রশিদ চৌধুরী

বাংলাদেশী চিত্রশিল্পী এবং অধ্যাপক
(রশিদ হোসেন চৌধুরী থেকে পুনর্নির্দেশিত)

রশিদ হোসেন চৌধুরী, যিনি রশিদ চৌধুরী নামে পরিচিত, (১ এপ্রিল ১৯৩২–১২ ডিসেম্বর ১৯৮৬) ছিলেন বাংলাদেশী চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, লেখক এবং অধ্যাপক। বাংলাদেশে শিল্পচর্চার ক্ষেত্রে জয়নুল আবেদীন প্রবর্তিত উত্তর-উপনিবেশিক পর্বে সৃজনশীল ও মৌলিকত্বে তিনি ছিলেন সর্বজন প্রশংসিত ব্যক্তিত্ব। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রজন্মের শিল্পীদের মধ্যেও অন্যতম[১] এবং পঞ্চাশের দশকে বাংলাদেশের আধুনিক শিল্প-আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে স্বকীয় শিল্পচর্চার সূচনা করেছিলেন।[২]

রশিদ চৌধুরী
রশিদ চৌধুরীর আলোকচিত্র
রশিদ চৌধুরীর আলোকচিত্র
জন্ম
রশিদ হোসেন চৌধুরী

(১৯৩২-০৪-০১)১ এপ্রিল ১৯৩২
মৃত্যু১২ ডিসেম্বর ১৯৮৬(1986-12-12) (বয়স ৫৪)
ঢাকা, বাংলাদেশ
মৃত্যুর কারণফুসফুসের ক্যান্সার
সমাধিবাংলাদেশ
জাতীয়তা
অন্যান্য নামকনক
নাগরিকত্ব
  • ব্রিটিশ ভারতীয় (১৯৩২-১৯৪৭)
  • পাকিস্তানি (১৯৪৭-১৯৭১)
  • বাংলাদেশী (১৯৭১-১৯৮৬)
শিক্ষাস্নাতকোত্তর
মাতৃশিক্ষায়তন
পেশা
  • চিত্রশিল্পী
  • ভাস্কর
  • লেখক
  • অধ্যাপক
কর্মজীবন১৯৬০–১৯৮৬
পরিচিতির কারণতাপিশ্রী মাধ্যমে অনন্য অবদান
উল্লেখযোগ্য কর্ম
নিচে দেখুন
আদি নিবাসফরিদপুর জেলা
দাম্পত্য সঙ্গী
  • অ্যানি (বি. ১৯৬২; বিচ্ছেদ. ১৯৭৭)
  • জান্নাত (বি. ১৯৭৭; মৃত্যুপূর্ব ১৯৮৬)
সন্তান
  • রোজা
  • রীতা
পিতা-মাতা
  • খানবাহাদুর ইউসুফ হোসেন চৌধুরী (পিতা)
  • শিরিন নেসা চৌধুরানী (মাতা)
পুরস্কারএকুশে পদক
১৯৭৭
(আরও দেখুন)

ভারত উপমহাদেশে, বিংশ শতাব্দীর তাপিশ্রী শিল্পী হিসেবে তিনি অন্যতম অগ্রগামী।[৩][৪] এ-মাধ্যমেই তিনি সর্বাধিক মৌলিক এবং আধুনিক শিল্পধারার চর্চাকারী হিসেবে অগ্রগণ্য। তাপিশ্রীর পাশাপাশি প্রচলিত তেলরঙ ছাড়াও তিনি কাজ করেছেন টেম্পেরা, গুয়াশ এবং জলরঙ ইত্যাদি অপ্রচলিত মাধ্যমসমূহে। দেশে এবং বিদেশে বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি এবং রাষ্ট্রীয় ও সাধারণ ভবনসমূহে তাপিশ্রী মাধ্যমে বহুসংখ্যক কাজ করেছেন তিনি। এই তাপিশ্রী শিল্পে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৭৭ সালে তাকে বাংলাদেশের জাতীয় এবং সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক এবং ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার প্রদান করা হয়।

রশিদ বিশ্বশিল্পের প্রাণকেন্দ্র মাদ্রিদ এবং প্যারিসে শিল্প বিষয়ক শিক্ষা গ্রহণ করায় তার শিল্পকর্মে পশ্চিমা আধুনিক শিল্পের আঙ্গিক এবং প্রাচ্যের দেশজ ঐতিহাসিক শিল্পের অবয়ব ও বর্ণের উল্লেখযোগ্য সমন্বয় ঘটেছে। তৎকালীন সময়ে ঢাকায় রঙের খুব আক্রা থাকলেও রং ব্যবহারে তার কার্পণ্য ছিল না। তার শিল্পদর্শনে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ আধুনিক শিল্পের দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়। বাংলাদেশে শিল্প আন্দোলনের পাশাপাশি শিল্প-শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তোলার পেছনেও রয়েছে তার বিশেষ অবদান। তার অনেক শিল্পকর্ম বর্তমানে দেশের ও বিদেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং ব্যক্তিগত সংগ্রহে সংরক্ষিত রয়েছে।

জীবনী সম্পাদনা

প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা সম্পাদনা

রশিদ হোসেন চৌধুরী ১৯৩২ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমানে বাংলাদেশ) ফরিদপুর জেলার (বর্তমানে রাজবাড়ি) রতনদিয়া গ্রামের একটি জমিদার পরিবারে জন্ম নেন।[৫][৬][৭][৮][৯][১০] তার পিতা খানবাহাদুর ইউসুফ হোসেন চৌধুরী এবং মাতা শিরিন নেসা চৌধুরাণী। শৈশবেই তাদের পরিবার স্থানান্তরিত হয়ে নিকটবর্তী বর্তমান রতনদিয়া গ্রামে চলে যায়।[১১] তার ডাকনাম কনক।[৫] তিনি নয় ভাই এবং চার বোনের একজন। তার বড় চাচা খান বাহাদুর আলীমুজ্জামান চৌধুরী তৎকালীন ফরিদপুর জেলা বোর্ডের সভাপতি ছিলেন এবং তার নামেই ফরিদপুরে আলীমুজ্জামান সেতু[১২] এবং আলীমুজ্জামান হলের নামকরণ করা হয়।[১৩] তার দাদা ফয়েজবক্স ছিলেন জমিদার,[১৩] তবে সরকারি আইনে সেই জমিদারি প্রথার বিলুপ্তি ঘটলে রশিদের পিতা ওকালতি পেশা বেছে নেন।

