিক ফিল্ডিং অবস্থানের অনেকগুলো নাম রয়েছে। এদের কিছু খুবই সাধারণভাবে ব্যবহার করা হয় এবং অন্যগুলো খুব কমই ব্যবহৃত হয়। তবে, ফিল্ডিং অবস্থান স্থির নয় এবং মৌলিক অবস্থান থেকে ফিল্ডারদের অবস্থান স্থানান্তরিত হতে পারে। অবস্থানের নামকরণ রীতি কিছুটা অজ্ঞাত রয়ে গেছে। কিন্তু, খসড়াভাবে ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক এতে অনুসৃত হয়েছে। লেগ, কভার, মিড-উইকেট শব্দ ব্যাটসম্যানের দিক থেকে কোণ নির্দিষ্ট করা হয় এবং ‘সিলি’, ‘শর্ট’, ‘ডিপ’ বা ‘লং’ ব্যাটসম্যানের দূরত্বকে ঐচ্ছিকভাবে বিশেষণরূপে নির্দেশ করা হয়। ‘ব্যাকওয়ার্ড’, ‘ফরোয়ার্ড’ বা ‘স্কয়ার’ শব্দগুলো কোণকে অন্যভাবে নির্দেশ করে।
একজন ডানহাতি ব্যাটসম্যানের উপর নির্ভর করে চিত্রে অধিকাংশ ফিল্ডিং অবস্থানের নাম দেখানো হয়েছে। (বোলারের মুখোমুখি হওয়া ব্যাটসম্যানের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে) একজন ডানহাতি ব্যাটসম্যানের এলাকার বাম দিকটি লেগ সাইড বা অন সাইড বলে। অন্যদিকে, ডানদিকটি অফ সাইডরূপে বিবেচিত। যদি ব্যাটসম্যান বামহাতি হয়, লেগ ও অফ সাইড বিপরীতমূখী হবে ও ফিল্ডিংয়ের অবস্থান দেখানো চিত্র আয়নায় প্রতিফলিত আকারে হবে।
ক্যাচ নেয়ার অবস্থান
সম্পাদনাকিছু ফিল্ডিং অবস্থান আক্রমণের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। মূলতঃ রান নেয়া বন্ধ করা বা রান তোলার সংগ্রহকে সীমিত রাখার চেয়ে ব্যাটসম্যানকে ক্যাচ আউটে বিদায় করার উদ্দেশ্যে খেলোয়াড়দেরকে রাখা হয়। এ অবস্থানগুলোর মধ্যে স্লিপ রয়েছে যাতে ব্যাটের কিনারের অংশে স্পর্শ করে বলকে গালি, ফ্লাই স্লিপ, লেগ স্লিপ, লেগ গালি, শর্ট ও সিলি অবস্থান থেকে ক্যাচ নেয়া হয়। তন্মধ্যে স্লিপের মধ্যে আবার অনেকগুলো স্লিপ একে-অপরের সাথে পাশাপাশি অবস্থানে থাকে। উইকেট-রক্ষক থেকে পরবর্তীতে বেরিয়ে আসা বিভিন্ন স্লিপ রয়েছে। ফার্স্ট স্লিপ, সেকেন্ড স্লিপ, থার্ড স্লিপ ইত্যাদি স্লিপগুলোকে সম্মিলিতভাবে স্লিপের সারি নামে পরিচিত। এছাড়াও, ব্যাট প্যাড নামে পরিচিত শর্ট লেগ অবস্থানটি মূলতঃ অনিচ্ছাকৃতভাবে ব্যাটের কিনারের অংশ এবং পায়ের প্যাডে আঘাত পেলে বলকে ক্যাচ নেয়ার উদ্দেশ্যে পরিচালিত করা হয়। কেবলমাত্র লেগ সাইডে এটি এক বা দুই মিটার দূরত্বে থাকে।
অন্যান্য অবস্থান
সম্পাদনাঅন্যান্য উল্লেখযোগ্য অবস্থানের মধ্যে রয়েছে:
- উইকেট-রক্ষক
- বাউন্ডারি সীমানায় উইকেট-রক্ষকের পিছনে দণ্ডায়মান অবস্থান লং স্টপ নামে পরিচিত। সাধারণতঃ উইকেট-রক্ষককে অদক্ষ মনে করা হলে ও কখনোই পেশাদার ক্রিকেটে দেখা না গেলে এ অবস্থানের প্রয়োজন পড়ে। এ অবস্থানকে কখনো কখনো অলিখিতভাবে ‘ভেরি ফাইন লেগরূপে’ আখ্যায়িত করা হয়।[১]
- ‘ডিপ কভার’, ‘ডিপ এক্সট্রা কভার’ বা ‘ডিপ মিড-উইকেটের’ বিকল্প নাম হিসেবে ‘সুইপার’ শব্দ ব্যবহার করা হয়। সাধারণতঃ রক্ষণাত্মক ও চার রান রক্ষার্থে এর ব্যবহার ঘটে। বাউন্ডারির কাছে অফ সাইড বা অন সাইডে এ অবস্থান থাকে।
- অলিখিত হাস্যকর পরিভাষা হিসেবে ‘কাউ কর্নার’ অবস্থানটি ‘ডিপ মিড-উইকেট’ ও ‘লং অনের’ মাঝামাঝি জায়গায় থাকে।
- ‘অন দ্য ৪৫’ - লেগ সাইডের ৪৫০ স্কয়ারের পিছনে এক রান ঠেকাতে ব্যবহার করা হয়। ব্যাকওয়ার্ড শর্ট লেগ বা শর্ট ফাইন লেগের বিকল্প ব্যবহার এটি।
এছাড়াও বোলারের ক্ষেত্রে বল ডেলিভারির পর অবশ্যই পিচে দৌঁড়ানো পরিহার করতে হবে। তাই সচরাচর কাছাকাছি এলাকায় ফিল্ডিংরত সিলি মিড অন বা সিলি মিড অফ তিনি চলে যান, তবে কখনোবা পিচের কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান নেন।
মডিফায়ার
সম্পাদনা- এক রক্ষা বা এক নেয়ার মুহুর্ত
- সাধারণতঃ উইকেটের প্রায় ১৫-২০ গজ (১৪-১৮ মিটার) দূর থেকে যতটুকু কাছাকাছি সম্ভব অবস্থান করে ফিল্ডার ব্যাটসম্যানকে দ্রুততার সাথে দৌঁড়ে এক রান সংগ্রহ করা থেকে বিরত রাখেন।
- দুই রক্ষা
- সাধারণতঃ উইকেটের প্রায় ৫০-৬০ গজ (৪৬-৫৫ মিটার) দূর থেকে যতটুকু কাছাকাছি এলাকায় সম্ভব অবস্থান করে ফিল্ডার ব্যাটসম্যানকে দৌঁড়ে দুই রান সংগ্রহ করা থেকে বিরত রাখেন।
- রাইট অন
- আক্ষরিক অর্থে ঠিক বাউন্ডারি সীমানায়।
- ডিপ, লং
- ব্যাটসম্যান থেকে বেশ দূরে।
- শর্ট
- ব্যাটসম্যানের কাছাকাছি।
- সিলি
- ব্যাটসম্যানের খুব কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান। এরফলে তার সমূহ বিপদের আশঙ্কায় রয়েছে।[২]
- স্কয়ার
- পপিং ক্রিজের কল্পিত বর্ধিতাংশ বরাবর অবস্থান করা।
- ফাইন
- পিচের মাঝ বরাবর স্ট্যাম্পের বিভক্ত অংশের কাল্পনিক রেখার বর্ধিতাংশের কাছাকাছি এলাকা। স্কয়ারের পিছনে ফিল্ডারের অবস্থান।
- স্ট্রেইট
- পিচের মাঝ বরাবর স্ট্যাম্পের বিভক্ত অংশের কাল্পনিক রেখার বর্ধিতাংশের কাছাকাছি এলাকা। স্কয়ারের সামনে ফিল্ডারের অবস্থান।
- ওয়াইড
- পিচের মাঝ বরাবর স্ট্যাম্পের বিভক্ত অংশের কাল্পনিক রেখার বর্ধিতাংশের দূরের এলাকা।
- ফরোয়ার্ড
- স্কয়ারের সামনে; বোলার কর্তৃক শেষদিকে দখলকৃত মুখোমুখি এলাকা এবং স্ট্রাইকে অবস্থানকারী ব্যাটসম্যানের অধিকৃত এলাকা থেকে দূরে।
- ব্যাকওয়ার্ড
- স্কয়ারের পিছনে; স্ট্রাইকে অবস্থানকারী ব্যাটসম্যানের অধিকৃত এলাকার মুখোমুখি এলাকা ও বোলারের দখলকৃত এলাকা থেকে দূরে।
এছাড়াও, ধারাভাষ্যকার বা দর্শকেরা মাঠে অবস্থানের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে থাকেন। তারা গালি ‘ইজ এ বিট ওয়াইডার দেন নরমাল’ (যার অর্থ দাঁড়ায় - স্বাভাবিকের চেয়ে তিনি আরও পার্শ্বে চলে গেছেন) বা ‘মিড অফ ইজ স্ট্যান্ডিং টু ডিপ, হি শুড কাম ইন শর্টার’ (যার অর্থ দাঁড়ায় - তিনি অনেকটা দূরে চলে গেছেন এবং ব্যাটসম্যানের কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান গ্রহণ করছেন) বর্ণনাত্মক বাক্যাংশ পরিভাষারূপে প্রায়শঃই ব্যবহার করে থাকেন।
মাঠে অবস্থানে বিধি-নিষেধ
সম্পাদনাফিল্ডারদেরকে মাঠের যে-কোন জায়গায় অবস্থান করানো যেতে পারে। এরজন্য নিম্নলিখিত নিয়ম-কানুন প্রতিপালন করতে হবে। বল করার সময়ে:
- কোন ফিল্ডারই পিচের (উইকেটের মাঝামাঝি এলাকার মূল আবরণ) উপর দাঁড়াতে বা শরীরের কোন অংশ রাখতে পারবে না। যদি তার শরীরের ছায়া পিচে পড়ে তাহলে ব্যাটসম্যান বল খেলার পর (বা খেলার সুযোগ ছিল) নড়তে পারবে।
- উইকেট-রক্ষক বাদে দুইজনের অধিক স্কয়ার লেগের পিছনের এক-চতুর্থাংশ এলাকায় দাঁড়াতে পারবে না। একটি কারণে এ নিয়মের ব্যতিক্রম জানার জন্য বডিলাইন দেখুন।
- কিছু একদিনের খেলায়:
- ইনিংস চলাকালে নির্ধারিত ওভারে (দেখুন - পাওয়ারপ্লে) মাঠে ডিম্বাকৃতি রেখা দ্বারা চিহ্নিত স্থানের বাইরে দুইজনের অধিক ফিল্ডার থাকতে পারবেন না। প্রত্যেক উইকেটের মধ্য স্ট্যাম্প থেকে ৩০ গজের ব্যাসের অর্ধ-গোলাকৃতি কেন্দ্রস্থল গড়ে তোলা হয়। এগুলো পিচের সোজা রেখার সমান্তরাল করে যুক্ত করা হয়। এটি ফিল্ডিং সার্কেল নামে পরিচিত। পাশাপাশি, ঐ ওভারগুলোয় সেখানে অবশ্যই দুইজন ফিল্ডার (উইকেট-রক্ষক বাদে) থাকবেন যা ‘ক্লোজ ক্যাচিং’ অবস্থান নামে পরিচয় বহন করে।