তার প্রাথমিক শিক্ষা জীবনের শুরু হয় গ্রামের তৎকালীন পাঠশালায়। পরবর্তীকালে তিনি স্থানীয় রজনীকান্ত উচ্চ বিদ্যালয়, আলীমুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয় এবং কলকাতার পার্ক সার্কাস হাই স্কুল থেকে শিক্ষাগ্রহণ শেষে[১১] ১৯৪৯ সালে প্রবেশিকা বা ম্যাট্রিকুলেশন (বর্তমানে এসএসসি) পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন।[১৪] সে সময়ে তাদের বাড়িতে যাতায়াত ছিল এনামুল হক চৌধুরীর, যার সাথে পরিচয় ছিল শিল্পী জয়নুল আবেদীনকামরুল হাসানের। রশিদের ছবি আঁকার প্রতি আগ্রহ দেখে তাকে তৎকালীন ঢাকা সরকারি আর্ট কলেজে (বর্তমানে চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তির পরামর্শ দেন এনামুল হক। পরবর্তীকালে রশিদ ঢাকা সরকারি আর্ট কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন, কিন্তু অনুত্তীর্ণ হন। এরপর কিছু সময় তিনি শিল্পী জয়নুল আবেদীনের তত্ত্বাবধানে অধ্যয়নরত ছিলেন। এবং প্রায় ছয় মাস অপেক্ষার পর যোগ্যতা প্রমাণ করা সাপেক্ষে ১৯৪৯ সালে জয়নুল তাকে ঢাকা সরকারি আর্ট কলেজে ভর্তির সুযোগ করে দেন। রশিদ ছিলেন আর্ট কলেজের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী; তার সহপাঠীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন চিত্রশিল্পী আবদুর রাজ্জাক, কাইয়ুম চৌধুরী, মুর্তজা বশীর প্রমুখ।[১৫] ১৯৫৪ সালে তিনি এই ইনিস্টিটিউট থেকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন।[৬][১০][১৪] একই বছর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ মিউজিয়ামে টিচার্স ট্রেনিং সার্টিফিকেট কোর্সের অর্ন্তভুক্ত শিল্প-সমঝদারি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।[৬][৮] ১৯৫৬ থেকে ১৯৫৭ সালে এক বছরের বৃত্তি লাভের পর মাদ্রিদের সেনত্রাল এসকুয়েলা দেস বেলেস-আরতেস দে সান ফেরনান্দো থেকে ভাস্কর্য বিভাগে[৫][৮][১৬] এবং ১৯৬০ থেকে ১৯৬৪ সালে চার বছরের বৃত্তি লাভের পর প্যারিসের আকাদেমি অব জুলিয়ান অ্যান্ড বোজ আর্টস থেকে ফ্রেস্কো, ভাস্কর্য ও তাপিশ্রী বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন তিনি।[৬] এ-সময়ে তিনি বিখ্যাত শিল্পী জঁ ওজাম্-এর অধিনে শিক্ষা গ্রহণ করেন।[৫] পরবর্তীকালে ১৯৭৫ সালে, মার্কিন সরকার কর্তৃক প্রদত্ত লিডারশিপ গ্র্যান্ট পুরস্কারে ভূষিত হওয়ায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষাসফরে যান।[২][৯][১০][১৪][১৭][১৮]

১৯৬০-এর দশকে সম্পাদনা

 
রশিদ চৌধুরী আঁকছেন

১৯৬০-এর দশকে, ফরাসি সরকারের নিকট থেকে স্নাতকোত্তর বৃত্তি লাভ করে চার বছরের জন্যে তিনি প্যারিসের আকাদেমি অব জুলিয়ান অ্যান্ড বোজ আর্টসে চলে যান। সেখানে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের পর দেশে ফিরে এসে ১৯৬৪ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা শুরু করেন। একই বছর তিনিই সর্বপ্রথম ঢাকায় স্থাপন করেন তাপিশ্রী কারখানা।[১৪][১৭]

১৯৭০-এর দশকে সম্পাদনা

১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম প্রকাশিত পঞ্জিকায় "জোবরা গ্রামের বটতলা থেকে দেখা বিশ্ববিদ্যালয়" শিরোনামে রশিদ চৌধুরীর একটি স্কেচ প্রকাশিত হয়। স্কেচটি তৎকালীন চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক আবহের ঐতিহাসিক এবং নান্দনিক সাক্ষর বহন করে।[১৯]

১৯৭১ সালে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে পারিবারিক নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হওয়ায় ৪ এপ্রিল রশিদ তার স্ত্রী অ্যানি এবং কন্যা রোজা ও রীতাকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে একটি মার্কিন জাহাজে পাঠিয়ে দেন ফ্রান্সের প্যারিসের উদ্দেশ্যে।[২] প্যারিসে অ্যানির পৈতৃক বাড়ি অবস্থিত। রশিদ এসময় চরম একাকীত্বের কারণে কাব্যচর্চা শুরু করেন। রঙ-তুলি ছেড়ে ব্যক্তিগত ডায়েরি ভরে তুললেন নানা ধরনের লেখাযোখায়। প্রায় ছয় মাস ধরে স্ত্রী ও কন্যাদের ত্যাগ করে যুদ্ধ শেষ হবার তিন মাস পূর্বে ১৯৭১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি প্যারিসের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। সেখানে পৌঁছানোর পর তিনি ফরাসি সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন।[২] এসময় পাকিস্তান সরকার কর্তৃক তাকে রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।[১৪][১৭] এ-বিষয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে তখনকার অনুভূতি একটি টুকরো কাগজে ব্যক্ত করেন:

সরকারি রেডিও ও কাগজের মাধ্যমে রক্তপিপাসু জেনারেল ইয়াহিয়া খান বাঙালি প্রীতির তুচ্ছ নিদর্শনস্বরূপ কয়েকজন বাঙালি কবি, শিল্পী ও সাহিত্যিককে স্বর্ণপদকসহ পুরস্কারের কথা ঘোষণা করেছেন। জেনে মর্মাহত হলাম আমার নামও সেখানে ছিল। অথচ, হয়তো ঐ সময় তাদেরই হাতে বাংলার কোনো গ্রাম দাউদাউ করে জ্বলছে, নির্মম অত্যাচারের অসহ্য যন্ত্রণায় বাংলার মা-বোনেরা কান্নায় ভেঙে পড়ছে কিংবা জালিমদের মেশিনগানের মুখে হয়তো বাঙালির জীবন নিঃশেষ হচ্ছে। ... বাংলার শিল্পীর সম্মান, বাঙালির হাত থেকেই গ্রহণযোগ্য। তোমার কোনো অধিকার নেই সম্মাননার। তোমার স্বর্ণপদক তোমার মুখে ছুঁড়ে আজ একমাত্র তোমার ধ্বংস কামনা করে বাঙালি। সফল হোক জয় বাংলার।
–রশিদ চৌধুরী[১৪]