- ইনিংসের বাদ-বাকী সময়ে ফিল্ডিং বৃত্তের বাইরে চারজনের বেশি থাকতে পারবেন না।
- একদিনের ক্রিকেটে সম্পূর্ণই রক্ষণাত্মক অবস্থান থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে ফিল্ডিংকারী দলের এবং কেবলই ব্যাটিং দলকে রান সংগ্রহের দিকে মনোযোগের উদ্দেশ্যে রূপরেখা প্রণীত হয়েছে।
ঐ নিয়মগুলোর কোন একটি লঙ্ঘন করা হলে আম্পায়ার ঐ ডেলিভারিকে নো-বলরূপে ঘোষণা করেন। পাশাপাশি বলটিকে নিয়ে খেলা চলাকালীন এবং স্ট্রাইকারের কাছে আসার পূর্বে কোন খেলোয়াড় বড় ধরনের কোন নড়াচড়া করতে পারবেন না। যদি তা হয়, আম্পায়ার ডেড বলরূপে ঘোষণা করবেন ও সঙ্কেত পাঠাবেন। কাছাকাছি ফিল্ডারেরা স্ট্রাইকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার সাথে সম্পর্কযুক্ত ছোটখাট সমন্বয় ঘটাতে পারবেন। আউটফিল্ডে অবস্থানরত ফিল্ডারেরা স্ট্রাইকার বা স্ট্রাইকারের উইকেট লক্ষ্য করে অগ্রসর হতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে তাই তারা করে থাকেন। তবে, অফ লাইন বা স্ট্রাইকার থেকে দূরে অবস্থানরত অল্প কিছু নড়াচড়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয়রূপে বিবেচনা করা হয়।
মাঠে অবস্থানের কৌশল
সম্পাদনাবোলার ও উইকেট-রক্ষক বাদে কেবলমাত্র নয়জন ফিল্ডারকে মাঠকে ঘিরে রাখতে কোন ধরনের অবস্থান রাখা প্রয়োজন ও কোনখানে খালি থাকবে তা ফিল্ডিংকারী দলের অধিনায়ক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। ফিল্ডারদের সাজানোর বিষয়টি ফিল্ডিংকারী দলনেতার অন্যতম প্রধান কৌশলগত বিষয়।
আক্রমণাত্মক ও রক্ষণাত্মক
সম্পাদনাফিল্ডিংকারী দলনেতার জন্য প্রধান সিদ্ধান্ত গ্রহণ হচ্ছে ‘আক্রমণাত্মক’ ও ‘রক্ষণাত্মক’ ফিল্ডিংয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা অন্যতম। যে অবস্থান থেকে শুধুই ক্যাচ নেয়া এবং ব্যাটসম্যানকে আউট করার উদ্দেশ্য থাকে, তবে তা আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং নামে পরিচিত। এ ধরনের ফিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রে অনেক ফিল্ডার ব্যাটসম্যানকে ঘিরে অবস্থান নেয়। এক্ষেত্রে সাধারণতঃ তারা উভয় দিকের স্লিপ শর্ট লেগ অবস্থানে থাকেন।
রক্ষণাত্মক ফিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রে মাঠের অধিকাংশ এলাকাই ফিল্ডারেরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকেন। এরফলে ব্যাটসম্যানকে বড় ধরনের রান সংগ্রহের ক্ষেত্র তৈরি করা বেশ কষ্টকর হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে সাধারণতঃ ব্যাটসম্যান থেকে বেশ দূরে ও তাকে কেন্দ্র করে যেস্থানে তিন বেশি বলকে মারতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন সেখানে তারা অবস্থান করেন।
অনেকগুলো বিষয়কে ঘিরে ফিল্ডিংয়ের অবস্থান সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তন্মধ্যে, খেলার কৌশলগত অবস্থা; কোন বোলার বোলিং করছেন; কতক্ষণ ধরে ব্যাটসম্যান অবস্থান করছেন; বলের আবরণ; উইকেটের চরিত্র; আলো বা খেলার বিরতীকালের জন্য কতটুকু সময় বাকী রয়েছে ইত্যাদি।
কিছু সাধারণ বিষয়:
- আক্রমণ ...
-
- ... নতুন ব্যাটসম্যান
- ইনিংসের শুরুতে ব্যাটসম্যানের মনোযোগিতার অভাবে ভুল হিসাব বা অগোছালো শটে পূর্ব থেকেই অবস্থানকারী ফিল্ডারের কাছে ক্যাচ দিতে পারেন।
- ... নতুন বলে
- নতুন বলে ফাস্ট বোলাররা সর্বাধিক সুইং ও বাউন্স দিয়ে থাকেন। এরফলে কোন ভুল না করে ব্যাট করা কঠিনতর হয়ে পড়ে।
- ... খেলার বিরতি থেকে ফিরে
- বিরতির পর (নতুন অধিবেশন, খারাপ আবহাওয়া, আঘাতপ্রাপ্তি ইত্যাদি) খেলা পুনরায় শুরু হলে ব্যাটসম্যানকে অবশ্যই অবস্থানের জন্য ব্যাটিংয়ে ছন্দ নিয়ে আসতে হয়। এ সময় তারা আরও কিছুটা ভুল করে থাকেন।
- ... মানসম্পন্ন বোলারের ক্ষেত্রে
- দলের সেরা বোলারদের বল মোকাবেলা করা বেশ কষ্টদায়ক। ফলে তারা আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়ে সর্বাধিক সুবিধা নিতে পারে।
- ... বোলারকে পিচ সহায়তা করলে
- আর্দ্রতাপূর্ণ পিচে বল হাতে ফাস্ট বোলারেরা বল হাতে অপ্রতিরোধ্য সীমে ছন্দোময় বোলিং করেন। শুষ্ক অবস্থায় ফেঁটে যাওয়া পিচে স্পিন বোলাররা অপ্রতিরোধ্য স্পিন এবং স্যাঁতসেঁতে, তমসাবৃত অবস্থায় সুইং বোলাররা সহায়তা পান। তিন অবস্থার সবকটিতেই শূন্যে ক্যাচ আসার সম্ভাবনা যথেষ্ট থাকে। এরফলে কাছাকাছি এলাকায় আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজাতে হয়।
- ... ব্যাটিং দল চাপে পড়লে
- ব্যাটিংকারী দল দূর্বলমানের ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করলে বা মনোবল নিম্নমানের পরিলক্ষিত হলে মাঠে আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়ে চাপ বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
- ... ড্রয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং দল খেললে
- প্রথম-শ্রেণীর খেলায় ব্যাটিং দলকে দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হবে ও খেলার তেমন সময় বাকী নেই, এ অবস্থায় পাশের দিকে বল এবং রান নিয়ন্ত্রণের চেয়ে খেলা শেষ করা জরুরী।
- প্রতিরক্ষা...
-
- ... ব্যাটসম্যান স্থায়ীভাবে অবস্থান করলে
- যখন ব্যাটসম্যানদ্বয় দীর্ঘসময় ধরে অবস্থান করেন ও বোলিংয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তখন তাদেরকে আউট করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। এ সময়ে প্রায়শঃই প্রতিরক্ষাকল্পে সেরা কৌশল অবলম্বন করা হয় ও রান সংগ্রহের হারকে জোরপূর্বক নিচের দিকে নামিয়ে আনার চেষ্টা চালানো হয় যাতে ব্যাটসম্যান খেলায় ফিরে আসার জন্য অগোছালো শট মারতে উদ্বুদ্ধ হয়।
- ... ব্যাটিংকারী দলের দ্রুত রান সংগ্রহের দরকার পড়লে
- এ অবস্থায় ব্যাটিংকারী দলকে জয়ের জন্য বা সুবিধা লাভের (যেমন: সীমিত ওভারের ইনিংসের শেষদিককার ডেথ ওভারগুলোয়) লক্ষ্যে দ্রুতগতিতে রান তোলার চেষ্টা চালালে ব্যাটসম্যানকে আউট করার চেয়ে রান সংগ্রহকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালানো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।
- ... যখন ব্যাটিংকারী দল দ্রুতগতিতে রান তোলে
- যদি ব্যাটসম্যান দ্রুতগতিতে রান সংগ্রহে নিজেকে মনোনিবেশ ঘটায়, এ সময় তারা আউটের অনেকগুলো সুযোগ সৃষ্ট করে। ফলে রান সংগ্রহের হারকে কমানোর চেষ্টা চালাতে হবে।
- ... যখন বোলারকে বল ও পিচ সহায়তা না করে
- যখন বল তেমন কার্যকরী হয় না এবং ব্যাটসম্যান প্রতিবারই স্বাচ্ছন্দ্যে মোকাবেলা করে, তখন শেষ ভরসা হিসেবে যতটুকু সম্ভব কাছাকাছি এলাকায় ক্যাচ ধরার উদ্দেশ্যে ফিল্ডারদেরকে অবস্থান করাতে হবে।