 
চট্টগ্রাম কলাভবনের (বর্তমানে জেলা শিল্পকলা একাডেমি) নামফলক উদ্বোধন করেন ফরাসি মনীষী মসিয় অঁদ্রে মাল্‌রো

১৯৭২ সালে যুদ্ধ শেষ হবার পর রশিদ চৌধুরী প্যারিস ত্যাগ করে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন। দেশে ফেরার পর সে বছরই বেসরকারি উদ্যোগে চট্টগ্রামে শিল্প-প্রদর্শনকেন্দ্র হিসেবে সর্বপ্রথম একটি 'কলাভবন' প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন তিনি, যা বর্তমানে জেলা শিল্পকলা একাডেমি হিসেবে পরিচিত। একই বছর ফরাসি মনীষী আঁদ্রে মালরো চট্টগ্রামের দাম পাড়া, মোহাম্মদ আলী সড়কে অবস্থিত বর্তমান জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে এর উদ্বোধন করেন। এই কলাভবনই পরবর্তীকালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী অধিভুক্ত ও নিয়ন্ত্রিত জেলাভিত্তিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচালিত হতে শুরু করে। ১৯৭৩ সালে চট্টগ্রাম চারুকলা মহাবিদ্যালয় (বর্তমানে চারুকলা ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠায় মুখ্য উদ্যোক্তা হিসেবে রশিদ চৌধুরীর ভূমিকা ছিল অন্যতম। এরপর তিনি বিভিন্ন স্থাপনা-ভবনসমূহে তাপিশ্রী এবং ফ্রেস্কোর কাজ শুরু করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি গণভবনের সার্বিক সজ্জার কাজ শুরু করলেও তা অসমাপ্ত থেকে যায়। ১৯৭৫ সালে ফিলিপাইনের ম্যানিলায় অবস্থিত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কার্যালয়ে এবং ১৯৭৬ সালে ঢাকায় অবস্থিত ৩২ তলা বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের প্রধান কার্যালয়ে তাপিশ্রীর কাজ করেন। ১৯৭৭ সালে চারুকলায় বিশেষ করে তাপিশ্রী শিল্পে সৃজনক্ষমতার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তাকে জাতীয় এবং সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক প্রদান করা হয়। তিনি চারুকলা বিষয়ে একুশে পদক বিজয়ী সর্বপ্রথম চিত্রশিল্পী। ১৯৭৮ সালে সৌদি আরবের, জেদ্দায় ইসলামিক ব্যাংক ভবনে তাপিশ্রীর কাজ করেন। ১৯৭৮ সালে ঢাকায় ব্যাংক অব ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ইন্টারন্যাশনালে তাপিশ্রী ও তৈলচিত্রের কাজ শুরু করেন তিনি, এবং ১৯৭৯ সালে একই ব্যাংকের চট্টগ্রাম ভবনে তাপিশ্রীর কাজ সম্পন্ন করেন।[১৪][১৭][২০]

কর্মজীবন সম্পাদনা

১৯৫৮ সালে গভর্নমেন্ট আর্ট ইনস্টিটিউটে (বর্তমান চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) শিক্ষকতার মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু হয়। দুই বছর পর, ১৯৬০ সালে, রশিদ চৌধুরী আর্ট ইনস্টিটিউটে অধ্যাপনার চাকরি ত্যাগ করেন। এরপর ১৯৬৪ সালে, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতার মাধ্যমে পুনরায় তার কর্মজীবনের শুরু হয়। একই বছর, ১৯৬৪ সালে ঢাকায় তিনি ঢাকায় বাংলাদেশের সর্বপ্রথম তাপিশ্রী কারখানা স্থাপন করেন। ১৯৬৫ সালে ঢাকার সরকারি চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে প্রাচ্যকলা বিষয়ের প্রথম শিক্ষক হিসেবে তিনি যোগদান করেন। এ সময় ফরাসি ভাস্কর সুচরিতা অ্যানিকে বিয়ে করার কারণে ১৯৬৬ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের বিধান অনুযায়ী সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশী স্ত্রী-গ্রহণ নিষিদ্ধ থাকায় তিনি অধ্যাপনার চাকরি থেকে বহিষ্কৃত হন। এদিকে ১৯৬৮ সালে, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে চারুকলা শিক্ষাদানের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগ চালু করা হয়। সে বছর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগের প্রথম অধ্যাপক ও সভাপতি হিসেবে যোগদান করেন তিনি।[২১] চট্টগ্রাম চারুকলা কলেজ (বর্তমানে চারুকলা অনুষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠায়ও তিনি ছিলেন প্রধান উদ্যোক্তা।[২২] ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সালে, তিনি চিত্রকলা বিষয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক পদে অত্র ইনিষ্টিটিউটে যোগদান করেন।[১৯] এছাড়াও তিনি চারুকলা বিভাগের পাশাপাশি বাংলা বিভাগেও যুক্ত ছিলেন। এরপর ১৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭০ সালে তিনি চারুকলা বিভাগের প্রথম প্রধান হিসেবে যোগ দেন।[১৯] পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর প্রতিষ্ঠাকালে প্রথম ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ত্যাগ করার পর তিনি ঢাকায় স্থায়ীভাবে চলে আসেন এবং ঢাকার মিরপুরে তাপিশ্রী কারখানা গড়ে তোলেন। ১৯৮৪ সালে তিনি তাপিশ্রী পল্লীর খসড়া প্রণয়ন করেন।[৯][১৪][১৭][১৯]

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

রশিদ চৌধুরী ব্যক্তিগত জীবনে দুইটি বিয়ে করেন। প্রথমে ১৯৬২ সালে, প্যারিসের আকাডেমি অব জুলিয়ান অ্যান্ড বোজ আর্টসে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণকালীন সময়ে ফরাসি ভাস্কর সুচরিতা অ্যানির সাথে তার বিয়ে হয়।[৫] তাদের দুই মেয়ে, রোজা চৌধুরী এবং রীতা চৌধুরী। ১৯৭৭ সালে, সুচরিতা অ্যানির সাথে বিচ্ছেদের পর তিনি চট্টগ্রামের বাঙালি মেয়ে জান্নাতকে বিয়ে করেন।[১৪][১৭]