- ’ ... যখন দূর্বলমানের বোলারদেরকে ব্যবহার করা হয়: কোন কারণে অপেক্ষাকৃত দূর্বলমানের বোলারদেরকে বল করানো হলে সেরা কৌশল হিসেবে প্রায়শঃই সম্ভাব্য ক্ষতি এড়ানোর লক্ষ্যে মুক্তভাবে রান তোলাকে সীমিত পর্যায়ে রাখতে হবে।
অফ- ও লেগ-সাইডে ফিল্ডিং
সম্পাদনাপিচের প্রত্যেক পার্শ্বে কতজন ফিল্ডারের অবস্থান থাকবে তা অন্যতম বিবেচ্য বিষয়রূপে আখ্যায়িত করা হয়। নয়জন ফিল্ডারকে অবস্থান গ্রহণের জন্য এই বিভাজন অবশ্যই অসমান হবে তবে বৈষম্যের ক্ষেত্রে এর তারতম্য নির্ভরশীল।
মাঠের অবস্থানের ক্ষেত্রে অফ-সাইড ও লেগ-সাইডে ফিল্ডারদের সংখ্যাকে সংক্ষেপে রাখা হয়। এক্ষেত্রে অফ-সাইডকে সর্বাগ্রে রাখা হয়। উদাহরণস্বরূপ: ৫-৪ বলতে অফসাইডে ৫ ও লেগসাইডে ৪-কে বুঝানো হয়।
সচরাচর অধিকাংশ ফিল্ডারই অফ-সাইডে অবস্থান করে থাকেন। মূলতঃ অধিকাংশ বোলারই তাদের ডেলিভারিগুলোকে রেখার দিকে বা অফ স্ট্যাম্পের বাইরে রাখতে সচেষ্ট হবার দিকে মনোনিবেশ ঘটান। তাই অধিকাংশ শটই অফ-সাইডের দিকে হয়ে থাকে।
আক্রমণকালে সেখানে ৩ বা ৪ স্লিপ এবং ১ বা ২জনকে গালিতে রাখা যেতে পারে। সম্ভাব্যক্ষেত্রে কেবলমাত্র ঐ এলাকায় ছয়জন ফিল্ডারকে ব্যবহার করা যায়। সাধারণতঃ মিড অফ, মিড অন ও ফাইন লেগকে সহায়তায় ৭-২ আকারে ফিল্ডিং হতে পারে। যদিও কেবলমাত্র দুইজন ফিল্ডার লেগ সাইডে থাকেন, তারা পারস্পরিক সম্পর্কযুক্তভাবে দীর্ঘক্ষণ বোলারকে অফ স্ট্যাম্পের বাইরের রেখাকে অনুসরণ করে খুব কমই সহায়তা করেন। এজাতীয় ফিল্ডিং উইকেটের সামনে বিশাল ফাঁকা স্থান পূরণে সক্ষম। আশা করা যায় যে উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ব্যাটসম্যান সেখান দিয়ে অগোছালোভাবে আক্রমণ শানবেন ও বল স্পর্শ করে অপেক্ষারত ফিল্ডারদের হাতে ক্যাচে পরিণত হবেন।
ফিল্ডিংয়ের আরও আক্রমণাত্মক কার্যক্রম বাস্তবায়নে ফিল্ডারেরা স্লিপের বাইরে যেতে পারেন ও গালি এলাকাকে দখলে রাখতে ৬-৩ ও ৫-৪ পদ্ধতিতে অগ্রসর হতে পারেন।
কোন বোলার বিশেষতঃ লেগ স্পিন বোলার ব্যাটসম্যানের পায়ের দিক লক্ষ্য করে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়ার মাধ্যমে স্ট্যাম্পিং করার চেষ্টা চালালে তাকে পা বরাবর বল করতে হবে বা লেগ সাইডে ক্যাচ দেয়ার দিকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে ৪-৫ পদ্ধতিতে ফিল্ডিং সাজানো যেতে পারে। তেব এটি দেখতে অপ্রত্যাশিত মনে হবে যে লেগ সাইডে ৫জন ফিল্ডার মজুদ করা হয়েছে। কেননা, স্কয়ার লেগের পিছনে দুইজন ফিল্ডারের বেশি অবস্থান করার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
কখনোবা একজন স্পিনার লেগ তত্ত্ব অনুসারে বোলিং করে থাকেন এবং লেগ সাইডে সাতজন ফিল্ডারকে দাঁড় করান। লেগ স্ট্যাম্প বরাবর বেশ দূরত্ব বজায় রেখে তার এ বোলিং রান সংগ্রহ করা থেকে বিরত রাখে। প্রায়শঃই বলটি অনেক দূর দিয়ে যাবার ফলে ব্যাটসম্যান বলে আঘাত করতে ব্যর্থ হন এবং আনঅর্থোডক্সের চেষ্টা চালানোয় অফসাইডেও মারতে পারছেন না। ফলশ্রুতিতে রিভার্স সুইপ বা পুলের ন্যায় অগোছালো শট অথবা একহাতের উপর জোর দিয়ে মারার চেষ্টা চালান। ব্যাটসম্যান লেগ সাইড থেকে অফ সাইডে মারা থেকে নিজেকে বিরত রাখেন কিন্তু তাদের স্ট্যাম্প রক্ষার্থে এটি করে থাকেন।
ফাস্ট ও স্লো বোলারদের ক্ষেত্রে বিপরীত কৌশল অবলম্বন করা হয়। এক্ষেত্রে সাত বা আটজন ফিল্ডারকে অফসাইডে রাখা হয় ও অফ স্ট্যাম্পের বেশ বাইরে বল ফেলা হয়। ব্যাটসম্যান স্ট্যাম্পে বল আঘাত হানবে না ভেবে বেশ নিরাপদে ও ভীতিহীন অবস্থায় বলটিকে ছেড়ে দিতে পারেন। কিন্তু কোন রান তিনি সংগ্রহ করতে পারবেন না। যদি তারা রান সংগ্রহ করতে চায় তাহলে তাদেরকে চেষ্টা চালাতে হবে ও ঝুঁকিপূর্ণভাবে ওয়াইড বলকে ব্যাটের প্রান্তদেশে লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে অফসাইডের দিকে বল যাবে অথবা চেষ্টা চালিয়ে ও স্ট্যাম্পের বেশ দূর থেকে বলকে টেনে এনে লেগ সাইডের জনহীন এলাকায় মারতে হবে।
আরেকটি আক্রমণাত্মক অবস্থান হচ্ছে লেগ সাইডে ফাঁদ বসানো। এতে ডিপ স্কয়ার ও ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ এলাকার বাউন্ডারির কাছাকছি ফিল্ডারেরা এতে জড়িত থাকেন। এক্ষেত্রে বোলার বাউন্সার মেরে ব্যাটসম্যানকে শূন্যে হুক মেরে খেলার জন্য উৎসাহিত করেন। ধীরগতির বোলারের জন্য ব্যাটের পিছনের দিকে স্কয়ার এলাকার ১০-১৫ মিটার দূরে ফিল্ডারকে অবস্থান করান। লেগ গ্ল্যান্স ও সুইপের চেষ্টার ফলে তা ক্যাচে পরিণত হয়।
প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জামাদি
সম্পাদনাউইকেট-রক্ষক বাদে ফিল্ডিংকারী দলের অন্য কোন সদস্য গ্লাভস বা বহিরাংশের পায়ের জন্য গার্ড পরিধান করতে পারবে না। তবে, ব্যাটের কাছাকছি এলাকায় ফিল্ডিংরত নির্দিষ্ট কয়েকজন খেলোয়াড় শিন রক্ষণে, কুঁচকি রক্ষার্থে (বক্স) ও বুকে আঘাতপ্রাপ্তি থেকে বাঁচত তাদের পোশাকের অভ্যন্তরে রক্ষাকবচ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। উইকেট-রক্ষক ছাড়া কেবলমাত্র আম্পায়ারের সম্মতিক্রমে হাত বা আঙ্গুল বাঁচাতে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
ফিল্ডারদেরকে হেলমেট বা মুখের প্রতিরক্ষার্থে গার্ড ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়। সাধারণতঃ সিলি পয়েন্ট বা সিলি মিড-উইকেট এলাকায় অবস্থানরত ফিল্ডাররা তা ব্যবহার করেন। ঐ এলাকায় ব্যাটসম্যান শটটি স্বল্প সময়ে সরাসরি তাদের মাথায় আঘাতের সম্ভাবনা রয়েছে। অস্বস্তি এড়াতে ও আঘাতের ঝুঁকি থেকে রেহাই পেতে প্রায়শঃই দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্যকে হেলমেটের অধীনে বা চোখের পাতা ঢাকার অধীনে এ স্থানে রাখা হয়। যদি এক প্রান্তেই অনেকগুলো ওভারে হেলমেট ব্যবহার করা হয় তাহলে এটি উইকেট-রক্ষকের পিছনে রাখা হয়। কিছু মাঠে পিচের তলদেশে ১মি×১মি×১মি আকারের অস্থায়ী গহ্বর ঘাসে ঢাকা অবস্থায় উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে নির্মাণ করা হয়। সেখানে ফিল্ডিং দলের জন্য হেলমেট, শিন প্যাড বা পানীয় রাখার সুযোগ রয়েছে। ফিল্ডারের শিরস্ত্রাণে বল স্পর্শ করলে ব্যাটিং দল ৫টি অতিরিক্ত রান পাবে। তবে বলকে পূর্বে ব্যাটসম্যান স্পর্শ করার চেষ্টা না করলে বা বল থেকে দূরে থাকলে তা পড়লে এটি কার্যকর হবে না। ১৯শ শতাব্দীতে এ আইনের প্রবর্তন করা হয় মূলতঃ ফিল্ডারদেরকে অখেলোয়াড়ীসূলভ টুপি (প্রায়শঃই শীর্ষ টুপি) ব্যবহার করে ক্যাচ ধরার প্রয়াস থেকে বিরত রাখতে।
ক্রিকেট বল বেশ শক্ত ও ব্যাটের উচ্চগতির স্পর্শে দূরে যায়, তাই সমূহ আঘাত থেকে রক্ষার্থে প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জামাদি ব্যবহারের নির্দেশনা রয়েছে। ক্রিকেটে কিছু মৃত্যুর ঘটনা[৩] ঘটলেও তা অত্যন্ত বিরল এবং প্রায়শঃই তা ফিল্ডিংয়ের সাথে সম্পৃক্ত নয়।[৪]
ফিল্ডিংয়ে দক্ষতা
সম্পাদনাক্রিকেটে ফিল্ডিংয়ের জন্য বেশ কিছুসংখ্যক দক্ষতার প্রয়োজন।