মৃত্যু সম্পাদনা

মাদ্রিদে প্রবাসকালে রশিদ চৌধুরী যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। ফলপ্রসূত ১৯৮৪ সালের দিকে তিনি ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। দেশে-বিদেশে বিভিন্ন চিকিৎসাা গ্রহণের পরও বিশেষ উন্নতি ঘটেনি তার। অবশেষে ১৯৮৬[৬] সালের ১২ ডিসেম্বর ৫৪ বছর বয়সে ঢাকায় মৃত্যু বরণ করেন শিল্পী রশিদ চৌধুরী৷[৫] মৃত্যুঅব্দি তার জীবনদর্শন ছিল স্প্যানিশ চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসোর উক্তি শিল্পকর্ম হচ্ছে প্রেম[৯][১৪][১৭]

শৈলী ও প্রযুক্তি সম্পাদনা

স্ত্রী
ফেরিওয়ালী

ব্যক্তি জীবনে রশিদ চৌধুরী রোমান্টিক এবং জীবনের প্রতি ইতিবাচক মনোভাবসম্পন্ন ছিলেন। তার প্রায় শিল্পকর্মে এই চলমান জীবনের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। শিল্পীজীবনের প্রথমাবস্থায়, ছাত্রকালীন সময়ে তিনি এঁকেছেন প্রধানত জলরং এবং তেলরং মাধ্যমে সাধারণ মেহনতি জন-জীবন এবং শ্রমজীবীদের দৈনন্দিন ক্রিয়াকর্মচিত্র। সে সময়ে তার কাজ সম্পূর্ণরূপে একাডেমিক ছিল বলা যায়। আবহমান বাংলার লোকসংস্কৃতির বহু উপাদান এবং বিষয়বস্তু যেমন যাত্রাগান, লাঠিখেলা, মুহররমের মাতমদৃশ্য, কৃষ্ণকীর্তন, সর্পপূজা, নববর্ষ উদ্যাপন, রাজা-রানী, সাহেব-মেম, সোনাভানুর পালা ইত্যাদি তার কাজের প্রধান বিষয় হয়ে ওঠে।[৫] পাশাপাশি লোকচিত্রের বর্ণবৈশিষ্ট্য এবং দ্বিমাত্রিক বিন্যাস, আলোছায়ার উদ্ভাস ও কারিগরিকে একসঙ্গে মেলাবার চেষ্টা চালিয়েছেন।[২৩][২৪] তার চিত্রকর্মে আকাশী নীল, বাদামি, সাদা, কালো, অগ্নিবর্ণ, সবুজ ইত্যাদি রঙের ব্যবহারের আধিক্য নজরে আসে।[২৫] তিনি গভীরভাবে ফুল এবং গাছপালার মতো বৈচিত্রময় জৈব গঠন দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। ফলে তার চিত্রকর্মে রঙের সুসংগত উপস্থাপনের দুর্দান্ত চেষ্টা প্রকাশ পায়। তিনি তার কাজের মাধ্যমে একটি স্বতন্ত্র বার্তা প্রকাশ করতে মূলত প্রগাঢ় জাঁকজমক রঙের ব্যবহার করেছেন, যা বহু বছর ধরে দেশে-বিদেশে শিল্প ভক্তদের প্রভাবিত করে আসছে।[৬][৭] এক্ষেত্রে তার কাজের নামকরণও বিষয় ভিত্তিক ছিল: শাঁস সংগ্রহ, নৌকা, প্রতিকৃতি, এবং পরবর্তীকালে নবান্ন, উৎসব, মা, বাংলার মুখ প্রভৃতি বিভিন্ন সময় পুনরাবৃত্তি হয়। ১৯৫১ সালে সম্পন্ন শাঁস সংগ্রহ তেলচিত্রে পাশ্চাত্যের একাডেমিক শৈলী অনুসারে রং এবং রচনার ব্যবহার দেখা যায়। তার কাজের আরেকটি বৈশিষ্ট হল সময় ধারণার অনুপস্থিতি। সেখানে বর্তমান বা অতীত নেই, তার দৃঢ় স্বপ্ন তার স্মৃতির মধ্যে অতিক্রম করে। তার কাজ সময়বিহীন চিত্রের ধারণা প্রদান করে, যা প্রাকৃতিক, ভালোবাসার পূর্ণ এবং দেশীয়। তিনি শিল্পের উৎস খুঁজতে প্রত্যাবর্তন করেছেন বাংলার লৌক ঐতিহ্যে।

 
কম্পোজিশান ১১, ১৯৮০, তাপিশ্রী, ৪৭ X ১১৮ ইঞ্চি

দ্বিতীয় পর্যায়ে, ১৯৬৫ সালে সরকারি চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে শিক্ষকতাকালীন সময়কে তার শিল্পী জীবনের শিক্ষানবিশকাল ও পূর্ণতাপ্রাপ্তির মধ্যবর্তী সোপান বা ক্রান্তিলগ্নরূপে নির্ধারণ করা যেতে পারে। এ সময়ে তার কৃতচিত্রকর্মে পশ্চিমা আধুনিকতার প্রতি অকর্ষণ এবং দেশীয় বিষয়াদি থেকে প্রেরণা গ্রহণের অভীপ্রায় লক্ষ্য করা যায়। পাশাপাশি পাশ্চাত্যের সর্বাধুনিক কৌশলসমূহ প্রয়োগের মাধ্যমে একদিকে যেমন বিমূর্ত চিত্রকলা সৃষ্টি করেছেন, অন্যদিকে পাট-রেশমের সমাহারে তাপিশ্রী (বুনন শিল্প) মাধ্যমে নির্মাণ করেছেন তার উল্লেখযোগ্য সব কৃতিত্বপূর্ণ চিত্রকলা।[৫] এ কারণেই তাকে মূলত একজন তাপিশ্রী শিল্পী বিবেচনা করা যায়। যেহেতু শিল্পের এই শাখায় তিনি গোটা ভারতীয় উপমহাদেশে অন্যতম। এই মাধ্যমেই তিনি সবচেয়ে মৌলিক এবং আধুনিক শিল্পধারার সৃজনশীলতা বজায় রাখতে পেরেছেন। পরবর্তীকালে যখন ইউরোপীয় শিল্পীদের কাজের সঙ্গে তার পরিচিতি ঘটে, তার ধারণায় কিছু পরিবর্তন আসে। ফলে তিনি প্রবলভাবে প্রভাবিত হয়ে ওঠেন শিল্পী মার্ক শাগালের প্রতি। এ পর্যায়ে থেকেই তিনি তাপিশ্রী বা বয়নশিল্পকে তার প্রধান প্রকাশ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেন।[১৪][১৭]