কাছাকছি এলাকায় ক্যাচ ধরার জন্য খুব দ্রুততার সাথে উচ্চমানে ক্ষমতাশৈলীর প্রয়োজন পড়ে। ক্যাচগ্রহীতার জন্য গভীর মনোযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। পুরো খেলায় তিনি হয়তোবা একটিমাত্র ক্যাচ নেয়ার ক্ষেত্রে দক্ষতা দেখাতে পারেন, কিন্তু তার এ ক্যাচ নেয়ায় সফলতা খেলায় উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।
ইনফিল্ডার ফিল্ডিং ব্যবস্থা ব্যাটসম্যান থেকে ২০ থেকে ৪০ গজ দূরে হয়ে থাকে। এ সময়ে বলকে বেশ জোড়ালোভাবে আঘাত করা হয় ও চমৎকার অ্যাথলেটময় ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শসহ সাহস নিয়ে তাদের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া বলকে থামানোর প্রয়োজন পড়ে। ইনফিল্ডে ক্যাচের এলাকা বেশ সহজ, ধীরগতিতে নড়াচড়া করে সুযোগ গ্রহণ করার মাধ্যমে তা ডলি নামে পরিচিত। জোড়ালোভাবে মারা বলগুলোর জন্য দর্শনীয় ডাইভিং ক্যাচ নেয়ার সক্ষমতা দেখাতে হয়। অবশেষে, ইনফিল্ডাররা ক্রিকেট খেলায় রান আউটের ক্ষেত্রে প্রধান নিয়ামক শক্তি এবং তাদের বল দ্রুত ধরার সক্ষমতা, একে সোজা ও জোড়ালোভাবে স্ট্যাম্প বরাবর সরাসরি নিক্ষেপ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকারূপে বিবেচিত।
আউটফিল্ডাররা ব্যাট থেকে অনেক দূরে অবস্থান করেন। সচরাচর তারা সীমানার ডান প্রান্তে থাকেন। তাদের প্রধান কাজই হচ্ছে বলকে বাউন্ডারি এলাকার উপর দিয়ে বলকে আটকানো এবং চার বা ছয় রান নেয়া থেকে দলকে রক্ষা করা। তাদের পায়ের চমৎকার গতিময়তার প্রয়োজন রয়েছে যাতে মাঠে দ্রুতগতিতে বিচরণ করতে পারেন এবং শক্তিশালী বাহুর সাহায্য নিয়ে ৫০-৮০ গজ দূর থেকে বল নিক্ষেপ করতে পারেন। এছাড়াও আউটফিল্ডাররা প্রায়শঃই ইনফিল্ড এলাকা অতিক্রম করে জোড়ালোভাবে মারা উঁচু বলকে ক্যাচে পরিণত করেন।
ফিল্ডিংয়ে বিশেষত্ব
সম্পাদনাঅনেক ক্রিকেটারই তাদের কোন এক ফিল্ডিং অবস্থানে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে থাকেন এবং সচরাচর তাদেরকে সেখানেই দেখা যায়:
- স্লিপ ও ব্যাট প্যাডের জন্য দ্রুত প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজন পড়ে। ব্যাটের প্রান্ত স্পর্শ করে বলের ঘূর্ণায়মানতাকে রুখার প্রত্যাশা ও গভীর একাগ্রতা এর সাথে জড়িত। অধিকাংশ শীর্ষসারির স্লিপ ফিল্ডারেরা বীরেন্দ্র শেওয়াগ, গ্রেইম স্মিথ ও রাহুল দ্রাবিড়ের ন্যায় শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হয়ে থাকেন (ব্যতিক্রম হিসেবে শেন ওয়ার্ন, অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ ও গ্রেইম সোয়ান এর বাইরে রয়েছেন) ও তাদের দক্ষতায় চমৎকারভাবে হাত-চোখের সমন্বয় লক্ষ্য করা যায়। উইকেট-রক্ষক এবং ব্যাট প্যাড অবস্থায় সাধারণতঃ দলের খাঁটো খেলোয়াড়দেরকে দেখা যায়।
- পেস বোলারদেরকে তাদের বোলিংয়ে ওভার সম্পন্ন করার মাঝামাঝি সময়ে প্রায়শঃই থার্ড ম্যান, ফাইন লেগ এবং ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার এলাকায় ফিল্ডিং করতে দেখা যায়। এ অবস্থানে থাকার প্রধান কারণ হলো তারা তাদের নির্ধারিত বোলিংয়ের ওভার সম্পন্ন করার জন্য প্রান্তে সঠিক অবস্থানে রয়েছেন। তাদেরকে বাদ-বাকী ওভার করার জন্য একটু বেশি বিশ্রামের প্রয়োজন পড়ে ও তুলনামূলকভাবে স্বল্প ফিল্ডিং প্রতিক্রিয়ায় অংশ নিতে দেখা যায়। এছাড়াও তারা দূর এলাকা থেকে নিখুঁতভাবে বল ছুড়ার সক্ষমতা দেখিয়ে থাকেন।