পাশাপাশি তিনি জলরঙে, তেলরঙে, টেম্পারায় এবং গোয়াশে বৃহৎসংখ্যক চিত্র রচনা করেন। স্বল্পসংখ্যক পোড়ামাটির ভাস্কর্য এবং বিভিন্ন মাধ্যমে ছাপাই চিত্রও রচনা করেছেন।[১৪][১৭] জীবনের শেষ দশ বছর তার শিল্পকর্মে রূপায়িত হতে দেখা যায় ইসলামি ক্যালিগ্রাফি এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক প্রভাব।[৫]

শিল্পকর্ম সম্পাদনা

কম্পোজিশান ১, ১৯৭৯, তাপিশ্রী, ৫৯ X ৩৯ ইঞ্চি
কম্পোজিশান ২, ১৯৭৯, তাপিশ্রী, ৫৩ X ৪৪ ইঞ্চি
কম্পোজিশান ৩, ১৯৭৯, তাপিশ্রী, ৫৫ X ৩৬ ইঞ্চি

রশিদ চৌধুরী ছিলেন মূলত একজন তাপিশ্রী শিল্পী।[২৬][২৩] তবে এছাড়াও তিনি চিত্ররচনা করেছেন তেলরঙে, টেম্পারায়, গোয়াশে এবং জলরঙে।[২৪] পোড়ামাটিতে ভাস্কর্য ও বিভিন্ন মাধ্যমে ছাপাই চিত্রও তৈরি করেছেন। ফ্রেস্কো ও তাপিশ্রী মাধ্যমে অজুরার কাজও করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (১৯৬৪), পাট বিপণন সংস্থা ও বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন (১৯৭৬), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৬৯), গণভবনের (১৯৭৩) সার্বিক সজ্জার কাজ (অসমাপ্ত), ফরাসি সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় (১৯৬৩), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (১৯৭৫), ইসলামিক ব্যাংক জেদ্দা (১৯৭৮) ইত্যাদি। জাতীয় সংসদ ভবন এবং ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের জন্য বড়-আকৃতির তাপিশ্রী এবং টেরাকোটার কাজ করেছেন তিনি। এছাড়াও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান কার্যালয়ে রয়েছে তার তৈরি টেরাকোটা মুরাল। দেশে এবং বিদেশের বিভিন্ন ভবন ও প্রতিষ্ঠানে তার শিল্পকর্ম সংগৃহীত রয়েছে।

 
কম্পোজিশান ১২ (১৯৮০), ৪৭ X ১১৮ ইঞ্চি, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর

এছাড়াও উল্লেখযোগ্য তাপিশ্রীর সংগ্রহ রয়েছে দেশের অভ্যন্তরে, বঙ্গভবন, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর,[২৭] বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর,[২৮] চট্টগ্রাম সরকারি চারুকলা কলেজ (বর্তমানে চারুকলা অনুষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালায়[২৯] বিদেশে তাপিশ্রীর উল্লেখযোগ্য সংগ্রহশালার মধ্যে রয়েছে, ফ্রান্সের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়, ভারতের জাতীয় জাদুঘর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের মহাসচিব কার্যালয়, মিশরের রাষ্ট্রপতি ভবন, যুগোশ্লাভিয়ায় রাষ্ট্রপতি ভবন, ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবন, অস্ট্রেলিয়ায় প্রধানমন্ত্রী ভবন, মিয়ানমারের প্রধানমন্ত্রী ভবন, ইত্যাদি।[১১]

অর্পিত-সম্পাদিত শিল্পকর্মের মধ্যে আরও রয়েছে ১৯৬৪ সালে নির্মিত মুরাল, ইস্সোয়াত সরকারি কলেজ, ফ্রান্স; ১৯৬৭ সালে নির্মিত তাপিশ্রী, পাট বিপণন সংস্থা, ঢাকা; ১৯৭৮-৮১ সালে তাপিশ্রী ও তৈলচিত্র, ব্যাংক অব ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ইন্টারন্যাশনাল, ঢাকা; ১৯৭৯ সালে তাপিশ্রী, ব্যাংক অব ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ইন্টারন্যাশনাল, চট্টগ্রাম; ১৯৮২ সালে তাপিশ্রী, ইন্টারন্যাশনাল ফাইনান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড, ঢাকা প্রভৃতি।[১৪][১৭]

তার উল্লেখযোগ্য চিত্রকর্মের মধ্যে কয়েকটি হল, তেলচিত্র মাধ্যমে ধান কাটা (১৯৫৩), প্রকৃতি (১৯৬০), দুর্বিনীত কাল (১৯৮০), চিত্রাঙ্গদা (১৯৮৩), গুয়াশ মাধ্যমে রঁদেভু (১৯৬৮), বাংলায় বিদ্রোহ (১৯৭১), তাপিশ্রী মাধ্যমে রোমান্স (১৯৭০), যাদুঘর (১৯৭০), সোনাভানু (১৯৭০), আমার সোনার বাংলা (১৯৭৫), আদম (১৯৮২), কাল বৈশাখী (১৯৮৫) ইত্যাদি। এছাড়াও রয়েছে, চাকমা তরুণী (ড্রয়িং, ১৯৫৭), ষড়ঋতু (দেয়াল/তৈল/তাপিশ্রী, ১৯৬৭) ইত্যাদি।[৫]

ভাস্কর্য সম্পাদনা

 
বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভ সম্পাদনা

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একেবারে শেষ পর্যায়ে ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনি অনেক বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। পরবর্তীকালে এই সকল বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণ করা হয় বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভ। এর নকশা প্রণয়ন করেছিলেন রশিদ চৌধুরী। স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৮৫ সালে। কেরন গাছে পরিবেষ্টিত স্মৃতিস্তম্ভ চত্বরে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সৃজনশীল কর্মকাণ্ড[৩০] এবং উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।[৩১]

সাহিত্যকর্ম সম্পাদনা

১৯৭০-এর দশকে রশিদ অনেকটা রং-তুলি ছেড়ে ব্যক্তিগত ডায়েরিতে নানা ধরনের লেখার মধ্য দিয়ে শুরু করেন সাহিত্যচর্চা। লিখেছেন কবিতা, মূল ফরাসি থেকে ভাষান্তরিত করেছেন জাক্ প্রেভের্ এবং রবের দেস্নোস্-এর রচনা।[৫]

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

বছর বিভাগ পুরস্কার আয়োজক টীকা
১৯৬১ প্রথম পুরস্কার ফ্রেস্কো মাধ্যম বোজ আর্ট, প্যারিস, ফ্রান্স [৬][১৪]
১৯৬২ প্রথম পুরস্কার বিউক্স আর্টস দেয়ালচিত্র প্রতিযোগিতা বোজ আর্ট, প্যারিস, ফ্রান্স [৮]
১৯৬৭ প্রথম পুরস্কার আরসিডি দ্বিবার্ষিক চিত্র প্রদর্শনী তেহরান, ইরান [৬][৮][১০][১৪]
১৯৭৫ লিডারশিপ গ্রান্ট অ্যাওয়ার্ড মার্কিন সরকার [৯][১৪][১৭][১৮]
১৯৭৭ চারুকলা - তাপিশ্রী মাধ্যমে একুশে পদক বাংলাদেশ সরকার [৩২]
১৯৮০ একাডেমি পুরস্কার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি [৬][৮][১৪]
১৯৮৬ জয়নুল পুরস্কার বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ [১৪]

কিংবদন্তি সম্পাদনা

প্রভাব সম্পাদনা

রশীদ চৌধুরীর শিল্পকর্মের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল আধুনিক পশ্চিমা শিল্পের সঙ্গে তার নিজস্ব ঐতিহ্যের সমন্বয়ের প্রচেষ্টা। তার অধিকাংশ কাজের বিভিন্ন উপাদান ধীরে-ধীরে অস্পষ্টতা ধারণ করেছে যা অনেকটা আধা-বিমূর্ত ধরনের। প্যারিসে অধ্যয়নকালে তিনি শিল্পের প্রযুক্তিগত বিষয়ে যথেষ্ট কৃতিত্ব অর্জন করতে সমর্থ হন; একাধিক পুরস্কার লাভ এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের অধীনে কাজের কমিশন প্রাপ্তি তার সেই কৃতিত্বের স্বাক্ষর বহন করে। সে সময় শিল্পী মার্ক শাগাল এবং জঁ ল্যুর্সা তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেন। তবে এক্ষেত্রে শাগালের অনুকৃতি তার শিল্পকর্মে প্রভাব ফেললেও শেষ পর্যন্ত তার রোম্যান্টিক অনুভূতি ও বাঙালি মনমেজাজ তাকে প্রখ্যাত রুশ শিল্পী জঁ ল্যুর্সার দিকেই বেশি অনুপ্রাণিত করে তোলে। এবং এই পথ ধরেই তিনি বাংলাদেশের পাশাপাশি প্রাচ্যভুবনের শিল্প-ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের অবতাড়না করেন। তার দ্বারাই উপমহাদেশ তাপিশ্রীর নবযুগের সূচনা হয়। শুরুতে তিনি শুধুমাত্র সুতা এবং পাট, পরবর্তীকালে এর সঙ্গে রেশম ব্যবহার করে ঐতিহ্যবাহী তাঁতের ওপর নিরীক্ষাধর্মী এই মাধ্যমে নিজের অর্ন্তদৃষ্ট রূপায়িত করেন।[৫]

দলীয় চিত্র প্রদর্শনী সম্পাদনা

২০১৪ সালে শিল্পী রশিদ চৌধুরীর প্রতি সম্মান জানিয়ে ধানমন্ডির ঢাকা আর্ট সেন্টারে ২১ জন নবীন -প্রবীণ শিল্পীদের চিত্রকর্ম নিয়ে আয়োজিত হয়েছে একটি দলীয় চিত্র প্রদর্শনী। প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া শিল্পীদের অধিকাংশই তার ছাত্র-ছাত্রী ছিল।[৩৩]

শিল্পী রশিদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদ সম্পাদনা

শিল্পী রশিদ চৌধুরীর সম্মানার্থে এবং তার স্মৃতি ধরে রাখতে বাংলােদশে গড়ে ওঠা এই পরিষদ তার জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকী পালন সহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে।[৩৪][৩৫] এছাড়াও চারু ও কারু শিল্পে বিশেষ অবদানের জন্যে ওই পরিষদ কর্তৃক 'শিল্পী রশিদ চৌধুরী স্মৃতি' পুরস্কার প্রদান করা হয়ে থাকে।[৩৬]

শিল্পী রশিদ চৌধুরী আর্ট গ্যালারি সম্পাদনা

 
শিল্পী রশিদ চৌধুরী আর্ট গ্যালারি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গনে তার সম্মানার্থে শিল্পী রশিদ চৌধুরী আর্ট গ্যালারি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটি চট্টগ্রাম শহরের সর্বপ্রথম আর্ট গ্যালারি। এটি একটি ত্রিতল বিশিষ্ট প্রদর্শনী ভবন। এখানে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রবীন-নবীন শিল্পীদের চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজিত হয়ে থাকে।[৩৭][৩৮] এছাড়াও বিশ্ববিদ্যলয়ের চারুকলা শিক্ষার্থীদের নিয়মিত-অনিয়মিত এবং বার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনী এখানে আয়োজিত হয়ে থাকে।[৩৯]