- খেলোয়াড়েরা প্রায়শঃই মাঠে ইনফিল্ড এলাকা বিশেষ করে পয়েন্ট, কভা ও মিড-উইকেট এলাকা থেকে তাদের কর্মতৎপরতা, ক্ষিপ্রময়তা, মাঠে ডাইভিং ও নিখুঁতভাবে বল নিক্ষেপের জন্য উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে থাকেন।
তবে, খুব কমসংখ্যক খেলোয়াড়ই শুধুমাত্র তাদের ফিল্ডিং দক্ষতার কারণে দলের সদস্য হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন। সকল খেলোয়াড়ই দলে স্থান পাকাপোক্ত করতে শুধুই বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান বা বোলার (বা উভয়ই) হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। উইকেট-রক্ষকদের ক্ষেত্রেও এটি প্রয়োগ ঘটানো হয়। তারা সাধারণতঃ মাঝারি সারির ব্যাটসম্যান হিসেবে উপযুক্ত হন। যদি দলে একাধিক উইকেট-রক্ষক থাকে তাহলে মাঠে বিকল্প হিসেবে খেলেন। এছাড়াও কিছুসংখ্যক উইকেট-রক্ষক বোলিং করার জন্যও আমন্ত্রিত হন।
ক্রিকেট বল নিক্ষেপ
সম্পাদনাবিশেষ করে এ খেলার শুরুর দিকে ক্রিকেট বলকে অধিকতর দূরে নিক্ষেপের জন্য অনেক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৮৮২ সালের মধ্যে ডারহাম স্যান্ডস রেসকোর্সে কোন এক রবার্ট পার্সিভাল ১৪০ গজ দুই ফুট (১২৮.৭ মিটার) দূরত্বে বল নিক্ষেপ করে রেকর্ড স্থাপন করেন যা উইজডেনে উল্লেখ রয়েছে। এসেক্সের সাবেক অল-রাউন্ডার ইয়ান পন্ট ১৯৮১ সালে কেপটাউনে ১৩৮ গজ (১২৬.১৯ মিটার) দূরত্বে বল ফেলেছিলেন। অসমর্থিত প্রতিবেদনে জানা যায় যে, ১৯৬৮ সালের অলিম্পিক স্বর্ণপদক বিজয়ী, অ-ক্রিকেটার বর্শা নিক্ষেপক জানিস লুসিস একদা ১৫০ গজ দূরে বল ফেলেছিলেন।[৫]
বিশেষজ্ঞ ফিল্ডিং কোচ
সম্পাদনাপেশাদারী ক্রিকেটে বিশেষজ্ঞ ব্যাটিং ও বোলিং কোচ নিয়োগের প্রবণতার সাথে মিল রেখে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিশেষজ্ঞ ফিল্ডিং কোচের ব্যবহার বেশ প্রচলিত। ক্রিকেটে বর্তমানে সর্বাধিক জনপ্রিয় ফিল্ডিং কোচ হিসেবে রয়েছেন:
- জুলিয়েন ফাউন্টেন (সাবেক ক্রিকেটার ও ব্রিটিশ অলিম্পিক বেসবল খেলোয়াড়। ১৯৯৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলে যোগ দেন। বর্তমানে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের ফিল্ডিং কোচের দায়িত্বে রয়েছেন।)[৬]
- মাইক ইয়ং (সাবেক পেশাদার বেসবল খেলোয়াড়, ম্যানেজার ও কোচ। ২০০১ সালে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলে যোগ দেন।)
- রিচার্ড হালসল (সাবেক পিই শিক্ষক ও জিম্বাবুয়ের সাবেক পেশাদার ক্রিকেটার। ২০০৮ সালে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলে যোগ দেন।)
- ট্রেভর পেনি (জিম্বাবুয়ের সাবেক পেশাদার ক্রিকেটার। ২০০৫ সালে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলে যোগ দেন।)
- গ্রেগ ব্লিউইট (সাবেক পেশাদার ক্রিকেটার। ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায় যোগ দেন।)
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Bluffer's Guide to Cricket"। ২৩ জুলাই ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।
- ↑ 'silly, adj., n., and adv' (definition 5d), Oxford English Dictionary
- ↑ On February 20, 1998, Raman Lamba fielding at forward short-leg without a helmet on, was struck on the forehead.
- ↑ On November 25, 2014, Phil Hughes batting with a helmet on, suffered a blow to the back of the neck.
- ↑ Wisden 2012, p. 1383.
- ↑ Good move by Windies Board[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] Cricinfo retrieved 3 November 2009