প্রদর্শনী সম্পাদনা

একক প্রদর্শনী সম্পাদনা

বছর প্রদর্শনী স্থান টীকা
১৯৫৪ পেইন্টিং এন্ড ড্রয়িং প্রেস ক্লাব, ঢাকা, বাংলাদেশ [১১]
১৯৫৫ পেইন্টিং এন্ড ড্রয়িং কোঅপারেটিভ বুক সোসাইটি, ঢাকা, বাংলাদেশ [১১]
১৯৫৯ পেইন্টিং এন্ড ড্রয়িং পয়্যুর ডি ব্যুখ আর্টস, প্যারিস, ফ্রান্স [১১]
১৯৬২ পেইন্টিং এন্ড ড্রয়িং পয়্যুর ডি ব্যুখ আর্টস, প্যারিস, ফ্রান্স [১১]
১৯৬৩ পেইন্টিং এন্ড ড্রয়িং গ্যালারি ডি পাসার, প্যারিস, ফ্রান্স [১১]
১৯৬৪ পেইন্টিং এন্ড ড্রয়িং গ্যালারি ডি পাসার, প্যারিস, ফ্রান্স [১১]
১৯৬৫ ট্রাপেস্ট্রি, পেইন্টিং এন্ড ড্রয়িং বাংলা একাডেমি, ঢাকা, বাংলাদেশ [১১]
১৯৬৬ পেইন্টিং এন্ড ড্রয়িং সোসাইটি অব কন্টেমপরারি আর্টস, রাওয়ালপিন্ডি, পাকিস্তান [১১]
১৯৭০ তাপিশ্রী অ্যান্ড পেইন্টিং আলিয়স ফ্রসেজ দো চিটাগং, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ [১১]
১৯৭২ তাপিশ্রী অ্যান্ড পেইন্টিং কমনওয়েলথ সেন্টার, লন্ডন, যুক্তরাজ্য [১১]
১৯৭৩ তাপিশ্রী আমেরিকান সেন্টার, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ [১১]
১৯৮৫ তাপিশ্রী হোটেল শেরাটন, ঢাকা, বাংলাদেশ [১১]
১৯৯৯ তাপিশ্রী কলাভবন, শান্তিনিকেতন, ভারত মরণোত্তর[১১]

এছাড়াও ১৯৫৪ সালে প্রথম নিখিল পাকিস্তান চিত্রপ্রদর্শনী; ১৯৫৫ সালে চট্টগ্রামে; ১৯৬৬ সালে চিত্রকলা ও অঙ্কনের প্রদর্শনী রাজশাহীতে; ১৯৭৫ সালে চিত্রকলা ও ড্রয়িং-এর প্রদর্শনী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র; ২০০২ সালে ট্যাপিস্ট্রি ও চিত্রকলা প্রদর্শনী চট্টগ্রামে (মরণোত্তর)।

যৌথ প্রদর্শনী সম্পাদনা

তার শিল্পজীবনে তিনি দেশে-বিদেশে প্রায় ২৫টি যৌথ প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন।[১১]

বছর প্রদর্শনী স্থান টীকা
১৯৫৪ প্রথম অল-পাকিস্তান শিল্প প্রদর্শনী ঢাকা, বাংলাদেশ [১১]
১৯৫৭ এক্সিবিশন অব নাইন ইস্ট পাকিস্তানি আর্টিস্ট ওয়াশিংটন, ডি.সি., মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র [১১]
১৯৫৯ দ্বিতীয় পাকিস্তান জাতীয় প্রদর্শনী করাচি, পাকিস্তান [১১]
১৯৬০ তৃতীয় পাকিস্তান জাতীয় প্রদর্শনী করাচি, পাকিস্তান [১১]
১৯৬১ সমসাময়িক পাকিস্তানি আর্ট প্রদর্শনী মিলান, ইতালি [১১]
১৯৬১ সেকেন্ড ইন্টারন্যাশনাল ইয়াং আর্টিস্ট' এক্সিবিশন প্যারিস, ফ্রান্স [১১]
১৯৬৩ থার্ড ইন্টারন্যাশনাল ইয়াং আর্টিস্ট' এক্সিবিশন প্যারিস, ফ্রান্স [১১]
১৯৬৬ পঞ্চম তেহরান দ্বিবার্ষিক তেহরান, ইরান [১১]
১৯৭২ নবম দ্বিবার্ষিক ফ্রান্স [১১]
১৯৭৪ সমসাময়িক বাংলাদেশি শিল্প প্রদর্শনী কলকাতা, দিল্লি, মুম্বই, ভারত [১১]
১৯৭৮ চতুর্থ ত্রৈবার্ষিক দিল্লি আন্তর্জাতিক শিল্প ভারত [১১]
১৯৮০ এশিয় শিল্প প্রদর্শনী ফুকুওকা, জাপান [১১]

এছাড়াও ১৯৫১, ১৯৫২, ১৯৫৩, ১৯৫৪, ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭৪, ১৯৮০, ১৯৮১, ১৯৮৫ সালে ঢাকায়;[৫] ১৯৬৬ সালে পাকিস্তানে তার যৌথ প্রদর্শনী আয়োজিত হয়।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. রফিকুল ইসলাম। "বইমেলার সময় বাড়ছে না আগুনের প্রতিবাদে ৫ মিনিট নীরবতা"djanata.com। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০১৫ 
  2. ফিরোজা তাসনিম (১২ ডিসেম্বর ২০১৪)। "ট্যাপিস্ট্রির পথিকৃৎ শিল্পী"আলোকিত বাংলাদেশ। ঢাকা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০১৫ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. Takir Hossain (জুলাই ২৭, ২০১১)। "Tapestry exhibition"বাংলাদেশ টুডে। ঢাকা। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ৫, ২০১৫ 
  4. "ট্যাপেষ্ট্রি প্রদর্শনী"প্রিয় নিউজ। ঢাকা। ২৭ জুলাই ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মে ২০১৫ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. মাহমুদ শাহ কোরেশী (২০১২)। "চৌধুরী, রশীদ"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  6. "Rashid Chowdhury a ground-breaking tapestry artist" [রশিদ চৌধুরী একজন স্থলাবিচ্ছিন্ন তাপিশ্রী শিল্পী]। দ্য ডেইলি স্টার। ঢাকা। ১২ ডিসেম্বর ২০১৩। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুন ২০১৫ 
  7. "Rashid Chowdhury, a pioneering tapestry artist" [রশিদ চৌধুরী, অগ্রগামী তাপিশ্রী শিল্পী]। দ্য ডেইলি অবজার্ভার। ঢাকা। ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪। ২৪ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ৪, ২০১৫ 
  8. ইমরান রহমান (১ এপ্রিল ২০১৩)। "রশিদ চৌধুরী"দৈনিক আমার দেশ। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০১৪ 
  9. "রশিদ চৌধুরী"। quantummethod.org। ৫ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ আগস্ট ২০১৪ 
  10. ইমরান রহমান (১৪ এপ্রিল ২০১৪)। "ফিরে দেখা: রশিদ চৌধুরী"দৈনিক আমার দেশ। ঢাকা। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০১৫ 
  11. মনসুর ২০০৩, পৃ. ২।
  12. বিজয় পোদ্দার (২৩ জানুয়ারি ২০১৩)। ওয়াহিদুজ্জামান মিলটন, সম্পাদক। "ফরিদপুরে নতুন আঙ্গিকে আলীমুজ্জামান সেতু খুলে দেওয়া হলো"dailyfaridpurkantho.com। ফরিদপুর: দৈনিক ফরিদপুর কণ্ঠ। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মে ২০১৫ 
  13. "বেলগাছি এস্টেট"rajbaricyber.com। রাজবাড়ি: রাজবাড়ি সাইবার রিসার্চ ইনিষ্টিটিউট। ১৩ জুলাই ২০১২। ২০১৬-০৩-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০১৫ 
  14. সফেদ ফরাজী। "রশিদ চৌধুরী(১৯৩২-১৯৮৬)"। greaterfaridpur.info। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০১৪ 
  15. সৈয়দ আজিজুল হক (৬ মার্চ ২০১৫)। "কাইয়ুম চৌধুরী: বায়ান্নর প্রজন্ম"দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০১৫চারুকলায় দ্বিতীয় ব্যাচের সতীর্থ হিসেবে পেয়েছিলেন মুর্তজা বশীর, রশিদ চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক, ইমদাদ হোসেনসহ আরও অনেককে [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  16. শেখ মেহেদী হাসান, সম্পাদক (৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩)। "সাক্ষাৎকার: মোহনীয় মনিরুল"বাংলাদেশ প্রতিদিন। ঢাকা। ২২ জুলাই ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০১৫আমাদের দেশ থেকে একমাত্র শিল্পী রশিদ চৌধুরী স্পেনে পড়তেন, পরে তিনি প্যারিস চলে যান। 
  17. "রশিদ চৌধুরী"। priyo.com। ৫ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০১৪ 
  18. লেনিন হাজরা (১২ ডিসেম্বর ২০১৩)। "শিল্পী রশিদ চৌধুরী"। অর্থনীতি প্রতিদিন। ১৮ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০১৪ 
  19. শামসুল হোসাইন (৪ এপ্রিল ২০১৪)। "শিল্পী রশিদ চৌধুরী স্বপ্ন ও উদ্যোগ"দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ। ১৭ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ২০, ২০১৪ 
  20. সৈয়দ আবদুল ওয়াজেদ (৭ নভেম্বর ২০১২)। "চট্টগ্রামে চারুকলা চর্চার চার দশক আধুনিকতা, স্বাতন্ত্র্য ও নান্দনিকতা"। ঢাকা: শিল্প ও শিল্পী। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০১৪ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  21. বেলাল উদ্দীন (২৬ মে ২০১৫)। "ট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: শাটল ট্রেনের দোলায় দোলে"দৈনিক আমার দেশ। ট্টগ্রাম। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০১৫ 
  22. আলম খোরশেদ, এহসানুল কবির, সম্পাদক (৪ সেপ্টেম্বর ২০০৮)। "নাজলী লায়লা মনসুর-এর সাক্ষাৎকার"arts.bdnews24.com। চট্টগ্রাম। ২২ মার্চ ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০১৫...শিল্পী রশিদ চৌধুরী,... চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলায় মাস্টার্স চালু করেছেন। 
  23. আবুল মনসুর (৬ এপ্রিল ২০১৫)। "ঢাকার চিত্রকলা"amradhaka.com। ঢাকা। ১৩ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ জুন ২০১৫ 
  24. আবুল মনসুর (জানুয়ারি ২০০৩)। "চিত্রকলা"। সিরাজুল ইসলামবাংলাপিডিয়া। ঢাকা: এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশআইএসবিএন 984-32-0576-6। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০১৫ 
  25. আবুল খায়ের, সম্পাদক (১ ফেব্রুয়ারি ২০১২)। রবীন্দ্রনাথ: কালি ও কলমেঢাকা: বেঙ্গল পাবলিকেশন্স লিমিটেড। পৃষ্ঠা ৮৬। [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  26. জাহাঙ্গীর ১৯৭৪, পৃ. ২৯-৩১।
  27. "বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের বিক্রয়যোগ্য প্রকাশনার তালিকা"bangladeshmuseum.gov.bd। ঢাকা: বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। ২৫ মে ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০১৫ 
  28. "রাবি শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা: মুক্তিযুদ্ধের আরেক চেতনা"জাগোনিউজ২৪.কম। রাজশাহী। ১৩ মে ২০১৫। ২৩ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০১৫ 
  29. লিপটন কুমার দেব দাস (১৬ ডিসেম্বর ২০১৪)। "এক টুকরো স্বাধীনতা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়"বাংলা ট্রিবিউন। ঢাকা। ১ জুলাই ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০১৫ 
  30. আয়াজ আজাদ, স্বপ্ন (১৮ ডিসেম্বর ২০১২)। "ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিজয়ের চেতনা"যায় যায় দিন। ঢাকা। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০১৫ 
  31. একুশে পদকপ্রাপ্ত সুধীবৃন্দ ও প্রতিষ্ঠান (পিডিএফ)সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। পৃষ্ঠা ১৭। ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০১৪ 
  32. "রশীদ চৌধুরী স্মরণে দলীয় চিত্র প্রদর্শনী"independent24.tv। ১ এপ্রিল ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০১৪ 
  33. "শিল্পী রশিদ চৌধুরীর জন্মজয়ন্তী উদযাপিত"thereport24.com। ৫ এপ্রিল ২০১৪। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ১৯, ২০১৪ 
  34. "রাজবাড়িতে বরেণ্য চিত্র ও ট্যাপেষ্ট্রি শিল্পী রশিদ চৌধুরীর ৮২ তম জন্মজয়ন্তী পালিত"unn24.com। ৫ এপ্রিল ২০১৪। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ১৯, ২০১৪ 
  35. গাজী মুনছুর আজিজ (৮ ডিসেম্বর ২০১৩)। "চরকাঁকড়ার বটনি পাটি"sesu.alokitobangladesh.com। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০১৪ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  36. মুজিবুল হক (২৯ জানুয়ারি ২০১৫)। "জয়নুল–পরম্পরা"দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০১৫ 
  37. "চট্টগ্রামে পরিবেশ বিষয়ক আর্টক্যাম্পে ছবি আঁকছেন ১২ জন বিশিষ্ট শিল্পী"দৈনিক ইত্তেফাক। চট্টগ্রাম। ১০ জুন ২০১৪। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০১৫ 
  38. "চারুকলা শিক্ষার্থীদের বার্ষিক প্রদশর্নী শুরু"cutimes24.com। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ২৭ মে ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০১৫ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

উৎস সম্পাদনা

আরো পড়ুন সম্পাদনা

গ্রন্থতালিকা

বাংলা

ইংরেজি

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা